শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -১৮+১৯

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৮ ( ধামাকা)

কলিং বেলের শব্দে তানজিনা দরজা খুলে তখন রাত বারোটা বেজে ত্রিশ মিনিটের বেশি। বাবা-মা ও ভাই-ভাবিকে গম্ভীর মুখে দেখতে পায়। সবাই ভিতরে এসে ড্রইং রুমে সোফায় বসে। তানজিনা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে,
তানজিনা: তোমরা এতো দেরি করলা কেন? শুধু শুধু ওই বাসায় গেছো! তোমরা যদি ওদেরকে রিকোয়েস্ট করেও আসো যেন আমাকে ডিভোর্স না দেয় তাহলেও বলব ডিভোর্সটা হয়ে যাওয়াই ভালো। যে ছেলে বিয়ের চার মাসের মাথায় ডিভোর্স পেপার পাঠায় তার সাথে সারাজীবন থাকা সম্ভব না।

তানজিনার কথাটা বলতে দেরি আর তানজিনার মা তানজিনার গালে থাপ্পর মারতে দেরি হয়না।
“ঠাসসসসসসসসসস😶”

তানজিনা গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে। সাথি তানজিনাকে থাপ্পর মারতে দেখে হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে। তানজিনার বাবা মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে আর ভাই তো ভাবতেও পারছে না যে, ‘কেঁচো খুরতে যেয়ে কেউটে বেরিয়ে আসবে এভাবে।’

তানজিনার মা এবার রাগে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
তানজিনার মা: রিকুয়েস্ট করবো! তাও আবার তোর জন্য! ভাবলি কী করে তুই! তুই যদি এখন ডিভোর্স নাও দিতে চাস তাও তোকে আমরা জোর করে হলেও ডিভোর্স দেওয়াবো! আমার তো ভাবতেই লজ্জা লাগছে তুই আমার মেয়ে!

মায়ের কথা শুনে তানজিনা তার ভাবীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। সাথি তানজিনার তাকানো দেখে মাথা নুয়িয়ে ফেলে। ভাবির মাথা নোয়ানো দেখে তানজিনা তার বাবা, ভাইয়ের দিকে তাকায় আর দেখে তারা মাথা নিচু করে থমথমে মুখ করে আছে।

তানজিনার মা একটু দম নিয়ে আবার বলা শুরু করে,
তানজিনার মা: তোর এতই যখন বিয়েটা নিয়ে আপত্তি ছিল তাহলে আমাদেরকে বলতে পারতি! আমাদের কথায় রাজি হয়ে তোর একটা ছেলের জীবন নষ্ট করার কোন মানেই ছিল না!

তানজিনা কিছুই বুঝতে পারছে না! তার মা মিহালের মুখের কথায় তার নিজের মেয়েকে অবিশ্বাস করে ফেলল!
তানজিনা: মা, তুমি ওই ছেলের কথায় আমাকে ভুল বুঝছো!
তানজিনার মা: মোটেও না! বরংচ আমরা মিহালকে ভুল বুঝেছি।

তানজিনার মা কে থামিয়ে তাহমিদ বলা শুরু করে,

“ফ্ল্যাশব্যাক———☆

মিহাল বাড়িতে ফোন করার পর তার বাবা বলে ভিডিও কলে আসতে। মিহাল তাই করে। ভিডিও কলে এসে দেখে তানজিলার পরিবার সামনে বসে আছে তাই মিহাল সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।

তানজিনার ভাই রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে কর্কশ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
তাহমিদ: এসব কি মিহাল? তুমি যদি ডিভোর্স দিয়ে দিবে তাহলে বিয়ে কেন করেছিলে?

তানজিনার বাবা তার ছেলেকে বলছে এতো হাইপার না হয়ে ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞাসা করতে। তাহমিদ বাবার কথায় নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। এরপর আবার একই কথা জিজ্ঞাসা করে।

মিহাল প্রশ্ন শুনে চুপ করে আছে দেখে তাহমিদ আবার রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তানজিনার বাবা ছেলেকে চুপ করিয়ে নিজে বলে,
তানজিনার বাবা: মিহাল প্রশ্নের উত্তর দাও। কেন করলে তুমি এটা? তোমাকে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম।

মিহাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয়,
মিহাল: আঙ্কেল আমি জানিনা তানজিনা আপনাদেরকে কি বলেছে! তবে আমি বলব এতে আমার কোন দোষ ছিলনা।

মিহালের কথায় সাথি ঘাবরে যায় তাও নিজের কন্ঠে দৃড়তা এনে বলে,
সাথি: তোমার কোন দোষ ছিল না বলতে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ? তানজিনার দোষ ছিল? উকিলের কাছে ডিভোর্সের জন্য কে গিয়েছিল সেটা বলো?

মিহাল নিঃশব্দে হাসে আর মিহালের হাসি দেখে সাথি আরো ঘাবড়ে যায়। মিহাল সাথির কথায় জবাব দেয়,

মিহাল: দোষ কার ছিল আর কার ছিলনা সেটা একটু পরে জানতে পারবেন। হ্যাঁ, উকিলের কাছে আমি গিয়েছিলাম ডিভোর্স পেপার বানাতে!

সাথি: তাহলে এতে তানজিনার দোষটা কোথায়?

মিহাল এবার বুঝে গেছে এখন রেকর্ডিং টাই তার হয়ে কথা বলবে। তাই সে সকলের উদ্দেশ্যে বলে তাহলে আমি আপনাদের সবাইকে কিছু দেখাতে চাই সরি শোনাতে চাই!

মিহালের কথায় সবাই ভ্রু কুঁচকে ল্যাপটপের দিকে তাকায়। মিহাল তাহমিদের মেসেঞ্জারে রেকর্ডিং টা সেন্ড করে দেয় আর তাহমিদকে বলে মেসেঞ্জারে গিয়ে চেক করতে। তাহমিদ ম্যাসেঞ্জার চেক করে দেখে মিহাল তাকে একটা ভয়েজ নোট পাঠিয়েছে। মিহাল ভয়েস নোট টা ওপেন করতে বললে তাহমিদ সেটা ওপেন করে।

রেকর্ডিংয়ের সবকিছু শুনে তানজিনার পুরো পরিবার হতবাক হয়ে যায়। সাথি এসব আগে থেকে জানতো কিছুটা হলেও, তারপরও সে অবাক হয়ে যায় যে এইসব কথা মিহাল রেকর্ড করে রেখেছে এই ভেবে।

সবার রেকর্ডিং শোনার পরে মিহাল বলে,
মিহাল: এটা ঐদিনের কথোপকথনের রেকর্ডিং, যেদিন আমি আর তানজিনা রেস্টুরেন্টে মিট করেছিলাম তানজিনার আমার প্রতি করা ব্যবহারগুলো কারন জানতে। তখন আমি তানজিনার আগোচরে এই রেকর্ডিং অন করে রাখি কারণ ভবিষ্যতে লাগতে পারে এই ভেবে। আর দেখুন আজকে লেগেও গেল। আজকে যদি আমার কাছে রেকর্ডিংটা না থাকতো তাহলে আপনারা সবাই আমার ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিতেন।

তানজিনার বাবা, মা, ভাই ও ভাবি চুপ করে আছেন তাদের এখন কিছু বলার নেই। কিবা বলবেন!!
“যাব আপনা শিক্কা খুটা হো তো দুসরোকা কেয়া কেহনা!!”

তাদের সবাইকে চুপ থাকতে দেখে মিহাল বলে,
মিহাল: এতদিন তার করা সব অপমান অবহেলা আমি মেনে নিয়েছিলাম। কারণ তাকে আমি ভালবাসতাম! একপ্রকার জিদ জন্ম নিয়েছিল তাকে পাওয়ার জন্য, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই জেদ ধরে রাখা ঠিক হবে না তাই আমি জেদ ছেড়ে দিলাম আর তাকে আমি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আর তাকে আমি ভুলে যাব ইনশাআল্লাহ।

তানজিনার পুরো পরিবার আর কোনো কথা না বলে মিহালদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।

“ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড———–☆

এসব কথা তানজিনার ভাই তানজিনাকে বলেছে। তানজিনা ভাবতেও পারছেনা এভাবে ফেসে যাবে!
তানজিনার ভাইয়ের কথায় তার ঘোর ভাঙে।

তানজিনার ভাই: চিন্তা করিস না! তোদের ডিভোর্স এবার আমি নিজে তদারকি করে করাবো। তুই মুক্তি চেয়েছিলি না, তুই পাবি! সাথে মিহালও তোর থেকে মুক্তি পাবে।

এগুলো বলে যে যার রুমে চলে যায়।

_________
সানফ্রান্সিসকোতে, সবাই ক্লাস শেষ করে যে যার পার্ট টাইম জবে যায়। সন্ধ্যায় সবাই বাংলোতে ফিরে এসে ফ্রেশ হতে যার যার রুমে চলে যায়।

আজ এক সপ্তাহ হয়েছে তূর এখানে এসেছে কিন্তু মিহালের সাথে এয়ারপোর্টে একটু কথা হবার পর আর কথা হয়নি।

তূর ভেবেছিলো আমেরিকায় থাকা এই দুই বছর অন্তত মিহালের সাথে থাকতে পারবে! এই দুই বছরের সংসার অন্তত তার কপালে জুটবে!
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, মিহাল কি কখনো তাকে একটু হলেও ভালোবাসবে! নাকি সব সময় তানজিনাকেই নিয়ে ভাববে আর তাকে(তূর) অবহেলা করে যাবে!
এগুলো ভাবার পরক্ষনেই মলিন হেসে ভাবে, কি পাগল সে!! যেখানে জানে এগুলো চাওয়াও তার নিজের কাছে বিলাসিতা মাত্র!!

তূর রুম থেকে গার্ডেনে যায় একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে। গার্ডেনে গিয়ে দেখে সেখানে আরও একটি মানব অবয়ব আগে থেকে আছে। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও আস্তে আস্তে সামনে এগোয় আর আবছার লাইটের আলোয় অবয়বটাকে সে চিনতে পারে।

মিহাল! হ্যাঁ, মিহাল সেই অবয়বটা! মিহালও তূরের মতো নিরিবিলি থাকার জন্য গার্ডেনের এই পাশটায় আসে।
তূর ধীরে ধীরে মিহালের দিকে এগোয়। মিহাল তার পেছোন থেকে শুকনো পাতার মরমর ও কারো পায়ের শব্দে পেছোনে ঘুরে তাকায়। পেছনে ঘুরে সে তূরকে দেখতে পায় তাই আবার সামনের দিকে আকাশে মনোনিবেশ করে।

তূর মিহালের পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটা শায়েরী কিছুটা নিবু নিবু আওয়াজে আওড়াতে থাকে,

” হামনে জিসে চাহা উসনে চাহা কিসি অর কো!
হামনে জিসে চাহা উসনে চাহা কিসি অর কো!
খোদাকে লিয়ে,
জিসে ও চাহে,
ও ভি চাহে কিসি অর কো!!!”
(কালেক্টেড–😂😂😂😂)

তূর নিবু নিবু আওয়াজে বললেও পরিবেশ নিস্তব্ধ থাকায় শায়েরী টা মিহালের কান পর্যন্ত গেছে। তূরের মুখে হিন্দি শায়েরী শুনে আকাশের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে মিহাল, যেটা ওদের জীবনের সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে।#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৯ ( কিছুটা প্রকাশিত )

কিছুক্ষণ দুজনেই মৌন থাকে। মৌনতা কাটিয়ে মিহাল বলা শুরু করে,
মিহাল: তূর!
মিহালের ডাকে তূর পাশ ফিরে তাকায়।
মিহাল: কেমন আছো?
তূর নিঃশব্দে হেসে জবাব দেয়,
তূর: ভালো। তুমি?
আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে মিহাল বলে,
মিহাল: যার জীবনটা নাটকীয়তায় পূর্ন সে কেমন থাকতে পারে আমার জানা নেই!

মিহালের কথায় তূর তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে আর বলে,
তূর: তোমার জীবন নাটকীয়তায় পূর্ণ হলেও, একদিকে গেলে দুই কূল পাবে! আবার আরেকদিকে গেলে শুধু এক কূল পাবে!

এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলে,
তূর: কিন্তু আমায় দেখো, এক কূল আছে কিন্তু সেটাও অনিশ্চিত!

তূরের কথায় মিহাল আনমনে বলে,
মিহাল: চিন্তা করো না। তোমার অনিশ্চিত জীবনের অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।

তূর কথাটা শুনে কিছুটা চমকে গেলেও পরক্ষনেই ভাবল মিহাল হয়তো তার কথাটা বুঝতে পারেনি!!

তূর: আচ্ছা মিহাল এই দুই বছর তো এখানে তানজিনা নেই! আমার মনে হয়না তানজিনা এখানে আসবে! দুই বছর কি তুমি আমার সাথে থাকতে পারো না! এটাকে আবার অন্য কিছু মনে করো না প্লিজ। আমি বলতে চাইছিলাম যে,
“আমি তোমার কেয়ার করব আর তুমি আমার কেয়ার করবে, একসাথে দুজন বসে জ্যোৎস্না বিলাস করব আর রাতের আকাশের তারা দেখব, মাঝে মাঝে দুজনে একসাথে ঘুরতে যাব! শীতের রাতে দুজন একসাথে জানালার পাশে বসে কফি খাবো আর স্নো পরা দেখবো, ঘুম না আসলে দুজনে একসাথে গার্ডেনে এসে তোমার কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকবো বা তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো!”
এটুকুই তো চাওয়া আমার! তোমার জীবনে একান্ত আমার অধিকার তো আমি এখনো চাইতে পারি না কারন আমার আগেই তুমি অন্যকারো!
—কিন্তু মনে রাখো সে অন্য কেউ যদি নিজের জায়গা ছেড়ে দেয় তাকে আমি দ্বিতীয়বার তোমার জীবনে প্রবেশ করতে দেবো না!!!!

মিহাল চুপ করে তূরের আবদার গুলো শুনলো। মেয়েটার কষ্টগুলো সে বুঝতে পারছে, সে এখন ইচ্ছা করলে তূরকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারে কিন্তু সে চায়না তূরকে ধোঁকা দিতে!! যেদিন সে তূরের প্রতি শুধু মায়া না গভীর ভালোবাসা অনুভব করবে আর অন্য সব বাধা-বিপত্তি থেকে মুক্তি পাবে সেদিন সে তূরকে আপন করে নেবে।

মিহাল এটা বুঝতে পারছে না যে, সে তূরের সাথে বিয়ের পর থেকেই তার প্রতি কিছুটা টান অনুভব কেন করছে! আগেও তো তূর তাকে ভালোবাসতো কিন্তু মুখে বলত না! কই তখন তো তূরের প্রতি এত মায়া কাজ করতো না, এত টান কাজ করত না! তাহলে এখন কেন! তানজিনার অবহেলার কারণে! নাকি নিজের ইচ্ছায় ওর সজ্ঞানে একটি পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে!!
তানজিনার সাথে বিয়েটি আইনত স্বীকৃতিমূলক কিন্তু ধর্মীয় স্বীকৃতি এখনো নেই।
যদি এমন হতো তূর মিহালকে জোর করে বিয়ে করেছে, তাহলে কি মিহালের মনে তূরের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিতো?
এর জবাব হচ্ছে, “না!”
“জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা পাওয়া যায় না”

তূর ঐদিন মিহালকে পরোক্ষ ভাবে জোর করলেও প্রত্যক্ষভাবে জোর করেনি। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মিহালের উপর ছিল কেউ চাপিয়ে দেয় নি। মিহাল ওই দিনই বুঝতে পেরেছিল তানজিনা তাকে কখনো মানবে না! তাও মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল, যা এখন আর নেই! এমনকি মিহাল সেই আশা রাখতে ও চায়না।

প্রায় অনেকক্ষণ হয়ে গেল মিহাল তূরের কথার জবাব দেয়নি। আকাশের দিকে তাকিয়ে মিহাল মনে মনে কিছু ভাবছে তা দেখে তূর মিহালকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ধ্যান ভাঙ্গায়।

তূর: কি হলো? কি ভাবছো?
মিহাল মাথা নাড়িয়ে ঘার একটু বাঁকিয়ে আবার সোজা করে কপালে হাত দিয়ে বলে,
মিহাল: কই কিছু ভাবছি না তো!
তূর: তোমাকে আমি এতক্ষণ কিছু বলেছি, তুমি কি শুনেছো?
মিহাল: হুম, শুনলাম। কিন্তু সমস্যা ইনায়াকে নিয়ে।

মিহালের কথায় তূর একটুও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
তূর: ইনুর সাথে আবার কি সমস্যা?

মিহাল বাঁকা হেসে বলে,
মিহাল: তোমার বান্ধবী আমার ওপর নজর রাখছে!
তূর অবাক হয়ে বলে,
তূর: মানে! ইনু তোমার উপর নজর রাখছে এর মানে কি?

মিহাল বলে,
মিহাল: যেদিন তুমি এখানে আসলে সেদিন যে আমরা বনফায়ার করেছিলাম, তখন আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেটা ইনায়া দেখেছে! এই কথা আবার রাফিকে বলেছে! রাফি আমাকে তাই আগেই সাবধান করে দিয়েছে পরেরদিন।

তূর হতবাক! ইনু এসব তানজিনার জন্য করছে! তানজিনা কেমন সেটা জানার পরেও। অবশ্য ইনুর যায়গায় ইনু ঠিক কারণ তানজিনার সাথে মিহালের বিয়ে হয়েছে এখন বান্ধবীর হাজব্যান্ড যদি ভিনদেশে এসে অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে যায় তাহলেতো বান্ধবীর অনেক কষ্ট হবে! কিন্তু ইনায়ার ক্ষেত্রে বান্ধবী চুজ করাটা মানে এমন বান্ধবীর জন্য কষ্ট করে নজরদারি করছে যে কিনা নিজে তার হাসবেন্ডের কিছুতে কিছু যায় আসে না!!

তূর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
তূর: জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে!
ওরা দুজন গার্ডেনে আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে যার যার রুমে চলে যায়।
__________

দেখতে দেখতে কেটে গেছে আরও এক সপ্তাহ। এলেক্স প্রতিদিন ক্লাসে এসে তূরের সাথে বসতে চায়, মাঝে মাঝে সফল হয় আর মাঝে মাঝে রাফি অর্ক এসে তূর ও লিরার দুই পাশে বসে পরে। লিরাকে কম জ্বালায় কিন্তু তূরের কাছে এসে “ট্যুর” “টুর” এই দুই বিকৃত নামে ডাকতে থাকে! যা তূরের কাছে অসহ্য রকমের লাগে।

আজকে যখন এলেক্স এরকম করে ডাকছে তখন তূর বলে,
তূর: প্লিজ এলেক্স! তুমি আমার নামটা সঠিক উচ্চারণ করে ডাকার চেষ্টা কর, না হলে আমাকে ডেকো না!

এলেক্স: কি করব বলো “টুর” আমিতো পারিনা! তোমার কি অন্য কোন সহজ নাম নেই!!

তূর আর লিরা একে অপরের দিকে তাকায়, লিরা জবাব দেয়,
লিরা: “তূর” নামটা অনেক সহজ। “তূরফা” থেকে “তূর”। আর তুমি বলছো আরও সহজ নাম দিতে!! তুমি তো আমার নামটা কেও বিকৃত করে “লেরা” বলো😕।

এলেক্স: তোমাদের নামগুলো এশিয়ান তাই আমাদের উচ্চারণ করতে সমস্যা হয়। এখন তোমাদের যদি অন্য কোন নাম থাকে সেটা বলো।

তূর: তুমি কি “নূর” উচ্চারণ করতে পারবে?

এলেক্স: “নূৱ্ৱ”
তূর: বলো নূর।

এলেক্স অনেক কষ্টে “নূর” উচ্চারণ করতে পারল।

এলেক্সেহ এক্স গার্লফ্রেন্ড “ওলিভা”। ওলিভাদের ক্লাস শুরু হয়েছে তিন দিন হলো। মেয়েটা এলেক্সের সাথে তূর ও লিরাকে দেখে কিন্তু ব্রেকআপ হবার কারনে সামনে এসে বলতে পারছে না। কিন্তু ওলিভা যদি এশিয়ান মেয়ে হতো বা বাংলাদেশি মেয়ে হতো তাহলে এতক্ষনে এলেক্সের মাথার চুল থাকতো না😂😂।

এরিকের সাথে লিরার কথা হয় বলতে, হাই, হ্যালো কেমন আছো? এগুলো! তাও যখন এলেক্সের সাথে আসে।
________
জারিন দুইদিন যাবত রণকের সাথে কথা বলছে না! কারন এক আমেরিকান তরুণী যে কিনা ওদের ক্লাসমেট, সে রণকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়েছে। জারিন তখন ওয়াশরুমে গিয়েছিল। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে ক্লাসের দরজায় দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে! তখন ফাইজা জারিনের সাথে ছিল ফাইজা একবার জারিনের দিকে একবার রণকের দিকে তাকাচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ফাইজা রণককে জোরে ডাক দেয়,

ফাইজা: রণক!!!!
ফাইজার ডাকে রণক মেয়েটাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায় আর দরজার দিকে তাকিয়ে দেখেন জারিন অশ্রু ছল ছল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রণক কিছু বলতে যাবে তার আগেই জারিন ক্লাসে এসে নিজের ব্যাগ নিয়ে চলে যায়।
ফাইজা সবটা হতভম্ব দৃষ্টিতে দেখল তার এখন কি করা উচিত সে বুঝতে পারছে না। জারিনের চলে যাওয়া দেখে রণকও নিজের ব্যাগ নিয়ে জারিনের পিছু পিছু ছুটে যায়।

ফাইজা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে তারপর ঐ মেয়েটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
ফাইজা: এই মেয়ে তুমি একটা অচেনা ছেলেকে আবার জড়িয়ে ধরেছো কেন?
মেয়ে: সরি! অচেনা কোথায়? “রনো” আমার ক্লাসমেট!
ফাইজা: তোমার ক্লাসমেট কিন্তু তোমার বয়ফ্রেন্ড না!!
মেয়েটা: হতে কতক্ষন! এশিয়ান ছেলেদের নাকি বিদেশী মেয়ে অনেক পছন্দ! রনোও আমাকে পছন্দ করে ফেলবে!

এই মেয়েটার কথা শুনে ফাইজার মাথায় রক্ত উঠছে। মেয়েটা বলে কি এসব! ফাইজা আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বলে,
ফাইজা: ইন ইউর ড্রিমস! অ্যান্ড ওয়েট ফর দা নেক্সট ডে!!

ফাইজা এটা বলে ওখান থেকে চলে আসে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here