নিঃশ্বাসে তুই পর্ব -২২+২৩

#নিঃশ্বাসে_তুই |২২|

গোধূলি লগ্ন! ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে পুষ্প। সচরাচর এ ছাদে ওঠার পারমিশন সে পায় না। এখন তো প্রমি বাড়িতে তাই যা খুশি তাই করতে পারছে। নয়তো সাবিনা বেগমের ভ’য়ে রুম থেকে বের হতেও তটস্থ থাকতে হয় তাকে। বিষন্ন মনটা টেনেটুনে বয়ে বেড়ানো টা ইদানীং খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে তার জন্য। একাকিত্ব জীবনটা দ্বিগুণ একাকিত্বতায় ছেয়ে উঠছে যেন৷ চেয়েও আগের মতো সহজ হয়ে উঠতে পারছে না। অহমির সঙ্গে এত বছরের বন্ধুক্তে ধরিয়েছে ফাঁটল। তা অবশ্য ইচ্ছে করেই। অহমির সঙ্গে বন্ধুক্ত যতদিন থাকবে বিভোরকে ভুলতে পারাটা তার জন্য ততই দুঃস্বাধ্য। মূলত এজন্যই এই দূরত্ব। অহমির করুণ মুখশ্রীটা যতবারই মানসপটে দৃশ্যমান হয় ভেতরে ভেতরে ভেঙে চুরমার হয়ে পড়ে সে। কিন্তু উপায় কী? নিয়তি যে প্রতিকূলতায় ঘেরা। তার নিয়তিতে একাকিত্বই সেরা।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছন দিকে পা বাড়ায় পুষ্প। এখানেও মন টিকছে না। খুব করে ইচ্ছে করছে অহমি কে একটা কল করতে কিন্তু পুনরায় মনকে শক্ত করে হাঁটা ধরেছে ঘরের পথে। যেতে যেতে প্রথমেই কানে এলো সাবিনা বেগমের কন্ঠ। সাবিনা বেগমের ঘরের সামনে দিয়েই ক্রস করছিল পুষ্প। পুষ্প না চাইতেও একটু দাড়াল। ভেতর থেকে কিছু অপ্রত্যাশিত ধ্বনি বেড়িয়ে আসছে।

“আরেহ ওই আপদ বিদায় করতে পারলেই আমার শান্তি। এতগুলো বছর শুধু এই দিনটির অপেক্ষাতে ছিলাম। যাই হোক কাজের কথাই আসি। খুব শীঘ্রই আমি সব ব্যবস্থা করছি। ওই আপদ টাকে বিয়ে দিয়ে এখান থেকে তাড়াতে পারলেই সই। এমনিতেই সে আমার মেয়ের সুখে নজর দিয়েছে। আমি ঠিক টের পেয়েছি সেসব। মেয়ে আমার বড্ড সহজ সরল তাই তো আপন পর চিনতে পারছে না। দুধ কলা দিয়ে কা’ল’সা’প পুষছে। যে কিনা ওপরই সুখ কেড়ে নিতে চাইছে। কিন্তু আমি কিছুতেই তা হতে দেব না। আমার মেয়ের সুখের জন্য ওই মেয়েকে খুব শীঘ্রই বের করব এ বাড়ি থেকে। নয়তো দেখা যাবে ……. ”

আর কিছু শোনা বা বোঝার সাধ্য পুষ্পর হলো না। সে ঠিক বুঝতে পারছে সাবিনা বেগম কার কথা বলছেন এবং কী কী উদ্দেশ্য করে বলছেন। সাবিনা বেগম তুখোড় ধুরন্ধর মহিলা। তার চোখ এড়ায় না কোনোকিছুতেই। সে হয়তো বুঝে গিয়েছে পুষ্প বিভোরকে চায়। বা কিছু না কিছু তো ঠিকই টের পেয়েছেন। এখন নিশ্চয়ই পুষ্পকে বিয়ে দিয়ে তাড়াতে চাইছেন এ বাড়ি থেকে।

পায়ের জোর বাড়িয়ে এগোতে লাগল পুষ্প। চোখ জোড়া না চাইতেও ভিজে উঠছে। পথিমধ্যে দ্বিতীয় বারে তার পায়ের চলন থামল প্রমির ঘরের সম্মুখে। ভেতর থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি মধুর প্রেমালাপন। পুষ্পর টলমল চোখ বেয়ে বেহায়া অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ল গালে। হাতের উল্টো পিঠে সেই অশ্রুকণাটুকু মুছে নিল সে। এবার আর থামল না একেবারে দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দিল। হতাশা তাকে জেঁকে ধরেছে। নিজের দুঃখ প্রকাশের নূন্যতম স্থান টুকু তার অবশিষ্ট নেই। একা একাই গুমরে ম’র’তে হচ্ছে। কিছু সময় ভেবে অধর কোণে তাচ্ছিল্য হাসি ফুটাই সে। বিড়বিড়িয়ে বলল,

“আপনি ঠিকই করছেন। আমার মতো অ’ভা’গী’র জন্য এটাই পারফেক্ট হবে। সবার থেকে দূরে চলে যাব আমি। একেবারে দূরে। যাতে করে আমার ছায়া মা’রি’য়ে কারো অশুভ না হয়। অন্তত আপু ভালো থাকুক। আমি কখনোই ওই মানুষটির খারাপ করতে পারি না, আর না পারি হতে দিতে।”

ইয়ার ফাইনাল এক্সাম চলছে অহমির। গভীর প্রিপারেশনে ডুবে সে। প্রতিবারে পুষ্প আর সে একত্রে প্রিপারেশন নেয় কিন্তু এবারে পুরোটাই ভিন্ন। অহমির মনের কোণে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। চোখ জোড়া ভিজে ওঠে। ফোন হাতে নেয় ঝটপট। ডায়াল করে পুষ্পর নম্বরে। কিন্তু কী হবে করে বরাবরের মতো সেই নেটওয়ার্ক বিজি। পুষ্প হয়তো তাকে ব্লক লিস্টে রেখে দিয়েছে। জমিয়ে রাখা অশ্রু টুকু এবার গড়িয়ে পড়ল। অহমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। হাঁটুতে মুখ গুজে ডুকরে উঠল। ভাঙা গলায় আওড়াল,

“কেন এমন করছিস পুসি? তুই না বেস্টু। না না বেস্টু নয় বোন। তবে কেন এমন করছিস আমার সঙ্গে? তুই না আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারতিস না তাহলে আজ কী হলো? কেন আমি তোর ব্লক লিস্টে গেলাম বল তো? ফোনের মতো করে কী তোর মন থেকেও ব্লক হয়ে গেলাম আমি।”

নিজের কথা শুনে নিজেই আঁতকে উঠল অহমি। বুক চেপে কেঁদে উঠল আরেকদফা। আপনজনদের অবহেলা যে কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানোর মতো নয়। অকপটে বইপত্র গুছিয়ে এককোণে সরিয়ে রাখল সে। গুটিশুটি মে’রে শুয়ে পড়ল বিছানায়।

ফোনের কর্কশ আওয়াজে ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে ওঠে অহমি। আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কী হলো। সৎবিৎ ফিরতেই দ্রুত ফোন হাতে তুলে। হামি দিতে দিতে ফোনের স্কিনে তাকায়। মুহুর্তেই এক চিলতে হাসির রেখা মেলে তার অধর কোণে। দ্রুতই রিসিভ করে কল। ফোন কানে চেপে সালাম জানায়। ওপাশ থেকে সালামের জবাব শোনা যায়। পরক্ষণেই ধ্রুব শুধায়,

“এক্সাম চলছে তো?”

“হু”

“প্রিপারেশন কেমন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“ওকে তো পড়ছ তো?”

এ পর্যায়ে অহমি আমতা আমতা করল। ধ্রুব বুঝতে পারল অহমি পড়ছিল না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“তো কী করছিলে?”

অহমি পুনরায় আমতা আমতা করে বলল, “একটু চোখ টা লেগে গিয়েছিল। তার আগে কিন্তু পড়ছিলামই।”

“ওকে! আবার স্টার্ট করো।”

“হুম।”

“বাই”

বরাবরের মতো ধাপ করে কলটা কেটে দিল ধ্রুব। অহমি কোনো দিরুক্তি করার সুযোগ পেল না। কিঞ্চিৎ হতাশ হল সে। মন খারাপও হল বটে। ধ্রুব এক্সাম ব্যতিত কিছুই জিজ্ঞেস করল না আর। অহমির ছোট্ট মনে অভিমান জমলো। মুখ ভার করে উঠে গেল তাহমিনা বেগমের কাছে। তাহমিনা বেগম তখন রাতের খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত। সেখানে গিয়ে তেমন একটা সুবিধা হল না তার। তাহমিনা বেগমকে একটা নুডলস রান্না করে দিতে বলে সে ছুটল অর্পার কাছে। ধ্রুবর নামে অভিযোগ জানাতে অর্পার চেয়ে বেস্ট আর কেউ হবে না। মনে মনে ভেবে সে মতেই এগোল অহমি।

বিছানায় এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে পুষ্প। তার পাশেই পড়ে আছে দুটো বই। একটি নোটস আর একটি মেইন বুক। পুষ্প বিরক্ত ভঙ্গিতে সেদিক পানে চেয়ে আছে। শত চেষ্টার পড়েও তার মস্তিষ্কে এসব কিছুই ঢুকছে না। আগামীকাল এক্সাম হলে কী লিখবে কে জানে? আচ্ছা, সে কী ডিপ্রেশনে ভুগছে? মানসিক রোগী হয়ে পড়ছে? পরক্ষণেই একটু আওয়াজ তুলে তাচ্ছিল্য ভরা হাসি হাসল সে। এমনটা হলেও কার কী? সকলে তো ভালোই থাকবে।
কী ভেবে সহসা বিছানা ছেড়ে লাফ মে’রে উঠল সে। আশেপাশে খুঁজে ফোনটা হাতে নিল। গ্যালারি খুঁজে বের করল একটা ফোল্ডার। যেখানে সংরক্ষিত ছিল বিভোরর শত শত ছবি যা চুপিসারে নিজের ফোন ক্যামেরায় বন্দী করেছিল পুষ্প। আজ সময় এসেছে সেগুলো চিরতরে বিদায় করার৷ একে একে সবগুলো ছবি ডিলিট দিল পুষ্প। ডিলিট শেষে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে দিল। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে যখন চোখ খুলল অবাধ্য চোখের পানি আপনা হতেই গড়িয়ে পড়ল দু ফোটা।

.
চলবে,#নিঃশ্বাসে_তুই – |২৩|

চোখের পলকে এক্সাম গুলো শেষ হয়ে গেল অহমির। এক্সাম হলে পুষ্পর সঙ্গে দেখা হয়েছে প্রতিদিন কিন্তু কথা হয়নি। পুষ্প মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে সর্বদা। ব্যথাতুর হৃদয়ে এক্সাম শেষ করেছে অহমি। আজ তাদের ফলাফল ঘোষণা হবে। বিভোরকে সঙ্গে নিয়ে কলেজের পথে যাত্রা ধরেছে সে। বেড়নোর পূর্বে ধ্রুবর সঙ্গে কথা বলে নিয়েছে।অভ্যাস বসত পুষ্পকেও কল করেছিল কিন্তু ফলাফল সেই শূন্য। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিভোরের সঙ্গে বাইকে চেপে রওনা হয় সে।

কলেজে ঢুকতেই অদূরে চোখ যায় অহমির। পুষ্প দাড়িয়ে সেখানে। অহমি সঙ্গে দৃষ্টি মিলতেই চোখ সরিয়ে নিল। বিভোর লক্ষ্য করে নি সেসব। সে বাইক পার্ক করে অহমির হাত টেনে ভেতরে ঢুকে গেল। পুষ্প অন্য দিকে সরে গেল।

ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারেও অহমি ক্লাস টপার। কিন্তু পুষ্প? পুষ্পর বেশ অধঃপতন ঘটেছে। অহমির পরেই সর্বপরি যে মেয়েটার স্থান থাকত আজ সে আরও দশ জনের পরের আসনটি দখল করেছে। অহমি হতবাক। এসব হচ্ছে টা কী। সেই সঙ্গে বিভোরও কিঞ্চিৎ অবাক। কিন্তু যার সঙ্গে ঘটল এসব সেই নিরুদ্বেগ। স্বাভাবিক ভাবেই মার্কশীট হাতে নিয়ে ক্লাস রুম ছাড়ল পুষ্প। তার মুখভঙ্গি এই যে, এমনটা হওয়ারই ছিল। টিচাররাও তার এই অবনতি মেনে নিতে পারছে না। ক্রমাগত আফসোস করে করে গলা শুকিয়ে ফেলছে।

মার্কশীট হাতে বাড়িতে প্রবেশ করল পুষ্প। প্রমির একটু কাজ ছিল নয়তো সেই আজ পুষ্পর সঙ্গে যেত। পুষ্প বাড়িতে ফিরতেই প্রমি বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে এসে মার্কশীট হাতে নিল। মুহুর্তেই তার সকল উচ্ছ্বাস ধুলোয় লুটোপুটি খেতে শুরু করল। পুষ্পর পজিশন এতো নিচে কী করে নামল। প্রমি কথার খেই হারিয়ে অবিশ্বাস্য নয়নে চেয়ে আছে পুষ্পর দিকে। পুষ্প অস্বস্তি বোধ করছে। কোনো রকমে ইনিয়ে বিনিয়ে প্রমিকে পাশ কাটিয়ে সে চলে গেল নিজের ঘরে। প্রমি বিষ্ময় নিয়ে দেখল শুধু পুষ্পকে। বোনটা তার কেমন জানি হয়ে উঠছে। কে এমন হচ্ছে? কীসের জন্য হচ্ছে? পুরোটাই অজানা তার।


রাতে খাবার শেষে সাবিনা বেগম প্রমির সঙ্গে পুষ্প’র বিয়ের ব্যাপারে কথা তুলেন। প্রমি তো সেই রেগে যায়। যেখানে গ্রাজুয়েশন পড়েও সে এখনো বিয়ে নিয়ে ভাবছে না সেখানে ইন্টার পাস করেই কী করে পুষ্পকে বিয়ে দেওয়ার কথা বলছে তার মা। প্রচন্ড রেগে মায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয়েছে সে। এক পর্যায়ে সাবিনা বেগম নিজের ক’স’ম দিয়ে মেয়ের মুখ বন্ধ করেন। প্রমি স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। মায়ের প্রতি তীব্র ঘৃ’ণা’য় কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে যায় সে। পুষ্প অগোচরে সবকিছুই শুনে নেয়৷ তাচ্ছিল্য হাসি হাসে। তার কিছুই বলার নেই। আর কিছু বললেও সাবিনা বেগম তা শুনবেন না। সাবিনা বেগম সিদ্ধান্ত নেন স্বামীকে জানাবেন না এ বিষয়ে কিছু। নয়তো মেয়ের মতো তিনিও বেঁকে বসবেন নিশ্চয়ই।

“আমার পিচ্চি বউটা কী করছে?”

“কে কার বউ আমি কারো বউ নই।”

“ইস তাহলে বোধহয় রং নম্বরে ডায়াল করে ফেলেছি তাই না। আচ্ছা তবে রাখছি।”

“এএএএএএইইই দাড়ান দাড়ান। আচ্ছা বজ্জাত লোক তো আপনি। বললাম অমনি রেখে দিচ্ছেন?”

“তো কী করব? পরনারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে আমার পিচ্চি টা আবার খুব রেগে যাবে। আমি আবার পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক। এসব ঝামেলায় আমি নেই।”

“ইচ্ছে করছে আপনার সবগুলো চুল টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলি। একে তো এই কতদিন ধরে ঠিকভাবে কথা বলেন না এখন আবার কোথায় আমার মান ভাঙাবেন তা না উনি এখন ফাজলামি করছেন। হাতের কাছে পাই একবার মজা দেখাব আপনার।”

“তাই.. তো কী করবে হাতের কাছে পেলে? চুমু খাবে?”

“আপনাকে তো আমি……. ”

হাত মুষ্টিবদ্ধ করে পেছনে ফিরতেই চমকে ওঠে অহমি। এ কী! এ তো সত্যি সত্যি ধ্রুব তার সামনে উপস্থিত। দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে ফোন কানে ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অহমি বিষ্ময়ান্বিত চক্ষু জোড়া দেখে ধ্রুব এক ভ্রু উঁচিয়ে ইঙ্গিত করল। যার অর্থ ‘কী’। অহমি ততক্ষনাৎ একবার কানে চেপে রাখা ফোনের দিকে তো এক ধ্রুবর দিকে তাকাল। ফোনটা ঝট করে কান থেকে নামিয়ে তড়িৎ গতিতে প্রশ্ন ছুড়ল,

“আপনি এখানে কী করে?”

ধ্রুব সাবলীল ভঙ্গিতে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

“ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়! ম্যাডাম।”

অহমি কিছু টা স্বাভাবিক হলো। এই লোক সোজা উত্তর দেবে না তার জানা। তাই অহেতুক এসব জিজ্ঞেস করে এনার্জি লস করার কোনো মানে নেই। অহমিকে চুপ থাকতে দেখে ধ্রুব একদম ওর সম্মুখে এসে দাড়াল। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দু’হাতের আলতো স্পর্শে অহমির মুখটা আবদ্ধ করে নিল। দুজনেরই শীতল দৃষ্টি। তখনই ধ্রুবর নিবিড় আলাপণ,

“এতো দিন তোমার এক্সামের কথা ভেবে বেশি কথা বলতে পারিনি৷ তুমি কী ভেবেছ আমার কষ্ট হয়নি? তোমার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট আমার হয়েছে কিন্তু নিজেকে ধরে রেখেছি শুধু এই ভেবে যে তোমার রেজাল্ট খারাপ আসবে। এখন আর কোনো বাঁধা নেই। রিল্যাক্সে প্রেম করব।”

শেষোক্ত কথাটিতে লজ্জা পেল অহমি। ধ্রুবর বন্ধন থেকে সরে এসে পেছন মুখী হয়ে দাড়াল। কিন্তু লাভ হলো কী? সেই তো আবার ঠিকই ধ্রুব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল ততক্ষণাৎ। অহমির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

“আমার থেকে নি’স্তা’র নেই তোমার। ভালবাসা দিয়ে একেবারে মে’রে ফেলব তোমায়।”

অহমি লজ্জা পেল প্রচুর। লজ্জা নিবারণে ব্যবহার করল সেই ধ্রুবকেই। ঘুরে গিয়ে মুখ লুকালো ধ্রুবর বক্ষে। পুনরায় শোনা গেল ধ্রুবর বরফ কন্ঠ,

“বাড়িতে কিন্তু কেউ নেই। অর্পাই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ভাবছি আজকে একটু বেহায়া বর হব। ভীষণ ভীষণ বেহায়া।”

অহমি শক্ত করে খামচে ধরল ধ্রুবর পরিধেয় বস্ত্র। ধ্রুব আর্তনাদের ভঙ্গিতে বলল, “ইস এখনি তোমার ঐতিহাসিক নকের খামচি খেতে হচ্ছে এরপর না জানি কী করবে। হয়তো খামচে আমার পিঠের মাং’সই তুলে নেবে।”

অহমি ধ্রুবর কলার টেনে ধরল। চোখ রাঙিয়ে বলল, “অসভ্য একটা! মুখে কোনো লাগাম নেই।”

ধ্রুব অহমিকে সহ বিছানায় গিয়ে পড়ল। অহমির ওড়নার খোট টেনে ধরে বলল, “লাগাম সবসময় দেখাতে নেই! জান। কারো কারো কাছে লাগামহীন হতেই হয়।”

আজ পুষ্পর বিয়ে। অহমি সবেই কলেজ থেকে অর্নাসে এডমিশন কম্পিলিট করে বাড়ি ফিরল। বাড়িতে ঢুকতেই এমন অপ্রত্যাশিত খবর পেয়ে সে ভীষণ শকট। পুষ্প কলেজে ভর্তি না হয়ে বিয়ের পিরিতে বসছে? হাউ ফানি। অহমির বিশ্বাস যোগ্য মনে হলো না কিছুই। কিন্তু পরক্ষণেই তাহমিনা বেগম যখন বলল সব সত্যি তখন একপ্রকার মানতে বাধ্য হলো। এই বিষয় টা নিয়ে বিভোরের মনেও সন্দে’হ ছিল। অবশেষে সব স’ন্দেহ দূর করে প্রমি বলে দিয়েছে তাকে আসল সত্যি। সাবিনা বেগমের স্বা’র্থ’পরতার গল্প। যে শুনছে সেই আফসোস করছে। কতই বা বয়স মেয়েটার অথচ এখনই বিয়ে। অহমিদের সকলের নিমন্ত্রণ আছে ওই বাড়িতে। সবাইকে যেতে হবে। দুপুরে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করা হবে। একমাত্র বিভোরের পরিবার বিধায় অহমিদের নিমন্ত্রণ করেছেন সাবিনা বেগম। নয়তো কখনোই ওদের আসতে বলত না। কারণ তিনি খুব ভালো করেই জানেন পুষ্পকে ওরা সকলে খুব ভালবাসে। আর পুষ্পকে যারা ভালবাসে একপাক্ষিক ভাবে সাবিনা বেগমের চোখে তারাও বি’ষে’র সমতুল্য। অহমি ছুটল তৈরি হতে। হ্যাঁ সে যাবে। পুষ্পকে আটকাতে হবে। আজ সব প্রশ্নের উত্তর তাকে নিতে হবে। পুষ্প কেন সবকিছু এমন উলটপালট করে দিচ্ছে। কেন, কেন, কেন? সবকিছুর উত্তর তার আজকে চাই ই চাই।


চলবে,
✍️অহমিকা মুনতাহাজ নিশি

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here