শেষ প্রান্তের মায়া পর্ব -০৬

#শেষ_প্রান্তের_মায়া (৬)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_______________

যে শহর থেকে আমি ক্ষ’তর পাহাড় পেয়েছি আজ আবারও সে শহরে পা রাখলাম। এই শহরের একেকটা ইট পাথরে একেকটা পরিবারের গল্প। কারোর সুন্দর জীবনের তো কারোর য’ন্ত্রণার জীবনের। একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম। ভাইকে বললাম,

‘ভাই এই শহরে তো আমাদের কেউ নাই। কোথায় যাবো এখন আমরা?’

মাহিদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। আমি জানি সে নিজেও জাানে না কোথায় যাবো আমরা। শুধু শুধু আমার জন্য ছেলেটা এমন পরিস্থিতিতে পড়লো। মাহিদ আমার হাত ধরে বলে,

‘দেখো বুবু আমাদের কাছে তো এতো টাকা নেই যে ভালো কোনো বিল্ডিং এ বাড়ি ভাড়া নেবো। তার থেকে সামনে এগিয়ে দেখি কোথাও বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় কি না!’

আমি সায় দিলাম। আসলেও আমাদের কাছে আলিশান বিল্ডিং এ থাকার মতো টাকা নাই। আমি জানি আল্লাহ তায়ালা ঠিকই কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে দেবেন। দু ভাই বোন লোকজনকে বলে বলে একটা বাড়ির সামনে আসলাম। বাড়িটা ইট পাথরের তৈরী হলেও টিনশেড করা। একজন লোক বললেন এ বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে। বাড়ির গেইটে নক করতেই দরজা খুলে দিলেন একজন মহিলা। আমাদের দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,

‘কি চাই?’

‘আসলে কাকি একজন বললো এই বাড়িটা নাকি ভাড়াতে দেওয়া হবে!’

‘হ্যাঁ। কিন্তু তোমরা সম্পর্কে কি হও?’

‘ভাই বোন।’

মহিলাটি কেমন করে তাকালেন। দুজনেরই পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললেন, ‘ভাই বোন!’

মাহিদ বলে, ‘হ্যাঁ। আসলে আমাদের বাবা-মা নেই তাই পেট চালানোর দায়ে দুজনই শহরে আসলাম কিন্তু কি করবো দুজনের কেউই জানি না।’

‘তোমার বোনকে বিয়ে দাও নি?’

মাহিদ কোনো সঙ্কোচ ছাড়াই বলে, ‘হ্যাঁ দিয়েছিলাম কিন্তু আমরা যৌ’তুক দিতে পারিনি বলে বোনের ওপর অ’ত্যা’চার করতো। তাই ডিভোর্স করিয়ে নিয়েছি।’

‘তোমরা যেহেতু ভাই বোন তাহলে তো দুইটা ঘর নিবা তাই না!’

‘জ্বি।’

‘দুই ঘরের ভাড়া দিতে পারবে? একটা ঘরের ভাড়াই সাত হাজার টাকা আর দুই ঘরের ভাড়া চৌদ্দ হাজার টাকা।’

এতক্ষণ আমি চুপ করে ছিলাম৷ যা বলার মাহিদই বলছিলো। কিন্তু ভাড়ার কথা শুনে পিলে চমকে উঠে। আমাদের যা পরিস্থিতি তাতে চৌদ্দ হাজার টাকাা মানে অনেক টাকা। কিভাবে দেবো আমরা এতো টাকা? মাহিদ একবার আমার দিকে তাকায়। সে কিছু বলার আগেই আমি বললাম,

‘কাকি আমরা তো এতো ভাড়া দিতে পারবো না। আপনি বরং বলুন কম ভাড়াই কোথায় ঘর পাওয়া যাবে!’

মহিলাটি বিরক্ত চোখে তাকালেন। বিড়বিড় করে কিছু বললেন। হয়তো ভাবছেন ‘টাকা নাই আসছে ঢাকা শহরে ভাড়া থাকতে!’ মহিলাটি অত্যন্ত বিরক্তির সাথে বললেন,

‘টাকাা না থাাকলে এই এলাকাই কোনো ঘরই পাওয়া যাবে না। তোমরা বরং সামনের বস্তিটাই যাও ওখানে ঘর পাবে কম টাকায়।’

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মুখের ওপর গেইট বন্ধ করে দেয়। মাহিদ আমার দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকায়৷ জীবনে যে টাকাটাই সব তার প্রমাণ বোধহয় আজ আরো একবার পেলাম। যদি আমাদের অনেক টাকা থাকতো তাহলে বোধহয় আজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতেই হতো না। তবুও আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পা বাড়ালাম সামনে। হাঁটতে হাঁটতে বললাম,

‘বস্তিতেই যাবি?’

ভাই উত্তর দেয় না৷ আমি ফের বললাম, ‘তুই গ্রামে চলে যা! আমি এখানের একটা বস্তিতে ছোট্ট একটা ঘর নিয়ে একাই থাকতে পারবো।’

মাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকায় আমার দিকে। বলে, ‘আমি তোমার সাথেই যাবো বুবু। আমি আব্বা-মায়ের সাথে ঝা’মেলা করে আসছি। আর বলছি ওদের সাথে থাকবো না।’

চমকে তাকালাম ভাইয়ের দিকে। ব্যস্ত গলায় বললাম, ‘কি বলছিস তুই? তোর কি মাথা খা’রাপ হয়ে গেছে? আব্বা-মায়ের সাথে ঝা’মেলা কেনো করেছিস!’

‘দেখো বুবু এগুলো নিয়ে কোনো কথা বলবে না। আমি তোমার সাথেই থাকবো। ব্যাস!’

‘আর তোর পড়ালেখা কি ভুত করবে?’

‘ভুত তো পড়ালেখা করতে পারে না। বরং তুমিই করে দিও।’

‘ফাজলামি করিস না ভাই। তুই আমার সাথে থাকলে কলেজে কিভাবে যাবি?’

‘কলেজে যাবো না। শুধু এক্সাম দিবো।’

আর কিছু বললাম না। ভাইকে কিছু বলে লাভ নেই। কারণ সে আমার কোনো কথায় যে শুনবে না তা আমি ভালো করেই জানি। আমার সাথে থাকবে মানে আমার সাথেই থাকবে। আমার জন্য ভাইটার ভবিষ্যৎও ন’ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাহিদ একটা পিচ্চি ছেলেকে জিজ্ঞেস করে বস্তি কোথায়! ছেলেটা নিজেই আমাদেরকে বস্তি পর্যন্ত এনে দেয়। এখানে পর পর এক সাড়িতে বাড়ি। এখানকার সবাই আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের। কারোর মধ্যেই অ’হং’কার নেই। অ’হং’কার করার জন্য তো টাকার প্রয়োজন হয় কিন্তু এদের কারোরই টাকা নেই। ভাগ্য ভালো বলে ওই পিচ্চি ছেলেটা নিজেই আমাদের নিয়ে যায় একজন বৃদ্ধা মহিলার কাছে। উনার ঘরটা ফাঁকা আছে। বৃদ্ধা পান খেতে খেতে আমাদের দিকে তাকালেন। বললেন,

‘ঘর লাগবো?’

মাহিদ বললো, ‘জ্বি।’

‘কি হও তোমরা?’

‘ভাই-বোন।’

বৃদ্ধাও ঠিক আগের মহিলাটির মতোই প্রশ্ন করলেন। আমার স্বামীর বাড়ির লোকজন যৌ’তুকের জন্য অ’ত্যা’চার করেছে কথাটা শুনে বেশ আক্ষেপ করলেন বৃদ্ধা। দুজনকে বসতে বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘মন খারাপ কইরো না বইন। ওইরহম স্বামী থাহোনের থাইক্কা একলা থাকোনই ভালা।’

আমার কেন যেনো কান্না পেলো খুব! এ পর্যন্ত আমার ডিভোর্সের কথা শুনে ভাই-বোন গুলো ছাড়া কেউ পাশে থাকেনি সেখানে এই বৃদ্ধা অচেনা হয়েও স্নেহ ভরা হাতে মাথায় হাত বুলাচ্ছে। যারা সারাজীবন সবার থেকে খা’রাপ ব্যবহার পেয়ে অভ্যস্ত তাদের সাথে কেউ একটু ভালো ভাবে কথা বললেই ভীষণ কান্না পায়। আবেগে! বৃদ্ধা আমাদের ঘর বুঝিয়ে দিলেন। ছোট ছোট দুই রুমের দুই ঘর আর একটা ছোট্ট রান্নাঘর। কার থেকে কত ভাড়া নেন আমি জানি না তবে আমাদের থেকে ৪ হাজার টাকা নিবেন বললো। ১৪ হাজারের থেকে ৪ হাজারই ভালো। তাই আমরাও মেনে নিলাম। সবই ঠিক আছে কিন্তু আমাদের কাছে না আছে থাকার মতো বিছানা আর না আছে রান্না করার মতো কোনো হাড়ি। বৃদ্ধা কি বুঝলেন জানি না। নিজের ঘর থেকে দুটো ছোট ছোট তোশক, বিছানার চাদর, আর দুটো কাথা এনে দিলেন সাথে দুটো হাড়ি আর থালাও দিলেন। আমরা দুজন শুধু বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। বৃদ্ধা হেঁসে বললেন,

‘বাতাসে তো আর ছুল পাকে নাই! তোগো মুখ দেইখাই বুঝছি যে তোরা কিছুই আনোস নাই। এই মাসডা আমার গুলান দিয়া কাটাই নে পরের মাসে কিন্তু আর দিমু না।’

কথাটা উনি হেঁসেই বললেন। বাকরুদ্ধের মতো শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। রোবটের মতোই হুট করে বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরলাম। বৃদ্ধা নিজের ঝোঁকটা সামলে মাথায় হাত বুলালেন। বললেন,

‘তোরা আমার নাতি পুতির মতন। তাই তোগো সমস্যা আমি নাা দেখলে কেডা দেখবো! তার চাইয়াও বড় কথা আমি মানুষ চিনি বুঝছোস!’

তাকে আর বৃদ্ধা বলাটা কি উচিত? নাহ। তাকে দাদী বলেই ডাকলাম। সে হাসে। আমার কাছে যতটুকু টাকা ছিলো তা নিয়েই ভাই যায় বাজারে৷ আমি ঘরটা ঝাড়ু দিয়ে তোশক বিছিয়ে দেই নিচে। বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম ভাইয়ের জন্য৷ জীবন কখন কোথা থেকে কোথায় এনে দেয় তা কেউ কল্পনাতেও আনে না। আমি সবসময় ভাবতাম হয়তো তন্ময়ের দেওয়া জীবন থেকে আমি কখনোই বের হতে পারবো না৷ হয়তো ওদের কাছেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে আমাকে৷ তবুও আল্লাহ আমাকে সেখান থেকে বের করে এনেছে। এটাই আমার কাছে সুখ। ওই যে একেকজনের একেকরকম সুখের ধরণ! ঠিক তেমনই। আমার যেটুকু আছে আমি তা নিয়েইি সুখী। বসে বসে এসব ভাবছিলাম তখনই সামনের বাসা থেকে একজন ডাকলেন। আমি চোখ তুলে তাকালাম তার দিকে। শ্যাম বর্ণের মুখে হাসিটা এতোটাই মানিয়েছে যা বলার মতো না। আমি তার দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে এগোলাম। সে হেঁসে বললো,

‘নতুন?’

আমি মাথা নাড়ালাম। আমার বয়সী কিংবা আমার থেকে বড়ও হতে পারে। সে নিজের ঘরের সামনে বসেই বললো,

‘আমার নাম তিন্নি। তোমার?’

‘মায়া।’

‘বাহ বেশ সুন্দর নাম তো। তা এখানে কার সাথে থাকবে? বিয়ে হয়েছে?’

ছোট্ট করে উত্তর দিলাম, ‘ছোট ভাইয়ের সাথে থাকবো। আমি ডিভোর্সী।’

তিন্নি থম মে’রে তাকায় আমার দিকে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই শুধায়য়, ‘এতো সুন্দর, এতো মায়াময় একটা মেয়ে ডিভোর্সী! মজা করছো আমার সাথে? এতো সুন্দর বউকে কেউ কখনো ছে’ড়ে দিতে পারে?’

আমি হাসলাম। এর মধ্যেই তার ভেতরের ঘর থেকে কেউ ডেকে ওঠে। সম্ভবত মেয়েটার স্বামী। মেয়েটা ব্যস্ত গলায় বলে, ‘একটু অপেক্ষা করো। আসতেছি!’

বলেই দৌড়ে গেলো। ব্যাস তার স্বামী চুপ হয়ে গেলেন। আমি তখনও চুপচাপ বসেই আছি। মাহিদ আসলে তারপর রান্না করতে বসবো। আরেকটু পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে। একবাার আশেপাশে তাকালাম। দেখলাম তেমন কেউ নেই। সবাই হয়তো নিজেদের কাজে ব্যস্ত। খানিকটা বাদেই তিন্নি ফিরে আসে। বলে,

‘তোমার ভাই কই?’

‘বাজারে গেছে।’

‘রান্না করবে এখন?’

‘হ্যাঁ ভাই আসলে রান্না বসাবো।’

তিন্নি মেয়েটা যে বেশ মিশুক তা ওর কথার ধরণেই বুঝলাম। মেয়েটার সাথে কথা বলতে আমারও ভীষণ ভালো লাগলো। এর মধ্যেই মাহিদ ফিরে আসে। তিন্নির থেকে বিদায় নিয়ে আমি রান্না বসাই। ওহ হ্যাঁ রান্না করারর জন্য চুলাটাও দাদীই দিয়েছেন। মাহিদ তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘কে আপু ওইটা?’

‘সামনের বাসাটার মেয়ে।’

______

সন্ধ্যার পর পরই আমার আর ভাইয়ের খাওয়া শেষ। সারাদিন মোটামুটি কিছু না খাওয়ায় দুজনেই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাাম। ভাইয়ের কাছে ফোন নাই যে ফোন চালাবে! কাাউকে চিনেও না তাই রুম থেকে আর বের হলো না। এর মধ্যেই তিন্নি হাজির। আমি ওকে বসতে বলে নিজেই চুপ করে গেলাম। তিন্নি হেঁসে মেঝেতে রাখা তোশকের ওপরেই বসে। বলে,

‘এগুলোতে আমার অভ্যাস আছে গো। প্রথম প্রথম আমরাও এমনই থাকতাম।’

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। এর মধ্যেই তিন্নির স্বামী বাহির থেকে ডাকে। তিন্নি ছুটে গিয়ে আবার চলে আসে। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করে,

‘তোমার ভাই কই?’

‘ওই রুমে। কেনো?’

‘গিয়ে বলো উনি ডাকছে।’

‘উনি’ বলতে যে মেয়েটা তার স্বামীকে বুঝিয়েছে তাা আমি বুঝলাাম। কিন্তু ভাইকে ডাকার কাারণটা বুঝলাম না। তাই জিজ্ঞেস করলাম,

‘মাহিদকে কেনো ডাকছে?’

‘ছেলে মানুষ একা একা ঘরে কি করবে! তার থেকে ওর ভাইয়ের সাথে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।’

তিন্নির স্বামীও ঘরের বাহির থেকে একই কথা বলে। মাহিদ শুনতে পেয়ে উঠে আসে। প্রথমে না না করলেও তিন্নির স্বামী এক প্রকার জোড় করেই নিয়ে গেলেন। আমি তিন্নির দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘মাহিদকে নিয়ে যাওয়ার দরকার ছিলো? ছেলেটা তো কিছু চিনে না।’

তিন্নি আমার হাত ধরে বলে, ‘আমাদের বিশ্বাস করতে পারো বোন। বয়সে হয়তো তুমি আমার থেকে ৩/৪ বছরের ছোটই হবে। আমি তোমার বড় বোনের মতোই তোমাদের কোনো ক্ষ’তি করবো না ইন শাহ আল্লাহ।’

কিছু বললাম না। তিন্নি নিজেই স্বাভাবিক হয়ে গেলো এবং আমাকেও স্বাভাবিক করে নিলো৷ এক পর্যায়ে ওদের বিয়ের কথা আসলে বলে,

‘জানো আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছি!’

আমি তাকালাম তার মুখের দিকে। শ্যাম বর্ণের মেয়েটি মুচকি হেঁসে বলে, ‘আমার গায়ের রঙ শ্যাম বর্ণের আর দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বলে ওর পরিবার আমাদের মানেনি। আমি ওকে বলেছিলাম ‘আমাকে ভুলে যান!’ কিন্তু ভুলে যাওয়ার বদলে আমাকে রাম ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিলো। আমার পরিবার বলতে শুধু বড় ভাই আর ভাবি ছিলো। তারা আমাকে বোন কম বো’ঝা ভাবতো বেশি। ব্যাস! সে আর কিছুতেই আমাকে ছাড়বে নাা। সেই যে আমার হাত ধরলো আর কখনোই ছাড়েনি। আজ পর্যন্ত তাকে আমি আমাাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও দেখিনি। আলহামদুলিল্লাহ আমি শ্যাম বর্ণের হওয়া স্বত্বেও আমার স্বামী আমাকে পৃথিবীর সবটুকু ভালোবাসা এনে দিয়েছে। আমরা হয়তো এই ছোট্ট বস্তিতে থাকি তারপরও আমাদের নিজেদের কখনো কোনো আফসোস নেই। দিন শেষে আমি তার বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে পারি এটাই বা কম কি!’

মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম তিন্নির দিকে। মেয়েটা যখন কথাাগুলো বলছিলো তখন তাার চোখে মুখে অদ্ভুত এক প্রশান্তি দেখতে পেয়েছি। আমি মনে মনে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আওড়ালাম,

‘কে বলেছে সৌন্দর্যই সব? আমি তো সাদা ধবধবে, এলাকার সবার ক্রাশের স্বামীকেও দেখেছি অন্য নারীতে আসক্ত হতে। এই যে আমি শ্যাম বর্ণের মেয়েটিকে দেখছি তার স্বামীও এক নারীতে আসক্ত হয়ে পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। তাই আমি মানি সৌন্দর্যই সব না। আমাদের মতো শেষ প্রান্তের মায়াদের অগাধ সৌন্দর্যতা, মায়া থাকা স্বত্বেও আমাদের নিঃশেষ হতে হয় প্রকৃতির কাছে, সমাজের কাছে নয়তো নিজেদের কাছে।’

চলবে…
(আসসালামু আলাাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here