#বসন্ত_বিলাস🔞🔞
#আমিনা_আফরোজ
#পর্ব:- ০৯
পরপর দুটো ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে গেছে মেহুল। এখন মেহুলদের ব্রেক টাইম চলছে । তাই মেহুল জ্যোতিকে নিয়ে কলেজের ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। মেহুলের দেখাদেখি অভিও বেরিয়ে এলো ক্লাস শেষে। ক্যাম্পাসে তখন শিক্ষার্থীদের সমাগম। ক্যান্টিন, মাঠ এমনকি ডিপার্টমেন্টের সামনেও দলে দলে দাঁড়িয়ে আছে তারা। কেউবা দল বেঁধে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আবার কেউ বা দলছুট হয়ে যত্রতত্র যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। মেহুলরা সেসব দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে এসেছে ক্যান্টিনে। ক্যান্টিনের সামনের দিকের একটা টেবিলে বসল মেহুলরা। পরোটা আর ডিম ভাজির অর্ডার দিয়ে জ্যোতির সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলো ও। অভিও মেহুলের পিছু পিছু ক্যান্টিনে এলো। মেহুলদের থেকে দুই টেবিল পরে বসে ও নিজেও ওর পছন্দ মতো খাবারের অর্ডার দিলো। খাবার খেয়ে বেরিয়ে আসার সময় মেহুলের নজর পড়লো অভির ওপর। মেহুল সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো অভির দিকে। অভি তখন খাবার খেতে ব্যস্ত। মেহুল জ্যোতিকে নিয়ে বেরিয়ে এসে অপেক্ষা করতে লাগলো অভির জন্য। এ ছেলের কত বড়ো সাহস ওকে ফলো করছে। মেহুলদের বেরিয়ে যাবার পর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বেরিয়ে এলো অভি। সতর্ক দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকালেই মেহুলের চোখে চোখ পড়ে গেলো ওর। অভি থমকালো। ঐ কাজল কালো চোখ অভি অনেকদিন পর দেখলো। হাতে গোনা তাও বছর দুয়েক পর। অভির তৃষ্ণার্ত চোখ শান্ত হলো। অভির পা জোড়া চলতে গিয়েও থেমে গেলো। মনে মনে প্রমোদ গুনলো সে।
এদিকে অভিকে ক্যান্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি করতে দেখেই মেহুলের ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে গেলো। ক্রমশ ওর সন্দেহ আরো দৃঢ় হবার আগেই জ্যোতি মেহুলকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল,
–” এই মেহুল, এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? চল ক্লাসে যাই। আর ক্লাস করতে না চাইলে চল বাড়ি চলে যাই। এখানে এভাবে সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানে আছে?”
–” এই তুই থাম তো। সবসময় ভুলভাল চিন্তা ভাবনা। চল আমার সাথে। ঐ বজ্জাত ছেলেকে আজ শাহেস্তা করেই ছাড়বো। ”
জ্যোতিকে থামিয়ে দিয়ে মেহুল বলে উঠল। মেহুলের কথায় জ্যোতি উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো,
–” এই তুই কি পাগল হলি? কলেজের প্রথম দিন একটা ঝামেলা না পাকালেই চলছে না তোর। কাকু জানলে কিন্তু বকবে মেহুল।”
–” ধুর, চল তো আমার সাথে। প্রথম দিন যদি কোন শিক্ষা না দিয়ে ছেড়ে দেই পরে দেখবে তা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই শুরুতেই কোন রোগের চিকিৎসা করানো জরুরী। বুঝলি গাধী।”
কথাগুলো বলেই মেহুল জ্যোতির হাত ধরে গটগট করে এগিয়ে গেলো অভির দিকে।
–” এই তুমি কি আমাকে ফলো করছো নাকি?”
অভির সামনে এসে দাড়িয়ে জিঙ্গাসা করল মেহুল। অভি মেহুলদের আসতে দেখেই বুঝেছিল মেহুল কি জিঙ্গাসা করবে ওকে। তাই আগেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে ও। অভি মেহুলের প্রশ্নে এদিক সেদিক তাকালো। অভির ভাবসাব দেখে মেহুল আবারো বলে উঠল,
–” আরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছো কেনো? তোমাকেই বলছি আমি। যেই একটা সুন্দরী মেয়ে দেখছো ওমনি তার পিছু করা শুরু করে দিয়েছো। আচ্ছা তোমরা ছেলেরা এমন কেনো? মেয়ে না দেখতেই শুরু হয়ে যাও।”
–” আরে থামো থামো। কাকে বলছো এসব তুমি? আমাকে! এই মেয়ে এই, তোমার কি মনে হয় বলো তো? আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে কোন মেয়ের পিছনে পিছনে ঘুরবে এইটা হতেই পারে না, কখনোই না।”
–” তাই নাকি। তাহলে আমার পিছনে পিছনে কেন এসেছো শুনি?”
–” আরে এ তো দেখছে সব সময় এক লাইন বেশি বুঝে! তোমার বুদ্ধি আসলেই তোমার হাঁটুতেই রয়েছে এখন শিওর হলাম আমি। এনি ওয়ে , ক্যান্টিনটা যে তোমার পার্সনাল প্রোপার্টি এ কথা জানতাম না তো? জানলে ক্যান্টিনে খেতে আসতাম না। দাঁড়াও আমি এক কাজ করি। ক্যান্টিনের ভেতরে কয়েকজন বড়ো ভাইকে দেখলাম। যাই বড়ো ভাইদের বলে আসি, এইটা তোমার ক্যান্টিন আর এখানে তুমি আর তোমার এই বান্ধুবী বাদে অন্য কোন স্টুডেন্টদের খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ।”
কথাগুলো বলেই অভি পিছন ফিরে আবারো ক্যান্টিনে যাবার জন্য পা বাড়াচ্ছিল ঠিক তখনি জ্যোতি অভির হাত ধরে বলে উঠল,
–” আরে আরে তুমিও তো দেখছি মেহলের মতোই হাফ পাগল। এসব কথা বড়ো ভাইদের জানাতে আছে নাকি বোকা ছেলে। তারচেয়ে চলো ক্যাম্পাসে গিয়ে বসে কথা বলি কেমন।”
–” হ্যাঁ হ্যাঁ,তোমার কথা শুনে ক্যাম্পাস গিয়ে বসি আর তোমার এই মাথামোটা বান্ধবী আমাকে ছ্যাচড়া ছেলে উপাধি দিক। এইটাই তো চাও তুমি? ”
অভি জ্যোতির কথার প্রতিউত্তরে উচ্চ স্বরে বলল কথাগুলো। জ্যোতি দেখলে আশেপাশের কিছু ছেলেপেলেরা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন ওদের ঝগড়া শুনে তারা খুব মজা পাচ্ছে। জ্যোতি আর সময় নষ্ট করল না । মেহুল আর অভির হাত বগলদাবা করে বেরিয়ে এলো ক্যান্টিন থেকে।
ভার্সিটির এক প্রাঙ্গনে এসে দাঁড়ালো ওরা তিনজন। এতটুকু পথ আসতে ওরা হাঁপিয়ে উঠেছে। বেশি হাঁপিয়ে উঠেছে জ্যোতি। দুজন হাট্টাগোট্টা ছেলেমেয়েকে টেনে আনা কম নাকি। তারপর দুজনই যেভাবে ষাঁড়ের মত ছোটছুটি লেগে দিয়েছিল । মেহুল এবার জ্যোতির পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে বলল,
–” এভাবে টেনে নিয়ে এলি কেন আমাকে হুম?”
মেহুলের মারে কঁকিয়ে উঠলো জ্যোতি। অতি কষ্টে মৃদু স্বরে বলল,
–” আরে আমি তোর ভালোর জন্যই এখানে আনলাম তোকে। আজকাল দেখছি মানুষের ভালো করতে নাই। সিনিয়রদের নালিশ দিলে বুঝতি কি হতো?”
–” ঘোড়ার ডিম হতো। এই মেহুল কাউকেই ভয় পায় না বুঝলি। একবার তো পরিক্ষার হলে স্যারের সাথে ঝগড়া করেছিলাম জানিস। সে কি এক অবস্থা। ”
মেহুলের কথায় অভি আবারো থমকে গেলো। মেহুলের অবিনাশ স্যারের কথা মনে আছে কি করে? ওর তো মেমোরি লস হয়ে গিয়েছিল। অভি মেহুলের কাছে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল ,
–” কোন স্যারের কথা বলছিস তুই? বল আমাকে? আগের সব কথা মনে পড়ে গেছে তোর তাই না? তবুও তুই আমাকে না চেনার ভান করছিস কেনো মেহুল? ”
–” অবিনাশ স্যার আবার কে? তাকে তো চিনি না আমি। আমি তো দীপ্ত স্যারের কথা বলেছি। আর আপনি আমাকে তুই করে বলছেন কেন? কে আপনি? আপনি কি আমাকে চিনেন?”
মেহুলের কথা শুনে অভি হতাশ চোখে মেহুলের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। তারপর মেহুলকে ছেড়ে দিয়ে গটগট করে হেঁটে চলে গেল অন্যদিকে। মেহুল অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইল অভির যাওয়ার পথের দিকে।
এদিকে অতিশ বাবু আজ বাড়িতেই ছিলেন। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন আজ তিনি। ছুটি নেওয়ার অবশ্য একটা কারণ আছে। আজ ওনার পরলাম প্রিয় বন্ধু মৃণাল ঘোষাল আসবেন ওনাদের বাড়িতেই। এতোদিন পর বন্ধুকে দেখতে পাবেন এইটা ভেবেই বেজায় খুশি হয়েছেন তিনি। মৃণাল ঘোষের সাথে ওনার শেষ দেখা হয়েছিল আজ থেকে বছর দুয়েক আগে। সিলেটে আসার পর মাঝে মাঝে ফোন আলাপ হলেও কোথাও একটা দুরুত্ব থেকেও যেতো ওনাদের মাঝে। তারপর দুই বন্ধুই যখন ব্যস্ততার মাঝে ডুবে গেলো তখন ফোন আলাপটাও আর হয়ে ওঠতো না। মাঝে মাঝে বন্ধুর জন্য বড্ড মনে খারাপ হতো ওনার। ভাবতো আবারো বন্ধুর কাছে চলে যাবেন তিনি কিন্তু মেহুলের জন্য আর তা হয়ে উঠতো না। কিন্তু এতোদিন পর যখন তার প্রাণ প্রিয় বন্ধু নিজেও ওর বাসায় আসতে চাইলেন তখন আর মেয়ের কথা শুনলেন না। এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন বন্ধুর কথায়। এখন শুধু বন্ধুর আসার পালা। একারনেই সকাল থেকে তিনি উৎসুক হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। কখন মৃণাল বাবু আসবেন আর ওনি জড়িয়ে ধরবেন তাকে। অতিশ বাবু বন্ধুর কথায় ভাবছিলেন এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। অতিশ বাবু হুড়মুড় করে দ্রুত চলে গেলেন মেইন দরজার দিকে ।
চলবে