#আমি_ফাইসা_গেছি(০৪)
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
বধুর সাজে নববধু তোড়া বেলকুনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তার আজ কেনো জানি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।সেজন্য দু চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে তার।
এতো চঞ্চল,রাগী আর জেদি মেয়েটা হঠাৎ করে শান্ত হয়ে গেছে।কারণ তার যে শুধু বার বার মা বাবার সেই কান্না বিজড়িত চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
তার মা বাবা যখন তাকে কুশানের হাতে তার হাত মিলিয়ে দিলো তখন বার বার শুধু একটা কথাই বলেছে,
মারে আজ থেকে কুশানই তোর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।এই সম্পদের খেয়াল রাখিস।আর শশুড়বাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করিস।শশুড়, শাশুড়ী, ননদের কথার অবাধ্য হবি না কখনো।সবার সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করবি।আজ থেকে এরাই তোর আপনজন।আর এটাই তোর নিজের ফ্যামিলি।
কিন্তু তোড়া তো জিদের বশে কুশানকে বিয়ে করেছে।সে তো কুশান আর তার বোনদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছে।কেনো কুশান তার সাথে প্রেম করার সময় একের পর এক মিথ্যা কথা বললো,কেনো তাকে ঠকিয়ে অন্য মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলো,কেনো তাকে কুশান বিয়ে করতে চাইতো না,কেনো কুশানের বোনেরা তাকে নিয়ে সবসময় তিরস্কার করে কথা বললো আর কেনোই বা তাকে আনস্মার্ট মেয়ে বলে অপমান করলো?
তোড়া তো কুশানের সাথে মিলেমিশে সংসার করার জন্য তাকে বিয়ে করে নি।
তবে এখন কেনো জানি তার মনে হচ্ছে কাজটা সে ঠিক করে নি।কারণ বিয়ে টা তো এক দুই দিনের জন্য নয়। স্বামী আর স্ত্রীর বন্ধন হলো সবচেয়ে পবিত্রতম বন্ধন।যে সম্পর্কে থাকবে একে অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস,আর অপরিসীম ভালোবাসা।কিন্তু কুশান যে তার ভালোবাসার যোগ্যই না।সে এক নাম্বারের প্রতারক,চিটার,ভিতু একটা ছেলে।যার নিজের কোনো স্বাধীনতা নাই,বাবা মা বোনদের কথামতো ওঠে আর বসে।সবকিছু জেনে তবুও কেনো তোরা কুশানকে বিয়ে করলো এতোক্ষন দিয়ে ভাবছে সে।
আজ বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি পড়ছে।আর মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকালে স্পষ্ট দেখা যায় তোড়াকে।
কুশান রুমে এসে যখন তোরাকে পেলো না তখন সে নিজেও বেলকুনিতে চলে গেলো।
বেলকুনির লাইট টা অফ ছিলো বিধায় বেলকুনিটা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখাচ্ছিলো। তবুও বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।
কুশান তো তোড়ার এমন সাহস দেখে সত্যি অবাক হলো।
সে তো জানে তোরা বিদ্যুৎ চমকানোকে খুব ভয় পায়!কতবার যে ভয় পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছে তার ঠিক নাই। কিন্তু আজ দেখি পুরাই উলটো।
কুশান মনে মনে ভাবতে লাগলো তোড়ার আবার এতো সাহস কবে থেকে হলো?
কুশান হাত বাড়িয়ে তোড়াকে ধরতে গিয়েও আবার তার হাত ফিরিয়ে নিলো।কারণ তোরা এখন যে পরিমানে তার উপর রেগে আছে তাকে স্পর্শ করলে নির্ঘাত তুলকালাম শুরু করে দিবে।তার চেয়ে বরং ওকে ওর মতোই থাকতে দেওয়া হোক।আজ অযথা ঝামেলা করার মানেই হয় না।
এদিকে বৃষ্টির বেগ বেড়েই চলছে।বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটা কুশানের হাতেও এসে পড়লো।কুশান তখন বললো,
ভিজে যাবে তো!রুমের ভিতর চলো।
কুশানের কথা শুনেও তোড়া সেই আগের মতোই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো।এতোক্ষণ সে ভালোই ছিলো।কিন্তু কুশানের কন্ঠ শোনামাত্র তার গা যেনো জ্বলতে লাগলো।মনে হচ্ছে কেউ তার গায়ে শুকনা মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দিয়েছে।তার ইচ্ছা করছিলো এখনি কুশানকে উচিত শিক্ষা দিতে।এখনি তাকে ইচ্ছামতো পিটিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে তার গায়ের জ্বালা মিটাতে।কিন্তু সেই সাহস আর হলো না তোরার।কারণ কুশান যে এখন তার স্বামী। স্বামীর গায়ে কি হাত তোলা ঠিক হবে?তার দাদী কেনো যে তাকে স্বামীর গুরুত্ব শোনালো?এখন তোরা কুশানকে তার অপরাধের শাস্তি দিবে কিভাবে?
এদিকে কুশান ভাবলো তোড়া তার কন্ঠ শুনতে পারে নি।সেজন্য সে এবার একটু জোর গলায় বললো,
এই যে? শুনতে পাচ্ছো কি তুমি?রুমের ভিতর আসতে বলছি তোমাকে।
তোড়া সেই কথা শুনে নিজেও চিৎকার করে বললো,
এতো জোরে জোরে কথা বলার কি আছে?আমি কি বয়রা নাকি?শুনতে পেয়েছি সব।তোমার ইচ্ছা হলে তুমি রুমে চলে যেতে পারো।আমার এখানেই বেশ ভালো লাগছে।
কুশান তোড়ার এমন ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনেও কিছুই মনে করলো না।কারণ তোরা যে এমন রগচটা স্বভাবের তা কুশান ভালো করেই জানে।কিন্তু কুশানের বাবা মা তো তোড়াকে শান্ত শিষ্ট আর ভদ্র মেয়ে ভেবেই বিয়ে করিয়ে দিলো তার সাথে।তারা তো আর জানে না এই ভদ্র মেয়ের তেজের কথা?জানলে কখনোই এতো বড় ভুল করতো না তারা।
কুশান এবার শান্ত সুরে বললো,
বৃষ্টির পানি শরীরে পড়লে তোমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে।তোমার তো আবার একটুতেই সর্দি লাগে। নরমাল পানি ধরলেও তো……
কুশান পুরো কথা শেষ না করতেই তোড়া রুমে চলে এলো।আর ডাইরেক্ট বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। সে এমন ভাবে শুয়ে পড়লো মনে হচ্ছে পুরো বিছানা টা তার একার জন্য।
কুশান তোড়াকে রুমে যাওয়া দেখে তাড়াতাড়ি করে বেলকুনির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে নিজেও রুমে চলে এলো।কিন্তু একি!
তোড়া তো শাড়ি আর গয়না পড়েই শুয়ে পড়েছে।
কুশান এবার আর কিছু বললো না তোড়াকে।কারন এমনিতেই তোড়া এখন যেভাবে চেতে আছে তাকে শাড়ি আর গহনা খোলার কথা বললে আবার তাকে ডজন খানিক কথা শুনিয়ে দেবে।আজ ওর সাথে ঝামেলা করাই যাবে না।এইভেবে কুশান একদম বেডের একপাশে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো।
আজ কুশানের মনে হচ্ছে এই রুম টা তোড়ার।আর এই বেড টা তোরার বাবা মা তাকে যৌতুক হিসেবে দিয়েছে।সেজন্য তাকে এইভাবে অল্প একটু জায়গায় শুতে হচ্ছে।
তবে কুশান একটা জিনিস খেয়াল করলো তোড়ার পাশে শোয়ার পরও তোড়া কিছু বললো না।কুশান তো ভেবেছিলো তাকে সে আজ বেডে উঠতেই দেবে না।সেজন্য কুশান আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছে।তোড়া তাকে বেডে শুতে না দিলে সে মেঝেতে জাজিম পেড়ে ঘুমাবে।
তোড়ার কি রাগ তাহলে কমে গেছে একটু?না এটা প্রচন্ড ঝড় আসার আগের শান্ত পরিবেশ?
এদিকে শাড়িতে থাকা চুমকিগুলো তোড়ার শরীরে ফুঁটতে লাগলো। সেজন্য তোড়া বার বার হাত দিয়ে সেগুলো সরে দিতে লাগলো।তোড়ার অসহ্য লাগছে তবুও রাগের কারনে শাড়ি চেঞ্জ করছে না সে।এদিকে কুশানও ঠিক করলো সেও নিজের থেকে কিছু বলতে যাবে না।কারণ সে ভালো করেই জানে ওর ভালো করতে যাওয়া মানে তার নিজের বিপদ ডেকে আনা।
কুশান সেজন্য চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু তার কিছুতেই ঘুম আসলো না।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো আজ কি সুন্দর একটা ওয়েদার!বাহিরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।পাশে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী।এরেঞ্জ ম্যারেজ হলে একটা কথা ছিলো।কিন্তু তোরা তো তার লাভার।ভালোবাসার বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও সে বউ এর হাত ধরার সাহস পাচ্ছে না?এতো টা কাপুরষ কুশান?একটিবার কি চান্স নিবে সে?
;না থাক।আরেকটু রাগ কমুক তার।এই বলে কুশান আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
এদিকে রুমের লাইট অন থাকায় তার ঘুমাতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিলো।কারণ সে কখনোই এমন উজ্জ্বল আলোতে ঘুমাতে পারে না।
কুশান তখন রুমের লাইট অফ করার জন্য চলে গেলো।
এদিকে লাইট অফ করতেই,
তোড়া সাথে সাথে চিৎকার করে চেঁচিয়ে উঠলো।
সে এক নিঃশ্বাসে বললো,
এই কি করলি এটা?
তোক কে আমার পারমিশন ব্যাতিত লাইট অফ করতে বলেছে?
তাড়াতাড়ি লাইট অন করো।
কুশান সুইচ এর কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।
কারন লাইট অফ করার এক সেকেন্ড ও হয় নাই,তাতেই তোরার এমন চিৎকার।
কুশান সেজন্য তাড়াতাড়ি করে লাইট অন করলো।
তোড়া হঠাৎ নিজেই কুশানের কাছে এগিয়ে আসলো।আর কুশানের টি শার্ট টেনে ধরে বললো,রোমাঞ্চ করার সাধ জাগতেছে?বউ এর সাথে বাসর করার ইচ্ছা হচ্ছে?সেই স্বপ্ন সারাজীবনের জন্য ভুলে যাও চান্দু।তোমার শুধু নামে বিয়ে হইছে।বউ এর সাথে রোমাঞ্চ করার পরিবর্তে প্রতিদিন বউ এর টর্চার ভোগ করতে হবে তোমাকে।
কুশান তোড়ার কথা শুনে বললো, তুমি সবসময় দুই লাইন একটু বেশি বোঝো।মেয়ে মানুষ একটু কম বোঝায় ভালো।আমার মনে ওসব কুচিন্তা কখনোই আসে নি।আর আসবেও না।এই বলে কুশান বেডে যেতেই হঠাৎ দরজার ঠকঠক শব্দ শুনতে পেলো সে।
কারণ তোড়া এমন জোরে চিৎকার দিয়েছে যা শুনে কুশানের পরিবারের সবাই জেগে উঠেছে।সেজন্য কামিনী চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে উঠে এসেছে।কামিনী চৌধুরীর পিছু পিছু জারিফ চৌধুরী ও এসেছে।
কুশান আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দিলো।
কামিনী চৌধুরী তখন বললো,কুশান! কি হয়েছে বাবা?তোর রুম থেকে চিৎকারের শব্দ আসলো কেনো?
কুশান তখন বললো কই কে চিৎকার করেছে।তুমি হয় তো ভুল শুনেছো আম্মু।
কামিনী চৌধুরী তখন বললো, ভুল শুনেছি আমি?কি বলছিস?এই বলে কামিনী চৌধুরী তোড়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, এই মেয়ে সত্যি করে বলো তো কি হয়েছে?
তোরা কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিলো না।
তখন জারিফ চৌধুরী বললো,এই তুমি কি এতো রাতে এখন এ রুমেই বসে থাকবে?চলো তো রুমে।আমার ঘুম ধরেছে। আমি কত করে বললাম যাও না, কিছুই হয় নি।তবুও শুনলে না।এই বলে জারিফ চৌধুরী কামিনী কে রেখেই চলে গেলেন তার রুমে।
কামিনী চৌধুরী হঠাৎ খেয়াল করলো তোরা এখনো শাড়ি চেন্স করে নি।সেজন্য তিনি বললেন,
শাড়ি এখনো খোলো নি কেনো?তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নাও।
তোড়া সেই কথা শুনে চলে যেতে ধরলে কামিনী বললো,
আমার বাবু কিন্তু আলোতে ঘুমাতে পারে না,সুইচ টা অফ করে দিও।আর বাবু ঘুমালে ওর গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে দিও।আর শেষ রাতে এসি টা অফ করে দিয়ে বাবুর গায়ের গাঁথা টা সরিয়ে দিও।ও কিন্তু ঘুমালে কিছু টের পায় না।আজ থেকে আমার বাবুর কিন্তু সব দায়িত্ব তোমার।সবসময় মনে রাখবা একটাই ছেলে আমার।বংশের একমাত্র প্রদীপ সে।
হঠাৎ কামিনী চৌধুরী দেখলো টেবিলের উপর এখনো দুধটুকু পড়েই আছে।তা দেখামাত্র কামিনী গ্লাস টা নিয়ে কুশানের কাছে গিয়ে বললো,
বাবু! দুধ এখনো খাস নি কেনো বাবা?এই বলে কামিনী নিজেই খাইয়ে দিতে লাগলো।
কুশান তখন বললো, আম্মু থাক না এখন। পরে খেয়ে নিবো।
–না এখনই খেতে হবে।আর হ্যাঁ বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকিস না যেনো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়িস বাবা।সকালে আবার হাঁটতে বের হতে হবে কিন্তু।
এই বলে কামিনী চৌধুরী চলে গেলেন।
তোড়া কামিনীর কথা শুনে একদম আশ্চর্য হয়ে গেলো।কারণ কামিনী যে এখনো কুশান কে ছোট বাচ্চা মনে করে।
কুশান এবার ঘরের দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে তোড়ার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
এভাবে এতো জোরে চিৎকার করলে কেনো?একটু ভালো করে বললে কি হতো?
সবাই কি ভাববে এখন?
তোড়া তখন বললো যা ভাবার ভাববে।
তুমি আমার থেকে পারমিশন না নিয়ে আগেই লাইট অফ করলে কেনো?
আগে এটা তো জানা উচিত ছিলো যে আমি আলোতে না অন্ধকারে ঘুমাবো?
আমি যতদিন তোমার সাথে তোমার রুমে আছি ততোদিন কোনো লাইট অফ থাকবে না।
বুঝেছো?
কুশান হঠাৎ তোড়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কারণ হালকা করে জড়িয়ে ধরলে সে সহজেই ছাড়িয়ে নেবে।তোড়া তখন বললো,
কুশান ছাড়ো আমাকে।আমাকে ধরার পারমিশন তুমি কোথা থেকে পেলে?
কুশান তখন বললো, এতো রেগে আছো কেনো তুমি?আগে আসল কাহিনী টা শুনবে তো?
তোড়া সেই কথা শুনে বললো,আমি তোমার কোনো কাহিনিই শুনতে চাই না।ছাড়ো আমাকে বলছি।তা না হলে আবার চিৎকার দিবো কিন্তু।
কুশান সেই কথা শুনে ছেড়ে দিলো তোড়াকে।
কুশান এবার তোড়ার হাত ধরে বললো, বিশ্বাস করো তোড়া আমি নিজের ইচ্ছাতে সেদিন পাত্রী দেখতে যাই নি।দুলাভাই রা হঠাৎ আমাকে জোর করেই নিয়ে গিয়েছে।তারা বলেছিলো কোনো এক রিলেটিভের বাড়ি নিয়ে যাবে আমাকে।
তোড়া কুশানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,তুমি যে কত বড় নাটকবাজ তা আমি ভালো ভাবেই বুঝে গেছি।কে জানে স্বামীর অধিকার ফলানোর জন্য আবার নতুন আরেক অভিনয় শুরু করে দিয়েছো?
কুশান তখন বললো, আমাকে কি তোমার এতোটাই খারাপ ছেলে মনে হয়?যে তোমার পারমিশন ব্যাতিত তোমাকে আমি টাচ করবো?
তোড়া সেই কথা শুনে হঠাৎ কুশানকে ধাক্কা দিতে দিতে বললো,শুধু খারাপ না।তুমিএকটা চিটার।নাম্বার ওয়ান ধোঁকাবাজ।তোমাকে আমি কতবার বলেছি বিয়ের কথা।তোমার পরিবারে জানাতে বলি নি? তুমি সবসময় কি বলে আমাকে শান্ত্বনা দিয়েছো?মনে আছে?
তুমি সবসময় বলতে আরো পাঁচ বছর পর তোমার নাকি বিয়ে দেবে।আচ্ছা সেদিন যদি পাত্রী টা আমি না থাকতাম,আমার পরিবর্তে যদি অন্য মেয়ে থাকতো তখন তো তার সাথেই তোমার বিয়ে হয়ে যেতো।
তুমি বলেছিলি তোমার কোনো বোন নাই,তুমি জব করো।মা বাবা কে নিয়ে শহরে থাকো।এসব মিথ্যা কথা কেনো বলেছিলি?
কুশান তখন কোনো উত্তর দিলো না।
তোড়া তখন বললো, এখন উত্তর দিচ্ছো না কেনো?আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুমি আমাকে জীবনেও বিয়ে করতে না।এইভাবে সারাজীবন ঘুরে নিয়ে বেড়াতে আমাকে।বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হইতে তবুও তুমি আমার সাথে প্রেম চালিয়ে যাইতে।
কুশান তখন বললো, তুমি দেখলে আমি ছেলেটা ভালো না,আমি খারাপ,আমি প্রতারক, তাহলে জেনেবুঝে কেনো রাজি হলে বিয়ে তে?
তোড়া সেই কথা শুনে রাগ করে বললো,
এতো সহজ না রে তোড়ার হাত থেকে বাঁচা?তুই আমাকে ঠকিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবি আর আমি সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবো? তোর জীবন ত্যানাত্যানা করবো তবেই দম নিবো।
কুশান তখন আবার তোড়ার হাত ধরে বললো, তোড়া!একটু শান্ত হও।একটু মাথাটা ঠান্ডা করো।আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।
–আমি শুনবো না তোর কথা।
কুশান তখন বললো, তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছো।অযথাই আমাকে খারাপ ছেলে ভাবছো।আমি কিন্তু মোটেও খারাপ ছেলে না।আর আমি তোমাকে কখনোই ঠকাতে চাই নি।আমি যে মিথ্যে কথা বলেছি তার কিছু কারণ আছে।প্লিজ বিলিভ মি।
তোড়া তখন কুশানের হাত জোরে করে একটা ঝাটকা দিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।কিন্তু কুশান বেডে আসতেই তোরা বললো,
তুই আজ থেকে এই বিছানায় শুতে পারবি না।আমি তোর সাথে এক ঘরে কিছুতেই থাকতে পারবো না।
কুশান তখন রাগ করে একটা বালিশ নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।তবে কুশান বুঝে গেলো সে ভালোভাবেই ফেঁসে গেছে।এবার আর তার নিস্তার নাই।তার ভাগ্যে এখন কি আছে তা উপরওয়ালাই ভালো জানে।
কুশান যখন বাহিরের বারান্দায় গেলো শুতে সে দেখতে পেলো সেখানে তার বড় দুলাভাই শাহিন নাক ডেকে ডেকে ঘুম পাড়ছে।কুশান বুঝতে পারলো না কিছু।শাহিন তার নিজের রুম বাদ দিয়ে এখানে কেনো?
কুশান সেজন্য এবার তাদের গেস্ট রুমে চলে গেলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে তার মেজো দুলাভাই মাহিন শুয়ে আছে।
কুশান কিছুই বুঝতে পারলো না।তার দুলাভাই রা এভাবে যেখানে সেখানে শুয়ে আছে কেনো?
কুশান কোনো উপাই না দেখে আবার তার নিজের রুমে চলে গেলো।
তোড়া কুশানকে দেখামাত্র বললো,
আবার এসেছো তুমি?বললাম না এ ঘরে থাকতে পারবে না তুমি?
কুশান তোড়ার সাথে কোনো কথা না বলে জাজিম টা পেড়ে সেখানেই শুয়ে পড়লো।
তোড়া তখন বেড থেকে উঠে এসে বললো,
তুমি কি রুম থেকে বের হবে না আমি এখন জোরে করে চিৎকার করবো?
–যা মন চায় করো গিয়ে।আমি এখানেই ঘুমাবো।
তোড়া সেই কথা শুনে চিৎকার করতেই কুশান তার মুখ টিপিয়ে ধরে বললো, আমি কি তোমার সাথে বাসর করতে চাচ্ছি তাহলে কেনো আমাকে থাকতে দিচ্ছো না এ রুমে?আমি তোমাকে না ছুঁলেই তো হলো।তোমার দিকে তাকাবোও না।
তোড়া তখন বললো,ঠিক আছে।তাহলে একটা ডিল হয়ে যাক।
–কিসের ডিল?
তোড়া তখন বললো, যদি ভুল করেও আমার দিকে কু নজরে তাকাও আর আমার কাছাকাছি আসতে চাও তাহলে কিন্তু আমি জোরে করে হাতে একটা কামড় দিবো।আর দশবার খামচি দিয়ে ধরবো।রাজি আছো?
কুশান তোডার এই রকম শাস্তি শুনে হাত দিয়ে তার মাথায় আঘাত করতে করতে বললো,
হায় রে কপাল আমার।এ কোন দুনিয়ায় আছি আমি?কোন দুঃখে জেনেবুঝে এই কাল নাগিনী টাকে বিয়ে করতে গেলাম?
নিজের রুম,নিজের বাড়ি আর রাজত্ব করছে পরের মেয়ে?
চলবে,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যই লাইক এবং কমেন্ট করতে হবে সবাইকে।