#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_১৫
নিশান কে জেলে নেওয়ার প্রায় ২৩ ঘন্টা পর ,তার নেশা কেটে স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে। এতো স্ট্রং নে*শা দ্র*ব্য গ্রহণ করেছিল। আমার নাহ এখানেও একটা খটকা রয়েছে,,নিজে নেশা গ্রহণ করলে কেউ কি এমন স্ট্রং নে*শা নিতে পারে?? দেবী রায়ের কথা গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে মরিয়ম। ভাবনাচিত্ত মুখ করে বলল,, আমার তো পুরো খটকায় রয়েছে যে আসলেই নিশান এমন করেছিল কিনা তার পর কি হলো আপনি বলুন!! দেবী রায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলেন,,নেশা কেটে যাওয়ার পর যখন সে দেখে জেল খানায় বন্দি তখন পাগলের মত চিৎকার করতে শুরু করে। আর বলতে থাকে আমার শাহানার কাছে আমাকে নিয়ে চল। ও ঠিক আছে তো??! প্লিজ আমাকে শাহানার কাছে নিয়ে চলেন। নিশানের এমন পাগলামীতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে কারারক্ষীরা । শাহানার কাছে তাকে কিভাবে নিয়ে যাবে?? যেখানে শাহানার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছিল।
মরিয়মের কাছে সব কিছু আরো ঘোলাটে লাগছে। তবে নিশ্চিত বুঝতে পারছে নিশান সাথে খুব বড় একটা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। মরিয়ম দেবী রায়ের গা ঘেঁষে বসে ঘনিষ্ঠ হয়ে বললেন, আপনি কখনো নিশানের সাথে দেখা করতে গেছিলেন??
হুমম এক বার গেছিলাম তার এমন উদ্ভট পাগলামীর কথা শুনে। নিশানের বিদ্ধস্ত চেহারা দেখে আমার মনটা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠেছিল। মাত্র সাত দিনের জেল হাজতে থাকায় তার চেহারার এমন করুন হাল আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। চোখ দুটো যেন খালে ঢুকে গেছে,সারা শরীরে মারের ছপ ছপ দাগ, চোখের নিচে কাজল লেপ্টে যাওয়ার মত কালি পড়ে গেছে। নিশান আমাকে দেখে প্রায় কেঁদেই দিয়েছে। বার বার বলছিল আমি শাহানা কে খুন করিনি, আমি কিভাবে ওকে ধর্ষণ করতে পারি যেখানে সে আমার স্ত্রী ছিল। স্ত্রীর কথাটা শুনে আমি বেশ চমকে গেছিলাম। নিশানের কথা গুলো কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিল আমার কাছে। নিশান আরো বলছিল আমাকে ফাঁসানো হয়েছে খুব করে ফাঁসানো হচ্ছে ম্যাম। প্লিজ আমাকে এখান থেকে বের করেন। নাহলে উরা আমার ফ্যামিলি কেউ মেরে ফেলবে। আমি তখন ওকে বলেছিলাম যে শাহানা যে তোমার স্ত্রী তার প্রমান কি তোমার কাছে আছে??? কাবিন নামা?? হ্যাঁ আছে আমার রুমেই আছে। আর বিয়ের সাক্ষী হিসেবে ছিলেন আমার বাবা স্বয়ং আর মেহমেত। আমি কখনো কোন নেশা দ্রব্য গ্রহণ করিনি। আমি জুয়া খেলার সাথেও কখনো ছিলাম না ম্যাম প্লিজ আমাকে বের করেন। নিশানের সেদিনের কান্না দেখে আমার এতো কষ্ট লাগছিল যে বলার মত ছিল না। আমি নিশান কে আস্বাস দিয়ে বলেছিলাম। তুমি যদি সত্যি বলে থাকো তাহলে আমি নিশ্চই তোমাকে এখান থেকে বের করবো। কিন্তু তুমি আগে এটা বলোতো কে তোমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে?? জেলের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল নিশান। একটু দূরে একজন কারারক্ষী চোখ সুচের মত করে তাকিয়ে রয়েছে। তার পর নিশান শুকনো একটা ঢোক গিলে বললেন,রক্ষক নিজে ভক্ষক ম্যাম। এর বেশি আমি এখানে কিছু বলতে পারবো না। আমি নিশানের এই কথাটার আগা গোড়া আজো উদ্ধার করতে পারিনি কে ছিল সেই রক্ষক!!
নিশান তখন শুধু বলেছিল আপনার কাছে একটা কলম আর একটা কাগজের পাতা হবে নিশান কথাটা খুব আস্তে বলেছিল?? নিশান কে একটা কলম আর খাতা দিলাম লুকিয়ে। তখনি কারারক্ষী সময় শেষ বলে তারা দিতে আরম্ভ করলো। আমি নিশানের দিকে এক বার তাকালাম, চোখ দুটো ছলছল করছে। আমি নিশানের হাতে হাত রেখে আস্থা দিলাম। চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। সত্যির কোন দিন মরন নেই। তুমি যদি সত্যি কথা বল তাহলে নিশ্চয়ই তুমি এখান থেকে বের হবে।
নিশানের সাথে আমার শেষ দেখা ছিল সেটাই। তরিঘরি বয়েজ হোস্টেলে আসি। নিশান আর মেহমেত একি রুমে থাকতো। রুমে গিয়ে দেখি রুমে তালা ঝুলছে। গার্ড কে বললাম তালা খুলতে কিন্তু সে বলল ভিসির অনুমতি ছাড়া সে তালা খুলবে না। আমি ভিসির কাছে গিয়ে নিশানের বিষয়ে সব বললাম। যে খুব বড় ভুল হচ্ছে কোথাও। কিন্তু ভিসির মতিগতি খুব একটা সুবিধার মনে হলো না। সরল স্বীকারোক্তি তে বললেন। চোর চুরি করে কখনো শিকার করে না মিসেস দেবী রায়। আর ঐ ছেলে আমাদের ভার্সিটির কলংক। কয়লা কে বেশী ধৌত করলে কয়লার ময়লা কমবে না। বরং জায়গা টা আরো অপরিস্কার হবে। আমি স্যার কে অনুনয়ের সাথে বলতে লাগলাম।আমরা তো একবার দেখতেই পারি স্যার যে কাবিননামা নিশানের রুমে থেকে পাওয়াও যেতে পারে। স্যার কে নিয়েই নিশানের পুরো রুম তন্নতন্ন করে খোঁজে ও কিছু পাওয়া গেল না। আমি খুব হতাশ হলাম।স্যার তাচ্ছিল্যে পূর্ন আচারন করে চলে গেলেন।
মেহমেত কোথায় ছিল?? এতো কিছু যখন হয়ে যাচ্ছিল। মরিয়মের চোখে মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ। দেবী রায় চিন্তিত স্বরে বললেন, নিশানের এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পর থেকে মেহমেতের কোন খোঁজ খবর ছিল না। প্রায় ১৫দিন পর জানা যায় খুব বড় এক্সিডেন্ট হয়েছে মেহমেতের, বেঁচে যাওয়ার আশঙ্কা ৪৫% ছিল। মেহমেত একজন সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু সেই সময় এটা প্রমাণ করাও দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। আর একটি মাত্র আশা ছিল নিশানের বাবা। সব চেয়ে তাজ্জবের কথা কি ছিল জানো !! নিশান জেলে যাওয়ার আগে কিংবা পরে কখনো নিশানের ফ্যামিলি কেউ একবার ও নিশান কে দেখতেও আসেনি।
নিশানের গ্রামের নাম ছিল মথুরাপুর নওগাঁ জেলায়। ঢাকা থেকে এতো দূর যাওয়া সম্ভব তো ছিল কিন্তু আমার ছুটি কার্যকর করা হলো না। এমন কি আমাকে কড়া ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো আমি কিংবা কোন টিচার নিশানের সাথে আর দেখা করতে পারবো না । সব আশা যেন শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় ঘন কুয়াশার মত সব আচ্ছন্ন হয়ে সংবাদ আসলো নিশানের মা বাবা বোন সবাই আত্মহত্যা করেছে। নিশান কে বের করার সব কিছু শেষ হয়ে গেল। তার পর ও বেশ কয়েক দিন পর লুকিয়ে নিশানের সাথে দেখা করতে গেছিলাম কিন্তু নিশান নাকি কারো সাথে দেখা করবে না। তার পর ও বেশ কয়েক বার দেখা করার জন্য গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা করার কোন সুযোগ হয়ে উঠেনি।
মরিয়ম এবার সিওর যে নিশানের সাথে কোন চক্রান্ত করা হয়েছে। কিন্তু কে সেই রক্ষক ছিল?? কলম আর খাতা নিয়ে হয়তো সে কিছু লেখতে চেয়েছিলেন। সব কিছু জটিল সমীকরণে আটকা পড়ে গেল যেন আবার। নাহ অনেক হয়েছে এই লুকোচুরি। সরাসরি সে এবার মেহমেতের সাথেই কথা বলবে। এই কেসের মূল উদ্দেশ্য সে পুনরায় উদ্ধার করবে।
দেবি রায় এতো কথা শেষে বলেন এসব হঠাৎ তুমি জেনে কি করবে??? আর হঠাৎ পুরোনো এই কথা গুলো কেন শুনছো?? কে তুমি??
মরিয়ম চোখে হাসলেন তারপর বললেন আপাতত মেহমেতের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত হয়। আর ইনশাল্লাহ কিছু দিন পর এই রহস্যেময় কেসের এডভোকেট মরিয়ম হিসেবে দেখতে পারবেন। দেবী রায় অবাক চোখে তাকালো হিজাবী মরিয়মের দিকে। কি বলছো কি তুমি?? মেহমেতের ওয়াইফ তুমি??? জ্বি ম্যাম। আর একটা কথা নিশান কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। দেবী এবার অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলেন। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললেন, কিভাবে সম্ভব?? যেখানে তাকে যাবতজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল!!
চলবে ____????