এক সমুদ্র প্রেম পর্ব -১৯

#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৯)
শীতল হুম*কিতে পিউয়ের নেত্র পল্লব কেঁ*পে ওঠে। সমস্ত দেহ ঠান্ডায় আঁটশাঁট। ধূসরের তীক্ষ্ণ,ধাঁ*রালো চাউনি হৃদয় নাড়িয়ে দেয়।
ধূসর রুমের চারকোনায় চোখ বোলায়। খুঁজছে কিছু। পরপর এগিয়ে যায় নাক বরাবর। দাঁড় করানো লাগেজটা হাতে তোলে। পিউ ভীত নজরে দেখছে সব। কী করবেন ধূসর ভাই? ওর জামা পরবে না কী?

ধূসর লাগেজ এনে বিছানায় রাখল। টেনে,ঘুরিয়ে চেইন খুলল। বেরিয়ে এলো পিউয়ের সমস্ত জামাকাপড়। ধূসর একটা একটা করে কাপড় বাছল। শেষে পছন্দমতো জলপাই রঙের স্কার্ট সেট, আর ওড়না হাতে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঘুরে তাকায় পিউয়ের দিক। এগিয়ে যায়। পিউয়ের বুকের কাছে জড়োসড়ো হাতদুটো টেনে সামনে এনে কাপড়গুলো ধরিয়ে দেয়। শান্ত কণ্ঠে তর্জন দেয়,
” সময় পাঁচ মিনিট, চেঞ্জ করবি না দাঁড়িয়ে থাকবি ঠিক কর।”

পিউয়ের সাধ্য নেই দাঁড়িয়ে থাকার। ধূসর বিরতি নিতে না নিতেই ত্রস্ত পায়ে ছুটল সে। তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমে ঢুকল।
দরজার ছিটকিনি তুলে পিঠ ঠেকাল । বুকে হাত দিয়ে শ্বাস ফেলল। দুহাতে চে*পে রাখা কাপড় গুলো একবার দেখে আয়নার দিক তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে নুইয়ে গেল লাজুকলতার ন্যায়। মুচকি হেসে মাথা নামাল।
ধূসর ভাইয়ের এই অধিকার বোধ, এই পজেসিভ নেস তোলপাড় চালায় বক্ষে। মানুষটার প্রতিটা কাজ বুঝিয়ে দেয়,কী অপরিমেয় ভালোবাসায় সিক্ত করছে তাকে। ‘ধূসর ভাই ভালোবাসেন আমায়’ শব্দটা কয়েকবার আওড়ালো পিউ। আজ প্রতিটা পদক্ষেপেই ধূসর বুঝিয়ে দিচ্ছেনা এটা? পিউয়ের বুক কাঁপ*ছে লজ্জ্বায়।
আচমকা মনে পড়ল ধূসরের বেঁ*ধে দেয়া সময়। ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে চেঞ্জ করে সামনে যাওয়ার কথা! পিউয়ের ডগমগ ভাব ঢাকা পরে। তাড়াহুড়ো করে শাড়ির পিন ছোটাতে যায়। কিন্তু এখানেও যেন বিপত্তি। আঁচল ঘুরিয়ে একটা পিন পেছনে ব্লাউজের সাথেও মে*রেছিল। পরার সময় সহজে আটকাতে পেরেছিল,অথচ এখন খুলছেনা। পিউ চেষ্টা করল,অনেকক্ষন টানাটানি করল,কিন্তু ছোটাতেই পারল না। উলটে সূচালো মাথাটা বিঁ*ধে গেল আঙুলে। চট করে হাত ফিরিয়ে,আঙুল জ্বিভে ভেজাল সে। শীতের একটু ব্য*থা ভয়*ঙ্কর। পিউ ব্যর্থ হয়ে ‘চ’ বর্গীয় শব্দ করে। কী করবে এখন? হঠাৎ মাথায় আসে ধূসরের কথা। মানুষটাতো বাইরেই দাঁড়িয়ে। ডেকে বলবে একবার? পরমুহূর্তে ঘনঘন মাথা নাড়ে। কী লজ্জ্বার ব্যপার এটা! পিউ আবার চেষ্টা করল। সেফটিপিনের মাথাটা নাগালে পেলেও ফস্কে যাচ্ছে। অধৈর্য হয়ে উঠল শেষমেষ। হাত মুচ*ড়ে পিঠের কাছে নিতে নিতেও ব্য*থা হয়ে যাচ্ছে। আর উপায় নেই। পিউ শ্বাস ফেলে দরজার ছিটকিনি টেনে সরায়। হাল্কা মাথা বের করে উঁকি দেয় বাইরে। ধূসর পায়ের ওপর পা তুলে বিছানায় বসে। সুনিপুণ মনোযোগ ফোনের স্ক্রিনে। পিউ ঠোঁট কা*মড়ে ভাবল। ডাকবে,না কী ডাকবেনা। বহুক্ষনের ইতস্ততা কা*টিয়ে ডেকে উঠল,
” ধূসর ভাই!”
ধূসর চোখ তোলে। উত্তর পাঠায় ‘হু?’
সে তাকাতেই পিউ কথা গুলিয়ে ফেলল। ওমন ছু*রির ন্যায় চাউনী দেখলে শব্দ বের হয়? জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল,কথা খুঁজল। ধূসর যেন বুঝে নিল তার অস্থিরতা। উঠে,এগিয়ে এলো সে। পিউয়ের হৃদস্পন্দন জোড়াল হয় তার প্রতিটি কদমে। মুখোমুখি দাঁড়ায় ধূসর। জিজ্ঞেস করে
‘ কী হয়েছে?’
পিউ হাত দিয়ে ঘাড় চুল্কায়। তার অপ্রতিভ, অপ্রস্তুত চেহারা মন দিয়ে দেখল ধূসর। মোলায়েম কন্ঠে শুধাল,
” কিছু লাগবে?”
একটু সাহারা পেল পিউ। বিপ*দে সাহায্য পেতে এত লজ্জ্বা কীসের? তাও যেখানে প্রসঙ্গ তার প্রিয় মানুষটার। সে দ্বিধাদন্দ কা*টিয়ে বলল,
” ব্লাউজের সাথে সেফটিপিন আটকে গিয়েছে,একটু….”

কথা শেষ হয়না,ধূসর এটুকু শুনেই বলল,
‘ দেখি,ঘোর।’
পিউ দরজা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। সুস্থির ভঙিতে পিঠ ফেরায় তার দিকে। পরপর স্পর্শ পায় একটি হিম শীতল হাতের। ধূসর আলগোছে পিঠ থেকে চুল সরিয়ে কাঁধে রাখল। উন্মুক্ত হলো পিউয়ের ফর্সা- মসৃন পৃষ্ঠ। খুব দ্রুত চোখ ফেরায় সে। পিনের ভেতর পেঁচিয়ে যাওয়া শাড়ির ভাঁজে নজর দিতে চায়। কিন্তু না,ঘুরেফিরে দৃষ্টি ফিরে আসে, পিউয়ের পিঠের ওপর। খোলা পিঠ ধূসরের অন্তঃস্থলে শিহরন তোলে । গলা শুকিয়ে হয় কাঠ। ঢোক গেলে সে। বক্ষস্পন্দন বাড়তে বাড়তে পাহাড় ছোঁয়। সংযম,জগত,সম্পর্ক সব ভুলিয়ে ভ্রান্ত করে মস্তিষ্ক। অশান্ত,অস্থির ঢেউ আ*ছড়ে পরে ভেতরে। স্মৃতি থেকে ইহজগত মুছে ধূসর খেই হারাল। টুপ করে ঠোঁট ছোঁয়াল সেখানে৷ প্রথম বারের মত এক গভীর, খাদহীন,চুঁমু আঁকল পিউয়ের শরীরে। ওমনি পিউয়ের শরীর ঝাঁকুনি দিলো। । থরথরিয়ে কাঁ*পল হাঁটু দুটো। নিচু চিবুক উঠে এলো। বৃহৎ চোখ ছড়িয়ে গেল বাইরে। কল্পনাতীত ঘটনায় সে কিংকর্তব্যবিমুঢ়! স্তম্ভিত নেত্রে ঘুরতে চাইলে, আটকে দিল ধূসর। ফিরতে দিলো না তার দিকে। শক্ত করে বাহু চেঁপে রাখে। শান্ত হস্তে পিন ছোটায়। তারপর হনহনে কদমে ঘর ছাড়ে।

পায়ের শব্দে স্পষ্ট বুঝল পিউ,ধূসর নেই রুমে। তবুও ফিরে দেখার শক্তিটুকু হলোনা তার। বুকটা প্রচন্ড কাঁঁপছে, এইত ধড়াস করে লাফাচ্ছে । যেন ফুলেফেঁপে বেরিয়ে আসবে । পিউ হাত রাখল সেখানে। ওপর থেকে যেন হৃদপিণ্ডটা খা*মচে ধরতে চাইল। শ্বাস আটকে আসছে। লজ্জ্বায়,কুন্ঠায় ডু*বে গেল সে। ধূসর ভাই ছুঁয়েছেন তাকে। এই ছোঁয়া ভালোবাসার,এই ছোঁয়া কাছে আসার। পিউ চোখ বুজে শ্বাস নিলো। ভীষণ দ্রুত বুক ওঠানামা করল। সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। দেয়াল ঘেঁষে বসে পরে মেঝেতে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে নিজেকে আড়াল করে,এই লজ্জ্বা, এই ভালো-লাগার হাঁসফাঁস থেকে।
_____

বর্ষাকে একটা নতুন সুতির শাড়ি পরানো হয়েছে। মাথায় আবার ঘোমটা টানা। কাঁচা হলুদের গন্ধ শরীরে ‘ম’ ‘ম’ করছে এখনও। চেহারাতে ফুটে উঠছে ঈষৎ বউ বউ ভাব। মৈত্রী শাড়ি পালটে গোসল সেড়ে পরিপাটি। থ্রিপিস পরে দ্রুত পায়ে এসে বাবু হয়ে বসল পাটিতে। বর্ষার হাত নিয়ে কোলের ওপর রাখল। বর্ষা গ্যালারি ঘেটে একটা ছবি মেলে ধরল তার সামনে। নম্র কন্ঠে আদেশ করল,
” হুবুহু এরকম ডিজাইন দিয়ে দিবি ওকে? ”
মৈত্রী মাথা ঝাঁকায়। মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনে অবলোকন করে। তারপর হাত লাগায় আঁকতে। মেয়েটার মেহেদী আঁকার হাত দারুন। যে নকশা দেখাবে,একদম কপি পেস্ট করে দেবে চোখ বুজে। জ্ঞাতিগোষ্ঠী যারই বিয়ে হোক,ডাক ওর পরবেই। এমনকি প্রতিবেশিরাও বিনে পয়সায় লুফে নেয় তার প্রতিভা। মৈত্রীর কিন্তু বেশ লাগে এসব। একটুও অনীহা নেই,বিরক্তি নেই।
বর্ষার চারপাশ ঘিরে আন্ডাবাচ্চারা বসেছে। শান্তা,সুপ্তি,পুষ্প সবাই আছে এখানে। দূর থেকে স্কার্টের দু মাথা উঁচু করে ধরে ছুটে এলো পিউ। হুটোপুটি করে বসে পরল পাশে। চঞ্চল কণ্ঠে আবদার করল,
” মৈত্রী আপু,আমাকেও দিয়ে দেবে এরপর?”
মৈত্রী ঝলমলে হেসে জানাল,
” নিশ্চয়ই। ”
কোত্থেকে ক্যামেরা হাতে উড়ে এলো সাদিফ। লেন্স চোখে ঠেকিয়ে বলল
‘ এভ্রিওয়ান স্মাইল প্লিজ!”
সবার দৃষ্টি নিক্ষেপ হয়। মৈত্রী ওমনি গুটিয়ে গেল। দুগালে ছড়াল লাল -লাল আভা। সাদিফ পরপর কতগুলো ক্লিক বসাল ক্যামেরায়। পিউয়ের দিক চোখ পড়তেই ভ্রুঁ গুটিয়ে বলল,
‘ শাড়ি পাল্টালি যে,ভালোই লাগছিল তো।’
পিউ কিছু বলতে নিয়েও থমকায়। পেছনের হৃদস্পর্শী ঘটনাটুকুন মনে করেই লজ্জ্বায় নেতিয়ে পরে মন। আস্তেধীরে জবাব দেয়,
‘ গগরম লাগছিল।’
বর্ষা চোখ কপালে তুলে বলল,
‘ অ্যাহ? তোর গরম লাগছিল? কী বলছিস পিউ,আমার গায়ে যখন কলসির পানি গুলো ঢালছিল মনে তো হচ্ছিল ফ্রিজে ঢুকে গেছি। ‘

মৈত্রীর হাত চলছে না। সাদিফ দাঁড়িয়ে তার পাশেই। আড়চোখে কেবল কোমড় অবধি দেখা যায়। সে ভীষণ রকম চাইছে ওর মুখটা দেখবে। চশমাওয়ালা, ফর্সা লোকটার মুখখানি হৃদয় উত্থলে দেয়। কিন্তু পারেনা। কুন্ঠায় হারিয়ে যায় ইচ্ছে। তার লজ্জ্বা এক ধাপ বাড়াতে সাদিফ বসে পরল পাটির ওপর। মুগ্ধ হয়ে বলল,
‘ বাহ! আপনি আর্টিস্ট তো বেশ!’
মৈত্রীর বুক ধুকপুক করে। অশান্ত,অমত্ত ঝড় বয়। সাদিফের গা থেকে আতরের গন্ধ ভেসে আসছে। কী মধুর সেই ঘ্রান! মৈত্রী কথা বলতে চায়,চাইল ছোট করে ‘ধন্যবাদ’ দিতে। ব্যর্থ সে এবারেও। উফ! কী জাদু করল লোকটা! তাও মাত্র একদিনে?

পিউ আশেপাশে তাকাচ্ছে। গলা উঁচিয়ে উঁচিয়ে দূরেটাও দেখছে। এক কথায় খুঁজছে সে ধূসরকে। বিকেলের ঘটনার পর তার ঘর ছাড়তে ক*ষ্ট হয়েছিল। বের হলেই ধূসর ভাই সামনে পরবেন,কী করে চোখে চোখ মেলাবে তারপর ? সেই চিন্তায় হা- হুতাশ করে পিউ ঘাপটি মেরে বসে থাকে। কিন্তু তার মতো মেয়ে কী ঘরে থাকার মানুষ? নিচে এত হল্লাহল্লি হচ্ছে সে না গিয়ে থাকবে কী করে? তারওপর ঘি ঢালে সুপ্তি। সেও জামা পাল্টাতে এসেছে। ঘাড়ের কাছে গাউনের লেবেলটা খোঁচাচ্ছিল। আপাতত পালটে শান্তিমতো অন্য কিছু পরবে। পিউকে বাড়িতে দেখেই সে উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘ আরে পিউপু তুমি এখানে কেন? নিচে কত কী হচ্ছে জানো? আম্মু, তোমার ছোট মা সবাই নাঁচছে। যাও যাও। নাহলে সব মিস হয়ে যাবে। ”

পিউয়ের আর ঘরে থাকা হয়না। নাঁচুনে বুড়ি ঢোলে বাড়ি পেলে কী টিকে থাকে? সে ছুট্টে বের হলো তখনি। কিন্তু উঠোনে ধূসর ছিল না। পিউ ক্ষনিকের স্বস্তি পায়। অথচ ঘন্টার পর ঘন্টা পার হলেও ধূসরের দেখা নেই। পিউয়ের চিন্তা হতে থাকল। এই যে এখনও হচ্ছে। মা, মেজো মা সবাইকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু তারা কেউ জানেনা । পিউয়ের ধ্যান কা*টে রিংটোনের শব্দে। পুষ্পর ফোন বাজছে। সে স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে সবার দিকে একবার একবার তাকায়। পিউ চটপট দৃষ্টি আড়াল করে। পুষ্প আলগোছে,নিশব্দে উঠে যায় সেখান থেকে। পিউয়ের সন্দেহ হলো। পুষ্পর হাবভাব অন্যরকম লাগল। আপুর চেহারায় একটা চোর চোর ভাব ফুটেছিল না? কে ফোন করেছে ওকে?
কৌতুহলি সে বসে থাকতে পারেনা। উঠে দাঁড়াতেই সাদিফ প্রশ্ন করে,
‘ কই যাস?’
” আসছি।”
পিউ হাঁটা ধরল। অনুসরন করল পুষ্পকে। সে গিয়ে দাঁড়াল একেবারে বাড়ির শেষ মাথায়। সাউন্ড সিস্টেমের আওয়াজ নেই, লাইটিংয়ের স্পর্শ নেই। তেমন নিরবিলি জায়গায় গিয়ে রিসিভ করল ফোন। মিহি কণ্ঠে বলল,
‘ হ্যাঁ বলো।’
পিউ একদম পেছনে এসে দাঁড়ায়। সজাগ হয়ে কান পাতে। ইদানীং এই পুষ্পকে তার অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকিয়ে চুরিয়ে করছে। আড়িপাতা খারাপ,কিন্তু পিউ ভালোমন্দ ভুলে যাবে। বলা তো যায় না,কেঁচো খু*ড়তে সাপ বের হলে? পুষ্প বলতে গেল
‘ইক….’

এর মধ্যেই ওদিক থেকে ডাক ছুড়ল মৈত্রী,
‘ এই পিউ এসো,এবার তোমাকে লাগিয়ে দেই।’
পিউ ভয় পেল। পুষ্প ঘুরে ওকে দেখলে খবর করে ছাড়বে। আড়িপাতার অপরাধে না জানি কানটাই ছি*ড়ে নেয়। সে ঝটপট দৌড় লাগায়। কথা শোনার দরকার নেই। আগে প্রানে বাঁচুক।

**
‘ কোন ডিজাইন দেবে?’
‘ একটা ছোটখাটো দিয়ে দাও।’
‘ আচ্ছা। নড়াচড়া যাবেনা,তাহলে দিতে পারিনা আমি।’
পিউ মাথা দোলাল, ‘ ঠিক আছে। ‘
মৈত্রী পিউয়ের হাতে মেহেদীর মাথা ছোঁয়াতেই সাদিফ বেগ নিয়ে বলল,
‘ এই এক মিনিট, এক মিনিট… ‘
মৈত্রী তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হয়। পিউ জিজ্ঞেস করল,
‘ কী হলো?’
সাদিফ ক্যামেরা তাক করে বলল,
‘ এবার দিন। ভিডিও করে রাখছি। পরে সময় করে দেখব।’
কথাটা সে নিজের মতো বললেও মৈত্রী অনেক কিছু ভেবে বসে। মৃদূ হেসে চোখ নামায় পিউয়ের হাতের তালুতে।

পিউ গালে হাত দিয়ে বসে। মাঝেমধ্যে আশেপাশে দেখে। ধূসর ভাই এলেন কী না! ততবার মনে পড়ে সেই দৃশ্য। ধূসর প্রথম বার তাকে চুঁমু খেয়েছে। এরপরেও লোকটা ভালোবাসেনা,বোঝার ক্ষমতা নেই কার? একটা অবুঝ শিশুও বুঝবে এসব। পিউয়ের হঠাৎ চোখ পড়ে বর্ষার দিকে। বাম হাত বিছিয়ে বসে সে। কিঞ্চিৎ জায়গা ফাঁকা নেই। তালুর মাঝখানে আবার ‘B-j ‘ লেখা । পিউয়ের ইচ্ছেরা জেগে ওঠে। সেও লিখবে এভাবে। মুখ ফুটে বলতে যেয়েও শান্তা,সাদিফ এদেরকে খেয়াল পরে। ধূসরের নামের প্রথম লেটারটা আনকমন। চৌদ্দগোষ্ঠিতে ডি দিয়ে আর কারোর নাম নেই। এদের সামনে বললে নিঃসন্দেহে বুঝে ফেলবে। যেহেতু তাদের প্রেম এখনও জোড়াল হয়নি,ধূসর তাকে মনের কথা বলেনি, সেও প্রেমিকার রুপ পায়নি, তখন কাউকে কিছু বুঝতে দেয়া বোঁকামো হবেনা? পিউ চুপ করে থাকল। তবে বলে রাখল,
‘ মাঝখানে জায়গা ফাঁকা থাকুক আপু।’
মৈত্রী দিরুক্তি করেনা। মাঝে অল্প জায়গা রেখে আশেপাশে ভরিয়ে ফেলে। শেষ করে জানায়,
‘ হয়ে গেছে। ‘
পিউ হাত ফিরিয়ে উঠে যায়। ও যেতেই ক্যামেরা বন্ধ করে সাদিফ ও চলে গেল। মৈত্রীর মুখটা ঝুপ করে কালো হলো ওমনি। বসে থাকলে কী হতো?

শান্তার দিক চেয়ে বলে,
‘ দে তোকে লাগিয়ে দেই।’
শান্তা মোটা কণ্ঠে বলল ‘ লাগবেনা।’
মৈত্রী ভ্রুঁ গোঁটায়, ‘ কেন? বললিনা লাগাবি।’
শান্তা গাল ফুলিয়ে বলল
‘ আমি আগে বলেছিলাম,তুমি পিউপুকে তাহলে আগে লাগিয়ে দিলে কেন? সিরিয়াল তো আমার ছিল।’

বর্ষা কষে ধ*মক দিয়ে বলল ‘ হিং*সুটে! বুদ্ধি কী হাঁটুতে নেমেছে? পিউ আমাদের গেস্ট না? কতবছর পর এলো ও? হিং*সে করছিস কেন? ও দিয়েছে,এখনও তুই দে। একইতো হলো। আশ্চর্য! ‘

শান্তার চেহারা বাকীটুক কালো হলো। বর্ষা পাত্তা দিলোনা। উলটে বলল,
‘ যাই ক’টা ছবি তুলে আসি। ওকে পাঠাব।’
তারপর জায়গা ত্যাগ করল সেও। মৈত্রী বলল
‘ হাত দে।’
‘ বললাম না লাগাবোনা।’
‘ আহহা রা*গ করছিস কেন? তুইতো আমার নিজের মানুষ তাইনা? পিউত গেস্ট,গেস্ট দের প্রায়োরিটি দিতে হয় সব সময়। দে সোনাপু,পিউয়ের থেকেও একটা সুন্দর দেখে ডিজাইন এঁকে দিব।

শান্তার মন নরম হলো। বাম হাতটা এগিয়ে দিলো। সাথে দেখাল,
‘ এখানে ফাঁকা রাখবে,ছোট করে লিখে দেবে ‘S-D’
মৈত্রী কপাল কোঁচকায়,
‘ ডি’তে কে? এই তুই কি প্রেম করছিস?’
শান্তা আর্ত*নাদ করে বলল,
‘ আস্তে,সবাই শুনে ফেলবে।’
মৈত্রী গলা নামিয়ে বলল ‘ ডি’তে কে?’
শান্তা মাথা নুইয়ে লাজুক হেসে বলে ‘ ধূসর ভাইয়া।’

_____

আফতাব সিকদারের মাথায় হাত। মুখটা চুপসে গেছে। মান ইজ্জ্বত সব নেমেছে রাস্তায়। জীবনে অনেক বড় ভুল করেছেন এক ছেলের বাপ হয়ে। শান্তিমত, মন ভরে একটু শাসন ও করতে পারেন নি। আর সেই না পারাই কাল হয়েছে আজ। ছেলেটাকে আদৌ মানুষ বানাতে পারলেন না। এত পড়ালেখা করানোর পরেও,গুন্ডা তৈরি হয়েছে একটা। আফতাব সিকদার ভেবে পাচ্ছেন না,ঠিক কত বড় দুঃসাহস থাকলে একটা মানুষ বেড়াতে এসেও গুন্ডা*মি করত পারে। এইত, সন্ধ্যে নাগাদ বাড়িতে খবর এসছে, ধূসর মা*রামারি করেছে। কোন ছেলেকে গাছের ঠাল ভে*ঙে পিটিয়েছে। আর সেই থেকে ওয়াশরুমের দরজায় খিল দিয়ে বসে আছেন তিনি। ভুলেও বের হবেন না। কিছুতেই মুখোমুখি হবেনা ভাইদের। হলেই বিপ*দ। অবশ্য যার নিজের সন্তানই একটা বিপ*দের গোডাউন, তার কী ঝুট-ঝা*মেলা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here