#মায়ন্তী
#রাইদাহ_উলফাত_আনিতা
#পর্ব_১৩
#অন্তিম_পর্ব_শেষাংশ
মায়ন্তী তিনবছর আগের এই দিনটার কথা মনে পড়ে? সেই দিনের মতোই আমার জন্য সেজে উঠবি? আজ আমার হবি তুই। আমাকে বিয়ে করবি? বলে রিং তুলে ধরে মায়ন্তীর সামনে মায়াঙ্ক——————
চারপাশে সবার মনে কত আনন্দ, সবাই এখন বেশ খুশী। সবাই মায়ন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ন্তী কি বলবে?
মায়ন্তী নিজের পরনের শাড়ি খামচে ধরে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোন কথা নেই। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়াঙ্কের দিকে। ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে মায়ন্তীর। কেন কেন এই মানুষ’টা এতটা দিন মায়ন্তীর কাছ থেকে এসব লুকিয়েছে। কেন এতটা পর করে রেখেছিল। মায়ন্তীর কি তাঁকে ছাড়া কোন ভালো হতে পারে? সেই তো মায়ন্তীর সব। শুধু ভালো থাকাটাই দেখে গেছে। সুখে থাকাটা দেখেনি। এত পরিমাণ যে কষ্ট পেয়েছি তাঁর কি মায়া হয়নি একটুও।
মায়ন্তীর চোখে-মুখে কালো মেঘের ছায়া এসে জড়ো হয়েছে! তাঁর সামনে সব কিছু বিরাজমান। কি করবে সে? ও কি পারবে মায়াঙ্ক কে মেনে নিতে?
মায়ন্তী বলনা কিছু! আমার হয়ে যা প্লিজ। আমি আর পারছিনা।
রাজিব এই রাজিব বলনা ওকে। তুই না হলে আজ আমি হয়তো শেষ হয়ে যেতাম। বললা ও কথা বলছে না কেন? আমি যে আর নিতে পারছিনা।
রাজিব কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই হঠাৎ করে মায়ন্তী এসে মায়াঙ্কের কলার ধরে উপরে উঠায়। মায়ন্তীর করা কাজে সবাই কিছুটা অবাক হয়ে যায়। কি করতে চলেছে মায়ন্তী।
আপনার সাহস তো কম নয়! আপনি আমাকে কি ভেবেছেন বলুন তো? আমার জীবনটা নিয়ে শুধু খেলেই গেলেন। আরে যাকে ভালোবাসা যায় তাঁর সাথে মরণ শিকার করাও যায়।
আমি ভালোবাসা,বিয়ে এসব নিয়ে কি বুঝতাম বলুন তো। আপনি তো ছোট বেলা থেকে সব শিখিয়ে এসেছেন। ভালোবাসা, বিয়ে এসব কিছুও আপনার থেকে জানা। ভালোবাসতে শিখেছি আপনার কাছে। স্বপ্ন দেখেছি আপনার সাথে পথ চলার। সেই কিনা আপনি তিনবছর আগে নিজের রোগের দোহাই আমার উপর চাপিয়ে চলে গেছিলেন।
আরে যদি আপনার রোগ ও হতো আমি আপসহীন ভাবে আপনার রোগটাকেই মেনে নিতাম।
বাহ! আপনি এনগেজমেন্ট এর রাতে চলে গেলেন। দীর্ঘ তিনবছর যাবৎ কত যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কখনো আপনি যোগাযোগ করেন নি আমার সাথে। কেমন কেটেছে আমার বলুন তো। ফিরে এলেন আপুর বিয়েতে। যাই হোক যা নয় তাই ব্যবহার করে গেছেন। কখনো মুখ ফুটে কথা বলিনি। ভালোবাসা বুঝি এমন হয়। একবারও মনে হয়নি আপনার আমি কষ্ট পাচ্ছি কিনা। ছ্যাঁচড়ার মতো আপনার পিছনে পড়ে থাকতাম।
আর আপনি? আপনি আমাকে পাত্তাই দিতেন না। বাহ! বাহ! আজ জানলেন আপনার রোগ নেই তাই আমার কাছে ছুটে এসেছেন? রোগ থাকতে আমার কাছে আসলে ফিরাইতাম?
মায়ন্তী শান্ত হ বোঝার চেষ্টা কর। দেখ আমি চাইনি তোর কোনো ক্ষতি হোক তাই।
চুপ করেন আপনি! আপনার কোন কথা শুনতে চাইনা। আমি দরকার পড়লে সারাজীবন আইবুড়ো থাকবো তবুও আপনাকে বিয়ে করবোনা। আমার নিজ আত্মসম্মান ত্যাগ করে এতদিন অনেক নিচে নেমেছি আর নয়।
মায়ন্তী শোন আমার কথাটা।
নাহহ আপনার কোন কথা আমি শুনবো না বলেই দৌড়ে মায়ন্তী নিজের রুমে চলে যায়। আজ মেয়েটা সব পেয়েও বিষাদ-মনের কারনে কিছুই আপন করতে পারছে না। সবকিছুই দূরে ঠেলে দিতে চাইছে।
বাইরে থেকে এত ডাকাডাকির পরে-ও মায়ন্তী স্পষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেয় সে বিয়ে করবেনা।
মায়াঙ্ক বলে স্যরিরে মায়ন্তী আমার ভুল হয়ে গেছে। না বুঝেই ভুল করে ফেলেছি। আমি বুঝতে পারিনি। তুই আমাকে এতটা ভালোবাসিস। আমি জোড় করব না। তুই আমাকে বিয়ে না করলেও দূর থেকে তুই আমারই থাকবি।
যত স্বপ্ন ছিল সব স্বপ্নই থেকে যাবে রে।
জানিস তোর একটা না বলা কথা আমি জানি-
বলতে চেয়েছিলিস-
আমি বলব না আমার কাছে থেকে যান,আমি বলব আমাকে রেখে দিন না।
আজ আমি বলছি তুই শোন-
মায়ন্তী তোকে বলতে হবে না রেখে দিন। আমি থাকতে চাই তোর কাছে। তোর ভালোবাসার ছোঁয়া পেতে চাই৷ তোর সাথে পথ চলতে চাই। বুড়ো হতে চাই তোর সাথে।
দরজার একদিকে মায়ন্তী আরেকদিকে মায়াঙ্ক বসে কাঁদছে।
দু’জন দু’জনার হয়েও আজ দুজন দু’জনার থেকে অনেক দূরে। মাঝে দেয়াল হিসেবে তৈরি হয়েছে শত অভিমান, অভিযোগ।
———————————————————————————
আজ তিন বছর পরে-ও মায়াঙ্ক-মায়ন্তী একে অপরের থেকে আলাদা।
মায়ন্তী পণ করেছে কখনো বিয়ে করবেনা। মায়াঙ্ক ও আর মায়ন্তীকে জোড় করেনি। এভাবেই সবসময় মায়ন্তীর পাশে থেকেছে। সারাজীবনের জন্য এভাবেই পাশে থাকার জন্য নিজেকে তৈরি করেছে।
মায়ন্তীর মুখ থেকে দু’টো কথা শোনার জন্য কত বাহানা ধরেছে তবুও মায়ন্তী ফিরে দেখেনি কিংবা মুখ ফুটে দুটো কথা বলেনি।
মায়ন্তী ভালো একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছে। সারাক্ষণ তাঁর বাচ্চাদের সাথেই কাটে।
মায়াঙ্ক ও মায়ন্তীর আশেপাশে থাকার জন্য একই স্কুলে চাকরি নিয়েছে। দু’জন দু’জনার না হয়েও সবসময়ই কাছাকাছি থাকে।
কিছু ভালোবাসা অপূর্নতায় ও সুন্দর।
এদিকে রাজিব ও রুপসার তিনবছর আগেই বিয়ে হয়েছে। সুখে সংসার করছে দূজনে। ছোট্ট মেয়ে ও হয়েছে একটা।
সব ভালোবাসা পূর্নতা পেলে ভালোবাসার মূল্য কমে যায়।
অপূর্নতাতে ভালোবাসার যে সৌন্দর্যতা আছে। পূর্নতাতে নেই।
মায়াঙ্ক ও মায়ন্তী অপূর্নতাতেই সুখী হোক সারাজীবন।
———————–সমাপ্ত ————————–
(আমি নিজেকে লেখিকা বলে দাবী করি না। আবারও বলছি লেখিকার ধারের কাছেও,যাইনা। প্রথম গল্প আমার প্রচুর বানান ভুল। ব্যাক্তিগত কারণে গল্পটা না গুছিয়েই শেষ করে দিলাম। ভুল গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)