#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_৭
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরিশা’র এমন কথা শুনে আরিয়া বললো- প্লিজ আরিশা তুই এখান থেকে চলে যা। ভু’ল হয়তো আমারই ছিল।”
ওদিকে এই মহিলা আবার বলে উঠলেন- এই অ’স’ভ্য মেয়ে বার বার আমার দো’ষ এটা কেনো বলছো। শুনো আমি এই বাড়ি’র মেহমান তোমার গু’রুজন সম্মান দিয়ে কথা বলো।”
আরিশা বললো- যথেষ্ট সম্মান দিচ্ছি। আপনি দো’ষ করেছেন তাই দো’ষী বলছি,আপনার মতো দো’ষ চা’পা’চ্ছি না। আর আপনার মতো আমরাও মেহমান। আপনারা আমাদের সম্মান দেওয়া উচিত। নাকি আপনি গু’রুজন আর আমরা ছোট বলে আমাদের সম্মান নেই।”
এইবার ওই মহিলা কিছু বলার আগে আরিয়া আরিশাকে ঠে’লে উপরে তুলে দিলো। আরিশা একবার ওই মহিলা’র দিকে তাকিয়ে অ’স’ভ্য মহিলা বলেই উপরে চলে গেলো। আরিশা’র মুখে অ’স’ভ্য শব্দ শুনে,মহিলা টা আরো চে’তে গেলো। আরিয়া আবার বললো- স্যরি আন্টি আমার বোন আর আমার পক্ষ থেকে ও আসলে বুঝতে পারেনি। ক্ষ’মা করে দিন! বলেই মহিলা’র পরে যাওয়া পানের বাটা তুলে দেয়। উনি বক’বক করতে করতে উপরে চলে যান।”
এতোক্ষণ সবাই নির্বাক হয়ে সবকিছু শুনছিল। আরিয়া অ’স’হা’য় চোখে সামনে তাকালো ঈশিকা খানমে’র দিকে। তিনি ওর পাশে এসে দাঁড়ান। আরিয়া বললো- স্যরি আন্টি আমি জগটা ভে’ঙ্গে ফেললাম। ঈশিকা খানম মুচকি হেঁসে আরিয়া’র মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- সমস্যা নেই তুমি রুমে যাও। আরিয়া মাথা নিচু করে উপরে চলে যায়।
আরিয়ান এখনো আরিশা’র যাবা’র পানে তাকিয়ে আছে। মানে! আরিশা ওর সামনে এসে চলে গেলো আর ও দেখতেই পারলো না। আরিশা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তখন কেউ ওর দিকে খেয়াল করেনি। কারণ সবাই আরিয়া আর ওই মহিলা’র দিকে তাকিয়ে ছিল। তবে আরিয়ান অবাক আরিশা এভাবে উনার সাথে কথা বলে গেলো। অবশ্য ভালোই হয়েছে দো’ষ তো উনারও ছিল। কেউ কিছু বলছে না বলে কী উনি যা তা বলবেন। আরিয়ান আরিশা’র রুমে’র দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছা’ড়ে।”
ঈশিকা খানম ঈশিতা খানমে’র কাছ থেকে সব কিছু শুনলেন। এখানে দো’ষটা লাবিবে’র মায়ের(মহিলাটি লাবিবের মা তথা ইরিনে’র ফুপি’র জ্বা) ছিল। উনারা জানেন এই মহিলা এইরকম তাই কিছু না বললেও এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঈশিকা খানম তখন দেখলেন আরিশা উপর থেকে নামছে। তাই দেখলেন আরিশা কী বলে। তিনি সব শুনে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এখনো ইরিনে’র ফুপি জানেন না জানলে কী হবে কে জানে।”
এভাবেই সকাল পার হয়ে দুপুর আসে। সবাই খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছেন।” কিছু বলেনি ইরিনে’র ফুপি। হয়তো লাবিবে’র মা লাইলি জামান কিছু বলেননি উনার কাছে। ঈশিকা খানম সবাইকে নিচে দেখলেও আরিশা কে নিচে দেখলেন না। তিনি বোন কে রেখে উপরে গেলেন আরিশা’র কাছে। আরিশা রুমে দাঁড়িয়ে গাঁয়ে হলুদে’র বিভিন্ন ধরনে’র গহনা গুছিয়ে রাখছে। ঈশিকা খানম এগিয়ে গেলেন আরিশা’র দিকে। ঈশিকা খানম কে দেখে আরিশা বললো- কিছু বলবে আন্টি মনি।”
ঈশিকা খানম বললেন আরিশা মা তুমি সকালে’র ঘটনা’র জন্য মন খা’রা’প করো না। উনি মানুষটাই এরকম বুঝতেই তো পারছো।”বলেই ওর গালে’র উপর দুহাত রাখলেন। আরিশা উনা’র হাতে’র উপর হাত রেখে বললো- আমি মন খারাপ করিনি আন্টি মনি। আমি আরো তোমার কাছে যেতাম। আমি উনার সাথে কীভাবে কথা বলেছি। আসলে আন্টি মনি উনি নিজেই ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকে আসছিলেন আর দেখেছেন আরিয়া দ্রুত হেঁটে আসছে। কিন্তু ও নিচের দিকে তাকিয়েছিল কেন জানিনা। তবে উনি যদি একটু ওদিকে সরে আসতেন তাহলে এসব হতো না। আবার আরিয়াকেই যা তা বলছেন। বাসায় আমাদের এভাবে কেউ কিছু বলেনি আন্টি মনি কোনোদিন তাই আমি নিজেকে দ’মি’য়ে রাখতে পারিনি।” ঈশিকা খানম দেখলেন আরিশা মুখ মলিন করে কথা গুলো বলছে। অর্থাৎ সে বলছে চায়নি কিছু কিন্তু বাধ্য হয়ে বলেছে। উনি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই।”
আরিশা হেঁসে বললো- আচ্ছা আন্টি মনি উনি কে?” ঈশিকা খানম: উনি ইরিনে’র ফুপি’র জ্বা মানে হৃদি’র চাচি। লাবিব আর লাবিবা’র মা লাইলি জামান। আচ্ছা তুমি খেতে আসো। সকালে তো তেমন কিছু খাওনি দেখলাম। আরিশা বললো- আসছি আন্টি মনি তুমি যাও। ঈশিকা খানম রুম থেকে চলে গেলেন।”
ইরিন আরিয়া’র পাশে বসে আছে ছাদে। আসরে’র নামাজ আদায় করে আরিয়া ছাদে এসেছিল নি’রি’বি’লি পরিবেশে’র জন্য। ওর পিছনে ইরিন ও এসেছে, ও সবকিছু শুনেছে দিশা’র কাছ থেকে। আরিয়া একটা ক’র্না’রে দাঁড়িয়েছিল ইরিন ওর পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রাখলো। আরিয়া ইরিনে’র দিকে তাকায়!” ইরিন বললো- স্যরি রিয়া পাখি!” উনি এরকমই উনা’র কথায় তুই মন খারাপ করিস না প্লিজ। যখনই আমাদের বাড়িতে আসেন কোনোকিছু নিয়ে একটা না একটা ঝ’গ’ড়া করেন। আমার সাথেও করেছেন দু’তিন বার। তুই প্লিজ মন খা’রা’প করিস না। বলে আরিয়া’র দুগালে সে হাত রাখলো।”
আরিয়া ইরিনের হাতের উপর হাত রেখে বললো- দুর পা’গ’লী!” আমি মন খা’রা’প করিনি তো। আরিশা’র কথা শুনছিস তো কী ঝ’গ’ড়া’টা’ই না করলো! বলেই হেঁসে দেয়। টোল পড়া গালে’র হাঁসি কতই না সুন্দর। আরিয়া’র হাঁসি দেখে ইরিন ও হেঁসে ওকে জড়িয়ে ধরে। তখন ওর ফোনে কল আসে। ইরিন আরিয়া’র দিকে তাকিয়ে আর কলদাতা’র দিকে তাকিয়ে ল’জ্জা পেলো। আরিয়া “ভ্রু” নাচিয়ে বললো – জি…..জু। ইরিন বললো যাহ শ’য়’তা’ন মাইয়া!” বলে কল রিসিভ করে চলে গেলো। নয়তো নিহান ওকে কী তো কী বলবে আর তা শুনে আরিয়া ওকে পঁ’চা’বে তাই চলে গেলো। আরিয়া ইরিনে’র যাওয়া’র পানে তাকিয়ে জোরে হেঁসে দিলো। তারপর সেও চলে গেলো নিচে, কারন মানুষ আসবে এখানে স্টেজ বাঁধা’র জন্য।”
আরিয়ান এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে দেখছে সব কিছু। কত মানুষে’র আ’না’গো’না কিন্তু ও যাকে দেখতে চায় তাঁর ছায়া টুকু এখানে নেই। কী আজব একই বাড়িতে থেকেও দু’দিন হতে চললো দু’জনে’র দেখা হচ্ছে না। কা’ক’তা’লী’য় ভাবে ওতো একবার এক পলক দেখা হতে পারতো। কিন্তু না কোনোভাবেই দেখা হচ্ছে না এদের”। আরিয়ান হ’তা’শ!” সে আর ঘা’ট’লো না এসবে কারণ আজ তার “মায়াপ’রি কে দেখা দিতেই হবে। আজ আরিয়ান হাল ছাড়বেন না প্রয়োজনে রুমে যাবে। আরিয়ান নিজের মাথায় নিজেই গা’ট্টা মা’র’লো! কী আবুল তাবুল বকছে সে। মুচকি হেঁসে চলে গেলে সেখানে থেকে ও।”
চারিদিকে মিঠি মিঠি অ’ন্ধ’কা’র। কিছু সময় পূর্বে সন্ধ্যা নেমে এসেছে ধরনী’র বুকে। চারিদিক অ’ন্ধ’কা’রে আবৃত হচ্ছে, অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন দেখাচ্ছে সবকিছু।”
আরিয়া আসলো সকালে’র সেই ঝ’গা’ড়া’টে মহিলা অর্থাৎ লাবিবের মায়ের রুমে। ঈশিকা খানম ওদের মধ্যে একজন কে বলছিলেন উনাকে ডেকে নিয়ে যেতে। কেউ আসলো তাই ও আসলো। বিয়ে বাড়ি একটা অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে লে’ট করা ঠিক হবে না এই ভেবে। দরজায় ন’ক করলো আরিয়া। লাইলি জামান সেদিকে তাকিয়ে আরিয়া কে দেখে মুখটাকে কেমন করে রাখেন। কিছু টা ক’ক’র্শ কন্ঠে বলে উঠেন- এই মেয়ে তুমি এখানে কী চাও?” উনার কথা শুনে আরিয়া’র ভালো লাগলো না। সে বললো- আন্টি আপনাকে আন্টি মনি মানে ইরিনে’র আম্মু ডাকছেন।”
ওর কথা শুনে লাইলি জামান বললেন- যাও যাও গিয়ে বলো আসছি। যত্তোসব এসব বলে তিনি আরো কী কী বলতে লাগলেন।আরিয়া সেখানে দাঁড়ালো না আর!” দ্রুত পায়ে ওর রুমে’র দিকে যায়। সকালে’র কথা টা ওর মনে পরেছে তবে মন খারাপ করেনি। কিন্তু এখন উনার এসব কথা শুনে ওর মন খা’রা’প হয়ে গেলো। চোখে জল চলে আসলো উনি তো সকালেও ওকে অতিথিদে’র সামনে যা ইচ্ছা তাই বলেছেন।”
আরিয়ান রুমে ঢু’কে লাইট অ’ফ করে নিলো। কিন্তু সে বুঝতেই পারেনি ওর পেছন পেছন……
চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_৮
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরিয়া রুমে ঢু’কে লাইট অফ করে নিলো। কিন্তু সে বুঝতেই পারেনি তার পেছন পেছন আরাফও এসেছে।” আরাফ সবকিছুই শুনেছে,সে জানে আরিয়া এখন কান্না করবে। ওদেরকে ওদের পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনই কখনো এভাবে কিছু বলেনি। ওরা এমন কিছু করেওনি। কিন্তু আজ দুজনে’র ভু’লেই বা হোক একটা সামান্য ঘটনা ঘটে গিয়েছে। উনি যা নয় তা বললেন ওদের কে। এখন আবার!মেয়েটা’র মন তো এমনিতেই খা’রা’প হবে। কিন্তু আরাফ তো ওর চঞ্চল রানী’র মন খা’রা’পি স’হ্য করতে পারবেনা।”
আরাফ রুমে ঢু’কে দরজা ভালোভাবে বিড়িয়ে দেয়। ফুঁপিয়ে কান্না’র শব্দ ভে’সে আসছে। আরাফ সেই শব্দ অনুযায়ী এগিয়ে যায়। দেয়ালে হাত দিতেই সুইচে’র সন্ধান মিলে। একটা সুইচে চা’প দিতেই একটা সবুজ রঙের আলো’র ডিম লাইট জ্বলে উঠলো”। সেই আলো রুমে পরতেই অ’ন্ধ’কা’র ভাব টা কে’টে যায় অনেকটাই।” আরাফ সেই আলোয় দেখতে পায় আরিয়া কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। সেদিকে এগিয়ে যায় আরাফ।”
আরিয়া’র কাঁধে হাত রেখে ওর দিকে ফেরায় আরাফ। আরিয়া’র চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে।” আরাফে’র স’হ্য হলো না আরিয়া’র দু’চোখে’র পানি। সে আরিয়া’র মাথা নিজের বুকের সাথে চে’পে ধরে।” মাথায় হাত রেখে ধীর গলায় বললো- তুই কেন এই মহিলা’র কাছে আবার গেলি আরিয়া?” সকালে এতো কথা শুনা’র পরেও তুই আবার কী বুঝে উনার রুমে গিয়েছিস!” অন্য কেউ ছিল না! আর মানুষ নেই বাসায় তোকেই কেন আসতে হলো?”
আরিয়া ভে’জা গলায় বললো- কেউ আসছিল না ভাইয়া তাই আমি এসেছি।
আরাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেল’লো।” কিছু না বলে আরিয়া’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আরিয়া কে সচ’রা’চ’র কাঁদতে দেখা যায় না।” আরাফ নিজেও তেমন বেশি কাঁদতে দেখেনি ওকে। ছোট থেকেই আরিয়া হাঁসি-খুশি, চঞ্চল। নিরবতা ওর আশে পাশে নেই। এতো বড় হওয়ার পরেও সারা বাসায় ট’ট করে ঘুরে বেড়াবে, বাচ্চাদে’র মতো চঞ্চল স্বভাব ওর মধ্যে বিদ্যমান এখনো। আরাফ ওর বোন কে নিরব দেখলেও আরিয়া কে নিরব দেখেনি,ও নিরব থাকে না।
সেই মেয়েকে হঠাৎ কান্না করতে দেখলে বুঝা যায় কতটা আ’ঘা’ত পেয়েছে!” যার কারনে সে কান্না করতে বাধ্য হয়েছে। আরাফ আরিয়া কে বুঝিয়ে শুনিয়ে আর লাবিবে’র মায়ের আশে পাশে যেনো না যায়! এসব বলে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। আরিয়াও হাত মুখ ধু’য়ে বাহিরে আসে সবার কাছে।”
রাত প্রায় দশটা হলুদে’র অনুষ্ঠান শুরু হয়। ছেলেরা একই রঙের পাঞ্জাবী এবং মেয়েরা একই রঙের শাড়ি পড়লো।”
আরিশা,আরিয়া, মিতু,সোহা,দিশা,হৃদি,লাবিবা সবাই একে একে তৈরি হচ্ছে। ইরিন কে একটা পার্লারে’র মেয়ে এসে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে।”
আরিশা,দিশা,আরিয়া,সোহা,হৃদি,মিতু,লাবিবা সবাই এক স্টাইলে শাড়ি পরেছে। তবে ওদের মধ্যে আরিশা,আরিয়া, দিশা,সোহা শাড়ি পড়ে ওড়না দ্বারা সুন্দর করে পিনা’প করে নেয়। হৃদি,লাবিবা,মিতু চুল খোঁপা করে তাতে বেলী ফুলে’র গাজরা পড়ে নেয়। সবাইকেই সুন্দর লাগছে নিজেদের সাজ সজ্জায়।”
আরিশা’র তৈরি হওয়া শেষ,তখন ওদের রুমে প্রবেশ করে রাত। ওর হাতে ওদের শাড়ি’র মতো একটা শাড়ি। রাত আরিশা কে বললো- আপু, আপু আমিও তোমার মতো শাড়ি পড়বো। আমাকে পড়িয়ে দাওনা গো আপু। আমার আম্মু আমাকে পড়িয়ে দিচ্ছে না। রাত কথাটা বলে আরিশা’র আরো পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আরিশা রাতে’র দিকে ঝুঁকে মুচকি হেঁসে বললো- তুমি আমার মতো শাড়ি পড়বে।” রাত উপর নিচ মাথা ঝাঁকায়”। মানে সে পড়বে, ওর চেহারায় খুশি’র ঝলকানি। তার মন কতটা প্রফুল্ল এই কথা টা শুনে।” আরিশা মনে মনে হেঁসে বললো- মেয়েটা বড় হয়ে নির্ঘা’ত! শাড়ি পা’গ’লী হবে।”
ওদের কথার মধ্যেই রাতে’র মা রুমে প্রবেশ করেন। তিনি আরিশা’র কাছে এসে বললেন- দেখো না মা! কেমন বায়না ধরেছে তোমার মতো সেও নাকি শাড়ি পড়বে। আমার শাড়ি নিয়ে চলে আসলো তোমার নিকট।”
আরিশা বললো- সমস্যা নেই আন্টি আমার তৈরি হওয়া শেষ। আর ও যখন শাড়ি পড়তে চায় পড়ুক না সমস্যা কোথায়।” রাতে’র আম্মু কে আন্টি বলতে আরিশা’র কেমন যেনো লাগছিল। ওদের বয়সী নয় তবে দেখতে ওদের মতোই তরুণী। কিন্তু আজ তাকে আন্টি বলতে হচ্ছে। রাতে’র আম্মু রামিসা আহমেদ মেয়ে’র বায়না আর আরিশা’র কথা শুনে বললেন- আচ্ছা! তাহলে পড়িয়ে দাও।”
আরিশা উনার অনুমতি পেয়ে মনোযোগ সহকারে রাতকে শাড়ি পড়াতে লাগলো। সুন্দর ভাবে গুছিয়ে শাড়ি পড়ানো’র পরে রাতকে দেখে আরিশা’র মুখ থেকে বের হয়ে আসলো-“মাশাআল্লাহ”। রাতে’র আম্মু রামিসা আহমেদও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মেয়ে’র পানে। রাতে’র বয়স আট-নয় বছর হলেও ওর দেহের গড়’ন দেখে বুঝা যাবে তেরো-চৌদ্দ বছরে’র কিশোরী। সব সময় শর্ট টপস, পেন্ট পড়ে বলে বুঝা যায় না। কিন্তু শাড়ি পড়ায় অপরুপ কিশোরী লাগছে রাত কে। আরিশা রাত কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো- এই দেখো রাত পাখি!আমার থেকে তোমাকে বেশি সুন্দর লাগছে। শাড়ি পড়ে তো তুমি বড় হয়ে গেলে রাত পাখি।” আরিশা’র কথা শুনে রাত খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। কী সুন্দর মুক্ত জড়ানো সেই হাঁসি। বাচ্চাদে’র হাঁসি সত্যিই অপরুপ সৌন্দর্য আর মুগ্ধতায় ভরপুর।” এই মেয়েটা’র উপর দুঃখের আচ’র না লাগুক।” সারা জীবন এইভাবে মুক্ত জড়ানো হাঁসি তার মুখে লেগে থাকুক।”
আরিশা রাত কে হালকা সাজিয়ে দিলো। ওর গোলাপী বর্নে’র অধর যুগলে হালকা লিপস্টিক দিতেই অধরযুগল নজ’র কা’রা হয়ে উঠলো। রাত কে সাজিয়ে দিয়ে সব কিছু কম্পিল্ট হতেই রাইসা আহমেদে’র ফোন বেজে উঠলো। উনার স্বামী কল করেছেন ভিডিও কল।
রাইসা আহমেদ ফোন রিসিভ করে মেয়ের দিকে ক্যামেরা দিলেন।”
রাতে’র আব্বু দু’মিনিট ওকে দেখে বললেন এ কী আমার রাত পাখি।” রাইসা আহমেদ ছোট্ট করে জবাব দিলেন- হুম!” রাতের আব্বু রেদওয়ান হাসান মেয়েকে পরখ করতে করতে বললেন- “মাশাআল্লাহ” আমার মেয়ের উপর ন’জ’র না লাগুক।”
এসব বলে তিনি বললেন- আমার মেয়ের নাম রাত না দিয়ে মুগ্ধতা দিলে ভালো হতো।” তিনি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেন। তিনি কাতার প্রবাসী সেখানে উনার চাকরি আছে।”
হঠাৎ আরিয়ান কে দেখে রাত ওর কাছে গেলো। রাত কে দেখে আরিয়ান বললো- হেই পিচ্চি! তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।” রাত আরিয়ান কে হেঁসে হেঁসে বললো- জানো ভাইয়া এই শাড়ি আমাকে কে পড়িয়ে দিয়েছে!” আরিয়ান বললো- কে?” রাত বললো- আমি আপু’র নাম কী যে! জানিনা, ভাইয়া তুমি দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি আপুকে।” বলে পিছনে ঘুরে দু’ক’দ’ম এগিয়ে যেতেই আরিশা কে দেখতে পায় এদিকে আসছে,একটা বক্স হাতে। রাত আরিশা কে ঢেকে বললো- আপু এদিকে একবার আসো না গো।” রাতে’র কথায় আরিশা ওর কাছে আসতেই রাত ওর এক হাত আঁকড়ে ধরে আরিয়ানে’র দিকে যেতে লাগলো।”
রাত আরিয়ান কে বললো- এই যে ভাইয়া দেখো এই আপু টাই আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। রাতে’র কথায় আরিয়ান চোখ তুলে সেদিকে তাকাতেই সে থমকে গেলো। তাঁর হৃৎপিণ্ড অস্বাভাবিক গতিতে চলতে লাগলো। এ যে তারই মায়াপ’রি”, আজ কতটা দিন পর তাঁর মায়াপ’রি” কে সে স্বচ’ক্ষে দেখতে পারলো।”
আরিশা রাত কে বললো- রাত পাখি আমার কাজ আছে গো!” আমি যাই।” বলে আরিয়ানে’র দিকে একপলক তাকিয়ে পেছনে ঘুরে চলে যাবে আবার ঘুরে তাকায় আরিয়ানে’র দিকে। সে দেখলো আরিয়ান তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে। সে আরিয়ান কে দেখে বললো- আপনিই তো আমাকে এয়ারপোর্টে ধা’ক্কা দিয়েছিলেন তাই না।” ভাইয়া পরে’র বার দেখে শুনে হাঁটবেন।”
আরিশা’র কথা শুনে আরিয়ানে’র ঘো’র কা’টে।” তবে কিছু বললো না মন ভ’রে দেখছে তার “মায়াপ’রি কে।”
আরিশা আরিয়ান কে খানিকটা খুঁটি’য়ে দেখবে বলে ওর দিকে তাকায়।” কিন্তু এক অজানা কারনে সে তাকিয়ে থাকতে পারলো না আরিয়ানে’র দিকে। পাশ কে’টে চলে গেলো।”
ততক্ষণে রাতে’র সঙ্গী’রা ওকে নিয়ে চলে গিয়েছে।” আরিয়ান এখনো আরিশা’র যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। আজ তার মায়াপ’রি” কে সে দেখতে পেরেছে।”
কিন্তু মায়াপ’রি যে তাকে চিনতে পারলো না। সে তো তাকাই নি ওর দিকে। যদি ওইভাবে দেখতো তাহলে হয়তো চিনতে পারতো। কোনো ব্যাপার না এইবার আরিয়ান নিজেই নিজেকে চিনিয়ে দিবে তার মায়াপ’রি’র” কাছে। মুচকি হেঁসে সে প্রস্থান নেয় এই জায়গা থেকে।”
দূর থেকে একজন আরিয়ান,আরিশা’র কথা বলা। আরিয়ানে’র এক দৃষ্টিতে আরিশা’র দিকে তাকিয়ে থাকা। ওর জন্য মুচকি হাসা! মোটেই ভালো লাগলো না এই মানুষটা’র কাছে”। যত দ্রুত সম্ভব…….
চলবে!