শেষ প্রান্তের মায়া পর্ব -০৫

#শেষ_প্রান্তের_মায়া (৫)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________

এতজোড়ে থা’প্প’ড় পড়েছে মনে হচ্ছিলো আমার দুনিয়ায় ঘুরিয়ে উঠেছে। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি থা’প্প’ড়টা দিয়েছে আমার আব্বা। পেছনেই মা র’ক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। তার পেছনে তখনকার সেই কাকি দাঁড়িয়ে আছে। মাহমুদা আর মাইশা ভয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে। আমি কি বলবো খুঁজে পেলাম না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম আব্বার দিকে। আব্বা রাগী গলায় বললেন,

‘এমনেই তো আমাগো ঘাড়ে বইসা খাইতাছোস আবার বে’হা’য়ার মতো মাইনষের লগে ঝ’গড়া করতো তোর শরম করে না! তোর মতো মাইয়া ম’রে না কেন?’

আমি কিছু বলার মতো খুঁজে পেলাম না। আব্বার মুখে নিজের জন্য এতো বড় কথা শুনে নিজের ভাষা হারিয়ে ফেললাম৷ সব থেকে বড় কথা আমি কখন, কার সাথে ঝ’গড়া করলাম! আমি তো কারো সাথে তেমন একটা কথা-ই বলি না। চোখের কোণে টুপটাপ জল জমে গেছে। কোনো রকমে নিজেকে সামলে বললাম,

‘কার সাথে ঝ’গড়া করেছি আব্বা?’

পেছন থেকে মা তেড়ে আসলেন। আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললেন, ‘কার সাথে ঝ’গড়া বাদাইছোস জানোস না! নাটক করস!’

‘নাটক করার কি আছে মা! বুবু কি করছে এইটা তো বলো!’

মাহমুদার দিকে র’ক্তচক্ষু নিয়ে তাকালেন আব্বা আর মা৷ দুজনেই ওকে ধমকিয়ে থামিয়ে দিলেন। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম পেছনে সেই কাকি দাঁড়িয়ে আছে যার সাথে কিছুক্ষণ আগে আমার তর্ক হয়েছিলো৷ সামান্য তর্কের জন্য এভাবে এসে আমার আব্বা- মা’কে কান পো’ড়া দেবে! এবার আমার রাগ হলো। অভিমান হলো। তাদের প্রতি আমার অভিযোগের পাহাড় গড়লো। আমি তাদের কাছে এতোটাই বো’ঝা হয়ে গেছি যে মানুষের কথা শুনে আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করবে! আমি ডিভোর্সী, আমি মেয়ে বলে কি আমি মানুষ নই? আব্বা আর মা নিজেদের মতো যা তা বলতে থাকলেন। আমি তাদের কিছু না বলে তাকালাম কাকির দিকে। কাকি আমার তাকানো দেখে ভড়কে গেলেন৷ দৃষ্টি এদিক ওদিক করতে থাকলেন। আমি হেঁসে বললাম,

‘কাকি এক মাঘে কখনো শীত যায় না। আজ আপনারা আমার সাথে যা করছেন এমন যেনো কখনো না হয় যে আপনাদের সাথেও এমন হয়!’

কাকি তেড়ে এসে বললেন, ‘বলি ল’জ্জা শরম সব কি খাইয়া ফেলছোস! অ’ন্যায় কইরা আবার অ’ভিশাপ দেস!’

‘ওটা আমার কাজ না কাকি। ওটা তো আপনাদের কাজ। তবে হৃদয় ভা’ঙা, অ’ত্যা’চা’রিত মানুষের দোয়া বা অ’ভিশাপ যা-ই বলেন আল্লাহ আবার দ্রুত কবুল করে নেয়। তবে আমি অ’ভিশাপ দিয়ে নিজেকে ছোট করবো না৷ সব কিছু আমার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম।’

কাকির সামনে থেকে সরে গিয়ে আব্বা আর মায়ের দিকে এগোলাম। হেঁসে বললাম, ‘তোমাদের কাছে আমি এতো বো’ঝা হয়ে গেছি যে কথায় কথায় খাওয়ার খো’টা টুকু দিতেও ভুলে যাাও না! কত সহজে বলে দাও ‘ম’রি না কেন!’ অন্যের কথা শুনে আমাকে কিছু বলার আগে না হয় একটা বার ভেবে নিতে! খুব ক্ষ’তি হতো? আমাকে একটা বার জিজ্ঞেস করতে আসলে কি হয়ছিলো! মাহমুদা, মাইশা ওরাও তো আমার সাথেই ছিলো অন্তত একটাবার ওদেরকেই জিজ্ঞেস করে দেখতে! তোমাদের কাছে তোমার মেয়ের থেকেও গ্রামের লোকজন, মানসম্মান এগুলো আগে তাই না! আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তো তোমাদের অ’ভিশাপ দিতে পারবো না। হাজার হলেও তোমরাাই আমাকে জন্ম দিয়েছো। তবে আমি তোমাদের মুক্তি দিতে পারি।’

আব্বা-মা একটু অবাক চোখেই তাকালেন। আমি একটু হাসলাম। চুপচাপ ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। মাহমুদা আর মাইশা ছুটে আসে আমার কাছে৷ দুজনে দুপাশ থেকে আঁকড়ে ধরে বলে,

‘বুবু কই যাও তুমি? কি করবে? একদম উল্টা পাল্টা কিছু করবে নাা তুমি।’

আমি দুজনকে ছাড়িয়ে বললাম, ‘কিছু করবো না৷ বিশ্বাস নাা হলে আমার সাথে ঘরে আয়।’

মাহমুদা আর মাইশা মেনে নিলো। আমি চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকলাম৷ মাহিদের দেওয়া ২ টা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো একটা ছোট্ট ব্যাগে নিয়ে নিলাম। মাহমুদা জিজ্ঞেস করে,

‘এগুলো কি করবে বুবু?’

‘তোদের আব্বা-মা’কে মুক্তি দিয়ে দিবো।’

‘মানে?’

‘চল দেখতে পাবি।’

মাহমুদা আমার দিকে কেমন ভাবে তাকালো। নিজের ঘরকে শেষ বারের মতো দেখে বেড়িয়ে আসলাম। আব্বা-মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘এগুলো মাহিদ আমাকে দিয়েছিলো। এগুলো নিলে নিশ্চয় তোমাদের কোনো আপত্তি নেই? আর যদি তবুও কোনো আপত্তি থাকে তবে নিবো না।’

তারা কোনো কথা বললেন না। আমি মাহমুদা আর মাইশার কপালে চুমু দিলাম। মাহিদটা বাড়িতে নেই। কোথায় গেছে আমি জানি না। ইশশশ ওকে বোধহয় আর দেখা হবে না। আমি ব্যাগ তুলে নিয়ে বললাম,

‘তোমাদের ওপর বসে বসে আর খাবো না৷ আর না আমার জন্য তোমাদের মান-সম্মানের ক্ষ’তি হবে! এখন থেকে কেউ তোমাদের যদি আমার কথা জিজ্ঞেস করে তখন বলবে ‘মায়া ম’রে গেছে’।’

মাহমুদা ছুটে আসে আমার কাছে। জাপ্টে ধরে বলে, ‘তুমি কোথাও যাবে না বুবু। আমি তোমাকে যেতে দেবো না।’

আমি মাহমুদার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, ‘তুই কি চাস তোর বুবু ম’রে যাক?’

মাহমুদা দু পাশে মাাথা নাাড়ায়। আমি চোখের কোণের জল মুছে বললাম, ‘তাহলে যেতে দে। তোর বুবু এখানে থাকলে ম’রে যাবে। এখান থেকে চলে গেলে তাাও যদি বাঁচতে পারি!’

মাহমুদা ছেড়ে দেয়। বলে, ‘একটু দাড়াও বুবু। আসতেছি!’

আমি দাঁড়ালাম। এক ছুটে রুমে গিয়ে আবার ছুটে আসে সে। হাতে ১০০ টাকার কয়েকটা নোট গুজে দিয়ে বলে, ‘এটা আমি জমিয়েছিলাম বুবু। কোনো কাজে আসেনি। এটা তুমি রেখে দাও। যেখানেই যাও কাজে লাগবে।’

মাইশাও ছুটে আসে। তার হাতেও কতগুলো টাকা। আমার হাতে দিয়ে বলে, ‘এগুলোও রাখো বুবু। তুমি যেখানেই যাও ভালো থেকো কেমন!’

আমি ওদের দিকে তাকালাম। দুবোনকে দুপাশ থেকে জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। তবুও আমার নি’র্দয় আব্বা-মা একটা টু শব্দও করলেন না। আমি ওদেরকে আদর করে দিয়ে দু পা এগোলাম। চোখ তখনও ভিজে আছে৷ ভেজা গলায় আব্বা-মায়ের উদ্দেশ্যে বললাম,

‘আজ থেকে আপনাদের যেমন ২ মেয়ে ১ ছেলে তেমনই আজ থেকে আমিও অনাথ। আমার ২ বোন ১ ভাই থাকলেও আব্বা-মা ম’রে গেলেন আমার কাছে। কখনো যদি আমি আপনাদের আগে মা’রা যাই তবে আমার খাটিয়া আপনাদের ধরতে দেওয়া হবে না। আমার ম’রা মুখটিও যেনো আপনাদের দেখার সুযোগ না হয় সেই দোয়া করবো মনে মনে। আর আপনারা আমার আগে মা’রা গেলে আমি আপনাদের কবর টাও দেখতে আসবো না। আমার এই পা’ষাণতার জন্য দায়ী আপনারা। আমাকে ভেতর থেকে ভে’ঙে দেওয়ার জন্য দায়ী আপনারা। আমি এ জন্মে আপনাদের আর আমার প্রাক্তন স্বামীর পরিবারকে কখনো মাফ করবো না। আপনাদের মতো ক’ষ্ট এ পৃথিবীতে আমাকে আর কেউ দেয় নি এমনকি এই সমাজও না৷ আব্বা-মা পাশে থাকলে সহজেই লড়ে যাওয়া যায় সবার সাথে তবে আমি পাইনি আপনাদেরকে পাশে। এ আ’ক্ষেপ আমার আমৃ’ত্যু থেকে যাবে।’

পেছন ফিরে আর দেখিওনি৷ তবে আমার দুবোনের হাউমাউ করা কান্না আমার কানে এসেছে৷ তবে আমি পিছুটান চাই না। তাই তো স্বার্থ’পরের মতো চুপচাপ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম। আমি জানি না আমার ভাগ্যে কি আছে তবে এটুকু জানি এজীবনে বোধহয় সুখের দেখা আর পাওয়াা হবে না। কিছুদুর হেঁটে এসে একটা ভ্যানে করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসলাম। বাস কাউন্টার থেকে জানলাম বাস আসবে আরো প্রায় ১ ঘন্টা পর। চুপচাপ সাথে আনা ব্যাগ টা আঁকড়ে ধরে বসে রইলাম৷ নিজের জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যস্ত যখন আমি তখনই পুরুষালী কন্ঠে একজন বললেন,

‘বসবো মায়া!’

আমি চমকে তাকালাম। রাফিন ভাই কে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম৷ তিনি বোধহয় বুঝলেন। তাই ব্যস্ত গলায় বললেন,

‘সমস্যা নেই। আমি চলে যাচ্ছি!’

নিচু গলায় বললাম, ‘বসুন। এখানে বসতে তো অনুমতি লাগে না।’

তিনি কিছু বললেন না। চুপচাপ বসে পড়লেন। দুজনের মধ্যেই চললো অনেকক্ষণ নিরবতা। একপর্যায়ে তিনি নিজেই বললেন, ‘শুনলাম তোমার ডিভোর্স হয়ে গেছে!’

ছোট্ট করে বললাম, ‘হু।’

‘আমি কিন্তু কখনো তোমাকে অ’ভিশাাপ দেইনি৷ আমি সবসময় চেয়েছি তুমি ভালো থাকো। কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু চেয়েছিলো!’

আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম, ‘রুপা কেমন আছে? ওর শরীর কেমন?’

‘হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।’

তারপর আবার নিরবতা। আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে এভাবে বসে থাকতে৷ কখন বাস আসবে আমার জানা নেই৷ রাফিন ভাই বললেন, ‘কোথাও যাচ্ছো!’

‘হুম। গ্রাম ছেড়ে আজীবনের মতো চলে যাচ্ছি। আল্লাাহ যেনো কখনো আর এ গ্রামে পা না রাখায়!’

‘কেনো? কি হয়ছে?’

হেঁসে বললাম, ‘ওই যে ভাগ্য! সেইটাই আর কি।’

সে আর কিছু বললো না। বলার মতো আমাদের মধ্যে কিছু নেইও। সে তার জীবন নিয়ে সুখী আমি আমার ভাগ্যের টানে অসুখী। ব্যস এটুকুই তো! অনেকটা সময় পর সে বলে,

‘তোমাকে হারানোর পর যখন আমি পাগল পাগল হয়ে গেছিলাম তখন হঠাৎ করেই রুপা এসে সবটা বদলে দিলো। তুমি প্রথম প্রেম হলেও সে আমার শেষ প্রেম। তার প্রতি আমার অভ্যাস, মায়া সবটা ভালো মতো বসে গেছে। তোমাকে ছাড়া হয়তো বেঁচে থাকতে পেরেছি কিন্তু ওকে হারাালে আর বাঁচা সম্ভব না। তুমিও হয়তো কাউকে না কাউকে পাবে যে তোমাকে এই অসহ্য য’ন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে৷ তোমাকে ভাালো রাখবে, ভালবাসবে। তবে সেই সত্যিকারের মামুষটা কিন্তু তুমি খুঁজে নিও। তোমার জন্য আমার আর রুপার অসম্ভব দোয়া থাকবে। তুমি সব সময় ভালো থাকো এটাই চাইবো আমরা।’

ব্যস! উনি চলে গেলেন। উনাদের মধ্যকারের ভালোবাাসার কথা শুনে মুগ্ধতায় ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। আমি সত্যিই ওদের এতো ভালোবাসা দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি। কবে না কবে রাফিন ভাই আমাকে ভালোবেসেছে তা নিয়ে আমার একটুও মাথা ব্যাথা নেই৷ বরং আমার সই এতো ভালো মানুষ পেয়েছে এটা ভেবেই খুশি হলাম ভীষণ। ইশশ তন্ময় যদি আমাকে এর ১% ভালোবাসতো আমি থেকে যেতাম। ওর পরিবার যদি আমাকে একটু ভালোবাসতো আমি থেকে যেতাম। যাক যা হয় তাা ভালোর জন্যই হয়। হয়তো আল্লাহ তায়ালা এভাবেই আমার ভালো রেখেছেন৷ হয়তো তিনি তার সৃষ্টির ধৈর্য পরীক্ষা নিচ্ছেন!

প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো বসে ছিলাাম বাসস্ট্যান্ডে। হুট করে কোথা থেকে হাাজির হয় মাহিদ। রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। আমাাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে। আমি অবাক হয়। ওকে ছাড়িয়ে দ্রুত বসায় বেঞ্চে।

‘কি হয়ছে ভাই? হাঁপাচ্ছিস কেনো?’

ভাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় আমার দিকে। ওর তাকানোতে চমকে যাই আমি৷ মাহিদ বলে,

‘আমার জন্য একটু অপেক্ষা করে তারপর আসলে কি হতো বুবু? তোমার কি এমন তাড়া যে আমাকে না জানিয়েই কোথাও চলে যাচ্ছো!’

‘তোকে কে বললো?’

‘তুমি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর পরই মাইশা আর মাহমুদা আমার কাছে আসে। আমি কত জোড়ে ছুটে এসেছি তোমার ধারণা আছে! যদি চলে যেতে তাহলে তো আমি কান্নাই করে ফেলতাম।’

ওর কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললাম। মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, ‘তোর জন্যই আমি বেঁচে থাকার প্রেরণা পাই ভাই। তুই না থাকলে হয়তো আমি কবেই হারিয়ে যেতাম।’

‘হয়ছে! তাা তো দেখতেই পাচ্ছি। তুমি টিকিট কাটছো!’

‘হ্যাঁ। কেনো?’

‘দাঁড়াও আমি টিকিট আনি।’

‘তুই কোথায় যাবি?’

‘তোমার সাাথে যাবো৷ তোমাকে আমি একা ছাড়বো এটা ভাবো কেমনে! এগুলা নিয়ে আর কোনো কথা বলবে না।’

আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই দৌড়ে চলে যায় কাউন্টাারে। আমি শুধু বোকার মতো তাকিয়েই থাকলাম ভাইয়ের যাওয়ার দিকে৷

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ বাস্তবতার সাথে মিল রেখে লিখা। কিছু বাস্তব উদাহরণ আর কিছুটা কাল্পনিক। তাই এটা আর বাকি গল্পের থিমের মতো না ভাবাই ভালো🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here