#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ৩৩(শেষপর্ব)
#আর্শিয়া_ইসলাম—উর্মি
৭৩,
বউ সাজে স্টেজে বসে আছে হিয়া আর তাইবা। পাশেই রায়া আর নাতাশা, এভি, জেসিয়া, আফরা। রিমা নিজের সংসার আর বাচ্চা সামলে আসতে পারেনি। একসাথে দুইজোড়া বিয়ে! সব দিক সামলানো অনেকটা কঠিন। হিয়াদের মুখোমুখি স্টেজে বসে আছে রাহেদ আর ইহসাস। তাদের পাশে আরাফাত, রায়হান, লুইস। লুইসের কোলে এরিক। রাদ আর ফারহাদ দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেনা। বাবা, চাচার সাথে অতিথি আপ্যায়নে গায়ের ঘাম ছুটে যাচ্ছে। আনিকা শাশুড়িদের সাথে ছুটছে, সব ঠিকঠাক আছে কিনা খেয়াল রাখছে। ইহসাস মাঝে মধ্যে হিয়ার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। টকটকে লাল রঙের লেহেঙ্গায় সেজেছে হিয়া, একই সাজ তাইবারও। হলুদের শাড়ি পরেই অবস্থা যা তা হিয়ার। এজন্য শাড়ির পাশাপাশি লেহেঙ্গা কেনা হয়েছিলো। সেটাই পরেছে ও। একসাথে দুই জোড়া বিয়ে, সব ম্যাচিং করেই কেনা হয়েছে। জেসিয়া হিয়ার কানে আস্তে করে বলে,
“হিয়া তোমাদের বিয়ের এতো নিয়ম কেনো? আমি টায়ার্ড হয়ে গেলাম।”
” তোমাদের নিয়মের বিয়েও কম প্যারা নয় জেসিয়া।”
হিয়া জেসিয়ার মতোই আস্তে করে বললো। জেসিয়া বললো,
“কোন সুখে যে বিয়ে করতে এলে দেশে। কি সুন্দর কানাডায় থেকে যেতে। আমি তো ঠিক করেই নিয়েছি বিয়ে করবোনা। দুজনে একসঙ্গে বেশ আড্ডা, ঘুরাঘুরি করে কাটিয়ে দিতাম।”
জেসিয়ার কথা ফুরোতেই অন্তর ওদের সামনে উপস্থিত হয়। ওকে দেখে রায়া ভ্রুকুটি করে বলে,
“কিছু বলবি তুই?”
“না, এমনিই বধুবেশে বোনকে কেমন লাগছে দেখতে এলাম।”
অন্তর উত্তর দেয়। কিন্তু তার দৃষ্টি তো অন্যদিকে! নাতাশাকে আড়চোখে দেখছে ও। গত দুইবছর হলো নাতাশাকে ভালোবেসে আসছে অন্তর। হিয়া কানাডা যাওয়ার পর নাতাশার সাথে প্রায়ই কথা বলতো। হিয়া যখন নাতাশাকে প্রথম দেখিয়েছিলো! একপ্রকার ভালো লাগা কাজ করেছিলো তার মাঝে। এরপর হিয়ার সাথে নাতাশার কথা বলার সময় নানান ছুতোয় দেখা, হিয়ার সাথে ব্যাপার টা শেয়ার করে নাম্বার নিয়ে কথা বলার চেষ্টা। কিন্তু নাতাশার এক কথা ছিলো, প্রেম না! বিয়ে করতে পারলে যেনো অন্তর তার সামনে দাড়ায়। অন্তর বলেছিলো হিয়ার বিয়েটা হয়ে গেলে সে নিজের বিয়ের কথাও পরিবারে বলবে। এতোদিন সে নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। পড়াশেনা শেষে নিজের ছন্নছাড়া জীবন গুছিয়ে জব করছে একটা ভালো পজিশনে। লুইসের সাথে প্রথম দিকে মা”র খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ চললেও পরে একসময় হিয়ার প্রচেষ্টায় লুইস আর এভির সাথে সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মোটামুটি সবার জীবন গুছিয়ে উঠেছে এতোদিনে। অন্তর একধ্যানে নাতাশাকে দেখছিলো আর এসবই ভাবছিলো। নাতাশা আচমকা অন্তরের দিকে তাকিয়ে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে যায়। স্টেজ ছেড়ে দৌড়ে চলে যায়। রায়া তা দেখে বললো,
“এটা কি হলো!”
হিয়া উত্তরে বললো,
“লুকোচুরি চলছে আপু। আমাদের ভাইয়ার উড বি ওয়াইফ দৌড়াচ্ছে আমাদের ভাইকে দেখে।”
“মানে কি বলছিস তুই?”
হিয়া রায়াকে সব খুলে বলে। রায়া সব শুনে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভালোবাসা সবারই পূর্ণতার পথে। শুধু আমি বি’ধ্ব’স্ত, ভাঙাচোরা মন নিয়ে একজনকে উপেক্ষা করে কষ্ট দিচ্ছি।”
অন্তর বোনের ক্লান্ত চাহনী দেখে আর কিছু বললো না। চলে গেলো, সে নিজেও তো বোনের প্রেমের বিরোধিতা করেছে। হিয়া বোনের কাধে হাত রাখে। ওদের কথোপকথন এর আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা জেসিয়া আর এভি। এভি নিজের ভাষায় বললো,
“তোমরা কি ডিসকাস করছো? এনিথিং সিরিয়াস?”
“নাথিং এভি। এভরিথিং ইজ অলরাইট।”
রায়া উত্তর দেয়। এভি বলে,
“আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে রেইন। তোমাদের ঝাল খাবার আমি খেতে পারিনি। লুইস তবু তোমার হাতের রান্না আগে খেয়েছে, ওর ঝাল খাওয়ার অভ্যাস হয়েছিলো। কিন্তু আমার তো নেই। আমায় একটু কম স্পাইসি কিছু খেতে দিবে?”
জেসিয়া তাল মিলায় এভির কথার সাথে। সেও বলে,
“আমিও খেতে পারিনি।”
“তোমাদের অসুবিধা গুলো আগে বলবেনা! আমিও দেখো পাগলের মতো তোমাদের অসুবিধা গুলো খেয়াল করিনি।”
রায়া ওদের উঠতে বলে নিজের সাথে নিচে কিচেনের দিকে চলে যায়। তাইবা এতোক্ষণ চুপচাপ বসে ওদের কথা শুনছিলো। রায়া চলে যেতেই সে বলে,
“তোমাদের কথার আগামাথা কিছু বুঝলাম না।”
“বাদ দাও, তেমন সিরিয়াস কিছু না।”
উপরতলার দক্ষিণ পাশের এক কর্ণারের রুমে খাটে বসে আছে লুইস। এভি পাশেই বেবিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। লুইস বসে একমনে কিছু ভাবছে এভি বুঝতে পারে। সে এরিককে ফিডিং করাতে করাতে বলে,
“আসলে বিয়েতে, বসে আছো রুমে। তবে এতোদূর আসলে কেনো? হিয়া তো তোমায় আনতে কনসিডার করেনি প্রথমে কারণ জানোই রেইন কষ্ট পাবে। তুমি জোড় করে রাজী করালে। কেনো লুইস?”
“তুমি জানো এভি, আমার হইচই পছন্দ না। এসেছি কি কারণে এটাও জানো।”
“রেইনের তোমার প্রতি পিছুটান ছুটাতে।”
“হুম। রাদ ছেলেটা কিছু না করেও রেইনের থেকে কষ্ট পাচ্ছে সেটা আমি হিয়ার কাছে রেইনের খবর নিতাম যে রোজ, জেনেছিলাম। তাই এসেছি।রেইন উপর থেকে ভালো আছে দেখালেও সে ভালো নেই এভি।”
“এক বাচ্চার বাবা হয়েও তোমার রেইনের প্রতি ভালোবাসা কমলো না লুইস।”
“ভালোবাসা কমার জিনিস নয় এভি। তাকে পেতেই হবে এমন শর্তও নেই। তাই বলে লাইফে ২য় সূচনা থাকেনা, এটা হয়না। আমাদের দুজনের জীবনেই ২য় সূচনা যখন হয়েছে, ২য় মানুষটাকেও ভালো রাখা আমাদের দায়িত্ব।”
“শুধু কি দায়িত্বের জন্যই আমার সাথে রয়েছো লুইস?”
আহত দৃষ্টিতে প্রশ্ন টা করে এলভিনা। লুইস এলভিনার দিকে তাকায়। এরপর স্মিত হেসে বলে,
“রেইন আমার মনের মনিকুঠায় বন্দী এক ভালোবাসা। তুমি মুক্ত হয়ে আমার জীবনের আনাচে কানাচেই ঘুরছো। তোমার মনে হয় তোমার প্রতি যা করি সব দায়িত্বের জন্য? ভালোবাসা থেকে নয়?”
লুইসের উত্তরে এলভিনার মুখে হাসি ফুটে। বিয়ের তিনবছর পর সে লুইসের মুখে ভালোবাসার কথা শুনলো। লুইস তাকে ছুয়েছে, অধিকার দিয়েছে কিন্তু কখনও ভালোবাসি বলেনি। আজ বললো, এই বলায় অসম্ভব রকম সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে এলভিনার। সে এরিকের গায়ে পাতলা কাথা টেনে দিয়ে উঠে আসে। লুইস দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাকেই দেখছিলো। এভি বাংলাদেশে এসে বাঙালি সাজে সেজেছিলো। সেই সাজেই শেতাঙ্গ এলভিনাকে দারুণ লাগছে। লুইস মুগ্ধতা নিয়ে এলভিনাকে দেখছিলো। এলভিনা এসে লুইসকে জড়িয়ে ধরে। ঠোটে একটা উষ্ম ছোয়া ছুইয়ে দেয়। লুইস আকড়ে ধরে এলভিনাকে।
৭৪,
কাজী সাহেব এসে পরেছেন। বিয়ে পড়ানোর তোড়জোড় চলছে৷ জাহিদুল, শাহীন, রুবেল সাহেব আর রায়ার মামারা সাথে রাহেদের মামা, চাচা ওনারা ছেলের পাশে আর সামনে চেয়ার নিয়ে বসেছেন। সাক্ষী হিসেবে উনারাই সাক্ষর করবেন যার যার সন্তানের জন্য সে সে। রাহেদের পরিবার বলতে তেমন কেউ আসেনি। বিয়ে পরিয়ে বউ নিয়ে চট্টগ্রাম চলে যাবেন উনারা৷ কাজী সাহেব প্রথমে রাহেদ আর তাইবার রেজিস্ট্রি করে বিয়ে পরিয়ে নেন। এরপর ইহসাসের পাশে বসেন। রেজিস্ট্রি পেপারের যাবতীয় কাজ সেরে ইহসাসের দিকে পেপার এগিয়ে দেন উনি। ইহসাস একবার হিয়ার দিকে তাকায়। লজ্জাবতী হিয়া মাথা নিচু করেই বসে আছে। মাঝখানে যে কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে তাদের ভালো মতোই। ইহসাস মুচকি হেসে সাইন করে দেয়। এরপর কাজী সাহেব হিয়ার থেকে সাইন নিতে গেলে হিয়াও সেই একই রকম, ইহসাসের দিকে তাকায়। ইহসাস তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সবার অলক্ষ্যে হিয়াকে সে চোখ টিপ মে’রে দেয়। হিয়া রাঙা হেসে চোখ নামিয়ে সাইন করে দেয়। এরপর কাজী সাহেব বিয়ের নিয়ম অনুসারে সবশেষে ইহসাসকে কবুল বলতে বলেন। ইহসাস দম নিয়ে বলে দেয়, ‘কবুল।’ সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলেন সমস্বরে। এরপর পালা আসে হিয়ার। হিয়া কিছু টা সময় নেয়। এই একটা মাত্র শব্দ বলার পর সে সম্পূর্ণ আলাদা একটা পরিচয়ে পরিচিত হবে সবার কাছে। পরিবারকে বিদায় জানাতে হবে। মেয়েদের জীবন এমন কেনো! জন্ম হয় এক জায়গায়, সেখানেই বড়ো হওয়ার পর হয়ে যায় পরের ঘরের অধিকার। অদ্ভুত! হিয়া যখন কবুল না বলে চুপ করে আছে দেখে রায়া মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,
“এমন চুপ করে আছিস কেনো?”
হিয়ার হুশ হয় রায়ার ধাক্কায়। সে চারদিকে বজর বুলায়, চোখ মা, বাবা ভাইকে খুজে চলছে। অবশেষে দেখা পেলো ছাদের এক কর্ণারে। মিসেস অন্তরা কাদছেন চোখে আচল দিয়ে ঢেকে। ঘর শূণ্য হওয়ার হাহাকার হয়তো। শাহীন সাহেব ওপাশ ফিরে আকাশ পানে তাকিয়ে আছেন। অন্তর বোনকে হেসে ইশারা করছে কবুল বলার জন্য। হিয়া দিকবেদিক ভেবে কবুল বলেই দেয়। আবারও আলহামদুলিল্লাহ বলার আওয়াজে মুখরিত হলো চারদিক।
বিয়ে শেষে এবার বাসর ঘরের দরজা আটকে আগলে টাকা হাতানোর পর্ব। বড়োরা সব ছুটোছুটি শেষে ক্লান্তি নিয়ে যে যার মনে রুমে চলে গেছে। তাইবাকে সকালে বিদায় জানানো হবে। যেহেতু অনেক দূরের পথ পারি দিতে হবে। নাতাশা, আফরা, আনিকা দরজা আটকে দাড়িয়ে আছে ইহসাসের। অন্যদিকে তাইবা আর রাহেদের রুমের দরজা আটকেছে আরাফাত, রায়হান আর অন্তর। সবার সব তর্কাতর্কি শেষে ইহসাস আর রাহেদ দুজনই দুজনের রুমে ঢোকার সুযোগ পায়। ইহসাসকে রুমে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয় আনিকা৷ এরপর বলে,
“সারাদিন অনেক দৌড়ঝাপ হলো। এবার যে যে যার রুমে গিয়ে রেস্ট করো।”
“হুম ভাবী।”
নাতাশা বললো। এরপর আফরাকে সাথে নিয়ে তার রুমে চলে যায়৷ জেসিয়া সে আর আফরা এক রুমেই থাকবে। জেসিয়া আগেই ঘুমিয়ে পরেছে ক্লান্তিতে। লুইস আর এভিকেও রুমে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে রাদ। আরাফাত, অন্তর আর রায়হান একরুমে চলে যায়। আনিকা রুমে আসতেই দেখে ফারহাদ ফ্রেশ হয়ে বেরুলো ওয়াশরুম থেকে। আনিকাকে দেখে এগিয়ে এসে হেচকা টানে বউকে বুকে ফেলে বলে,
“এতোক্ষণে তবে তোমায় পাওয়া গেলো।”
“হ্যাঁ সাহেব। কিন্তু বিয়ের এতোবছর হলো আপনার আমায় একা পাওয়ার লোভ আর গেলো না।”
“যাবেনা ম্যাম। আপনি আমার বড্ড প্রিয় ভালোবাসার মানুষ।”
আনিকা মৃদু হাসে। সে জানেনা কি জন্য ফারহাদ তাকে এতো ভালোবাসে। অথচ সে এখনও ফারহাদকে বাবা ডাক শুনিয়ে উঠতে পারেনি। সে ফারহাদের বুকে মাথা রাখতে রাখতে বলে,
“তুমি এতো ভালোবাসো কেনো ফারহাদ! বিয়ের এতোবছর হয়ে আসলো, তোমায় বাবা ডাক শোনাতে পারলাম না।সবার কতো কটুক্তি শুনি, কেবল তোমারই অভিযোগ নেই আমার প্রতি।”
“সবার জীবনে সব পূর্ণতা থাকেনা আনিকা। আমাদের না হয় থাকলো এই অপূর্ণতা। উপরওয়ালা চাইলে আমরাও ইনশা আল্লাহ একদিন বাবা মা হবো আনিকা। মন খারাপ করো না।”
“তুমি আমার শক্তি ফারহাদ। সব কটুক্তির বিরুদ্ধে লড়ার একমাত্র শক্তি তুমিই।”
আনিকা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফারহাদকে। ফারহাদ শান্তিতে চোখ বুঝে নেয় প্রিয়তমা স্ত্রীকে। দিনশেষে প্রিয় মানুষের একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরা সব ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম।
৭৫,
সবে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলো তাইবা। রাহেদ শেরওয়ানি পাল্টে নরমালই টিশার্ট আর টাউজার পরে নিয়েছে রুমে। তাইবা বের হতেই সে মুচকি হেসে ওয়াশরুমে ঢোকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তাইবা নিজের ফোন হাতে নেয়। গ্যালারি ঘেটে এলবামের পাতা থেকে তোলা ঝাপসা ছবিতে নজর বোলায়। ছবিতে তার বাবা মা। তাইবা চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। সে নিজ মনেই বলে,
“আজ আমার জীবনের বিশেষ একটা দিন গেলো আব্বু আম্মু। তোমাদের মিস করছি খুব। সব মেয়ের স্বপ্ন থাকে এই দিনকে ঘিরে৷ কিন্তু আমি তোমাদের পেলাম না। আমাকে একা করে চলে গেছো তোমরা। কষ্ট হচ্ছে খুব।”
তাইবা ফোনটা টার্ন অফ করে চোখ বন্ধ করে কান্নায় ভেঙে পরে। তখনই কাঁধে কারোর স্পর্শ পায়। চোখ খুলে তাকায় তাইবা। রাহেদ দাড়িয়ে আছে। সে তাইবার পাশে বসে। এরপর দুহাতে তাইবার মুখ আকড়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে জল মুছিয়ে দেয়। এরপর বলে,
“একদম কাদবেনা। আমি আছি তো পাশে। ইনশা আল্লাহ সবসময় একসাথে থাকবো আমরা, যতোদিন বেচে থাকি৷ তোমার সব আছে। তুমি একা নও তাইবা।”
তাইবা রাহেদকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। কান্নায় মুষড়ে পরে৷ এ কান্না প্রাপ্তির, ভালোবাসার পূর্নতার। রাহেদ তাইবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“এই যে আজ কাঁদলে! আজ কাদতে দিলাম। এরপর চেষ্টা করবো সবসময় হাসিখুশি রাখার।”
“তুমি আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি রাহেদ।”
রাহেদের বুকে মুখ গুজে বলে তাইবা। রাহেদ মুচকি হাসে। মুখ গুজে দেয় তাইবার ঘাড়ে।
বাসর ঘরে ঘোমটা মাথায় স্বলজ্জ্য হিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। আর ইহসাস তার সামনে হাটু পেতে বসে গালে হাত দিয়ে এক নাগাড়ে তাকে দেখছে। ইহসাস সেই কখন এসেছে। এসে না নিজে ফ্রেশ হয়েছে, না হিয়াকে ফ্রেশ হতে দিয়েছে। সে হিয়াকে দেখতে এতোটাই মগ্ন যে, হিয়া ক্লান্ত এটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে তার। হিয়া এবার একটু লজ্জা কাটিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো,
“আমায় দেখা হলো আপনার? ফ্রেশ হতাম এবার।”
“তিনবছর দেখিনি সামনাসামনি। দেখার শখ টা পূরণ করতে দাও।”
“আপনি বসে থাকুন, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
হিয়া ইহসাসকে ফেলে উঠে দাড়ায়। ভারী লেহেঙ্গা সামলে ওয়ার্ডড্রব থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷ আগে থেকেই ওয়ার্ডড্রবে সব গুছিয়ে রেখেছিলো ইহসাস। সেটা রুমে এসেই জানিয়েছিলো সে। ইহসাস চুলে হাত দিয়ে মৃদু হাসে। এরপর হাসিমুখে নিজেও উঠে দাড়ায়। ড্রেস পাল্টে নেয়। হিয়াও ফ্রেশ হয়ে বের হয়। ইহসাস হিয়াকে দেখে মুচকি হাসে৷ হিয়াও লজ্জামিশ্রিত হাসে। সুতির একটা আকাশী রঙের থ্রিপিস পরেছে হিয়া। শাড়ি তো পরতে জানেনা। ইহসাস হিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। হিয়ার সামনে দাড়িয়ে হিয়ার দিকে হাত বারিয়ে গাল ছোয়ার চেষ্টা করলে হিয়া পিছ থিকে পিছিয়ে যায়। ইহসাস ভ্রুকুটি করে তাকায়। হিয়া বলে,
“আগে ফ্রেশ হোন।”
ইহসাস হেসে ফেলে। সে চলে যায় ফ্রেশ হতে। হিয়া হাতমুখ তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুলের ক্লিপ খুলতে শুরু করে। কিন্তু পার্লারের মেয়েগুলো এমন ভাবে চুল আটকেছে! হিয়া পিছনের দিকে ক্লিপগুলো অব্দি হাত পৌছাচ্ছেনা হিয়ার। ইহসাস ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এমন অবস্থা দেখে এগিয়ে আসে হিয়ার দিকে। হিয়ার পিছনে দাড়িয়ে নিজে ক্লিপগুলো খুলে দিতে শুরু করে৷ হিয়া ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ইহসাসকে দেখে। মনে একটা প্রশান্তি বয়ে চলে। ইহসাস ক্লিপগুলো খুলে হিয়ার পিঠ ছড়ানো চুলে মুখ গুজে দেয়। হিয়া হালকা কেপে উঠে। ইহসাস ধীরে ধীরে হিয়াকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। হিয়া তিরতির করে কাপছে। ইহসাসের চোখে চোখ রাখে হিয়া। ঐ দৃষ্টিতে কাছে পাওয়ার ঘোর লেগে রয়েছে। হিয়া কিছু বলার জন্য ঠোঁট খুলবে, তার আগেই ইহসাস হিয়ার ঠোটে আঙুল দিয়ে বলে,
“হুসস, ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমার হিয়া। আমি জানি তুমি ক্লান্ত। আজ আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে বুকটা শান্ত করে দাও। এই তিন টা বছর সেকেন্ডে সেকেন্ডে তোমায় হারানোর ভয় কাজ করেছে এই হৃদয়ে। আজ সেখানে তোমায় আগলে নিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই। তোমায় পেয়েছিলাম আমার হিয়ার মাঝে। আজ পুরোপুরি পেয়ে গেলাম। মানবী হিয়া আজ পুরোপুরি আমার৷”
ইহসাস কথাটা বলেই হিয়াকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পরে। হিয়ার মাথাটা নিজের বুকের মধ্যে আগলে নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে থাকে৷ হিয়া এত্তোগুলো দিন পর নিজপর শান্তির জায়গা খুজে পেয়ে শান্তিতে চোখ বুজে নেয়। এই শান্তিটা প্রাপ্তির। আজ আর ঘুমের মাঝে হারানোর ভয় নিয়ে কেপে উঠতে হবেনা।
৭৬,
পুরো গ্রাম যখন ঘুমে ব্যস্ত উঠোনের বারান্দায় এককোণে দাড়িয়ে আকাশের বিশালতায় অন্ধকার দেখতে ব্যস্ত নাতাশা। সারাদিনের ক্লান্তিতে কোথায় তার ঘুম আসার কথা। সেখানে সে দাড়িয়ে অন্ধকার দেখছে। হুটহাট নতুন জায়গায় এসে ঘুম ধরেনা তার। অন্ধকারে দাড়িয়ে আজ ভয়ডোর কিছু লাগছেনা তার। মাথায় ঘুরছে আজ অন্তরের কথা। সারাদিন চোরা চোখের চাহনীতে তাকে দেখার দৃশ্যও চোখে ভাসছে। লোকটা কি আসলেই তাকে ভালোবাসে! এতোদিন শুধু ফোনেই টুকটাক কথা হয়েছে। আজ সরাসরি কতোবার চোখাচোখি হয়ে গেলো। অবশ্য এটা গতকাল বিকেল থেকেই হচ্ছে। গতকাল বিকেলেই তারা গ্রামের বাড়ি এসেছে। বড়োরা তো আগেই এসেছে।
“একি! আপনি এখনও ঘুমাননি?”
নাতাশা যখন আনমনে এসব ভাবতে ব্যস্ত তখন অন্ধকারে কারোর গলার স্বর ভেসে আসে। এতোরাতে কে জেগে আছে ভেবে ফোনের ফ্লাশ লাইট ওন করে নাতাশা। লাইটের আলো সামনে ফেলতেই অন্তরকে সিগারেট হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নাতাশা। সে অন্তরকে দেখে বলে,
“আপনি?”
“হ্যাঁ আমি।”
“আপনি না ঘুমিয়ে আমায় প্রশ্ন করছেন?”
“হ্যাঁ করলাম। আমি তো ঘুম ধরছিলো না বলে সিগারেট ধরিয়ে বাইরে আসলাম। রুমে যদি সিগারেটের গন্ধে ঘুম ভেঙে যায়! এজন্য। কিন্তু আপনি কি জন্য জেগে আছেন?”
“নতুন জায়গায় আসার পর হুটহাট আমার ঘুম ধরেনা সহজে।”
কথাটা বলেই নাতাশা রুমে ঢুকতে পা বাড়ায়। তারআগে অন্তর আবার ডেকে উঠে।
“শুনুন।”
নাতাশা স্থির দাড়িয়ে বলে,
“জ্বি বলুন।”
“২-১মাসের মধ্যে আঙ্কেল আন্টির কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আপনার আপত্তি আছে?”
নাতাশা কোনো উত্তর দেয় না। নিশ্চুপ দাড়িয়ে রয়। অন্তর কোনো উত্তর না পেয়ে ফের বলে,
“ধরে নেবো কি নিরবতা সম্মতির লক্ষণ?”
“জানিনা।”
কথাটা বলেই নাতাশা রুমে ঢুকে যায়। অন্তর সিগারেট ফেলে পা দিয়ে মা”ড়িয়ে চুলে হাত বুলিয়ে মুচকি হাসে। অবশেষে একটা কিছুতে মেয়েটার সম্মতি পেলো।
৭৭,
দুতলার একদম কর্ণারের এক রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রাদ। আকাশে তারা ঝলমল করছে। তার দৃষ্টি সেই আকাশে নিবন্ধ। রাতের দুটো বাজে হয়তো। চোখে ঘুম নেই। বুকের মাঝে একরাশ হাহাকার। পেয়েও না পাওয়ার হাহাকার৷ আজকাল কোনো অনুভূতি আর কাজ করেনা তার মাঝে। যতোটুকু না করলে চলেনা, রায়ার সাথে ততোটুকুই বজায় রেখেছে এখন। রায়ার সীমাবদ্ধ করে দেওয়া সীমানা ভাঙার চেষ্টা সে আর করেনা। রায়া মাঝরাতে ঘুম ভেঙে বিছানা হাতরে পাশে রাদকে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে বসে। বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে চুলগুলো হাতখোপা করে নেয়। এলোমেলো শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে সারারুমে চেখ বুলোয়। ড্রিম লাইটের আলোয় কোথাও রাদকে না দেখে সে আগে ওয়াশরুমে ঢুকে। ওয়াশরুমের কাজ সেরে সে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়। যা ভেবেছিলো সেটাই। রাদ বারান্দায়। রায়া এক পা দু পা করে রাদের পাশে গিয়ে দাড়ায়। সে যেতেই রাদ চমকে তাকায়। রায়াকে দেখে বলে,
“ঘুম থেকে উঠলে যে!”
“ভেঙে গেলো।”
“ঘুমানোর চেষ্টা করো।”
“তুমি কি রাতের তারা গুনবে?”
বারান্দার গ্রীলে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো রায়া। রাদ অন্ধকার হাতরেই রায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আর তো কিছু করার নেই৷ তারা গুণে যেমন শেষ করা যায়না, আমার জীবনটাও তেমন। অপ্রাপ্তি গুণে শেষ করা যাবেনা।”
“আমার উপর তোমার অনেক অভিমান জমেছে তাইনা রাদ?”
“অভিমান তার উপর জন্মে, যার উপর অধিকার থাকে।”
“আমার উপর আপনার অধিকার শুরুর থেকে৷”
“শুনেছি অধিকার ছেড়ে দিয়ে অধিকার ধরতে চাওয়ার মতো বিড়ম্বনা আর কিছুতে নেই।”
“তাই বুঝি?”
“হ্যাঁ সেটাই তো।”
“তুমি না চাইতেও আমার উপর অভিমান করে ফেলেছো রাদ।”
“রায়াদ এহসান রাদ এতোটা নির্লজ্জের মতো কারোর পিছনে সময় দেয়নি, যতোটা বৃষ্টি জাহান রায়াকে দিয়েছে। একটা পশুর সাথে এভাবে মিশলে তারও আমার উপর মায়া হতো রায়া। কিন্তু তোমার হয়নি৷ আমি বারবার তোমায় বলেছি ভালোবাসি আমি রেসপন্স পাইনি। অবশেষে আমি সেই চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছি। জোড় করে তোমার কাছে যাইনি। শুনতে চাইনি সব পুরুষই শরীর ছুয়ে বেড়ায়, আমিও সেই কাতারে পরি। আমার ভালোবাসাটা একপাক্ষিক করে নিয়ে রায়া। তাতে না আছে হারানোর ভয়, না আছে প্রাপ্তির আনন্দ। সব টাই আমার মনের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ করে নিয়েছি। তিনটা বছর রায়া। সময়টা কম না। আমি আমার ভালোবাসার স্বীকৃতি পাইনি। অবশেষে আমার অনুভূতিরা এখানে মৃ’তপ্রায়। এখন আর তোমার কাছে যাওয়ার, ভালোবাসার ইচ্ছে টা জাগেনা। সবটাই একটা ধোয়াশা। পেয়েও না পাওয়া, যাকে চোখে দেখা যায়। ছুইতে গেলে মিলিয়ে যায়।”
“আমি দিনশেষে প্রতারক এই শব্দটা শুনতে চাইনি রাদ। মানুষ বলে দিনশেষে প্রতারক রা ভালো থাকে। আমি লুইসের কাছে এই কথাটা শুনতে একদম রাজী ছিলাম না। সেজন্য কানাডায় যাইনি একবারও এতগুলো দিনে, যেখানে আমার মাস্টার্স ফাইনাল সেমিস্টার ছিলো। চেয়েছিলাম সে ভালো থাকুক। তার আমার প্রতি কোনো পিছুটান না থাকুক। সে পিছুটান ছাড়িয়ে গিয়েছে রাদ। সে এককদম এগিয়েছে, আমিও আগাতে চাই। আমার পাশে থাকবে না তুমি? সেই আগের মতো!”
রাদ নিরস ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। রায়ার কথা কানে গিয়েও গেলো না। যে অভিমানের পাহাড় জমেছে, তা কি এতো সহজেই গলে যায়! এক দুদিন না তিন তিনটা বছরের অভিমান। রায়া রাদের পিছনে গিয়ে দাড়ায়। পেছন থেকেই দুহাতে পেচিয়ে রাদকে জড়িয়ে ধরে। রাদের চোখ দিয়ে নিরবে অশ্রু ঝরে পরে। পুরুষ মানুষের কাদতে নাকি বারণ! কিন্তু এ কান্না তো তিনটা বছরের জমে থাকা অভিমান, অবহেলা পাওয়ার কান্না। রায়ার হাতে রাদের গরম জল গড়িয়ে পরে। রায়া চমকে উঠে। রাদকে জোড় করে সামনের দিকে ঘুরায়। সে রাদের পায়ের উপর পা তুলে দাড়ায়। গাল হাত দিয়ে আকড়ে জল মুছে দেয়। রাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। থাকবেই বা কিভাবে! একজন স্বামী সে, তার স্ত্রীকে পাগলের মতো ভালোবেসেও পেয়েছে অবহেলা। তার কি আর কোনো আশা থাকতে পারে! রায়া রাদের বুকের মাঝে ঘাপটি মেরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। এরপর বলে,
“সবার জীবনেই কিছু না কিছু বাজে সময় থাকে রাদ। কেউ সহজে ভুলে যায়, কেউ সময় নেই। আমারও সময় লেগেছে। এই সময় লাগার মাঝে আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি, অবহেলা করেছি আমি জানি। কিন্তু অতীতের সম্পর্কের পিছুটান ছেড়ে আসতে একজনের পা বাড়াতেই হতো। হিয়া আজকে সেটা আমায় না দেখালে আমি পারতাম না পা বাড়াতে। নিজের মাঝের অপরাধ বোধ আমায় কুড়ে কুড়ে শেষ করে দেয়। আমি একটু শান্তি চাই আমার। আপনি তো সেই শুরু থেকেই আমার মন ছোয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি শুধু অবঙ্গাই করে আসলাম। এখন না হয় আমি আপনার মন ছোয়ার চেষ্টা করি। আপনি আমায় একটা সুযোগ দিন!”
রাদ আলতো করে হাত রাখে রায়ার মাথায়। যতোই অভিমান করুক, দিনশেষে এই মেয়েকেই সে ভালোবাসে। রায়ার কান্না থামাতে সে বলে,
“অনেক সংসারই আছে রায়া মানিয়ে নেওয়া মেনে নেওয়া এভাবেই চলছে। ভালোবাসা নেই, কিন্তু একে অপরের সাথে ভালো আছে। এক ছাদের তলায় আছে। আবার কিছু সংসার আছে ভালোবাসা ভর পুর কিন্তু রাগ জিদ অভিমান অবহেলায় ঝগড়া অন্তহীন অবশেষে বিচ্ছেদ। আমাদের সম্পর্ক অপূর্ণতায় ভরপুর হোক, তবু আমরা এক ছাদের তলাতেই রয়ে গেছি। কান্না করবেনা রায়া। কান্না তোমার সাথে মানায় না।”
রায়া ধীরে ধীরে শান্ত হয়। রাদ তাকে বুকে আগলে রাখে। সুখপাখি তবে ধরা দিলো তার কাছে। রায়া এবার অস্ফুটস্বরে বলে,
“এবার লুইসের কথায় নয়, আমার সত্যি একটা রাজকন্যা চাই রাদ। যে আমাদের মাঝের দেয়াল টা ভেঙে আমাদের কাছাকাছি আনবে।”
“আসলেই চাই?”
রায়া মাথা উপরনিচ করে বুঝালো, হুম চাই। রাদের ঠোটের কোণে প্রাপ্তির হাসি। তার অপেক্ষা, ধৈর্যের ফলটা মিষ্টি হয়ে ধরা দিলো। সে রায়ার কানের কাছে ঠোট নিয়ে আলতো স্বরে বললো,
“ভালোবাসি রায়া। আমার হিয়ার মাঝে আপনিই ছিলেন, আছেন , থাকবেন।”
রায়া পরম তৃপ্তিতে রাদের বুকের মাঝে আরও একটু সিধিয়ে যায়। অনেকগুলো দিন পর আজ মনে শান্তি মিললো। নিজের কষ্ট পাওয়ার পাশাপাশি জীবনে জড়ানো মানুষটাকেও কষ্ট দিয়েছে সে। আর কষ্ট দিবে না বলে সে আলতো স্বরে বলে,
“এতো কষ্ট দেওয়ার পরও যে মানুষটা আমায় এতো ভালোবাসে, আমিও তাকে ভালোবেসে ভালো রাখার চেষ্টা করবো। আজ থেকে আমাদের জীবনে আর পিছুটান রইবে না রাদ।”
রাদ আলতো হাসে। আজ রাতটা প্রাপ্তীর, বড্ড সুন্দর। ভালো থাকুক ফারহাদ-আনিকা,রাদ-রায়া, ইহসাস-হিয়া, রাহেদ-তাইবা, লুইস-এলভিনা, অন্তর-নাতাশা। সাথে ভালো থাকুক পরিবারের প্রতিটা মানুষ। ভালোবাসায়, পূর্ণতায় মুড়িয়ে থাকুক সবাই।
সমাপ্ত