#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-১৬(১ম অংশ)
নোরা ফুপির বাড়িতে আছে আজ পাঁচদিন হয়ে গেল। নোরা থাকবে বলে ময়ূখের ঘরটা তাকে ছা-ড়-তে হলো। মনে মনে এ নিয়ে ভীষণ বি-র-ক্ত সে৷ আর তা হবে নাই-বা কেন! ইরশাদ নিজের ঘর দিতে চাইলে নোরা বলল তার ছোট ঘরটা পছন্দ হয়েছে। ময়ূখের মনে হলো নোরা ইচ্ছে করেই তার ঘরটা কব্জা করল কিন্তু আম্মা সেসবে কান না দিয়ে বলে দিলো, “নোরা ময়ূখের ঘরেই থাকবে।”
এহহ্ বলার ধরণে মনে হচ্ছিল নোরা ময়ূখের বউ তার ঘরেই তো থাকবে। অসহ্য! এদিকে ভাইয়ের কি হয়েছে কে জানে রাত বিরেতে বেলকোনির দরজা খুলে রাখে নয়তোবা নিজেই গিয়ে বসে থাকে সেখানে এই শীতের রাতেও। আজ রাতের খাওয়া শেষ হতেই নোরা বায়না ধরলো গান শুনবে। ময়ূখের পড়াশোনায় আজকাল ঢিলেমি হচ্ছে খুব আর তাতেই মনে হচ্ছে বিসিএসটা তার হবে না। সে টিকবে না কিছুতেই এই পড়াশোনা দিয়ে। কিন্তু না বাড়ির সব একসাথে পা-গ-ল হয়ে গেছে । তাইতো এখন জোর জবরদস্তি টেনে নিয়ে গেল ছাঁদে। ইরশাদ চুপচাপ বসে বসে নোরা আর মায়ের কান্ড দেখলো সে আগে পরে কিছুই বলবে না তবে একটু গান হলে তার মন্দ লাগবে না। ময়ূখ গিটার হাতে ছাঁদে যেতে লাগল পেছনে নোরা মাদুর হাতে। ইরিন বেগমও পেছনে পেছনে বের হলেন। ইরশাদ বাবাকে বিছানায় যেতে দেখে সে বাবাকে বলে গেল বাইরে থেকে দরজা আটকে যাচ্ছে। ফখরুল সাহেব কম্বল গায়ে টেনে বললেন, “তালা মেরে যা বাইটে থেকে নইলে আবার চোর ঢুকে যেতে পারে।”
ইরশাদও তাই করল। ইরিন দোতলায় গিয়ে মৈত্রীদের কলিংবেল বাজালো। শেলি দরজা খুলতেই তিনি জানতে চাইলেন বাকিরা কি ঘুমিয়ে পড়েছে? শেলি বলল এখনও সবাই বসার ঘরে। তখনই ভেতর থেকে রোকসানা জিজ্ঞেস করলেন, কে এলো রে শেলি?
” ইরশাদ ভাইয়ের আম্মা আইছে।”
“ওহ, ভাবী ভেতরে আসেন?” রোকসানা কথাটা বলতে বলতেই বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। পেছনে মৈত্রী আর মিশুও এসেছে। ইরিন হাসি মুখে বললেন, “না ভাবী এখন ভেতরে আসবো না আসলে ছেলে মেয়েগুলো গান টান করবে বলছে কিন্তু রাত তো প্রায় নয়টা বেজে গেছে তাই ভাবলাম আপনাকে একটু জানিয়ে নেই আগে।”
“ওহ করুক ভাবী স-ম-স্যা নেই এমনিতেও ছাঁদের আওয়াজ নিচে ফ্ল্যাটে আসে না। আর এখন তো শীত দরজা -জানালা সবই লক করা করুক ওরা৷”
“ইরশাদ ভাইয়ারা ছাঁদে বসছে সবাই? আমরাও যাই মৈত্রী আপা যাইবেন?” শেলি উৎসুক হয়ে কথাটা বলেই পেছনে মৈত্রীর দিকে তাকালো৷ এবার রোকসানা আর ইরিনও তাকিয়েছে তার দিকে সেই সাথে ইরিন বললেন, “হ্যাঁ যেতে পারো তো তোমরাও নোরা আমার ভাতিজিও আছে সেখানে।”
কেউ খেয়াল না করলেও রোকসানা খেয়াল করেছেন মৈত্রীর চোখ মুখের ভাব কিছুটা পরিবর্তন হয়ে গেছে শেলির কথাতে। এই প্রথম বোধহয় মেয়েটার মুখের রঙ একটুখানি ভিন্ন দেখলো সে। হঠাৎ মনের ভেতর কিছু একটা খামচে ধরলো। সেও তৎক্ষনাৎ বলে বসলো, “হু যাও ভাবীর সাথে একটুখানি বসো হয়তো ভালো লাগবে। এমনিতেও আজ সন্ধ্যে থেকে পড়ার মধ্যে ডুবে আছো এখন বাইরের আবহাওয়া একটু ভালোই লাগবে।”
মৈত্রী মনে মনে অবাক হলো ভীষণ। মামনি আজ তাকে অনেকগুলো কথা বলল না! এমন তো কখনো হয় না তার সাথে। দু জনেই দু এক শব্দে কথা শেষ করে বসে।
ইরিনও তাড়া দিলেন “চলো আমি নিয়ে যাই তোমাদের।”
শেলি তো এক কথাতেই প্রস্তুত আছে। তার কেরাশ আছে সেখানে না গেলে কি করে হবে কিন্তু মৈত্রী একটু দ্বিধা নিয়ে বলল, না আন্টি ওনারা কাজিনস একসাথে বসেছেন সেখানে আমরা!”
“কিচ্ছু হবে না বরং নোরা খুশি হবে। এমনিতেও সে ঘরে একা থাকে সারাক্ষণ তাই তোমার সাথে আলাপ হলেই ভালো হয়।”
ইরিন আর শেলির জোরাজুরিতে মৈত্রী ঘর থেকে শাল নিয়ে গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে গেল। ছাঁদের শেষ সিঁড়িতে পা রেখেই কানে এলো গিটারে টুং টাং আওয়াজ। মনে হচ্ছে গান এখনো শুরু হয়নি। ইরিন ছাঁদে উঠেই নোরার উদ্দেশ্যে বললেন, পরিচয় কি আমি করিয়ে দেব না নিজেরাই হতে পারবে?
ফুপির কথায় ময়ূখের থেকে নজর সরিয়ে নোরা চাইলো মৈত্রী আর শেলির দিকে। মৈত্রীকে দেখতেই সে বুঝে নিলো এটাই সেই বেলকোনির মেয়েটি। কি মনে করে নোরা একবার তাকালো তার পাশে বসা ইরশাদের দিকে তারপর আচমকাই সরে গিয়ে মৈত্রীকে ইশারা করে বলল, “এখানে এসে বসো পরিচিত হই। ফুপি আমরা নিজেরাই পরিচিত হতে পারব।”
ইরিন বললেন, “বেশ ভালো তবে হও পরিচিত৷ আমি নিচে গেলাম ওদিকে তোমার ফুপা ঘরে ঘুমাচ্ছেন দরজা বন্ধ বাইরে থেকে৷ ইরশাদ চাবিটা দে তো!”
ইরশাদ মায়ের দিকে চাবিটা এগিয়ে দিলো। ছাঁদে আলো বলতে চিলেকোঠা থেকে ভেসে আসা হলদে অনুজ্জ্বল আলোটুকুই ভরসা৷ সেই আধ অন্ধকার, আধ আলোতেই ইরশাদের চোখ পড়েছে মৈত্রীর মুখে। শাল পেঁচানো মাথা থেকেই তবুও শালের ফাঁকে সামনের দিকে উঁকি মে-রে আছে একগাছি ছোটো ছোটো চুল। নিষ্প্রভ চোখ দুটোতে নীরবতার গহীন বন। শীতের নিস্তব্ধ হাওয়ার মত মৈত্রীর চোখের দৃষ্টিও নিস্তব্ধতায় ঘেরা। গিটারের বেজে ওঠা সুরের মত স্নিগ্ধ হয়ে আছে মেয়েটির মুখ। ইরশাদের আবারও মনে পড়লো সে মৈত্রীকে নিয়ে ভুল ভাল ভাবছে৷ নোরা কথাগুলো এত গভীরভাবে ম-স্তি-ষ্কে ঢুকিয়ে নেওয়া ঠিক হয়নি৷ জীবনে প্রথম ভু-লের কথাও মনে পড়ে গেল তার এখনই৷ সে নিজেকে সংযত করে ময়ূখের গানে ডু-বে যেতে চাইলো সম্পূর্ণভাবে। নোরা তার চৌকস বুদ্ধিমত্তার দরুণ নজর রাখছে দু দিকেই। ইরশাদের মনোভাব সে অনায়েসেই বুঝে গেল কিন্তু মৈত্রীর সাথে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করতে চাইলেও তা সম্ভব হলো না। মেয়েটি খুবই কম কথা বলে এবং মুখে তার কোন কিছুতেই প্রতিক্রিয়া শো হয় না৷ তাদের আলাপ পরিচয় পর্যন্তই রইলো সে রাতে। ময়ূখের গান চলল ঘন্টাখানেক এর পর আর শীতের সাথে জোর দেখিয়ে কেউ রইলো না ছাঁদে। তবে মৈত্রী যাওয়ার সময় নোরাকে ডেকে বলল, “আমাদের ঘরে এসো কখনো সময় করে গল্প করা যাবে।”
ময়ূখ পেছন থেকে বলে বসলো, “শুধু কি নোরাই আমন্ত্রিত নাকি আমরাও আসবো?”
“আসতে পারেন।” এটুকু বলেই মৈত্রী চোখ উঠিয়ে ইরশাদকেও দেখেছিল একবার। কিন্তু ইরশাদ ততক্ষণে সিঁড়ি বেয়ে নিচতলায় নেমে গেছে। সেই গান আড্ডার রাতের পর কেটে গেছে আরও দুদিন। মৈত্রীর সাথে ইরশাদের আর দেখা হয়নি তবে মৈত্রী তাকে দেখেছে বেলকোনি থেকে। কাল শেলি এসে বলেছিলো, “মৈত্রী আপা দেখছেন ওই বিদেশীডারে! সারাদিন খালি আমার কেরাশের বারিন্দায় খাড়ায়া থাকে। আমার না এট্টুও ভাল্লাগে না তারে ওইখানে দেখতে। মেজাসটা এক্কেরে খা-রা-প হইয়া যায়।” বলতে বলতে শেলি কেমন মুখটাকে একদম রু-ক্ষ আর উ-দা-স করে নিল। তা দেখে মৈত্রী মনে মনে বলল, “আর যদি ওই বিদেশীর জায়গায় আমি থাকতাম তখন কি আমায় দেখেও তোর মেজাজ খা-রা-প হতো শেলি!” পরক্ষণেই মনে হলো, এসব কেন ভাবে সে? ইরশাদকে নিয়ে এত ভেবে ভেবে নিজেকে অ-স্থির করা বড্ড ভুল হচ্ছে তার। এমন বো-কা-মি করাটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না তার।
নোরার সাথে মৈত্রীর ভাব হয়েছে কিছুটা। তারা এখন রোজ টুকটাক গল্প করে একসাথে বসে। তবে নোরা গল্প করার নামে প্রায়ই বসে বসে শাদ ব্রো সম্পর্কে এটা সেটা বলতে থাকে মৈত্রীর সামনে। নোরা মূলত ইরশাদ সমন্ধে মৈত্রীর সাইকোলজি বুঝার চেষ্টাতেই ইরশাদকে নিয়ে গল্প করে৷ আজও বিকেলে এসে বসেছিল মৈত্রীর ঘরে৷ শেলি, মৈত্রী আর নোরা মিলে নারকেল গাছে থাকা টিয়া দম্পতিকে কথা বলছিল। তাদের কথার মাঝেই রোকসানা বেগম এসে ঢুকলেন ঘরে।
” মৈত্রী তোমার বাবা ফোন করেছেন, তোমার মামা একটা বায়ো পাঠিয়েছেন তোমার ইমেইল এড্রেসে। চেক করতে বলেছেন পাত্রের ছবিও আছে সম্ভবত সেটা দেখে তোমার মামাকে কল করতে বলেছে।”
চলবে
(পর্বটা খুবই ছোটো মনে হতে পারে কারণ এখানে ১০০০+ শব্দ আছে মাত্র)