৭+৮
#চন্দ্রাবতী
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
ভূবন উঠে পড়ে লেগেছেন চন্দ্রার জন্য ছেলে দেখায়। এই সপ্তাহ দুয়েকের ভেতর যে করেই হোক চন্দ্রার বিয়ে দিয়ে দিবেন তিনি। সংবাদ শোনে বাসায় এলেন বৃন্দাবন দাস। এবার তার পালা। তিনি মুখ খুলে বলেই ফেললেন,’বৌদি,একটা জিনিস চাইবার ছিল আপনার কাছে।বড় আশা নিয়ে এসেছি। আপনি আমায় ফিরিয়ে দিবেন না বলুন!’
ভূবন গলার স্বর নামিয়ে এনে বললেন,’বলুন শুনি।দিতে পারলে দিবো।’
বৃন্দাবন বললেন,’আমার জয়টাকে তো দেখেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়েছে। এখন ভালো একটা জবও করছে।ওর জন্য যদি আপনার ঘরের লক্ষ্মী চন্দ্রা কে চাই আমি!’
ভূবন বললেন,’এটা তো কাচুমাচু করে বলার কথা না। আপনার ছেলেকে নিয়ে আগামীকাল সকাল বেলা আমাদের বাসায় আসবেন।ছেলে মেয়ে দেখবে আর আমরা দেখবো ছেলে। দু পক্ষের পছন্দ হলেই সব ঠিকঠাক করে ফেলবো।’
ভূবনের কথা শোনে আনন্দে বৃন্দাবন দাসের চোখে জল এসে গেল। তিনি সেই জল লুকাবার চেষ্টা করে বললেন,’হেলেন কোথায় আমার? হেলেন?’
ভূবন বললেন,’ঘুমোচ্ছে। এখন না ডাকাই ভালো।’
বৃন্দাবন দাস খুশি মনে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন।
‘
চন্দ্রা কিন্তু মোটেও ঘুমোচ্ছে না।সে কাঁদছে। বালিশের পেটে মুখ ডুবিয়ে কাঁদছে। বৃন্দাবন দাস চলে গেলে ভূবন এলেন তার কাছে। এসে তার মাথায় হাত রেখে বললেন,’মারে,যা ভুল করেছিস তা তো করেছিসই। এখন আর এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। মুসলমান ছেলের সাথে হিন্দু মেয়ের কিছুতেই পরিণয় হতে পারে না।বুঝলে? আগামীকাল তোর বৃন্দাবন আঙ্কেল এর ছেলে জয় আসবে। খুব ভালো ছেলে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।বড় জব করে।ও যদি তোকে পছন্দ করে তুই সুখি হবে মা!’
ভূবন হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে সে জড়িয়ে ধরলো তার মামীকে। তারপর বললো,’মামী,আমি ওকে ভুলতে পারবো না। কিছুতেই ওকে ভুলতে পারবো না!’
এবার ভূবনের বেশ রাগ পেয়ে গেল। তিনি এক ধাক্কায় বিছানা থেকে ফেলে দিলেন চন্দ্রা কে নীচে।নীচে পড়ে গিয়ে খাটের পায়ার সাথে লেগে চন্দ্রার নীচের ঠোঁট কেটে গিয়ে রক্ত ঝরছে ধর ধর করে। চন্দ্রা ওখানে পড়ে থেকেই কাঁদতে কাঁদতে বলছে,’মামী,তোমরা আমায় জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে কিন্তু আমি গলায় দড়ি দিবো।’
ভূবন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওর মাথায় প্রচন্ড জোরে একটা ঝাঁকি দিয়ে বললেন,’মরে গেলেও ওই ছেলের সাথে তোর প্রণয় হতে দিবো না। মনে রাখিস তুই সম্ভ্রান্ত হিন্দু ঘরের মেয়ে।’
চন্দ্রা তখনও কাঁদছে। কাঁদছে আর বলছে,’আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না মামী।মরে যাবো বলছি।সত্যি মরে যাবো।’
ভূবন চন্দ্রার এইসব আকুতি বিকুতি আর শুনলেন না। তিনি ধপ ধপ করে পা ফেলে চলে গেলেন ঘর থেকে বেরিয়ে।
‘
রাতে চন্দ্রার সাথে ঘুমোতে গেলেন ভূবন।ভূবনের ঘুম এমনিতেই খুব গাঢ়।বারিষ খুব চেষ্টা করছে চন্দ্রার সাথে কথা বলতে।সে বুকে অনেকটা সাহস জুগিয়ে মাঝ রাত্তিরে এসে দরজায় টোকা দিলো। সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে উঠে এসে দরজা খুলে দিলো চন্দ্রা। তারপর বারিষ চুপি চুপি বললো,’চল।ছাদে চল।’
ওরা ছাদে চলে গেল।আজও আকাশে চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোয় চন্দ্রাকে দেখাচ্ছে মনমরা একটা পুতুলের মতো। আহারে!কী কষ্ট ওর ভেতর!
বারিষ বললো,’চন্দ্রা।
চন্দ্রা তাকালো।
‘তুই ভালোবাসিস না মাহমুদকে?’
চন্দ্রা কান্নায় ভেঙে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে সে জড়িয়ে ধরলো বারিষকে। তারপর বললো,’বারিষ দা।ও বারিষ দা। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না। গলায় দড়ি দিবো নয়তো এই ছাদটা থেকে লাফ দিবো নীচে!’
বারিষ ভয়ে শিউরে উঠলো।তার চোখেও জল আসছে। কিন্তু সে সেই জল লুকিয়ে ফেলছে খুব সঙ্গোপনে।
বারিষ এবার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,’ভালোবাসার জন্য সবকিছু করা যায় রে চন্দ্রা।তোর ভালোবাসা পবিত্র হলে তুই সফল হবি। আমি আছি তো!’
বলে কেঁদেই ফেলছিলো বারিষ। কিন্তু কীভাবে যেন সামলে ফেললো সে নিজেকে।
আর চন্দ্রা তাকে এখনও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে ।তার চোখের জলে বারিষের জামা ভিজে চুপসে গেছে।বারিষের কী যে ভালো লাগছে তখন। তার মনে হচ্ছে চন্দ্রা তার না হলেও তার চোখের জল তো তার চিরদিনের জন্য হবে। এই যে জামাটায় ওর চোখের জল আজ লেপ্টে গেল তা আর কোনদিন মুছতে দিবে না বারিষ। কোনদিন না।
‘
ওরা ছাদে বসে অনেকটা সময় পার করলো। তারপর চন্দ্রা বললো,’বারিষ দা, তোমার ফোনটা একটু দিবে প্লিজ! আমি শুধু মাহমুদের গলাটা একটু শুনবো!’
বারিষ তার পকেট থেকে ফোন বের করে দিলো। চন্দ্রা সেই ফোন দিয়ে কল দিতেই ও পাশ থেকে ধরলো মাহমুদ। চন্দ্রা বললো,’আমি চন্দ্রা বলছি। তুমি এতো রাতেও ঘুমাওনি কেন?’
মাহমুদ বললো,’আমার ঘুম পায় না।একদম ঘুম পায় না।’
‘কেন?ঘুম পায় না কেন?’
‘তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছো চন্দ্রাবতী। আমি তোমায় ছাড়া বাঁচবো না!’
‘আমিও তোমায় ভালোবাসি। ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু–!’
‘কিন্তু। কিন্তু কী চন্দ্রাবতী?’
‘কাল আমায় দেখতে আসবে একটা ছেলে।হয়তো বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি শুধু তোমায় চাই।সত্যি তোমায় চাই!’
চন্দ্রা কেঁদে উঠলো।ও পাশ থেকে মাহমুদও চোখ মুছলো। তারপর সে বললো,’কিচ্ছু হবে না দেখো। আল্লাহ আছেন। তিনি আমাদের ভেতরটা দেখছেন। আমাদের ভালোবাসা সত্যি হলে কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।কেউ না!’
‘কাল যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তবে?’
‘হয়ে যাক। কিচ্ছু হবে না।আমরা পালাবো। পালিয়ে যাবো অনেক দূরে।’
‘কিন্তু কীভাবে পালাবো ? মামীকে চিনো না তুমি!’
‘মনে রেখো ভালোবাসার শক্তি অনেক বেশি। ভালোবাসা কোন বাঁধা মানে না!’
তারপর কোথায় কী একটা যেন শব্দ হলো আর বারিষ সচকিত হয়ে উঠে বললো,’এই চন্দ্রা রাখ। ফোন রাখ।’
চন্দ্রা আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলো।
———————————————————————
বৃন্দাবন দাস তার ছেলে জয় দাসকে নিয়ে এসেছেন।জয় যতটা মেধাবী তার ততটা ছাপ চেহারায় নাই। এই অল্প বয়সেই তার অনেক বড় ভুঁড়ি।দেখতেও খুব যে ভালো লাগে তা না।চন্দ্রার চেহারার কাছে সে নস্যি মাত্র।
কিন্তু এই ছেলেকেই পছন্দ হয়ে গেল অমল আর ভূবনের।তারা যে করেই হোক মেয়েকে ঘর থেকে বের করতে চান।নয়তো অধর্ম করে ফেলবে পাপিষ্ঠা মেয়ে!
চন্দ্রার সাজগোজ করে জয়ের সামনে আসার কথা। কিন্তু সে আসতে চাইছে না। ভূবন এবারও ভীষণ রেগে গেলেন। চোখ মুখ লাল করে তার ডান হাতটা উপরে তুলে—–
#চলবে
‘
‘
#চন্দ্রাবতী
#৮ম_এবং_শেষ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
বৃন্দাবন দাস তার ছেলে জয় দাসকে নিয়ে এসেছেন।জয় যতটা মেধাবী তার ততটা ছাপ চেহারায় নাই। এই অল্প বয়সেই তার অনেক বড় ভুঁড়ি।দেখতেও খুব যে ভালো লাগে তা না।চন্দ্রার চেহারার কাছে সে নস্যি মাত্র।
কিন্তু এই ছেলেকেই পছন্দ হয়ে গেল অমল আর ভূবনের।তারা যে করেই হোক মেয়েকে ঘর থেকে বের করতে চান।নয়তো অধর্ম করে ফেলবে পাপিষ্ঠা মেয়ে!
চন্দ্রার সাজগোজ করে জয়ের সামনে আসার কথা। কিন্তু সে আসতে চাইছে না। ভূবন এবারও ভীষণ রেগে গেলেন। চোখ মুখ লাল করে তার ডান হাতটা উপরে তুলে চড় বসিয়ে দিলেন চন্দ্রার গালে। চন্দ্রা ব্যথায় গালে হাত চেপে ধরে বসে পড়লো। তারপর বললো,’মেরে ফেললেও মাহমুদকে আমি ভুলতে পারবো না।’
কিন্তু ভূবন অত সহজ মহিলা নন। তিনি চন্দ্রা কে সাজিয়ে গুজিয়েই জয়ের সামনে নিয়ে হাজির করলেন।জয় ওকে দেখে পলক ফেলতে পারলো না।সে ভাবতেও পারছে না ভগবান তার জন্য এমন চাঁদ সুন্দর মেয়ে রেখেছেন!
জয় চন্দ্রার সাথে কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করলো না।সে বললো,’আমার বাবার পছন্দই আমার নিজের পছন্দ। চন্দ্রা কে আমার পছন্দ হয়েছে।’
বৃন্দাবন দাস খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। তিনি বললেন বিয়ের ডেট পাকা করা হোক। ভূবন তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,’দিন কাল খুঁজে বের করুন। আগামী সপ্তাহে বিয়ে।’
‘তাহলে এই কথাই সই।’
বলে মিষ্টিমুখ করে চলে গেলেন বৃন্দাবন দাস আর তার ছেলে জয়।
আর হতবাক হয়ে শুধু ঠাঁই বসে রইল চন্দ্রা। তার আজ মরে যেতে ইচ্ছে করছে। মাহমুদকে না পেলে সে সত্যি সত্যি মরে যাবে।
‘
চন্দ্রা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।কেউ তাকে খাওয়াতে পারে না। দু চারদিন না খেয়ে অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে সে। ওর দুঃখ দেখে বারিষের বুকটা কেঁপে উঠে। চোখ ফেটে উঁকি মারে জলকণা। তাই সে তার মাকে বললো,’মা,একটা প্লেটে করে খাবার দাও। আমি গিয়ে চন্দ্রা কে খাইয়ে দিয়ে আসি।ও ঠিক আমার কথা মানবে।’
ভূবন ছেলের হাতে প্লেট ভর্তি ভাত আর সবজি দিলেন। সেই খাবার নিয়ে চন্দ্রার কাছে গেল বারিষ।চন্দ্রা খাবার দেখেই বললো,’খাবার নয় আমায় বিঁষ এনে দাও বারিষদা। আমি বিঁষ খেয়ে মরে যাবো।’
বলে কেঁদে উঠলো চন্দ্রা। কাঁদতে গিয়ে কাঁদতেও পারছে না ভালো করে সে।তার শরীর কেমন দূর্বল হয়ে এসেছে। চোখ কেমন নিভে যাচ্ছে।আর চোখের নিচে জমেছে গাঢ় কালি।
বারিষ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’কাদিঁস না চন্দ্রা।সব ঠিক হয়ে যাবে।’
‘কিচ্ছু ঠিক হবে না বারিষ দা। কিচ্ছু ঠিক হবে না।’
‘ঠিক হবে। কিন্তু ততদিনে তুই তো মরে ভূত হয়ে যাবি। মাহমুদকে পেতে হলে তো তোকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে বেঁচে থাকতে হবে। বেঁচে না থাকলে ওকে পাবি কী করে?’
চন্দ্রা আবার কেঁদে উঠলো বারিষের গলা জড়িয়ে ধরে।
বারিষ বললো,’কাঁদিস না।এই নে ভাত খা।’
বলে সামান্য সবজি দিয়ে ভাত মাখিয়ে একটা নলা তুলে ধরলো বারিষ চন্দ্রার মুখের কাছে।চন্দ্রা কী কষ্টে যে সেই নলা মুখে নিলো। তারপর আর খেতে চায় না সে। কিন্তু বারিষ জোর করে খাওয়ালো।
‘
এদিকে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল। ভূবন খুব চতুর মহিলা। তিনি আগেই জানতেন যে চন্দ্রা পালানোর চেষ্টা করতে পারে।তাই তিনি বিয়ের ডেটটা আরো এগিয়ে নিয়ে আসলেন। এবং কোন আত্মীয় স্বজনকেও শুনালেন না পর্যন্ত। তারপর একদিন বিকাল বেলা হঠাৎ করে বললেন,’কাল তোর বিয়ে চন্দ্রা।’
চন্দ্রা কথাটা শুনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। এখন কী করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।সে মোটেও ভাবেনি যে এতো দ্রুত সবকিছু শেষ হয়ে যাবে তার।সে মনে মনে তার ভগবানকে ডাকছে।তার ভগবান কী এই বিপদের দিনে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন!
‘
‘
কাল চন্দ্রার বিয়ে।
রাতে চন্দ্রার সাথে শুয়েছেন ভূবন। তিনি আজ ঠিক করেছেন সারারাত ঘুমাবেন না।চন্দ্রাকে পাহাড়া দিবেন। কিন্তু রাত বারোটা বাজার আগেই তিনি ঘুমের কোলে ঢলে পড়লেন।এর আরো অনেক পরে তার দরজায় ঠক ঠক করে কে যেন নাড়া দিলো। ভূবন টের পেলেন না। চন্দ্রা তখন শুয়ে শুয়ে পরিকল্পনা করছিলো খুব সহজে এবং দ্রুত কীভাবে সে আত্মহত্যা করতে পারে এমন কিছু। কিন্তু দরজার নাড়া শুনে কেন যেন তার মনে আশার আলোর দেখা মিললো।সে চটপট বিছানা থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বারিষ।বারিষ বললো,’চল।’
চন্দ্রা ভয় এবং আনন্দে কাঁদছে। কিন্তু শব্দ করছে না।সে আর দেরি না করে বললো,’চলো।’
ওরা খুব সাবধানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।বারিষের হাতের মুঠোয় ধরা চন্দ্রার একটি হাত। তারা হাঁটছে পাশাপাশি।বারিষের বুকটা ঢিপঢিপ করে বাজছে।তার কেবল মনে হচ্ছে এই পথ যদি আর কোনদিন শেষ না হতো। কিন্তু
মিনিট দশেক হাঁটার পরেই বড় রাস্তায় এসে গেলো তারা। রাস্তার এক পাশে সাদা রঙের একটা মাইক্রোবাস দাঁড় করানো। সেই মাইক্রোবাসের কাছে গিয়েই বারিষ ডেকে উঠলো,’মাহমুদ, মাহমুদ?’
বারিষের ডাক শোনে চটজলদি দরজা খুলে দিলো মাহমুদ।আর হাত ধরে টেনে নিলো চন্দ্রাকে ভেতরে। তারপর বারিষের দিকে তাকিয়ে মাহমুদ বললো,’তুই সত্যিই মানুষ।সত্যিকারের মানুষ।’
চন্দ্রার কেন জানি তখন কান্না পেয়ে গেল খুব।সে কেঁদে কেঁদেই চিৎকার করে বললো,’বারিষ দা, আবার দেখা হবে আমাদের।’
তারপর ড্রাইভার স্টার্ট দিয়ে দিলো গাড়ি।বারিষ দু হাত উপরে তুলে টা টা দেখিয়ে বিদায় জানালো। তারপর ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল অনেক্ষণ বারিষ।আর ওরা চলে গেল ততক্ষণে অনেক দূরে।
‘
সে রাতে বাসায় ফিরে ছাদে উঠে গেল বারিষ।তার বুকটা কেমন পুড়ে খাক হয়ে গেছে।তার ভেতরে যে মনের মানুষ হারানোর ভয়ংকর রোগ হয়েছে তা থেকে একমাত্র বাঁচার উপায় মৃত্যু। তার বিশ্বাস মরে গেলেই একমাত্র সে ভুলতে পারবে চন্দ্রা কে।
তখন রাত প্রায় শেষ।আকাশে গোটা কয়েক তারা মিটমিট করে জ্বলছে আর কামিনী ফুল তীব্র ঘ্রান ছড়াচ্ছে বাতাসে।বারিষ এইসব ফুল আর তারাদের মায়া ছাড়িয়ে চলে গেল একেবারে ছাদের শেষ প্রান্তে। এরপর যা আছে তা শূন্য। ওখান থেকে পা ফসকে গেলেই মৃত্যু। কিন্তু বারিষ পা ফসকে পড়তে চায় না।সে চায় দ্রুত মৃত্যু।তাই সে আজ লাফাবে। লাফিয়ে মরবে। তার শরীর কেমন এখন থরথর করে কাঁপছে।কান্নায় বুক ভেঙে যাচ্ছে। কেন জানি বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে খুব। আচ্ছা মানুষ এতো কষ্টের পরেও বেঁচে থাকতে চায় কেন?
___সমাপ্ত___