#শেষ_প্রান্তের_মায়া (৪)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________
কেটে গেছে প্রায় ১১ দিন। এই ১১ দিন থাকা নিয়ে কম কথা শুনতে হচ্ছে না। মা-আব্বা বার বার এসে জিজ্ঞেস করতেছে ‘কেনো বাড়ি যাচ্ছি না! কেনো জামাই আসছে না!’ আমি উনাদের প্রশ্ন গুলো শুধু শুনি কোনো উত্তর দেই না। প্রয়োজনই মনে করি না। যেদিন ডিভোর্স পেপার আসবে সেদিন ওরা নিজেরাই সব জানবে। এতদিন থাকা নিয়ে গ্রামের লোকজনও টুকটাক কা’না ঘুষা করে। কোনো কাপড় আনিনি বলে আমার পুরোনো কাপড়ই পড়ি। এর মধ্যে শুধু ২ টা সাধারণ শাড়ি এনে দিয়েছে মাহিদ। দিন গুনছিলাম কবে তন্ময় ডিভোর্স পেপার পাঠাবে কবে আমি মুক্তি পাবো! তবে দিনটা যে আজই হবে তা বুঝতে পারিনি৷ ভালোই হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাবো তত তাড়াতাড়ি আমার য’ন্ত্রণা গুলোও কমে যাবে। হাতে খাম টা নিয়ে কেবল দাঁড়াতেই মাহিদ এসে জিজ্ঞেস করে,
‘এটা কি বুবু? কে পাঠিয়েছে!’
আমি একদম শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তন্ময় ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে। সে সাইন করে দিয়েছে শুধু আমার করাটা বাকি।’
মাহিদ কিছু না বললেও আব্বা-মা ছুটে এসে ধরলেন আমাকে। ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিসের ডিভোর্স!’
‘তন্ময় প’র’কী’য়ায় আসক্ত তাছাড়া ওর পরিবার আমাকে আর সহ্য করতে পারতেছে না তাই ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে।’
মা বললেন, ‘তোরে বলছিলাম না একটু মানাইয়া গুছাইয়া থাকতে! স্বামীরে আঁচলে বাইন্ধা রাখলেই তো হইতো। কেমন মাইয়া তুই?’
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। মাহিদ ক্ষে’পে গিয়ে বললো, ‘তুমি মা নাকি অন্য কিছু! শুনতেছো তোমার মেয়ের জামাই প’র’কী’য়ায় আসক্ত ছিলো তারপরও বলতেছো মানিয়ে গুছিয়ে থাকতে!’
আব্বা ধমক দিলেন মাহিদকে। রাাগী স্বরে বললেন, ‘যেইডা বুঝোস না হেইডা নিয়া খবরদার কথা কইবি না। তোর মা যা কইছে ঠিকই তো কইছে! তোর বইন যদি স্বামীরে নিজের আঁচলে বাইন্ধা রাখতো তাইলে হের স্বামী যাইতো অন্য মাইয়ার কাছে!’
কান ঝা ঝা করে উঠে। এরা কি সত্যি আমার বাবা- মা! হ্যাঁ আসলেই এরা আমার বাবা-মা। উনারাই আমাকে জন্ম দিয়ে পুরো ১৬ টা বছর খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছে। তারপর বেঁচে থাকতেই ঠেলে দিয়েছে জা’হা’ন্না’মে। আমি শান্ত দৃষ্টিতে তাকালাম আব্বা আর মায়ের দিকে। কোনো রকম প্যানিক ছাড়াই বললাম, ‘স্বামীকে বুঝি আঁচলে বাঁধা যায়!’
মা খ্যাক করে উঠলেন। কঠোর স্বরে বললেন, ‘বাধা না গেলে তোর বাপরে কেমনে বাইন্ধা রাখছি! তোর বাপের নামে কোনো খারাপ শুনছোস কখনো?’
আমি হেঁসে বললাাম, ‘সে তো তোমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও তোমাকে অ’ত্যা’চার করেনি মা!’
এ পর্যায়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো আব্বা -মা, মাহমুদা। মাহিদ তো দেখেছেই তারাা কেমন তাই সে খুব একটা অবাক হয়নি। মাহমুদা আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে, ‘কি বললে বুবু! সাফ সাফ বলো কি হয়ছে!’
মা বলে, ‘তোর বুবু এগুলা বাহানা দিতেছে। ওরই ইচ্ছা নাই সংসার করার। আমাগো ওপরে বোঝা হইয়া খাইয়া ম’রা’র জন্য৷’
মাহিদ এবার রেগে গেলো৷ আমি ওর হাত টেনে ধরলাম। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমার মতো মা আমি আমার এজীবনে একটাও দেখিনি। আমি অবাক হই তোমাদের দেখে। তোমাদের কাছে আমি এতোটাই বোঝা! ওই বাড়িতে আর কয়েকদিন পড়ে থাকলে হয়তো আমার লা’শটাও খুঁজে পাওয়া যেতো না তারপরও তোমার মনে হয় আমি বাহানা করে ওই সংসার থেকে চলে আসছি!’
মা কোনো উত্তর দিলো না। আমি আমার দুহাতের ব্লাউজের অংশ খানিকটা উপরে তুলে দিয়ে রক্ত জমে যাওয়া, কলশিটে পড়ে যাওয়া আর পু’ড়ে যাওয়া জায়গা গুলো দেখালাম। মাহমুদা ২ পা পিছিয়ে গেলো। আব্বা-মা শুধু তাকিয়ে থাকলো ক্ষ’ত গুলোর দিকে। আমি তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,
‘এগুলোও নিশ্চয় আমি নিজেই করেছি তাই না মা! এই যে নিজেকে নিজে প্রতিদিন মে’রে ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করেছি! নিজের শরীরে নিজেই গরম খুন্তি চেপে ধরেছি! তাই না মা?’
মাহমুদা হুট করেই কেঁদে উঠে। মেয়েটার হৃদয় একটু বেশিই কোমল। কেউ ওর সামনে আঘাত পেলেই ওর কান্না চলে আসে সেখানে ওর প্রাণপ্রিয় বুবুর এ অবস্থা হয়তো সহ্য করতে পারতেছে না। আমার আর এখন কান্না আসে না। কোমল হৃদয়কে একদম পাথরের মতো শক্ত করে ফেলেছি। এখন কারো কোনো কথা, শরীরের এই দাগ গুলো দেখলে শুধু দীর্ঘশ্বাস আসে ভেতর থেকে। কান্নারা বুঝি বিদায় নিয়েছে আমার থেকে। আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম। পড়ার টেবিল থেকে একটা কলম নিয়ে ডিভোর্স পেপারে গোটা গোরা অক্ষরে নিজের নামটা লিখে দিলাম। ওই রকম প’শুর সাথে সংসার করার থেকে নাহয় আমি ডিভোর্সী ট্যাগ নিয়েই বাঁচবো। জানি ততটা সহজ হবে না তবে লড়াই করতে পারলে কোনো কিছুই কঠিনও হবে না। ডিভোর্স পেপারটাা নিয়ে এসে মাহিদের হাতে ধরিয়ে দিলাম।
‘এটা শহরে গিয়ে কুরিয়ারে তন্ময়ের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবি।’
মা বললেন, ‘তুই সই করছোস কেন?’
‘ওমন মানুষদের সাথে সংসার করার থেকে আমি আজীবন ডিভোর্সী ট্যাগ নিয়ে বাঁচলেও শান্তি পাবো।’
‘তোরে কি আমরা আজীবন আমাগো ঘাড়ে বসাইয়া বসাইয়া খাওয়ামু? আর এই কথা পুরা গ্রাম শুনলে আমাগো কি অবস্থা হইবো তোর ধারণা আছে?’
আমি পেছন ফিরে তাকালাম মায়ের দিকে। রাগটা আর দমাতে পারলাম না। রাগে চিৎকার করে বললাম, ‘বড়লোক জামাই দেখে বিয়ে দেওয়ার আগে এসব চিন্তা করা উচিত ছিলো। আমার জীবনটাা ন’ষ্ট হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র তোমরা দায়ী। এতো বড় বাড়িতে বিনা যৌ’তুকে মেয়ে পাঠিয়েছো! খোঁজ নিয়েছো কখনো তোমাদের মেয়ে কেমন আছে! যখন বিয়ের পর বলেছিলাম ওরা যৌতুকের জন্য আমার ওপর অ’ত্যা’চার করে তখন তোমরা বলেছিলে ‘সহ্য,কর ঠিক হয়ে যাবে!’ আরেহ আর কত! আমিও মানুষ। প্রতিদিন যখন ওরা আমাকে কথা শুনাতো! কথায় কথায় গা’য়ে হাত তুলতো! হাজার বার গরম খুন্তীর আ’ঘাত করতো তখন আমার প্রতিবার মনে হতো ম’রে যাই না কেন আমি! সহ্য করতে পারতাম না তারপরও ওখানেই পড়ে থাাকতে হতো৷ কারণ তোমরা তো আমাকে কখনোই সাপোর্ট করবে না উল্টো বার বার ওখানেই ফেলে রাখবে তাই ওখানেই ম’রার আশায় ছিলাম৷ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল তোমাদের মতো জ’ঘন্য মানুষদের ঘরে জন্ম নেওয়া।’
আব্বা ধমক দিলেন। আমি কানে তুললাম না। রান্নাঘর থেকে একটা গরম খুন্তী আরো গরম করে এনে মায়ের সামনে ধরে বললাম, ‘একদিন এই গরম খুন্তীর আ’ঘাত নিজের গায়ে রাখতে পারবে!’
মা দু পা পিছিয়ে গেলো। আমি ঠা’স করে ফেলে দিলাম মাটিতে। চোখের কোণে ততক্ষণে জল জমে গেছে। কান্নামাখা চোখেই হেঁসে বললাম, ‘তুমি এটা দেখেই দু পা পিছিয়ে যাচ্ছো তাহলে আমি সহ্য করেছি কিভাবে মা? আচ্ছা মা আমি জানতাম মেয়ের কষ্ট আর কেউ না বুঝলেও মা বুঝে, আব্বা-মা সবসময় মেয়েকে সাথ দেয় কিন্তু তোমরা এমন কেন? আমি মেয়ে বলে তোমাদের ওপর এতো বোঝা হয়ে গেলাম! আমার মতো হাজার হাজার মায়ার বুঝি আত্ম’হ’ত্যার কারণই এটা। অবশ্য আমরা মায়ারা আত্ম’হ’ত্যা করি বলেই তো তোমরা জিতে যাও। তাই না!’
মাহিদ আর মাহমুদা দ্রুত পায়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে। মাহিদ ব্যস্ত গলায় বলে, ‘বুবু কি বলছো এসব! দেখো বুবু এসব চিন্তা ভাবনা একদমই মাথায় আনবে না।’
মাহমুদাও ব্যস্ত গলায় বলে, ‘হ্যাঁ বুবু। কেউ তোমার সাথে না থাকলেও আমরা আছি তো। তুমি প্লিজ এসব উল্টা পাল্টা চিন্তা করো না!’
আমি দু ভাইবোনের দিকে একবার তাকালাম। হেঁসে বললাম, ‘শান্ত হ! আমি কিছুই করবো না। এতদিন বোকার মতো মা’র খেয়ে ম’রতে চেয়েছি বলে যে আত্ম’হ’ত্যা করবো এমনও না। আমি বাঁচবো। এ সমাজের জন্য আমি এতো বড় পাপ কখনো করবো না।’
সেদিনের মতো সবটা শান্ত হয়ে গেলো। আব্বা-মা কিছু বললেন না। কিন্তু বিষয়টা হুট করেই পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গেলো। একজন একজন করে পুরো গ্রামে তৈরী হলো আমাকে নিয়ে কথার পাহাড়। আমাকে দেখলেই শুরু হয় হাসি-ঠাট্টা, মুখ কুঁচকানো নয়তো ঠেস মে’রে কথা বলা। এগুলোর কোনোটাই আমি পাত্তা না দিলেও আমার মা আর আব্বা দেন৷ তারা ঘরের মানুষ হয়েও একশোটা কথা শোনায়। কষ্ট হলেও তা কখনো বুঝতে দেই না। দাঁতে দাঁত চেপে সবটাই সহ্য করে নেই। মাইশা, মাহমুদাকে নিয়ে একটু বের হয়েছি। ওদের দুজনেরই কি কি যেনো কিনতে হবে। বায়না ধরেছে আমাকেই নিয়ে যেতে হবে। আমিও দুজনের বায়নার কাছে হার মেনে দুজনকে নিয়ে হাঁটা লাগিয়েছি। ৩ বোন গল্প করতে করতে হাঁটতেছি এরমধ্যেই একজন কাকির সাথে দেখা। তারা ৪ জন বসে গল্প করতেছিলো৷ আমাকে দেখেই নিজেদের মধ্যে কা’না’কা’নি শুরু করে দিয়েছে৷ আমি শুনেও না শুনার ভান করে চলে যেতে নিলে একজন জোড়েই ঠেস মে’রে বললেন,
‘এগুলা অ’পয়া মাইয়া। এগুলারে বাড়িত জায়গা দেওয়ান লাগে না। নিজেগো বাড়ির সাথে সাথে পুরা গ্রামেরও মুখ পু’ড়া’ই’য়া ছাড়ে৷’
উনার কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। মাহমুদা আর মাইশা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সেই কাকির দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে বললাম,
‘কাকি এমনে ঠে’স না মে’রে সরাসরি বলেন। সমস্যা নাই।’
কাকি মুখ ভেংচি কেটে বলে, ‘বুঝছোই যহন তহন আর কি কমু? তা তোমার মতো অ’পয়া মাইয়ারে তোমার বাপ-মা বাড়িত রাখছে ক্যান?’
আমি হেঁসে বললাম, ‘কাকি আমার বিয়ের আগে আপনার মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছিলো না? তার ৪-৫ মাস পরই বাড়ি চলে আসছিলো না! তারপরই তো ডিভোর্স হয়ে গেলো। ঠিক না?’
কাকি ফুঁসে উঠে। যা তা ভাষায় যা তা বলতে থাকে। উচিত কথা বললে সবারই গায়ে লাগে। আমি শব্দ করে হেঁসে দিয়ে বললাম,
‘কাকি নিজের বেলায় ১৬ আনা আর অন্যের বেলা ২ আনাও না! তা নিজের মেয়েকে তো অ’পয়া, অ’লক্ষী বলেননি৷ উল্টো কেউ কিছু বললে তার অবস্থাও খারাপ করে দিতেন। তখন বুঝি ভুলে গেছিলেন যে এগুলা মেয়ে বাড়িতে থাকলে বাড়ির সাথে সাথে গ্রামেরও মানসম্মান খেয়ে ফেলে!’
কাকি চুপ করে গেলেন। আমি মাহমুদা আর মাইশার হাত ধরে বললাম, ‘আপনাদের এসব কথায় আমার কিছু যায় আসে না। আমি না খেয়ে পড়ে থাকলে তো আপনারা একদিনও খাবার দিতে আসেননি! মা’র খাওয়ার সময় তো আমার মা’র খেতে আসেননি। তাহলে আপনাদের কথা কানে নিয়ে শুধু শুধু নিজের ক্ষ’তি কেন করবো! আমি ম’রে গেলে আপনারাই আফসোস করে বলবেন, ‘আহারে মেয়েটা অল্প বয়সে আত্ম’হ’ত্যা করে নিলো!’ অথচ ভুলেই যাবেন মেয়েটার আত্ম’হ’ত্যার কারণও আপনারাই। আপনারা শুধু পারেন মানুষের মনোবল কমিয়ে দিতে, তাদেরকে হারিয়ে দিতে কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন না। এক বেলা না খেলেও কখনো জিজ্ঞেস করতে আসেন না খেয়েছি কি না! আর ডিভোর্সী বলে রাস্তা ঘাটে ঠে’স মে’রে ঠিকই কথা বলেন। আপনারা মনে করেন একটা মেয়ের সংসার ভেঙেছে মানে শুধু তারই দোষ অথচ মেয়েটা যার সাথে সংসার করতেছে তার কতটুকু দোষ থাকতে পারে তা বোঝারই চেষ্টা করেন না। হ্যাঁ বুঝেন শুধু নিজেদেরটা। নিজেদের মেয়েরটা। আপনার মেয়ে ডিভোর্সী হলে আপনি তখন গলা ফাটিয়ে ছেলেটার দোষ বলবেন আর অন্যের মেয়ে ডিভোর্সী হলে তখন গলা ফাটিয়ে মেয়েটার দোষ বলবেন। বাহ সমাাজ বাহ! আপনারা একটা মেয়ে হয়েই ভুলে যান একটা মেয়ে কখনো তার সংসার ভেঙে যাক তা চায় না। ঠিক আছে কতদুর বলতে পারেন বলতে থাকেন। আমি মায়া আর দমে যাবো না। কখনোই না।’
আর কিছু বলতে না দিয়ে দুবোনকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। এ সমাজে ডিভোর্সীদের মূল্য দেওয়া হয় না। ল’ড়াই করতে দেওয়া হয় না। বাঁচতে দেওয়া হয় না তবুও আমাকে টিকে থাকতে হবে। আমি কারোর কথা শুনে দমে যাবো না। জানি লড়াই টা অনেক কঠিন তবুও আমি জিতবো। আমি কারোর কথায় কান দিবো না। কারোর জন্য থেমে থাকবো না। আমি একটা কথা শুনেছিলাম, ‘পুরুষ কখনো নারীর শত্রু হয় না। নারীই নারীর শত্রু হয়!’ এতদিন শুধু শুনতাম আর আজ তা এই পরিস্থিতিতে এসে দেখেও নিচ্ছি।
মাহমুদা আর মাইশা দুজনে আমার কথা নিয়ে গবেষণা করতে করতে মোড়ের দোকান পর্যন্ত আসে। আমি পুরোটা সময়ই চুপ ছিলাম। ওদের যা যা কিনার প্রয়োজন তা কিনে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম বাড়ির পথে। অনেকটা রাস্তা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে পা দেওয়ার সাথে সাথেই ঠা’স করে থা’প্প’ড় পড়ে গালে…
চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম৷ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)#শেষ_প্রান্তের_মায়া (৪)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________
কেটে গেছে প্রায় ১১ দিন। এই ১১ দিন থাকা নিয়ে কম কথা শুনতে হচ্ছে না। মা-আব্বা বার বার এসে জিজ্ঞেস করতেছে ‘কেনো বাড়ি যাচ্ছি না! কেনো জামাই আসছে না!’ আমি উনাদের প্রশ্ন গুলো শুধু শুনি কোনো উত্তর দেই না। প্রয়োজনই মনে করি না। যেদিন ডিভোর্স পেপার আসবে সেদিন ওরা নিজেরাই সব জানবে। এতদিন থাকা নিয়ে গ্রামের লোকজনও টুকটাক কা’না ঘুষা করে। কোনো কাপড় আনিনি বলে আমার পুরোনো কাপড়ই পড়ি। এর মধ্যে শুধু ২ টা সাধারণ শাড়ি এনে দিয়েছে মাহিদ। দিন গুনছিলাম কবে তন্ময় ডিভোর্স পেপার পাঠাবে কবে আমি মুক্তি পাবো! তবে দিনটা যে আজই হবে তা বুঝতে পারিনি৷ ভালোই হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাবো তত তাড়াতাড়ি আমার য’ন্ত্রণা গুলোও কমে যাবে। হাতে খাম টা নিয়ে কেবল দাঁড়াতেই মাহিদ এসে জিজ্ঞেস করে,
‘এটা কি বুবু? কে পাঠিয়েছে!’
আমি একদম শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তন্ময় ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে। সে সাইন করে দিয়েছে শুধু আমার করাটা বাকি।’
মাহিদ কিছু না বললেও আব্বা-মা ছুটে এসে ধরলেন আমাকে। ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিসের ডিভোর্স!’
‘তন্ময় প’র’কী’য়ায় আসক্ত তাছাড়া ওর পরিবার আমাকে আর সহ্য করতে পারতেছে না তাই ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে।’
মা বললেন, ‘তোরে বলছিলাম না একটু মানাইয়া গুছাইয়া থাকতে! স্বামীরে আঁচলে বাইন্ধা রাখলেই তো হইতো। কেমন মাইয়া তুই?’
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। মাহিদ ক্ষে’পে গিয়ে বললো, ‘তুমি মা নাকি অন্য কিছু! শুনতেছো তোমার মেয়ের জামাই প’র’কী’য়ায় আসক্ত ছিলো তারপরও বলতেছো মানিয়ে গুছিয়ে থাকতে!’
আব্বা ধমক দিলেন মাহিদকে। রাাগী স্বরে বললেন, ‘যেইডা বুঝোস না হেইডা নিয়া খবরদার কথা কইবি না। তোর মা যা কইছে ঠিকই তো কইছে! তোর বইন যদি স্বামীরে নিজের আঁচলে বাইন্ধা রাখতো তাইলে হের স্বামী যাইতো অন্য মাইয়ার কাছে!’
কান ঝা ঝা করে উঠে। এরা কি সত্যি আমার বাবা- মা! হ্যাঁ আসলেই এরা আমার বাবা-মা। উনারাই আমাকে জন্ম দিয়ে পুরো ১৬ টা বছর খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছে। তারপর বেঁচে থাকতেই ঠেলে দিয়েছে জা’হা’ন্না’মে। আমি শান্ত দৃষ্টিতে তাকালাম আব্বা আর মায়ের দিকে। কোনো রকম প্যানিক ছাড়াই বললাম, ‘স্বামীকে বুঝি আঁচলে বাঁধা যায়!’
মা খ্যাক করে উঠলেন। কঠোর স্বরে বললেন, ‘বাধা না গেলে তোর বাপরে কেমনে বাইন্ধা রাখছি! তোর বাপের নামে কোনো খারাপ শুনছোস কখনো?’
আমি হেঁসে বললাাম, ‘সে তো তোমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও তোমাকে অ’ত্যা’চার করেনি মা!’
এ পর্যায়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো আব্বা -মা, মাহমুদা। মাহিদ তো দেখেছেই তারাা কেমন তাই সে খুব একটা অবাক হয়নি। মাহমুদা আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে, ‘কি বললে বুবু! সাফ সাফ বলো কি হয়ছে!’
মা বলে, ‘তোর বুবু এগুলা বাহানা দিতেছে। ওরই ইচ্ছা নাই সংসার করার। আমাগো ওপরে বোঝা হইয়া খাইয়া ম’রা’র জন্য৷’
মাহিদ এবার রেগে গেলো৷ আমি ওর হাত টেনে ধরলাম। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমার মতো মা আমি আমার এজীবনে একটাও দেখিনি। আমি অবাক হই তোমাদের দেখে। তোমাদের কাছে আমি এতোটাই বোঝা! ওই বাড়িতে আর কয়েকদিন পড়ে থাকলে হয়তো আমার লা’শটাও খুঁজে পাওয়া যেতো না তারপরও তোমার মনে হয় আমি বাহানা করে ওই সংসার থেকে চলে আসছি!’
মা কোনো উত্তর দিলো না। আমি আমার দুহাতের ব্লাউজের অংশ খানিকটা উপরে তুলে দিয়ে রক্ত জমে যাওয়া, কলশিটে পড়ে যাওয়া আর পু’ড়ে যাওয়া জায়গা গুলো দেখালাম। মাহমুদা ২ পা পিছিয়ে গেলো। আব্বা-মা শুধু তাকিয়ে থাকলো ক্ষ’ত গুলোর দিকে। আমি তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,
‘এগুলোও নিশ্চয় আমি নিজেই করেছি তাই না মা! এই যে নিজেকে নিজে প্রতিদিন মে’রে ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করেছি! নিজের শরীরে নিজেই গরম খুন্তি চেপে ধরেছি! তাই না মা?’
মাহমুদা হুট করেই কেঁদে উঠে। মেয়েটার হৃদয় একটু বেশিই কোমল। কেউ ওর সামনে আঘাত পেলেই ওর কান্না চলে আসে সেখানে ওর প্রাণপ্রিয় বুবুর এ অবস্থা হয়তো সহ্য করতে পারতেছে না। আমার আর এখন কান্না আসে না। কোমল হৃদয়কে একদম পাথরের মতো শক্ত করে ফেলেছি। এখন কারো কোনো কথা, শরীরের এই দাগ গুলো দেখলে শুধু দীর্ঘশ্বাস আসে ভেতর থেকে। কান্নারা বুঝি বিদায় নিয়েছে আমার থেকে। আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম। পড়ার টেবিল থেকে একটা কলম নিয়ে ডিভোর্স পেপারে গোটা গোরা অক্ষরে নিজের নামটা লিখে দিলাম। ওই রকম প’শুর সাথে সংসার করার থেকে নাহয় আমি ডিভোর্সী ট্যাগ নিয়েই বাঁচবো। জানি ততটা সহজ হবে না তবে লড়াই করতে পারলে কোনো কিছুই কঠিনও হবে না। ডিভোর্স পেপারটাা নিয়ে এসে মাহিদের হাতে ধরিয়ে দিলাম।
‘এটা শহরে গিয়ে কুরিয়ারে তন্ময়ের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবি।’
মা বললেন, ‘তুই সই করছোস কেন?’
‘ওমন মানুষদের সাথে সংসার করার থেকে আমি আজীবন ডিভোর্সী ট্যাগ নিয়ে বাঁচলেও শান্তি পাবো।’
‘তোরে কি আমরা আজীবন আমাগো ঘাড়ে বসাইয়া বসাইয়া খাওয়ামু? আর এই কথা পুরা গ্রাম শুনলে আমাগো কি অবস্থা হইবো তোর ধারণা আছে?’
আমি পেছন ফিরে তাকালাম মায়ের দিকে। রাগটা আর দমাতে পারলাম না। রাগে চিৎকার করে বললাম, ‘বড়লোক জামাই দেখে বিয়ে দেওয়ার আগে এসব চিন্তা করা উচিত ছিলো। আমার জীবনটাা ন’ষ্ট হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র তোমরা দায়ী। এতো বড় বাড়িতে বিনা যৌ’তুকে মেয়ে পাঠিয়েছো! খোঁজ নিয়েছো কখনো তোমাদের মেয়ে কেমন আছে! যখন বিয়ের পর বলেছিলাম ওরা যৌতুকের জন্য আমার ওপর অ’ত্যা’চার করে তখন তোমরা বলেছিলে ‘সহ্য,কর ঠিক হয়ে যাবে!’ আরেহ আর কত! আমিও মানুষ। প্রতিদিন যখন ওরা আমাকে কথা শুনাতো! কথায় কথায় গা’য়ে হাত তুলতো! হাজার বার গরম খুন্তীর আ’ঘাত করতো তখন আমার প্রতিবার মনে হতো ম’রে যাই না কেন আমি! সহ্য করতে পারতাম না তারপরও ওখানেই পড়ে থাাকতে হতো৷ কারণ তোমরা তো আমাকে কখনোই সাপোর্ট করবে না উল্টো বার বার ওখানেই ফেলে রাখবে তাই ওখানেই ম’রার আশায় ছিলাম৷ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল তোমাদের মতো জ’ঘন্য মানুষদের ঘরে জন্ম নেওয়া।’
আব্বা ধমক দিলেন। আমি কানে তুললাম না। রান্নাঘর থেকে একটা গরম খুন্তী আরো গরম করে এনে মায়ের সামনে ধরে বললাম, ‘একদিন এই গরম খুন্তীর আ’ঘাত নিজের গায়ে রাখতে পারবে!’
মা দু পা পিছিয়ে গেলো। আমি ঠা’স করে ফেলে দিলাম মাটিতে। চোখের কোণে ততক্ষণে জল জমে গেছে। কান্নামাখা চোখেই হেঁসে বললাম, ‘তুমি এটা দেখেই দু পা পিছিয়ে যাচ্ছো তাহলে আমি সহ্য করেছি কিভাবে মা? আচ্ছা মা আমি জানতাম মেয়ের কষ্ট আর কেউ না বুঝলেও মা বুঝে, আব্বা-মা সবসময় মেয়েকে সাথ দেয় কিন্তু তোমরা এমন কেন? আমি মেয়ে বলে তোমাদের ওপর এতো বোঝা হয়ে গেলাম! আমার মতো হাজার হাজার মায়ার বুঝি আত্ম’হ’ত্যার কারণই এটা। অবশ্য আমরা মায়ারা আত্ম’হ’ত্যা করি বলেই তো তোমরা জিতে যাও। তাই না!’
মাহিদ আর মাহমুদা দ্রুত পায়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে। মাহিদ ব্যস্ত গলায় বলে, ‘বুবু কি বলছো এসব! দেখো বুবু এসব চিন্তা ভাবনা একদমই মাথায় আনবে না।’
মাহমুদাও ব্যস্ত গলায় বলে, ‘হ্যাঁ বুবু। কেউ তোমার সাথে না থাকলেও আমরা আছি তো। তুমি প্লিজ এসব উল্টা পাল্টা চিন্তা করো না!’
আমি দু ভাইবোনের দিকে একবার তাকালাম। হেঁসে বললাম, ‘শান্ত হ! আমি কিছুই করবো না। এতদিন বোকার মতো মা’র খেয়ে ম’রতে চেয়েছি বলে যে আত্ম’হ’ত্যা করবো এমনও না। আমি বাঁচবো। এ সমাজের জন্য আমি এতো বড় পাপ কখনো করবো না।’
সেদিনের মতো সবটা শান্ত হয়ে গেলো। আব্বা-মা কিছু বললেন না। কিন্তু বিষয়টা হুট করেই পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গেলো। একজন একজন করে পুরো গ্রামে তৈরী হলো আমাকে নিয়ে কথার পাহাড়। আমাকে দেখলেই শুরু হয় হাসি-ঠাট্টা, মুখ কুঁচকানো নয়তো ঠেস মে’রে কথা বলা। এগুলোর কোনোটাই আমি পাত্তা না দিলেও আমার মা আর আব্বা দেন৷ তারা ঘরের মানুষ হয়েও একশোটা কথা শোনায়। কষ্ট হলেও তা কখনো বুঝতে দেই না। দাঁতে দাঁত চেপে সবটাই সহ্য করে নেই। মাইশা, মাহমুদাকে নিয়ে একটু বের হয়েছি। ওদের দুজনেরই কি কি যেনো কিনতে হবে। বায়না ধরেছে আমাকেই নিয়ে যেতে হবে। আমিও দুজনের বায়নার কাছে হার মেনে দুজনকে নিয়ে হাঁটা লাগিয়েছি। ৩ বোন গল্প করতে করতে হাঁটতেছি এরমধ্যেই একজন কাকির সাথে দেখা। তারা ৪ জন বসে গল্প করতেছিলো৷ আমাকে দেখেই নিজেদের মধ্যে কা’না’কা’নি শুরু করে দিয়েছে৷ আমি শুনেও না শুনার ভান করে চলে যেতে নিলে একজন জোড়েই ঠেস মে’রে বললেন,
‘এগুলা অ’পয়া মাইয়া। এগুলারে বাড়িত জায়গা দেওয়ান লাগে না। নিজেগো বাড়ির সাথে সাথে পুরা গ্রামেরও মুখ পু’ড়া’ই’য়া ছাড়ে৷’
উনার কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম। মাহমুদা আর মাইশা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সেই কাকির দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে বললাম,
‘কাকি এমনে ঠে’স না মে’রে সরাসরি বলেন। সমস্যা নাই।’
কাকি মুখ ভেংচি কেটে বলে, ‘বুঝছোই যহন তহন আর কি কমু? তা তোমার মতো অ’পয়া মাইয়ারে তোমার বাপ-মা বাড়িত রাখছে ক্যান?’
আমি হেঁসে বললাম, ‘কাকি আমার বিয়ের আগে আপনার মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছিলো না? তার ৪-৫ মাস পরই বাড়ি চলে আসছিলো না! তারপরই তো ডিভোর্স হয়ে গেলো। ঠিক না?’
কাকি ফুঁসে উঠে। যা তা ভাষায় যা তা বলতে থাকে। উচিত কথা বললে সবারই গায়ে লাগে। আমি শব্দ করে হেঁসে দিয়ে বললাম,
‘কাকি নিজের বেলায় ১৬ আনা আর অন্যের বেলা ২ আনাও না! তা নিজের মেয়েকে তো অ’পয়া, অ’লক্ষী বলেননি৷ উল্টো কেউ কিছু বললে তার অবস্থাও খারাপ করে দিতেন। তখন বুঝি ভুলে গেছিলেন যে এগুলা মেয়ে বাড়িতে থাকলে বাড়ির সাথে সাথে গ্রামেরও মানসম্মান খেয়ে ফেলে!’
কাকি চুপ করে গেলেন। আমি মাহমুদা আর মাইশার হাত ধরে বললাম, ‘আপনাদের এসব কথায় আমার কিছু যায় আসে না। আমি না খেয়ে পড়ে থাকলে তো আপনারা একদিনও খাবার দিতে আসেননি! মা’র খাওয়ার সময় তো আমার মা’র খেতে আসেননি। তাহলে আপনাদের কথা কানে নিয়ে শুধু শুধু নিজের ক্ষ’তি কেন করবো! আমি ম’রে গেলে আপনারাই আফসোস করে বলবেন, ‘আহারে মেয়েটা অল্প বয়সে আত্ম’হ’ত্যা করে নিলো!’ অথচ ভুলেই যাবেন মেয়েটার আত্ম’হ’ত্যার কারণও আপনারাই। আপনারা শুধু পারেন মানুষের মনোবল কমিয়ে দিতে, তাদেরকে হারিয়ে দিতে কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেন না। এক বেলা না খেলেও কখনো জিজ্ঞেস করতে আসেন না খেয়েছি কি না! আর ডিভোর্সী বলে রাস্তা ঘাটে ঠে’স মে’রে ঠিকই কথা বলেন। আপনারা মনে করেন একটা মেয়ের সংসার ভেঙেছে মানে শুধু তারই দোষ অথচ মেয়েটা যার সাথে সংসার করতেছে তার কতটুকু দোষ থাকতে পারে তা বোঝারই চেষ্টা করেন না। হ্যাঁ বুঝেন শুধু নিজেদেরটা। নিজেদের মেয়েরটা। আপনার মেয়ে ডিভোর্সী হলে আপনি তখন গলা ফাটিয়ে ছেলেটার দোষ বলবেন আর অন্যের মেয়ে ডিভোর্সী হলে তখন গলা ফাটিয়ে মেয়েটার দোষ বলবেন। বাহ সমাাজ বাহ! আপনারা একটা মেয়ে হয়েই ভুলে যান একটা মেয়ে কখনো তার সংসার ভেঙে যাক তা চায় না। ঠিক আছে কতদুর বলতে পারেন বলতে থাকেন। আমি মায়া আর দমে যাবো না। কখনোই না।’
আর কিছু বলতে না দিয়ে দুবোনকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। এ সমাজে ডিভোর্সীদের মূল্য দেওয়া হয় না। ল’ড়াই করতে দেওয়া হয় না। বাঁচতে দেওয়া হয় না তবুও আমাকে টিকে থাকতে হবে। আমি কারোর কথা শুনে দমে যাবো না। জানি লড়াই টা অনেক কঠিন তবুও আমি জিতবো। আমি কারোর কথায় কান দিবো না। কারোর জন্য থেমে থাকবো না। আমি একটা কথা শুনেছিলাম, ‘পুরুষ কখনো নারীর শত্রু হয় না। নারীই নারীর শত্রু হয়!’ এতদিন শুধু শুনতাম আর আজ তা এই পরিস্থিতিতে এসে দেখেও নিচ্ছি।
মাহমুদা আর মাইশা দুজনে আমার কথা নিয়ে গবেষণা করতে করতে মোড়ের দোকান পর্যন্ত আসে। আমি পুরোটা সময়ই চুপ ছিলাম। ওদের যা যা কিনার প্রয়োজন তা কিনে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম বাড়ির পথে। অনেকটা রাস্তা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে পা দেওয়ার সাথে সাথেই ঠা’স করে থা’প্প’ড় পড়ে গালে…
চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম৷ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)