#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
দরজা খোলার পর ইউনির্ফম পরিহিত হানকে দেখে কিছুটা চমকে গেলো এনাক্ষী। তার থেকেও বেশি অবাক হলো তার পেছনে থাকা আরো কিছু পুলিশ অফিসারদের দেখে। অজানা ভ’য়ে এনাক্ষীর শরীর কাঁপতে লাগলো। তবে সে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো একটু।
” ইনস্পেক্টর হান আপনি এই সময়ে? আর আপনার সাথে ওনারা কেন এসেছেন?”
এনাক্ষীর প্রশ্ন শুনে হানের মুখশ্রী আরো গম্ভীর রুপ ধারণ করলো।
” তোমাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে এনাক্ষী।”
হানের কথা শুনে এনাক্ষীর হার্ট অ্যা’টাক করার উপক্রম।
” কিন্তু কেন? আমি কি করেছি?”
” সেটা তুমি থানায় গেলেই জানতে পারবে। আপাতত কোন সিনক্রিয়েট না করে চুপচাপ আমাদের সাথে চলো। না হলে আমাদের জোড় করে তোমাকে নিয়ে যেতে হবে।”
এনাক্ষী ব্যাগটা রেখে বেরিয়ে যাবে কিন্তু অন্য একটা পুলিশ অফিসার তার ব্যাগটাকে উঠিয়ে নিয়ে হানের পেছন পেছন চলে গেলো। এনাক্ষী দরজা লক করে চুপচাপ মেয়ে অফিসারটার সাথে গাড়িতে উঠে বসলো। সে এখনো বুঝতে পারছেনা সে করেছেটা কি। কালকের হান আর বর্তমানের হানের মধ্যে বিশাল পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছে এনাক্ষী। কালকেও তো তার সাথে হানের দেখা হয়েছিলো কই তখন তো সবকিছু একদম স্বাভাবিক ছিলো। তাহলে এক রাতের মধ্যে কি এমন হলো সেটাই এনাক্ষী বুঝতে পারছেনা।
.
.
” সেইদিন ঠিকমতো বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছিলে?”
ফিলিক্সের কথা শুনে হাঁটা থামিয়ে দিলো হিতোমি।
” হুম পেরেছিলাম বলেই তো এখন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।”
” বড় বেশি কথা বলো তুমি।”
” তাই নাকি? আমি তো জানতাম না। তা কি মনে করে এতোদিন পর জিজ্ঞেস করতে এলে যে আমি ঠিক মতো পৌঁছাতে পেরেছি কিনা? এতোদিন বুঝি তোমার এই কথাটা মনে পড়লো।”
” ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করতে এলাম। না হলে দেখা যাবে কেউ মনে মনে ভেবে বসে থাকবে আমার কোন মায়াদয়া নেই।”
” আসলেই…..” পুরো কথাটা শেষ করতে পারলোনা হিতোমি। ফোনের টুংটাং শব্দ শুনে মুখের কথা তার মুখেই রয়ে গেলো। কিছু সেকেন্ড ফোনের দিকে তাকিয়ে ব্যাগ ধরে দৌড়ে চলে গেলো হিতোমি। ফিলিক্স পেছন থেকে বেশ কয়েকবার ডাকলেও হিতোমি ফিরে তাকালোনা।
” এর আবার কি হলো?”
.
.
একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে এনাক্ষীকে। তার একদম সামনে হান এবং তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে আরো ৩/৪ জন পুলিশ। সবার মুখে গম্ভীরতার ছাপ স্পষ্ট। একজন অফিসার তার ব্যাগটা চেক করে তা একপাশে রেখে দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। কেউ কিছু বলছেনা দেখে প্রথমে এনাক্ষীই প্রশ্ন করলো,
” আমাকে আপনারা কেন এখানে নিয়ে এসেছেন? মাঝে অনেকদিন ক্লাস করতে পারিনি আর এখন আপনারা কোন কারণ ছাড়াই ধরে নিয়ে এসেছেন। আমার অপ’রা’ধটা কি আমি জানতে পারি?”
” তুমি পার্ক জিসুর বাড়িতে কেন গিয়েছিলে?” গম্ভীরভাবেই বললো হান। তার প্রশ্ন শুনে এনাক্ষীর মুখের ভাব পরিবর্তন হয়ে গেলো।
” পার্ক জিসু? এটা আবার কে?”
” স্যার আপনি আমাকে পাঁচটা মিনিট সময় দিন। এর থেকে কথা আমি বের করছি।”
” এনাক্ষী তুমি আমার সিস্টারের ফ্রেন্ড, সেইসাথে একজন ফরেনার তাই এখন কিছু করছিনা। তুমি সোজাসুজি আমাদের প্রশ্নের উওর দিলে তোমার এবং আমাদের সবারই ভালো। নাহলে আমি যা করতে চাইনা তাই আমাকে করতে হবে।”
” আপনারা কি দয়া করে আমাকে বিষয়টা কি তা খুলে বলবেন? আমি আপনাদেন কোন কথাই সঠিক ভাবে বুঝতে পারছিনা। তাহলে আমি উওর দেবো কি করে?”
” তুমি কালকে এই বাড়িটাতে গিয়েছিলে?”
” হ্যাঁ, ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলাম।”
” কিন্তু ওই বাড়িতে তো কেউ থাকেনা। ওই ফ্ল্যাটে যে মেয়েটা থাকতো সে তো বেশ কিছু সপ্তাহ আগে মা’রা গিয়েছে। ওখানে কারো যাওয়াও নিষেধ। তাহলে যে বাড়িতে কেউ থাকেনা সেই বাড়িতে তুমি খাবার ডেলিভারি কি করে দিতে যাও?”
মেয়ে পুলিশটির কথা শুনে এনাক্ষীর শরীর একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
” কিসব বলছেন আপনি? আমাদের রেস্তোরাঁয় কাল ওই জায়গার ঠিকানাই দেওয়া হয়েছিলো খাবার ডেলিভারি দেওয়ার জন্য। আমি সঠিক জায়গাতেই গিয়েছিলাম।”
” আচ্ছা মানলাম তোমার কথা। তুমি এখন এটা বলো খাবারগুলো তুমি কাকে দিয়েছিলে?”
” কাউকে না। আমি অনেকবার বেল বাজিয়েছিলাম, দরজায় নকও করেছিলাম কিন্তু কেউ খুলেনি।”
” খুলবে কি করে যদি বাড়ি কেউ নাই থাকে। তুমি তোমার মালিক বা ম্যানেজারকে জানাওনি?”
” জানিয়েছিলাম ম্যাম। ম্যানেজার বলেছিলেন ব্যাগটা দরজার কাছেই রেখে দেওয়ার জন্য।”
” অর্ডার দেওয়ার সময় ঠিকানার সাথে ফোন নম্বর তো নিশ্চয়ই দেওয়া হয়েছিলো। ফোন করে দেখোনি?”
” করেছিলাম অনেকবার কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি।”
” নম্বর আছে?”
” ম্যানেজারের কাছে থাকতে পারে।”
” সানা তুমি রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে ফোন করো, ওনার সাথে কথা বলো এবং থানায় আসতে বলবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিশ্চিত হও এব্যপারে।”
বর্তমানে হানের ডেস্কের সামনে বসে আছে এনাক্ষী। হান এক গ্লাস পানি এসে তার সামনে রাখলো। এক নিঃশ্বাসে পুরোটা খেয়ে নিলো এনাক্ষী।
” তুমি কি সত্যিই জানতে না ওই ফ্ল্যাটের ব্যপারে।”
” বিশ্বাস করুন ইনস্পেক্টর হান, আমি সত্যিই বলছি। আমি শুধু আমার কাজটা করতে গিয়েছিলাম, এর বেশি কিছু আমি জানিনা।”
” আচ্ছা মানলাম তোমার কথা। তুমি কি সেখানে সন্দেহজনক কাউকে দেখেছিলে?”
” না। আমি যতটা সময় ছিলাম ওখানে আমি ছাড়া আর কেউ ছিলোনা আর না চলে আসার আগপর্যন্ত কাউকে দেখেছি।”
” তাহলে খাবারের প্যাকেটটা কোথায় গেলো? তুমি তো বলেছিলে সেটা তুমি দরজার সামনেই রেখে এসেছো।”
” আমি জানিনা।” মাথানিচু করে বললো এনাক্ষী। হান চুলগুলো পেছনের দিকে টেনে একটা বড় নিঃশ্বাস নিলো। যখন থেকে জানতে পেরেছে এনাক্ষী মা’র্ডা’র হওয়া জায়গায় গিয়েছে তখন থেকে তার মাথা কাজ করছেনা৷ সে বুঝতে পারছে এনাক্ষী এ ব্যপারে কিছু জানেনা তবে তার বিশ্বাস দিয়ে তো কোন কাজ হবেনা। উপযুক্ত প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ, যেটা এ মূহুর্তে তার কাছে নেই।
” এনা।”
আচমকা দৌড়ে আসা মেয়েটার দিয়ে সবাই একপলক তাকালো, পরমুহূর্তে নিজেদের কাজে মনোযোগ স্থাপন করলো সবাই। হিতোমি এনাক্ষীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, বেশ হাঁপাচ্ছে মেয়েটা।
” এনা তুমি ঠিক আছো? বিগ ব্রাদার তুমি এনাক্ষীকে কেন পুলিশ স্টেশনে নিয়ে এসেছো? কি করেছে সে?”
” তুমি আগে বসো, শান্ত হও। তোমাকে কে বলেছে এনাক্ষী এখানে? তোমার তো এখন ইউনিভার্সিটিতে থাকার কথা।”
” আমিই এখানে আসার সময় চুপিসারে হিতোমিকে মেসেজ করেছিলাম।” হানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো এনাক্ষী। হান একটা হতাশাভরা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হিতোমিকে সংক্ষেপে মূল বিষয়টা বুঝিয়ে বললো।
ইনস্পেক্টর সানা যখন সব গুছিয়ে স্টেশনে ফিরে এলো তখন প্রায় বিকেল। হিতোমি এখনো এনাক্ষীর সাথে থানায় বসে আছে।
” কিছু পেলে সানা? ম্যানেজারের সাথে কথা হলো?”
” জ্বি স্যার। ম্যানেজার সন্ধ্যার মধ্যে এখানে পৌঁছে যাবেন। নম্বরটা সম্পর্কে সকল তথ্য বের করতে কিছুটা সময় লেগেছে।”
” কার নম্বর ওটা? লোকেশন ট্র্যাকি করতে পারলে?”
” করেছি স্যার। ফোন নম্বরের লোকেশন সবসময় একটা জায়গাতেই ছিলো। অর্ডার করার সময়ও এবং নম্বরের লাস্ট লোকেশনও।”
” কোথায়? জিসুর বাড়িতে?”
” নো স্যার। ফ্ল্যাট থেকে কিছুটা দূরে থাকা পার্কে। তবে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কোন খোঁজ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যাইনি।”
” ওই নম্বর থেকে কি কাউকে ফোন করা হয়েছিলো বা এসেছিলো?”
” নো স্যার। শুধু মাত্র রেস্তোরাঁয় অর্ডার দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।”
” অদ্ভুত। সামান্য খাবার অর্ডার করার জন্য কেউ কেন নতুন সিম ব্যবহার করবে? সেই সাথে কেনই বা মিথ্যা ঠিকানা দেবে, যেটা কিনা একটা মা’র্ডা’র স্পট।”
” স্যার এমনও তো হতে পারে যে কেউ ফ্রী খাবারের জন্য এরকমটা করেছে? আমরা তো কোন খাবারের প্যাকেট পাইনি আর অর্ডারের পুরো টাকা পে করা ছিলোনা।”
” কিন্তু এতো জায়গা থাকতে ওখানেই কেন? অন্যকোন ঠিকানাও তো দিতে পারবো?”
” হয়তো স্যার তারা জানতো না ওটা একটা মা’র্ডা’র স্পট। যেমনটা এনাক্ষী নামের মেয়েটা জানতোনা।”
” হুম সেটাও সম্ভব কিন্তু এতো কাঁচা কাজ কি আধো সম্ভব? আমরা কি ঠিক মতোই এগিয়ে যাচ্ছি নাকি অন্যকোন ব্যপার আছে এসবের পেছনে?” ঘাড় ঘুরিয়ে বাইরে বসে থাকা এনাক্ষীর দিকে তাকালো হান।
চলবে……#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ম্যানেজার এসে পুলিশ স্টেশনে কথা বলার পর এনাক্ষীকে তারা ছেড়ে দেন। এই কয়েকঘন্টায় এনাক্ষীর মুখ শুকিয়ে গিয়েছে, পুরো মুখে তার ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। তবে হিতোমি পুরোটা সময় তার পাশে ছিলো বিদায় এখনো সে শক্ত আছে। এনাক্ষীর ভাবতেও অবাক লাগছে এই ভীনদেশী মেয়েটা তাকে এতো অল্প সময়ে আপন করে নিয়েছে।
এনাক্ষীকে নিয়ে হিতোমি স্টেশন থেকে বাইরে এসেছে। হানও এসেছে তাদের ট্যাক্সি ঠিক করে দেওয়ার জন্য।
” এনাক্ষী।”
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে সবার আড়ালে শুকনো হাসলো এনাক্ষী। অবাধ্য চোখে তার পানি জমতে শুরু করেছে তবে সে তা মোটেও বাইরে বেরিয়ে আসতে দিলোনা। ঘাড় ঘুরিয়ে কায়ানের দিকে তাকালো এনাক্ষী, তার পাশে সুজিকেও দেখতে পেলো সে। কায়ান দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে এনাক্ষীর কাঁধে হাত রাখলো।
” তুমি ঠিক আছো? তোমার মেসেজ দেখার পর আমি কতটা ভ’য় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো? বারবার মাথায় খা’রা’প চিন্তা আসছিলো।”
” এতোটা সময় পর বুঝি তুমি আমার পাঠানো বার্তা দেখলে?” অভিমানী কন্ঠ নিয়ে বললো এনাক্ষী। সে একই সাথে হিতোমি এবং কায়ান দু’জনকেই মেসেজ পাঠিয়েছিলো। কিন্তু হায় হিতোমি কিছুক্ষণের মধ্যে এলেও কায়ান এসেছে সন্ধ্যাবেলা যখন সে সব ঝা’মে’লা থেকে রেহাই পেয়েছে।
” আসলে ফোন চার্জ দিয়ে আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু আমি খেয়ালই করিনি যে চার্জ হচ্ছিলোনা। কিছুক্ষণ আগেই আমি দেখতে পেয়েছি আর তা দেখেই….। সরি এনাক্ষী, আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারিনি।”
” কিন্তু হঠাৎ করে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে কেন? এনাক্ষী তুমি কোন খা’রা’প কাজ করনি তো?” গম্ভীর কণ্ঠে বললো সুজি।
” না সেরকম কিছুই নয়। একটা চলমান কেসের স্পটে তাকে দেখা গিয়েছিলো। এনাক্ষী সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেয়েছে কিনা যাতে আমাদের কাজে সাহায্য হতে পারে তা জানার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।”
” আমরা কি এখন তাকে নিয়ে যেতে পারি?”
” হ্যাঁ নিয়ে যেতে পারেন। এনাক্ষী সাবধানে যেও, আমি পরে তোমার সাথে দেখা করে নেবো।”
কথা ছিলো হিতোমি যাবে এনাক্ষীর সাথে, পরে হান তাকে নিয়ে আসবে। কিন্তু এখন কায়ান এবং সুজির সাথে সে ফিরে যাচ্ছে। ট্যাক্সিতে কায়ান নানা প্রশ্ন করলেও এনাক্ষী হুম ছাড়া কোন কথাই বললোনা।
এনাক্ষী ঘরে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। অনেকক্ষণ ধরে সে নিজের কান্না আটকে রেখেছে। এবার আর না পেরে সে মৃদুস্বরে কান্না করে উঠলো। সে বুঝতে পারছেনা তার কান্না করার কারণ তবে তার কান্না করতে হচ্ছে করছে, প্রচুর কান্না করতে হচ্ছে করছে।
” এই শহর মোটেও আমার জন্য সুখকর নয়। মোটেও ভালো নয়। যখন থেকে এখানে এসেছি আমার জীবনের প্রতিটা দিন নানা ঝা’মে’লার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চলে যাবো আমি, এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।”
বেলের শব্দে এনাক্ষী কান্না থামিয়ে দিলো। দ্রুত মুখে পানি দিয়ে দরজা খুলে দিলো সে।
” তুমি এখনো পোশাক পরিবর্তন করোনি?”
” এইতো করবো। তুমি কিছু বলবে?”
” বলবো না তোমাকে নিতে এসেছি। তাড়াতাড়ি পোশাক পরিবর্তন করে এসো, আজ আমাদের সাথে খাবে। সুজি তোমার জন্য রান্না করছে।”
এনাক্ষী যেতে অসম্মতি জানালো তবে কায়ান মোটেও তা শুনলোনা। এনাক্ষীকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো সে। কায়ান ঘরের চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো, কয়েকটা জিনিসপত্রও নাড়াচাড়া করে দেখলো। এনাক্ষী বের হলে তাকে টেনে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলো সে।
এনাক্ষীর প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে সুজি এবং কায়ান। তার মোটেও খাবার রুচি নেই তবে কায়ানের জোড়াজুড়িতে খাবার মুখে নিলো।
” তোমাকে তারা কখন নিয়ে গিয়েছে? বেশি জোড় করেছিলো? যদি তোমার সাথে তারা অতিরিক্ত কিছু করে থাকে যা তোমার পছন্দ হয়নি বা অশোভন লেগেছে তাহলে তুমি র্নিদ্বিধায় আমাকে বলতে পারো। আমি চেষ্টা করবো তোমার সাহায্য করার।”
” না অন্নি তারা এরকম কিছুই করেনি। অনেক ভালোভাবেই আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে। আর ইনস্পেক্টর হান তো ছিলোই, সাথে হিতোমি কোন স’ম’স্যা হয়নি।”
খাবার শেষে কায়ান ওষুধের বক্স থেকে একটা ওষুধ বের করে এনাক্ষীকে দিলো। এনাক্ষী কিসের ওষুধ জিজ্ঞেস করলে সুজি বললো এটা নাকি মাথাব্য’থার ওষুধ। এনাক্ষীর ওষুধটা এখন প্রয়োজন ছিলো বিদায় চুপচাপ খেয়ে নিলো। বক্স নিয়ে কায়ান চলে যেতে নেবে তখন সুজি তার থেকে বক্সটা টেনে নিলো এবং তাকেও একটা ওষুধ দিলো।
” আমার লাগবেনা ওষুধ।”
” চুপচাপ খেয়ে নাও, ব্য’থা যখন বেশি করবে তখন বুঝবে মজা।”
সুজি জোড় করে কায়ানকে ওষুধ খাইয়ে দিলো। এনাক্ষী চুপচাপ তাদের দু’জনকে দেখে যাচ্ছে। কায়ান চলে গেলে সুজি সোফা ঠিক করতে করতে বললো,
” ওভাবে কি দেখছো? ওটা কিসের ওষুধ ছিলো তাই ভাবছো তো? ওটা ব্যথার ওষুধ ছিলো। তোমার মেসেজ দেখে দৌড়ে আসছিলো সে তখন পড়ে গিয়ে হাতে ব্য’থা পেয়েছে। এখন না খেলে দেখবে পরে ব্য’থায় হাত নাড়াতে পারছেনা, তাই আগে থেকেই খাইয়ে দিলাম।”
সুজির কথা শুনে হালকা হাসলো এনাক্ষী। মনে মনে ভাবলো,
” অন্নি কত ভালো, কেয়ারিং। কায়ানের কত খেয়াল রাখে।”
” শোন এনাক্ষী অন্নি বলো তাই একটা পরামর্শ দিচ্ছি।”
সুজির কথা শুনে এনাক্ষী ভাবলো সুজি হয়তো তাকে কায়ানের কাছ থেকে দূরে থাকার কথা বলবে আর তা ভেবেই তার মন খা’রা’প হয়ে গেলো।
” শোন এখন থেকে সাবধানে। সবসময় নিজের সাথে আত্নরক্ষার জন্য কিছু রাখবে। বড় কিছু না হোক অন্তত সামান্য কিছু, যা দিয়ে তুমি অন্তত নিজে একটু হলেও সুরক্ষিত রাখতে পারবে। আর কি রাখবে বুঝতে না পারলে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। বিশ্বাস রাখতে পারো, কখনো খারাপ চাইবোনা তোমার।”
এনাক্ষী কিছু বললোনা,শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
সুজি এবং কায়ান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এনাক্ষীর ঘরের দরজা বন্ধ করালো। বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো কায়ান সুজিকে এগিয়ে দিয়ে আসছে। এনাক্ষীও আর বেশি কিছু ভাবলোনা, চুপচাপ বালিশে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।
.
.
সিন হারির ছোট ভাই সং জুন বাড়িটা গুছিয়ে রাখছিলো। বয়স তার বেশি নয়, দশের মতো। তবে এই বয়সেই সে বুঝতে পেরে গিয়েছে বাস্তবতা কি জিনিস। বোনের মতো সে আয় রোজগার করতে না পারলেও ঘরের কাজে যথাসম্ভব সাহায্য করে থাকে। হারির রুম গুছানোর সময় সং জুন একটা খাম পেলো। উল্টেপাল্টে খামের উপরে কিছুই দেখতে পেলোনা সে। কৌতুহলী হয়ে সং জুন খামটি খুলে ভিতরে কি আছে তা দেখলো। একটা সাদা রঙের কাগজে লাল রঙের কালি দিয়ে কিছু লেখা আছে তবে ছোট সং জুন তার কিছুই বুঝতে পারলোনা। পরবর্তীতে আর বৃথা চেষ্টা না করে খামটি আগের জায়গায় রেখে দিলো।
রাত তখন প্রায় তিনটে। আচমকা এনাক্ষীর ঘুম হালকা হয়ে এলো। চোখ বন্ধ অবস্থায় তার কেন যেন মনে হচ্ছে ঘরের মধ্যে কেউ চলাফেরা করছিলো এবং বর্তমানে ব্যক্তিটি তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ভয়ে এনাক্ষীর হৃদয়স্পন্দন বেড়ে গেলো। চাদরের ভেতরটা খামচে ধরলো সে। অজানা কারণে তার মনে হতে লাগলো আজকেই বুঝি তার জীবনের অন্তিম দিন। এই নিশির অন্তিম প্রহরে তার জীবনেরও সমাপ্তি ঘটে যাবে। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলো, এনাক্ষী এবার আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারিপাশে দেখলো। ছোট বাতিটা থেকে বেরিয়ে আসা মৃদু আলোতে সে আশপাশেটা বেশ ভালোই দেখতে পাচ্ছে। না ঘরে সে ছাড়া আর কেউ নেই দেখতে পেয়ে স্বস্তি পেলো এনাক্ষী।
” এনাক্ষী তুমিও না একটু বেশিই চিন্তা করো। অবশ্য আমারও বা দোষ কোথায়? এখানে এসেছি পর্যন্ত যা হচ্ছে আমার আশেপাশে এসব ভাবনা কি আসা স্বাভাবিক নয়? যাইহোক এনাক্ষী তুমি যা ভাবছো তা ভুল, কেই বা আসবে তোমার ঘরে? তুমি কারো কোন ক্ষ’তি করোনি, একদম না। এবার চুপচাপ ঈশ্বরের নাম করে শুয়ে পড়ো। কাল অনেক কাজ বাকি ওকে।”
নিজেকেই নিজেকে বুঝি আমারো ঘুমানোর চেষ্টা করলো। তবে যতো যাইহোক আজ কেন যেন তার মন মানতে চাইছেনা এসব কথা। তার মন এবং মস্তিষ্ক উভয়ের কোথাও এখনো স’ন্দেহ রয়েই গিয়েছে।
চলবে……