তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব -২৩+২৪ ও শেষ

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২৩)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

____”ভাই দ’য়া’ক’র আমার উপর, আমার জীবন আমাকে ভি’ক্ষা দে। কথা দিচ্ছি অনেক অনেক দূরে চলে যাবো তোর আশেপাশে আর কখনও দেখতে পারবি না আমায়, আর কখনও তোর কোনো ক্ষ’তি করার কথা কল্পনাও করবো না।”

____”তোমাকে ক’ষ্ট করে যেতে হবে না, দূরে যাওয়ার ব্যবস্থা আমিই খুব যত্ন নিয়ে করে দিবো ভা ভা ভাইয়া। কিন্তু তার আগে আমার কিছু বিষয় জানার আছে আগে সেগুলো জেনে নেই পরেরটা পরেই দেখা যাবে।”

____”ক কি কি জানতে চাস তুই!”

____”নূরার সাথে তোমরা কি করেছো? কোথায় রেখেছো ওকে তোমরা?”

____”যদি ক কথা দি দিস তু তুই আমাকে মা’র’বি না তা তাহলেই বলবো ও কোথায় ন নয়তো বলবো না!”

____”তুমি বরাবরই খুব বুদ্ধিমান স্বভাবের ছেলে, কিন্তু কি বলোতো এই বুদ্ধি গুলো যদি ভু’ল জায়গায় না খা’টি’য়ে সঠিক জায়গায় খা’টা’তে তাহলে তোমার অবস্থা আজ এতো ক’রু’ণ/শো’চ’নী’য় হতো না। কিন্তু এখন তো আর কিছু করার নেই। আচ্ছা ঠিক আছে কথা দিলাম আমি তোমাকে মা’র’বো না। এবার বলো….”

____”৫ বছর আগে,আশ্রমের কর্মকর্তাকে দিয়ে বাচ্চা পা’চা’রে’র ফে’ই’ক কল করিয়ে যে ঠিকানা বলেছিলেন তিনি সেই ঠিকানায় সন্ধ্যার পর নূরা একাই চলে আসে। আমাদের প্লান অনুযায়ীই সব এগোচ্ছিলো। নূরার উপস্থিত হওয়ার কিয়ৎক্ষণ পরই আমদের লোকেরা নূরার কি’ড’ন্য’প করে আমাদের একটা আ’স্তা’না’য় নিয়ে আসে। সেইসময় ই নূরার জায়গায় আমরা তারিনকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তারিনকে দিয়ে তোকে মা’রা’র পর নূরাকে মে’রে ফেলার প্লান ছিলো আমাদের। তারিন ওর কাজ স’মা’প্ত করেছে শোনামাত্র আমরা নূরাকে একটা ফাঁকা ব্রিজে নিয়ে আসি। নূরাকে খু’ন করে পানিতে ভাসিয়ে দিবো তাহলে ওর খু’ন হওয়া নিয়ে পরবর্তীতে কোনো ঝা’মে’লা’য় পড়তে হবে না আমাদের কাওকে। কিন্তু ওকে আমরা কিছু করার পূর্বেই ও আমাদের সকলের চোখে ধু’লো দিয়ে স্বইচ্ছায় ব্রিজ থেকে লা’ফ দিয়েছিলো। ব্রিজের নিচে পানির গভীরতা অনেক বেশি ছিলো তাই আমরা ভেবে নিয়েছি নূরা মা’রা গিয়েছে। ওকে খো’জা’র চে’ষ্টা করি নি।”

কামালের মুখে নূরার মৃ’ত্যু’র অ’নি’শ্চ’য়’তা’র কথা শুনে তীব্রের বুকের বাম পার্শ্বে চি’ন’চি’নে ব্য’থা অনুভব হতে শুরু করে। মনের কোনে কি’ন্ঞ্চি’ত আশার আলো ফুটে উঠে নূরা হয়তো বেঁচে আছে ভেবে। তীব্রকে নীরব ভাবে বসে থাকতে দেখে কামাল নিজেই আবারও তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে…

____”ভাই এটাই সত্যি, আমি বা বাবা আমরা আর কেও নূরার বিষয় নিয়ে কিছু জানি না। গত ৫ বছর ধরে আমাদের চোখেও পরে নি নূরাকে। এ এবার আমাকে ছেড়ে দে ভাই, আ আমাকে তো তুই মা’র’বি না বলে কথা দিয়েছিলি। আমি আমার কথা রেখেছি এবার তুই তোর কথা রাখ।”

তীব্র ঘা’ড় বা’কি’য়ে কামালকে একপলক দেখে নেয়। তারপর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কামালের থেকে বেশ খানিকটা দুরত্ব বজায় রেখে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে তীব্র। তারপর কামালকে উদ্দেশ্য করে বলে….

____”আবরার রহমান তীব্র কখনও কথা দিয়ে কথার খে’লা’প করে নি আর করবেও না। তোমাকে আমি মা’র’বো না কিন্তু….কিন্তু….আমার আ’ন্ডা’রে কর্মরত গা’র্ড’রা তো তোমাকে মা’র’তে পারবে কি বলো ভা ভা ভাইয়াহহহহ….!”

কথাগুলো বলেই তীব্র অ’ট্টো’হাসিতে মে’তে উঠে। তীব্রের মুখে এহেনু কথা শুনে কামালের অবস্থা আগের থেকে আরো বেশি শো’চ’নী’য় হয়ে দাঁড়িয়েছে যেনো। তীব্র কয়েক জন কালো পোশাকধারী গা’র্ড’কে ইশারা দিতেই তারা কামালের নিকট অগ্রসর হতে শুরু করে। কামাল চিৎকার করে তীব্রের কাছে জীবন ভি’ক্ষা চাইছে বারং বার। কিন্তু তীব্র সেসব কানে না নিয়ে গো’ডা’উ’ন থেকে বেড়িয়ে আসে। কালো পোশাকধারী গা’র্ড’রা কামালের শরীরের প্রত্যেকটি অংশ ছোট ছোট টু’ক’রো করে কা’ট’তে শুরু করে।

কামালের আ’র্ত’না’দ সম্পূর্ণ ঘরকে কা’পি’য়ে কা’পি’য়ে তুলছে কিন্তু কেও সেই আ’র্ত’না’দ’কে গুরত্ব দিচ্ছে না সকলে সকলের কাজে ব্য’স্ত। কামালের হাত আর পা সম্পূর্ণ কা’টা শে’ষ হলে গার্ডরা সবাই ওর সন্নিকট থেকে সরে দাঁড়ায়। কামালের ঠিক নিচে মেঝেতে একটা বিশালাকার চারকোনার ঢাকনা রাখা আছে। একজন ব’ডি’গা’র্ড রুমের ক’র্ণা’রে গিয়ে একটা সুইচে চা’প দেয়। ধীরে ধীরে সেই ঢাকনাটি খু’লে যেতে শুরু করে।

ঢাকনার আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসছে ফু’ট’ন্ত আ’গু’নে’র লে’লি’হা’ন শি’খা’র মাত্রাতিরিক্ত তাপ। কামাল এর মনে হচ্ছে সেই তাপে ওর শরীরের বাকি অংশ জ্ব’লে পু’ড়ে শে’ষ হয়ে যাচ্ছে। আরেকজন কালো পোশাকধারী গা’র্ড সেলিং এর সাথে আ’ট’কে থাকা দড়িটা কে’টে দেয়, সঙ্গে সঙ্গে কামাল সেই লে’লি’হা’ন অ’গ্নি’শি’খা’র মাঝে পড়ে যায়। ঢাকনা খুলে দেওয়ার কাজ করা লোকটি আবারও সুইচটিতে চা’প প্রয়োগ করে, ধীরে ধীরে খুলে যাওয়া ঢাকনাটি ব’ন্ধ হয়ে আসে। স্বাভাবিক কোনো মানুষ এই গো’ডা’উ’ন এ প্রবেশ করলে বুঝতে স’ক্ষ’ম ই হবে না এই রুমের মেঝের আ’ড়া’লে এমন কা’র’সা’জি লু’কা’য়ি’ত রয়েছে।

——————————–

গো’ডা’উ’ন থেকে বে’ড়ি’য়ে তীব্র রহমান মন্ঞ্জিলে আসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

আমি ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে দা’ত দিয়ে ন’খ কা’ট’ছি আর তীব্রের আসার অপেক্ষা করছি। সেইমূহূর্তে মূল দরজায় ভে’দ করে কেও ভিতরে প্রবেশ করছে এমন মনে হওয়ায় মূল দরজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। তীব্র প্রবেশ করছে দেখে ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠে, কিন্তু তীব্রের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই আমার ঠোটের কোনায় লেগে থাকা হাসির রেখা মিলিয়ে যায় মূহূর্তেই। ভিষণ অ’গো’ছা’লো, অ’বি’ন্য’স্ত দেখাচ্ছে তীব্রকে।

আমি বসা অবস্থা থেকে উঠে দ্রুত পায়ে তীব্রের সন্নিকটে এগিয়ে যাই। নিজের সামনে আমার অবস্থান বোঝা মাত্র তীব্র আমাকে জড়িয়ে ধরে। খু’ব শ’ক্ত ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় তীব্র আমাকে। হু’ট করে তীব্রের এমন রূপ আমাকে পু’ড়া’চ্ছে। মনের কোনে চা’পা ক’ষ্ট অনুভব হয়। কি হয়েছে ওনার? শুকনো ঢো’ক গি’লে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললাম….

____”কি হয়েছে আপনার! এমন অ’গো’ছা’লো অ’বি’ন্য’স্ত দেখাচ্ছে কেনো আপনাকে? বলুন আমায়!”

তীব্র আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখা অবস্থাতেই ভেজা কন্ঠে বলে….

____”৫ বছর আগে ওরা নূরাকে মে’রে ফেলার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু নূরা ওদের চোখ ফা’কি দিয়ে ব্রিজ থেকে লা’ফ দিয়েছিলো। জানি না নূরা আ’দে’ও বেঁচে আছে কিনা। আমার বুকের ভিতর ভিষণ য’ন্ত্র’ণা হচ্ছে। আমার ১ম ভালোবাসা হা’রা’নো’র য’ন্ত্র’ণা আমাকে গভীর ভাবে পু’ড়া’চ্ছে তৃপ্তি। এই অ’স’হ্য’ক’র য’ন্ত্র’ণা আমি আর নিতে পারছি না। আমাকে একটু শান্তি দাও, আমি ভালো থাকতে চাই। আমাকে একটু ভালো থাকার উপায় বলে দাও প্লিজ তৃপ্তি প্লিজ……”

তীব্রের আ’কু’ল কন্ঠে আমার নিকট শান্তি চাওয়ার আবেদন আমাকে দূ’র্ব’ল করে দিচ্ছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটি যখন দ’রু’ণ য’ন্ত্র’ণা’য় পু’ড়’তে থাকে তখন মনে হয় সেই একই য’ন্ত্র’ণা’য় নিজেও পু’ড়ে শে’ষ হয়ে যাচ্ছি। পরক্ষণেই তীব্রকে স্বাভাবিক করার উপায় ভেবে পেয়ে আমি তীব্রের নিকট থেকে নিজেকে ছা’ড়ি’য়ে নিয়ে বলি….

____”আপনি আপনার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আজ আপনার জন্য আমার তরফ থেকে সারপ্রাইজ আছে। আমার দেওয়া সেই সারপ্রাইজ টাই পারবে আপনাকে শান্তি দিতে। কোনো রূপ প্রশ্ন করবেন না।”

তীব্র আমার দিকে অ’স’হা’য় মুখশ্রী নিয়ে তাকায়, আমি তবুও জো’ড় পূর্বক তীব্রকে নিজের রুমে পাঠিয়ে দেই। তীব্র চলে যেতেই আমি টি-টেবিলের উপর থেকে আমার ফোন হাতে উঠিয়ে নিয়ে শফিক ভাইয়াকে কল করি। সারপ্রাইজের প্লা’ন’টি শফিক ভাইয়াকে শেয়ার করি৷ আর ওনাকে যা যা করতে হবে সেটাও বুঝিয়ে বলে দেই। কথা বলা শেষ করে আমি সিড়ি বেয়ে উপরে আমার রুমে চলে আসি। আলমারী খুলে তীব্রের দেওয়া ১ম উপহার পাওয়া শাড়িটি বের করি। হালকা গোলাপি রংয়ের সাদা পাথরের কাজ করা অসম্ভব সুন্দর শাড়িটি। শাড়িটি আগে পড়া হয়ে উঠে নি, বিয়ের পর পড়বো বলে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। বিয়ের পর অনেক ঝা’মে’লা পেড়িয়ে আজ সেই দিনটি এসেছে। শাড়িটা বিছানার উপর রেখে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করি।

#চলবে…………#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

ইউটিউব এ ১০-১৫ বার থামিয়ে থামিয়ে শাড়ি পড়ার ভিডিও দেখে অবশেষে শাড়ি পড়তে সক্ষম হলাম। মন থেকে কোনো কিছু করার জন্য দৃঢ় ইচ্ছে শ’ক্তি জাগালে বারবার চেষ্টা করার পর ঠিকই একসময় সেই কাল আছে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম।

চুলগুলো খো’পা করে শিউলি ফুলের বানানো মালা দিয়ে খোপার চারপাশ পে’চি’য়ে নিলাম। খোপার মাঝ অংশে বড় আকারের একটা কাঠ গোলাপ ফুল বসিয়ে দিলাম। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে সাদা পাথর বসানো মালা আর সাদা পাথরের ছোট সাইজের এক জোড়া ঝুমকো বের করে নিলাম পড়ার জন্য। তারপর ৩ ডজন হালকা গোলাপি আর সাদা পাথরের মিশ্রণে তৈরি চুরি বের করে সমান ভাগে ভাগ করে দুই হাতে পড়ে নিলাম।

দুই ভ্রুরুর মাঝ বরাবর হালকা গোলাপি রংয়ের। পড়লাম, টিপটাও পাথরের হওয়ায় লাইটের আলোয় চিকচিক করছিলো। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেওয়ার পর মনে হলো কিছু একটা এখনও মিসিং রয়েছে যার জন্য আমার সাজ সম্পন্ন হয় নি। পরমূহূর্তে দু’চোখে গাঢ় করোদ কাজল দিলাম, কাজল দেওয়ার অভ্যাস আমার নেই, তবে কি মনে করে যেনো দিলাম। পরিশেষে আরো একবার আয়নায় নিজেকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে মনে হলো এবার সাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

পরক্ষণেই আমি আমার রুম থেকে বের হয়ে তীব্রের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম। তীব্রের রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখি তীব্র আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আমি দরজায় দাড়িয়েই তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললাম…

____”পিছন ঘুরবেন না, চোখ ব’ন্ধ করে ফেলুন আপনার সারপ্রাইজ তৈরি আছে তাই এখন চোখ খুলে রাখলে চলবে না।”

তীব্র কোনো কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফে’লে। আমি ঘরের ভিতর প্রবেশ করে ওয়ারড্রপ থেকে রুমাল বের করে তীব্রের সন্নিকটে এসে সেই রুমাল দিয়ে ওনার চোখ বে’ধে দিলাম। আয়নায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখলাম তীব্রের ঠোটের কোনায় এক চিলতে হাসি লেগে আছে। আমিও মৃদু হেসে তীব্রের হাতে আমার হাত রাখলাম। তারপর বললাম…

____”এবার আমার সাথে চলুন।”

____”আমি তো কিছু দেখতে পারছি না যাবো কিভাবে?”

____”অ’ন্ধে’র ষষ্টী এর অর্থ জানা আছে আপনার?”

____”হুম।”

____”হুম, এখন নিজেকে অ’ন্ধ মনে করুন আর আমাকে অন্ধের ষষ্টী মনে করুন। এই যে আমি আপনার হাত ধরে আছি আমিই আপনাকে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে যাবো। চুপচাপ আমার সাথে চলুন।”

তীব্র মাথা নাড়িয়ে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানায়। আমি তীব্রের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসি। ধীরপায়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করি। মিনিট ৫-৬ হাটার পর অবশেষে গন্তব্যে এসে পৌঁছাই। রহমান মন্ঞ্জিলের পিছন পার্শে অনেক ফুল ও সবজির সমারহ নিয়ে একটি বাগান রয়েছে। বাগানের মাঝ অংশে গোলাকার ঘর রয়েছে, ঘরটির চারপাশে কোনো দেওয়াল নেই ছয়টি পিলার এর উপর (ভি) শে’প এ ছা’উ’নি উঠানো। এক পার্শে তিনটে সিঁড়ি দেওয়া, সিড়ির অংশ টুকু ফাকা রেখে চারপাশ রেলিং দিয়ে ঘেরা, মেঝেতে সাদা টাইলস বসানো রয়েছে। মাঝ অংশে হওয়ায় সেখানে দাড়ালে সম্পূর্ণ বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

শফিক ভাইয়াকে দিয়ে বাহির থেকে কাঠগোলাপ ও গোলাপি-সাদা রংয়ের মিশ্রণের গোলাপ ফুল দিয়ে সেই জায়গাটাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলাম। ঘরটির মাঝ অংশে একটা টেবিল বসিয়ে সম্পূর্ণ জায়গাটিকে আলোকিত করতে রং বেরংয়ের মোমাবাতি দিতে বলেছিলাম। চারপাশটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি ফুলের সুভাস আর ডেকোরেশনের কারুকার্যে চারপাশ নজরকারা সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে উঠেছে।

____”তৃপ্তি এবার তো আমার চোখের বা’ধ’ন খুলে দাও। তোমার সারপ্রাইজ দেখার জন্য আমার চোখ জোড়া ও মন অ’স্থি’র হয়ে আছে ভিষণ।”

তীব্রের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই আমার ঘো’র কা’টে। আমি ঠোঁট চে’পে হেসে তীব্রের সন্নিকটে এসে বললাম…

____”উমম নি’চু হন একটু, এমন আইফেল টাওয়ারের মতো লম্বা হয়েছেন যে বাঁ’ধ’ন খুলতে অ’সু’বি’ধা হচ্ছে।”

আমার কথা শোনামাত্র তীব্র হেসে দিয়ে বলে…

____”হো’য়া’ট! আমার হাইট কে তুমি আইফেল টাওয়ারের সাথে তুলনা করলে! ঠু ফানি। নাও নি’চু হলাম মিসেস.লিলিপুট এবার বা’ধ’ন খুলে দিয়ে আমাকে উ’দ্ধা’র করুন।”

আমি কন্ঠে কিছুটা রাগ মিশ্রিত করে বললাম…

____”এই এই একদম আমাকে লিলিপুট বলবেন না। আমি কিন্তু মোটেও এতোটা সর্ট নই, আমার হাইট ৫’৪” হুহ। আর মেয়েদের জন্য এটাই ঠিকঠাক।”

____”ওক্কে মেরি বউজান, আমার ভু’ল হয়ে গিয়েছে আপনাকে লিলিপুট বলা আমার একদম উচিত হয় নি। এবার অন্তত আমার চোখের বাঁধন খুলে দাও, ব্য’থা হয়ে গেলো তো চোখ জোড়া, এতো শক্ত ভাবে কেও বা’ধে!”

আমি হালকা হেসে তীব্রের চোখের বা’ধ’ন খুলে দেই। বা’ধ’ন খুলে দেওয়া মাত্র তীব্র একহাতে ওর দু’চোখ হালকা ঘ’ষা দিয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখ মেলে। আমি ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে নিজের দৃষ্টি তীব্রের মুখশ্রীর উপর স্থির করে রেখেছি। তীব্রের দৃষ্টি যেনো মূহুর্তেই আমার উপর আটকে গিয়েছে। বিষয়টা লক্ষ্য করতেই আমার মাঝে লজ্জার বহিঃপ্রকাশ ঘ’ট’লো। তীব্রের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেঝেতে স্থির করলাম। তীব্র অস্পষ্ট স্বরে বললো….

____”মাশাআল্লাহ, আজ দুটো চাঁদ একসাথে দেখার সৌভাগ্য হলো আমার। মাথার উপর ভরা পূর্ণিমার চাঁদের থেকেও অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারীনী একটুকরো চাঁদ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।”

তীব্রের মুখে নিজেকে চাঁদের থেকেও সুন্দর বলে ব্য’ক্ত করতে শুনে লজ্জায় আমার মাটি ভে’দ করে নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। নিজের মনকে নিজে জিঙ্গাসা করলাম…

____”বে’হা’য়া মন আমার, নিজেই তীব্রের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সবসময় ব্য’কু’ল হয়ে থাকিস আজ যখন সেই সময় এসেছে তখন এতো বেশি লজ্জায় রাঙান্বিত হচ্ছিস কেনো! লজ্জায় কি এখনি ম’রে যেতে চাস! তবে তীব্রের ভালোবাসা বিনিময়ের প্রতিটি মূহূর্তকে অনুভব করবি কি করে!”

তীব্রের থেকে আমার দুরত্ব মাত্র একহাত পরিমাণ। হু’ট করেই বুঝতে পারলাম তীব্র আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তীব্রের এক একটি কদম আমার শরীর কা’পি’য়ে কা’পি’য়ে তুলছে, প্রতিটি লো’ম’কূ’প দাড়িয়ে গিয়েছে, মেরুদণ্ডের শি’র’ডা’রা বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, হৃ’দ’পি’ন্ডে’র গ’তি স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক গু’ণে বে’রে গিয়েছে। বারকয়েক শুকনো ঢো’ক গি’লে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলাম। তারপর তীব্রের কদম ফেলার তালে তালে আমিও পিছনের দিকে কদম ফেলতে শুরু করলাম। আমি যতো পিছিয়ে যাচ্ছি তীব্র ও আমার দিকে ততো অগ্রসর হচ্ছে। মন আমার মস্তিষ্কে প্রশ্ন করছে….

____”এ কোন অনুভূতির সামনে দাঁড়িয়েছি আজ আমি! এই অনুভূতির নাম কি!”

মনের মধ্যে প্রশ্নগুলো পে’চ লাগিয়ে ফেললেও কোনো উত্তর আমি খুজে পাচ্ছি না। চোখ বন্ধ রেখে পিছনের দিকে পি’ছা’তে পি’ছা’তে রুমটির একদম শে’ষ মাথায় সিঁড়ির কাছে এসে আরেক কদম পিছিয়ে যেতে নিতে ধরলেই তীব্র আমার ডান হাত ধরে হ্য’চ’কা টা’ন দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেন।

হু’ট করে তীব্রের এমন কাজে আমি কিছুটা ভ’য় পেয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে চোখ-মুখ খি’চে বন্ধ করে ফেলি। পরমূহূর্তে অনুভব করি তীব্র আমার কমোরে নিজের হাত রেখে আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে আমাকে মিশিয়ে নিচ্ছে। তীব্রের এই স্পর্শ গুলো আজ আমাকে যেনো শে’ষ করে দিচ্ছে। ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম গুলো বুঝতে সক্ষম হলে বুঝি এমন অদ্ভুত রকম অনূভুতি হয়!

তীব্র আমার ডান কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে….

____”আই ওয়ান্ট ইউ ব্য’ড’লি মিসেস.তীব্র রহমান।”

তীব্রের বলা এই মূহূর্তের সাতটি শব্দ আমার হৃ’দ’পি’ন্ড’কে কা’পি’য়ে তুললো যেনো। আমি আমার ডান হাত দিয়ে তীব্রের বুকের বাম পার্শ্বের শার্ট খা’ম’চে ধরি। তীব্রের গরম নিঃশ্বাস আমার ডান কান ও ঘাড়ের একপার্শে আ’চ’ড়ে পড়ছে। নিজেকে কি বলে কি করে শান্ত করবো ভেবে পারছিনা। মনে হচ্ছে অ’শা’ন্ত সাগরের মাঝে আমাকে কেও ফে’লে দিয়েছে। এখন সেই সাগরের ঢেউয়ের তালের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে নয়তো ত’লি’য়ে যাবো সাগরের একেবারে ত’ল’দেশে। তীব্র আমার ডান গালে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই আমি আরো শক্ত ভাবে তীব্রের শার্ট খা’ম’চে ধরি।

পরমূহূর্তে তীব্র আমাকে তার কোলে উঠিয়ে নেন, আমি তীব্রের বুকের মাঝে নিজের মুখ লুকিয়ে রাখি, লজ্জা এবার পুরোপুরি ভাবে আমাকে তার গ্রা’সে আয়ত্ত করে নিয়েছে। তীব্র সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

____”ধন্যবাদ তোমাকে, আমাকে এতো বেশি সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। এবার পুরোপুরি ভাবে মিসেস.রহমান হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো। আজকের এই সুন্দর পূর্ণচাদের রাতকে সাক্ষী রেখে তোমাকে একান্ত নিজের করে নেবো। আজ কোনো ভাবে তোমার ছা’ড় হবে না!”

তীব্রের প্রতিটি কথা আমার শরীরকে শি’হ’রি’ত করে তুলছে। মনে হচ্ছে… যা হচ্ছে হতে থাক এ অনুভূতি গুলোর কখনও শে’ষ না হোক। তীব্র আমাকে কোলে নিয়েই বাড়ির ভিতর চলে আসে, সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপরে এসে রুমের ভিতর প্রবেশ করে তীব্র আমাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। আমি আমার দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির রেখেছি। আমার সম্পূর্ণ মুখশ্রীতে লজ্জা ভাব স্পষ্ট ভাবে ফুটে আছে। তীব্র রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে আবারও আমার সন্নিকটে এসে দাঁড়ায়। আমার ডান কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে…

____”আজ তোমার মাঝেই আমার পূর্ণতা খুজে পাবো। তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতার সার্থকতা আজ মিলবে।”

আমার ডান কানের ঝুমকো খুলে দিয়ে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দেন। একই ভাবে বাম কানের ঝুমকো খুলে দিয়ে সেখানেও ভালোবাসার আরেকটি পরশ একে দেন। আমি আমার শাড়ির দু’পাশ দু’হাতে খা’ম’চে ধরে এই ভালোলাগার য’ন্ত্র’ণা গুলো স’হ্য করছি। আমার গলার মালাটি খুলে দিয়ে ঘাড়ে খুব ডি’প’লি ভাবে ঠোঁটের পরশ একে দেন তীব্র। আমি আর না পেরে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছু’টে জানালার সামনে এসে গ্রি’ল ধরে দাঁড়াই, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করি।

তীব্র ধীরপায়ে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন আমি তা বুঝতে সক্ষম হই। আমি জানালার গ্রিল আরো শ’ক্ত ভাবে ধরি সেইমূহূর্তে তীব্র পিছন থেকে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেন। আমি ডুবে যাই যেনো তীব্রের মাঝে। তীব্র আমাকে তার ভালোবাসার চাদর দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে মু’ড়ি’য়ে ফে’লে’ন।
#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২৫~শে’ষ পর্ব)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

সকালের মিষ্টি একটুকরো রোদ মুখের উপর আ’চ’ড়ে পড়তেই চোখ-মুখ কু’চ’কে ফেলি আমি। পরমুহূর্তেই একটু নড়ার চেষ্টা করতেই নড়তে সক্ষম না হওয়ায় পিটপিট করে চোখ মেলে নিজেকে তীব্রের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো অবস্থায় আবিষ্কার করলাম, মূহূর্তের মধ্যেই গতকাল রাতের ভালোবাসাময় মূহূর্ত গুলো আমার সামনে ভাসতে শুরু করলো।

আমার ঠোঁটের কোনে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠে। অবশেষে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে একান্ত নিজের করে পে’তে সক্ষম হলাম। ভালোবাসার মানুষটি নিজের করে পাওয়ার মাঝে যে সুখ লাভ হয় তা অন্য কিছুতে মেলে না। পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে দামী, মূল্যবান সুখ গুলোর মাঝে একটি হলো ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়া।

তীব্রের বুকের উপর আমার মাথা থাকায় আমি তীব্রের হৃ’দ’পি’ন্ডে’র ধকধক আওয়াজ খুব গভীর ভাবে অনুভব করতে পারছি। সময়গুলো এতো মধুর হওয়ায়, মনে হচ্ছে সময়গুলো এখানেই থে’মে যাক। তীব্রের বুকে মাথা রেখে এভাবেই কাটিয়ে দেই সারাটি জীবন। আমি তীব্রের হাতের ভা’জ থেকে আমার ডান হাত বের করতে নিতেই তীব্র একটু নড়ে উঠলেন। পরমুহূর্তে ধীরগতিতে আমার হাতটি বের করতে সক্ষম হলাম।

তীব্রের ঘন লো’মে ভরপুর বুকের মাঝে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে লাগলাম। কিছুসময় এভাবেই পেরিয়ে যায়, তীব্রের ঘুম ভে’ঙে গেলে আমাকে আরো গভীর ভাবে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললেন…

____”শুভ সকাল মিসেস.তীব্র রহমান!”

____”শুভ সকাল। ঘুম হলো আপনার?”

____”উমম..কেন!”

____”উঠতে হবে তো।”

____”উঠে কি করবে? আদর কি কম দিয়ে ফে’লে’ছি আবার দিতে হবে বুঝি!”

তীব্রের মুখে সকাল সকাল এমন লা’গা’ম বিহীন কথা শুনামাত্র ল’জ্জা’য় আবারও আমার অবস্থা খা’রা’প হতে শুরু করে। আমি তীব্রের বুকে আলতো করে একটা ঘু’ষি মে’রে বললাম…

____”সকাল সকাল কি সব বলছে পা’জি লোক!”

____”পা’জি বললে আমাকে! তাহলে এবার পা’জি’দের যা কাজ হয় সেই কাজের নমুনা দেখিয়ে দেই তোমাকে কি বলো!”

আমি দ্রুত কন্ঠে বললাম…
____”এ এই এই একদম না….!”

কে শুনে কার কথা, তীব্র আমাকে নিচে শুইয়ে দিয়ে আমার উপর নিজের শরীরে অর্ধেক ভা’ড় ছেড়ে দিয়ে আমার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। কিছু সময় নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ছ’ট’ফ’ট করলেও পরমুহূর্তে তীব্রের ভালোবাসার পরশে সায় প্রদান করলাম। মিনিট ৫ পর তীব্র আমার ঠোট ছেড়ে দিয়ে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকলেন৷ আমিও জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছি৷

কিয়ৎক্ষণ পর আমি তীব্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম…
____”দয়াকরে কখনও আমাকে ছে’ড়ে যাবেন না তীব্র! আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আপনার ভলোবাসায় সারাজীবন নিজেকে রাঙিয়ে রাখতে চাই। আপনার শূ’ন্য’তা বেঁচে থাকতে যেনো আমাকে স’হ্য করতে না হয়। আমাকে ছে’ড়ে যাওয়ার হলে আমাকে মে’রে ফে…..”

পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই তীব্র ওনার ব’লি’ষ্ঠ হাত দিয়ে আমার মুখ চে’পে ধরলেন। ধ’ম’কে’র সুরে বললেন…

____”সবসময় ২ লাইন বেশি বলতে হবে নাকি তোমার! আর একবার যদি মৃ’ত্যু’র কথা মুখে এনেছো তবে তোমার এই সুন্দর মুখ একদম ভে’ঙে গু’ড়ো করে ফে’ল’বো বলে দিলাম৷ কোথাও যাবো না আমি তোমাকে ছে’ড়ে, আর না কখনও তোমাকে যেতে দিবো।”

তীব্রের ধ’ম’ক আমার মনে শান্তির হাওয়ার মতো দোলা দিয়ে গেলো। আমার চোখ জোড়া চিকচিক করছে। এ জল সুখের জল, প্রাপ্তির জল, ভালোবাসার মানুষটিকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার খুশির জল। আমি আমার ডান হাত দিয়ে আমার মুখে তীব্রের রাখা হাতটি ধরে অনেক গুলো ভালোবাসার পরশ একে দিলাম। তারপর তীব্রের হাতটি আমার গালের সাথে ঠেকিয়ে বি’ন’য়ে’র স্বরে বললাম….

____”একবার ‘ভালোবাসি’ কথাটি বলুন না!”

তীব্র ওনার বাম হাতটিও আমার অন্য গালে রেখে আমার কপালের সাথে কপাল ঠে’কি’য়ে নাকের সাথে আলতো করে নিজের নাক ঘ’ষা দিতে দিতে বললেন…

____”ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। আমার বউকে আমি অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।”

তীব্রের মুখে এতোবার ভালোবাসি কথাটি শুনে আমার চোখজোরা উ’প’চে খুশির অ’শ্রু বেড়িয়ে এলো। তীব্র খুব যত্ন নিয়ে সেই অশ্রু মু’ছে দিলেন আর বললেন…

____”এই সুন্দর আর চোখজোড়া কখনও যেনো অ’শ্রুতে সি’ক্ত না হয়। সবসময় তোমার ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসির রেখা ফুটে থাকবে এটাই চাই বউ।”

আমি আমার দু’হাত দিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরলাম।

——————————

ড্রয়িং রুমে বসে ল্যপটপে কিছু কাজ করতে ব্য’স্ত তীব্র। আমি রান্নাঘরে তীব্রের পছন্দের কিছু খাবার রান্না করছি। সেই সময় মূল দরজা ভে’দ করে শফিক ভাইয়াকে ভিতরে আসতে দেখলাম। শফিক ভাইয়া তীব্রের সন্নিকটে এসে কিছু বললেন আমি শুধু তা দেখতে পারছি কিন্তু কি বলছেন এতো দূর থেকে তা শোনা যাচ্ছে না। আমি বিষয়টাকে ততোটা গুরুত্ব দিলাম না৷ পরমূহূর্তে দেখলাম হু’ট করেই তীব্র বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালেন, আমার দিকে ঘুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

____”তৃপ্তি আমার জরুরী কিছু কাজ প’ড়ে গিয়েছে এক্ষুনি বাহিরে যেতে হবে। আসতে দে’ড়ি হবে, আমার অপেক্ষায় থেকো না, খেয়ে নিও।”

এতোটুকু বলে শফিক ভাইয়া আর উনি দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলেন। আমি স্ত’ব্ধে’র দাঁড়িয়ে রইলাম, তাকিয়ে রইলাম তীব্রের যাওয়ার পানে। আমার মন জুড়ে বি’ষ’ন্ন’তা’রা জায়গা দ’খ’ল করে নিলো। এতো সময় নিয়ে এতোগুলো রান্না করলাম ওনার জন্য আর উনি এভাবে চলে গেলেন! বি’ষ’ন্ন মন নিয়ে রান্নার বাকি কাজটুকু শে’ষ করে সবগুলো খাবার টেবিলের উপর সাজিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে রুমে থাকা দেওয়াল ঘড়ির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম, ঘড়ির কা’টা দুপুর ২টা ছু’ই ছু’ই। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। না খেয়েই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম। কখন যে ঘুমের রা’জ’ত্বে পারি দিয়েছিলাম বুঝে উঠতে পারি নি।

———————————–

____”শফিক তুই সম্পূর্ণ শিউর তো এই ঠিকানাতে গেলেই আমি নূরার খোঁজ পাবো!”

____”হুম, বস। আমি পা’ক্কা শিউর।”

তীব্র একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। দীর্ঘ ৫ বছর পর জানতে পারলো নূরা বে’চে আছে, ভালো আছে। আজ স্বচ’ক্ষে দেখতে পারবে নূরাকে, নিজের ১ম ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি তো হওয়ার ই কথা। ঘন্টা ২য়েক পর গন্তব্য স্থলে পৌঁছে যায় তীব্র আর শফিক। তীব্র ওর হাতে থাকা ঠিকানাটি আরেকবার দেখে নিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সামনে একটা বড় আকারের গেইটে লেখা আছে ‘চৌধুরী ভিলা’। তীব্রের পা কাঁপছে, আর কয়েক কদম ফেললেই সে নূরাকে দেখতে পারবে। এই কয়েক কদম অগ্রসর হওয়ায় যে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে এই এক একটি সেকেন্ড যেনো তীব্রের কাছে এক একটি দিনের সমান লম্বা মনে হচ্ছে।

চৌধুরী ভিলার মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কলিং বেল বা’জা’য় তীব্র। অপেক্ষা জিনিসটা এই মূহূর্তে ভিষণ পু’ড়া’চ্ছে তীব্রকে। কিয়ৎক্ষণ পর চৌধুরী ভিলার মূল দরজা খুলে যায়। আদিত্য তীব্রকে দেখে চিনতে না পেরে প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বলে…

____”জ্বি কাকে চাই? কে আপনি!”

তীব্র অ’স্থি’র কন্ঠে বলে…
____”এখানে কি নামিয়া ইসলাম নূরা নামের কেও থাকেন? তাকে একটু ডেকে দিবেন আমার ওনার সাথে জরুরী দরকার আছে!”

____”জ্বী না, এই নামে এখানে কেও থাকে না। এখানে আমি আর আমার স্ত্রী থাকি শুধু। এটা আমাদের নিজস্ব বাসা। আমার নাম মি.আদিত্য চৌধুরী আর আমার স্ত্রীর নাম….”

____”কে এসেছে গো এই অসময়ে!”

আদিত্য পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই ভিতর থেকে মিরা আদিত্যের নিকট উপরোক্ত প্রশ্নটি ছু’ড়ে। আদিত্য মিরার দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই তীব্র মিরাকে দেখে থ’ম’কে যায়। অস্পষ্ট স্বরে বলে…

____”নূর নূর পাখিইইই …!”

আদিত্য মিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে…
____”চিনি না, এখানে নামিয়া ইসলাম নূরা নামের কাওকে খুঁজতে এসেছিলেন। বলে দিলাম এই নামে এখানে কেও থাকে না।”

তীব্র অপলক দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে, মিরা ধীর পায়ে আদিত্যের পাশে এসে দাঁড়ায়। তীব্রের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাসি মুখ নিয়ে বলে…

____”আপনার কোথাও ভু’ল হয়েছে৷ কেও আপনাকে ভু’ল ঠিকানা দিয়েছে।”

তীব্র দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে বার কয়েক শুকনো ঢো’ক গি’ল’লো। নূরা তীব্রকে চিনতে পারছে না, বিষয়টা তীব্রকে আরো গভীর ভাবে আ’ঘা’ত করছে। কিয়ৎক্ষণ নিরব থেকে তীব্র আদিত্য আর মিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

____”আমাকে এক গ্লাস পানি দিবেন!”

তীব্রের পানির প্রয়োজন শুনে আদিত্য বললো…
____”অবশ্যই কেনো নয়! আর আপনারা বাহিরেই বা কেনো দাঁড়িয়ে আছেন! ভিতরে আসুন, বসুন। মিরা তুমি ওনাদের জন্য হালকা খাবারের ব্যবস্থা করো।”

তীব্র ভিতরে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানালে মিরা রান্নাঘরে চলে যায়। শফিক আর তীব্র চৌধুরী ভিলার ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িং রুমে রাখা শোফায় বসে পরে তীব্র, শফিক ও আদিত্য। আদিত্য নম্র স্বরে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে…

____”তো আপনার পরিচয়টা পেলাম না এখনও!”

____”আমি আবরার রহমান তীব্র। পেশায় একজন ব্যবসায়ী, ঢাকায় থাকি।”

____”ওহহ আচ্ছা, আমার নাম তো বললাম ই তখন৷ আমি পেশায় কলেজের প্রফেসর।”

আরো কিছুসময় তীব্র আর আদিত্যের মাঝে কথপোকথন হয়। একসময় নিজের মাঝে থাকা সকল দ্বি’ধা দ’ন্দ’কে কাটিয়ে তীব্র আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে…

____”আপনার ওয়াইফ এর নাম কি আসলেই মিরা!”

আদিত্য ভ্রু কু’চ’কে তাকায় তীব্রের দিকে। তারপর প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলে…

____”কেনো বলুন তো!”

____”আপনার ওয়াইফ এর সাথে আমার একজন পরিচিতার চেহারার হুবহু মিল রয়েছে। আমি যার খোঁজে এখানে এসেছি সে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পূর্বে আমি নূরাকে একটা দূ’র্ঘ’ট’না’র ফ’লে হা’রি’য়ে ফেলি। তারপর আর কোনো খোঁজ মেলে নি ওর, আজ আমার পি.এ (শফিক) এর থেকে এই বাসার ঠিকানা পেলাম। তাই দ্রুত এখানে চলে এলাম। কিন্তু এসে নূরার মতো আপনার স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হলাম তাই জানতে চাইলাম। নূরা আর আপনার স্ত্রীর চেহারার কতোটা মিল রয়েছে আমি আপনাকে ৫ বছর আগের কিছু পিক দেখাচ্ছি তাহলে বুঝতে পারবেন।”

তীব্র ওর ফোন বের করে গুগোল ড্রাইভে প্রবেশ করে নূরার ৫ বছর পূর্বের ছবিগুলো বের করে আদিত্যকে দেখায়। আদিত্য অবাক হয় না, কিয়ৎক্ষণ পর আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে….

____”হয়তো আপনার পরিচিতা নূরা আর আমার ওয়াইফ মিরার মাঝে গভীর কোনো যোগ সূত্র রয়েছে। আর সত্য কথা হলো মিরার আসল নাম মিরা নয়। আমি ওকে ৫ বছর পূর্বে একটা নদীর ধারে গভীর আ’ঘা’ত প্রাপ্ত অবস্থায় প’রে থাকতে দেখেছিলাম। তারপর ওকে আমার সাথে করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। মাথায় প্রচুর আ’ঘা’ত পাওয়ায় মিরার একটা ক্রি’টি’ক্য’ল সা’র্জা’রী করতে হয়েছিলো। যার দ’রু’ণ মিরা ওর অতীত সম্পূর্ণ রুপে ভু’লে গিয়েছিলো৷ তারপর থেকে মিরা আমার সাথেই থাকে। মিরা নামটি আমিই ওকে দিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে ওর গভীর যত্ন নিয়ে আমি ওকে সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ করে তুলি। অতঃপর আমাদের দুজনের মাঝে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারপর আমি মিরার সাথে বিবাহকার্য সে’রে ফেলি। দীর্ঘ ৫বছর ধরে আমি আর মিরা একসাথে আছি স্বামী-স্ত্রীর ব’ন্ধ’নে আ’ব’দ্ধ হয়ে। আমাদের এই ছোট্ট সুখের সংসারে আমরা প্রতিটি সময় ভিষন হাসি-খুশি, আনন্দের সাথে কাটাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।”

আদিত্যের বলা কথাগুলো শুনে তীব্রের আর বুঝতে বাকি নেই মিরাই যে নূরা। নূরা স্মৃ’তি শ’ক্তি হা’রি’য়ে বর্তমানে মিরা নামে অন্যের স্ত্রী হয়ে অন্যকে ভালোবেসে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কা’টা’চ্ছে, কতো সুখী আর খুশি আছে সব মিলিয়ে তীব্রের মনের ভিতর জমে থাকা সব ক’ষ্ট গুলো শে’ষ হয়ে যায়। নূরা বে’চে আছে ভালো আছে এটাই ওর জন্য অনেক বেশি। তীব্র কিছুসময় নিরব থেকে আদিত্যকে ওর আর নূরার অতীত সম্পূর্কে সবটা জানায়। সবটা শুনে আদিত্যের চোখে-মুখে চি’ন্তা’র ভা’জ স্পষ্ট হয়।

তীব্র তা লক্ষ্য করে, ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তীব্র আদিত্যকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে…

____”ভ’য় পাবেন না মি.চৌধুরী, নূরার আই মিন আপনার স্ত্রী মিরার কোনো ক্ষ’তি হবে না। সে আপনার কাছে ভালো আছে এটা দেখেই আমি খুশি হয়েছি। ব্যস কিছু কাজ বা’কি রয়ে গিয়েছে সেগুলো সম্পন্ন না করলে আমি আমার লাইফে শান্তি পাবো না।”

____”কি কাজ!”

____”মিরার সাথে আমার বিবাহ হয়েছিলো এটা তো মি’থ্যে না। হতে পারে ওর বর্তমানে কিছু মনে নেই, কিন্তু আমার ওর মাঝে যে অদৃশ্য সম্পর্কের বা’ধ’ণ আজও রয়ে গিয়েছে সেই বা’ধ’ণ থেকে মিরাকে মু’ক্ত করাটা ভিষণ জরুরী।”

____”মানে!”

____”আমি আগামীকাল আপনার কাছে আমার আর মিরার ডি’ভো’র্স পেপার পাঠিয়ে দিবো। আপনি মিরার থেকে পেপারে সাইন করিয়ে নিবেন। তারপর আমার নিকট পাঠিয়ে দিবেন। কালকের পর থেকে আমার আপনার স্ত্রীর নিকট আর কোনো দা’বি থাকবে না। সে আমার থেকে সারাজীবন এর মুক্তি লাভ করবে। তারপর আপনার সাথে ওর সম্পর্ক ও সহজ হবে আর আমার সাথে আমার বর্তমান স্ত্রীর।”

তীব্রের কথা বুঝতে পেরে আদিত্য কিছু সময় চি’ন্তা করে সম্মতি প্রদান করে। কিয়ৎক্ষণ পর মিরা নাস্তা নিয়ে উপস্থিত হয়। তীব্র আর শফিক হালকা নাস্তা করে আদিত্য আর মিরাকে বি’দা’য় জানিয়ে চৌধুরী ভিলা থেকে বেড়িয়ে আসে। মূল দরজা পেরোনোর পর শে’ষ বারের মতো মিরা রূপী নূরার হাস্স্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে নেয় তীব্র। তারপর আর পিছন ঘুরে তাকায় না। সোজা গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। গন্তব্য নিজ বাড়িতে, নিজ আসল স্থানে।

————————————

রহমান মন্ঞ্জিল এর মূল দরজা ভে’দ করে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে তীব্র। আজও তীব্রকে অ’গো’ছা’লো, অ’বি’ন্য’স্ত দেখাচ্ছে। তীব্র কি মনে করে রান্নাঘরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সেইমূহূর্তে ডায়নিং টেবিলের সাথে থাকা চেয়ারে বসে সেখনেই মাথা এলিয়ে রাখা তৃপ্তিকে দেখতে পায় তীব্র। ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে আসে তীব্রের। ধীরপায়ে ডায়নিং রুমে প্রবেশ করে তীব্র। তৃপ্তির সন্নিকটে এসে দাঁড়াতেই দেখে তৃপ্তি ঘুমিয়ে গিয়েছে। কি ভিষণ মায়াবী মুখ খানা কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই কেমন শুকিয়ে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে তীব্রের। টেবিলের উপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা খাবার গুলোর তীব্র কয়েকটা ঢাকনা সরিয়ে সরিয়ে দেখে সব খাবার ওর পছন্দের।

কিন্তু সব খাবার ই বাটিতে ভর্তি অবস্থায় আছে৷ তারমানে তৃপ্তি আজ সারাদিন খায় নি! তীব্রের এবার নিজের কাছে নিজেকেই ভি’ষ’ণ দো’ষী মনে হচ্ছে। নূরার খো’জ পেয়েছে শোনা মাত্র তাড়াহুড়ো বশত তৃপ্তি যে সকাল থেকে ওর জন্য রান্না করছে সেই বিষয়টা ভু’লে গিয়ে দ্রুততার সাথে বাসা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। আর সেই অ’ভি’মা’নে’ই তার বউ আজ না খেয়ে তার অপেক্ষায় বসে আছে।

তীব্র মনে মনে নিজেকে কয়েক হাজারটা বকা+ঝা’রি দিয়ে নেয়। তারপর দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবারও নিচে তৃপ্তির নিকট চলে আসে। মেয়েটা গভীর ঘুমে নি’ম’জ্জি’ত হয়ে আছে তীব্রের তা বুঝতে বাকি নেই। তীব্র এবার তৃপ্তির ঘুম কি করে ভা’ঙা’বে সেই চি’ন্তা’য় ডু’বে যায়।

কিয়ৎক্ষণ এভাবেই নীরবতার মাঝে কে’টে যায়। পরমুহূর্তে তীব্র তৃপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে..

____”বউউউউউউউ…ওওও বউউউউউউ… তোমার একমাত্র জামাই তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছে এবার তো চোখ খুলো লক্ষীটি। বউউউউ… ওও মিষ্টি বউউউউ… শুনছোওওও….

তীব্রের ডাকে তৃপ্তি ন’ড়ে চ’ড়ে উঠে। পিটপিট করে চোখ মেলে নিজের খুব সন্নিকটে তীব্রের অবস্থান বুঝতে পেরে দ্রুত স’রে আসতে নিলে তীব্রের মাথার সাথে আমার মাথা টো’কা লে’গে যায়। দুজনেই “আহহহহ” বলে ব্য’থা’র স্থানটিতে হাত বুলাতে থাকি। তীব্র রসিকতার স্বরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

____”মাথার সাথে মাথা টো’কা লাগলে বিজোর সংখ্যার টোকা রাখতে হয় না। নয়তো টো’কা প্রাপ্তকারী দু’জনের মাথাতেই এক জোড়া করে শিং গ’জা’বে যেটা দেখতে মোটেও শোভনীয় নয়। তোমার মাথার সাথে আমার মাথা বিজোর সংখ্যা মানে একবার টো’কা খেয়েছে, তাই এটা জোর সংখ্যা করতে হবে আমার মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে আরেকবার টো’কা দাও জলদী।”

আমি মুখের আকৃতি স্বাভাবিক এর তুলনায় বড় আকারের করে তীব্রের উপর স্থীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। চোখের পলক না ফে’লতেই তীব্র আমার মাথায় আরেকটা টো’কা দিয়ে বলে….

____”আহহহহ এবার আসল শান্তি মিললো।”

আমি তীব্রের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের মনের চা’পা অভিমান গুলোকে আবারও জাগিয়ে তুলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তীব্রকে পাশ কা’টি’য়ে চলে যেতে নিলে তীব্র আমার হাত ধরে ফেলেন। আমি ওভাবেই দাড়িয়ে থেকে তীব্রের হাতের বা’ধ’ন থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই তীব্র এক টানে আমার পিঠ ওনার বুকের সাথে মিশিয়ে নেন। আমি তীব্রের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর যতোই চেষ্টা করছি ততোই তীব্র আমাকে ওনার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছেন।

আমার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে শীতল কন্ঠে বললেন…

____”আমার বউয়ের মিষ্টি অভিমান গুলো ভা’ঙা’তে’ই তো আমার কিছু অনিয়ম করা জরুরী হয়ে দাড়ায়।”

তীব্রের এহেনু কথায় আমার ন’ড়া-চ’ড়া সম্পূর্ণ থে’মে যায়। শরীরে আবার সেই অন্যরকম শিহরণ যুক্ত অনুভূতি গুলো কাজ করতে শুরু করে। বেশ কিছুসময় ধরে তীব্রের ভালোবাসা পেয়ে আমার সকল অভিমান, রাগ মূহূর্তের মধ্যেই মিলিয়ে যায়৷ পরমুহূর্তে আমি আর তীব্র রাতের খাবার খাওয়া শে’ষ করি৷ তারপর দু’জনে একসাথে রুমে চলে আসি।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল চিরুনি করছি। আড় চোখে দেখছি তীব্র খা’লি গা’য়ে বিছানার উপর শুয়ে থেকে ফোন দেখছে। আমি চুলগুলো হাত খো’পা করে ধীরপায়ে তীব্রের সন্নিকটে গিয়ে বসি। তারপর কোনো কথা না বলে তীব্রের বুকের উপর শুয়ে পড়ি। আমার এমন কাজে তীব্র মিষ্টি হেসে ফোনটা রেখে দিয়ে আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। মাঝেমধ্যে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়। আমি প্রশান্তিতে দু’চোখ বুঝে রেখেছি।

———————————

তীব্র আর আমি ড্রয়িং রুমে সোফার উপর পাশাপাশি বসে টিভিতে মুভী দেখছিলাম। সেই সময় তীব্রের ফোন বেজে উঠে। তীব্র ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বলে তা সঠিক শুনতে সক্ষম হলাম না। তীব্র প্রতিত্তুরে বললো…

____”সব পা’পে’র শা’স্তি। আমি তো জ’ঘ’ন্য মৃ’ত্যু দিতে চেয়েছিলাম ঐ …….জা’নো…… এর কিন্তু তার আগেই যে পটল তুলবে তা বুঝতে পারি নি।”

বলেই তীব্র কল কে’টে দেয়। আমি উৎসুক নয়নে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছি। তীব্র কিছু সময় নিরব থেকে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

____”একটা কি’ট বেঁচে ছিলো। যাকে মা’র’লে পা’পে’র সাম্রাজ্যের মূল হো’তা’দের মা’রা’র কার্য সম্পূর্ণ রূপে সফল হতো। কিন্তু একটু আগে শুনতে পেলাম আমার চাচা নামক মন্ত্রী কি’ট’টা অ’তি’রি’ক্ত মানসিক প্রেসার সহ্য করতে না পেরে স্ট্রো’ক করে মা’রা গিয়েছেন গতকাল রতে৷”

আমি ড্য’ব’ড্য’ব নয়নে তাকিয়ে আছি তীব্রের দিকে। তীব্র আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে…

____”আজ থেকে আমি আর তুমি মিলে একটা সুস্থ -সুন্দর জীবন কাটাবো বউ। তোমার মাঝে সারাজীবন ধরে আমার পূর্ণতা খুঁজে পাবো। আমার তুমিটাকে খুব যতনে আমার মনের গহীনে লু’কি’য়ে রাখবো। ভালোবাসা দিয়ে সবসময় আগলে রাখবো। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা গুলো কখনও শে’ষ না হোক। অনেক ভালোবাসি তোমাকে বউ।”

____”আমিও আপনার মাঝে আমার পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছি, সারাজীবন ধরে আপনাকে ভালোবাসে আপনার হয়েই কাটিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ। আপনার প্রতি ও আমার ভালোবাসাময় অনুভূতি গুলোর কখনও শে’ষ না হোক এটাই চাই।”

#সমাপ্ত………..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here