আমড়া কাঠের ঢেঁকি পর্ব -০২

#আমড়া_কাঠের_ঢেঁকি
#কুরআতুল_আয়েন

২.
‘কিরে নিরু আফজাল নাকি নতুন মা*ল জুটিয়েছে।তোর দিন তাহলে শেষের দিকে।ছ্যাঁহ নিরু,তোর মতো এতো দেমাগি পারলি না আফজাল কে ধরে রাখতে।আফজাল কে নিয়ে এতো অহংকার কই রাখবি এখন!বালির নিচেও তো জায়গা পাবি না।’
কথাটা শেষ করতে না করতেই ইকরাম হে হে করে হেসে ফেললো।

নিরু দাঁত খিঁচিয়ে তাকালো ইকরামের দিকে।ইচ্ছে করছে গালে সটান করে একটা দিয়ে দিতে।পরমুহূর্তেই ইচ্ছেটাকে দমিয়ে নিলো।বার কয়েক নিঃশ্বাস ছেড়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বললো,
‘বালির নিচে জায়গা না পেলে তোর ঘরে বউ হয়ে যাবো,তোর বউ হয়ে যাবো।কিরে করবি নাকি বিয়ে।’
নিরু থেমে নেই,একলাফে উঠে দাঁড়ালো।ইকরামের কাছে গিয়ে হাত টা টেনে ধরে পুনরায় বললো,

‘কিরে করবি না বিয়ে।চল না যাই কাজী অফিসে।’

ইকরাম ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।নিরুর এইহান রূপ দেখে তাকে বড্ড ভাবাচ্ছে।কই ভেবেছিলো নিরুকে খোঁচাবে কিন্তু হলো উল্টো।নিরুই কিনা তাকে বিয়ে করার জন্য জোর করছে।অসম্ভব!এই নিরুকে বিয়ে করা মানে জীবনের দফারফা করে ছাড়া।বললেই হলো নাকি,বিয়ে করার কথা।শখ কতো!

নিরু জোরপূর্বক হেসে তাকালো ইকরামের দিকে।ভ্রু দুটো নাচিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘চল না বিয়ে করি,আমাকে নিয়ে এতোই যেহেতু চিন্তা তোর।’

‘অসম্ভব নিরু!কু*ত্তা*য় কামড়িয়েছে নাকি আমাকে,যে তোর মতো একটা বে*য়া*দ*ব মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো।’

‘এখন এইসব বললে হবে নাকি,আফজাল এর থেকেও দেখছি তুই আমাকে নিয়ে বেশি কনর্সান।আর,আমিও ভেবে দেখলাম,যে তুই যেহেতু আমাকে নিয়ে এতোই চিন্তা করিস তাহলে তোর ঘরেই বউ হয়ে যাই,সারাদিন তোর সামনে সামনে থাকবো,তুই আমাকে বউ বলে ডাকবি আমি তোকে ওগো বলে সম্বোধন করবো।’

‘এ্যাঁহ!মুখে মধু অন্তরে বিষ।যা দূর হ!তোকে আমার চিনা আছে নিরু।’

নিরু আর কিছু বলার আগেই ইকরাম তাড়াহুড়ো দেখিয়ে চলে আসতে লাগলো।মনে মনে পণ করেছে নিরুকে আর খোঁচাতে আসবে না।আজকে ঢের শিক্ষা হয়েছে।কি কথা থেকে একদম বিয়েতে চলে গিয়েছে।নিরুকে বিয়ে করার কথা ভাবতেই ইকরামের শরীর টা যেনো কেঁপে উঠলো।তবে পেছন থেকে নিরুর গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।নিরু চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,

‘কিরে অ*প*দা*র্থ!কই পালাস এখন,এতোই যেহেতু চিন্তা আমার জন্য,তাহলে এখন কেনো পালাচ্ছিস।মনে হয় সাপ তোর পিছনে তাড়া করেছে।’

মুহুর্তেই ভার্সিটির আনাচে-কানাচে যেনো বাতাসের বেগে ছড়িয়ে গেছে আফজাল প্রেম করছে।তবে,মেয়ে নাকি আগুনের ফুলকির মতো।এক কথায় চোখ ধাঁধানো সুন্দরী।আর,নিরু সেই আগুনের কাছে লাকড়ির মতো।আগুনের ঝলসানোতে যেনো ছাই হয়ে যাবে।
——
বিছানার মধ্যিখানটায় ভাবলেশহীন ভাবে শুয়ে আছে নিরু।ভার্সিটির গণ্ডী পেরিয়ে আসতে তাকে খুব বেগ পেতে হয়েছে।আফজালের কোনো দেখা অবশ্য পেলো না।শুধু দূর থেকে দেখেছিলো একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে।অভিমানে তো সেদিকে পা টুকু আগায়ই নি।তবে,সবার মুখে মুখে আফজালের প্রেম করার খবর পেয়ে অভিমানের সাথে সাথে যেনো জেদ টাও চেপে বসেছে।ফোন টা হাতে নিয়ে মুমু আপাকে কল করে বললো,

‘আমার জন্য ছেলে দেখো তো আপা।বিয়ে করবো।ছেলে যেনো আগুনের মতো হয়।’

‘এই নিরু,মাথা গেছে তোর।বিয়ে না তো যেনো ছেলে খোঁজার শর্ত দিচ্ছিস।’

‘ধরে নাও,ওইরকম এই।আমার আগুনের মতো ছেলে চাই।’

‘আগুনের মতো ছেলে,তাও বাংলাদেশে,অসম্ভব নিরু।এর থেকে তুই আগুনকেই বিয়ে করে নে না।’

‘চেষ্টা থাকলে সব হয় আপা।’

‘তাহলে তোর দুলাভাই কে বলি আগুন ছেলে
খোঁজার জন্য পোস্টার তৈরি করতে।’

‘বলবে!বলো তাহলে।অবশ্য দুলাভাই তো তোমার কথা ফেলতে পারবে না,আর যদি একবার নাকোচ করেও বসে তাহলে তোমার হাত থেকে বাঁচারও উপায় নেই।দুলাভাই তো বুঝে তুমি কেমন আপা।’

‘তুই কি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি কিছু মিন করছিস নিরু।’

‘কই না তো আপা।’

‘নিরু তুই আমাকে বোকা পেয়েছিস,তুই আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি বুঝালি তোর দুলাভাই আমাকে ভয় পায়,তার মানে আমি বাঘিনী তাই তো।’

‘না আপা তোমার বুঝার ভুল।’

‘ঠিক বলছিস তো।’

‘একদম আপা।’

‘তাহলে তোর দুলাভাই কে বলেই ফেলি পোস্টার রেডি করতে।’

নিরু কোনো কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো।মুমু আপাকে কল দিয়ে বেচারির রাগ যেনো মাথায় চড়ে গিয়েছে।নিরুর মুমু আপা বরাবরই এমন ধাঁচের মানুষ।কথা বলতে গেলেই বিপত্তি যেনো বাজে।
🍂🍁
মুমু মিনিট খানেক সময় নিয়ে ফোনটার দিকে তাকিয়ে রইলো।নিরু কেনো ফোন কেটে দিয়েছে তা নিয়েই ভাবছে।অন্যদিকে মুনমুন ফ্লোরে বসে খেলছে।তার সামনে যাবতীয় খেলনা পড়ে আছে।একবার এটা নেয় তো আরেকবার ওটা নেয়।মুমু সেদিকে এবার না ভেবে মুনমুনকে ডিঙিয়ে রান্নাঘরে গেলো।রাতে স্বামীর সাথে নিরুর বিয়ে নিয়ে কথা বলবে সেই সাথে পোস্টার এর ব্যাপার টাও বলবে।
————
আফজাল নিরুকে ফোনে না পেয়ে বন্যাকে ফোন করলো।বন্যা বসে বসে টিভি দেখছিলো।পাশেই মা বসে কাঁথা সেলাই করছে।বাবুর কাঁথা।সামনের মাসেই ভাইয়ের ল্যাদাবাচ্চা আসবে।অবশ্য তারও আনন্দ হচ্ছে,যতই হোক ফুপি হওয়ার আনন্দ তো অন্যরকমই।ফোনের আওয়াজ পেতেই বন্যা ফোনের স্ক্রিনে আফজালের নাম্বারটা দেখে কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো।সচরাচর আফজাল কল দেয় না,তবে বিশেষ দরকারে আফজাল তাকে কল দিয়েই থাকে।আর সেই দরকার টা নিরুই বলতে গেলে।পুনরায় ফোন বেজে উঠতেই বন্যা মা’র পাশ থেকে উঠে আসলো।কানে চেপে ধরে কিছু বলার আগেই আফজাল গড়গড়িয়ে বলতে লাগলো,

‘বন্যা তোমার বান্ধুবী কে বলো আমার কল ধরতে।কুইক!’

কথাটা যেমন গড়গড়িয়ে বললো ঠিক তেমন ভাবেই খুব দ্রুতই কল টা কেটে দিলো।বন্যা কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো।সব যেনো এক সেকেন্ডের মধ্যেই হলো।বন্যা দ্রুত গতিতে নিরুকে কল করলো।নিরু ফোন ধরতেই বন্যা বলতে লাগলো,
‘নিরু আফজাল ভাই ফোন করেছিলো আমাকে,বললো তুই নাকি ফোন ধরছিস না।তোকে বলেছে কুইকলি ফোন ধরতে।’

নিরু ভাব দেখিয়ে বললো,

‘আফজাল কে?’

বন্যা রাগে খ্যাঁক করে উঠলো,

‘নিরু তুই কি পাগল হয়েছিস।ভাইয়ের ফোন ধর।’

নিরু লম্বা একটা হাই তোলে বললো,

‘বললাম এই তো আফজাল কে তাকে আমি চিনি না।আর যদি তোকে আবার ফোন করে তখন তুই বলে দিস নিরু বলেছে আপনাকে নিরু চিনে না।শেষ!কাহিনী খতম!’

‘কিন্তু নিরু ভাই যদি আমাকে হুমকি-ধমকি দেয় তখন!’

‘হুমকি দিলে তোকে দিবে,আমার কি তাতে।আমি এখন ঘুমাবো বন্যা।আর যদি এতোই ভয় পাস তাহলে ফোন বন্ধ করে রেখে দে।’

বন্যার কাছে নিরুর কথাটাই যুক্তিযুক্ত মনে হলো।খট করে সেও ফোন বন্ধ করে রেখে দিলো।মনে মনে নিরুকে হাজারটা ধন্যবাদ দিয়ে মা’র পাশে গিয়ে বসলো।
——-
সকাল হতে না হতেই মুমু নিরুদের বাসায় এসে হাজির।নিরুর মা পারভীন আরা সক্কাল সক্কাল মুমুকে দেখে যেনো খুশিতে আত্নহারা হয়ে গিয়েছে।মুমুর কোল থেকে মুনমুন কে কোলে নিয়ে বললো,
‘কিরে মুমু!জামাই কই!এলো না যে।তোরা দু’জনেই এলি।’

মুমু ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

‘তোমার জামাইয়ের সময় নেই খালা।আমি আর মুনমুন যেনো কিছুই না।অফিস তার সব।’

নিরুর মা পারভীন আরা মুনমুন কে কোলে নিয়েই রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন।মুমুর কথায় হাসতে লাগলেন।মুমু আর কিছু বললো না।ডাইনিং টেবিল এ সাজানো রয়েছে চা’য়ের কেটলি।চেয়ার টা টেনে বসে পড়লো।কেটলি থেকে চা নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো চিনি দিলো।এক চুমুক বসিয়ে হাঁক ছেড়ে বললো,

‘নিরু কই খালা?’

‘নিরু ভার্সিটি যাবে রেডি হচ্ছে।’

‘ওহ!’

মুমু চা’য়ের কাপ নিয়ে উঠতে গেলেই দেখা হলো নিরুর সাথে।চোখের সামনে নিরুকে দেখে মুমু চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।নিরু বেগুনি রঙের জামদানী শাড়ি টা ঠিক করতে করতে মুমুর দিকে তাকালো।মুমুকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

‘আপা!এভাবে তাকিয়ো না,চোখ মনে হয় বেরিয়ে আসবে।’

মুমু গরম চা’য়ে চুমুক দিতেই কিছুটা চিল্লিয়ে উঠলো।জিহবা টা মনে হয় গেলো।নিজেকে সামলিয়ে তৎক্ষণাত বলে উঠলো,

‘নিরু রে তোকে কি মিষ্টি লাগছে।কোনো প্রোগ্রাম আছে বুঝি ভার্সিটিতে।’

নিরু মিষ্টি হেসে বললো,

‘না আপা!একজনকে আমার বিয়ের দাওয়াত দিতে যাচ্ছি।’

মুমু যেনো একের পর এক অবাকই হচ্ছে।এবার চা খাওয়া বাদ দিয়ে নিরুর মুখের দিকেই তাকিয়ে রইলো।নিরু মুমুকে রেখে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো।ব্রেডে কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,

‘আপা!মুনমুন কই?’

মুমু এমতাবস্থায় জবাবে বললো,

‘খালার কোলে।’

‘এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে পাশে এসে বসো।’

‘তুই তো আমাকে অবাক করেই ছাড়ছিস নিরু।তাই দাঁড়িয়ে থাকাটাই হজম হচ্ছে না,বসা তো দূরের কথা।একটা হজম না হলে আরেকটা করি কেমনে বল তো।’

নিরু রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে মা’কে দেখে নিলো।মুনমুন কে নিয়ে দিব্বি ব্যস্ত রয়েছে।নিরু গলা টা পরিষ্কার করে মুমুকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘আপা একটু শোনো তো।’

মুমুও নির্বিকার ভঙিতে নিরুর দিকে এগিয়ে গেলো।মুখ টা কাছে নিয়ে বললো,
‘কিরে!’

‘আপা!বিয়ের কার্ড বানাবো,বলো তো জামাইয়ের নাম কি দেওয়া যায়।’

মুমুর যেনো ধৈর্যের আর সীমা রইলো না।দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বললো,

‘নিরু তোর কি হয়েছে বল তো!তোর এই অবনতি কি খালা জানে!খালা কি জানে তাঁর নিরু বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে!’

‘উফফ আপা!এতো কিছু না ভেবে আগে আমার কথার উত্তর টা দাও।’

‘কি বলবো টা কি আমি হ্যাঁ!হুট করে আবোলতাবোল বকে যাচ্ছিস।গতকাল কে ফোন দিয়ে বিয়ের জন্য ছেলে দেখার কথা বললি,তাও আবার আগুন ছেলে।আর আজকে বলছিস বিয়ের কার্ড ছাপাবি তাও আবার বলছিস জামাইয়ের নাম কি দেওয়া যায়,নিরু বোন আমার তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নাকি।’

‘রাতে থাকছো তো এখানে আপা!’

‘সিউর দিয়ে বলতে পারছি না,তোর দুলাভাই আমাকে ছাড়া ঘুমোতে পারে না।’

‘থেকে যাও আজকে।রাতে সবকিছু বলবো।আর দুলাভাই কে বলে দিও রাতে চলে আসতে,পোস্টার নিয়েও কথা বলবো।’

মুমু চা’য়ের কাপটা কাঁচের টেবিল টায় শব্দ করে রেখে দিলো।নিরুর সেদিকে পাত্তাই নেই।আপনমনে ব্রেডে বড় বড় কামড় বসিয়ে যাচ্ছে।পুনরায় মুমুর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘বললে না তো জামাইয়ের নাম কি দেওয়া যায়।’

মুমু ফটাফট বলে উঠলো,

‘আফজাল দিয়ে দে।’

নিরুর গলায় যেনো ব্রেড আঁটকে গিয়েছে।কিছুটা কেশে উঠতেই মুমু তাড়াতাড়ি করে পানি এগিয়ে দিলো।মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,

‘কেনো রে নামটা তোর পছন্দ হয় নি।’

নিরু নিজেকে কোনোমতে ঠিক করে বললো,

‘না আপা!নামটা কেমন যেনো আংকেল আংকেল শোনায়।’

‘তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।আমার বান্ধুবী শিলার বাপের নামই ছিলো আফজাল হক।’

নিরুর যেনো আরো বেগতিক অবস্থা।কোনোমতে সেখানে থেকে উঠে আসতে আসতে বললো,

‘কোনো ব্যাপার না আপা,নাম আমি একটা ঠিক করে কার্ডে বসিয়ে দিবো।’

মুমু আরো কিছু বলতে গিয়েও পারলো না।চোখের সামনেই দ্রুত গতিতে নিরু যেনো পালিয়ে গেলো।
——-
দূর থেকে নিরুকে নিজের কাছে আসতে দেখে আফজাল টি-শার্ট টা টেনেটুনে ঠিক করে নিলো।হাতে থাকা আঁধখাওয়া সিগারেট টা ফেলে দিলো।পা দিয়ে পিষে জলন্ত আগুন টা নিভিয়ে দিয়ে নিরুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মেয়েটাকে মনে হয় আজকে বড্ডই সুন্দর লাগছে।শাড়িটাও যেনো নিরুকে বড্ড মানিয়েছে।খোলা চুলগুলো অবাধ্যতার মতো হালকা বাতাসে উড়ছে নিজেদের মতো করে।যেনো নিজেদের মধ্যে আঁটকে থাকার কোনো ভয় নেই।

নিরু আফজাল এর সামনে এসে দাঁড়ালো।বিয়ের কার্ড টা আফজাল এর দিকে এগিয়ে দিলো।কার্ড টা আসার সময় বানিয়ে নিয়ে এসেছে।অনেকটা সময় ব্যয় করে এই কার্ড টা বানিয়েছে।শুধু সময় না টাকাও দিতে হয়েছে না হলে এখনিই বানাতে চাইছিলো না তারা।
আফজাল কার্ড টা হাতে নিয়ে ভ্রুকুটি কুঁচকে তাকালো নিরুর দিকে।আফজাল কিছু বলার আগেই নিরু ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো,

‘সামনে শুক্রবার আমার বিয়ে।দাওয়াত দিয়ে গেলাম তোমাকে।’

বিয়ের কথা বলেই পগারপার নিরু।আফজাল কতক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।কার্ড টা উল্টে-পাল্টে দেখে নিলো।আসলেই কনের জায়গায় নিরুর নাম লিখা আর বরের জায়গায় আমির হোসেন লিখা।আফজালের মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো।সামনে তাকিয়ে দেখলো নিরু লাফিয়ে লাফিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।আফজাল আর দেরি করলো না,দৌড় লাগালো নিরুর পিছনে।একটু জোরেই দৌড় দিয়েছে বটে।

নিরু পাশে আফজাল কে দেখে মুখ ভেঙচি কাঁটলো।আফজাল গম্ভীর কন্ঠে বললো,

‘এইসবের মানে কি নিরু।’

‘দেখছো না কি দিয়েছি তোমাকে,আমার বিয়ের কার্ড দিয়েছি।’

‘সেটা তো আমিও দেখলাম।কিন্তু তোমার বিয়ে আমাকে বলো নি কেনো?নিশ্চয় আগে থেকে সব ঠিক হয়ে ছিলো।ছি নিরু তুমি আমার সাথে প্র*তা*র*ণা করলে।’

নিরুর মাথায় যেনো আগুন জ্বলে উঠলো।হাঁটা থামিয়ে দিয়ে বললো,
‘প্র*তা*র*ণা*র কথা তোমার মুখে মানায় না আফজাল।তুমি যেমন আগুনের ফুলকি নিয়ে ঘুরছো তেমন আমিও আগুন ছেলে বিয়ে করে দেখিয়ে দিবো তোমাকে।’

নিরু আর একমুহূর্তও সময় নষ্ট করলো না।সামনে একটা খালি রিকশা পেয়ে উঠে বসলো।অন্যদিকে আফজাল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নিরুর যাওয়ার পানে।মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসলো,

‘মানে কি এইসবের!’
🍁🍂
জ্যামে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে নিরু।বিরক্তিতে মুখে যেনো একদলা থুতু জমে উঠলো।সামনে উঁকি দিয়ে দেখলো ভালোই জ্যাম লেগে আছে।এভাবে কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজের পাশে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করতেই পাশে ফিরে তাকালো নিরু।তাকিয়ে দেখেই যেনো হকচকিয়ে উঠলো।নিজের পাশে অচেনা এক সুদর্শন ব্যক্তি কে বসে থাকতে দেখে নিরুর কিছুটা অস্বস্তি হতে লাগলো।নিরু কিছু একটা বলতে নিবে তার আগেই অচেনা সুদর্শন ব্যক্তি টি গলা ছেড়ে জোরসে বলে উঠলো,

‘মামা টান দেন!’

চলবে..

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here