শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -১৬+১৭

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৬ (নতুন বন্ধু)

সবার ভ্রু কুচকানোতে এলেক্স ও ম্যাক্স এর কোনো ভাবাবেগ নেই তারা নিজেদের মতো করে বসে আছে, পাশে যে প্রায় ডজন খানেক ছেলে মেয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাতে যেন এই দুজনের কিছু যায় আসে না।

মিহাল ওই দুজনের উঠার লক্ষণ না দেখে আর তূরের পাশে এসে ছেলেটাকে বসতে দেখে ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করে,

মিহাল: Hello brother! who are you? and why are you sitting beside us?
(ওহে ভাই! তুমি কে? আর তুমি আমাদের পাশে বসে আছো কেন?)

এলেক্স মিহালের দিকে তাকায় কিন্তু না সে মিহালকে ক্লাসে দেখেছে বলে মনে হয় না। তাই বলে,
এলেক্স: Myself alex and i am her friend.(তূরকে লক্ষ করে)!
(আমি এলেক্স এবং আমি তার বন্ধু)

এলেক্সের কথায় তূর অবাক! বলে কী এ ছেলে? এই ছেলে নাকি তার ফ্রেন্ড!!
তূর: what! who said I am your friend?
(কি! কে বলেছে আমি তোমার বন্ধু?)

এলেক্স তার কিউট স্মাইল দিয়ে বলে,
এলেক্স: Didn’t you sit next to me in class?
(তোমরা কি ক্লাসে আমার পাশে বসে ছিলে না?)

তূর অবাক! ক্লাসে একদিন একসাথে বসেছে বলে ফ্রেন্ড হয়ে গেলো! ছেলেটা তাকে ক্লাসমেট বলতে পারতো! ভিনদেশী মানুষরা বুঝি এরকমই সবার সাথে ফ্রেন্ডলি হয়!

লিরা এতখন সবার মতো শুনলেও এবার বলে,
লিরা: Yes, we were sitting next to you. then is it indicate that we are friend!
(হ্যাঁ, আমরা তোমার পাশেই বসে ছিলাম। তাহলে এটা কি ইঙ্গিত করে যে আমরা বন্ধু! )

লিরা কথা শুনে এলেক্স হেসে বলে,
এলেক্স: Didn’t you notice? I and max was alone in the first bench!
(তোমরা লক্ষ্য করো নি? প্রথম বেঞ্চে আমি এবং ম্যক্স একা ছিলাম!)

লিরা: so what?
(তাতে কি?)
এলেক্স: I don’t let anyone else sit next to me. Since I let you sit, you are now my friend.
(আমি অন্য কাউকে আমার পাশে বসতে দেই না। যেহেতু তোমাদেরকে বসতে দিয়েছি তাই তোমরা এখন আমার ফ্রেন্ড।)

সবাই হতবুদ্ধির মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে জাস্ট একসাথে বসতে দিয়েছে বলে এখন তারা ফ্রেন্ড!!

রাফি: All right, you guys are our friends from now on.
(আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা এখন থেকে আমাদের ফ্রেন্ড।)

রাফির কথা শুনে বাকিরা রাফির দিকে তাকায় রাফি তাদেরকে বলে,
রাফি: ভিনদেশে কিছু নতুন ফ্রেন্ড বানানোতে কোনো সমস্যা নেই তাইনা!

রাফির কথায় সবাই সম্মতি মূলক হাসে। এলেক্স, ম্যাক্স, এলিনা ও এরিকের সাথে হ্যান্ডশেক করে। এরিক এতখন যাবত ওদের কথোপকথন শুনছিল আর গম্ভীরমুখে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছিল কিন্তু লিরা মেয়েটার কথার যুক্তি শুনে এরিকের কিছুটা ভালো লাগে কারণ এরিক সব সময় এলেক্সকে বলে, “এরকম অ্যাটিটিউড যেহেতু দেখায় মানে তার বেঞ্চে তার বন্ধু ছাড়া আর কাউকে বসতে দেয় না তাহলে কোন অচেনা কারো সাথে কথা বলা ঠিক না। কিন্তু এলেক্স এগুলো শুনে না কারণ এলেক্স নিজের মতো চলতে পছন্দ করে।”

☆☆☆
“এডওয়ার্ড এলেক্স ” নিজের মতো করে চলতে পছন্দ করে কিন্তু বন্ধুদের জন্য সবকিছু করতে পারে। বাবা-মা সেপারটেড কিন্তু ডিবোর্সোড না! বাবা ‘এডওয়ার্ড রেক্স” মা ‘এলিজা’। একে অপরকে অনেক ভালোবাসে তাই সেপারেটেড হবার পরেও ডিবোর্স নেয় নি। কোন তৃতীয় পক্ষ তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে। এলেক্সের বয়স যখন চৌদ্দ বছর তখন থেকে তারা আলাদা যাতে তাদের সম্পর্কে আর তিক্ততা না আসে তাই সসম্মানে আলাদা থাকে। এলেক্স মায়ের কাছে দুবছর ছিলো যখন ষোল বছর হয় তখন থেকে বাবার কাছে থাকে, ছুটির সময় এলেক্স তার মায়ের কাছে যায় বা তার মা তার কাছে আসে।
এরিক ও এলিনা হচ্ছে এলেক্সের বড় চাচার ছেলে মেয়ে। বড় চাচা ও চাচি কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল যখন এরিকের বয়স দশ ও এলিনার বয়স সাত। এরিক ও এলেক্স প্রায় সমবয়সি।

এরিক এলেক্সের থেকে চার মাসের বড়। এলেক্সের মা এলিনা ও এরিককে নিজের ছেলে মেয়ের মতোই দেখাশোনা করতেন এমনকি তারা সেপারেশনের যাওয়ার পরে এলেক্সের মা এলিনাকে নিজের সাথে নিয়ে যায় আর সাত বছর নিজের তত্ত্বাবধানে রাখে।

“এডওয়ার্ড এরিক” একটু গম্ভীর প্রকৃতির। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে দুষ্ট প্রকৃতির এরিক কিছুটা চুপচাপ হয়ে যায়। এরিক নিজের মা ‘এরিনা’ কে বাবার তুলনায় খুব ভালোবাসতো তাই মাত্র দশ বছর বয়সে বাবা মা দুজনকে হারিয়ে ওর চঞ্চলতা হারিয়ে যায়। এলেক্সের মা মানে এরিকের চাচী ওদের দুই ভাই বোনকে দেখাশোনা খুব ভালোভাবে করতো কিন্তু চাচা-চাচীর মধ্যে ঝামেলা হবার পর চাচী যখন সেপারেশনে চলে যায় তখন এলিনাকে সাথে করে নিয়ে যায় এলেক্সও কয়েকদিন পর মায়ের কাছে যায় কিন্তু এরিক যায় না আর তারপর থেকে গম্ভীর হয়ে যায় এরিক।
☆☆☆

সবার মধ্যে পরিচিত হবারপালা—–
এলিনা: Hi, I am Elena Alex’s cousin. I am studying in the third year in microbiology.
( আমি এলিনা এলেক্সের চাচাতো বোন। মাইক্রোবায়োলজিতে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি।)
ম্যাক্স: Hello, I am Max. (আমি ম্যাক্স।)
এরিক: Hello, I am arik. I am studying in the first year of Masters in Pharmacy.
( আমি এরিক। ফার্মেসিতে মাস্টার্স প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছি।)

একে একে রাফিরা সবাই নিজের পরিচয় দেয়। কিন্তু ওদের নাম উচ্চারন করতে অবস্থা খারাপ!!!!

তাওহীদ: I am Tauhid. First year Masters in Biochemistry at the University of California.
( আমি তাওহীদ। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া তে বায়োকেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স প্রথম বর্ষ।)
এমন করে আসফি, নাদিয়া নিজেদের পরিচয় দেয়।

কিন্তু ওদের চার জনের উচ্চারন—টাওহিড, নাডিয়া, এসফি।😕😕

তূর, লিরা, অর্ক ও রাফিও নিজেদের পরিচয় দেয় কিন্তু উচ্চারন—-
ট্যুর, লেরা, অরখ, রাফি।

লিরা: Its not lera!! its lira! (লেরা না লিরা)
চারজন: same! lira and lira! (একই! লেরা এবং লেরা)
তূর: Its not tour! Its tur! (ট্যুর না তূর)
চারজন: toor! (টুর)
অর্কের টা তারা আগের মতোই উচ্চারন করে। রিজভীকে উচ্চারন কে “রিসভি”। মিহালকে উচ্চারন করে “মেহাল”। ইনায়াকে “এনায়া”।

ওইদিনের মতো ক্লাস শেষ করে বাসায় আসে সবাই।—-

জারিন, রণক ও ফাইজা কোনো নতুন ফ্রেন্ড বানাতে পারেনি কিন্তু তাইজুল একটা ইন্ডিয়ান ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করেছে। শাফকাত ক্যালিফোর্নিয়াতে ফ্লাট দেখেছে। সেখানে একটা বেডরুম, একটা স্টাডি রুম, ডায়নিং ও ড্রয়িং একসাথে, কিচেন ও দুইটা ওয়াশরুম আছে।

—পরেরদিন,, নাদিয়া, শাফকাত, আসফি ও তাওহীদ ইউনিভার্সিটি অফ সানফ্রান্সিসকো তে যায়। এই ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস অত্যাধুনিক না হলেও প্রাকিতিক ভাবে সুন্দর।

———
এলেক্স আজকে তূর ও লিরার জন্য বেন্চ খালি রেখেছে। রাফি ও অর্ক বসতে চাইলে বলে পরের বেন্চে ম্যাক্সের সাথে বসতে। ম্যাক্স বেচারাকেও আজকে এলেক্স উঠিয়ে দিয়েছে তাই সে মনের দুঃখে এলিনার সাথে চ্যাট করছে আর এলেক্সের কথা শুনে রাফি, অর্ককে হাই বলে।

তূর ও লিরা প্রথম বেন্চে এলেক্সের সাথে না বসে চতুর্থ বেঞ্চে যেয়ে বসে কিন্তু বসার এক মিনিট না যেতেই এলেক্স ধপ করে তূরের পাশে বসে পরে😒। তূর ও লিরা সেদিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালে এলেক্স তার কিউট মার্কা হাসি দেয়।

—–
এলেক্স দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম। জিম করা ফর্সা বডি, লম্বা ছয় ফিট এক ইন্চি। চুল গুলো স্টাইল করে কাটা এবং ব্রাউন কালার যা জন্ম থেকে, এলেক্সের মায়েরও ব্রাউন কালার চুল। চুল গুলো সব সময় ঝারুর মতো ফুলানো অবস্থায় খাড়া হয়ে থাকে কোনো হেয়ার জেল ছাড়াই। চোখের মনিও ব্রাউনিস।
মেয়েরা তার পিছে পরে থাকে কিন্তু এলেক্স এপর্যন্ত একটা মেয়ের সাথেই রিলেশনে গিয়েছিলো তাও ছয় বছরের রিলেশনশীপ! তার নাম “ওলিভা”। দুই মাস হতে চললো ওদের ব্রেকআপ হয়েছে। ওলিভা একই ইউনিভার্সিটিতে অনার্স চতুর্থ বর্ষে বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়াশোনা করছে। ওলিভা এলেক্সকে এখনো খুব ভালোবাসে কিন্তু এলেক্সকে নিয়ে সে ইনসিকিউরড কারন ওলিভার সামনেই এলেক্সকে অনেকে প্রোপোজ করেছে। এলেক্স কিছুটা ফ্লার্টি টাইপ। সে ওই মেয়েদের সাথে প্রেম না করলেও ফ্লার্ট ঠিকি করতো আর এসব বিষয় নিয়েই ওদের ঝগড়া হতো এরপর শেষমেশ শান্তি বজায় রাখতে ব্রেকআপ হয়েছে। ব্রেকআপের পর দুই মাস হতে চলল কিন্তু এলেক্স এখনো কোন রিলেশনশিপে যায় নি অন্য কারো সাথে আর না ওলিভা গিয়েছে।
——
তূর যেহেতু মিহালকে ভালোবাসে ও মিহালের স্ত্রী তাই এলেক্সের রূপে সে সব মেয়েদের মতো পাগল হয়নি। আর লিরার তো এলেক্সকে না তার চাচাতো ভাই এরিককে ভালো লেগেছে, এরিকের গম্ভীর্যতা ও ম্যানলি অ্যাটিটিউড এর কারণে।

——-
এরিক দেখতে এলেক্সের মতো সুদর্শন, জিম করা ফর্সা বডি, লম্বা ছয় ফিট এক ইন্চি। তবে চেহারা পুরো এক না। চুল গুলো ব্রাউনিস কালো আর স্টাইল করে কাটা আর সেগুলো কপালের মাঝে সাইড করে পরে থাকে। চোখের মনি নীলাভ কালো কারণ তার মায়ের এরকম ছিলে চোখের মনি।
তাকেও অনেকে প্রোপোজ করেছে কিন্তু ছোট বেলায় বাবা মা হারিয়ে চাচা-চাচীকে বাবা-মা রূপে পেয়েছিলো কিন্তু কোন এক তৃতীয় ব্যাক্তির কারনে তারা আলাদা থাকে। এলেক্স না জানলেও এরিক জানে তৃতীয় ব্যাক্তিটি একজন মেয়ে, যে কিনা তার চাচা কে ভালোবাসতো একসময় এমনকি চাচাও কলেজ লাইফে ভালোবাসতো কিন্তু মেয়েটা অনেকের সাথে ফিজিক্যাল হতো টাকার বিনিময়ে। চাচার সাথেও মাঝে মাঝে ঐসব করতে চাইতো কিন্তু চাচা সব সময় পড়ালেখা নিয়ে সিরিয়াস থাকতো তাই সে ঐ প্রস্তাব কে না করে দিতো আরেকটা কারণ তারা দুজনেই তখন আঠারো বছরের মাত্র আর তখনি এসবে জড়িয়ে গেলে লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হতো তাই চাচা এতো দ্রুতো এসবে যেতে চায় নি । চাচা একদিন এসব জেনে সম্পর্ক শেষ করে দেয় তারপর এক বছর পর চাচীর সাথে রিলেশনে যায়। চাচী অবশ্য চাচার আগের রিলেশন থাকার সময় থেকেই ভালোবাসতো।
এলেক্স ও এরিকের বয়স যখন তেরো তখন ওই মেয়ে এলেক্সের বাবার কম্পানিতে এলেক্সের বাবার পিএ হিসেবে জয়েন করে কিন্তু এলেক্সের বাবা অবশ্য জব দেয়ার আগে জানতে না সেটা তার প্রাক্তন। এরপর থেকেই ওই মেয়ে ঝামেলা শুরু করে। এলেক্সের মায়ের কাছে মিথ্যা ইডিট করা ছবি পাঠায় যার মধ্যে এলেক্সের বাবার সাথে ওই মহিলার অন্তরঙ্গ অবস্থায়। এলেক্সের মা সেগুলোকে অগ্রাহ্য করে এই ভেবে তার হাসবেন্ড এরকম করতেই পারে না।
এরপর ওই মহিলা ইচ্ছা করে এলেক্সের বাবার শার্টে লিপ্সটিকের নিশান ছাড়ে যাতে এলেক্সের মা সন্দেহ করে। এলেক্সের বাবা অবশ্য যতটা সম্ভব সেই মহিলার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতো। এলেক্সের মায়ের মনে সন্দেহ জন্ম নেয় আর তাদের মাঝে ঝগড়া হতে থাকে। এরপর সেই মহিলা মুখ্যম চাল চালে! মানে সেদিন এলেক্সের বাবা তার পিএ এর সাথে নিউইয়র্কে যায় কাজের কারনে। সেদিন সেই মহিলা এলেক্সের বাবাকে ইনটক্সিসাইড করে কিন্তু এলেক্সে বাবা নিজের অবস্থা খারাপ হচ্ছে বুঝতে পেরে নিজের হোটেল রুমে চলে গিয়ে দরজা ভেতর থেকে লক করে দেয় আর সেই মহিলা নিজের কাজ হাসিল করতে না পেরে রাগে হোটেলের এক ছেলেকে নিয়ে ঘনিষ্ট হয় এবং পরে সেটি ইডিট করে এলেক্সের মা কে পাঠায়।

এলেক্সের মা তার হাসবেন্ডকে ওই রাতে ফোন করেছিলো কিন্তু রিসিভ হয়নি তাই ওই ভিডিও দেখে তার মনোবল ভেঙে পরে।
এলেক্সের বাবাকে এলেক্সের মা ইনডিরেক্টলি জিজ্ঞাসা করেছিল ওই রাতে উনি কোথায় ছিলেন?
কিন্তু ‘এডওয়ার্ড রেস্ক’ কোন উত্তর দিতে পারেনি কারণ সে সেদিন নেশাগ্রস্ত হয়ে মাতাল হয়েছিল তার কিছুই মনে ছিলনা। তারপর থেকেই ঝামেলা আরো বাড়তে থাকে। এরপর তারা সেপারশনে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে ডিবোর্স দেয় না।

তারা দুজন এখনো একে অপরকে ভালোবাসে।#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৭ ( আসন্ন ঝড়)

তানজিনা এখন নিজের মনে মনে শিউর যে সে ডাক্টার আরিফকে ভালোবাসে এমনকি ডাক্টার আরিফও যে তাকে ভালবাসে তারও প্রমান পেয়েছে এতদিন।
ডাক্টার আরিফ তানজিনার অনেক কেয়ার করে এটা হসপিটালের অনেকেই লক্ষ করেছে। লান্চ টাইমে হসপিটালের কেন্টিনে একসাথে খাওয়া হয় তাদের। এগুলো অনেকে পছন্দ করে না তবে ডাক্টার আরিফের সামনে বলতে পারে না।
আজ তো আরিফ তানজিনাকে নিয়ে লাঞ্চ টাইমে পার্শ্ববর্তী রেস্টুরেন্টে গিয়েছে কারণ আরিফ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছে সেখানে।

“ফ্ল্যাশব্যাক———-☆
রেস্টুরেন্টে বসে আছে আরিফ ও তানজিনা। দুজন টেবিলের মুখোমুখি। কিছুক্ষণ পরিবেশ নিস্তব্ধতায় কেটে যাবার পর আরিফ মুখ খুলে,
আরিফ: মেহেবিন, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

তানজিনা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ানোর পর আরিফ আবার বলে,
আরিফ: জানিনা তুমি কথাটাকে কিভাবে নিবে! কিন্তু তাও আমি আজকে বলতে চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি! এটাকে ভালেলাগা বলো না প্লিজ! কারন আমি এতো দিন যাবত নিজের অনুভূতিকে সময় নিয়ে বুঝেছি। তাই তোমাকে আজ সব কিছু বললাম। তুমি আমাকে না করে দিতে পারো তোমার ইচ্ছা।

তানজিনা সেখানে আর খেতে পারেনি, রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে যায় হসপিটালে কিছু না বলে। তানজিনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরিফ হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

“ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড——–☆

তানজিনা এবার ডিভোর্স পেপার সাবমিট করার সিদ্ধান্ত নিল। সাবমিট করার জন্য পরিবারের সবাইকে বলতে হবে তাই ভাবিকে বলে,
তানজিনা: ভাবি, আমি ডিভোর্স পেপার এবার সাবমিট করবো।
সাথি: তুমি শিউর তো?
চমকানো গলায় বলে।

ভাবির কথায় তানজিনা বলে,
তানজিনা: হুম, কালকে ডাক্টার আরিফ আমাকে প্রোপোজ করেছে তাই আমি ভাবলাম আগে ডিভোর্সের ঝামেলা শেষ করি তারপর উনার প্রোপোজাল একসেপ্ট করি!

সাথি এটা শুনে খুব খুশি হয়। কারন তার নিজের আপন কোন বোন নেই চাচাতো বোন আছে তবে সেটার স্বভাব ভালো না তাই অতো মায়া নেই।
সাথি: তাহলে জলদি সাবমিট করে দাও। তোমাদের বিয়ের ব্যাপারটা তো আমাদের পরিবারের বাহিরে যায় নি তাই রিস্ক নেই।

সাথি আবার কিছু ভেবে বলে,
সাথি: কিন্তু মা-বাবা কে কিভাবে বুঝাবে?

তানজিনা এবার নিজেও চিন্তায় পরে যায় যে কিভাবে বলবে! সাথি কিছু ভেবে বলে,
সাথি: তোমাদের ডিভোর্স পেপার কে তৈরি করেছে?
তানজিনা বলে,
তানজিনা: মিহাল।
জবাব শুনে সাথির হাসি প্রসারিত হয়। সে বলে,
সাথি: তাহলে তো কোনো প্রবলেম নেই! উকিলের কাছে যাওয়া আসা সব মিহাল নিজে করেছে তুমি শুধু সাইন করেছ তাই ডিভোর্স এর পুরো দোষটা তুমি মিহালের কাঁধে দিয়ে দিতে পারবে।

তানজিনা সাথির কথা ভাবে, আসলে তার ভাবি কিন্তু ঠিকই বলেছে! ডিভোর্স যে তানজিনা চেয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই! মিহাল সবকিছু তৈরি করেছে তো দোষটা মিহালের কাঁধে দেওয়া যাবে। এরপর তানজিনা সাথির কথায় সায় মিলিয়ে বাড়ির সবার সাথে কথা বলতে যায়।

তানজিনা আজকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে এসেছে বিকেলে আর তার ভাবিকেও বাসায় আসতে বলেছে। তানজিনার ভাবি তানজিনার ভাইকে ফোন করে জলদি বাসায় আসতে বলে।

রাত প্রায় নয়টা ছুঁই ছুঁই। তানজিনাদের বাসার সবাই তাদের ড্রয়িং রুমে বসে আছে। তানজিনা ডিভোর্স পেপার টা হাতে নিয়ে বসে আছে। পুরো ড্রয়িং রুম যেন উৎকণ্ঠায় ভরা যে কি বলবে তানজিনা!!

সাথি বলে,
সাথি: বলো তানু! কি বলবে?

তানজিনার ভাই তাহমিদ বলে,
তাহমিদ: কি বলবি জলদি বল! তোর জন্য আমি চেম্বার ছেড়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসছি।

তানজিনার ঢোক গিলে নিজেকে ধারস্থ করে ডিভোর্স পেপার টা ভাইয়ের হাতে তুলে দেয়। তানজিনার ভাই ভ্রু কুঁচকে ডিভোর্স পেপার টা হাতে নেয়। এরপর যখন সেটা খুলে দেখতে থাকে, তখন তানজিনা বলতে থাকে,
তানজিনা: মিহাল আমার সাথে বিয়েটা টিকিয়ে রাখতে চায় না তাই আমেরিকায় যাবার দেড় মাস আগে আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠায় আর বলে জলদি যেন সম্পর্কটা শেষ করে দেই!

তানজিনা আবার নিজের নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে থাকে,
তনজিনা: আমি এতদিন ভেবে দেখলাম যে মিহালকে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়া টাই আমার জন্য ভালো হবে কারণ যে বিয়ের চার মাসের পর পরই আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠায় সে আমার সাথে সারাজীবন কিভাবে থাকবে!!!!

এতক্ষণ তানজিনার মা, বাবা ও ভাই চুপচাপ সবকিছু শুনছিল। সবার মুখমন্ডলে গাম্ভীর্যের ছাপ। সবার চেহারার অবস্থা দেখে তানজিনা তার ভাবীর দিকে তাকায়, তার ভাবী ইশারায় তাকে অপেক্ষা করতে বলে।

অপেক্ষার প্রহর শেষ করে তানজিনার ভাই বলে,
তাহমিদ: এতদিন কেন আমাদের জানাও নি তানজিনা?

তানজিনা ভাইয়ের মুখে “তানু” ছাড়া “তানজিনা” শুনে কিছুটা ভড়কে যায়। কারণ তার ভাই যখন রেগে যায় তখন তাকে পুরো নামে ডাকে। তানজিনা চোখ মুখ কিছুটা নরম করে বলে,
তানজিনা: আমি তোমাদের টেনশন দিতে চাইনি। তোমরা মিহাল কে কতটা বিশ্বাস করে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলে তাই তোমাদের সেই বিশ্বাসকে ভাঙতে চাইনি কিন্তু আজ আমি নিরুপায় আমি আর এসব বয়ে বেড়াতে পারছিনা।

তানজিনার বাবা-মা একদম চুপ হয়ে গেছেন তারা ভাবতে পারছে না যে মিহাল এই কাজ করতে পারে!! মিহালকে তারা এতদিন “সব সম্পর্কের সম্মান করে” এরকম ছেলে ভাবতো! আর এখন কিনা তার মেয়ের জীবন নিয়ে এভাবে খেলল!!!

তাহমিদ এবার রেগে বলে,
তাহমিদ: এখনই মিহালদের বাসায় যাব আর এই ডিভোর্স পেপার দেখিয়ে বলবো এসব কি!! আব্বু, আম্মু তোমরাও চলো আমার সাথে। তানু তুই যাবি না, তুই এখানেই থাকবি! সাথি চলো।

________
রাত দশটা বেজে কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে। তানজিনার পুরো পরিবার শুধু তানজিনা ছাড়া সবাই মিহালদের বাসায় ড্রইংরুমে বসে আছে আর ড্রইংরুমের টি টেবিলের ওপর ডিভোর্স পেপার টা পড়ে আছে।

মিহালদের বাসায় শুধু মিহালের বাবা-মা আছে, কায়রা তার শ্বশুর বাড়ি। মিহালের বাবা-মা ডিভোর্স পেপার দেখে কোন রকম রিয়েকশন দেয়নি। কারণ তারা জানত এটা হওয়ারই ছিল।

মৌনতা ভেঙে তানজিনার বাবা বলে,
তানজিনার বাবা: কায়েস, আমি ভাবতেও পারিনি যে তোমার ছেলে এরকম করতে পারে!! তোমার ছেলে আমার মেয়েকে ভালোবাসে এরকম বলার কারণে আমি আমার মেয়ের সাথে তোমার ছেলের বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ছেলে এটা কি করলো! বিয়ের চার মাস পর পরই ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করলো!

বাবাকে থামিয়ে তাহমিদ বলে,
তাহমিদ: আমি তো এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। আমার বাবা বলল, “মিহাল খুব ভালো ছেলে, তানজিনাকে খুব ভালো রাখবে আর সে নাকি তানজিনাকে ভালোবাসে!” তাই রাজি হয়ে গেছিলাম।

সাথি পুরোটা সময় চুপ করে আছে কারন সে কিছু বললেই যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়!

মিহালের বাবা এবার কথা বলে। এতক্ষণ সে সবকিছু শুনছিল।
মিহালের বাবা: ভাইসাব,
” তালি কিন্তু একহাতে বাজে না, তালি দুই হাতে বাজে।”
আপনি শুধু আমার ছেলের দোষটা দেখছেন কিন্তু নিজের মেয়ের দোষটা দেখছেন না!!
তাহমিদ বলে,
তাহমিদ: আমার বোনের একটাই দোষ, সে কেনো এগুলো আমাদের আগে বলল না!

তানজিনার মা: খুব বিশ্বাস করে আপনার ছেলের হাতে আমার মেয়ের হাত তুলে দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনার ছেলে আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখলো না!! আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ টা না করলেও পারত।

তাহমিদ মায়ের কথায় বলে,
তাহমিদ: মা, তুমি চিন্তা করো না। ওই ছেলে আমার বোনের সর্বনাশ করে পালাতে পারবে না! ওকে তো উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো। আঙ্কেল আপনি আপনার ছেলেকে এখনি ফোন করুন আমরা জানতে চাই কারণ কি?

মিহালকে ফোন করার কথা শুনে সাথি ভয় পেয়ে যায়। লে বলে,
সাথি: কি দরকার ফোন করার? ওই ছেলে তো এখন মিথ্যা কথা বলবে তানজিনার নামে!

মিহালের মা এবার বলে,
মিহালের মা: না! মা, ফোনটা করতে দেও। আমরাও জানতে চাই মিহাল কেন তানজিনাকে ডিভোর্স দিচ্ছে।

তানজিনার বাবা-মা ও ভাই সবাই এতে সায় মিলায় আর মিহালকে ফোন দেয়। সাথি ভাবছে, কোনো রকম গণ্ডগোল যেন না হয়। সে সবার থেকে একটু আড়ালে গিয়ে তানজিনা কে ফোন করে,
তানজিনা: হ্যালো ভাবি, কি অবস্থা ওখানে?
ফোন রিসিভ করেই হড়বড় করে এসব বলে তানজিনা।

সাথি: তোমার ভাই তো আবার মিহালকে ফোন দিতে বলতেছে আর সবাই রাজি হয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করলাম যাতে ফোন না দেয় কিন্তু তারা আমার কথা শুনলো না, সেই মিহালকে তারা ফোন দিচ্ছেই।

তানজিনা: আমি ভাবি এত ভয় পাওয়ার কী আছে? কোন প্রমাণ আছে আমার বিপক্ষে তার কাছে!! ডিভোর্স পেপার যে মিহাল বানাতে বলছে তার প্রমান তো উকিল নিজে। তাই চিন্তা বাদ দাও আর জলদি বাসায় আসার চেষ্টা করবা। আমি কল কাটলাম! ডাক্টার আরিফের মেসেজ আসছে।
এই বলে তানজিনা কল কেটে দেয়।

________
বাংলাদেশ সময় রাত দশটা ত্রিশ আর সানফ্রান্সিসকোর সময় সকাল নয়টা ত্রিশ।
মিহাল এখন ক্লাসে। আর আধা ঘন্টা পর প্রথম ক্লাস শেষ হবে, তারপরে এক ঘন্টা কোন ক্লাস নেই। হঠাৎ করে মিহালের ফোন ভাইব্রেশন হওয়া শুরু করে। ভাইব্রেশনের কাঁপা কাঁপিতে মিহাল ফোনটা পকেট থেকে নিয়ে দেখে তার বাড়ি থেকে ফোন আসছে।

মিহাল স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখে স্যার খুব মনোযোগ দিয়ে হুয়াইট বোর্ডে লিখছে। মিহাল ফোন কেটে দিয়ে মেসেজ করে দেয় যে, ‘ক্লাসে আছে। আধা ঘন্টা পর কল ব্যাক করবে।’
এরপর মিহাল আবার ক্লাসে মনোযোগি হয়।

ক্লাস শেষে মিহাল লাইব্রেরীতে চলে যায় কারন সেখানে যেয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে তারপর কথা বলবে। বাড়ির থেকে ফোন আসায় মিহাল এইটুকু তো বুঝতে পেরেছে যে কোনো কারণ ছাড়া তাকে ফোন করেনি। বাড়ি থেকে সচরাচর ডিরেক্ট ফোন আসে না, প্রথমে মেসেজ করে তারপর ফোন করে।
মিহাল বাড়িতে ফোন করে,

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here