ক্যাসিনো পর্ব -১৬

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)

#পর্ব_১৬

নূর মোহাম্মদ বসে আছে মেহমেতের সামনে। ঈগল পাখি যেমন শিকারির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শিকার করার আগে ঠিক তেমন ভাবে নূর মোহাম্মদ চেয়ে আছে মেহমেতের দিকে। মেহমেতের তেমন কোন ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না,,

গম্ভির মুখ নিয়ে নূর মোহাম্মদের উদ্দেশ্যে বলে,জ্বি কি সমস্যা বলেন?? গত কয়েক দিন ধরে আমি আপনার স্বাধিন্য পাওয়ার জন্য ঘুরছি, কিন্তু আপনার তো দেখায় পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। মেহমেত একটা বিরক্তিকর হাসি দিয়ে বললেন,তা কি এমন কাজের জন্য আপনি আমার জন্য এমন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন?? নূর মোহাম্মদ মেহমেতের দিকে একটা কার্ড এগিয়ে দিল,মেহমেত কার্ড টা আড়চোখে পড়ে নিল,,, সিকিউরিটি এজেন্সি,, নূর মোহাম্মদ।

মেহমেত ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন, একজন সিকিউরিটি এজেন্সির সাথে আমার কি কাজ যার কারণে আপনি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন?? নূর মোহাম্মদ মুচকি হেসে বললেন,,গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক টা খুন হয়েছে তা নিয়ে তো দেশে হৈচৈ আরম্ভ সেই খবর তো জানেন!! ।

মেহমেত আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারে হেলান দিয়ে শান্ত স্বরে বললেন,,হ্যাঁ জানি, তো???
আজম নাম টা তো শুনেছেন ঢাবির সাবেক দপ্তর ছিলেন। তিনি খুন হয়েছেন,, খুন হওয়ার জায়গায় AHK ব্রান্ডের জুতার ছাপ পাওয়া গেছে। মেহমেত তাচ্ছিল্যে পূর্ণ ভাবে হেসে বললেন। AHK ব্রান্ডের জুতার ছাপ পেয়েছেন বলে সোজা সেই কম্পানির owner কাছে এসেছেন?? ব্যাপার টা তা নাহ আজম দপ্তরি যে ক্লাবে কাজ করতো সেই ক্লাবে আপনার নাকি আনাগুনা ছিল। এবং সেখান ম্যানাজার বললেন যে আপনাকে দেখে নাকি ভিষন ভয় পেয়ে ছিল। কেন?? সেটা আমি কি করে জানবো?? আর মূল কথা হলো আপনি এই ক্লাবের দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছেন??? আমি কিছু বুঝাতে চাচ্ছি না। আমি বলতে চাচ্ছি,আজম দপ্তরি আপনাকে দেখে ভয় কেন পেয়েছিলেন?? বিশেষ একটা কথা বলতে ভুলে গেছি যেখানে আজম ঢাবির দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর আপনি নিজেও ঢাবির স্টুডেন্ট ছিলেন।
এতে আপনি কি প্রমান করতে চাচ্ছেন যে খুনের পিছনের কারন আমি??? নূর মোহাম্মদ দাঁত বের করে হাসলেন। তার পর বললেন নাহ সেই রকম কিছু নয় আমরা আসল কিলার অব্দি পৌঁছাতে চাচ্ছি। তাই কোন সূত্র বাদ দিতে চাচ্ছি না। তো কি জানতে চাচ্ছেন আমার থেকে??? আপনার কি কাউকে সন্দেহ হচ্ছে কিনা??? সরি এই বিষয়ে আমার কোন মতামত নেই। আপনার কথা যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে আমাকে একটু বের হতে হবে!! আমার একটা আর্জেন্ট মিটিং আছে!!!

নূর মোহাম্মদ রহস্যময় হাসি হেসে উঠে দাঁড়ালো,গ্লাভস পড়া হাতটি এগিয়ে দিল মেহমেতের দিকে। অনিচ্ছাকৃত ভাবে মেহমেত হাত এগিয়ে দিল সৌজন্যে মূলক ব্যক্তিত্ব বজায় রাখার জন্য। নূর মোহাম্মদ বেরিয়ে গেলেন, হাতের গ্লাভস টা খুলে সাবধানে একটা পলির মধ্যে রাখলেন। তার পর ঠোঁট প্রশস্ত করে হেসে বেরিয়ে গেলেন।

মরিয়ম বাসায় এসে গোসলের উদ্দেশ্য বাথরুমে চলে যায়। মাথায় হাজার চিন্তায় ফেটে যাচ্ছে তার। এই রহস্যে উদঘাটন না করতে পারলে মনে হয় মাথার রগ ছিঁড়ে যাবে মরিয়মের। আজ মেহমেতের সাথে তাকে কথা বলতেই হবে। নিশান নিজেও তো শাহানার বিয়ের স্বাক্ষী ছিল ওর তো নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছিল,, কিন্তু সেরে উঠার পর তো সে নিশানের কেস টা টেকওভার করতে পারতো।
ওফফ আর এসব ভাবতে পারছে না মরিয়ম এসব নিয়ে। এই রহস্যের সমাধান না করতে পারলে মনে মরিয়মের আর শান্তি নেই। ।

মরিয়ম ড্রয়িং রুমে পাইচারী করছে। মেহমেতের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। কিন্তু মেহমেতের কোন খবর নেই । ফোন টাও রিসিভ করছে না। বার বার ফোন দিচ্ছে মরিয়ম কিন্তু তার ফোন রিসিভ করার জন্য মেহমেত এর কোন খবর নেই। মরিয়মের কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। শেষমেষ ম্যানাজার কে ফোন দিলো মরিয়ম। বেশ কয়েক বার ফোন দেওয়ার পর রিসিভ করলো। হ্যালো মেডাম!! কিছু কি বলবেন??
মরিয়ম চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করলেন মেহমেত কোথায়?? জ্বি মেহমেত স্যার তো অনেক আগেই অফিস থেকে বের হয়ে গেছেন!!
মরিয়ম বেশ অবাক হলো। ভিতরে ভিতরে খুব ভয় পাচ্ছেন । মেহমেত অফিস থেকে বের কোথায় গেল?? বাসায় তো ফিরেনি। নিজেকে সংযত করে ম্যানাজার কে আর কিছু না বলে ফোন টা রেখে দিল।

মেহমেত আর নিশান ক্যাসিনোর বোর্ডে একে অপরের সাথে খেলায় মত্ত হয়ে রয়েছে। নিশানের ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি। মেহমেত ঘামছে। আজ যদি খেলায় হেরে যায় সে তাহলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।

এই জুয়া খেলা টা অন্য সব জুয়ার মত তাসের খেলা নয়। ক্যাসিনো বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। কিন্তু নিশানের ফেবরেট ক্যাসিনোর নাম হলো রুলেট।

রুলেট ফরাসি শব্দটি রুলেটকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যার অর্থ “চাকা” বা “ছোট চাকা”, এটি মধ্যযুগে ভাল আবিষ্কার হয়েছিল, এটি সুযোগের একটি সাধারণ ক্যাসিনো খেলা, এটি ভাগ্যের বিখ্যাত চাকা।
মূল উদ্দেশ্যটি হ’ল চিপসের বিনিময়ে অর্থের বিনিময় করা, এবং অনুমান করার চেষ্টা করুন যে বলটি কোন নম্বর, রঙ বা অঞ্চলটিতে অবতরণ করছে, যদি তা হয় তবে আপনি তত্ক্ষণাত্ জয়ী হন।

বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে, গেমটির দুটি ভার্শন রয়েছে যার একটি দুইটি সবুজ পকেট সংবলিত ০ এবং ০০ এর জন্য আমেরিকান রুলেট এবং আরেকটি ইউরোপিয়ান রুলেট যাতে ০ এর জন্য মাত্র একটি সবুজ পকেট রয়েছে।
এই সবুজ পকেটের পাশাপাশি, হুইলে আরো ৩৬ পকেট রয়েছে যেগুলো আলাদাভাবে লাল এবং কালো রং করা এবং ১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত ক্রমানুসারে চিহ্নিত করা আছে।
অবকাঠামো ভিত্তিক ক্যাসিনোতে হুইল কর্তন করা হয় এবং ক্রূপিয়ার একটি ছোট সাদা বল বিপরীত দিকে স্পিন করায়। যখন দুটোই ধীরগতির হয়ে যায়, তখন বলটি পড়ে যায় এবং যেকোন একটা পকেটে পড়ে এবং বিজয়ী সংখ্যা নির্ধারণ করে। যখন অনলাইন ভিত্তিক ক্যাসিনোতে খেলা হয় তখন এই কাজটি যথেচ্ছভাবে করা হয় এবং এটিকে বাস্তব রূপ দিতে গেমে একটি ছোট এনিমেশন প্রদর্শন করে।

রুলেটের মাঝে ছোট সাদা বল টা স্পিন করছে আর মেহমেতের বুকের ভিতরে ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে। বার বার শুকনো ঢুক গিলছে সে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। মনে হচ্ছে চৈত্র মাসের খরা মৌসুমে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে থাকে এক পশলা বৃষ্টির জন্য মাটি যেমন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। ঠিক তেমন অবস্থা হয়েছে মেহমেতের। আজ যদি তার ভাগ্যের চাকা উল্টো ঘুরে তাহলে নিঃশেষ হয়ে যাবে সে।

ছোট সাদা বলটির স্পিন ধীর গতিতে চলে এসেছে তখন মেহমেত কে একটি সংখ্যা বাছাই করতে হবে। মেহমেত কোন সংখ্যা বাছাই করবে এই নিয়ে দ্বিধাগ্রস্তে পড়ে গেল। শেষমেষ ২৭ নম্বর টি কে বেছে নিল। সাদা বল টি ২৭ নম্বর পকেটে পড়েছে মেহমেতের জানে যেন পানি এলো আর এই দিকে নিশান বাঁকা হাসছে। কিন্তু সাদা বল টি এখনো স্থির হয়নি। হঠাৎ বল টি ২৯ নম্বরে গিয়ে স্থির হলো। মেহমেতের স্বাস প্রশ্বাস এবার বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে সে এখনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
নিশান এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। তার হাসির শব্দে ক্লাবের বাকি সদস্যরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। মেহমেতের হাত পা থরথর করে কাপছে। মুখের কাঠিন্য ভাব সুস্পষ্ট। কপালের রগ দপদপ করছে। অতিরিক্ত রাগে দুঃখে মেহমেতের চোখ জোড়া নিমিষেই ভিজে উঠলো।

নিশান বাজিতে যাওয়ায় একটা ফাইল মেহমেতের দিকে এগিয়ে দেয়। বুক পকেট থেকে একটা কলম বের করে দিয়ে বলে,,নে দোস্ত সাইন কর এখন। তার পর তোর চিরতরে মুক্তি 😂😂
নিশানের হাসির শব্দ যেন মেহমেতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখনি খুন করে ফেলতে। অনাকাঙ্ক্ষিত এক ভুলে তার জীবন টা এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। আজ খুব করে আফসোস হচ্ছে নিশানের সাথে বন্ধুত্ব করায়।

নিশানের দিকে অগ্নিদগ্ধ চোখে তাকিয়ে মেহমেত বলল, যাবতজীবন কারাদণ্ড থেকে মুক্ত করে তোকে আজ তার এই প্রতিদান দিবি জানলে কখনই বের করতাম না,,,
নিশান তখন হাসতে হাসতে মেহমেতের কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো ঐ জন্য এখনো সবার মত মরতে হয়নি তোকে বেঁচে আছিস এখনো। নয়লে প্রিন্সিপাল ইবরার টিপুর মত এক্সেডেন্টে মরতে হয়নি।

চোয়াল শক্ত করে নিশানের দিকে চেয়ে আছে মেহমেত। ফাইল টা এগিয়ে নিয়ে জুরালো হাতে সাইন টা করল মেহমেত। চোখের এক ফোঁটা পানি ফাইলটাই টপ করে পড়লো। বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে চোখের বাকি পানি টুকু মুছে,উঠে দাঁড়ালো মেহমেত।

মদের বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢক করে খাচ্ছে মেহমেত। প্রথম বার নিজের ইচ্ছায় ড্রিংক করছে সে। নেশা যদি তার এখন কার সকল কষ্ট দূর করতে পারতো। তাহলে সে আমূর্ত সে নেশা দ্রব্য পান করতো। কিন্তু কোথায় তার কষ্ট লাঘব হচ্ছে??? প্রায় তিন বোতল মদ সে শেষ করেছে। পুরাপুরি নেশাকাতর অবস্থা তার। চোখ মেলে তাকানো দুষ্কর হয়ে উঠেছে তার। নিশান এক ধ্যানে মেহমেতের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো টুকু হারিয়ে যদি মেহমেতের এই করুন হাল হয়। তাহলে তার পরিবার সম্মান ভালোবাসা সব কিছু হারিয়ে তার কেমন হাল হওয়া উচিত ছিল???

মরিয়ম ঘড়িতে দেখে রাত প্রায় ৪টা বাজে । মেহমেতের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখ লেগে গেছে মরিয়ম বুঝে উঠতে পারেনি।
মিহি আরিফার ঘরে ঘুমিয়েছে। হঠাৎ মরিয়মের মনে হলো মেহমেত নিশানের সাথে দেখা করতে যায়নি তো?? তার পর মরিয়মের টনক নড়ে উঠলো। সে দ্রুত গাড়ি নিয়ে ক্লাবের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। মরিয়মের ভিতরে অজানা আতঙ্কে বুক ধরফর করছে। ।

ক্লাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকালের আলো ফুটে গেছে। চারিদিকে মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আকাশ রক্তিম সূর্য উঁকি দিচ্ছে।
মরিয়ম ক্লাবে গিয়ে দেখে গুটিকয়েক লোক নেশার ঘোরে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। মেহমেত ক্লাবের এক কোনায় হাত পা ছড়িয়ে ঝিম মেরে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করেছে। মনে হচ্ছে এখনি চোখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসবে।

চলবে ______????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here