অতৃপ্তির মাঝে তৃপ্তিময় সে পর্ব -১৩+১৪

#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -১৩
______________
২৯.
–“চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় বি’স্ফোরণে ব্যাপক মানুষের হতা’হ’তের ঘটনা ঘটেছে।এই মুহূর্তে আমরা আছি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে।”
রেডিওতে নিউজের সম্প্রচারের শব্দ দ্বিগুণ করলো আদ্রিন।তৃপ্তি তার ব্যাগ চেপে বসে।রেডিওর খবরটা শুনে দুইজনই চুপচাপ।রিয়ানা তার স্বামী আদিবের সাথে বেরিয়েছে সাফা সমেত। যার দরুণ আদ্রিন তৃপ্তিকে বাড়ি অব্দি পৌঁছানোর দায়িত্ব নেয়।
আড় চোখে তাকালো তৃপ্তি আদ্রিনের পানে।আদ্রিন আপাতত মনোযোগ দিয়ে নিউজ শুনছে।গাড়িতে উঠে আদ্রিন সর্বদা রেডিও চালু করে রাখে।এটা তার অভ্যাস।তবে আজ এমন খবর দুঃখজনক খবর শুনতে পাবে সে,এমনটা ভাবেনি।কেবল সে নয়,দেশবাসী সকলকেই হতভাগ।রিপোর্টার একে একে সংবাদ গড়গড়িয়ে বলছে।সাথে হতা’হ’তদের স্বজনদের ইন্টারভিউ শুনছে মনোযোগ সহকারে।তৃপ্তি প্রথমে এহেন ঘটনার কারণে দুঃখ প্রকাশ করলেও উক্ত স্বজনদের আ’হাজারি শুনে মেয়েটা কেমন নুয়ে যাচ্ছে।মায়ের মৃত্যুর পর “আহা’জারি” শব্দটা তার নিকট বিষ’ধর।ভেঙে পড়ে মেয়েটা।গা গুলাচ্ছে তার।

–“চট্টগ্রামে বিশাল কান্ড ঘটেছে।আল্লাহ্ সহায় হোক সকলের প্রতি।তোমার কোনো আত্মীয় আছে সেখানে?আমার কয়েকজন বন্ধু আছে চট্টগ্রামে।তবে তারা সেই এলাকা থেকে দূরে।শহর এলাকায় থাকে।”
নিজ বক্তব্য শেষ করে রেডিওর সাউন্ড আরো তীব্র করতে গেলে আদ্রিনের হাত চেপে ধরে তৃপ্তি,
–“প্লিজ,বন্ধ করুন।আমার সহ্য হচ্ছে না এমন শব্দ।”
তৃপ্তির আর্তনাদে আদ্রিনের গাড়ি থামতে সময় নিলো কয়েক সেকেন্ড।গাড়ি সাইডে পার্ক করে বিচলিত আদ্রিন সিট বেল্ট খুলে তৃপ্তির নিকট ঝুঁকলো।রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোয় ব্য’থা’কাতর ভঙ্গিমা তৃপ্তির মুখে স্পষ্ট।মেয়েটা কান্না করছে?
তৃপ্তি নিজেকে সামলাতে হিমশিম।সেই অজানা মানুষের আর্তনাদ ঝড় তুলেছে তৃপ্তির মনের গহীনে।একে একে মনে আসছে সেই কালো অধ্যায়।মায়ের মৃ’ত্যুর দিনের সকল প্রতিচ্ছবি হাতছানি দিয়ে ডাকছে তৃপ্তিকে।এক হাতে নিজের কামিজ চেপে অন্য হাতে বাম কান চেপে ধরলো তৃপ্তি।নাকের পাশাপাশি গাল খানাও তার রক্তিম।
–“এই,কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?”
তৃপ্তি কিছু বললো না। নিঃশব্দে গাল মুছলো।রেডিও এখনো গড়গড় করে চলছে।তৃপ্তি দুবার ফোঁপালো।এরপরই মৃদু কন্ঠে আওড়ালো,
–“আর্তনাদ আমার সহ্য হয় না। ব..বন্ধ করুন না।”
আদ্রিন দ্রুতই বন্ধ করলো রেডিও।তৃপ্তির মাথায় হাত রাখতেই মেয়েটা আবারও ফোঁপালো।এতো মাস তাদের পরিচয়।অথচ আদ্রিন কখনোই তৃপ্তিকে এইভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি।কি হলো মেয়েটার হঠাৎ?
–“খারাপ লাগছে?”
উপর নিচ মাথা নাড়ালো তৃপ্তি,
–“মায়ের কথা মনে আসছে।”
দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেললো মেয়েটা।নিজের দুর্বলতা প্রকাশে সে অনড়।
কিন্তু,আদ্রিন সব উপলব্ধি করলো বিনা বাক্যে।তৃপ্তির চুলের গভীরতায় নিজ আঙ্গুলে ছুঁয়ে দিলো সে।ধীরে মাথায় হাত বুলিয়ে বেশ কৌশলে নিজের বক্ষদেশ টেনে নিলো তৃপ্তিকে।মেয়েটা এখনো কাঁদছে।হাত সরালো না মুখ হতে।আদ্রিনের এক হাত তৃপ্তির পিঠ ছুঁয়ে,অন্যহাত তার মাথায়।হৃদয়ে তার র’ক্ত’ক্ষরণ চলছে।প্রিয়তমার এমন হৃদয় বিদারক কষ্ট উপলব্ধি করতে বেগ পাচ্ছে না আদ্রিন।সে বেশ জানে,এই মেয়ের দুর্বলতা তার মা এবং মায়ের মৃ’ত্যু।ঠিক এই কারণেই তাদের সম্পর্কটা সামনে আগাচ্ছে না,এটাও অজানা নয় আদ্রিনের।তৃপ্তি তার বাবা এবং মায়ের সম্পর্কের ফাটলের জের ধরেই নিজেদের সম্পর্কে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না।

চিন্তিত আদ্রিন অধর ছোঁয়ালো তৃপ্তির মাথার উপরিভাগে,
–“কাঁদে না,তৃপ।দেখো,তুমি স্ট্রং মেয়ে।সেই আগের কাহিনী নিয়ে এখনো পড়ে থাকলে কি হয়?মানুষ আজ আছে,কাল নেই।তাই বলে সারাজীবন এইভাবে ভেঙে পড়লে কি চলবে?সবার জীবনের ঘটনা একই থাকে না।দেখো,তোমার বাবা মায়ের হয়তো ঝামেলা ছিলো সম্পর্কে।কিন্তু,হাজার হাজার,লাখ-কোটি মানুষেরা কি সংসার করছে না?”
তৃপ্তির আঁখি বাঁধ মানছে না।এই প্রথম সে মায়ের মৃত্যুকে স্মরণ করেও এক ভরসার বুক পেয়েছে নিজের কষ্ট বিসর্জনের।থেমে থেমে সে মুখ হা করে শ্বাস নিচ্ছে তো আবারও ডুবে যাচ্ছে সেই কষ্টময়ী স্মৃতিতে।আদ্রিন আরো দৃঢ় করে তাদের বন্ধন।প্রিয়তমাকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার শান্তি বড্ড প্রফুল্ল।পুনরায় তার মাথার উপরিভাগে অধর ছুঁয়ে সে বললো,
–“হয়েছে তো।আর কাঁদে না,তৃপ্তি।”
তৃপ্তি নিজেকে ধাধস্ত করে থামালো বহু কষ্টে।আদ্রিনের বুক হতে মাথা তুলতেই সবটা ঝাপসা লাগছে তার নিকট।
তৃপ্তির রক্তিম মুখশ্রীতে কান্নার ঝড়।কয়েক গোছা চুল তার মুখেই লেপ্টে আছে।আদ্রিন টিস্যু বক্স হতে কিছু টিস্যু নিয়ে তৃপ্তির গালের পানি পুছলো,
–“জীবনে অতীত নিয়ে থেমে থাকলে হয় না।সামনে অগ্রসর হতে হয়,তৃপ্তি।মনে রেখো,জীবন একটাই।এই জীবনে শুধু সুখী হওয়ার চেষ্টা করতে হয়।দুঃখ ভুলে সুখকে কাছে টেনে নাও।তোমার সুখের ফোয়ারা কিন্তু তোমার সামনেই আছে।”
আদ্রিন হাসলো মিষ্টিমুখে।
তৃপ্তি আদ্রিনের ইশারা বেশ ভালই বুঝলো। তবে মেয়েটা চুপ।
–“গলা শুকিয়েছে?পানি খাবে?একটু বসো।গাড়িতে পানি নেই।এইযে দোকান সামনে।আমি আসছি।”
আদ্রিন বেরুনোর পূর্বেই তৃপ্তি তার শার্টের পেছনের অংশ টানলো,
–“আমি বাহিরে দাঁড়াব।”
–“আচ্ছা।”
আদ্রিন তৃপ্তিকে গাড়ির পাশে দাঁড় করিয়ে নিজেই দোকানের দিকে এগুচ্ছে।এইতো কাছেই দোকান।মিনিট দুয়েকের মধ্যে আদ্রিন গায়েব।বাহিরে হালকা পবনের ছড়াছড়ি।
৩০.
তৃপ্তি গায়ের ওড়না আরো শক্তভাবে প্যাঁচালো শরীরে।আদ্রিনের কথাগুলো তার মাথায় গেঁথে আছে।মাঝে মাঝে তৃপ্তির মনে হয়, আদ্রিনের সাথে সে অবিচার করছে।তৃপ্তি বেশ বুঝে,আদ্রিন তাকে চায়।চোখ বুঁজেই চায়।কিন্তু,মা বাবার বিচ্ছেদের কারণের জন্যেই আদ্রিনের ডাকে সাড়া দিতে বেগ পাচ্ছে রমণী। তবে, আজ তৃপ্তি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছালো।সে আদ্রিনকে সুযোগ দিবে।আদ্রিন তাকে ভালোবেসে কাছে নেওয়ার জন্যে ঠিক কি কি করে সবটা পর্যবেক্ষণ করবে সে।ভালোবেসে আদ্রিন তাকে কাছে টেনে নেওয়ার যত্নদি,তাকে সামলে নেওয়ার তীব্র প্রচেষ্টায় ভাঙলো তৃপ্তির পাথর মন।মেয়েটার পাষাণ মন আজ ঠিকই হারলো আদ্রিনের স্নেহের যত্নদিতে। কিন্তু,তৃপ্তি এতো সহজে সবটা প্রকাশ করবে না। তৃপ্তি পর্যবেক্ষণ করবে আদ্রিনের প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ,তার পাগলামো।বারংবার মনে তার মায়ের কথা স্মরণে এলেও,সেই স্মৃতি আজ আদ্রিনের বলা কথাটা হেরেছে।তৃপ্তিও তো মানুষ,হাজার হলেও পাষাণ মনের অন্তরালে তারও এক মোলায়েম অংশ আছে।আজ সে অংশ প্রকাশিত হলো।মনে মনে সে আওড়ালো,
–“আমার মনটা কেবল আপনার প্রতিই নরম হোক।পাষাণ হৃদয় গলে একবারে পানি হোক।”

কয়েক মিনিট বাদেই সেখানে আগমন হলো দুজন ছেলের।হাইওয়ে রোডে সাইসাই গাড়ির শব্দ।নির্জনে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েকে দেখে ছেলে দুইটি যেনো লোভী হলো হুট করেই।তৃপ্তির গা ছুঁই হয়ে দাঁড়াতেই সে খানিক সরে দাঁড়ালো।সাথে সাথে নিজের জুতাটা হাতে নিয়ে রণমূর্তি ধারণ করলো তৃপ্তি,
–“জুতার বারি দিয়ে গাল ফাটিয়ে দিবো।”
আদ্রিন ততক্ষণে কাছে চলে এসেছে তাদের।তার বিশ্বাসই হচ্ছে না,খানিক পূর্বে এই মেয়েই শিশুর মতো তার বুকে গুটিশুটি হয়ে কেঁদে কুটে তার বুক ভিজিয়েছে!
আদ্রিন ব্যাপারটা বুঝে ওঠার সময় নিতেই এক ছেলে তৃপ্তির কোমর ছুঁয়ে দেওয়ার জন্যে উদ্যত হতেই আদ্রিন ছুটে এসে সেই ছেলের পায়ে লাথি দিলো।পা বেঁকে ছেলেটা বসে পড়লো রাস্তায়। অপর ছেলেটা আদ্রিনকে চিনতে পেয়ে দৌড় লাগালো।ইনায়ার মতো রাজনীতিবিদের একমাত্র ছেলে বেশ পরিচিত ঢাকা শহরে।রাস্তায় বসে থাকা ছেলেকে পুনরায় লাথি দিলে সে মাটিতে শুয়ে যায়।তার গলায় পা দিয়ে আদ্রিন বিক্ষিপ্ত সুরে হাসলো,
–“আমার সামনে আমার প্রা’ণ’নাশিকে হাত দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিস?এতো সাহস?”
পায়ের ভার আরো তীব্র করলে লোকটার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।তৃপ্তি বাহু ধরে টানলো আদ্রিনের,
–“সবাই দেখছে,আদ্রিন।দেখুন গাড়ি থামিয়ে ফেলেছে অনেকেই।”
–“দেখুক।আজ এই ছেলে ম’রবে।”
কান্নার দরুণ তৃপ্তির মাথা ভারী।আর এইসব কাহিনী তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।ছেলেটা তার ক্ষতি করেনি।ক্ষতি করার আগেই তো আদ্রিন বাঁচিয়েছে তাকে। তাহলে, এখন এইসব কাহিনী আর ভালো লাগছে না তৃপ্তির।সে আদ্রিনের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো,
–“পানিটা কি দিবেন?আমার খারাপ লাগছে,
আদ্রিন।”
আদ্রিন দ্রুত পা সরালো।মানুষের জটলা পাকানোকে লক্ষ্য করে সে তৃপ্তিকে নিয়ে গড়িয়ে উঠলো নীরবে। পুলিশি ঝামেলায় বাজলে বড্ড সময় হাত ফস্কে চলে যাবে।আদ্রিন গাড়ি চালানো অবস্থায় পানির বোতল এগিয়ে দিলো তৃপ্তির পানে।
তৃপ্তি দূর্বল হাতে কয়েকবার চেষ্টা করেও কর্ক খুলতে সক্ষম হলো না। তা দেখে আদ্রিন গাড়ি সাইড করলো আবারো,
–“খাও তো না কিছু।গায়ে শক্তি আসবে কোথা থেকে?আবার ঐ ছেলেকে মারতে জুতা নিয়েছো।”
তৃপ্তির হাসি পেলো।সে মুখে হাত দিয়ে হাসতেই আদ্রিন চোখ রাঙালো,
–“একদম হাসবে না।তোমার জন্যে ভালো করে মারতে পারলাম না ছেলেটাকে।পানি খাও।”
তৃপ্তি বোতলে চুমুক দিয়ে পানি খেলো।এইবার মনে হচ্ছে,তার ভেতরকার আগ্নেয়গিরি থেমে বরফ জমেছে।
গাড়ি চলেছে পুরোদমে।আদ্রিন ইচ্ছে করেই হাইওয়েতে গাড়ি উঠিয়েছে।পাশে বসা তার মনের ঘাতকের সাথে এই লংড্রাইভ তার শেষ করতে একটুও ইচ্ছে করছে না।তৃপ্তির দূর্বল চোখ নেতিয়ে পড়ছে।আদ্রিন সুপ্ত কণ্ঠে বলল,
–“আমার কাঁধে মাথা রাখো,তৃপ্তি।যেভাবে মাথা দুলছে তোমার,কোন সময় না ঠুস করে ব্যাথা পাও।”
তৃপ্তির রাখতে হলো না।আদ্রিন নিজেই তাকে কাছে টেনে নিলো।মাথা রাখলো তার কাঁধে।ঘুমঘুম অনুভূতিতেও আজ তৃপ্তির অন্যরকম এক অনুভূতি হচ্ছে।তীব্র ভালোলাগার অনুভূতি।এই অনুভূতিতে তৃপ্তি আজ পিষ্ট হলো চূড়ান্তভাবে।এমন প্রশান্তি তার অতীতকে মনে আসতে একটুও দিচ্ছে না।
#অতৃপ্তির_মাঝে_তৃপ্তিময়_সে
#লেখিকা- সালসাবিল সারা
পর্ব -১৪
______________
৩১.
–“পাষাণ হৃদয়ে ভালোবাসার সুপ্ত অনুভূতির বিচরণে কি ঠিক এতটাই শান্তি,এতটাই প্রশান্তি!শেষমেশ এই পাগল আদ্রিনের কাছে এই মনটা হারলো।মন তো আগেই সেই ছেলের প্রতি দূর্বল ছিলো।কিন্তু,এখন নতুন এই অনুভূতিতে মনটা সম্পূর্ণ যেনো তার হলো।”
তন্দ্রা হতে জাগতেই তৃপ্তি এমন ভাবনায় মশগুল।আজকাল দিন-রাত কিংবা সন্ধ্যা সকল ক্ষণেই তার মস্তিষ্ক কেবল আদ্রিনের খেয়ালে ভরপুর।ছেলেটার মাঝে কিছু তো আছে, যার দরুণ তৃপ্তি এমন মজলো ছেলেটার প্রতি।

এইযে আজ আটদিন যাবত আদ্রিন রাজশাহী ছিলো অফিসের কাজের তাড়নায় আর তৃপ্তি উদ্যত ছিলো তার দেখা পেতে। তাদের শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল,বেশ কিছুদিন পূর্বে আলেয়ার বাসা হতে দুজনে একসাথে ফেরার সময়।

গতকাল আদ্রিন ফিরেছে ঢাকা হতে।এতদিন তাদের দেখা না হলেও ফোনালাপে দুইজন মশগুল ছিলো সাধ্যমতো।এই আটদিন তৃপ্তির নিকট লেগেছে আট মাসের সমান।মেয়েটা কেমন চঞ্চল হচ্ছে আদ্রিনের এক ঝলক দেখা পাওয়ার আশায়।
বিছানায় বসতেই ঘাড়ের ডান পাশের রগে তীব্র ব্যথা অনুভব করলো তৃপ্তি।আবারও তার প্রেসার লো।মাথায় ভারী ভাব।গতরাত তার নিকট বিভীষিকাময়।বাবাকে দেখলেই তার মায়ের মৃ’ত্যুর রহস্যের জানার স্বাদ জাগে।যার ফলাফল কেবল ঝগড়া আর তীব্র রাগের বহিঃপ্রকাশ।রাতভর মেয়েটার আঁখি ছিলো অশ্রুসিক্ত।এমন বিষাক্ত রাতের অন্তিম ঘটাতে তার প্রয়োজন আদ্রিনকে।ছেলেটার এক চিলতে হাসি যেনো তৃপ্তির মনের ব্যামো দূর করার ঔষুধ। তামাটে বর্ণের সুদর্শন এই পুরুষে তৃপ্তির পরম সুখ নিহিত।আদ্রিনকে সাধারণত নিজ থেকে দেখা করার কথা একবারও বলা হয়েছে নাকি তার সন্দেহ।তাই নানান অজুহাতের ভিড়ে আদ্রিনের ঋণ শোধের ব্যাপারটায় তার মাথায় এলো।
জার্নি করে এসে নিশ্চয় ছেলেটা এখন ঘুমিয়ে।তার নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে নবীন প্রেমিকার মন সায় দেয় না।

পরক্ষণে সে মেসেজ পাঠালো আদ্রিনকে।
–“আপনি কি আজ ফ্রি,আদ্রিন?আমার সাথে একটু দেখা করবেন।আপনার ঋণ শোধের কিছুটা হলেও চেষ্টা করবো।”

সদ্য গোসল শেষে মোবাইল হাতে নিতেই উক্ত মেসেজ পড়ে আদ্রিনের অধর প্রসারিত হয়। ট্রাউজারের পকেটে একহাত গুঁজে বারংবার সেই মেসেজ’ই পড়ছে সে।ইদানিং আদ্রিন বুঝে তৃপ্তি তার এবং নিজের সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত।নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচাতে চায় মেয়েটা।শীতল হাওয়ার অবতরণ আদ্রিনের শরীর জুড়ে।তৃপ্তি যেদিন তাদের সম্পর্কের স্বীকৃতি দিবে সেদিন আদ্রিনের মনোভাব কেমন হবে তা নিয়ে বড্ড ভাবছে সে।আদ্রিন কি সজ্ঞানে থাকবে?নাকি অতি খুশিতে পাগল বনবে?মাথা চুলকায় সে। তৃপ্তির মেসেজের বিপরীতে আদ্রিন লিখে,
–“অবশ্যই ফ্রি।তুমি কোন সময়ে আসবে আমাকে জানাও।বাসা থেকে পিক করবো?”

মেসেজ পাঠিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে আদ্রিন।কেটে যায় বেশ সময়।মুখে তার স্পষ্ট আকুলতা প্রিয়তমাকে দেখার।অথচ এইযে গত সপ্তাহের প্রথম দিকে এক রাতেই আলেয়ার বাসা হতে তৃপ্তির বাসা অব্দি দিয়ে এসেছিল সে।তাও তৃপ্তিকে দেখার নেশা ইহকালে মিটবে বলে আদ্রিনের মনে হয় না।
তৃপ্তির সুপ্ত চেহারার কল্পনাতীত অবস্থায় ফোন এলো তার মেহেবুবার।ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এলো তৃপ্তির সুমধুর ক্লান্ত কণ্ঠস্বর।
–“শুনুন,আমাকে পিক করতে হবে না।আপনার অফিসের সামনেই আসবো আমি।এরপর দুজন মিলে কোনো নির্জন জায়গায় বসবো।যেমন ধরুন নদীর পাড় বা যেকোনো পার্ক।”
–“আজ আমি বাসায় আছি।বাসা থেকেই ডিরেক্ট যাবো।ইলেকশন আজ।তাই অফিসের ছুটি।”
আদ্রিনের সাবলীল ভাষা।
তবে তৃপ্তি ঘাবড়ে।ইলেকশন কথাটা তার মনেই ছিলো না।থাকবে কিভাবে!গতরাতে তার বাবা বাসায় আসার দরুণ তীব্র কথা কাটাকাটি হয় দুজনের।সেই তিক্ততা দূর করতে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আদ্রিনের সমেত দেখার উদ্দেশ্যে ঋণ শোধের জন্যে সে নিজ গুণে কিছু রান্না করবে।যদিও সেরা রাধুনী সে নয়।তবে চামেলীর সহযোগিতা নিয়ে কাজ শেষ করে সে।সবকিছু ঠিক করে তবেই সে আদ্রিনকে ফোন করলেও এখন সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
আদ্রিন ইনায়ার একমাত্র দুর্বলতার সম্বল।তাই আজকের দিনে নিশ্চয় কড়াভাবে বারণ আছে আদ্রিনের বেরুনোর।এছাড়াও ছেলেটার জীবনের ঝুঁকি থাকতে পারে আজ। তাই অনেক কিছু ভেবে সে জবাব দিলো,
–“ওহ আচ্ছা।তাহলে আজ বাদ দিন।অন্যদিন নাহয় ঋণ শোধ করে দিবো।”
তৈরিকৃত বিরিয়ানি এবং মুরগির তরকারির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তৃপ্তি।একমাত্র সেই জানে এইসব তৈরি করতে তার ঠিক কতটা কষ্ট হয়েছে। হাতের তালুতে তার ফোস্কা স্পষ্ট।অন্যদিকে তার কথার জবাবে আদ্রিন যেনো ক্ষেপে গেলো,
–“দেখা করবে বলেছো,আমি সব স্বপ্ন সাজিয়ে ফেলেছি।এখন আর ক্যান্সেল করা যাবে না।আমি দেখতে চাই তোমার ঋণ শোধের প্রচেষ্টা।আমি তোমার বাসার নিচে আসছি।”
–“শুনুন…”
–“*আসবো না আমি*,এটা ছাড়া অন্য কথা বললে বলো।”
আদ্রিন বড্ড রেগে।
–“এতদূর আসার প্রয়োজন নেই।আমি ভার্সিটি অব্দি আসছি।”
–“ওকে।”
আদ্রিন ফোন কাটলো।

তৃপ্তি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে।এই ছেলে জল’জ্যা’ন্ত অগ্নিকুন্ড। হুট করেই কেমন তেতিয়ে উঠে।চামেলীকে খাবার প্যাক করতে বলে তৃপ্তি গোসলে ছুটলো।
সুন্দর খয়েরী রঙের কামিজে তৃপ্তির রূপ মোহনীয়।হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়ায় নিজেকে পরিপাটি করে বেরিয়ে পড়লো সে।এতদিন পর আদ্রিনকে দেখার অনুভূতি কেমন যেনো অগোছালো লাগছে তার।নাকের অগ্রভাগে কিঞ্চিৎ রক্তিম আভা।তার লজ্জা পাওয়ার লক্ষণ।
ভোটের দিন ব্যাপক হুরুস্তুল রাস্তাঘাটে।খুব কষ্টে ভার্সিটি অব্দি রিক্সা ভাড়া করলো তৃপ্তি।
৩২.
আদ্রিনের বাড়ি উৎসবমুখর। কালো পাঞ্জাবি এবং সাদা সেলোয়ারে পরিপাটি সে। খরশান চোয়ালে তার খোঁচা দাড়ি।চুলের গোছা আজ জেলের আস্তরণে বন্ধী। হাতে ঘড়ি ঝুলিয়ে নামতেই সিঁড়িতে তার দেখা হয় ইনায়ার সমেত।ইনায়া মাত্রই ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে।পিছে আছে আদিবা এবং মিনা।আদ্রিনকে এমন তৈরি অবস্থায় রেখে কপট রাগ দেখায় ইনায়া,
–“কোথায় বেরুচ্ছো?”
আদ্রিন থামে।হাতের ওয়ালেট পকেটে পুরে জবাব দেয়,
–“কাজে যাচ্ছি।”
–“আজকে ভোট আদ্রিন।তুমি এইভাবেই ভোট দিতে যাও না।বাসায় ই থাকো এই দিনে।তাহলে?তুমি কি জানোনা,তোমার জন্যে ঠিক কতটা রিস্ক আজকে বেরুনো!”
আদ্রিন ঘাড় কাত করে বৃদ্ধা আঙ্গুল কপালে ঘেঁষে জবাব দেয়,
–“রুদ্র যাচ্ছে পেছনের গাড়ি করে। বডি গার্ডও নিবো সাথে।আগে জীবনের মায়া ছিলো না।এখন আছে।কারণ এখন জীবনের কিছুই এখন আগের মতো নেই।মেহেবুবার সাথে রঙিন পৃথিবীর সুখ অনুভব করতে চাই আমি।”
আর থামে না সে। লম্বা কদমে মায়ের কর্কশ ভাষার কথা এড়িয়ে চলছে।

–“নিশ্চয়ই সেই মেয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে ছেলেটা।”
আদিবা মুখ কুঁচকে বললো।
–“একবার এইসব ঝামেলা শেষ হোক।মেয়েটাকে আমি দেখে ছাড়বো।ছেলেকে কন্ট্রোল করতে না পারি,মেয়েটাকে তো পারবো।”
ইনায়ার চোখে মুখে ক্রোধ।চোখে কালো রঙের রোদ চশমার আড়ালে সে ক্রোধ সে নির্দ্বিধায় ঢাকলো।
.
–“রুদ্র,আমার গাড়ির পেছনেই থাকো।আর বডি গার্ডের গাড়ি থাকতে বলবে সামনে।”
আদ্রিন নির্দেশনা দিয়েই বসলো গাড়িতে।রুদ্র কেবল মাথা নাড়িয়ে নিজ দায়িত্বে উদ্যত হলো।

রাস্তায় আজ গাড়ির সংখ্যা মাত্রারিক্ত।তৃপ্তি দুইটা রিক্সা পরিবর্তন করেছে। জ্যামের কারণে রিকশাচালকেরা বিরক্ত।এখন সে হেঁটেই যাচ্ছে।গাড়ির জন্যে সামনে এগোনো দুষ্কর। রোদের তাপও কেমন গায়ে আগুন দেওয়ার মতো।তার উপর প্রেসার তার আপ ডাউন করছে।রান্নার চক্করে সকালের নাস্তাটাও মিস।শরীর যেনো আর চলছে না তার।।এক হাতে দুইটা ভারী বাক্স নিয়ে তৃপ্তি হিমশিমের মুখে।সে ছায়ার খোঁজে বড় গাছের নিচে দাঁড়ায়।আদ্রিনকে ফোন করলে সাথে সাথে রিসিভ করে সে,
–“এসেছো তুমি?আমি জ্যামে বসে আছি।মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার।”
–“আমি দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার ধারে।রিকশা চালকেরা কার,বড় গাড়ির চক্করে এগুতেই পারছে না।ভেবেছিলাম হেঁটে যাবো।কিন্তু এখন শক্তি পাচ্ছি না।”
তৃপ্তির কথায় ক্ষেপে উঠলো আদ্রিন,
–“বলেছিলাম তো বাসায় নিচে আসছি।সব কিছুতেই তোমার জিদ।রাস্তায় আজ যেমন ছেলেপেলে আছে, ওরা কি ভালো ছেলে?কেনো কথা শুনোনা আমার?”
আদ্রিনের ধমকে কোথাও যেনো র’ক্তক্ষরণ হলো তৃপ্তির।অন্যর ধমকের কড়া জবাব দিতে পারলেও আদ্রিনের ধমকে তৃপ্তির আঁখি ছলছল।সে কোনো জবাব না দিলে আদ্রিন পুনরায় প্রশ্ন করে,
–“ঠিক আছো তুমি?লোকেশন পাঠাও আমাকে।”

–“আমি ভার্সিটির সামনেই আসছি।আপনার কষ্ট করতে হবে…”
–“আমার কষ্ট আমি বুঝবো।তুমি বেশি বুঝো তাই মাঝ রাস্তায় বসে আছো।”
তৃপ্তি আদ্রিনের আর কোনো কথা শুনলো না।ফোন কেটে সে নিজ লোকেশন পাঠালো আদ্রিনকে।

চুপ করে মাথা নিচু করে রেখেছে তৃপ্তি।খানিক পূর্বে জ্যাম ছুটলেও কোনো সিএনজি বা রিক্সার হাদীস নাই।সব প্রাইভেট কার,মোটর বাইক এবং বড় ট্রাক। কয়েকদলের মিছিলও যাচ্ছে দফায় দফায়।কিছু ছেলে যেঁচে এসেছে তার সহিত কথা বলতে,তাদের দলে ভোট দেওয়ার আহ্বানে।এক পর্যায়ে তৃপ্তি বিরক্ত হয়েই বড় গাছটার আড়ালে গেলো। ঘাড়ের রগটা অতিরিক্ত ব্যথা করছে।তার উপর পেটটা এখনই যেনো ক্ষুদায় ব্লাস্ট হবে।চারিদিকে গাড়ির সাইরেনের শব্দ।এক হাতে ঘাড় চেপে নিঃশব্দে বসে আছে তৃপ্তি।
খানিক বাদেই মোবাইল বেজে উঠলে,আদ্রিনের কল দেখতে পেয়ে ফোন কেটে দেয় মেয়েটা।সে জানে আদ্রিন এইখানে পৌঁছে ফোন দিয়েছে।রাগের পাশাপাশি এই মেয়ে বড্ড অভিমানী।সে বেরিয়ে আসে গাছের আড়াল হতে।আদ্রিন ঠিক গাছের সম্মুখে।

তৃপ্তিকে দেখতে পেয়ে কেমন বিচলিত হলো আদ্রিন,
–“আসো।”
আদ্রিন হাত ধরতে চাইলে তৃপ্তি রাগ দেখায়,
–“আমি এইভাবেই যেতে পারবো।”
–“কিন্তু আমি পারবো না।”
আদ্রিন তৃপ্তির হাত হতে বাক্স নিয়ে নিজেই তার অন্য হাত চেপে ধরলো।গাড়িতে বসেও তৃপ্তি চুপ।আদ্রিন বাক্স তাকে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলে এইবার মেয়েটা মুখ খুলে,
–“বাক্সটা আপনার জন্যে এনেছি।”
–“আরে বাহ।রাখো তোমার কাছে।আমি নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিবো।”
আদ্রিন মিষ্টি হাসে।আর এতেই যেনো তৃপ্তির রাগ হাওয়া হয়।হাসলে ছেলেটাকে এমন অমৃত মনে হচ্ছে কেনো তৃপ্তির?
ঘাড়ে হাত দিয়ে মেয়েটা আবারও ব্যাথায় মগ্ন।আদ্রিন তা লক্ষ্য করে এক হাত তৃপ্তির হাতের উপরই রাখে,
–“কি হয়েছে?”
–“ঘাড়ের রগে ব্যথা।”
–“কেনো?”
আদ্রিন প্রশ্ন করে।
–“কিছুনা।প্রেসারে সমস্যা হয়তো।”
–“এতো অল্প বয়সে এমন সমস্যা?তুমি কি চিন্তিত কিছু নিয়ে?”
আদ্রিন ফের প্রশ্ন করে।
–“আপনি আমাকে বকেছেন তখন।আমি চিন্তিত না আমি রেগে।”
তৃপ্তি কথা ঘুরায়।সে চায় না,তার মনের কষ্টটা আদ্রিন জানুক।
–“মাইর দিই’নি এটাই বেশি।পরের বার থেকে আমার কথার অমান্য করার দুঃসাহস যেনো না দেখাও।”
আদ্রিন তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে জবাব দিলো।

বিশাল ফটকের উপর “আজম বাগানবাড়ি” লিখা দেখে তৃপ্তি আদ্রিনকে প্রশ্ন করে,
–“আমরা এইখানে যাচ্ছি!”
–“হুঁ।আমার ফ্রেন্ডের।তুমি চেয়েছো ওপেন প্লেসে বসতে।আজকে লোকাল জায়গায় বসা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।তাই এইখানে আসা।”
আদ্রিন গাড়ি পার্ক করে।বডি গার্ডের সদস্য এবং রুদ্র প্রধান ফটকের কাছেই আছে।এইখানে আদ্রিন একেবারে নিরাপদ।

সূর্যের তেজ কমে এখন পরিবেশ মেঘলা।হিম বাতাসের দুরন্তপনায় সবুজ গাছপালা এবং ফুলেল গাছগুলো বেশ মনোরম দেখাচ্ছে।
আদ্রিন তৃপ্তির হাত চেপে এখনো।বাগানের এক পাশে পাতানো চেয়ার টেনে তৃপ্তিকে বসার ইঙ্গিত দিলো।তৃপ্তি বসতেই হাতের বাক্স আদ্রিনের নিকট এগিয়ে দিলো বেশ যত্নে,
–“এটা আপনার জন্যে।আপনার ঋণ শোধের চেষ্টা।”
হাসিমুখে আদ্রিন বাক্স নেয়,
–“ডোন্ট সে,তুমি রান্না করেছো!”
–“জ্বী, আমিই করেছি। লাভির হেল্প নিয়ে।”
–“বাহ।খেয়ে দেখি।”
তৃপ্তি নিজ ব্যাগ হতে চামচ,পানির বোতল বের করে আদ্রিনকে দেওয়ার জন্যে হাত পেতে রাখলো।

তবে,আদ্রিন বেখবর।তার দৃষ্টি নিবদ্ধ তৃপ্তিতে। নাকটায় যদি স্বর্ণের নাকফুল,গলায় চেইন, হাতে বালা থাকতো,
এখন নিশ্চিত মেয়েটিকে তার বউ বলেই মনে হতো।আর এই মনে হওয়া আদ্রিন খুব শীগ্রই বাস্তবে রূপান্তর হওয়ার জন্যে ব্যাকুল মনে দোয়া করলো।তৃপ্তির এলো চুল সযত্নে কানের পিছে গুঁজে দিয়ে তার হাত হতে চামচ নিয়ে সর্বপ্রথম খাবার সে তৃপ্তির সম্মুখে ধরলো,
–“খাও।”
–“এই না। আপনার জন্যে এনেছি।”
তৃপ্তি হাত নাড়িয়ে মানা করলে,আদ্রিন তার সেই হাত ধরেই চেয়ার সমেত তাকে নিজের সন্নিকটে টেনে নিলো,
–“বেশি কথা বলে মেয়েটা।”
আদ্রিন ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করতেই এক গাল হাসলো তৃপ্তি।তীব্র খিদার জ্বালায় আর “না” করলো না।খাবার মুখে পুরে নিয়ে কিঞ্চিৎ প্রশান্তিও পেলো।যাক,খাবার ভালই হয়েছে।চামেলী হতে এইবার রান্নার কাজটা শিখার পণও করলো মনে মনে।
যেই চামচে তৃপ্তিকে খাইয়েছে আদ্রিন সেই একই চামচে আদ্রিনকে খেতে দেখে তৃপ্তির গাল লাল।লজ্জায় সে মাটিতে মিশে।তবুও নিজেকে সংবরণ করে বললো,
–“চামচ ধুয়ে এরপর না হয়!”
–“দুধের স্বাদ পানিতে মেটাচ্ছি আমি।তুমি বুঝবে না।”
আদ্রিনের চোখে স্পষ্ট কাতরতা। সেই নজরে ভস্ম হয় তৃপ্তি।কামিজ খামঁচে কোনো ভাবে সে বসে আছে।আদ্রিনের কথার আন্দাজ,বুঝতে বেগ পেতে হলো না তার।

কিয়ৎ বাদে হঠাৎই বৃষ্টির ঝিরঝির ভাব।তৃপ্তি খুশিমনে বৃষ্টিতে ভেজার জন্যে প্রস্তুত।তবে বাঁধ সাধে আদ্রিন,
–“ভেতরে বারান্দায় বসবে,আসো।”
তৃপ্তি বেঁকে বসে আদ্রিনের সিদ্ধান্তে,
–“না, না আমি ভিজবো’ই।”
হুট করেই পেছন ফিরে আদ্রিন কোমর চেপে ধরে তৃপ্তির।দুজনেই খুব কাছাকাছি।আদ্রিনের বুকে তৃপ্তির দুইহাত ঠেকে।লম্বা মানবের পানে তাকাতে তার ঘাড় উচুঁ হয়।পাঞ্জাবিতে আবৃত এই সুদর্শন লোকের বাহুডোরে এখনই নিজেকে আবদ্ধ করার লোভটা জেঁকে ধরেছে তৃপ্তিকে।পরক্ষণে সে নিজ ভুল বুঝতে পেরে ছুটতে চায় আদ্রিন হতে।আদ্রিন তাকে ছাড়লো না।বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা তৃপ্তির বাম গাল স্পর্শ করে নেশাক্ত কণ্ঠে বললো,
–“সেইদিনই বৃষ্টিতে ভেজার অনুমতি দিবো;যেদিন আমাদের সম্পর্কের একটা পবিত্র নাম হবে,যেদিন তোমার উপর আমার পুরো অধিকারবোধ থাকবে।তোমার রূপে তো আগেই ঘায়েল হয়েছি।আর তোমার ভেজা রূপে আমি মত্ত হলে তুমি’ই শেষ হবে।সেই একবার বৃষ্টিতে সিক্ত তোমাকে দেখে আমার জান যায় যায় অবস্থা হয়েছিল।আমার ভেতরকার জ্বলন্ত রূপ সম্পর্কে তোমার ধারণা নেই,মেহেবুবা।মাই হার্ট বার্নস।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here