তবুও তোমায় ভালোবেসেছি শেষ পর্ব

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৬(শেষ পর্ব)
বিছানার উপর একটা প্যাকেট রাখা আছে কিন্তু আমার জন্য যে শাড়ি গহনা কেনা হয়েছে সেগুলো আলমারিতে রেখে দিয়েছি। তাহলে নতুন এই প্যাকেটা কার? হয়তো রিনির হবে, ভুল করে আমার রুমে রেখে গিয়েছে। প্যাকেটা হাতে নিয়ে পা বাড়াই রুম থেকে বের হবার জন্য ঠিক তখনই মিশ্মি কেঁদে উঠে। আমার মেয়েরা আজকে আমাকে কাছে পায় নি তাই এখন আমাকে ছাড়তে চাইছে না সেটা বুঝলাম। কোলে নিয়ে একটু দোলাতে মেয়ে শান্ত হলো,

“আমার সোনা মা কাঁদছে কেনো? আজকে মা সময় দিতে পারে নি তাই সরি সোনা। তোমার খিদে পেয়েছে তো, মা এখুনি খাবার এনে দিচ্ছে ”

আমার কথা শুনে মিশ্মি হাসছে। আমার আর মিশ্মির হাসাহাসি দেখে ছোট মেয়ে তিশ্মি কেঁদে উঠলো।দুজনের মধ্যে কারো ভাগে ভালোবাসা কম পরতে পারবে না। বিছানায় বসে দুজনকে কোলে নিলাম ওমনি কান্না থেমে গেলো।
দুজনের খিদে পেয়েছে, দুধ গরম করে নিয়ে আসতে হবে। ওদের রুমে একা রাখা যাবে না,আবির ওয়াস রুমে আছে তাই মায়ের কাছে দিয়ে আসতে হবে।
মায়ের কাছে বাচ্চাদের রেখে দুধ গরম করে ওদের খাইয়ে রুমে আসতেই আবির বললো,
“আজকাল আমাকে কি ভুলে যাও? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি তোমার জন্য ”
“বারে ভুলে যাবো কেনো, আমার কাজ থাকে সেগুলো সেরে তো আসবো ”
“এতো কি কাজ করো হ্যাঁ? ”
“সংসারকে ভালোবাসলে কাজের অভাব থাকে না বুঝলে”
“হুম বুঝলাম, খুব সংসারী হয়েছো ”
“হ্যাঁ,তুমি বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দেও আমি একটু রিনির সাথে কথা বলে আসি ”
“রাত হয়েছে এখন আর কথা বলতে যেতে হবে না ”
“যেতে হবে ও হয়তো ভুলে আমাদের রুমে একটা ড্রেসের প্যাকেট রেখে গেছে সেটা দিবো”
“তুমি কি সিইওর ওটা রিনির ”
“হুম ”
“নাহ্ গো ওটা তোমার জন্য আমি স্পেশাল ভাবে এনেছি ”

প্যাকেটা খুলে দেখি দোকানের সেই শাড়িটি যেটা দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছিলো কিন্তু নীল ছিলো তাই পছন্দ ত্যাগ করে চলে এসেছিলাম তবে আবির কিভাবে বুঝলো এই শাড়িটা আমার পছন্দ হয়েছিলো?

” তুমি কি করে জানলে আমার এই শাড়িটা পছন্দ হয়েছিলো? তোমাকে তো আমও বলি নি?”
“নীল দেখে আমি বুঝেছিলাম তোমার কোনো কিছু পছন্দ হয়েছে কিন্তু তুমি পুরনো স্মৃতিতে ফিরে ওখান থেকে চলে এসেছো তাই শপিং শেষে তোমাদের বলেছিলাম আমার একটা কাজ আছে আর সেই কাজ হলো এটা। দোকান গিয়ে নীলের সাথে কথা বললাম তারপর জানতে পারি তুমি এই শাড়িটার প্রাইজ জিজ্ঞেসা করেছিলে তারপর বুঝতে বাকি ছিলো না যে এটা তোমার পছন্দ ”
“তুমি সত্যি খুব ভালো ”
“জানি তোমার নতুন করে বলতে হবে না ”
“ইসসসহ্ কে বলেছে, তুমি খুব পঁচা ”
“হাহাহাহ্ আচ্ছা বেশ আমি পঁচা আর তুমি তো ভালো তাহলে এই শাড়িটা বাসায় মেহমান আসবে সেদিন পড়বে”
“হুম পড়বো ”

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ হলো। এই এক সপ্তাহে রিনি অনেক পরিবর্তন হয়েছে আগের মতো অহংকার নিয়ে থাকে না, সবার সাথে মিলে মিশে থাকে। বাড়ির সমস্ত কাছে আমাকে সাহায্য করেছে। মায়ের বুদ্ধি আছে বটে সম্পত্তির লোভ দেখিয়ে মেয়েটাকে পরিবর্তন করে দিলো।আমার খুব ভালো লাগে সারাদিন সবার সাথে হাসিখুশিতে মেতে থাকতে। জীবন একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আবিরকে বিয়ে করে তাই এতো ভালো পরিবার পেয়েছি।
আজ বাসায় আত্মীয় সজনেরা এসেছে। আমি রিনিকে সাজিয়ে দিয়েছি আর রিনি আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে। আমার পুচকে সোনা মেয়েদের সুন্দর জামা পড়িয়েছি, দেখতে একদম পরীর মতো লাগছে।
সবার সাথে পরিচয় হতে শুনতে পেলাম একজন আরেক জনকে বলছে,
-এই বাড়িতে কেচ্ছা কেলেঙ্কারির অভাব নেই এক ছেলে বৌ মরার সাথে সাথে আরেক জনকে বিয়ে আবার আরেক ছেলে কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে।
-হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, বড় বৌ সম্পত্তির লোভে বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করেছে নয়তো এমন সুন্দর মেয়ে বিয়ে করে নাকি?
-হয়তো তাই আবার কে জানে কতোদিন এই সংসার টেকে।

আমি একটু তাদের দিকে এগিয়ে বললাম,
“এই যে আন্টি আপনাদের বলছি আপনার ঠিক বলেছেন আমি সম্পত্তির লোভে বিয়েটা করেছি নয়তো কেউ কি বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করে আর হ্যাঁ রিফাত যদি কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করলে আপনাদের সমস্যা কি? আপনাদের জানানোর জন্যই তো আজকে এতো আয়োজন করা হয়েছে আর হ্যাঁ আমার সম্পত্তি কি জানেন আমার দুই মেয়ে। ওদের জন্য আমার এই পরিবারের আসা। ”

আমি কথাগুলো একটু জোরে জোরে বলেছি আসেপাশের অনেকে শুনেছে। কেউ আমাকে দোষ দিতে পারে নি কারণ আমি তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছি।

আবিরের সাথে বিয়ের পর থেকে আমার সাথে তেমন ছবি ছিলো কিন্তু আজকে অনেক ছবি তুলেছি। আজকে আমার খুব বেশি খুশীর দিন। সারাজীবন এভাবে থাকতে চাই।

“এই ইভা শুনছো? ”
“হ্যাঁ বলো? ”
“তোমাকে খুব সুন্দর লেগেছে ”
“তোমাকেও, মনে হচ্ছিল তুমি নতুন বর ”
“হ্যাঁ আমি তোমার বর”
“ভালোবাসি”
“হুম আমিও ”
“কি বললে আবার বলো তো ”
“ভালোবাসি ”
বলে আবির আমাকে তার বুকে আমাকে আগলে রাখলো। শুরু হলো আমাদের পথ চলা। রাগ অভিমান ঝগড়া নিয়ে চলছে আমাদের সংসার।

অনেকটা সময় চলে গেলো,আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য এসেছে রিনির ছেলে তবে আরো একজন সদস্য আসবে খবরটা এখনো কাউকে দেই নি।
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী সাত বছর পূর্ন হলো আর আজই সুখবর জেনেছি কিন্তু মনে এই তো কিছু দিন আগেও মিশ্মি তিশ্মিকে কোলে নিয়েছি। ওদের সাথে খেলেছি, এখন ওরা কতো বড় হয়েছে। সারাক্ষণ আমার সাথে লেগে থাকে। মাকে ছাড়া এক মূহুর্ত ও থাকতে পারে না।
নতুন একটা শাড়ি পড়ে হালকা সাজে তৈরি হয়ে আবিরের সামনে দাঁড়াতে আমার শাড়ির আঁচলটা মাথার উপর দিয়ে বললো,
“এবার ঠিক আছে বৌ বৌ লাগছে ”
“একটা সুখবর আছে ”
“বলো ”
“মিশ্মি তিশ্মির সাথে খেলা করার জন্য একজন আসছে”
“সত্যি”
“হ্যাঁ গো সত্যি ”
“আমি খুব খুব খুশি হয়েছি,ভালোবাসি পাখি ”
“আমিও”
“তবুও তোমায় ভালোবেসেছি ”

অতীত ভুল সব কিছু নতুন করে সম্ভব কারণ জীবন কারো জন্য থেকে থাকে না।

[সমাপ্ত ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here