#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_০৬
মায়ন্তী,মায়ন্তী বলে রুমে ঢুকলো মীনাক্ষী–
মায়ন্তী মীনাক্ষীর ডাক শুনে চমকে উঠে নিজের ফর্সা পেটটা কামিজের ভিতরে করে নেয়। কিছুটা ইতস্তত বোধ করে মীনাক্ষী আসায়। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ মায়ন্তীর।
মীনাক্ষী এসে দেখে মায়ন্তী কেমন যেন ঘাবড়ে আছে। অন্য মনস্ক লাগছে বেশ মায়ন্তী’কে।
কিরে মায়ন্তী কি হয়েছে তোর। আয়ুষ্মানদের বাসা থেকে বের হওয়ার পর গাড়িতে তোকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো তুই বেশ ভয় পেয়ে আছিস,দেখলাম তোর চোখ ভিজে ভিজে আবার এখন কেমন যেন লাগছে।
কি হয়েছে তো বলতো? বাসায় এসেও সবাই আমাদের আমন্ত্রণ জানালো কত হাসি’মজায় মেতেছে। আর তুই গাড়ি থেকে নেমে সোজা রুমে ঢুকে গেছিস।
ক ক কি বলো আপু। কই কিছু নাতো। আসলে আমার গাউন টায় দাগ পড়ে যাওয়ায় একটু মন খারাপ হয়ে গেছিলো। তাই কিছু ভালো লাগছিলো না। মাথা টাও ধরেছিলো তাই এসেই রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
বাহ! মায়ন্তী তুই কবে এতটা বড় হইলি রে? তুই আমাকে মিথ্যা বলে এড়িয়ে যাওয়াও শিখে গেছিস?
না না আপু আমি আবার তোমাকে এড়িয়ে যাবো কেন?
তুই সত্যি করে বলতো তুই কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে।
আ আ আসলে আপু তোমাদের বাসায়–
মীনাক্ষী এই মীনাক্ষী কিরে কখন থেকে তোকে ডাকছি আর তুই এখানে। চল তাড়াতাড়ি আয়ুষ্মান ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে কাকী মনি তোদের জন্য চা-জলখাবার বানিয়েছেন খেয়ে নিবি।
হঠাৎ মায়াঙ্ক এসব বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো। মীনাক্ষী,মায়ন্তী কিছুটা চমকে উঠেছে। হ্যাঁ চল যাচ্ছি। চলেই মীনাক্ষী মায়াঙ্কের সাথে চলে যাচ্ছে। তখনি মায়াঙ্ক ফিরে এসে মায়ন্তীকে বলে তোর কি মীনাক্ষীর শশুর বাড়িতে গিয়ে নিজের শশুর বাড়ি বানানোর ইচ্ছেতে মন খারাপ হয়েছে নাকি এভাবে গোমরা মুখোদের মতো হয়ে আছিস। তাড়াতাড়ি বাইরে আয়।
আ আ আমি ভাইয়া আসলে।
চুপ তোর আর একটা কথা শুনতে চাইনা। বাইরে আয় তাড়াতাড়ি।
বলেই মায়াঙ্ক চলে গেলো।
মায়ন্তী মায়াঙ্কের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে -মনে মনে বলছে ভাইয়া আপনি কি আমাকে কখনো বুঝবেন না।
মায়ন্তী বাইরে এসে দেখে মীনাক্ষী-আয়ুষ্মান একই সাথে বসে চা খাচ্ছে। মায়ন্তী এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখে মায়াঙ্ক কোথাও নেই। উল্টো দিকে ফিরে দেখে মায়াঙ্ক আয়ুষ্মানের কাজিন রুপসার সাথে কথা বলছে বেশ হেঁসে হেঁসে।
মায়ন্তীর কেন জানিনা খুব খারাপ লাগছে মায়াঙ্কে এভাবে রুপসার সাথে কথা বলতে দেখে।
মনে হয় মায়াঙ্ক কখনো মায়ন্তীর সাথে রেগে ছাড়া এভাবে হেঁসে কথা বলেনি। সবসময়ই ধমকে গেছে। শাসন করে গেছে।
মায়ন্তী অপলক চোখে তাকিয়ে আছে মায়াঙ্ক ও রুপসার দিকে তখন-ই। মায়ন্তী আসো এখানে বসো চা খাও বলে আয়ুষ্মান।
মায়ন্তী নিজের জ্ঞানে ফিরে। এতক্ষণ ভাবনার জগতে পারি দিয়েছিল মায়ন্তী।
হ্যাঁ ভাইয়া যাচ্ছি বলে মীনাক্ষীর পাশের সীটে গিয়ে বসে। মীনাক্ষী, আয়ুষ্মান নানানরকম কথা বলছে মায়ন্তীর সাথে মায়ন্তীর চোখ,মন বার বার একই দিকে যাচ্ছে।
মায়ন্তীর মা-বাবা,কাকু-কাকিমা আয়ুষ্মানদের সাথে কথা বলে ঘুমাতে চলে গেছেন এখন মাঝরাত চলছে।
এখন শুধু বাইরে ওরা পাঁচজনই।
মায়ন্তীর মনে হচ্ছে এখনি ওদের মাঝে যেতে কি এত কথা বলছে। মনে হচ্ছে এখনই বলে দিবে ভাইয়া আপনি ওর সাথে কথা বলবেন না। আমার ভালো লাগছেনা।
কি ব্যপার মায়ন্তী কি হয়েছে তোমার বলোতো। মন কোন দিকে তোমার?
বলতেই মায়ন্তী আ আ আমি কই নাতো এখানেই আছিতো ভাইয়া।
মায়ন্তী চা’য়ের কাপ হাতে নিতেই রুপসা এসে ছোঁ মেরে চায়ের কাপ টা নিয়ে নেয়।
মায়ন্তী বেশ রেগে যায়। মনের দিক থেকেও মায়ন্তী রুপসার উপর বিরক্ত ছিল। এখন পুরোপুরি বিরক্ত। মায়ন্তী কিছু বলতে যাবে। তখনই মায়াঙ্ক বলে কিরে তোর ঘুম নেই চোখে এখন যে এখানে আছিস। বড়দের কথা শুনতে তোর খুব ভালো লাগে তাইনা।
ভাইয়া কি বলছেন আমিতো–
আহহ মায়াঙ্ক তুই সবসময়ই মায়ন্তীকে এভাবে-আয়ুষ্মান বলে।
আয়ুষ্মান তো ওর এখানে কাজ কি? ওর চা খেলে এখন আর ঘুম আসবে। ওকে যেতে বল এখনই। কিছুটা কঠোর সুরে আয়ুষ্মানকে কথাটা বলে মায়াঙ্ক মায়ন্তীর দিকে বাঁকানজরে তাকিয়ে।
মায়ন্তী বলে উঠে আচ্ছা ভাইয়া দেখুন ১টা বেজে গেছে। এখন মাঝ রাত আপনারাও যান ঘুমিয়ে পড়ুন আমিও ঘুমাবো।
আপুর আর আপনার বিয়ের জন্য তো এতদিন ভার্সিটি’তে যেতে পারিনি। কাল থেকে ভার্সিটি যেতে হবে। বলেই মায়ন্তী উঠে যায় ওখান থেকে।
মায়ন্তী নিজের রুমে এসে জোরে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে ধপ করে শুয়ে পড়ে।
আজকের দিনে মায়ন্তীর সাথে কি কি হয়েছে মায়ন্তী সব ভাবতে থাকে। কে ছিল ওয়াশরুমে মায়াঙ্ক ভাইয়া নাকি রাজিব ভাইয়া। উফফ মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার কিসব ভাবছি।
ওরা মোটেও আমার সাথে এমনটা করতে পারে না।
মায়ন্তী নিজেই নিজের মাথা চেপে ধরে বলতে থাকে -মায়ন্তী উফ তুই পাগল হয়ে যাবি আর এসব নিয়ে ভাববি না। এখন তুই ঘুমাবি। কাল তোকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
————————————————————————————-
মায়ন্তী গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে রাত ৩.৩০ মিনিট বাজে।
কেউ আসতে করে মায়ন্তীর রুমের দরজা খোলে। একপা দু-পা করে ঘমন্ত মায়ন্তীর দিকে আসছে।
মায়ন্তীর কাছে এসে দেখে মায়ন্তী কেমন বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে। নিজের হাত দু’টো এক করে মাথার নিচে গিয়ে ঘুমিয়ে আছে। গায়ের চাঁদর টাও অর্ধের’টা গায়ের উপর আর অর্ধেক টা মেঝেতে পরে আছে।
অচেনা লোকটি ধীরে ধীরে চাঁদর টা টেনে মায়ন্তীর গায়ে দিয়ে দেয়। মায়ন্তীর মাথার কাছে বসে মায়ন্তীর মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
বলতে থাকে তুমি এত অবুঝ কেন মায়ন্তী কবে বুঝতে শিখবে তুমি।
জানো আজ আমার কত’টা খারাপ লেগেছে। আমি ব্যতিত তোমাকে কেউ কিভাবে ছুঁতে পারে। জানো আমি খুব রেগে গেছিলাম যার কারনে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। তোমার খুব লেগেছে তাইনা। খুব ব্যথা পেয়েছ তুমি। স্যরি আর কখনো এমন করবোনা বলে মায়ন্তীর কপালে একটা চুমু একে দেয়। মায়ন্তী কিছুটা নড়ে উঠে।
অচেনা ব্যক্তিটি চলে যেতে নিলেই মায়ন্তী বলে উঠে ভাইয়া আমাকে রেখে দিন না আমি আপনার কাছে থাকতে চাই। চলে যাবেন না প্লিজ।
অচেনা লোকটি মায়ন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখে মায়ন্তী ঘুমের ঘোরে কথা বলছে।
লোকটি পুনরায় মায়ন্তীর কাছে আসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে তুমি শুধু আমার,শুধুই আমার,আমার সব কিছু তোমার। শুধু তোমারই জন্য এতকিছু। তুমি অন্য কারো হইতে পারবেনা শুধু আমার কাছেই থাকবে বলেই লোকটি উঠে চলে যায়।
———————————————————————————
সকাল ৯ টা মায়ন্তীর ঘুম এখনো ভাঙছে না এদিকে ঘড়ির এলার্ম বাজতেই আছে। মায়ন্তীর রুমের পাশের রুমই মায়াঙ্কের।
মায়ন্তীর ঘড়ির এলার্ম বাজার কারণে মায়াঙ্ক উঠে আসে। বাইরে থেকে মায়ম্তী,মায়ন্তী বলে ডাকলে সারা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মায়াঙ্ক ভিতরে আসে। দেখে মায়ন্তী এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।
মায়াঙ্কের বেশ রাগ হয়। মায়াঙ্ক সোজা মায়ন্তীর ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। এক মগ পানি নিয়ে এসে সোজা মায়ন্তীর গায়ে দেয়—–
মায়ন্তী লাফিয়ে ওরে কে রে বাঁচাও রে বলে লাফিয়ে উঠে এসে মায়াঙ্ক কে জড়িয়ে ধরে—–
চলবে————————————-
[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। সারাদিন লিখতে পারিনি। তাড়াহুড়ো করে লিখলাম]