তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব -১৭+১৮

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৭)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

তৃপ্তির বলা শেষ কথাটি শোনামাত্র তীব্রের কপালে চি’ন্তা’র ভা’জ স্পষ্ট হয়। তীব্র র’কিং চেয়ার ছেড়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কপালে ডান পার্শে এক আঙুল ঠেকিয়ে ঘ’ষা দিতে থাকে আর ভাবে…

____”আমার চোখে কিসের প’র্দা আছে যা সড়িয়ে ফে’ল’তে বললো তৃপ্তি! আমি কি দেখছি যা সত্য নয় , মি’থ্যা’র চাদরে মো’ড়া’নো! এমন ধো’য়া’শা’র মাঝে ফে’লে রেখে যাওয়ার কোনো মানে হয়।”

তৃপ্তির উপর কিছুটা বি’র’ক্তি কাজ করছে তীব্রের।

————————

নিজ রুমে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে কখন যে ঘুমের রাজ্যে ডু’বে গিয়েছিলাম আমি তা বুঝতেই পারি নি। যখন ঘুম ভা’ঙ’লো চোখ মেলে তাকাতেই সম্পূর্ণ অন্ধকার চাদরে মুড়ানো দেখে বুঝতে পারলাম সন্ধ্যা পেরিয়ে গিয়েছে। শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে উঠিয়ে ফ্লা’শ অন করলাম তারপর বিছানা ছেড়ে নেমে ঘরের লাইট অন করলাম।

ফোনটা ওয়ার ড্র’প এর উপর রেখে খোলা চুলগুলো হাত খো’পা করে নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলাম ফ্রেশ হওয়ার উদ্দেশ্যে। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আমার বিছানার উপর তীব্রকে আয়েশের সাথে বসে থাকতে দেখে একটুও অবাক হলাম না। এই মূহূর্তে তীব্রের আমার রুমে আসার পিছনে কারণ কি তা আমার বুঝতে বাকি নেই। আমি তীব্রের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রুমের বাহিরে যেতে নিলাম সেই মূহূর্তে তীব্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

____”বারবার পা’লি’য়ে যাচ্ছো কেন? প্রশ্ন করবো উত্তর দিতে পারবে না তাই পা’লা’চ্ছো?”

তীব্রের এহেনু কথায় আমি ওরদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্মিত হাসলাম। তারপর বুকের সাথে দু’হাত গু’জে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম…

____”আপনি কি কি প্রশ্ন করবেন সব আমি জানি , কি উত্তর করতে হবে সেটাও জানি। অপেক্ষা করুন কফি বানিয়ে আনছি। তারপর আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন”

তীব্রকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি নিচে চলে আসলাম কফি বানানোর উদ্দেশ্যে।

——————————-

কিয়ৎক্ষণ পর ২কাপ কফি হাতে নিয়ে আবারও রুমে প্রবেশ করলাম। বিছানায় তীব্রকে দেখতে না পেয়ে ঘা’ড় বা’কি’য়ে বেলকোনিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। তীব্র বেলকোনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ধীরপায়ে বেলকোনিতে এসে তীব্রের থেকে এক হাত সম দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তীব্র আমার উপস্থিতি টের পেয়ে একনজরে আমাকে দেখলেন।

আমি ডান হাতে থাকা কফির মগটি তীব্রের দিকে এগিয়ে দিলাম, তীব্র বিনাবাক্যে মগটি নিয়ে নিলেন। আজকের চাঁদটা দেখে মনে হচ্ছে অর্ধ পূর্ণিমা , চাঁদের অর্ধেক অংশ আকাশের বুকে জায়গা দখল করে আছে যেনো। তার চারপাশে অগণিত তারারা মেলে জমিয়েছে। শির শির করে বাতাস বইছে , পরিবেশটা বেশ রোমান্ঞ্চকর। কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে সহজ গলায় তীব্রকে বললাম…

____”হুম বলুন কি কি জানতে চান?”

তীব্র শব্দ করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন , সেই নিঃশ্বাস যেনো শীতল বাতাসের সাথে মিশে গিয়ে আমার সম্পূর্ণ শরীরে এসে বা’রি খে’লো। আমি চোখ বুঝে নিলাম সঙ্গে সঙ্গেই। তীব্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো….

____”কোথায় গিয়েছিলে দুপুরে?”

আমি চোখ বু’ঝে রাখা অবস্থাতেই বললাম….

____”আশ্রমে”

____”আমাকে বললে কি আমি নিয়ে যেতাম না?”

____”আপনাকে বলার মতো এতো ভালো মানসিক অবস্থা ছিলো না তখন , আর সবথেকে বড় কথা আপনার সাথে আমার সম্পর্ক টাও বিয়ের আগের মতো সুন্দর নয় সম্পূর্ণ উ’ল্টো এখন আপনার নিকট এই আবদার গুলো করা মানে আমার জন্য নি’ছ’ক বে’মা’না’ন”

____”সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না , এরপর যেনো একলা বাহিরে যাওয়া না হয়। যখন প্রয়োজন হবে আমাকে বলবে”

____”ভেবে দেখবো”

____”আমি ভাবতে সময় বা সুযোগ দেই নি , আমার কথা শুনতে হবে তোমার এটাই শেষ”

____”কেনো শুনবো? আমি এতো বা’ধ্য তো নই”

____”মুখে মুখে ত’র্ক করে আমাকে রাগিও না। ফল খা’রা’প হবে”

____”আর কি বাকি আছে খা’রা’প হওয়ার!”

____”আমার এবার রা’গ উঠছে”

____”রাগ ছাড়া আর কি আছে আপনার? কখনও কোনো জিনিস নিয়ে ভালো ভাবে না ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় , রাগের বশে যা নয় তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন , এর জন্য অন্যের জীবন ও শে’ষ করে দেন আবার নিজের জীবন কতোটা দূ’র্বি’ষ’হ করে ফেলেন সেটার ও খেয়াল রাখেন না”

____”এতো হে’য়া’লি’প’না ভিষণ অ’পছন্দনীয় আমার”

____”হে’য়া’লি কোথায় করলাম? আপনার চোখে যে রা’গ আর ক্ষো’ভে’র ভা’ড়ি পর্দা দেওয়া আছে সেই পর্দাটাকে সরিয়ে নিজের চারপাশটা ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করিয়েন। জীবনে অনেক অ’ন্যা’য়, পা’প করেছেন। যার দ’রু’ন আজ আপনার এই অবস্থা।”

____”পা’প তো আমি করেছিই তাই তো যাকে নিজের সবটা ভালোবেসেছিলাম তার হাতে মৃ’ত্যু’র স্বাদ গ্রহন করতে গিয়েও বে’চে ফিরেছি”

____”আসলেই কি সে আপনার ভালোবাসা ছিলো?”

তীব্র চ’ট করে তাকায় আমার দিকে , আমার দৃষ্টি স্বাভাবিক সামনের দিকে নিবদ্ধ। তীব্র কিছু সময় নিরব থেকে বললো…

____”তুমি এখন আমার ভালোবাসা নিয়ে প্র’শ্ন তুলছো?”

____”মোটেও না , আমি বুঝাতে চেয়েছি আপনি যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছিলেন শে’ষ সময়েও কি সেই আপনার সামনে উপস্থিত ছিলো? আপনার বুকে কি সেই ছু’ড়ি চালিয়ে ছিলো?”

____”তুমি এতোকিছু জানলে কি করে?”

____”সেসব পরের বিষয় , যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর করুন।”

____”হুম নূরাই তো ছিলো , ওর চেহারা…”

আমি তীব্রকে থা’মি’য়ে দিয়ে বললাম…..

____”আমার জানা মতে পৃথিবীতে এক রকম চেহারার ৭ জন মানুষ বাস করে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে , কিংবা এই দেশে অন্ঞ্চল আলাদা হয়। যাদের কারোর সাথে কারোর র’ক্তে’র কিংবা বং’শে’র ও কানেকশন থাকে না”

আমি তীব্রের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে , তীব্রের দৃষ্টি আমার উপর স্থির। ওনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি ওনার সম্পূর্ণ মনোযোগ আমার কথা শোনার প্রতি নিবেশ করে রেখেছেন।আমি তীব্রের মুখশ্রী পানে শীতল দৃষ্টি স্থির করি। তারপর আবারও বলি….

____”আমার জানামতে নূরা সবসময় ওর দু’চোখে ভা’ড়ি কাজল দিতো। কখনও ওর চোখ কাজল বি’হী’ন থাকতো না। ও সবসময় হিজাব পড়তো তাই ঠোঁটে গাড় রংয়ের লিপস্টিক দেওয়াও ওর অ’প’ছ’ন্দে’র একটা অংশ ছিলো। নূরা শাড়ি পড়তেও জানতো না। আর এটাও জেনেছি নূরার চুল বিশেষ বড় ছিলো না যে খো’পা করা যাবে , হিজাব পড়ে থাকতো তাই আপনি হয়তো দেখেন নি।

কিন্তু আপনাকে যেদিন হ’ত্যা’র চেষ্টা করা হয়েছিলো সেদিনের ওর সাজের বর্ণনায় আমি অনেক কিছুর পরিবর্তন দেখেছি , যেমনঃ ওর চোখে সেদিন কাজলের চিহ্ন ও ছিলো না , ঠোঁটে ছিলো গাড় খয়েরী লিপস্টিক , পড়নে শাড়ি , আর চুল ছিলো খো’পা করা। সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমি বুঝলাম সেদিন কোনো পার্লার থেকেও মহিলা আসে নি বা বাড়তি কোনো মহিলাই আসে নি , নূরা একাই এ বাড়িতে এসেছিলো।

হাতে একটা সপিং ব্যগ ছিলো যাতে শুধু একটা শাড়ি আর সাজের হালকা জিনিসপত্র ছিলো। এক্সট্রা চুল ছিলো না যা ও ওর আসল চুলে লাগিয়ে খো’পা করতে পারবে। সম্পূর্ণ চেইঞ্জ আপনার সাথে কয়েকমাস ধরে চলাচল করা নূরা আর সেদিনের নূরার মাঝে আকাশ-পাতাল ত’ফা’ৎ ছিলো।

আর সবথেকে বড় কথা নূরা সবসময় আপনাকে আপনি বলে সম্বোধন করতো কিন্তু সেদিন ওর প্রতিটি কথায় ও আপনাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে ভিষণ সাবলীল ভাবে যেনো ও অনেকদিন থেকেই আপনার সাথে তুমি সম্বোধন করেই কথা বলে। আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো আপনি ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারতেন সেদিন আপনাকে হ’ত্যা’র চেষ্টাকারী আ’দে’ও নূরাই ছিলো নাকি অন্য কেও!”

তীব্রের দৃষ্টি ঘো’লা’টে হয়ে এসেছে , চাঁদের এক খ’ন্ড আলোয় তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় পি’ন’প’ত’ন নিরবতা বিরাজ করে আমাদের মাঝে। নিরবতার সেই দেওয়াল ভে’ঙে আমি আবারও বললাম….

____”যে বাচ্চাদের নিয়ে আশ্রম খুলেছিলেন তাঁদের সঠিক ভাবে খেয়াল রাখা হয় কি না সে বিষয়ে কখনও খোঁজ নিয়েছিলেন?”

তীব্র ধীর কন্ঠে ‘না’ সূচক জবাব দিলো। আমি তা’চ্ছি’ল্যে’র হাসি দিয়ে বললাম…

____”ঐ এ’তি’ম ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে নিজেদের রু’জি চালাতো এতেই ওরা ভালো ছিলো। যে দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারবেন না লোক দেখিয়ে সেই দায়িত্ব নিতে যান কেনো?”

____”ওদের যেনো কোনো প্রকার অ’সু’বি’ধা না হয় তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি শফিকের উপর দিয়েছিলাম।”

____”বিশ্বাস ভালো , অ’ন্ধ বিশ্বাস ভালো না। একটা কথা মনে রাখবেন, নিজ কমোরে থাকা ছু’রি’ই একসময় নিজ পেট কে’টে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে ফেলে। যে আ’ঘা’ত সহজে চোখে দেখা যায় না , অনুভব করা যায় না। ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়।”

____”তুমি কি বলতে চাচ্ছো বাচ্চারা ভালো নেই? শফিক ওদের ভালো-ম’ন্দে’র দেখাশোনা সঠিক ভাবে করছে না?”

____”লা’স্ট বিয়ের আগে যখন ১ম আপনার সাথে আশ্রমে গিয়েছিলাম তখন ওখানে আমি ৪০ জন বাচ্চা দেখেছিলাম। ছবি তো আছে গুণে দেখিয়েন। কিন্তু আজ যখন গেলাম ১০ জন বাচ্চা মি’সিং , ওদের জায়গা নতুন ১০ জন বাচ্চা আনা হয়েছে। আমি সেখানকার কর্মকর্তাকে বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন ঐ ১০ জন বাচ্চা নাকি ভিষন দ’স্যি স্বভাবের ছিলো।

ওনারা অনেক চেষ্টা করেও ওদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন নি , তাই ওরা রাতের অন্ধকারে পিছনের প্রাচীর ট’প’কে পা’লি’য়ে গিয়েছে। বিষয়টা ১ম এ আমাকে চি’ন্তা’য় ফেলেছিলো , কিন্তু গভীর ভাবে ভাবলাম আর বাকি পুরোনো বাচ্চাদের মাঝে যারা একটু বু’ঝ’দা’র স্বভাবের ছিলো তাদের থেকে যে ১০ জন বাচ্চা পা’লি’য়ে গিয়েছে বলে কর্মকর্তা দা’বি করলেন ঐ ১০ বাচ্চার দৈনন্দিন আচারন কেমন ছিলো তা শুনলাম , তখন ওরা সবাই আমাকে বললো ঐ বাচ্চাগুলো কি একদমই দ’স্যি স্বভাবের ছিলো না।

ভিষণ ভদ্র ছিলো, পড়াশোনাও ভালো করতো , সবার সাথে মিশে চলতো। শে’ষ যে বুঝদার বাচ্চার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তখন ঐ বাচ্চাটাকে কেমন ভী’ত দেখাচ্ছিলো , কাওকে দেখে সে ভিষণ ভ’য় পেয়ে ছিলো আমাকে কিছু কথা বলতে চেয়েও বলতে পারে নি। বিষয়টা ভিষণ অদ্ভুত লেগেছিলো আমার কাছে। আমি বাচ্চাটিকে অ’ভ’য় দিয়েছিলাম কিন্তু তবুও কিছু বলাতে পারি নি। তাই ওদের আর কিছু না বলে আমি আবারও ঐ কর্মকর্তার নিকট গিয়েছিলাম আর তখনি যা শুনতে পেলাম তাতে আমার সর্ব শরীর কে’পে উঠেছিলো……….

#চলবে……#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৮~বো’না’স পর্ব)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

তীব্রের সর্বশরীর রা’গে কাঁপছে এটা ভেবে যে ওর পিঠ পিছনে ওর ই বিশ্বস্ত লোকেরা এভাবে ওর সাথে বি’শ্বা’স’ঘা’ত’ক’তা করে এসেছে আর ও কখনও বুঝতেও পারে নি৷ তীব্র বিকালে আ’ঘা’ত পাওয়া ওর সেই হাত দিয়ে আবারও রেলিং এর উপর ঘু’ষি প্রয়োগ করতে উদ্দ্যত হলে আমি ওর হাত ধরে ফে’লি। উ’ত্তে’জি’ত কন্ঠে বলি….

____”আরে কি করছেন , বিকালেই এই হাতে কতোটা আ’ঘা’ত করে ক্ষ’ত বানিয়ে ফেলেছিলেন এখন আবার সেই হাতেই আ’ঘা’ত করতে উদ্দ্যত হচ্ছিলেন! এভাবে নিজের শরীরে আ’ঘা’ত করে লাভ কি! সব দো’ষী , অ’ন্যা’য়’কা’রী দের খুজে বের করতে হবে আর ক’ঠি’ন থেকে ক’ঠি’ন’ত’র শা’স্তি ওদের দিতে হবে। সবসময় রাগকে প্রশ্রয় দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না , নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। রা’গে’র বশে নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্ত সঠিক হয় না , বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই আমাদের চ’র’ম ক্ষ’তি’র সম্মুখীন করে। বুদ্ধি প্রয়োগ করে আমাদের প্রতিটি পদক্ষে………

আমি আমার কথার শে’ষ করার পূর্বেই হু’ট করেই তীব্র আমাকে খুব শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমি যেন মূহূর্তেই হ’ত’বি’হ্ব’ল হয়ে যাই। সর্ব শরীর অ’ব’শ হয়ে আসছে। কিয়ৎক্ষণ পর অনুভব করি আমার ডান কাধের একটু ফাঁকা অংশে গরম কিছু পড়ছে ট’প ট’প করে , বুঝতে পারি তীব্র কাঁদছে। বুকের ভিতরটা ধ’ক করে উঠে , এতো ক’ঠি’ন হৃ’দ’য়’হী’ন মানুষ ভাবি যাকে সে কি না কাঁদছে! কাপা কাপা হাত দুটো উঠিয়ে তীব্রের পিঠের উপর রাখলাম , আমার চোখ জোড়াও ইতিমধ্যে নোনা জলের পুকুরে পরিণত হয়েছে। কন্ঠ ধ’রে আসছে , কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছি না। আমার মন বু’লি আ’ও’রি’য়ে মস্তিষ্ককে জানান দিচ্ছে…..

____”কা’দ’তে দে একটু মানুষটাকে, জীবনে অনেক পা’প করেছে ভালোভাবে না জেনেই রাগের ব’সি’ভূ’ত হয়ে অনেক ভু’ল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাঁদলে মনের ভিতর জমা ক’ষ্টে’র ভা’ড়ি পাহাড়টা অনেক হালকা হয়ে যাবে।”

আরো বেশকিছু সময় পেড়িয়ে যায়, তীব্র নিজ থেকেই আমাকে ছে’ড়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে পরে। হয়তো নিজের কা’ন্না গুলো আর প্রকাশ করতে চাইছে না। আমি ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ছে’ড়ে তীব্রের কাঁধে হাত রাখলাম। তীব্র ভেজা কন্ঠে বললো…..

____”এই আ’ধা’রে ঢা’কা জীবন থেকে বে’ড়ি’য়ে এসে নূরাকে নিয়ে নিজের ভবিষ্যত সাজিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। ভিষণ ভালোবাসতাম ওকে , ওর মুখে নিজেকে নিয়ে ভালোবাসা মাখা কথা শুনতে মন অ’স্থি’র হয়ে থাকতো আমার। অবশেষে যেদিন সেই সময় আসলো সেদিনই ওকে আমার থেকে কে’ড়ে নেওয়া হলো। আমাকে ম’র’ণে’র থেকেও গভীর আ’ঘা’ত করলো আমার নূরপাখির রূপ ধা’রী অন্য এক নারী।

গত ৫ টা বছর ধরে এই দ’হ’নে আমি জ্ব’লে’ছি, ভেবে এসেছি কাওকে প্রকৃত ভাবে ভালোবাসা চরম মূ’র্খ’তা। নিজের অ’স্তি’ত্বকে ভু’লে কাওকে খুব করে ভালোবাসলে তার থেকে ভালোবাসা নয় চরম বি’শ্বা’স’ঘা’ত’কা পেতে হয়। সমগ্র নারী জাতির উপর আমার রা’গ , ক্ষো’ভ , ঘৃ’ণা’র সৃষ্টি হয়। মনে হয় সব নারীই ছ’ল’না’ম’য়ী , প্রথমে ভালোবাসা নামক পবিত্র জিনিসটা নিয়ে ছ’ল’না’র চাদর বিছাইবে তারপর সেই চাদরে যখন কেও নিজেকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিবে ঠিক সেই সময় নারী তার আসল রূপে এসে বুকের বাম পার্শ্বে যেখানে তাকে নিয়ে গড়ে তোলা সকল অনুভূতি গুলো বাস করে সেখানে আ’ঘা’ত হে’নে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে দিবে।

তুমি সত্যিই বলেছো তৃপ্তি , আমার চোখের উপর ভা’ড়ি পর্দা টা’ঙা’নো আছে। যে পর্দা আমি নিজে খুব যত্ন নিয়ে টা’ঙি’য়ে’ছি। ভু’ল করে এসেছি , চরম ভু’ল , যে ভু’ল গুলো কখনও ক্ষ’মা’র যোগ্য না। টাকার লো’ভে জ’র্জ’রিত হয়ে কতো কতো মানুষের অ’স’হা’য়’ত্বে’র সুযোগ নিয়ে তাদের সর্বস্ব কে’ড়ে নিয়েছি , খু’ন করতে দু’বার ভাবি নি। ২য় তো যাকে এতো বেশি ভালোবাসলাম তাকে সঠিক ভাবে না চিনেই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নিজের মাঝে ভু’ল ধারনার বিরাজ রাখলাম।

৩য় তো সেই ভু’লে জ’র্জ’রি’ত হয়ে আমি আবার ও ভু’ল করলাম , অ’ন্যা’য় করলাম , আমার প্রতি থাকা তোমার সব সত্য অনুভূতি , ভালোবাসার সাথে ছ’ল’না করলাম , কতো অ’ত্যা’চা’র করেছি তোমার সাথে। আমার মতো পা’পী মানুষের বে’চে থাকাও সবথেকে বড় পা’প। সকল অ’ন্যা’য় কারীদের খুব দ্রুতই তাদের পা’পে’র শা’স্তি দিবো আমি আমার নিজ হাতে। এতে যদি জীবনে করা হাজার হাজার পা’পে’র পরিমাণ গুলো একটু হলেও কমে যায়। তারপর…..

এতোসময়ের জ’মে থাকা নোনাজল গুলো এবার আর বা’ধ মানলো না। বা’ধ ভে’ঙে বেড়িয়ে এলো , আমার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে অনবরত কাঁপছে। বুকের ভিতরের সব য’ন্ত্র’ণা গুলো বুক চি’ড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। কা’পা কা’পা কন্ঠে বললাম…..

____”ত তা তার তারপর! তারপর ক কি! কি ক কর করবেন আ আপ আপনি!”

তীব্র আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। এখন আর ওর চোখে নোনা জল চিক চিক করছে না। মুখের আকৃতি ও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। ওনার এই স্বাভাবিক রূপ আমার ভিতরটা আরো গভীর ভাবে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে দিচ্ছে। তীব্র স্মিত হাসলেন , আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..

____”তারপর যা করবো , যা হবে সব নিজের চোখেই দেখতে পারবে। এতো উতলা হয়েও না , এবার থেকে আমার নেওয়া সকল সিদ্ধান্তই সঠিক হবে , ভু’ল আর করবো না।”

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ঝা’পি’য়ে পড়লাম তীব্রের বুকের উপর। আমার আকস্মিক এমন কাজে তীব্র দু’ক’দ’ম পিছিয়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। ডু’ক’রে কেঁদে উঠলাম আমি , কেনো যেনো মনে হচ্ছে এই মানুষটাকে আমি হা’রি’য়ে ফেলবো। যতো কিছুই হয়ে যাক না কেনো এই মানুষটাকে তো আমি আমার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি , এখনও বাসি। যতোই বলি না কেনো ওনার প্রতি আমার ঘৃ’ণা কাজ করে কিন্তু আমার ভালোবাসার কাছে সেই ঘৃ’ণা’র দেওয়াল অত্যন্ত ন’গ’ন্য। কোনো ভাবেই আমি হারাতে চাই না এই মানুষটাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলি….

____”যখন কেও নিজের করা সব অ’ন্যা’য় , পা’প কাজগুলোর জন্য অনুতপ্ত হয় আর পরবর্তীতে কিছু ভালো কাজ করে তখন তাকে ক্ষ’মা করে দেওয়া উচিত। আপনার জন্য আমার মনে রা’গ , ঘৃ’ণা কিয়ৎক্ষণ পূর্বে থাকলেও এখন আর নেই। আমি আপনাকে অনেক অনেক বেশিই ভালোবাসি , আপনাকে আমি হা’রা’তে পারবো না।”

কথাগুলো বলতে বলতেই আমি সে’ন্স হা’রি’য়ে ফেলি। যখন মাথায় খুব বেশি প্রে’সা’র পরে বা আমি খুব ভ’য় পাই বা খুব কা’দি তখন হু’ট করেই সে’ন্স হা’রি’য়ে ফেলি।

তৃপ্তি নীরব হয়ে গিয়েছে দেখে তীব্র তৃপ্তিকে পাঁজা কোলে উঠিয়ে বেলকোনি থেকে রুমের ভিতর চলে আসে। তৃপ্তিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর মাথার পাশে বসে পরে তীব্র। নিজের দৃষ্টি তৃপ্তির মুখশ্রীর উপর স্থির রেখে বলে…

____”তোমার ভালোবাসাকে , সকল অনুভূতি গুলোকে সেই কবেই আমি অ’প’মা’ন করেছি , ছোট করেছি, তু’চ্ছ করেছি। তবুও তুমি আমাকে ভালোবাসো। তোমার এই পবিত্র ভালোবাসা পাওয়ার যো’গ্য’তা আমার নেই। আমাকে আমার সিদ্ধান্ততেই অ’ট’ল থাকতে হবে। পারলে ক্ষ’মা করে দিও।”

কথাগুলো বলে তীব্র তৃপ্তির পাশ থেকে উঠে দাঁড়ায়। এবার ওকে সব পা’পে’র বি’না’শ ঘটাতে হবে। এতোদিন নিজে পা’প কাজে লি’প্ত ছিলো এখন সেই সব পা’পে’র বি’না’শ ঘ’টি’য়ে ও নিজের করা পা’প কাজ গুলোর প্রা’স্চি’ত্ত করবে। পরক্ষণেই তীব্র তৃপ্তির রুম ত্য’গ করে বাহিরে চলে যায়।
————————–
অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন রুমে মধ্য বয়সের লোকটি নে’তি’য়ে পড়েছে , অস্পষ্ট স্বরে ‘পানি’ চাইছে। সেইমূহূর্তে একজন কালো পোশাকধারী লোক মধ্য বয়সের লোকটির মুখের উপর একবালতি হালকা গরম পানি ছু’ড়ে মা’রে। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি ধ’র’প’ড়ি’য়ে উঠে।

#চলবে……..

[বিঃদ্রঃ~গল্পের সাথে যা সাম’জ’স্স্য হবে আমি তাই লিখবো। আমার নাম নূরা জন্য যে আমি নূরাকে প্রধান নায়িকা বানাবো আর তৃপ্তিকে দূ’রে রাখবো এমন ভাববোন না। আমি গল্পের প’ল’ট যেভাবে সাজিয়েছি তা খা’রা’প হবে না। ধৈর্য রাখুন , ভু’ল-ত্রু’টি ক্ষ’মা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ , আসসালামু আলাইকুম]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here