#অন্ধকার_পল্লী
#Tabassum_Riana
Part:১০
,
,
,
অবনী আফিনের বাসায় আছে একদিন হয়ে গেলো।পরদিন রাতে আফিনের ফ্লাইট। আফিন আর অবনী দোলনায় বসে ফুল গাছ গুলো দেখছে।দুজনের হাতে ধোঁয়া উঠা দু মগ কফি।দুজনের মুখে কোন কথা নেই।দুজনেই কোন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন।আফিন কফি মগে চুমুক দিয়ে অবনীর দিকে তাকালো।জ্যোৎস্না আলো টা যেন আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে অবনীর সংস্পর্শে।পিঠের এলোমেলো লম্বা চুল গুলো উড়ছে।রাতের স্নিগ্ধ আলোয় অবনী ভীষন মায়াবী লাগছে।এতো মায়া কই পায় মেয়েটা ভেবে পায়না আফিন।দোলানায় ওদের মাঝে অবনীর একটা হাত রাখা।আফিন খুব ধীরে অবনীর হাতের ওপর হাত রাখলো।গরম হাতের ছোয়া পেয়ে অবনী হাত জোড়ার দিকে তাকিয়ে আফিনের দিকে তাকালো।আফিন অবনী মায়ায় আবার নতুন করে জড়িয়ে যাচ্ছে।অবনীর হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো আফিন।আকাশের তারার দিকে চেয়ে আফিন মুখ খুলল
কেন বাতাস হয়ে এসে,
আমায় স্পর্শ করে যাও?
কেন ভোরবেলায় সূর্যের আলো হয়ে,
আমার ঘুম ভাঙাও?
কোন মায়ায় কিসের টানে,
দেহমনের শিহরণ জাগাও?
আমারও তো তোমায় ছুঁতে ইচ্ছে করে,
তোমার মোহ ধরানো গন্ধে নেশাগ্রস্ত হতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে তোমার ঐ লাল টুকটুকে ঠোঁট জোড়ায় ডুবে যেতে!!
তোমায় যদি জিজ্ঞেস করি,
আমার হাতে হাত রেখে বন্ধুর পথে হাঁটবে?
শ্রাবনের শেষ বিকেলে………
অবনী আফিনের দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে।লোকটা ওকে আর কতো মাতাল করবে তার নেশায়?ভেবে পায়না অবনী।বাহ খুব ভালো কবিতা পারেন আপনি।আফিনের দিকে চেয়ে বলল অবনী।পছন্দ হয়েছে?হালকা হাসলো আফিন।মাথা ঝাঁকালো অবনী।আফিন অবনীর গালে আলতো করে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিলো।অবনী চোখ বুজে আফিনের ছোঁয়া উপভোগ করছে।আফিন অবনীর দিকে একটু এগিয়ে এসে অবনীর গালে নাক ঠেঁকালো।অাফিনের গরম নিশ্বাস গুলো অবনীর হৃদয়কে গভীর ভাবে স্পর্শ করছে।সখী তোর নেশায় মাতাল আমি।আমার হৃদয়ের গহীনে শুধু যে তোরই বসবাস।আমায় আগলে নেয় তোর হৃদয়ের মাঝে।নেশা ধরানো কন্ঠে কথা গুলো বলে অবনীর গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো আফিন।
,
,
,
,
আফিনের কথা গুলো অবনীর বুকে তীরের মতো বিঁধছে।অবনী আফিনের দিকে ফিরে তৎখনাৎ আফিনের বাহু ডোরে নিজেকে বন্দী করে নিলো।আফিন ও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তার জলপরীকে।বেশ কিছুক্ষন পর অবনী সরে এলো আফিন থেকে।অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে নিলো অবনী।আফিন কফি মগ দুটো হাতে তুলে নিলো।অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।অবনীকে দেখতে পাচ্ছেনা ও।নিজের বুকটাও যে ফেঁটে চৌচির হচ্ছে।মেয়েটা চোখ মুছে ও কাঁদছে মুখ লুকিয়ে।নিজেকে শক্ত করলো আফিন।অবনী!!!রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।বলে উঠলো আফিন।অবনী কি বলবে?কথা বলার শক্তিটা ও বেঁচে নেই ওর মাঝে।ইচ্ছে করছে মানুষটাকে পরপারে পাড়ি দিতে।মানুষটার মাঝে হারিয়ে যেতে।কিভাবে থাকবে মানুষটাকে ছাড়া?মানুষটা যে ওর প্রত্যেকটা নিশ্বাসের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।হুহু করে কাঁদতে থাকে অবনী। আফিন টি টেবিলের ওপর মগ দুটো রেখে অবনীকে কোলে তুলে নিলো।অবনী দুহাতে মুখ ঢেকে রেখেছে।আফিন অবনীকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে গেলো।অবনীকে খাটে শুইয়ে দিয়ে ওর কপালে চুমো খেয়ে সরে আসতেই আফিনের গেন্জীর কলার টেনে ধরলো অবনী।প্লিজ যাবেননা!!!এখানে থাকুন।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।অবনীর কান্নায় না করতে পারলো না আফিন।অবনীর পাশে শুয়ে পড়লো আফিন।অবনী আফিনের বুকে মাথা রেখে আফিনের হাত ধরে রাখলো।প্লিজ হাতটা ছাড়বেননা।চলে যাবেননা একা ফেলে।কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো অবনী।আমি আছি অবনী ঘুমাও।অবনীকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল আফিন।
,
,
,
,
আফিনের বুকেই রাতটা পাড় করলো অবনী।পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অবনীর।আফিনকে রুমে না পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাঁড়ালো অবনী।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে নিচে নেমে এলো অবনী।আফিন পাকঘরে পরোটার কাই করার চেষ্টা করছে।মিনিটে মিনিটে পানি ঢালছে ময়দায় আফিন।অবনী পাকঘরের কাছে এসে হালকা গলা পরিষ্কার করে নিলো।কি করতে চাচ্ছেন আপনি জানতে পারি?হাসি থামিয়ে প্রশ্ন করলো অবনী।পরোটা বানাচ্ছি দেখতে পাচ্ছোনা?আমার পরোটা খুব মজা হয়।খেলে আঙ্গুল চাঁটতে থাকবা।পরোটার কাই মাখাতে মাখাতে বলল আফিন।হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।সরে আসুন।পাকঘরে ঢুকে আফিনকে বের করে বলল অবনী।আফিন পাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে অবনীকে দেখছে।দেখাতেই যেন তৃষ্ণা মিটছে না আফিনের।আলতো পায়ে অবনীর পাশে এসে দাঁড়ালো আফিন।অবনী আফিনের দিকে একটু হেসে পরোটা বানানোয় মন দিলো।আফিন বেশ খানিকটা নিচু হয়ে অবনীর গলায় মুখ গুঁজে দিলো।ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগলো অবনীর গলায় কাঁধে।অবনীর হাত চলতে চাইছেনা।আফিনের একটা হাত অবনী ময়দা মাখানো হাতের ওপর এসে থামলো।অবনীর আঙ্গুলের মাঝে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলো আফিন।পরোটা বা ব বানাত তে হব বে ত তো?কাঁপা গলায় বলল অবনী।আফিন সরে এসে অবনীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো।অবনীর এতোক্ষন নিশ্বাস আটকে আসছিলো।এখন কিছুটা নিশ্বাস নিতে পারছে।আধ ঘন্টার মাঝে নাস্তা বানিয়ে নিলো অবনী।দুজনের জন্য অমলেট বানিয়ে খাবার গুলো টেবিলে রাখলো অবনী।নাস্তা সেড়ে আফিন ফোনে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।অবনী রুমে চলে গেলো।দুপুরের খাবার সেড়ে আফিন অবনীর রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো।
,
,
,
,
অবনী শুয়ে ছিলো।আফিনকে আসতে দেখে উঠে বসলো অবনী।আসুন মুচকি হেসে বলল অবনী।অাফিন রুমে ঢুকলো না।রেডি হয়ে নাও অবনী।বলে উঠলো আফিন।কেন?প্রশ্ন করলো অবনী।বের হবো তোমাকে নিয়ে। আমার ফ্লাইট কাল রাতে।আজকেরটা ক্যান্সেল।আফিনের কথায় সাড়া মুখ জুড়ে মনোমুগ্ধকর হাসি ফুঁটে উঠলো অবনীর।আফিন সরে এসে ওর রুমে চলে গেলো।অবনী শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কালো একটি কাতান শাড়ীতে নিজেকে জড়িয়ে নিলো অবনী।কপালে কালো ছোট্ট টিপ,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে নিলো অবনী।চুলগুলো কে পিঠের ওপর ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।অবনীকে মুগ্ধ চোখে দেখছে আফিন।কালো শাড়ীটা এতোটা মানাবে ওর জলপরীকে কে জানতো?আফিনের পাশে এসে দাঁড়ালো অবনী।মুখে সে স্নিগ্ধ হাসিটা লেগেই আছে অবনীর।আফিন অবনীর দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল এভাবে হেসে আমায় পাগল করা ছাড়া কোন কাজ খুঁজে পাওনা?কখন রাস্তা ঘাটে জড়িয়ে ধরে কিস করে দেই পাগল হয়ে।পরে আমাকে বেশরম বলোনা।আর আমি কিন্তু সরি ও বলবো না বুঝো।একনাগাড়ে কথা গুলো বলে সামনে হাঁটতে লাগলো আফিন।মার্কেটে এলো আফিন অবনীকে নিয়ে।বেশ কিছু শাড়ী কিনে দিলো অবনীকে।আর আফসানার জন্য স্যালোয়ার কামিজ কিনে নিলো।অবনী তো কিছুতেই রাজিনা।কিন্তু আফিন ঘাড় ত্যাড়া। সে কিনে দিবেই।শপিং সেড়ে অবনীকে নিয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া করে বাসার দিকে রওনা হলো আফিন।
,
,
,
,
অবনী বিছানায় বসে আফিনের সাথে গল্প করছিলো।১০টায় রুম থেকে বেরিয়ে গেছে আফিন।কোন সাড়া শব্দ নেই ওর।অবনী কিছুক্ষন অপেক্ষা করে খাট থেকে নেমে দরজার সামনে আসতেই একটা শপিং ব্যাগ পেলো নিচে।ব্যাগটায় কিছু লেখা আছে।ব্যাগটাকে হাতে তুলে নিলো।ব্যাগটায় লেখা”ভিতরে যা পাবে, তা পরে জলদি নিচে আসো।
চলবে