# আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—০৯
রোদেলার আমার কথা শুনে আরো বেশী ঘাবড়ে গেলো,ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না এসব আমারই প্ল্যান!
—তার মানে ঐ মেসেজটা তুমিই করেছিলে?
—তো কি ভেবেছিলে,প্রত্যয় তোমায় এখানে মেসেজ করে ডেকেছে?
—কি চাইছোটা কি তুমি?
—আমি কি চাইছি সেটা এখনো বুঝতে কষ্ট হচ্ছে,ঠিক আছে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।আমি ভালো করেই জেনে গেছি প্রত্যয়ের সাথে তোমার কোনো ঝামেলা নেই,তোমরা দুজন এক হয়ে আমার সাথে গেম খেলছো।
—তোমায় এতো কিছু কে বললো?দেখো তুমি যা ভাবছো পুরোপুরি ঠিক নয়,
—তাহলে তুমিই বলো,প্রত্যয়কে বিষের ব্যপারে কে ইনফর্ম করলো,ঐ বিষের শিশির ব্যপারে তো আমি আর তুমি ছাড়া কেউ জানতো না।তাহলে প্রত্যয় কিকরে জানলো?
—আমি জানি না,কিচ্ছু জানি না আমি।দোয়েল আপু তুমি ভুল বুঝছো আমায়,
রোদেলার অনবরত মিথ্যাচার আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিলো,আমি গিয়ে সপাটে ওর গালে এক চড় বসিয়ে দেই।তারপর ওকে জোর করে চেয়ারের সাথে বসিয়ে বেঁধে ফেললাম।দোয়েল নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে।
—তোমার কোনো মিথ্যে কথায় আর ভুলছি না, আমি ভালো করেই জানি প্রত্যয়কে বিষের ব্যপারে তুমি জানিয়েছো,শুধু তাই নয় আমি আরোও অনেক কিছু জেনে ফেলেছি যা এতোদিন ধরে তোমরা দুজন লুকিয়ে রেখেছো আমার থেকে।
রোদেলা বুঝে গেলো ওর মিথ্যে নাটক আর কাজ করবে না।তাই আর আমাকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করলো না।
—-আর কী জানো তুমি,বলো?
—বললে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে নাতো?
—মানে?
—প্রত্যয় যে একটা ফেইক আমি সেটাও জেনে গেছি।আর শুধু তাই নয়,আমি এটাও জেনে গেছি আসল প্রত্যয় আর কল্লোলের খুন কে করেছে?
—কে খুন করেছে?আর তুমি এতোকিছু কিকরে জানলে?
আমি রেগে গিয়ে রোদেলার চুলের মুঠি চেপে ধরলাম।
—আবার নাটক করছিস আমার সাথে,প্রত্যয়কে কে খুন করেছে তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিস?প্রত্যয়কে আর কেউ না,তোর পার্টনার ফেইক প্রত্যয় খুন করেছে,আর আমি নিশ্চিত তুই সবকিছু জানিস।তোরা দুজন মিলে আমার দেবরকে খুন করেছিস!বল কেনো করলি এটা,কী এমন ক্ষতি করেছিলো ও তোর?
—বিশ্বাস করো দোয়েল আপু,আমি সত্যিই জানি না প্রত্যয়কে কে খুন করেছে,আমি কেনো ওকে খুন করতে যাবো?হ্যাঁ এটা ঠিক ফেইক প্রত্যয়ের সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো,কিন্তু আমি প্রত্যয়কে খু ন করিনি,না কল্লোল ভাইয়াকে করেছি।প্লিজ ট্রাস্ট মি।
—তোকে বিশ্বাস করা আর নিজের পায়ে কুড়োল মারা একই কাজ,আর যাকে হোক না কেনো,তোকে বিশ্বাস করা যায় না।
—আমি কিচ্ছু জানি না,কিচ্ছু জানি না।প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও।
(রোদেলা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো)
আমি বুঝে গিয়েছি এতো সহজে ওর পেট থেকে কথা বের করা যাবে না।ও আমার থেকেও বেশী ভয়ংকর।একটা কথা জেনে এসেছি ছোটোবেলা থেকে লোহাকে একমাত্র লোহাই কাটতে পারে।এবার সময় হয়েছে আমার মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করার।এ ছাড়া আর কোনো অপশন নেই।ফোনটা হাতে নিয়ে একটা নম্বরে ভিডিও কল দিলাম।রোদেলা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
—এই তুমি কার কাছে ফোন করছো?কি করতে চাইছো তুমি?
—বড্ড বেশী কথা বলো তুমি,যখন দেখতেই পাবে এতো প্রশ্ন করার কি আছে?
—একদম বাড়াবাড়ি করবে না বলে দিচ্ছি,ভালো হবে না কিন্তু।
ওপাশ থেকে আমার সেই পরিচিত ব্যক্তি ভিডিও কল রিসিভ করতেই আমি রোদেলার সামনে ফোনটা ধরলাম।ও সেই ব্যক্তিকে দেখে একটু বেশীই অবাক হলো।
—রাফসান হক!ইনি তো একজন শেফ,আমি চিনি এনাকে?তুমি এনাকে কেনো ফোন করেছো?
—তোমায় টু ক রো টু ক রো করে কেটে তারপর রান্না করার জন্য!
—মানেটা কি,এসব কি হচ্ছে আমার সাথে বুঝতে পারছি না আমি।প্লিজ,লিভ মি।
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখন রাফসান হক আমায় থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন।
—দোয়েল তুমি এবার চুপ থাকো,বাকিটা আমি বলছি,এক বছর আগে আমার স্ত্রী নীলা হক উধাও হয়ে গিয়েছিলো,তুমি জানো তো সেটা?শুনেছো নিশ্চয়ই?
—হ্যাঁ তো?
—সে উধাও হয়ে যায়নি,আমি তাকে কেটে টু ক রো টু ক রো করে নিজে উদর পূর্তি করেছি।না না,কাঁচা নয়,রান্না করেই।আর শুধু আমি নয়,অনেকেই খেয়েছে সেই মাংস।জানো তো,মানুষের মাংস আমার খুব প্রিয়।দেখলে নিজের জিভের জল আটকাতে পারি না।
—আপনি একটা সাইকো,মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার।দোয়েল তুমি এই জঘন্য লোকটাকে কিকরে চেনো?
রাফসান হকের সাথে আমার কিকরে পরিচয় হয়েছে,সেটা এই মূহুর্তে বলা মানে নিজেই নিজেকে ফাঁসিয়ে দেওয়া।একবার রাফসান হকের হোটেল ভিজিটে গিয়ে ওনার কুকর্মের ব্যপারে সন্দেহ করেছিলাম,আর সেটা খাবারের মাধ্যমে।চার পাঁচ বছর আগে একটা ইন্টারন্যাশনাল কোর্সে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের মাংসের তফাৎ প্রভৃতি বিষয়ে শিখেছিলাম।সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বুঝতে পারি রাফসান হক আসলে মানুষের মাংস নিয়ে ব্যবসা করে।শুধু তাই নয়,সে একজন ঠান্ডা মাথার সাইকো।এই গল্পের পরবর্তী সকল পর্বসমূহ পড়তে চাইলে এক্ষুণি ভিজিট করুন ‘প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ’ নামক পেজ।আমি তার সাথে কথা বলি,কল্লোলকে খুন করে সমস্ত প্রমাণ লোপাট করে দেবার এর থেকে ভালো কোনো অপশন ছিলো না আমার কাছে।কল্লোলকে খুন করে দুনিয়ার কাছে তাকে নিঁখোজ বানিয়ে দিতাম,যেমনটা রাফসান হক নিজের স্ত্রী নীলা হকের সাথে করেছেন।যাই হোক,কোনো কারণে কল্লোলের লাশটা আমি গুম করতে পারি নি।কিন্তু তার পর থেকেই রাফসান সাহেবের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমার,আমি ওনাকে বিভিন্ন টুকিটাকি ইনফরমেশন দিয়ে হেল্প করতাম।উনি আমায় এটাও কথা দিয়েছেন রোদেলাকে এক্সপোস করার ব্যপারে সাহায্য করবেন।আমাকে চুপ থাকতে দেখে রোদেলা আবারোও বলে উঠলো।
—কি হলো,চুপ করে আছো কেনো?কথা বলো।এই সাইকো লোকটাকে কিকরে চেনো তুমি?
রাফসান সাহেব রোদেলাকে শুনিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
—দোয়েল ছেড়ে দাও,ও কিছু স্বীকার করবে না।এক কাজ করি আমি কামালকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।আশা করি ওর মাংসের ডেলিভারীটা আগামী ইভেন্টেই দিতে পারবো।
রোদেলা এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলো।ওর এক্সপ্রেশন দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে।
—দোয়েল,এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।আবারো বলছি।
—দেখো তোমার কাছে দুটো অপশন।অপশন নম্বর ওয়ান – সবটা আমায় খুলে বলবে।অপশন নম্বর টু – নয়তো নিজে রাফসান সাহেবের স্পেশাল ডিশ হবে।আমার মনে হয় দুএর থেকে এক নম্বরটাই বেশী ইজি তোমার জন্য।
—ঠিক আছে,আমি বলবো।যতোদূর জানি আমি বলবো।আগে মুক্ত করো আমায়।আর এই সাইকো লোকটাকে সরাও আমার সামনে থেকে।একে দেখলে আমি কথা বলতে পারবো না।
আমি কলটা কেটে দিলাম।হয়তো রাফসান হকের সাথে এটাই আমার শেষ সাক্ষাৎ।আমি নিজেও চাই না ওনার মতো মানুষের সহচর্যে থাকতে।রোদেলাকে এক্সপোস করতে বাধ্য হয়ে হেল্প নিয়েছি ওনার।রোদেলাকে মুক্ত করে দিতেই ও আবারো কান্না শুরু করে দিলো।
—আবার কী নতুন নাটক শুরু করলে,বলো আমায় সবটা!
—হ্যাঁ,তুমি ঠিকই ধরেছো?ও প্রত্যয় নয়।প্রত্যয়কে খু ন করা হয়েছে।কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি খু ন করিনি প্রত্যয়কে।আমি তো জানতামো না এর কিছু,তবে প্রত্যয় খু ন হয়েছে এইটুকু জানি।
মনের ভেতরে কোথাও একটা আশা ছিলো,হয়তো প্রত্যয় বেঁচে থাকলেও থাকতে পারে।কিন্তু রোদেলার স্বীকারোক্তি আবার সামান্য আশাটুকু নিরাশায় বদলে দিলো।
—আমার থেকে কিচ্ছু লুকোনোর চেষ্টা করো না।বলো প্রত্যয়কে কেনো খু ন করা হয়েছে,আর আমার স্বামী সেজে যে আছে তার সাথে প্রত্যয়ের কি সম্পর্ক?তার আসল পরিচয় কি?
—আমি যদি বলি বিশ্বাস করবে তো?
—বলো,
—আমি এর থেকে বেশী আর কিচ্ছু জানি না।শুধু এইটুকুই জানি ও আসল প্রত্যয় নয়,তোমার দেবর প্রত্যয়কে খু ন করা হয়েছে।দাঁড়াও তোমায় কিছু জিনিস দেখাচ্ছি।
এই বলে রোদেলা আর ফোনটা বের করে আমায় কিছু ছবি দেখালো।যেখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নকল প্রত্যয় আর আসল প্রত্যয় এক জায়গায়।রক্তাক্ত প্রত্যয় মেঝেতে পরে আছে আর অন্যজন পাশেই দাঁড়িয়ে।ছবিটা দেখে যেনো বুকটা নিমিষেই কেঁপে উঠলো আমার।আর কোনো কথা বলার শক্তি পাচ্ছি না।আমি জানি প্রত্যয়ের সাথে আমি যা করতে চেয়েছি সেটা অনৈতিক।তবে এটাও ঠিক প্রত্যয়কে আমি নিজের মন থেকেই ভালোবেসেছিলাম।এমনকি এখনো বাসি।তার করুণ দৃশ্য নিজের চোখে দেখে সহ্য করার মতো ক্ষমতা নেই আমার।রোদেলাকে ছেড়ে দিতেই ও চলে গেলো,আমিও বেরিয়ে আসলাম।এখনো অনেক কিছু জানার বাকি ছিলো রোদেলার থেকে।ওর সাথে নকল প্রত্যয়ের কি সম্পর্ক,ও তাকেই বা সাহায্য করছে কেনো?আর প্রত্যয়কে মারার পর কি করা হয়েছে ওর সাথে?
–
–
–
–
–
–
এর পরেরদিন।আজ ডিএনএ রিপোর্ট বের হবার কথা।যদিও কালকের ঘটনার পরে এখন আর আর রিপোর্ট নিয়েই বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার।যেহেতু প্রত্যয় আর নেই,আর এটা ফেইক প্রত্যয়।তার মানে মা আর ওর রিপোর্ট ম্যাচ করবে না,এটাই স্বাভাবিক।সকাল এগারোটার দিকে সাহিলের ফোনকল এলো আমার কাছে।আমি ফোনটা রিসিভ করি।
—হ্যাঁ বল।
—তোর ডিএনএ রিপোর্ট বেরিয়েছে,বল এখন কিভাবে আর কোথায় পাঠাবো?
—ডিএনএ রিপোর্ট পাঠাস পরে,আগে রেজাল্ট টা বল আমায়।যদিও আমি 90%সিওর আগে থেকেই।
—রিপোর্ট এখন আমার হাতেই।তোর শ্বাশুড়ী আর প্রত্যয় সাহেবের ডিএনএ ম্যাচ করেছে।তার মানে এরা দুজন রিয়েল মা – ছেলে!শুধু শুধু সন্দেহ করেছিস তুই।
সাহিলের কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম!এটা কিকরে সম্ভব?প্রত্যয় আর বেঁচে নেই, এদিকে ওদের কোনো জমজ নেই।কিন্তু এই দুজনের ডিএনএ রিপোর্ট মিললো কিকরে?
তাহলে কি মা কিছু লুকোচ্ছে আমার থেকে, নাকি রোদেলা?
চলবে….
//প্রদীপ তিয়াশ।