#ধূসর_রঙের_রংধনু – ১৪
#তাসনিম_তামান্না
ফুয়ান কেবল ই ফ্রেশ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়েছে ওমনি ফোন বেজে উঠল। ফুয়ানের ইচ্ছে হলো না ফোন ধরতে ১বার নয় ২বার নয় ৩ বারের বার ফোন বাজতেই ফুয়ান একপ্রকার বিরক্তি নিয়ে ফোন তুলে কানে দিতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝ মেশালো কণ্ঠে বলে উঠলো
— এই ছেলে এই কী সমস্যা তোমার? এতোক্ষণ লাগে ফোন ধরতে? এর পরের বার থেকে ফোন বাজার দুই সেকেন্ডে মধ্যে ফোন ধরবে…
— কে?
ফুয়ানের কথার উত্তর না দিয়ে মৃত্তিকা বলল
— বাই দ্যা ওয়ে কাজের কথায় আসি
— কিসের কাজের কথা?
— শুনুন আপনার ঠোঁ’টের ভিটামিন চু!মুর অভাবে আমি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছি কি করা যায় বলুন তো?
ফুয়ান অপরিচিত নম্বর থেকে অ*শ্লী*ল কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল
— হোয়াট? কে আপনি? চেনা নেই জানা নেই ফোন দিয়ে কি সব বলছেন?
মৃত্তিকা লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল
— কি বলছেন? আমাকে চিনেন না? আমি আপনার বিয়ে না করা হবু বউ!
ফুয়ান কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বলল
— আই থিংক আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে এটা রং নম্বর
— আপনি ফুয়ান আমি ঠিক জায়গায় ই ফোন দিয়েছি
ফুয়ান বিস্ময় নিয়ে চিৎকার করে উঠে বলল
— হোয়াট?
— ছিঃ ছিঃ নিজের বউকে চিনতে পারেন না? ছিঃ আমি লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না
ফুয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বোঝার চেষ্টা করলো চেনা কেউ কি-না হঠাৎ ই অস্ফুটস্বরে বলল
— মৃত্তিকা…
— এতোক্ষণ পর?
— আপনি আমাকে ফোন দিয়েছেন? কোনো দরকার কি?
— কেনো কোনো দরকার ছাড়া কি ফোন দেওয়া যাবে না?
— দরকার না থাকলে কেনোই বা ফোন দিবেন?
— কেনো প্রেম করতে…
ফুয়ান কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল
— আচ্ছা আপনি এমন কেনো বলুন তো
— কেমন? ওহ আই নো আ’ম লুকিং সো কিউট…
— আমি আপনার স্বভাবের কথা বলছি আপনার বাবা-মা কে দেখেছি ওনারা এমন নয় আপনি এমন কেনো?
— শুনুন আমি কারোর মতো না আমি আমার মতো আমি কাউকে কপি করতে পছন্দ করি না তাই অযথা এটা নিয়ে টেনশন নিয়ে লাভ নাই
ফুয়ান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
— আচ্ছা রাখছি কথা বলার মতো আমার এনার্জি নাই
— আচ্ছা শুনুন একটা কথা…
— বলুন…
— আপনার কণ্ঠটা না নেশা ধরানোর মতো আপনি ফোনে আমি আর আপনার আম্মু ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবেন না তাহলে সে প্রেমে পড়ে যাবে যেমন আমি আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি এটা কিন্তু অনুরোধ না ইট ইস মাই অর্ডার
কথা গুলো এক নাগাড়ে বলে মৃত্তিকা ফোন কেটে দিলো। ফুয়ান ফোন কানে নিয়ে বোকার মতো বোঝার চেষ্টা করলো কয়েক মিনিট মধ্যে কথা বুঝতে পেরে নিভৃতে হেসে বিড়বিড় করে বলল
— পাগল না-কি…
রাতেরবেলা ডিনার শেষে করে যে যার রুমে এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে না-হয় পড়ছে না হয় ফোন টিপছে। মাহতাব সাহেবের রাতের খাওয়ার পর চা খাওয়া অভাস চা-টা শেষ করে বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখলো মালিহা জামা-কাপড় গোছাচ্ছে। মাহতব বেডে আরাম করে বসে বলল
— কি গো কি হলো হঠাৎ তোমার? কেমন চুপ মেরে গেছো
— কই কিছু না তো
— মেয়েকে নিয়ে টেনশন করছ? বাচ্চা বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে
— অন্যর মেয়েকে নিয়ে আমার আবার কিসের টেনশন
মাহতাব থমকানো চোখে বিস্ময় নিয়ে বলল
— মালিহা কি বলছ তুমি তোমার মাথার ঠিক আছে কিসব ভুলভাল বকছ
— ভুলভাল কি যেটা সত্যি সেটাই বলছি
মাহতাব উঠে এসে মালিহার বাহু ধরে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলল
— কি হয়েছে মালিহা সত্যি করে বলো
মালিহা ছলছল চোখে মাহতাবের দিকে তাকিয়ে বলল
— মৃ-ত্তি-কা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে দেখ
— কি বলছ
— ঠিকি বলছি। আজ জানো আমি মৃত্তিকার মতো দেখতে একটা লোককে দেখেছি যেকেউ দেখলে বলবে ওরা বাবা মেয়ে ওরাও মৃত্তিকাকে দেখেছে কেমন করে তাকিয়ে ছিল জানো দাউদ ও আমাকে প্রশ্ন করেছে মৃত্তিকা ঔ লোকটার মতো দেখতে কেনো? আমি ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে এসেছি …
মাহতাব দু কদম পিছিয়ে যায়। মালিহা থেমে আবার বলে
— ঐ লোকটা মৃত্তিকাকে নিয়ে যাবে দেখো আমার কোলটা কি আবার শূন্য হয়ে যাবে? মৃত্তিকা আমাদেরকে ভুল বুঝবে না তো।
মাহতাব নিজেকে সামলিয়ে বলল
— আমার মেয়ে যতই ছেলেমানুষী করুক না কেনো ও বুঝবে আমরা কোনো অন্যায় করি নি। তাছাড়া আমরা ওকে আশ্রম থেকে এনেছি
— রক্তের সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক টিকে না গো
— তোমার এ কথা ভুল প্রমানিত করে দিবে আমার মেয়ে দেখে নিও
— এতোটাও বিশ্বাস করো না বিশ্বাস ভেঙে গেলে কষ্ট পাবে
— ও আমার বিশ্বাস ভাংবে না এটা আমার বিশ্বাস
— ঘুমিয়ে পড়ো এসব নিয়ে টেনশন করে লাভ নেই যা হবার দেখা যাবে
— এই কথাটা নিজে মানো তারপর আমাকে বলো
— আমি নিজে মানছি
— মানছ বলেই কি এমন মনখারাপ করে আছো?
মালিহা উত্তর দিল না। নিজের মতো কাজ গুলো করে শুয়ে পড়লো। মাহতাব শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। উঠে মৃত্তিকার রুমে গেলেন মৃত্তিকা কখনো দরজা লাগিয়ে ঘুমায় না। রুমের কমলা রঙের ড্রিম লাইটের মৃত্তিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
— তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি ভাবতে পারি নি কখনো। কিন্তু তুই তো চলেই যাবি কীভাবে থাকবো বলত আমরা? এতো মায়া, ভালোবাসা ছাড়িয়ে চলে যেতে কষ্ট হবে না তোর? এই পাগলি মেয়েটা চলে গেলে কে আমাকে আব্বু বলে ডাকবে বলত? তুই ছাড়া তো আর কেউ এতো মিষ্টি করে আব্বু বলে ডাকে না রে মা।
মাহতাব আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলো।
রুদ্র ল্যাপটপে কাজ করছিল। নিপা এসে বলল
— রুদ্র আমার মেয়েটার কোনো খোঁজ পেলে না?
— নাহ!
— তোমার তো কোনো গা দেখছি না।
রুদ্র কাজ করতে করতে বলল
— কাল অনেক বার ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু লোকটার ফোন অফ
— কিহ!! তাহলে কি আমার মেয়েটাকে ফিরে পাবো না?
— পাবে। আমাকে কাজে যেতে হবে নিপা খেতে দাও।
নিপা চিন্তিত হয়ে চলে গেলো। রুদ্র ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো
নিত্য দিনের মতো সকালে যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে রেডি হচ্ছে। মৃত্তিকা নিচে এসে বলল
— আম্মুউউ মেরি মা খাওন দিবা নি
মালিহা রেগে বলল
— মৃত্তিকা কতবার বারন করেছি এভাবে কথা বলবে না
— আচ্ছা আচ্ছা দাও আমার কোচিং আছে
— বাদ দিবো কেনো? তুমি বললে কেনো?
মৃত্তিকা মালিহার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
— আচ্ছা সরি তো মাই ওয়ার্ল্ড
— সরো আদিখ্যেতা দেখাতে আসবে না
— আচ্ছা আমার দেরি হচ্ছে তোমার জন্য স্যারের কাছে পানিশমেন্ট পেতে হবে
— পানিশমেন্ট দেওয়া উচিত যেই উচ্ছৃঙ্খল হচ্ছ
— এমন পাশান তুমি? দাঁড়াও আব্বুকে নালিশ করছি। আব্বুউ আব্বুউউ
চিৎকার দিতে দিতে ওপরে চলে গেলো। ফাইল গুলো গোচ্ছাছিলেন তখনি মাহতাবের ফোন বেজে উঠল ফোন নিয়ে আননোন নম্বর দেখে ধরবে না ধরবে না করেও কোনো ইম্পর্টেন্ট ফোন ভেবে ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বলল
— মাহতাব সাহেব বলছেন?
— জী কে আপনি?
— আপনার সাথে দরকার ছিল
— বলুন
ওপাশ থেকে কিছু বলার আগে মৃত্তিকা বলল
— আব্বু তোমার বউটা না বড্ড বাড়াবাড়ি করছে। এমন করলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাবো।
মাহতাব ঘাবড়ে গিয়ে বলল
— কেনো আমার মা কি হয়েছে
— কি হয়নি সেটা শোনো কাল থেকে তোমার বউটা আমাকে বকতেছে শুধু একটুও আদর করছে না
মালিহা প্লেট হাতে আসতে আসতে বলল
— তোমাদের আদিখ্যেতা আমি দেখতে পারছি না এই মেয়ে এদিকে আয় কোচিং আছে না তোর এখন তোর বাপের সাথে নিয়ে নাটক করার সময়?
— দেখছ আব্বু শুধু দেখো
চলবে ইনশাআল্লাহ