মায়ন্তী পর্ব -১২

#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_১২

বিকেল ৪ টার দিকে সবাই শপিংমলে পৌঁছালো—

একে একে লিফটে উঠে ৩ তলায় উঠলো । মায়ন্তী বেশ রাগী ভাব নিয়ে বারবার মায়াঙ্কের দিকে তাকাচ্ছে, মায়ন্তী মনে মনে ভাবছে এই লোকটার কি একটুও যায় আসবে না আমার বিয়ে হয়ে গেলে।

আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না। নাকি আমি ওনার ভালোবাসার যোগ্য নই। আমি কি এতটাই ছোট আপনার কাছে ভাইয়া।

কিরে মায়ন্তী কি ভাবছিস? তোর কি ভালো লাগছেনা? আচ্ছা তুই রাজিবের সাথে একটু আলাদা সময় কাটা। চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখ তোদের কি কি কিনতে হবে? আমি বরং মীনাক্ষী ও আয়ুষ্মান কে নিয়ে এদিক টায় যাই। বাড়ির সবার জন্যই তো কিছু কিনতে হবে। বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা।

মায়ন্তী বলে উঠে লাগবেনা আমরা একা নই আপনি আমার জন্য সবকিছু পছন্দ করে দিবেন। মানে আমার বিয়ের বেনারসি আপনি পছন্দ করে দিবেন। আপনার প্রিয় রঙের বেনারসি নিবো আমি।

পিছন থেকে কেউ বলে উঠে আরে মায়ন্তী তুমি মায়াঙ্কের পছন্দের বেনারসি নিবে কেন? তুমি রাজিবের পছন্দের বেনারসি নিবে।

তাই না মায়াঙ্ক বলেই রুপসা এসে মায়াঙ্কের পাশে দাঁড়িয়ে ওর হাত চেপে ধরে।

মায়ন্তী বলে রুপসা আপু তুমি এখানে?

কিরে রুপসা তুই এখানে আয়ুষ্মান ও একই কথা বলে।

আরে আমি এসেছি বলে তোমরা খুশী হও নি নাকি। সারপ্রাইজ আছে তোমাদের জন্য। তাহলে যাওয়া যাক এখন সবাই কেনাকাটায় মন দেই চলো।

মায়ন্তীর বেশ রাগ হয়। এই মেয়েটাকে ভীষণ অদ্ভুত লাগে কেমন জানি।

হ্যাঁ চলো বলে মায়াঙ্ক ও রুপসার হাতে হাত রাখে।

মায়ন্তী ও অভিমান নিয়ে রাজিবকে বলে আসুন এদিকে বলে।

মীনাক্ষী এত বেনারসি মায়ন্তী’কে দেখাচ্ছে মায়ন্তীর পছন্দ হচ্ছেনা। কোনটাতেই যেন মন বসছে না মায়ন্তীর।

বার বার একটা করে শাড়ি নিয়ে গায়ে ধরে দেখছে। তবুও পছন্দ হচ্ছে না। মায়ন্তীর ইচ্ছে করছে মায়াঙ্কের পছন্দের শাড়ি নিতে।

বার বার চোখ যাচ্ছে মায়াঙ্কের দিকে।

মায়াঙ্ক মায়ন্তীর দিকে একেবারের জন্যও তাকাচ্ছেনা। সমানে রুপসার সাথে কথা বলে যাচ্ছে

রুপসা বলে মায়াঙ্ক আমার জন্যেও একটা বেনারসি দেখ তো। আমিও মায়ম্তীর বিয়েতে বউ সাজবো।

ও তাই নাকি আচ্ছা দাঁড়াও বলে মায়াঙ্ক ও বেনারসি দেখতে থাকে।

মায়াঙ্ক একটা মেরুন কালারের বেনারসি পছন্দ করে দেখ তো মায়ম্তী এই বেনারসি টা কেমন?

মায়ন্তী দেখে মেরুন কালারের সাথে গোল্ডেন কালারের পাইর দিয়ে পাথরের কাজ করা বেনারসি। মায়ন্তীর পছন্দেরই। মায়ন্তী বেশ খুশী হয়। মায়াঙ্ক মায়ন্তীর জন্য বেনারসি পছন্দ করেছে।

অনেক সুন্দর বলে মায়ন্তী যেই হাতে নিতে যাবে। রুপসাকে অনেক সুন্দর মানাবে বলেই রুপসার হাতে দেয়। বাহ!! তোমাকে তো অনেক সুন্দর মানাবে রুপসা।

ধন্যবাদ মায়াঙ্ক আমি এই শাড়িটাই পড়ব। মায়ন্তী আর রাজীবের বিয়ের সময়ে।

মায়ন্তী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়াঙ্কের দিকে। একটা মানুষ কিভাবে এমন হতে পারে। আর কত সহ্য করবে মায়ন্তী।

রাজীব বলে মায়ন্তী এদিকে আসো দেখতো এই শাড়িটা তোমার পছন্দ হয় কিনা?

রাজীব মায়ন্তীর জন্য নীল কালারের একটা শাড়ি পছন্দ করে।

মায়ন্তী বলে আমি এই শাড়িটাই পড়বো। নিয়ে নিন। বলে মায়ন্তী উঠে যায়।

সবাই সবার মতো কেনাকাটা করে রাত ঠিক ১১ টার দিক ফিরে আসে।

এত রাত হওয়ায় রাজীবকে আর বাসায় যেতে দেওয়া হয়না। মায়াঙ্কের পাশের রুমেই রাজীবকে থাকতে দেওয়া হয়।

——————————————————————————–

যে যার মতো রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত ৩ টা।

মায়াঙ্ক গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে।

স্বপ্নে- কেউ কাউকে বলছে তুই এই বিয়ে করতে পারবি না। তুই একজন সুস্থ শরীরের অধিকারী না। তোর জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে চলেছে। তুই পালিয়ে যা। যা তুই পালিয়ে যা।

মায়াঙ্ক ঘেমে একটা। মায়াঙ্কের শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে।

মায়াঙ্ক না বলে ঘুম থেকে জেগে উঠে।

রুমের জিরো লাইটের আবছা আলোয় দেখে কেউ রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।

কে কে ওখানে দাঁড়াও বলছি। কে?

মায়াঙ্ক দৌড়ে গিয়ে হাত ধরে ফেলে। কে তুমি? কার এত বড় সাহস এই সময় আমার রুমে?

হ্যাচকা টানে পিছন দিক থেকে সামনে নিয়ে আসে অপরিচিত সেই মানুষ কে। যে এত রাতে মায়াঙ্কের রুমে আসে।

মায়াঙ্ক বলে মায়ন্তী তুই এখানে? এত রাতে কি করছিস? ঘুমাসনি যে?

মায়াঙ্কের কথায় মায়ন্তী কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে আছে।

কিরে তোর কথা কানে যায়না। এত রাতে কেন এসেছিলি আমার রুমে?

মায়াঙ্ক কেন জানি আজ আর রাগ করে মায়ন্তীকে ধমকালো না। ঘুম স্বাভাবিক ভাবেই বলল।

মায়ন্তী হঠাৎ করে মায়াঙ্ক’কে জড়িয়ে নেয়।

মায়াঙ্ক মায়ন্তীর কাজে অবাক হয়ে যায়। একি মায়ন্তী এটা কি করলো? মায়াঙ্ক কিছু বলার আগেই মায়ন্তী দৌড় দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

মায়াঙ্ক-মায়ন্তীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কি করলো মায়ন্তী এটা? ও ঠিক আছে তো।

মায়াঙ্ক বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।

এদিকে মায়ন্তী -মায়াঙ্কের রুম থেকে এসে নিজের বিছানায় শুয়ে কাঁদছে।

শপিং করে আসার পর মায়ন্তীর একদম ভালো লাগছিল না। যত সময় যাচ্ছে মনে হচ্ছে মায়াঙ্ক’কে হারিয়ে ফেলছে। তাইতো মনের শান্তির জন্য এত রাতে চুপিচুপি মায়াঙ্কের রুমে গেছিল। মায়াঙ্কের ঘুমন্ত চেহারা দেখছিল। আর নিজের মনের কথা গুলো শেয়ার করছিল মায়াঙ্কের সাথে। কিন্তু হঠাৎ মায়াঙ্ক ঘুম থেকে জেগে উঠে।

———–**————-

সকাল ১০ টা।

আজ মায়ন্তী ও রাজীবের এনগেজমেন্ট। সেই উপলক্ষে বাসায় আজ অনুষ্ঠান। সব আত্নীয় স্বজনেরা বাসায় এসে উপস্থিত হয়েছে। নানান রকমের ফুলে সেজে উঠেছে মায়ন্তী’দের বাসা।

চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here