ক্যাসিনো পর্ব -০৫

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)

#পর্বঃ৫

রকিবউদ্দীনের সামনে বসে আছে এক যুবক। যাকে আগা গোড়া পর্যবেক্ষন করছে সে,চিকন চাকন শরীর,চাপা গায়ের রং,ঢিলা ঢালা শার্ট পড়েছে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মাথার চুলে চুপচুপ করছে তেল, তার উপর ডান দিকে সিঁথি করা‌।

এক কথাই নব্বই দশকের স্টাইল। রকিবউদ্দীন ভেবে পাচ্ছে না এই ২২শতকে এসে এমন যুবক ও আছে বাংলাদেশে তা সে ভেবে পাচ্ছে না । এখন কার ছেলে মেয়েদের যে স্টাইলে চলা ফেরা করে তা সব আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে বাধ্য করে।

রকিবউদ্দীন ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলল,নাম কি তোমার???

জ্বী স্যার আমার নাম নূর মোহাম্মদ।
তা বেশ কিন্তু যেই কাজের জন্য উপর থেকে তোমায় পাঠানো হয়েছে সেটা কি সত্যিই পারবে?? না কি সময় নষ্ট করার ধান্দায় বসেছো।

নূর মোহাম্মদ মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল,কারো পোশাক আশাক দিয়ে কিংবা তার অনন্যা গেট আপ দেখে তার চরিত্র অথবা তার বুদ্ধি যাচাই করতে যাবেন না স্যার।

শেখ শাদি কে নিয়ে কিন্তু একটা লোককথা রয়েছে স্যার। যা হয়তো আপনার অজানা নয়। কেননা পোশাক কখন ও কারো ব্যাক্তিত্ব হতে পারে না স্যার। ভালো পোশাক না পড়ার কারণে তাকে ভালো খাবার দেওয়া হয়েছিল না। সেই শেখ শাদি যখন ভালো পোশাক পরিধান করে আসলেন। তাকে তখন ভালো ভালো খাবার দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি কি করেছিলেন?? খাবার না খেয়ে, নিজের পকেটে ভরেছিলেন। কারন খাবার টা তো তাকে নয় পোশাকের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তেমনি আমিও ফিটফাট হয়ে আসলে কেস আমাকে দিবেন?? নাকি আমার পোশাক কে???

রকিবউদ্দীন চোখে হাসলেন। আর বললেন,এর আগে কোন কেসে কি কাজ করেছো?? নূর মোহাম্মদ গর্বের সাথে বললেন,জ্বি আরো দুটো কেসে কাজ করেছি। একটা আরফান হ*ত্যা, অন্য টা ধর্ষ*নের।

ওহহ গুড। ঠিক আছে, তোমার কাজে অফিসার তমাল সাহেব সাহায্য করবে। আমি উনাকে ডেকে দিচ্ছি।
অফিসার তমাল নূর মোহাম্মদ কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। শেষ পর্যন্ত কি এই কেস টাকে এমন এক ছেলে কে দেওয়া হলো?? সে কি পারবে?? পরক্ষনেই ভাবলো উপর তলার লোক যা ভাবছে হয়তো ভালোই ভাবছে।

অফিসার তমাল কে নূর মোহাম্মদ কে দেখিয়ে বললেন,এই হলো সিকিউরিটি এজেন্সি থেকে এসেছে। এবারের কেস টা সেই দেখবে। তার যদি কোন প্রকার হেল্প লাগলে সব রকম হেল্প করবে।
অফিসার তমাল হেসে আশ্বাস দিলেন । রকিবউদ্দীন আন্তরিকতার সাথে বললেন। এখন কি আমি তোমায় কোন ভাবে সাহায্য করতে পারি???
জ্বি স্যার আমার এখন সবার মাডারের ডিটেল গুলো জানার জন্য, ফাইল টা প্রয়োজন। আর তাদের ফরেনসিক রিপোর্ট টাও। আর গুরুত্বপূর্ণ কথা গতকালের লাশে কি আপনি কোন ভিন্নতা পেয়েছেন???

রকিবউদ্দীন নরেচরে বসে বললেন। তার পর চিন্তা মাখা গলায় বললেন, সবাই কে একি ধাঁচেই হ*ত্যা করা হয়েছে। গলায় ছু*রি চালিয়ে। তবে গতকালের লা*শে গলায় যে ছু*রির আঘা*তের ক্ষ*ত পাওয়া গেছে। সেটা বেশ গভীর ছিল। মনে হচ্ছে খুব ক্ষোভ এবং শক্তি দিয়ে ছু*ড়ি চালানো হয়েছে।

নূর মোহাম্মদ উঠে দাঁড়ালেন। রকিবউদ্দীন বললেন, ঠিক আছে আজ ফাইল টা ভালো ভাবে দেখো । আর কাল থেকে কাজ শুরু করে দাও।

নূর মোহাম্মদ নিজের মুখে হাসি বজায় রেখে বললেন, আমি কাজ ফেলে রাখতে পছন্দ করি না। আমি আজই কাজ শুরু করে দিতে চাই। রকিবউদ্দীন হাসলেন। এবং বললেন, ঠিক আছে কিন্তু এখন যেতে চাচ্ছো কোথায়। গতকাল কে খু*ন যেখানে হয়েছে সেই জায়গাটা একটু পর্যবেক্ষণ করতে চাই। এবং গতকালের খু*ন হওয়া লোকদের বাসায় যেতে চাই। রকিবউদ্দীন চিন্তিত স্বরে বললেন।
কিন্তু তারা তো একা থাকতো গিয়ে কোন লাভ নেই। হুঁ তবে তাদের আশেপাশের লোকজনের থেকে কিছু হয়তো পেতে পারি। আর সব থেকে বড় কথা হলো, খু*নি যতই চালাক চতুর হোক না কেন, কোন জায়গায় একটু ভুল হলেও সে করবেই। আমাদের সেই ভুল টাই খুজে বের করতে হবে।

নূর মোহাম্মদ অফিসার তমাল কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। রকিবউদ্দীন কিছু টা আশা নিয়ে ভাবলেন। ছেলেটার গেট আপে কোন যায় আসে না। কথার ধরনে মনে হচ্ছে এখন সে অবশ্যই বুদ্ধি মান।

মরিয়ম এই অবেলায় শুয়ে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। গায়ে প্রচন্ড রকম জ্বর এসেছে। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ বাহিরে। রোদের তেজে আকাশের দিকে তাকানোর দুষ্কর। এতো গরমেও কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে সে। মাথার অসহ্য ব্যাথায় টনটন করে উঠছে তার। মিহি আজ স্কুলে যায়নি। মায়ের কাছেই উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। গতকাল থেকে বার বার করে বলেই যাচ্ছে। তারা এই বাড়িতে আব্বুর সাথে থাকবে না। দাদুর কাছে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে।

মেহমেতের উপর কম্পানির সকল দায়িত্ব দিয়ে,আবদুল হামিদ খান আর মাসুমা গ্রামের বাড়িতে চলে যান । শেষ নিঃশ্বাস টুকু তারা তাজা বাতাসে যেন ফেলতে চাই। আর আবদুল হামিদ তো জাবেদের সাথে কাটিয়ে মরতে চাই। ২০_২৫ বছরে যে বন্ধুত্বে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা শেষ বয়সে পুষিয়ে দিতে চাচ্ছে।

আরিফার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের পরিক্ষা দিয়ে সে ও এক মাস হলো গ্রামের বাড়িতে গেছে।

মরিয়মের শুধু মিহির বলা কথাটা ভাবছে,আব্বু পঁচা, আব্বু আমাকে ও মে*রেছিল তোমাকেও ব্যাথা দিয়েছে।

গত ২মাস আগের কথা, মেহমেত অনেক বদলে যায় ইচ্ছে মত বাসায় আসে আবার ইচ্ছে মত চলে। সারাক্ষণ কি যেন দুশ্চিন্তা করে। সেদিন রাতে মেহমেত অনেক দেরি করে ফিরেছিল,রাত প্রায় ১১টা। সচরাচর আগে মেহমেত ৯টায় বাসায় চলে আসতো। মরিয়ম আর মিহি ড্রয়িং রুমে বসে আছে আর গল্প করছে তার স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে। মিহি এতো রাতে জাগে না । বড়জোর ১০টা তার পর ঘুমিয়ে যায়। কিন্তু সেদিন কোন মতেই সে ঘুমাবে না । আব্বুর সাথে ঘুমাবে বলে বায়না ধরে বসে । মেহমেত টলমল করতে করতে বাসায় ফিরে, চোখ জোড়া রক্ত বর্ন ধারন করে আছে। কপালের রগ যেন দপদপ করছে। কোন কিছু নিয়ে চিন্তা মগ্ন হয়ে আছেন।

মেহমেতকে দেখেই মিহি উল্লাসিত ভুঙ্গিতে তার কাছে দৌড়ে যায় আব্বু ডেকে।

মেহমেতের কাছে যেয়ে আদুরে গলায় বলে, আব্বু জানো আজ আমাদের স্কুলে কি হয়েছে?? মেহমেত বিরক্তিকর কন্ঠস্বরে জবাব দেয়। আমি তোমার কথা পরে শুনবো এখন তুমি যাও এখান থেকে।

মেহমেত তার ক্লান্ত শরীর টা সোফায় এলিয়ে দিয়ে বসলেন, কপালে এক পাশে স্লাইড করছে। মরিয়ম অস্থির কন্ঠে বললেন!! আপনি কি ঠিক আছেন মেহমেত?? মরিয়মের দিকে চেয়ে বলল আমি ঠিক আছি,এক গ্লাস পানি এনে দাও তো‌। মরিয়ম দ্রুত পায়ে রান্না ঘরে যায় পানি আসতে।

মিহি আবার তখন মেহমেতের কাছে এসে গা ঘেঁষে বসে পড়ে। আর বলতে আরম্ভ করে আব্বু শুনো না আমি আজ ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছি। এই জন্য মিস আমায় চকলেট দিয়েছে। নূরী ফার্স্ট হতে পারেনি দেখে ও অনেক কাঁদছিল,কি একটা অবস্থা হয়েছে বলো তো আব্বু। মেহমেত তখন আবার মিহি যেতে বলে তবুও মিহি নিজের বকবকানি বন্ধ করে না। শেষে মেহমেত রেগে মিহিকে কষে একটা থাপ্পর মারে। তার থাপ্পরের এমনি ছিল যে,মিহি সোফা থেকে ছিটকে পড়ে যায়। জোরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে মিহি। মিহির কান্নার আওয়াজে মরিয়ম পানির গ্লাস হাতে দৌড়ে আসে। এমন ভাবে মিহি কে পরে থাকতে দেখে তরিঘরি মিহিকে উঠিয়ে বুকের মাঝে চেপে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করে।

মেহমেতের দিকে তাকিয়ে কপাল ভাঁজ করে বলে কি হয়েছে মিহির?? ও কাঁদছে কেন। মিহির কান্নার শব্দ যেন থামার পরিবর্তে আরো বেড়ে যাচ্ছে ‌। মেহমেতের টনক নড়ে গেলে বুঝতে পারে সে মিহির গায়ে হাত তুলেছে!! অনুশোচনায় তার চোখ ছলছল করে।

মেহমেতের উত্তর না পেয়ে মিহিকে সামনে দাঁড় করিয়ে জিঙ্গাসা করে। সে কেন কাঁদছে। তখন মিহির গালে জ্বল জ্বল করা পাঁচ আঙুলের দাগ দেখে মরিয়ম হতবাক হয়ে যায়। মেহমেত মিহি কে মেরেছে???

মরিয়ম করুন গলায় মিহি কে শান্ত করার চেষ্টা করে মেহমেতের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,মেহমেত আপনি মিহি কে মেরেছেন??? কেন??

মেহমেত কোন জবাব দেয়নি। শুধু ছলছল চোখে মিহির দিকে চেয়ে রয়েছিল। মেহমেতের চাহুনি তে মিহি ভয়ে কুকড়ে যাই মরিয়মের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল।

তার পর থেকে মিহি মেহমেত কে প্রচন্ড রকম ভয় পায়। মেহমেত অনেক বার করে মিহির সাথে ভাব জমাতে চেষ্টা করেছে আগের মত। কিন্তু মিহি তার বাবার সাথে অনেক দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছিল।

এসব ভাবনায় মরিয়মের বুকচিরে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। মিহি কে নিজের দিকে করিয়ে বুকের সাথে জাপটে ধরে। চোখ দুটো অসম্ভব জ্বলছে তার তাকাতে পারছে না চোখ তুলে। নিমিষেই সে বুঝতে পারছে তার জ্বরের বেগ আরো বাড়ছে। মাথা টা ভারি হয়ে আসছে। অতিরিক্ত জ্বরে আর ক্লান্তিতে মরিয়মের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে।

মেহমেত ক্লাবের এক কোনায় বসে আছে,হাতে ড্রিংকস। এক সাইটে ছেলে মেয়েরা নাচানাচি করছে। আর এক সাইটে ক্যাসিনো খেলছে অনেক লোক। কেউ শূন্য পকেট ভরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ ভরা পকেট খালি করে শেষ সম্বল ও হারাচ্ছে।

ক্লাবের গানের লিরিক্সে মেহমেতের মাথায় আগুন ধরাচ্ছে। কিন্তু এখানেই তাকে থাকতে বলেছে। তাই বাহিরেও যাওয়া যাচ্ছে না। মিহির কথা গুলো আর মরিয়মের রক্ত মাখা মুখ টা বার বার ভেসে উঠছে মেহমেতের সামনে। সে এক এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যে না পারছে সহ্য করতে না পারছে সব শেষ করতে। রাগে ফেটে যাচ্ছে যেন মেহমেত। সামনে থাকা ড্রিংকের গ্লাস টা সজোরে আছার মারে। কাঁচের গ্লাস টা টুকরো টুকরো হয়ে গেল নিমিষেই।

এক ভারি কন্ঠস্বর ভেসে এলো মেহমেতের কানে,গ্লাসের উপর রাগ ঝেড়ে কি লাভ??? পারলে যার উপর রাগ তাকে কিছু করে দেখা!!!

মেহমেতের সেই কন্ঠস্বরের ব্যক্তিটির দিকে অগ্নিচোখ করে চেয়ে রইল, পরক্ষনেই অতি মাত্রা ক্ষোভে সেই ব্যক্তিটির কলার চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলতে লাগলো,, আমার মেয়ের স্কুলের আশেপাশে যেতে মানা করেছিলাম??? তবুও কেন গেছিস???

ব্যক্তিটি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে কলার থেকে মেহমেতের হাত সরিয়ে বললেন____
পূর্ববর্তী পর্বে বেশি লাইক কমেন্ট নাই তাই আজকে এক পর্ব দিলাম। আগামীকাল সকাল টার আগে ৩০০ + লাইক কমেন্ট হলে ৯ টার পরে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করা হবে। আপনারা লাইক কমেন্ট করলে অন্যদের কাছে তারাতাড়ি পৌছাবে।

চলবে_____??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here