#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৩
__________________________
দু’জনকে কিছু বলতে না দিয়েই মিহু উঠে চলে গেল।সূচনার দিকে পূর্ন দৃষ্টি রাখলো প্রণয়।বেগুনি রঙের চূড়িদার, তার সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পড়া।চোখে হালকা করে কাজল দেয়া।
–‘আপনি কিছু বলবেন বলছিলেন।
সূচনার কথায় ঘোর ভাঙলো প্রণয়ের।মাথা নাড়িয়ে বললো-
–‘হ্যা।কালকে আমার সাথে আমার মামা-মামি আপনাদের বাসায় গিয়েছিলেন।
–‘হ্যা সেটাতো জানি।
–‘মা-বাবা না যেয়ে তারা কেন গিয়েছেন সেই প্রশ্ন অবশ্যই এসেছে আপনার মাথায়।
সূচনা নিচু স্বরে বললো-
–‘হ্যা এসেছিল।আম্মুকে জিজ্ঞেস করা হয়নি আসলে।ওনারা যান নি কেন?
–‘আমার মা মা’রা গেছেন যখন আমার ১৬বছর বয়স।
ওপাশ থেকে প্রণয়ের সোজাসাপটা জবাব।চকিতে তাকালো সূচনা।প্রণয়ের মুখশ্রী স্বাভাবিক। সূচনা কাঁপা গলায় বললো –
–‘আ,,আসলে আ,আমি সরি।আমি বুঝতে পারিনি।
প্রনয় স্মিত হেসে বললো-
–‘আপনি সরি বলছেন কেন?সত্যি তো সত্যি ই হয়।
প্রতিত্তোরে কিছু বললো না সূচনা।
–‘মামা-মামির কোনো ছেলে নেই,দুই জন মেয়ে।ছোট থেকে একটু বেশি ই আ’দর করতেন আমায়।আম্মুর আর কোনো ভাই-বোন ছিল।তাই আম্মু মা’রা যাবার পর মামা-মামি আমাকে আর ইরাকে তাদের কাছে নিয়ে গেলেন।তারপর থেকে তাদের কাছেই বড় হয়েছি দু’জন।পড়ালেখা শেষ করার পর অন্য কোথাও জব করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মামা দেননি। তার কোম্পানি তেই আছি তবে ইম্প্লই হিসেবে,তার ভাগ্নে হিসেবে না।আপনার, আমার ব্যাপারটায় সম্পূর্ণ ই আপনার বাবা আর আমার মামার হাত।কিন্তু আপনি আপনার মতামত রাখবেন সবার সামনে।আপনি কি চান সেটা বলবেন, চা’পে পড়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে পরবর্তী তে তা অনুতপ্ততার কারণ হয়ে দাড়ায়।
এক নাগাড়ে কথাগুলো বললো প্রণয়।নিরব শ্রোতার ন্যায়,সবটা শুনলো সূচনা।তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে।সূচনার এমন চাহনি দেখে প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-
–‘বুঝতে পেরেছেন কি বলতে চেয়েছি?
মাথা নাড়ালো সূচনা।যার অর্থ হ্যা বুঝতে পেরেছে।হাত কচ’লাতে কচ’লাতে আমতা আমতা করে সূচনা বললো-
–‘আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে।
–‘আচ্ছা তার আগে একটা প্রশ্ন করি?
–‘জ্বি করুন।
–‘আপনি কাউকে ভালোবেসেছেন?
প্রণয়ের কথাটুকু কর্ণগোচর হতেই নত মস্তক ফ’ট করে ওপরে তুললো সূচনা।তাকাতে পারলোনা প্রণয়ের দিকে।নামিয়ে নিল চোখ।চোখে পানির আভাস টের পেতেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।কোনোরকম ভাঙা কণ্ঠে বললো –
–‘হ্যা,,আ,,আমি একজনকে ভালোবাসতাম।সে ব্যাপারেই বলার ছিল।
–‘ভালোবাসতেন,মানে সে অতীত ছিল।যদি অতীত হয় তাহলে সে ব্যাপারে জানতে ইচ্ছুক না আমি।
নত মস্তক উপরে তুললো সূচনা।বললো –
–‘কিন্তু,,আমি
–‘আমি শুনতে চাইনা।সে অতীত ছিল সেটা বড় কথা।অতীতে টুকটাক এমন অনেকেরই থাকে।অতীতের ছায়া বর্তমানে পড়তে দিবেন না।অতীতে আ’টকে থেকেও লাভ নেই।অতীত ভুলে বর্তমানকে উপভোগ করুন।বর্তমানকে সমৃদ্ধ করুন।তাহলে ভবিষ্যত মধুর।আই হোপ বুঝতে পেরেছেন?
সূচনা ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিকে। তা দেখে প্রণয় ব্যস্ত গলায় বললো-
–‘অতীত কে অশ্রুপাতে ভাসিয়ে দেয়া ই উত্তম।সেটা যাই হোক না কেন।
–‘জ্বি।
–‘আপনি কি চান?
–‘কোন ব্যাপারে?
সূচনার এমন কথায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো প্রণয়।সূচনাও বুঝতে পারলো ব্যাপারটা তাই জোরপূর্বক হেসে বললো-
–‘সরি,আসলে,, বুঝতে পারিনি।আসলে,,
–‘আপনি সময় নিন,সমস্যা নেই।আপনার যেকোনো সিদ্ধান্ত কেই সম্মান করবে, আর আপনার মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।
সূচনার কৃতজ্ঞতার চাহনি।সল্প পরিসরে হেসে বললো-
–‘জ্বি।শুকরিয়া।
.
.
.
উত্তপ্ত ধরণীর বু’কে গোধূলির আগমন ঘটে গেছে অনেক আগেই।হলদেটে লাল রঙা সূর্যের আভায় পৃথিবীকে আচ্ছাদিত করে এখন সমস্ত আকাশ জুড়ে অন্ধকারের খেলা।বারান্দার মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে সূচনা।মেঝে পর্যন্ত বারান্দার গ্রীল।রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে এসেছে ঘন্টা দুয়েকের বেশি।প্রণয় ই দিয়ে গেছে বাড়িতে।মিহু ও চলে গেছে।সূচনা ফ্রেশ হয়ে ই বারান্দায় এসে বসেছে।ব্যস্ত শহরের,ব্যস্ত লোকজন,এত এত কৃত্রিম আলোয় আলোকময় পুরো শহর,অযথাই গাড়ির হর্ন তো আছেই।সব মিলিয়ে বিরক্তিকর এক পরিবেশ। তবুও এখান থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না।রেস্টুরেন্টে প্রণয়ের বলা কথাগুলোর বারবার বিচরণ হচ্ছে মন-মস্তিষ্কে।মন বলছে ঠিকই তো বলেছে প্রণয় আর মস্তিষ্ক বলছে তাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে অন্য কারো সাথে সংসার করাা যাবেনা।মন আর মস্তিষ্কের এই যুদ্ধে ফে’সে গেছে সে।কি করবে জানা নেই তার।বারান্দা থেকে সোজা রান্নাঘরে গেল।মিসেস দিশা কাজ করছিলেন রান্নাঘরে। সূচনা যেয়ে তাকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। তা দেখে মিসেস দিশা বললেন-
–‘আজ এত ভালোবাসা কোত্থেকে আসলো আমার জন্য?
সূচনা মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘এমন ভাবে বলছো যেন আমি তোমাকে একটু ও ভালোবাসিনা।
মিসেস দিশা হেসে বললেন-
–‘তা হতে যাবে কেন?আমার একটামাত্র মেয়ে সে আমাকে ভালোবাসবে না কেন?আমি তো মজা করছিলাম।
–‘হু।
–‘তা হঠাৎ রান্নাঘরে যে?
–‘এমনি।
–‘আচ্ছা।
–‘বিয়ের পর কি দায়িত্ব বেড়ে যায় আম্মু?
আচমকা সূচনার মুখে এহেন প্রশ্নে অবাক হন মিসেস দিশা। সাথে মনে ছোট্ট করে উকি দেয়,একটা প্রশ্ন-সূচনা বিয়ের কথা বলছে তাহলে কি?’তার ভাবনার মাঝেই সূচনা আবার ডাকলো-
–‘আম্মু?
–‘হ্য,হ্যা বল।
–‘বললে না?
হাতের কাজ রেখে সূচনার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিসেস দিশা।তারপর নরম গলায় বললেন-
–‘বিয়ের পর একটা মেয়ের পরিচয়ই বদলে যায়।বিয়ের আগে সে কারো মেয়ে,কারো বোন হয় কিন্তু বিয়ের পর সে কারো স্ত্রী,কারো ছেলের বউ, ভাবি হয়,অতঃপর সন্তানের মা।তোর আব্বুর সাথে আমার বিয়ের আগে তাকে চিনতাম ও না আমি।যখন সবকিছু ঠিক হলো, বিয়ের দিন ঠিক হলো তখন একপলক দেখেছিলাম কিন্তু কথা হয়নি।বিয়ের পর প্রথম ক’মাস তো তাকে ভয় পেতাম কারণ ছাড়াই। তার সামনে থাকলে সব কাজ,কথা গু’লিয়ে ফেলতাম।আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলাম,বহু কাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত আসলো।যখন জানলাম তোর আসার খবর তখন তোর বাবা খুশিতে কে’দেই দিয়েছিলেন।সেদিন নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়েছিল।তোর বাবার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমি বাবা-মায়ের সাথে রা’গ করেছিলাম অনেক।কিন্তু সময় যত অতিক্রম করলাম তোর বাবার সাথে ততই মনে হতে লাগলো বাবা-মার আমার জন্য নেয়া সবথেকে উপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল তোর বাবার সাথে আমার বিয়ে দেওয়া টা।দায়িত্ব ছিল অনেক শুরুতে কিন্তু তোর বাবা অনেক সাহায্য করেছেন আমাকে।যার বদৌলতে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে সামলাতে পেরেছি।বিয়ের এই অধ্যায়টা প্রতিটি মেয়ের জীবনেই আসবে।সবকিছু কঠিন মনে হবে শুরুতে।কিন্তু তার সঙ্গী যদি সুন্দর মনের অধিকারী হয় আর তাকে বোঝার ক্ষমতা রাখে তাহলে জীবন সুন্দর। বুঝেছিস?
মাথা নাড়িয়ে বললো –
–‘হু।আমি রুমে গেলাম আম্মু।
–‘ঠিক আছে যা, একটু পর খে’তে ডাক দিব ঘুমিয়ে যাসনা যেন।
–‘হু।
রুমে এসে মায়ের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো সূচনা।বার কয়েক আওড়ালো সে- সুন্দর মনের অধিকারী আর তাকে বোঝার ক্ষমতা থাকলে জীবন সুন্দর। আসলেই সুন্দর? আচ্ছা প্রণয় কি এমন নাকি সে ও তাদের কা’তারেই?কোনটা?
.
.
সকাল সাড়ে নয়টা।কাবার্ডের সামনে দাড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে কিছু পর্যবেক্ষণ করছে সূচনা।ঝাপসা চোখে কাঁপা কাঁপা হাতে কাবার্ড থেকে জিনিসটা হাতে নিল।একটা ডায়েরি।এতক্ষণ এই জিনিসটাই দেখছিল সে।ডায়েরী টা হাতে নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে গেল সে সাবধানে।মিসেস দিশা রান্নাঘরে কাজ করছিলেন।ছাদের চিলেকোঠার ঘরে যেয়ে ডায়েরীটার দিকে এক পলক তাকালো।কাজ সেড়ে বেরিয়ে আসলো সেখান থেকে।বাসায় আসতেই মিসেস দিশা চিন্তিত গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন-
–‘তোর চোখ এমন লা’ল হয়ে আছে কেন?কি হ’য়েছে?
সূচনা জোরপূর্বক হেসে বললো-
–‘কিছুনা আম্মু,ছাঁদে গিয়েছিলাম,অনেক রোদ।সে জন্য ই এমন দেখাচ্ছে। আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসি।
মিসেস দিশার সূচনার কথা বিশ্বাস হলো কিনা কে জানে।কিন্তু আর কিছু বললেননা।সূচনা রুমে চলে আসলো।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলো।ফোন হাতে নিয়ে কল লাগালো মিহুকে।
#চলবে