মায়ন্তী পর্ব -১৩ ও শেষ

#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_১৩
#অন্তিম_পর্ব_প্রথমাংশ

সকাল ১০ টা।

আজ মায়ন্তী ও রাজীবের এনগেজমেন্ট। সেই উপলক্ষে বাসায় আজ অনুষ্ঠান। সব আত্নীয় স্বজনেরা বাসায় এসে উপস্থিত হয়েছে। নানান রকমের ফুলে সেজে উঠেছে মায়ন্তী’দের বাসা।

রাত ৯ টা মায়ন্তী ও রাজীবের এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান হতে চলেছে! সবাই উপস্থিত শুধু মায়াঙ্ক উপস্থিত নেই।

রাজীবের মা-বাবা বললেন এখন আন্টি বদল করা হোক।

মায়ন্তীর মা-বাবা,কাকু-কাকীমা বললেন মায়াঙ্ক এখনো আসেনি একটু অপেক্ষা করুন।

রাজীব বলে উঠে আর অপেক্ষা করতে হবেনা আন্টি শুরু করে দেন অনুষ্ঠান। মায়াঙ্ক ঠিক সময়েই চলে আসবে।

মায়ন্তীর চোখে পানি। সাদা ল্যাহেঙ্গায় সেজেছে মায়ন্তী। পরী’দের থেকে কম লাগছেনা। কিন্তু পরীর চোখে পানি। তাঁর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তবে মনে কেন জানিনা কোন সুখের আভাস ভেসে আসছে।

এখন সময় মায়ন্তী ও রাজীবের এনগেজমেন্ট এর। অনেকক্ষণ যাবত মায়াঙ্কের জন্য অপেক্ষা করেও যখন মায়াঙ্ক এলো না। তখন সবাই রিং বদলাতে বলল।

রাজিব ও মায়ন্তী একে অপরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ন্তী পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। ওর মাঝে নেই কোন অনুভূতি।

মীনাক্ষী ও আয়ুষ্মানের ও ভীষণ মন খারাপ। ওরাও কেউ চায়না এই বিয়ে হোক।

দু’জন নেই এখানে উপস্থিত এক মায়াঙ্ক দুই রুপসা।

মায়ন্তী মনে মনে ভেবে নিয়েছে রাজিব কে হয়তো সত্যি সত্যি বিয়ে করতে হবে।

এবার রাজিবের মা বলে উঠলেন রিং টা হাতে নাও রাজিব কে পড়িয়ে দাও।

আর রাজিব তুই ও রিং হাতে নিয়ে মায়ন্তী পড়ানোর পরে পরিয়ে দিবি।

মায়ন্তী ও রাজিব দুজনই নিশ্চুপ। কারো মুখে কোন কথা নেই। রাজিব কেন জানি অস্থির হয়ে আছে বার বার গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন কারো আসার অপেক্ষায় আছে।

কি হলো মায়ন্তী মা রিং টা নাও রাজিব কে পড়িয়ে দাও।

মায়ন্তী কাঁপা কাঁপা হাতে এনগেজমেন্ট এর রিং হাতে নিয়েছে —

মায়ন্তীর মা-বাবা,কাকু-কাকীমা,মীনাক্ষী আয়ুষ্মান চুপচাপ সবাই দাঁড়িয়ে আছে কারো মনে কোন কথা নেই।

তখনি রাজিবের বাবা বলে রাজিব হাত টা বাড়িয়ে দে।

রাজিব একটু একটু করে হাত টা বাড়ায়। মায়ন্তী পড়িয়ে দিতে যাবে হঠাৎ সারা বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়। চারিদিকে কোন আলো নেই।

রাজিব বলে উঠে কই চলে আয় —

বলতেই হঠাৎ লাইটের ফোকাস পড়ে মায়ন্তী সামনে। মায়ন্তী তাকিয়ে দেখে মায়াঙ্ক সামনে দাঁড়িয়ে আছে । মায়ন্তী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মায়াঙ্কের হাতে মায়ন্তী রিং পড়িয়ে দিয়েছে।

মীনাক্ষী হঠাৎ করে একটা ছিটি বাঁচিয়ে উঠে সাথে সাথে রাজিব বলে আসল এনগেজমেন্ট শুরু হবে এখন। বলতেই পুনরায় চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠে।

মায়াঙ্কের মুখে মুসকি হাসি। মায়ন্তী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়াঙ্কের দিকে। এতক্ষণ পুরো অনুষ্ঠান বাড়ি কত শান্ত মনে হচ্ছিল না কোন আনন্দ অনুষ্ঠান হচ্ছে বলে মনে হচ্ছিলো না।

সেই এখন কত আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে পরিবেশ টা।

একমুহূর্তে মায়াঙ্ক হাটু গেড়ে মায়ন্তীর সামনে বসে বলে- মায়ন্তী উইল ইউ মেরি মি!

মায়ন্তী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কোন কথা বলছে না।

তোর চুপ থাকার কারণ আমি জানি। আজ তোকে সব বলব। তোকে হারাতে পারবোনারে। তোকে অন্য কারো সাথে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। ছোট বেলা থেকেই তুই আমার হাতে গড়া,তোর আশেপাশে কোন ছেলেকে আসতে দেইনি,তোর ছোট ছোট আবদার গুলোতে আমি খুব আনন্দ পেতাম। ভালো বেসেই সব পূরণ করতাম। যখন তুই ছোট তখনই জানতে পারি আমাদের মা-বাবা তোদের দুবোনের মাঝে এক বোনের বিয়ে আমার সাথে দিবেন। আমার সেই ছোট্ট মায়ন্তীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। তখন থেকেই একটু একটু করে তোর সাথে পথ চলতে থাকি। তারপর কারনে-অকারনে আমাদের বাসায় তোরা আসলি আমরা জয়েন ফ্যামিলি হয়ে উঠলাম। একে একে তুই বেড়ে উঠলি। আমাদের বিয়ের কথা উঠলো জানিস।

তুই তো বাচ্চা কিছুই বুঝতিনা। আসলে আমাদের যে বিয়ে তুই কিভাবে নিয়েছিস জানতাম না। আমি খুব খুশী ছিলাম। তোকে নিয়ে রোজ স্বপ্ন দেখতাম। মনে হতো পৃথিবীর যত সুখ আছে সব পেতে চলেছি আমি।

একে একে এনগেজমেন্ট এর দিন আসলো! তুই কত সুন্দর সেজে ছিলি আমার জন্য। হঠাৎ একটা ঝড় বয়ে আসলো। ফোনে কল এলো মায়াঙ্ক আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হসপিটালে এসে দেখা করেন। আপনার কিছু টেস্টের প্রয়োজন।

জানিস আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম কি হলো আবার। আমি তোকে বলতে আসবো আমি একটু হসপিটাল থেকে আসি। তখনই তুই সারাদিনের ক্লান্তিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলিস। কাউকে চিন্তায় না ফেলতে চেয়ে আমি না বলেই হসপিটালে চলে যাই। টেস্ট করানে হয় এজন্যই কিছুদিন আগেই আমি রক্ত ডোনেট করেছিলাম। সেই থেকে নাকি কেন সমস্যা হয়েছে। আমার রক্তে নাকি এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। টেস্টে আসে আমার এইডস্ রোগ হয়েছে। আমি কখনোই চাইনি আমার জন্য তোর কোন ক্ষতি হোক। তাই সবাইকে না জানিয়েই তখনি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি সবার থেকে দূরে বিদেশে চলে যাই। জানিস আমার খুব কষ্ট হতো কিন্তু কি জানিস তোর ভবিষ্যৎ আমার জন্য খারাপ হোক তা আমি কখনোই চাইনি।

আমি মীনাক্ষীর বিয়ের কথা শুনে আর নিজেকে আটকাতে পারিনি। এই সুযোগে যদি তোর সাথে একটু দেখা হয়ে যায়। চলে আসি দেশে কিন্তু মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে না জানি কখন আমার জন্য তোর ক্ষতি হয়ে যায়। তোকে সবসময় রাগ দেখিয়ে দূরে সরাতাম। নিজেই তোর সাথে করা ব্যবহারে কষ্ট পেতাম। কিন্তু কিছু করার ছিলনা আমার।

তুই কষ্ট পেতিস জানতাম কিন্তু কিছু করার ছিলনা আমার। হঠাৎ তুই রাজিবের সাথে বিয়ে করতে চাস। এটা আমি জানি আমাকল দেখানোর জন্য। তারপর রাজিব আমাকে বলে সবটা। আমি চাই রাজিব তোকে বিয়ে করুক। কিন্তু না রাজিব কখনো তোকে বিয়ে করতে চায়নি। আমার জন্যই ফাজলামো করত। ও আমাকে খুব করে বলে। ওর কাছে আর না করতে পারিনা। ও বলে পুনরায় টেস্ট করতে।

আমি তাই করি। পুনরায় টেস্ট করে জানতে পারি অন্য কারো রিপোর্ট আমাকে দেওয়া হয়। জানিস আমি কতটা খুশী হয়েছি এটা শুনে। আমি মীনাক্ষী আয়ুষ্মান বাসার সবাইকে বলেছি এই ব্যপার টা তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এত কিছু।।।

আজ রাজিব ও রুপসার এনগেজমেন্ট আর তোর আমার।

মায়ন্তী তিনবছর আগের এই দিনটার কথা করে আজ আমাী হবি তুই। আমাকে বিয়ে করবি?বলে রিং তুলে ধরে মায়ন্তীর সামনে——————

(রাতে শেষ পর্বের শেষটুকু দেব)
…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here