নিশির অন্তিম প্রহরে পর্ব -২৩+২৪

#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে অপ্রত্যাশিত মানুষদের দেখে অপ্রস্তত হয়ে পড়লো এনাক্ষী। হিতোমি এনাক্ষীকে দেখে খুশিতে জরিয়ে ধরলো। পেছনে ফিলিক্স বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের অবস্থার কথা চিন্তা করে এনাক্ষী ভীষণ লজ্জা পেলো।

” হিতোমি তুমি আমার বাসায়!”

” কেন আসতে পারিনা বুঝি?”

” না না তা হবে কেন? কিন্তু না বলে আচমকা চলে এলে….”

” তোমাকে একটু সারপ্রাইজ দিতে এলাম। তোমার শরীর কেমন আছে এখন? খুব বেশি অ’সু’স্থ হয়ে পড়েছো নাকি?”

” আমি এখন ঠিক আছে। তুমি এতোটা চিন্তা করবে আমি ভাবতেও পারিনি। তবে তুমি জানলে কেমন করে?”

” বিগ ব্রাদারের সাথে নাকি তোমার দেখা হয়েছিলো। আমি যখন বললাম তুমি ইউনিভার্সিটিতে আসছোনা তখন সেই বললো তুমি নাকি কান্না করেছিলে, মন খা’রা’প করছিলো পরিবারের জন্য, হয়তো অ’সু’স্থ হয়ে পড়েছো। এরপরও যখন তুমি এলেনা তখন বুঝতে পারলাম তুমি আসলেই অ’সু’স্থ হয়ে পড়েছো। তাই চলে এলাম তোমাকে দেখতে, সেইসাথে নোটস দিতে।”

” এটাই সত্যি নাকি অন্যকোন কারণ আছে?” ভ্রু-নাচিয়ে প্রশ্ন করলে এনাক্ষী।

” আরে না না। অন্যকোন কারণ কেন থাকবে? তোমার এই মিষ্টি মুখটা খুব মিস করছিলাম তাই চলে এসেছি।”

ফিলিক্স পেছন থেকে গলা ঝেড়ে বললো,

” তাহলে আমি এখন যেতে পারি?”

হিতোমি পেছন ফিরে ফিলিক্সের দিকে তাকালো।

” ফিলিক্স এসো ভেতরে।”

” না এনা আমার জরুরি কাজ আছে। তোমার বান্ধবী অনুরোধ করেছিলো তাই তাকে নিয়ে এলাম, আমার দায়িত্ব শেষ। আশা করছি সে নিজের বাড়িতে ঠিক মতো ফিরে যেতে পারবো। ইশ.. তুমি সুন্দর চোখগুলোর কি অবস্থা করেছো এই কয়েকদিনে। ঠিক মতো ওষুধ খেও এনা, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে হবে।”

ধপধপ করে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো ফিলিক্স। ফিলিক্সকে যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিলো হিতোমি শুধু তাকিয়ে ছিলো।

” হু…. দেখা হলো? নাকি আরো বাকি আছে?”

এনাক্ষীর কথা শুনে হিতোমি চমকে গেলো। তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে এনাক্ষীকে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলো সে।
.
.

এখন এনাক্ষীর জ্বর নেই তবে এখনো খানিকটা শরীর দুর্বল তার। রান্নাঘরে কায়ান খাবার গরম করছে, এনাক্ষীর বসে থাকতে ভালো লাগছিলোনা তাই উঠে দাঁড়ালো। কায়ানের ঘরটা এনাক্ষীর ঘর থেকে একটু বড়। ঘুরে দেখতে দেখতে এনাক্ষী একটা রুমে সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। হালকা করে চাপানো আছে ঘরের দরজাটা, ভেতর থেকে আবছা আবছা আলো বেরিয়ে আসছে। এনাক্ষী দরজাটা হালকা ঠেলে খোলা জায়গা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। বেশি আলো না থাকাতে সে স্পষ্ট কিছুই দেখতে পেলোনা তবে দেয়ালে ভিন্ন কাগজ এবং ছবি দেখতে পেলো। কিন্তু কাগজে বা ছবিতে কি আছে তা ভালো মতো বোঝার আগেই পেছন থেকে কেউ থাকে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। কায়ানকে দেখে সে চমকে গেলো। কায়ান দরজাটা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিলো।

” এখানে কি করছো?”

” বসে থাকতে ভালো লাগছিলোনা তাই ঘুরে দেখছিলাম।”

” আচ্ছা চলো, খেয়ে নেবে। খাবার গরম হয়ে গিয়েছে।”

এনাক্ষীকে টেবিলে বসিয়ে তার প্লেটে খাবার তুলে দিলো কায়ান। তবে রান্না সে করেনি বাইরে থেকে এনেছে। খাবার শেষে এনাক্ষী গেলেনা, পায়ে থুতনি ঠেকিয়ে চেয়ারে বসে রইলো। থালা-বাসা পরিষ্কার করে এসে তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে কায়ানের ভ্রু-কুচকে গেলো।

” কি হলো বাড়িতে যাবেনা? এখানেই ঘুমানের পরিকল্পনা আছে নাকি?”

” তোমার কি এখন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বা ঘুমাবে?”

” কেন?”

” আমার বাইরে যেতে মন চাইছে। যাবে আমার সাথে?”

” এইসময় তুমি বাইরে যাবে! মাত্রই সুস্থ হলে আর এখনই অনিয়ম করা শুরু করে দিয়েছো।”

এনাক্ষী ধপ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ কায়ানের দিকে তাকিয়ে দরজা দিকে পা বাড়িয়ে বললো,

” ঠিক আছে তোমার যেতে হবেনা কিন্তু আমি তো যাবোই। তুমি বরং দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমাও।”

পাশাপাশি হাঁটছে কায়ান এবং এনাক্ষী। রাস্তা একদম নির্জন যে তাও না, তবে অতিরিক্ত মানুষ নেই এখন। এনাক্ষী খুশি মনে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাঁটছে তার পেছন পেছন কায়ান বডিগার্ড এর মতো আসছে।

” কি হলো এরকম মুখ গো’ম’ড়া করে রেখেছো কেন? দেখো কি সুন্দর পরিবেশ, কি সুন্দর আবহাওয়া। চারিদিকে কত আলো, কিছুদিন পর চেরি ব্লসম ফুটবে আর তুমি কিনা মুখ গোমড়া করে রেখেছো।”

” তোমার হাঁটা কি হলো?”

থেমে গেলো এনাক্ষী। স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো কায়ানের দিকে।

” আমার সাথে হাঁটতে বুঝি তোমার ভালো লাগছেনা?”

বিব্রত হলো কায়ান। সে আমতো আমতো করে বললো, ” না এনাক্ষী সেরকম কিছু নয়। আশেপাশের যা অবস্থা রাতে বাইরে থাকা সেফ না।”

” ও আচ্ছা তাই বলো। ” আবারো হাঁটতে শুরু করলো এনাক্ষী। এরই মধ্যে কায়ানের ফোন বেজে উঠলো। দু’জনেই থেমে গেলো। পকেট থেকে ফোন বের করে কায়ান দেখলো সুজি ফোন দিয়েছে। সে রিসিভ করে কানের কাছে নেবে তার আগেই আচমকা কেউ ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দিলো। আচমকিক অপ্রত্যাশিত ঘটনায় কায়ান এবং এনাক্ষী দু’জনেই চমকে গেলো।

” আরে আমার ফোন….”

দু’জনেই লোকটা পেছনে দৌড়ানো শুরু করলো। এনাক্ষী থেমে গিয়ে পাশ থেকে একটা পাথরের টুকরো তুলে লোকটার বাম পা বরাবর ছুঁড়ে মারলো। আচমকা আ’ক্রম’ণে হুড়মুড়িয়ে নিচে পড়ে গেলো লোকটি। এনাক্ষী ছুটে এসে লোকটা থেকে কায়ানের ফোনটা ছিনিয়ে নিলো। দৌড়াদৌড়িতে কল আগেই কেটে গিয়েছে। তবে তারা লোকটাকে ধরবে তার আগেই সে ব্য’থা পাওয়া পা নিয়ে পালিয়ে গেলো।

” এই নাও তোমার ফোন।” হাঁপাতে হাঁপাতে বললো এনাক্ষী।

” অ’সু’স্থ শরীর নিয়ে দৌড়াতে কে বলেছে? পড়ে গেলে কি হতো?”

” পড়ে গেলে একটু ব্য’থা পেতাম কিন্তু তোমার ফোনটা নিয়ে গেলে কি হতো। সরি আমার জন্য আজ তোমাকে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হলো। আমার সাথে বের না হলে তোমার সাথে এরকম কিছু হতোনা।” মন খা’রা’প করে বললো এনাক্ষী। তার নিজেকে বড্ড অ’পরা’ধী লাগছে।

” ঠিক আছে, মন খা’রা’প করতে হবেনা। এখন কি বাড়িতে ফিরে যাবে নাকি আরো থাকবে?”

” না না বাড়ি ফিরে যাবো।”

দু’জনে বাড়িতে ফিরে যে যার ঘরে চলে গেলো। ফেরার পথে কেউ কারো সাথে কোন কথা বলেনি। এনাক্ষীর ভিষণ খা’রা’প লাগছে। মন খা’রা’প নিয়ে শুয়ে পড়লো সে।

ফ্রেশ হয়ে এসে কায়ান দেখলো ফোন বাজছে।

” হ্যাঁ সুজি বলো।”

” কায়ান তুমি ঠিক আছো? তখন কি হয়েছিলো? এতোবার ফোন করলাম রিসিভ করলেনা। তখন সেটা কিসের শব্দ ছিলো। জানো আমি কতটা টেনশনে ছিলাম।”

” রিলেক্স সুজি, আমার কিছু হয়নি। তোমার ফোন রিসিভ করবো তখনই একটা লোক ফোনটা কেঁ’ড়ে নিয়ে চলে গেলো।”

কায়ানের কথা শুনে সুজি ঘাবড়ে গেলো।

” কি বলছো কি? তুই এই সময়ে বাইরে কি করছিলে? অফিসের কাজ না থাকলে তুমি তো এইসময় কখনো বাইরে থাকোনা। আর আজ তো আমরা সবাই আগেই বাড়ি ফিরে গিয়েছি।”

কায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, ” এনাক্ষী জে’দ করছিলো সে নাকি হাঁটতে যাবে। একা একাই চলে যাচ্ছিলোনা। সে এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়, রাস্তায় কিছু একটা হলে নিজেকে অপ’রাধী লাগতো তাই আমিও গিয়েছিলাম। তারপর তুমি ফোন দিলে আর এসব হয়ে গেলো।”

” সে একা গেলে যেতো। তুমি কেন গেলে? আজ যদি বড় কোন বি’প’দ হয়ে যেতো? একটা অপরিচিত মেয়ে যার সাথে তোমার মাত্র কিছু মাস আগে দেখা তার জন্য কেন তুমি নিজেকে বি’প’দে ফেলো বলো তো? সে অ’সু’স্থ ছিলো, প্রতিবেশী হিসেবে তুমি সাহায্য করেছো ব্যস। তার ব্যপারে তোমার এতো মা’থাব্য’থা কেন আমি বুঝিনা।”

” আচ্ছা বাদ দাও। এখন ঘুমিয়ে পড়ো, কালকে মিটিং আছে। শুভ রাত্রি।”

” হুম শুভ রাত্রি। নিজের খেয়াল রেখো। মাঝে মাঝে তোমার এই কেয়ারলেস স্বভাবটার কারণে বড্ড চিন্তা হয় আমার।”

” আমাকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য ধন্যবাদ মিস সুজি।”

” বড্ড বেশি পা’জি তুমি।”

চলবে……#নিশির_অন্তিম_প্রহরে
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” এই মেয়ে তোমার কি কোন বুদ্ধি নেই? তোমার যেতে ইচ্ছে হয়েছিলো তুমি যেতে কায়ানকে কেন নিয়ে গেলে? কাল তোমার জন্য কায়ানের সাথে কি হলো দেখেছো তো? তুমি জানো ওর ফোনটা ওর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? গডের কৃপায় কাল বড় কিছু হয়নি কিন্তু যদি কিছু হতো তখন তুমি কি করতে? সামলাতে পারতে? বলো? আনসার মি, ই’ডিয়ে’ট।”

সুজির চিৎ’কার শুনে এনাক্ষী কেঁ’পে উঠলো। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভার্সিটি শেষে স্টোরে এসেছিলো এনাক্ষী। কিছুটা সময় পর আচমকা সুজি এসে তাকে বাইরে আসতে বললো। বর্তমানে তারা স্টোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

” শুন তোমাকে একটা কথা বলি। কায়ান খুব ভালো মানুষ, অন্যকে ক’ষ্ট পেতে দেখলে তার খা’রা’প লাগে। তুমি একা একটা মেয়ে বি’প’দে পড়ে তার কাছে আশ্রয় নিয়েছিলে, তোমার প্রতি তার মায়া হয়েছিলো। খুবই ভালো মনের মানুষ বলে সে তোমাকে যতোটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্লিজ দয়া করে তুমি কায়ান থেকে যথাসম্ভব দূরে থেকো। তোমার জন্য না ওকে কোনদিন বি’প’দে পড়তে হয়। কায়ানের কিছু হলে আমি মোটেও তা সহ্য করবোনা। তাই তোমাকে রিকুয়েষ্ট করছি ওকে বি’প’দের মুখে ফেলোনা। ছেলেটা এমনিতেই পরিবার থেকে দূরে এই ভীনদেশে পড়ে আছে, অনেক ক’ষ্ট তার মনে। তবুও সে হাসিখুশি দিনযাপন করছে। দয়া করে তার ক’ষ্ট আর বাড়িয়ে দিওনা।”

শেষের কথাগুলো বলার সময় সুজির কন্ঠস্বর কাঁপছিলো যা এনাক্ষী স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। সুজি চলে যাওয়ার পরেও এনাক্ষী দাঁড়িয়ে রইলো।

” অন্নি এগুলো কি বললো? কায়ান মনে ক’ষ্ট নিয়ে দিনযাপন করছে কিন্তু তাকে দেখে তো আমি এরকম কিছু অনুভব করিনি। তাহলে কি আমি সত্যিই মানুষকে বুঝতে পারিনা? নাকি…..”

” এনাক্ষী ভেতরে এসো। মালিক দেখলে ব’কা দেবে।” সহযোগী তেসুর কথা শুনে এনাক্ষী দ্রুত পায়ে স্টোরে ঢুকে কাজে লেগে পড়লো।

আজকে সাইকেল আনেনি এনাক্ষী৷ পায়ে হেঁটেই বাসায় ফিরছে সে৷ আনমনে নানা কথা ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলো সে। তার ভাবনায় ব্যঘাত ঘটে অপরিচিত কন্ঠস্বরে।

” মন খা’রা’প নাকি?”

ঘাড় ঘুরিয়ে এনাক্ষী দেখলো রাস্তার কিনারায় একজন বৃদ্ধ লোক চাদর পেঁচিয়ে বসে আছে। বৃদ্ধটিকে দেখে হালকা হাসলো এনাক্ষী।

” কেমন আছেন গ্র্যান্ডপা? আজও বুঝি খাবার কেনার জন্য বেরিয়েছেন?”

” না খাবার নয় তবে অন্য কিছুর জন্য বেরিয়েছিলাম। তোমার মন খা’রা’প বুঝি? মন খা’রা’প হলে আমাকে বলতে পারো, দেখবে হালকা লাগবে।”

এনাক্ষী কিছুটা দূরত্ব রেখে বৃদ্ধটির পাশে বসলো।

” নিজের বো’কামির জন্য আজ আমাকে একজন অন্নি ব’কে’ছে। তবে বেশি নয় অল্প একটু।”

” তাহলে তুমি স্বীকার করছো তোমার দো’ষ ছিলো?”

” হুম ছিলো, নিজের বোকামির জন্য কাল আমার একজন কাছের মানুষকে বি’প’দে পড়তে হয়েছিলো। ঈশ্বর ছিলেন বলে কোন ক্ষতি হয়নি। আর আমার এই বোকামির জন্য অন্নি আমাকে ব’কা দিয়েছে। এতো বো’কা আমি কি যে বলবো।”

” হুম তুমি আসলেই অনেক বো’কা এনাক্ষী।”

লোকটার কথা শুনে এনাক্ষী খানিকটা চমকে গেলো।

” আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?”

” তুমিই তো বলেছিলে।”

” আমি বলেছিলাম? কিন্তু আমার যে মনে পড়ছেনা?”

” মনে করে দেখো, মনে পড়ে যাবে নিশ্চয়ই। এখন আমি যাই আমার সময় হয়ে গিয়েছে। সাবধানে যেও।”

এনাক্ষী উঠে দাঁড়ানোর আগে লোকটা হাঁটা শুরু করলো। যতদূর দেখা সম্ভব এনাক্ষী বৃদ্ধের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
.

স্টোরে কাজ করছিলো সিন হারি। অনেকজন কাস্টমার লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বিল পে করার জন্য। দ্রুত কাজ করছে সে। কাস্টমারের জিনিসগুলো উনাকে বুঝিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে আবারো তাদের স্টোরে আসতে বলো সে। এটা তারা প্রতিটা কাস্টমারকে বলে থাকে।

” তোমার হাসিটা সুন্দর।”

” ধন্যবাদ স্যার।”

লোকটা লাইনে থেকে বেরিয়ে গেলো। হারি তার কথাতে বেশি মনোযোগ না দিয়ে পরের কাস্টমারের জিনিস প্যাক করতে লাগলো। এধরণের কমপ্লিমেন্ট সে সবসময় পেয়ে থাকে তাই এটাকেও সে স্বাভাবিকভাবে নিলো।
.
.

একটা ব্লিডিং এ ডেলিভারি দিতে এসেছে এনাক্ষী। একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় সাইকেল চালিয়ে যেতে যেতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ঘেমে নেয়ে একাকার তার অবস্থা। তবে কিছু করার নেই বেঁচে থাকতে হলে কাজ তো করতেই হবে। ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খেয়ে নিলো এনাক্ষী। তারপর অর্ডারকারীর জিনিসগুলো নিয়ে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো। পুরো ফ্লোরটা একদম নির্জন, এতোটাই নির্জন যে এনাক্ষীর শরীর অগত্য কারণেই শিউরে উঠলো।

এনাক্ষী তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাটের বেল চাপলো। তবে এক মিনিট, দু’মিনিট, পাঁচ মিনিট হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ দরজা খুললোনা। এনাক্ষী আবারো বেল প্রেস করে অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু এবারো কেউ দরজাটা খুললোনা। এনাক্ষী দরজার হাতলটা ঘুরিয়ে দেখলো কিন্তু ফলাফল শূণ্য।

” কেউ কি আছেন বাড়িতে? আপনাদের খাবার অর্ডার ছিলো। হ্যালো কেউ কি শুনতে পাচ্ছেন?” দরজায় কয়েকবার কড়াঘাত করে উক্ত কথাগুলো বললো এনাক্ষী। কানটা দরজার সাথে লাগিয়ে দিয়ে ভিতর থেকে কোন শব্দ আসছে কিনা শোনার চেষ্টা করলো৷ অর্ডারকারীর নম্বরেও সে ফোন করলো তবে কেউ রিসিভ করলোনা। প্রায় আধাঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরেও যখন কেউ দরজা খুললোনা তখন এনাক্ষীর টেনশন হতে লাগলো। সে আর সময় অপচয় না করে রেস্তোরাঁয় ফোন করলো এবং বিষয়টি খুলে বললো।

” তুমি নিশ্চয়ই দেরি করে গিয়েছো তাই ওনারা আর অর্ডার রিসিভ করছেন না।” রে’গে বললো ম্যানেজার।

” না ম্যাম আমি টাইমের আরো পাঁচ মিনিট আগে এসেছি। ভেতর থেকেও কোন সাড়াশব্দ শুনতে পাচ্ছিনা আর না কোন লোককে দেখতে পাচ্ছিনা। এখন কি করবো ম্যাম?”

” খাবারটা ফেলে দাও নয়তো ওখানেই রেখে এসো। পরে ফোন করলে তখন আমি দেখে নেবো।”

এনাক্ষী ব্যাগটা দরজার কাছে রেখে চলে আসবে তার আগে আবারো একবার বেল চাপলো কিন্তু এবারো কেউ এলোনা। সে আর দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত স্থানটি ত্যাগ করলো। এই অদ্ভুত জায়গায় আর বেশিক্ষণ থাকার তার পক্ষে সম্ভব নয়।

সব অর্ডার পৌঁছে দেওয়ার পর এনাক্ষী রেস্তোরাঁর দিকে যাচ্ছিলো। তবে পুলিশ স্টেশনের সামনে হানকে দেখে সে থেমে গেলো।

” কেমন আছো এনাক্ষী? শরীর ভালো আছে এখন?”

” হ্যাঁ এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ৷ আপনার সাথে দেখা করবো করবো করেও করা হয়নি। অবশেষে আজ আপনার সাথে দেখা হয়েই গেলো।”

” কেন? কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার ছিলো নাকি?”

” না কথা ছিলোনা তবে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেওয়ার ছিলো।”

এনাক্ষী পিঠে থাকা ব্যাগটা থেকে একটা রুমাল বের করে হানের দিকে বাড়িয়ে দিলো।

” এই নিন আপনার রুমাল। সেইদিন টেবিল রেখে গিয়েছিলেন। অবশ্য আপনি না রাখলেও আমি আপনার থেকে চেয়ে নিয়ে আসতাম। নিন এটা আমি ভালোমতো ধুয়ে রোদে শুকিয়েছি। দেখেনিন কোন দাগ জাতীয় কিছু নেই।”

” রুমাল ফিরিয়ে দেওয়া জন্য তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাইছিলে! এটা ফিরিয়ে না দিলেও কোন সমস্যা ছিলোনা। এতোটাও গুরুত্বপূর্ণ নয় এটি। এই সামান্য রুমালের জন্য তুমি কত কিছু করলে।”

” জিনিস সামান্য হোক বা বড় কিছু, অন্যের জিনিস নিজের কাছে রাখা ঠিক নয়। তাই নিন আপনার রুমাল। রুমালকে তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি এবার আমার দায়িত্ব শেষ।”

” দায়িত্ব?”

” হুম আপনার এই রুমাল নিয়ে যে আমি কতটা টে’নশ’নে ছিলাম। এই বুঝি হারিয়ে ফেললাম।”

” তুমি পারোও বটে। তা কোথায় গিয়েছি?”

” ডেলিভারি দিতে। এবার আমি আসি, দেরি হলে ম্যানেজার ব’কা দেবেন। আবারো দেখা হবে।”

” সাবধানে সাইকেল চালিয়ে যেও।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here