#ধারাবাহিক_রহস্য_গল্প
#মুখ_ও_মুখোশ
#পর্ব_৬
মিঃ মানসুখানি বললেন আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন | ইন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন আপনি ক্যামেরা ম্যান তো ?
ইন্দ্র বলল, হ্যাঁ | হ্যাঁ তো বলল কিন্তু ইক্যুইপমেন্ট তো ওর কাছে নেই !
মিঃ মানসুখানি যেন ওর মনের কথা পড়তে পেরেই বললেন আপনার ইক্যুইপমেন্ট ?
আমি চাইছিলাম ইনডোর শ্যুট করতে | তাতে মনে হয় ম্যাডামের লাস্যময়ী চেহারাটা ভালো ফুটবে | ঠিক আছে | আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন | একটু বাদেই শ্যুটিং ব্রেক হবে …. তখন এক ঘন্টা শ্যুটিং বন্ধ থাকবে, সেই ফাঁকে আপনারা ইন্টারভিউটা সেরে নেবেন |
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ | কিছু মনে করবেন না মিঃ মানসুখানি আপনি অবাঙালি হয়েও এত সুন্দর বাংলা বলেন যে চমকে যেতে হয় ! এত সুন্দর বাংলা শিখলেন কোথায় ?
মিঃ মানসুখানি একবার ইন্দ্রের আপাদমস্তক মেপে হালকা হেসে বললেন মশাই ফোটোগ্রাফারের পেশায় এলেন কেন ? গোয়েন্দা হলে ভালো নাম করতে পারতেন | আরে মশাই আমার জন্ম কোলকাতার শ্যামবাজারে | পড়াশোনা করতাম বাংলা মিডিয়ামে | চৌদ্দ বছর বয়সে গাড়ি দূর্ঘটনায় বাপ-মা স্পট ডেড | আঙ্কেল ছিল স্টান্টম্যান | আঙ্কেলই আমাকে মুম্বই নিয়ে আসে, এখানকার স্কুলে ভর্তি করে দেয় ! তারপর আর কি আঠারো হতেই রোজগারের ভূত মাথায় চাপে, ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া তো কিছু চিনতাম না …..এখানেই স্পটবয় হিসাবে কাজ শুরু করি আর তারপর ধীরে ধীরে…… আচ্ছা আপনারা বসুন | আমি একটু ওদিকটা দেখে আসি | মিঃ মানসুখানি শ্যুটিং স্পটের দিকে এগিয়ে গেলেন |
শ্যুটিং ব্রেকে ইন্টারভিউ শুরু হল | ইন্দ্র রেকর্ডারটা চালিয়ে দিয়ে আস্তে করে অনামিকাকে বলল, দেখুন কাইন্ডলি চেঁচামেচি করবেন না, আমি আপনাকে সব খুলে বলছি | আমার নাম ইন্দ্রজিৎ সরকার, আমি পেশায় একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ |
তার মানে ? আপনারা নিউজ রিপোর্টার নন ? অনামিকা আস্তে করে বলল |
না, ব্যাপারটা হল অরণ্য সত্যিই একজন নিউজ রিপোর্টার | কিন্তু আজ আমরা আপনার ইন্টারভিউ নিতে আসি নি |
আপনারা কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না !
পারবেন ম্যাডাম | আপনি একটু মন দিয়ে আমার কথাটা শুনুন | আপনার স্বামী আমাকে আপনাকে খোঁজার জন্য নিয়োগ করেছেন | আমরা নিজের চোখে দেখেছি আপনার স্বামী আপনাকে হারিয়ে পাগলের মতো আচরণ করছেন | আপনার ছোট্ট মেয়েটা মাম্মা মাম্মা বলে কাঁদছে, গত দুদিন ধরে কিচ্ছু খেতে চাইছে না | আপনার স্বামী কেবলমাত্র আপনাকে শপিং করতে দেন নি বলে আপনি এমন একটা ডিসিশন নিয়ে ফেললেন ? ছোট্ট মেয়েটাকে একলা ফেলে এভাবে মুম্বই চলে এলেন ?
ইন্দ্রের প্রশ্নের উত্তর দিল না অনামিকা | মুখ নীচু করে আলতো গলায় বলল, মোম আমাকে খুব মিস করছে না ?
ভীষণ | আপনি কলকাতা ফিরে চলুন ম্যাডাম |
অনামিকা কান্নাভেজা গলায় বলল, সে আর হয় না | আপনি জানেন না প্রবালের হাতে আমি প্রতিদিন কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছি ! প্রবাল আমাকে দিয়ে নিজের উন্নতির জন্য কি কি করিয়েছে তা শুনলে আপনার ওর উপর চরম ঘেন্না হবে | আর ওর আজ সমাজে যে ক্ষমতা…. সেই ক্ষমতা, প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত নিংড়ে নিয়েছে | আধুনিক সমাজ যতই এগোক, কোনো মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে কি সাধ করে নিজের সংসার, সন্তান ছেড়ে আসে ? আপনিই বলুন না ! মিঃ মানসুখানির যে আমার উপর নজর আমি সেটা কি আমি বুঝি না স্যার ! কিন্তু কি করব বলুন ? প্রবালের হাত থেকে রেহাই পেতে গেলে আমার কাছে যে আর কোন উপায় নেই !
যদি প্রবালের মুখোশ খুলে দিতে পারি আপনি কি এসব ছেড়ে মোমকে নিয়ে থাকবেন ? ফিরে যাবেন নিজের পুরোনো ঘরে ?
পারবেন স্যার, সত্যি পারবেন ? আমাকে আবার প্রবালের হাতে তুলে দেবেন না তো ?
আপনি কি আমায় ভরসা করতে পারছেন ? ইন্দ্র অনামিকার হাতে হাত রাখল |
পারছি স্যার, পারছি | আপনাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার কাছে আর উপায় নেই | সত্যি বলছি, মোমের কথা ভীষণ মনে পড়ছে, মেয়েটাকে ছেড়ে আর থাকতে পারছি না স্যার |
আপনি শ্যুটিংয়ের পর কোথায় থাকছেন ?
বান্দ্রার ওখানে মিঃ মানসুখানির একটা ফ্ল্যাট আছে | আপাতত আমি ওখানেই আছি |
দয়া করে আপনার বর্তমান নম্বরটা দেবেন | আমি আপনাকে কল করে বুঝিয়ে দেব আপনাকে ঠিক কি করতে হবে |
অনেক ধন্যবাদ | আপনি যেন দেবদূতের মতো আমার জীবনে এলেন | আমার মেয়েটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন স্যার !
ভাই কেস তো পুরোই ঘুরে গেল | তোর কি মনে হয় ? এই মুখ ও মুখোশের খেলায় কালপ্রিট আসলে কে ? অরণ্য সিরিয়াস গলায় বলল |
ইন্দ্র কোন কথা না বলে মোবাইলে নম্বর টিপল | ওপাশ থেকে গলা শুনে অরণ্য বুঝল, ইন্দ্র প্রবালকে ফোন করেছে | অনেক খোঁজাখুঁজির পর আপনার মিসেসকে আমরা খুঁজে বার করেছি | উনি বান্দ্রার ওখানে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন, আপাতত ওখানেই থাকছেন | আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুম্বই চলে আসুন |
আপনার কি অনামিকার সঙ্গে কোন কথা হয়েছে ?
দেখুন প্রবালবাবু, আপনার কথা অনুসারে ওনাকে খুঁজে দেওয়া পর্যন্ত আমাদের ডিউটি ছিল | এবার আপনার মিসেসকে আপনি কিভাবে মানিয়ে কলকাতা নিয়ে যাবেন, সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার !
ওককে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুম্বই আসছি |
কেসটা কি হল ভাই ? তুই প্রবালকে বললি না কেন তুই অনামিকার সঙ্গে কথা বলেছিস… অরণ্য বলে উঠল | তাহলে কি প্রবালই
ধীরে বৎস ধীরে | এবার তো জমবে খেলা | চল আরব সাগরের তীরে চৌপাটিতে এসে একটু পাওভাজি হবে না… তা আবার হয় নাকি ! চল সমুদ্রের ধারে বসে দুটো পাওভাজি খাওয়া যাক | যা তুই জলদি কিনে আন !
টাকা দে !
আরে তুই তো জব করিস ! প্রবাল দত্ত মুম্বইতে হোটেলে থাকা-খাওয়ার খরচ দিয়েছে… পকেট মানি তো দেয়নি | কেসের টাকা পাই তোকে সব ফিরিয়ে দেব !
হুম ! আমি সব বুঝি | অরণ্য বেজার মুখে পাওভাজি আনতে গেল !
দুজনে কাগজ পেতে সমুদ্রের ধারে বসে পাওভাজিতে কামড় দিল | গল্প করেই আধঘন্টা কেটে গেল আরব সাগরের তীরে… এবার ফেরার পালা | তুই হোটেলে ফিরে যা অরণ্য |
একা ? তুই ফিরবি না ?
কেন ? তোর কি মনে হচ্ছে তুই রাস্তা চিনতে পারবি না ?
দূর ! আমি দিব্যি রাস্তা চিনতে পারব ! কিন্তু তুই কোথায় যাবি ?
আমার একটা কাজ আছে রে ….. সেই কাজটা সেরেই সোজা হোটেলে ফিরব |
ওককে ভাই | সাবধানে থাকিস | অরণ্য হোটেলের দিকে পা বাড়াল |
ইন্দ্রের ঠোঁটে একটা অন্যরকম হাসি | মোবাইল বার করে সান্যালদার নম্বর ডায়েল করল ইন্দ্র | হ্যালো……..
( ক্রমশঃ )
©️ অনিন্দিতা