#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ২১
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৪৫,
” আমরা এতো জায়গায় ঘুরবো না। প্লিজ, জাস্ট চট্টগ্রামেই যতো টুকু ঘোরা যায়, ঘুরে বাসায় ফিরবো। আমার ভালো লাগছেনা কিছু।”
রায়ার উত্তরে সবার মুখ থমথমে হয়ে যায়। হিয়া সবার মুখের দিকে তাকিয়ে টেবিলের উপর হাত রেখে বলে,
” আমরা কিছু জায়গা ঘুরবো। আপু তোর আপত্তি এবার শুনছি না।”
রাদ বললো,
“হিয়া কথাটা ঠিক বলেছে।”
নাতাশা, ইহসাস, তাইবাও রাদ আর হিয়ার কথায় মত দেয়। রায়া দমে যায়। কেমন একটা অসস্তি চেপে ধরেছে তাকে। কেনো এমন অনুভূতি হচ্ছে! বুঝতে পারছেনা রায়া। একেবারে তিক্ত অনুভূতি, কোনো কিছু যেনো ভালো লাগছেনা। তাদের এসব কথার মাঝেই ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে যায়। সবাই যার যার খাবার, সে সে নিয়ে খেতে শুরু করে। চা খেয়ে সবাই পরোটায় হাত দেয়। হিয়া এক টুকরো পরোটা ছিড়ে সবজি দিয়ে মুখে দিতেই স্বাদে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইহসাস আড়চোখে হিয়াকে দেখে। হিয়ার ভালো লাগছে দেখে তার মনের মধ্যে এক রকম ভালো লাগা কাজ করছে। অন্যদিকে তাইবা ইহসাসকে দেখছে। ইহসাস আড়চোখে হিয়াকে দেখছে, ব্যাপার টা সে খেয়াল করে৷ মনের মধ্যে প্রশ্নেরা উঁকি দিতে শুরু করে। এজন্যই কি ইহসাস তাকে অবঙ্গা করে চলছে! তাইবা আপাতত এসব নিয়ে ভাবতে চাইলো না। খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। রাদ, রায়া, নাতাশাও খাওয়ায় ব্যস্ত। প্রায় আধঘন্টা সময় নিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই। এরপর বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে নেয়। এই ফাঁকে রাদ কাউন্টারে গিয়ে বিল পেমেন্ট করে দেয়৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পরে ওরা। এরপর গাড়িয়ে উঠে রওনা দেয় পতেঙ্গা সী-বীচের উদ্দেশ্যে। এবার ইহসাস গাড়ি ড্রাইভ করতে বসে পরে। রাদ পাশে বসে। পিছনে রায়া, হিয়া, নাতাশা এবং তাইবা বসে। ইহসাস হালকা আওয়াজে গান ছেড়ে দেয়। জিপিএস এর সাহায্যে মোটামুটি ড্রাইভ করতে সমস্যা হচ্ছে না। চকবাজার থেকে প্রায় একঘন্টা বা তার একটু বেশি সময়ের মতো লাগতে পারে পতেঙ্গা সী-বীচে যেতে। গাড়ির মাঝে পিনপিন নিরবতা সবার মাঝে। শুধু গানেরই হালকা আওয়াজ আসছে। রায়া গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত। চট্টগ্রাম যেহেতু পাহাড়, সমুদ্র আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এবং একে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, সেহেতু রায়ার সবুজে ঘেরা এই প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে মন্দ নয়, ভালোই লাগছে। মনে অন্য রকম শান্তি অনুভব হচ্ছে বহুদিন পর। মন খারাপ থাকলে ঘোরাঘুরি তার অভ্যাস। বহুদিন পর সেই অভ্যােসের দেখা মিলে রায়া কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজের জীবনের সব অশান্তি ভুলে প্রকৃতির সৌন্দর্যে বুদ হয়ে পরে। হিয়া বোনের কাঁধে মাথা রেখে ফোনে গুগল ঘাটছে। আরও কি কি জায়গায় ঘোরা যায়, সেসব নিয়ে সে গুগলে খোঁজাখুজি করে চলেছে। হুট করে আসায় কোনো পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়নি। যদি একটু সময় নিয়ে আসার সুযোগ পেতো, তাহলে অনেক জায়গায় সুন্দর মতো ঘোরা যেতো। এরমাঝে তো রাদের আবার কাজে ফিরতে হবে, ব্যবসা দেখতে হবে, সেজন্য সময়ও কম। তিন-চার দিন তারা ঘোরাঘুরি করতে পারবে। হিয়া গুগলে ঘোরাঘুরি করার জায়গা গুলো খুজতে খুজতেই মনে মনে ভাবে, ‘ বিয়ে করে ফেলবো এখানে, এরপর পুরো বাংলাদেশ ঘুরেফিরে, জামাই রেখে কানাডায় চলে যাবো। সংসার নামক প্যারা আমার দ্বারা সামলানো সম্ভব না। একবার বিয়ে করবো, ঘুরবো, বিয়ের নাম ঘুচে যাবে। এরপর একা একা বিন্দাস লাইফ, আহ শান্তি। হিয়া তুই কত জিনিয়াস না! কত সুন্দর একটা আইডিয়া বের করে ফেললি।’ এটা ভেবেই হিয়া একা একাই আনমনে হাসে। পরে তার মনে হয়, এটুকু সময়ের জন্য তাকে বিয়ে কে করবে! ছেলেরা কি এতো বোকা হয় নাকি! শেষে দেখা যাবে তার কাধে চেপেই হয় তাকে বাংলাদেশে রেখে দিবে, নয়তো কানাডায় চলে যাবে। এরপর বাচ্চা, সংসার। বাপরে কি ভ’য়ংকর ব্যাপার স্যাপার৷ ধুর তার থেকে ভালো বিয়েই করবো না।
৪৬,
হিয়া যে একাই একাই হাসছিলো, এরপর মন খারাপ করলো। ব্যাপারটা ইহসাস লুকিং গ্লাসে খেয়াল করেছিলো। সে ড্রাইভ করতে করতেই হিয়াকে বললো,
“কি ব্যাপার বেয়াইন সাহেবা! পাগলের মতো একা একা হাসলেন, আবার মন খারাপ। ব্যাপার কি?”
“ব্যাপার আপনার মাথা। সাবধানে ড্রাইভ করুন তো। ড্রাইভিং এর সময় কথা বলতে নেই।”
হিয়া উত্তর দেয়। এরপর মুখে ভেঙচি কে”টে ফোনের দিকে মনোযোগ দেয়। ইহসাস ঠোট বাকিয়ে হাসে৷ হিয়াকে রা’গাতে তার দারুণ লাগে। তাদের কথায় রায়ার ধ্যান ভাঙে। সে প্রকৃতি দেখতে একপ্রকার আশপাশ ভুলে বসেছিলো। নাতাশা সারা রাত ইহসাসের মাথায় টোকাটুকি আর তাইবার মাথা তার কাঁধে থাকায় ঘুম হয়ে উঠেনি ঠিকঠাক। সে এখন তাইবার কাধে মাথা রেখে ঘুমায়। আর তাইবা নিজে মুখের উপর কাপড় দিয়ে সীটে গা এলিয়ে ঘুমাচ্ছে। রায়া আচমকা ইহসাস আর হিয়ার কথায় সামনের দিকে তাকালে রাদের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। সে চোখ দুটো নামিয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ। রাদ মুচকি হাসলো। রায়া সকালে এতোটা ভারী নাস্তা কখোনোই করেনা। কেমন একটা গা গুলিয়ে আসছে তার এতোক্ষণে। রায়া চোখ বন্ধ করে হিয়া নিজের ব্যাগপ্যাক থেকে এয়ারপট বের করে নেয়। কানে গুজে সে কিছু কিছু জায়গার ডিটেইলস স্কিনশট তুলে নেয়। আগে পতেঙ্গা সী বীচ ঘুরে নিক এরপর সেগুলো রাদকে বলা যাবে। প্রায় একঘন্টা পেরিয়ে যাবার পর রাদ রা এসে বাটারফ্লাই পার্কে পৌছায়। গাড়ির পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে তারা পার্কের টিকেট কে”টে পার্কে প্রবেশ করে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মানুষের জন্য জনপ্রতি ১০০টাকা করে টিকেট মূল্য। রাদ সবার জন্য টিকেট নিয়ে আসে। এরপর প্রবেশ করে পার্কে। পার্কে প্রবেশ করে কিছু টা সামনে এগিয়ে ওরা দেখতে পায় বাটারফ্লাই মিউজিয়াম, যেখানে দেশী, বিদেশী নানান রকমের মৃ”ত প্রজাপতি মেডিসিনের সাহায্যে সংরক্ষণ করা হয়েছে। হিয়া এটা নিয়ে গুগলে অনেক তথ্য দেখেছে। সেখানে এখন স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সে পুরো পার্ক ঘুরে দেখার জন্য উত্তেজিত হয়ে পরে। জীবনে সে বিদেশে থেকে অনেক নান্দনিক দৃশ্য দেখেছে প্রকৃতির, কৃত্রিম নানানরকম সৌন্দর্য দেখেছে। সেখানে নিজের দেশের সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। ইহসাস, রাদ, রায়া, নাতাশা, তাইবা চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে পার্কের কোথায় কি একটু পরখ করে নিচ্ছিলো। হিয়া তো পারছেনা ছুটে এদিক সেদিক গিয়ে সবটা ঘুরে দেখতে। রাদ হিয়ার চঞ্চলতা দেখে বলে,
“আগে সবাই রিসোর্টে যাবো, একটু রেস্ট করবো। এরপর না হয় পুরোটা ঘুরে দেখা যাবে।”
ইহসাস সম্মতি দেয় রাদের কথায়। কিন্তু হিয়া তাড়াহুড়ো করে বলে,
“আমার রেস্টের দরকার নেই। আপনারা গিয়ে রেস্ট করুন। আমি পুরো পার্ক টা ঘুরে দেখবো।”
“হিয়া জিদ করবিনা। তোর ভাইয়া যা বলে শোন। কিছু চিনিস না, অযথা লাফাবিনা৷”
রায়া কিছু টা ধমকের সুরে হিয়াকে কথাটা বলে। বোনের ধমকে চুপসে যায় হিয়া। নাতাশা বলে,
“থাক পিচ্চি মন খারাপ করেনা। চলো আমরা জাস্ট রিসোর্টে চেক ইন করেই বেরিয়ে আসবো। শুধু একটু ফ্রেশ হয়ে ড্রেস পাল্টাবো ওকে?”
হিয়া নাতাশার কথায় খুশি হয়। নিজের দেশে ঘুরে বেড়ানো তার অনেক দিনের স্বপ্ন। সেটা পূরণ হওয়ার পথে, সে স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌছেও গেছে, অথচ পৌছে আটকে থাকবে। সেই ধৈর্য তার নেই৷ কিন্তু সবার কথা অমান্য করার সাধ্য বা সাহস তার নেই। সে সবার সাথে রাদের বাবা অনলাইনে যে রিসোর্টের রুম বুক করে দিয়েছে, সেদিকে হাটা ধরে। রাদ কাঙ্ক্ষিত রিসোর্ট ফোনের সাহায্যে খুজে নিয়ে রিসেপশনে গিয়ে রিসেপশনিস্টের সাথে কথা বলে নেয়৷ বাকিরা এক সাইডে দাড়িয়ে আছে। রাদ সব কাগজ পত্র ঠিকঠাক দেখে নিয়ে চেক ইন করতে সিগনেচার করে নেয়। তিনটা রুম বুক করা হয়েছে। একটায় রাদ, রায়া, একটায় নাতাশা, হিয়া, তাইবা আর অন্য টায় ইহসাস একাই থাকবে। রাদ রুমের চাবী নিয়ে রুমের দিকে হাটা ধরে। বাকিরাও তার পিছু পিছু যায়।
হিয়া রুমে এসেই সবার আগে নিজের ব্যাগ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হতে। নাতাশা হিয়ার তাড়াহুড়ো দেখে বলে,
“পুরো পাগলি এই মেয়ে। ঘোরাঘুরি করার জন্য একেবারে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি শুরু করেছে।”
নাতাশা কথাটা আপনমনে বললেও তাইবা কথা টা শুনে ফেলে৷ সে নাতাশাকে বলে,
“হিয়া এমন করলে তোমাদের ভালো লাগে। আমি যদি এমন করতাম, তাহলে তো বিরক্ত হতে। তাইনা নাতাশা?”
নাতাশা তাইবার কথায় তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। এরপর বলে,
“তোমার এমন টা কেনো মনে হলো তাইবা আপু?”
চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকেও গল্পে তুলে ধরা তথ্যগুলো গুগল থেকে নেওয়া। জানিনা কতটুকু সঠিক! আর আজ এমন কিছু জিনিস দেখেছি, দেখে অসুস্থ হয়ে পরেছি। সেজন্য ছোটো হলো। ইনশা আল্লাহ রাতে বোনাস পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো৷ আসসালামু আলাইকুম।