#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
আমার সম্পূর্ণ মুখশ্রী ল’জ্জা’য় হালকা গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে যেনো। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে কি থেকে কি হয়ে গেলো ভাবতেই কান দিয়ে যেনো গরম ধো’য়া বের হচ্ছে। দৃষ্টি নত অবস্থায় রেখেছি, এই মূহূর্তে তীব্রের দিকে তাকানোর শ’ক্তি পাচ্ছি না নিজের মাঝে। একহাতে দিয়ে অন্য হাত ক’চ’লা’তে শুরু করি। তীব্র বেশ অনেকক্ষণ হলোই আমার এমন কার্যকলাপ দেখছে। পি’ন’প’ত’ন নিরবতার দেওয়াল ভে’ঙে তীব্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…
____”কি ম্যডাম নিজ থেকে বারবার আমার হাতে ধ’রা দিচ্ছেন আবার পরে সেসব নিয়ে চি’ন্তা করে ল’জ্জা’য়
চেহারায় গোলাপি আভা ফুটিয়ে তুলছেন!”
তীব্রের রসিকতার স্বরে বলা কথাগুলো কর্ণপাত হতেই আমি আমার দু’চোখ ব’ন্ধ করে ফেলি। এবার বুঝি ল’জ্জা আমাকে পুরোপুরি ভাবে গ্রা’স করে ফেলবে। তীব্র সোফার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দু’হাত উপরে তুলে হালকা ভাবে আঁড়মোরা ভা’ঙ’তে ভা’ঙ’তে বললেন….
____”সারাদিন ধরে আমার কোলের উপর বসে থাকবে এমনই পরিকল্পনা করে রেখেছো নাকি মিসেস.তীব্র রহমান?”
মিসেস.তীব্র রহমান নামটা যেনো আমার মনের অন্তরালে গিয়ে দু’ম করে শব্দ তুলে আ’ঘা’ত হা’ন’লো। এ আ’ঘা’তে কোনো য’ন্ত্র’ণা অনুভব হচ্ছে না বরং অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে নিজের মাঝে। আমি মিনমিনে স্বরে বললাম…
____”কেনো আপনার কোনো স’ম’স্যা আছে নাকি? আমি সত্যিই যদি সারাদিন ধরে আপনার কোলের উপর বসে থাকি!”
তীব্র ওনার দু’হাত দিয়ে আমার পেট জড়িয়ে ধরে আমার ঘা’ড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। হঠাৎ ওনার স্পর্শে আমি কে’পে উঠলাম। তীব্র ঘো’র লাগা কন্ঠে বললো…..
____”তোমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার যে চেষ্টা করে যাচ্ছি গত দু’দিন ধরে এক মূহূর্তেই সেই সব চেষ্টা শে’ষ করে দিলে। এরপর যদি আরো কিছু ঘ’টে যায় তবে হয়তো আর কখনও পারবো না এই আমি টাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে নিতে।”
মূহূর্তেই আমার মনের কোন অ’ভি’মা’নে’র কালো আ’ধা’রে ছে’য়ে যেতে শুরু করলো, আমি ভেজা কন্ঠে বললাম….
____”দূরে সরে যেতে কে বলেছে? আমি যে আপনাকে এতো ভালোবাসি সেই ভালোবাসা কি আপনার মনকে পু’ড়া’য় না! একটাবারও কি ইচ্ছে করে না আমার ভালোবাসায় নিজেকে নতুন করে রাঙাতে! আমাকে একটু ভালোবাসলে আপনার কি এমন ক্ষ’তি হয়ে যাবে শুনি?”
____”ভালোবাসতে ভ’য় হয়।”
আমি চ’ট করেই ঘা’ড় বা’কি’য়ে তীব্রের মুখশ্রী পানে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। তীব্রের চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ এ চোখে আজ কোনো রা’গে’র চিহ্ন নেই। হু’ট করেই তীব্র আমাকে পুরোপুরি ভাবে ওনার দিকে ঘুরিয়ে বসালেন। আমি কিছু বলতে নিবো তার পূর্বেই আমার গলায় মুখ ডুবালেন আর আমাকে খুব শ’ক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলেন। ওনার প্রতিটি কাজ আমাকে অবাকের পাশাপাশি শি’হ’রি’ত করছে।
আমি পরপর কয়েকবার ঢো’ক গি’লে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। কিয়ৎক্ষণ পর মনে হলো গরম কিছু আমার গলায় পড়ছে। এবারও বুঝতে বা’কি রইলো না তীব্র কাঁদছে। এই মানুষটাকে বোঝা বড় দা’য় হয়ে দাঁড়িয়েছে যেনো। কখনও রা’গে’র উচ্চ পর্যায়ে যান আবার কখনও এতোটাই শীতল হয়ে যায় যে বাচ্চাদের মতো কেঁদে ফেলেন। আমি আমার জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দ্বয় ভিজিয়ে নিলাম। তারপর তীব্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম….
____”ভালোবাসতে ভ’য় হয় কেন আপনার?”
তীব্র জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, আমি তা খুব গভীর ভাবে অনুভব করতে পারছি। আমি আরো একবার ঢো’ক গি’ল’লা’ম। পরমুহূর্তে তীব্র ভেজা কন্ঠে বললো…
____”আমি যাকেই খুব করে ভালোবেসেছি সেই আমার থেকে খুব দ্রুত হা’রি’য়ে গিয়েছে। প্রথমে আমার মা, তারপর বাবা, দাদী, নূরা। তাই ভ’য় হয় নতুন করে ভালোবাসতে। তোমাকে যদি ভালোবেসে ফেলি আর তুমিও আমাকে ছে’ড়ে চলে যাও! হা’রি’য়ে যাও! বারবার এই হা’রা’নো’র বে’দ’না স’হ্য করে নেওয়া আমার জন্য অ’সম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মা-বাবা বে’চে থাকা কালীন আমার জীবনটা এমন অ’গো’ছা’লো, ছ’ন্ন’ছা’ড়া ছিলো না। আমার যখন ১০ বছর বয়স তখন হৃ’দ’রো’গে আ’ক্রা’ন্ত হয়ে আমার মা আমাকে ছে’ড়ে চলে গেলেন। বহুদূরে হা’রি’য়ে গেলেন। খুব কেদেছিলাম সেদিন, বাবা মায়ের শো’কে এতোটাই ভে’ঙে পড়েছিলেন যে আমার মায়ের মৃ’ত্যু’র ২দিন পরে তিনিও আ’ত্ন’হ’ত্যা করলেন। আমাকে ছ’ড়ে দু’জনেই চলে গেলেন। তখন আমার ভা’ঙা হৃদয়ের সঙ্গী ছিলেন একমাত্র আমার দাদী।
দাদীর সাথে থাকতে থাকতে, তার আদর-ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছিলাম৷ কিন্তু সেই ভালোবাসাও আমার কাছে বেশিদিন স্থা’য়ী ছিলো না। আমার বয়স যখন ১৮ বছর তখন তিনিও মা’রা যান। সেদিন থেকে নেমে আসে আমার জীবনে কালো অ’ন্ধ’কা’র। আমার চাচা আমার দেখাশোনার দায়িত্ব ভা’র নেন। নিজেদের স্বা’র্থ সি’দ্ধি’র জন্য আমার হাতে তুলে দেন অ’স্ত্র।
আমার মানসিক দূ’র’বস্থা’র সুযোগ নিয়ে তারা আমার ভিতরের সব ভালো ম’নু’ষ’ত্য বো’ধ’কে দ’মি’য়ে আমাকে দিয়ে একের পর এক নোং’ড়া কাজ করাতে শুরু করেন৷ আমাকে টাকার লো’ভ দেখান, পা’পে’র সাম্রাজ্য আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়। খু’ন করা, অ’ন্যা’য় – ব্য’ভি’চা’র, নিরীহ মানুষদের দূ’র্ব’ল’তা’র সুযোগ নিয়ে তাদের স’র্ব’হা’রা করা, বড় বড় মন্ত্রীদের সাথে ডি’ল করা মো’টা অংকের টাকা নেওয়া। এসব করতে করতে আমি পা’পে’র সাম্রাজ্যে রাজা হয়ে উঠি।
একজন মা’ফি’য়া কিং বলে আমাকে এক নামে সকলে চিনতে শুরু করে। আমার এই অ’গো’ছা’লো জীবনে হু’ট করে আগমন ঘটে নূরার। যে মেয়েটা আমাকে আবারও ব’দ’লে দিতে পেরেছিলো। সব ছে’ড়ে ছু’ড়ে যখনি ওকে নিয়ে নিজের বা’কি জীবনটা কাটাবো বলে ঠিক করলাম সেই সময়ই আবারও ভু’ল ধো’কা’র শি’কা’র নিয়ে নিজের জীবন হা’রা’তে বসতে হয়েছিলো আমার। নূরাকে ভু’ল বুঝে কাটিয়ে দিলাম নিজের জীবনের ৫টি বছর।
২৮ বছর বয়সে এসে অ’না’কা’ঙ্ক্ষি’ত ভাবে আবার তোমার আগমন ঘটলো আমার জীবনে। তোমাকে আমি ভালোবাসি নি এটা ঠিক, কারণ তখন নূরাকে নিয়ে আমার মাঝে ভু’ল ধারনা গুলো বিরাজ করতো। তোমাকে ক’ষ্ট দিয়ে, তোমাকে নিজের মতো ঠ’কি’য়ে, আ’ঘা’ত দিয়ে শান্তি লাভ করতে পারবো এমনটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমার চোখে পানি দেখলে, তোমার মুখে আমাকে নিয়ে তি’ক্ত ক’ষ্টে’র কথা শুনলে আমার ভিতরটা অজান্তেই মো’চ’ড় দিয়ে উঠতো বারংবার।
পারতাম না তোমার সামনে সেই মূহূর্তে দাঁড়িয়ে থেকে দুটো ক’ড়া প্রতিত্তুর করতে। একলা থেকে নিজেকে ক’ঠো’র করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতাম। সফল ও হতাম কিন্তু আবারও যখন তোমার সামনে নিজের ক’ঠো’র রূপের বহিঃপ্রকাশ করতাম তখন তুমি ভে’ঙে পড়তে তখন আমি আবারও দূ’র্ব’ল হয়ে তোমার থেকে নিজেকে আ’ড়া’ল করতাম।
৩দিন পূর্বে যখন তুমি আমার চোখে আ’ঙু’ল তুলে আমার সব ভু’ল ধারণা ভে’ঙে দিলে, শে’ষ মূহূর্তে এসে আমার বুকে ঝা’পি’য়ে পরে ভালোবাসার কথা বললে বিশ্বাস করো আমার মনে হচ্ছিলো আমার বুকের ভিতর কেও ছু’রি দিয়ে বারংবার আ’ঘা’ত হে’নে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে দিচ্ছে এমন য’ন্ত্র’ণা দায়ক অনুভূতি হচ্ছিলো।
নূরাকে আমি আমার সবটা উ’জা’র করে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু নূরা আমাকে ভালোবাসে নি এই বিষয়টা যেমন আমাকে পু’ড়ি’য়ে’ছে তেমনি তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসিনি এই বিষয়টা তোমাকে পু’ড়া’নো’র পাশাপাশি আমাকে আবারও গভীর ভাবে পু’ড়ি’য়ে’ছে।
বারবার মনে হয়েছে তোমাকে আমার ভালোবাসা উচিত হবে না, তোমার থেকে আমার যতো দ্রুত সম্ভব নিজেকে সরিয়ে ফে’ল’তে হবে, নয়তো তোমার চোখের দিকে তাকালে আমার জন্য যে নি’খা’দ ভালোবাসা আমি দেখতে পাই সেই ভালোবাসা আমার পুরোপুরি পু’ড়ি’য়ে নিজের আয়ত্তে করে ফে’ল’বে তখন আমিও পারবো না তোমার থেকে নিজেকে ছাড়াতে। পারবো না তোমাকে ভালো না বেসে থাকতে। পারবো না তোমাকে ভালোবাসার পর আবারও বাকিদের মতো কিছুদিন পর হা’রি’য়ে ফেলতে।
———————————-
কথাগুলো বলে তীব্র থেমে যায়, আমার জামার একাংশ তীব্রের চোখের নোনাজলে ভিজে গিয়েছে। আমি যেনো পুরোপুরি অনূভুতি শূ’ন্য স্ত’ব্ধ হয়ে গিয়েছি তীব্রের কথা গুলো শুনে। মানুষটার মনে কতো ক’ষ্ট চা’পা পরে ছিলো ভাবতেই বুকের ভিতরটা দ’রু’ণ ক’ষ্টে মো’চ’ড় দিয়ে দিয়ে উঠছে। আমার দু’গাল ছা’পি’য়ে অঝোর ধারায় নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। তীব্রকে কি এখন আমার স্বান্তনা দেওয়া প্রয়োজন! কিন্তু কি বলে স্বান্তনা দিবো! কোনো ভাষা খুজে পাচ্ছি না কেনো নিজের মাঝে!
তীব্রের প্রতি আমার ভালোবাসা আর সম্মানের জায়গাটা আগের থেকে বেশি গাঢ় আর ম’জ’বু’ত হয়ে গিয়েছে। বারকয়েক চোখ পাতা নাড়িয়ে সকল ইমোশনকে কন্ট্রোল করে নেওয়ার চেষ্টা চালালাম। কিয়ৎক্ষণ পর, মনস্থির করলাম আমাকে তীব্রের মাঝে জ’মে সকল ক’ষ্ট গুলোকে নিজের ভালোবাসার চাদরে এমন গভীর ভাবে মু’ড়ি’য়ে ফেলতে হবে যেনো তীব্র আর কখনও সেসব ভেবে চোখের পানি ফেলতে না পারে। নতুন করে ওকে ভালোবাসতে শিখাতে হবে আমার। ওর মনের সকল ভ’য় করে দূ’র করে ফে’ল’তে হবে।
———————————-
আমার চি’ন্তা’র ঘো’র কে’টে যায় তীব্রের ফোন বেজে ওঠার শব্দে। তীব্র আমার গলা থেকে নিজের মাথা উঠিয়ে দু’হাতে নিজের চোখ-মুখ মু’ছে নিলেন। আমি তীব্রের কোলের উপর থেকে উঠে ওনার হাতের বাম পাশে বসে পরলাম। উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছি তীব্রের ফোনের দিকে। ফোন স্ক্রিনে শফিক ভাইয়ের ছবি ও নাম্বার ভাসছে। তীব্র নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিয়ে ফোন রিসিভ করলেন। ওপাশ থেকে শফিক ভাইয়া কি বললেন আমি শুনতে পারলাম না। কিন্তু মূহূর্তের মধ্যেই তীব্রের মুখের রিয়েকশন এর পরিবর্তন হতে দেখে আমার ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে এলো।
পরমুহূর্তে তীব্র কিছু না বলে ফোন কে’টে দিলেন। দ্রুত বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে পানি দিয়ে বের হলেন। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে, আলমারি থেকে একটা অন্য শার্ট বের করে পড়ে নিলেন। আমি শুধু নিরব দর্শকের ন্যয় ওনার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছি। টি-টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
____”ভিষণ জ’রু’রী কিছু কাজ সম্পন্ন করা বা’কি রয়ে গিয়েছে। সেগুলো খুব দ্রু’ত সম্পন্ন করতে না পারলে দে’ড়ি হয়ে যাবে। তখন সবকিছু হাতের বাহিরে চলে যাবে। আমি এখন বাহিরে যাচ্ছি আসতে সময় লাগবে। তুমি খেয়ে নিও, নিজের খেয়াল রেখো। আর ভু’লে’ও বাসার বাহিরে পা রাখবে না। এই সময়টা তোমার জন্য বাসার বাহিরে যাওয়া অ’নিরাপদ। আমার শ’ত্রু পক্ষরা সবসময় আমার দূ’র্ব’ল জায়গা খোঁজার চেষ্টায় লে’গে আছে। তোমাকে তারা হাতের নাগালে পেয়ে গেলে তাদের চেষ্টা সফল হবে৷ আমার একমাত্র দূ’র্ব’ল’তা তুমি। আমার দূ’র্ব’ল’তা’কে তোমারই নিকট আ’মা’ন’ত হিসেবে রেখে যাচ্ছি। খেয়াল রাখবে মিসেস.তীব্র রহমান।
কথাগুলো বলেই তীব্র দ্রুত পায়ে স্থান ত্য’গ করলেন। আমাকে কিছু বলার বা জিঙ্গাসা করার সুযোগ দিলেন না।
#চলবে…………..#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
_____”মিরা আমার ঘড়ি টা কোথায় রেখেছো! পাচ্ছি না তো খুঁজে। উফহহহ আমার কলেজের লেইট হয়ে যাচ্ছে তো। প্রতিদিন আমার এসব খুঁজতে গিয়েই যতো দে…..”
আদিত্য ওর পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই মিরা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ঘড়িটা হাতে উঠিয়ে আদিত্যের সামনে ধরে। আদিত্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে দৃষ্টি স্থির করে চুল ঠিক করতে করতে মিরাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলো সেই মূহূর্তে ঘড়িটা দেখে নিজের ৩২ পা’টি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে মিরার হাত থেকে ঘড়িটা নেয়। মিরা ওর ভ্রু যুগল কুঁচকে আদিত্যের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য মিরাকে মুখশ্রীতে রাগের হালকা আ’ভা দেখতে পেয়ে আমতা আমতা স্বরে বলে….
_____”রা রাগ করে না আমার মিষ্টি বউ! জানোই তো আমি এমন। চোখের সামনেই নিজের সব জিনিস রাখা থাকা স্বর্তেও তুমি আমার হাতে হাতে সেগুলো ধরিয়ে না দিলে আমার চলে না।”
মিরা কিছু না বলে আদিত্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ওর টা’ই বে’ধে দিতে মনোনিবেশ করে। আদিত্য আবারও বলে…
_____”আমার বউ টা রেগে গেলে কেমন নাকের ড’গা লাল বর্ণ ধারণ করে আমার তো তাই আরো বেশি রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।”
মিরা দাঁতে দাঁত পি’ষে বলে…
_____”তাই না!”
বলেই মিরা আদিত্যের গলার টা’ই বেশ টা’ই’ট ভাবে চে’পে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য “আহহহ লাগলো তো” বলে উঠে।
মিরা পরক্ষণেই টা’ই এর বা’ধ’ন স্বাভাবিক করে দিয়ে অ’স্থি’র কন্ঠে বলে…
_____”খুব ব্য’থা পেলে নাকি গো! দেখি দেখি গলায় দা’গ বসে যায় নি তো আবার!”
মিরাকে অ’স্থি’র হতে দেখে আদিত্য ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে দু-হাত মিরার কমোর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। মিরা আদিত্যের শা’র্ট সরিয়ে গ’লা দেখতে ব্য’স্ত। আদিত্য মিরার কপালের সাথে কপাল ঠে’কি’য়ে শীতল কন্ঠে বলে….
_____”শান্ত হও বউ, আমার কিছু হয় নি। এতোটুকুর জন্য এতো অ’স্থি’র হতে হয়!”
মিরা ওর দু’চোখ ব’ন্ধ করে নিয়ে আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে…
_____”তুমি ছাড়া এই সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়ে আমার কেই বা আছে বলো! তোমাকেই আমি আমার পৃথিবী মানি। নিজের অ’জা’ন্তে তোমাকে সামান্যতমও আ’ঘা’ত দিয়ে ফেললে নিজের কাছেই বেশি খা’রা’প লাগে গো। তোমাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।”
_____”ওরে আমার পা’গ’লী বউটারে! সকাল সকাল এত্তো ভালোবাসা নিবেদন করছো যে এখন তো আমার
তোমাকে…..
আদিত্য পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই মিরা ওর হাত আদিতের ঠোঁটের উপর রেখে ওকে চু’প করিয়ে দিয়ে বলে…
_____”প্রফেসর আদিত্য চৌধুরী এখন মোটেও রো’মা’ন্স করার সময় না। আপনার কলেজে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, তাই এখন আপনাকে যেতে হবে। আমাকে ছাড়ুন এখন নয়তো আপনার খা’রু’স প্রিন্সিপাল আপনাকে লেইটে কলেজে পৌঁছার জন্য ক’ড়া কথা শুনিয়ে দিবেন।”
মিরার কথা শুনে আদিত্যের চোখে-মুখে হালকা বি’ষ’ন্ন’তা’র ছাপ ফুটে উঠে। আদিত্যকে মু’ড অফ করতে দেখে মিরা আদিত্যের ঠোঁটের উপর থেকে হাত সরিয়ে চোখের পলকেই সেখানে ভালোবাসার হালকা পরশ একে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই আদিত্যের চোখে-মুখে খুশির হাওয়া দোলা দিয়ে যায় যেনো। মিরার কপালে শব্দ করে একটা চু’মু একে দিয়ে মিরাকে ছে’ড়ে দেয় আদিত্য। তারপর বিছানার উপর থেকে ব্যগটা উঠিয়ে বাম কাঁধে নিয়ে বলে…
_____”নিজের খেয়াল রেখো বউ, কলেজ শে’ষ করে আমি খুব দ্রুতই ফিরে আসবো।”
মিরাও স্মিত হাসি দিয়ে আদিত্যকে বি’দা’য় জানায়।
————————-
রে’স্ট্রি’ক’টে’ড এরিয়ার মাঝে আ’ব’ছা অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন রুমে সেলিং এর সাথে দুই পা বে’ধে সে’ন্স লে’স কামাল হাসানকে ঝু’লে রেখেছে তীব্রের আয়ত্ত্বে কর্মরত কালো পোশাকধারী লোকেরা। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে শফিক তীব্রকে ফোন করে সেই খবর ই জানিয়েছে।
মূল দরজা খুলে যাওয়ায় অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন রুমটি সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে যায় মূহূর্তেই। দুই পকেটে দু-হাত গুঁ’জে দিয়ে শি’শ বাজাতে বাজাতে সামনের দিক অগ্রসর হচ্ছে তীব্র। আজ তীব্রের মন ভিষণ আনন্দিত হয়ে আছে। কামালকে ঝু’লি’য়ে রাখা জায়গাটি থেকে এক হাত দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে পরে তীব্র।
শি’শ বাজানো থামিয়ে মাথা উঠিয়ে উপরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্র ঠোঁট বা’কি’য়ে হাসি দেয়। পরক্ষণেই হাত দিয়ে ইশারা করে একজন কালো পোশাকধারী গার্ডকে নিজের কাছে ডেকে নেয়। গার্ডটি আসতেই তীব্র ওর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা বজায় রেখেই বলে…
_____”আমার বড় ভাইয়ের সে’ন্স ফিরানোর ব্যবস্থা করো। অনেক আদর-যত্ন করা বা’কি রয়ে গিয়েছে। এভাবে সে’ন্স লে’স হয়ে থাকলে কি করে চলবে!”
তীব্রের কথানুযায়ী কালো পোশাকধারী লোকটি রুমটির ক’র্ণা’রে গিয়ে একটা বড় আকারের পা’ই’প টেনে নিয়ে আসে। তীব্র হালকা উচ্চস্বরে বলে…
_____”এ শফিক আমাকে একটা চেয়ার দে রে।”
শফিক দ্রুত একটা চেয়ার নিয়ে তীব্রের সন্নিকটে এসে দাঁড়িয়ে পরে। তীব্র শফিকের দিকে একপলক দেখে ওর হাত থেকে চেয়ারটি নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে পরে। তীব্রকে বসতে দেখে কালো পোশাকধারী লোকটি আরেকজন গার্ডকে সু’ই’চ অন করতে ইশারা করে, ঐ লোকটি সু’ই’চ অন করতেই পাইপের মুখ দিয়ে দ্রুত গতিতে পানি বেরোতে শুরু করে।
কালো পোশাকধারী লোকটি হাত উঁচু করে পাইপের মুখ দু’আঙুল দ্বারা চে’পে ধরে কামালের মুখের উপর সেই দ্রুত গা’মী পানির ধারা দেয়। পানির ধারার গতি অনেক বেশি হওয়ায় কামাল হ’ক’চ’কি’য়ে উঠে। মূহূর্তেই নাক-মুখ-কান দিয়ে পানি প্রবেশ করে একাকার অবস্থা হয়ে দাড়ায় কামালের। কামালের সে’ন্স ফিরেছে দেখে কালো পোশাকধারী লোকটি পানির ধারা অন্যত্র স’রি’য়ে ফেলে।
জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে কামাল নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। পরক্ষণেই একটু স্বাভাবিক হতেই নিজের অবস্থান বুঝতে চন্ঞ্চল দৃষ্টিতে চারপাশ দেখতে থাকে। নিজেকে উ’ল্টো অবস্থায় ঝু’লে থাকতে দেখে কামালের চ’ক্ষু কপালে উঠার উপক্রম হয়। সেইমূহূর্তেই তীব্র আবারও শি’শ বাজাতে শুরু করে। শি’শ এর শব্দ কর্ণপাত হতেই কামাল নিজের দৃষ্টি নিচের দিকে নিক্ষেপ করতেই তীব্রকে দেখতে পায়।
তীব্রকে দেখার পর কামালের আর বুঝতে বা’কি নেই ওদের সব চা’ল তীব্রের সামনে খো’লা’শা হয়ে গিয়েছে। কামাল ওর দু’চোখ ব’ন্ধ করে বেশ কয়েকবার শুকনো ঢো’ক গি’লে নেয়। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে দ্রুতগামী পানির ধারা থেকে অনেক পানি মুখ দিয়ে শরীরের অন্তস্তলে পৌঁছে গিয়েও কামালের মনে হচ্ছে ওর কলিজার পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে এসেছে।
স্বয়ং আ’জ’রা’ই’ল যেনো কামালের সামনে বসে আছে আর তাই মৃ’ত্যু ভ’য় যেনো পুরোপুরি ভাবে গ্রা’স করে নিচ্ছে। শিশ বাজানো থামিয়ে তীব্র চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মাথার পিছনে দু’হাত রেখে আবারও উপরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কামাল আর তীব্রের চো’খা-চো’খি হয়ে যায়, কামালের চোখ-মুখ শুকিয়ে ছোট হয়ে গিয়েছে একমূহূর্তে। তীব্র ঠোঁট প্রসারিত করে হাসি দিয়ে কামালকে উদ্দেশ্য করে বলে….
_____”আরে আমার বড় ভাই এ তোমার কি অবস্থা! সেলিং এর সাথে উ’ল্টো অবস্থায় ঝু’লে আছো! চু’চ্চু’হ চু চু চু’হ! আসলে কি বলোতো সব পা’পে’র ফল। পা’প করতে করতে মানুষ রূপী ….জা’নো’…. গুলো এটা ভু’লে যায় যে তাদের ও একদিন মৃ’ত্যু হবে। আর সেই মৃ’ত্যু’টা এতোটাই ভ’য়া’ন’ক মৃ’ত্যু হবে যে, কোনো নরমাল হৃদয়ের ব্যক্তি যদি সেই মৃ’ত্যু’র দৃশ্য নিজের চোখে দেখতো তো সে সেখানেই হা’র্ট অ্যা’টা’ক করে পটল তুলতো।
বলেই তীব্র অ’ট্ট’হা’সি’তে মেতে উঠে। এতো উচ্চস্বরে তীব্রকে হাসতে দেখে কামালের অবস্থা আগের তুলনায় আরো বেশি শো’চ’নী’য় হয়ে দাঁড়ায়। পরমুহূর্তে তীব্র হাসি থামিয়ে কালো পোশাকধারী একজনকে ইশারা করে বলে কামালকে ওভাবে রেখেই কিছুটা নিচে নামাতে। লোকটি মাটি থেকে সাড়ে ৩ফু’ট উচ্চতা রেখে কামালকে নিচে নামায়। কামালকে নিচে নামানো হলে তীব্র বলে…
_____”ওর মুখের বা’ধ’ন খুলে দে রে। কতো জনকে তো নিঃশ্বাস আ’ট’কি’য়ে মে’রে ফেলে নিজের স্বা’র্থ সি’দ্ধি করেছে। অন্তত নিজের মৃ’ত্যু’র আগে তো বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিক বে’চা’রা।”
কালো পোশাকধারী লোকটি কামালের সন্নিকটে গিয়ে ওর মুখের বা’ধ’ণ খুলে দেয়। মুখের বাঁ’ধ’ন মু’ক্ত হতেই কামাল সেভাবে নিঃশ্বাস না নিয়ে অনুনয়ের স্বরে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে….
_____”ভাই আ আমাকে মা মা’রি’স না। ক্ষ’মা করে দে ভাই। আমার ভু’ল হয়ে গিয়েছে। আমি যা অ’ন্যা’য়, পা’প করেছি সব বাবার কথায় করেছি। উনিই আমার ব্রে’ই’ন ওয়াশ করে লো’ভে’র বিস্তার করিয়েছিলেন। আমি তো তোর আপন চাচাতো ভাই, তোর বউ ভাইয়ের মতো।”
তীব্র ওর হাত উঠিয়ে কামালকে থামিয়ে দেয়। তারপর ধা’ত’স্ত কন্ঠে বলে….
_____”৫বছর আগে আমার সাথে যখন তোমরা ঐ নোং’ড়া খেলাটা খেলেছিলে, আমার ভালোবাসাকে আমার থেকে কে’ড়ে নিয়েছিলেন, আমার চোখে ভু’ল ধারনার বি’স্তা’র ঘ’টি’য়ে’ছি’লে, নৃ’শং’স ভাবে আমাকে খু’ন করার চেষ্টা করেছিলে তখন তোমার মনে এই চি’ন্তা আসে নি যে আমি তোমার আপন চাচাতো ভাই, তোমার ছোট ভাইয়ের মতো! ভালো হয়ে যেতে চেয়েছিলাম, সব পা’প কাজকে ত্যা’গ করে নিজের ভালোবাসার মানুষটির সাথে একটা সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা তা হতে দিলে না। আবারও আমার জীবনকে ন’র’কে’র মাঝে এনে ফে’ল’তে বা’ধ্য করালে। তোমাদের মতো ন’র কী’ট’দের আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। কারণ তোমরা যতোদিন বে’চে থাকবে ততোদিন তোমাদের এসব পা’প কার্য দ্বারা আরো হাজার হাজার সাম্রাজ্য তোমরা তৈরি করে ফেলবে। তাই তোমাদের ধ্বং’স করা অতীব জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। আর যেনো আমার মতো তীব্র নামক মা’ফি’য়া কিং তৈরি হতে না পারে সেই কার্য়ই সুসম্পন্ন করবো।
——————————
নিজরুমে পায়চারী করছি আমি। কিছু বিষয় এখনও আমার সামনে পুরোপুরি ক্লিয়ার হয় নি তাই কপালে চি’ন্তা’র ভা’জ স্পষ্ট হয়ে আছে। আশ্রমের বাচ্চাগুলোকে পা’চা’র করার কাজে শুধু কি আশ্রমের ঐ একজন কতৃপক্ষেরই হাত থাকতে পারে! একজন মানুষ সকলের চোখে ধু’লো দিয়ে আশ্রম থেকে বাচ্চা পা’চা’র করার মতো এতো রি’স্কি কাজ করবে না। নিশ্চয়ই আরো অনেকেই জ’ড়ি’ত আছে এই কাজে।
যারা নিজেদের মুখে ভালো মানুষের মু’খো’শ পড়ে আশ্রমের ভিতরেই ঘু’রে বে’ড়া’চ্ছে। তীব্র কি বাচ্চাগুলোর নিরাপত্তার আ’দে’ও কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন! গুরুত্বপূর্ণ কাজ প’রে গিয়েছে বলে হু’ট করেই চলে গেলেন। এখন এতো এতো টে’ন’শন নিয়ে আমি চু’প চা’প ঘরে বসে থাকি কি করে। আবার বলে গেলেন বাসার বাহিরে যেনো ভু’লে’ও পা না রাখি। আমাকে আমার নিকট আমানত রেখে গেলেন, ভালো কথা বলতে শিখে গিয়েছেন। উফহহ কি যে করি আমি!
#চলবে…………….