কি ছিলে আমার পর্ব – ৩১

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-৩১

পার্লারে এক সারিতে বসা ভূইয়া বাড়ির চার বউ। প্রথমে জুয়েনা তারপর নিপা এরপর সায়রা এবং তারই পাশে মৈত্রী। আজ ময়ূখের রিসেপশন বলে জুয়েনা ভেবেছিল তারা চার জা মিলে শাড়ি পরবে কিন্তু নিপা ছোট মানুষ জোরাজোরি করে লেহেঙ্গা পরবে বলে ঠিক করেছে। দুই সন্তানের পর জুয়েনার শরীরে মেদ জমে একদমই গোলগাল হয়ে গেছে। নিপারও মেয়ের পর এখন একটু একটু ভারী শরীর শুধু সায়রারই ছেলের জন্মের পরও শরীরের কোথাও বাড়তি মেদ চোখে পড়ে না। উল্টো বয়স আটাশের ঘর পেরিয়েও কেমন বিশ বছরের যুবতীর মত দেখায় তাকে। লেহেঙ্গা পরে চারজনই যখন তৈরি তখন বিউটিশানরা প্রায় একত্রে বলে বসলো, “আপনাকে একদম বলিউড হিরোইনদের মত লাগছে ম্যাম।”

সায়রা অপ্রস্তুত হলো এমন প্রশংসায়৷ এই প্রথম নয় সব সময়ই সে এমন প্রশংসায় পূর্ণ থাকে৷ আজ সে বাড়িতেই সাজতে চেয়েছিল কিন্তু বড় জা’য়ের বারংবার আদেশ আর নিপার আবদারে আসতে বাধ্য হয়েছে। ইমরানও চাইছিলো সে পার্লারে আসুক তাইতো আগেভাগে ছেলেকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছে। মৈত্রীর সাথে তার দেখা হয়েছিল গেইটে এসে। বড় জা একে একে সবাইকে গিয়ে গাড়িতে উঠতে বলেছে। নিচে এসে যখন মৈত্রীকে দেখলো তখন সে এগিয়ে এসেছিলো কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু হঠাৎই ইরশাদ নেমে এলো ওপর থেকে ব্যাগ হাতে। সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই সে তার স্ত্রীকে ডেকে বলল, “লেহেঙ্গার ব্যাগটাই তো নিয়ে আসোনি মৈত্রী।”

“স্যরি, আমি আসলে নোরার ব্যাগটা নিয়েছি বলে খেয়াল ছিলো না ওটার কথা।”

সায়রা চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল৷ চোখাচোখি হলেই ভেতরে একটা অ-গ্নিব-র্ষণ হয় আজও৷ ভয় হয় এই বুঝি ইরশাদ তাকে লোক সম্মুখে প্রতারক বলে গা-লি দিয়ে বসবে। আসলে তেমনটা তো হয়েও ছিলো একবার তাই ভ-য়-টা আজও তাড়া করে খুব। কিন্তু ইরশাদ তাকে দেখেও কেমন অদেখা করে স্ত্রীর ব্যাগটা গাড়িতে রেখে চলে গিয়েছিল। মৈত্রী তখনই কেমন করে যেন ধরে নিলো এ দুজনের মাঝে কোন গ-ভী-র এক রহস্য লুকিয়ে আছে। পার্লারে সবাই যখন সায়রার সৌন্দর্যের প্রশংসা করছে তখন মৈত্রীও বলল, ” দারুণ লাগছে ভাবীকে৷ সায়রা ভাবী সত্যিই অনিন্দ্য সুন্দর একজন মানুষ।”

“হু এজন্যই তো ইরশাদ ভাই…”
নিপা কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই তার হাতে চিমটি কে-টে কথা ঘুরিয়ে ফেলল জুয়েনা। এদিকে সায়রারও শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেছে ভয়ার্ত এক স্রোত। নিপা কি বলতে যাচ্ছিল এখনই! চোখ বন্ধ করে নিয়ে এমনই ভাবছিলো সায়রা আর জুয়েনা বলে,
“হু এজন্যই ইরশাদ, অন্তু ইমরানকে বউপাগল বলে ক্ষে-পা-য়। সায়রার জন্য তো বেশ পাগল আমার দেবরটা।”

জা’য়েরা ঠিক যতখানি কথার আড়াল তুলল ততোটা কার্যসিদ্ধি হয়নি তাদের৷ মৈত্রী বাইশের বুদ্ধিসপ্পন্না তরুণী সে আন্দাজ করেই নিলো তার স্বামী আর মেজো জা’য়ের মধ্যে কিছু একটা আছে অথবা অতীতে ছিল। কিন্তু সেই অতীতটা নিজের মত ভাবতে গিয়ে কেমন গা গুলিয়ে উঠলো তার। মনে মনে প্রার্থনা করলো তার ভাবনা যেন ভু-ল হয়। চার বউয়ের সাজ প্রায় একই সময়ে শেষ হয়েছে। মৈত্রী এবার খোঁজ করল নোরার কতটুকু হয়েছে। তারা চার জন একই ফ্লোরে থাকলেও নোরা ছিল অন্য ফ্লোরে। নোরার কথা জানতে চাইলে একজন এসে জানালো নোরা পার্লারে নেই। সে একটু আগেই শপিংয়ে গেছে। মৈত্রীসহ বাকিরাও বেশ অবাক হলো। মেয়েটা তাদের কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল! মৈত্রী ফোন বের করে প্রথমে নোরাকে কল করতেই জানালো সে অন্য পার্লারে গেছে ময়ূখের সাথে। বরের সাথে কনে গেছে এখানে কারো ভাববার কিছু নেই বলেই মনে করলো সবাই৷ তারা এবার সরাসরি কনভেনশন হলে চলে গেল।

হলের ভেতর আত্মীয় সমাগম ঠিক ইরশাদের বৌভাত অনুষ্ঠানের মতই। ফখরুল সাহেব বড় অল্প সময়েই নিজের জ্ঞাতিগুষ্ঠি, ময়ূখের নানাবাড়ি সবাইকে দাওয়াত করেছেন। আবরার খন্দকার কাল রাতে এসেছে পরিবার নিয়ে একদমই মেহমান সেজে। খাওয়া-দাওয়ার পর আবার চলেও যাবেন। ইরিনের এ নিয়ে জো-র জ-ব-রদস্তি নেই তবে মেহের মায়ের শরীরের কথা ভেবে তিনি থাকতে বলেছিলেন। মেহের মুখের ওপর বলে বসলো, তার সামনের মাসেই পরীক্ষা এখানে ন-ষ্ট করার মত সময় তার হাতে নেই। একমাত্র ইরশাদ বুঝেছিল এমন ধাঁচের কথার পেছনের কারণটা তাই ইচ্ছে করেই মা’কে থামিয়ে দিয়েছে সে। হল জুড়ে যখন মেহমানের কোলাহল তখন কনে নেই সেখানে। ময়ূখ আর ইরশাদ এক সঙ্গেই তৈরি হয়ে এসেছে৷ মৈত্রী এসে ইরশাদের পাশে পাশেই আছে। অনেকটা সময় বিলম্ব করে ময়ূখের ফোনে বার্তা এলো নোরাকে আনতে যাওয়ার তার সাজগোছ শেষ হয়েছে বলে। ময়ূখ বিউটি পার্লারের নিচে দাঁড়াতেই নোরা এগিয়ে এলো তার কাছে। স্বাভাবিক মুখশ্রী হঠাৎই বদলে শ-ক্ত হয়ে উঠেছে ময়ূখের। পরশুই তো ময়ূখ তাকে সাথে নিয়ে তারই পছন্দে লেহেঙ্গা কিনল অথচ মেয়েটা তা পরেনি৷ কালো লং ব্যাকলেস গাউন, গলার সামনেটাও মোটামুটি বড় যার দরুণ ক্লিভেজ স্পষ্ট, গায়ে ইরিনের দেওয়া কোন গয়নাই সে ধারণ করেনি। হোয়াইট ডায়মন্ড নেকপিস, হাতে সেই রিংটাও নেই যেটা পরশু ইরিন এনগেজমেন্ট হয়নি বলে এমনিতেই পরিয়েছিল। ময়ূখের মে-জা-জ অল্পতেই যেমন গরম হয় তেমনই সে তা নিয়ন্ত্রণেও রাখতে পারে। কিন্তু এ পর্যায়ে তার তিল পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।

“কেমন লাগছে আমাকে?”
হাস্যজ্জ্বল মুখে জানতে চাইলো নোরা।

“এসব কি পরেছে?”

“ভালো লাগছে না!”

“নোরা, এটা ইউরোপ-আমেরিকা না সে কথা কি তুমি ভুলে গেছো?” বোধকরি, রা-গ সংবরন করতেই ময়ূখ দাঁতে দাঁত চে-পে বলল কথাটা। নোরাকে নিতে আসবে বলে আব্বুর গাড়িটা নিয়ে এসেছিল সে পকেট থেকে চাবিটা নোরার দিকে ছুঁ-ড়ে মারল। নোরাও এক থাবায় সেটা মুঠোবন্দী করে নিতেই ময়ূক আবার মুখ খুলল, ” এক্ষুনি এই মুহূর্তে বাড়ি গিয়ে ড্রেস বদলে ঠিক ত্রিশ মিনিটের মধ্যে হলে পৌঁছাবে। এন্ড ইউর টাইম স্টার্ট নাউ।”

নোরা কিছু বলবে তার আগেই সে একটি খালি রিকশা পেয়ে উঠে বসলো তাতে। নোরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় দাঁড়িয়ে রইলো কিছু সময়। পার্সের ফোন বেজে উঠতেই তার হুঁশ হলো সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে কিছু চোখ সানন্দে উপভোগ করছে বিদেশীনিরূপি পশ্চিমা পোষাক পরিধেয় মেয়েটির দেহ৷ নোরা অনেকটা সময় পার করে তবেই হলে পৌঁছেছে তবে সে বাড়ি যায়নি। তার সাথেই তো ছিল রিসেপশনের জন্য কেনা লেহেঙ্গাটা সেটাই আবার পরেছে গাড়িতে। মনে মনে বুঝি একটা পণও করে বসলো। ময়ূখকে এই দিনটির জন্য শা-স্তি তাকে পেতেই হবে এমনটাই তার আপাত ভাবনার বিষয়। হলে তাকে দেখে সবাই বিভ্রান্তিতে পড়লেও ইরিন বুদ্ধিমতি সে তৎক্ষনাৎ লোক সম্মুখে ময়ূখের একসাথে না আসার পেছনে একটা যুক্তি দাঁড় করিয়ে ময়ূখকে ফোনে ধরল। ময়ূখ এসে অব্দি চমৎকার হাসিখুশি ভাব বজায় রেখে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টেনেছে৷ সন্ধ্যা মুহূর্তে মৈত্রীই ইরশাদকে মনে করিয়ে দিলো নোরা চলে যাবে একটু পর তাই ময়ূখ আর নোরাকে একটু স্পেস দেওয়া দরকার। ইরশাদও তাই করলো; বাড়ি ফিরে আম্মুকে বলে ঘরের ভিড়ভাট্টা কমিয়ে দিলো। কিন্তু নোরা বা ময়ূখ কেউই সময়টুকু নিলো না নিজেদের করে। নোরা ঘরে ঢুকে প্রথমেই পোষাক বদলে জিন্স, ক্রপটপ তার সাথে হুডি পরে খুবই নরমাল হয়েছে। ময়ূখ শার্ট, কোট খুলতে খুলতে নোরাকে দেখলো। কিছুদিন আগেও নোরার দৃষ্টিতে সে অন্যকিছু দেখেছিল যা এখন আর নেই। তার বারংবার মনে হয় নোরা কোন সমস্যায় ভু-গছে৷ পাওয়ার লোভ এবং পেয়ে গেলে তি-ক্ত-তা বোধ করার সমস্যা অস্বাভাবিক কিছু না। বিজ্ঞানের ভাষায়ও এমন একটা মানসিক রোগ আছে কিন্তু নোরার আচরণ একেক সময় একেক রকম। ময়ূখ গায়ে টি শার্ট গলিয়ে নিজেও হুডি পরেছে। প্যান্ট বদলে বাড়িতে পরার একটা ট্রাউজার পরে পায়ে হাওয়াই চপ্পল। নোরাকে এয়ারপোর্টে ছাড়ার জন্য সে গাড়ি রিজার্ভ করলেও তা আর প্রয়োজন হয়নি তার আব্বুর জন্য৷ আবরার খন্দকার ছেলের ওপর রে-গে থাকলেও তার আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজনে অনেক কিছুই করেছেন তার মধ্যে একটা গাড়িও এনেছিলেন ঢাকা থেকে ড্রাইভারসহ। ময়ূখ প্রথমে রাখতে না চাইলেও প্রয়োজনের কয়েকদিনের জন্য রেখেছে। প্রয়োজন বলতে এই অনুষ্ঠানে এবং ইরশাদ -মৈত্রীকে নিয়ে সিলেটে যাওয়ার জন্যও প্রয়োজন। নোরা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো। গত কয়েকদিনে তাদের মাঝে পরিবর্তন বলতে শারীরিক সম্পর্ক করা আর দুজনের একটু আধটু যত্ন নেওয়াটাই ছিল বিশেষ৷ এই যাওয়ার মুহুর্তে ময়ূখের হঠাৎই মনে হলো তার স্ত্রী চলে যাচ্ছে। তার কি কিছু বলা উচিত নয় তাকে! অন্তত বন্ধুর মত কিছু ফেয়ারওয়েল ওয়ার্ডস কি তাকে দেওয়া যায় না! ময়ূখ যখন এমনটা ভাবছে তখন নোরা উল্টো ফিরে এসে তার ঠোঁট ছুঁয়েছে৷ ঘোর কে-টে-ছে বাঁধও ভে-ঙে-ছে ভেতরের। ময়ূখও এবার নিজের মাঝে জড়িয়ে বে-পরো-য়া চুমুতে ভরিয়ে দিলো স্ত্রীকে। হতে পারে দুজনই সাময়িক মোহে একে অপরের কাছে আ-ত্মস-ম-র্প-ণ করলো তবে এই করাই প্রকৃতির কিছু ছন্দ আপন সুরে বেঁধে নিলো নিজেদের।

নোরার ফ্লাইট ডিলে হয়েছে। সে প্লেনে চড়েছে রাত তিনটেয়। ময়ূখ পুরোটা সময় ওয়েটিং প্লেসে কা-টিয়েছে। নোরা আগেই ভেতরে চলে যাওয়ায় দুজন ছিল দু জায়গায় তবুও ময়ূখ বসেছিল৷ প্লেন রানওয়ে ছেড়ে আকাশ ছোঁয়ার পরই ময়ূখ ফিরেছে বাড়িতে আর তারই জন্য অপেক্ষায় রাত কে-টে-ছে ইরিনের। ময়ূখের জীবনটা যেন একা ইরিনেরই হাতে থাকা কোন ডাঙায় ছটফট করা মৎস্য। প্রতি মুহূর্তে কেমন অজানা এক আ-ত-ঙ্কে ডুবে আছে সে এই বুঝি মাছের প্রাণটা বেরিয়ে যাবে৷ আর তার প্রাণ যেতেই ইরিনে বুকটা খালি হয়ে যাবে। এ ভয় তো আগে কখনো ছিল না তার। হঠাৎ আসা ঝ-ড়ো হাওয়া সব কেমন নড়বড়ে করে গেল। ইরিন মনে মনে সেই ঝড়ো হাওয়াটার উৎসটা প্রতিনিয়ত খুঁজে বেড়াচ্ছে আর ভেতরে ভেতরে কেমন গু-মো-ট হয়ে আছে। ময়ূখ বাড়ি ফিরে ইরশাদকে কল করতেই যাচ্ছিলো তখন চোখে পড়লো দরজার নিচে একটুখানি আলোকরেখা। কেউ কি জেগে আছে! কৌতূহলী হয়ে দরজায় খুব ধীরে টোকা দিলো দু’বার। মুহূর্ত ব্যয় না করে ইরিন দরজা খুলতেই ময়ূখ বিষ্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো, “আম্মা ঘুমাওনি?”

“তোরা কেউ জেগে থাকলে আমার ঘুম আসে না।”

ময়ূখ বিচলিত হয়ে আম্মার চোখ মুখ দেখলো। কেমন ফ্যাকাশে লাগছে আম্মাকে যেন শরীরে র-ক্ত-বিন্দু শূন্যের কোঠায়। ময়ূখ দু হাতে আম্মাকে ধরে সোফায় গিয়ে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “কি নিয়ে এত চি-ন্তা করো বলো তো! কতগুলো দিন ধরে আমি একটু বেখেয়াল হতেই তোমার শরীর এমন কেন হলো?”

“বেখেয়াল কেন হলি বাবু?” প্রশ্নটা করতে গিয়ে কা-ন্না-য় গলা কেঁ-পে উঠল ইরিনের। কান্নার ঢেউ যে তার গলদেশ ছাপিয়ে আসতে চাইছে তা বুঝতেই আম্মাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।

“কি হয়েছে আম্মা তুমি এত ভয় পাচ্ছো কি নিয়ে। এই যে আমি তো তোমার কাছে আছি বলো কি হয়েছে তোমার?”

“তোকে আমি এই এতটুকু থাকতে বুকে তুলে নিয়েছি। তোর হাসি দেখলে আমার খুব আনন্দ হয় বাবা বিশ্বাস কর তোর চোখ এমন মৃ-ত মাছের মত সাদা দেখার পর থেকেই আমার আত্মা কাঁদে। মনে হয় ম-র-ণ এসে দাঁড়িয়ে আছে দরজায়।” বলতে বলতে এবার হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো ইরিন। ময়ূখ আম্মাকে বুকের সাথে মিশিয়ে শা-ন্ত করতে চাইলো। ততক্ষণে ইরশাদ, মৈত্রী আর ফখরুল সাহেব তিনজনই নিজ নিজ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। ইরশাদের ঘর থেকে বসার ঘরের আওয়াজ কুব একটা শোনা যায় না। ফজরের সময় প্রায় হয়েই এসেছে বলে ইরশাদের ঘুম হালকা হয়েছে আর তাই বোধহয় তেমন কান্নার আওয়াজটা কানে এসেছে। তড়িঘড়ি করে ইরশাদ বিছানা ছাড়তেই মৈত্রীরও ঘুম ভে-ঙে গিয়েছে। ইরশাদের অস্থি-র হয়ে বের হওয়া দেখে সেও বেরিয়ে এসেছে বাইরে। ইরিনের কান্নার অর্থ বোধগম্য হতেই সবাই স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। সময় দিলো তাকে কেঁ-দে হালকা হোক। বাড়ির সকলেরই জানা ইরিনের বর্তমান মানসিক অবস্থা। ফজরের নামাজের পর সবাই আবারও ঘুমের জন্য যার যার বিছানায়। ইরশাদও সবে শুয়েছে বিছানায় ভেবেছিল মৈত্রী এবার শুয়ে পড়বে কিন্তু না সে আর শোয়নি। বারান্দার দরজা খুলে নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়ালো। ভোরের আলো তখনও কুয়াশার বেড়াজালে আটকে আছে দূর আকাশেই। মৈত্রী কুয়াশায় দৃষ্টি রেখে ভাবছে কাল রাতের কথা৷ সে কি খুব বেশিই রিয়াক্ট করে ফেলেছিল! নাকি উচিত ছিল খোলাখুলি মনের ভাবনাটা ইরশাদের সামনে উপস্থাপন করা! ভেবে ভেবে কোন কূল পায়নি সে তার আসলে কি করা উচিত। রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মৈত্রী যখন তার গহনা খুলছিল তখন ইরশাদ ঘরে ঢুকেছে। গায়ের কোট খুলে চেয়ারে রেখে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে দাঁড়িয়েছিল আয়নার সামনে মৈত্রীর ঠিক পেছনে। মৈত্রীর হাত তখন গলার জড়োয়া খোলার চেষ্টায়৷ ইরশাদ তার হাত দুটো সরিয়ে নিজেই খুলে দিলো জড়োয়ার হুক৷ মাথা নিচু করে মেত্রীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে জানায় কতোটা সুন্দর লাগছে আজ তার অর্ধাঙ্গিনীকে। সৌন্দর্যের প্রশংসা করে আকস্মিক ঠোঁট ছোয়ায় মৈত্রীর ঘাড়ে। ঠিক তখনই মনে পড়ে নিপার বলা কথাটা, “হু এজন্যই তো ইরশাদ ভাই…” নিপার বলা অর্ধকথাটার পূর্ণরূপ কি হতে পারে তা অবচেতন মন নিজেই সাজিয়ে নিয়েছিল ইরশাদ তার ভাবীর প্রেমে পড়েছিল! অথবা ভাবীর সৌন্দর্যে মত্ত হয়ে কোন অ-বৈ-ধ সম্পর্কও করেছিল! ঠিক এই ভাবনাতেই তার গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো আবারও। ইরশাদকে আচমকা সরিয়ে দিলো নিজের কাছ থেকে আর ইরশাদ হতভম্ব। যখন সে সম্বিৎ ফিরে পেল তকন মৈত্রীকে প্রশ্ন করেও কোন জবাব পায়নি কেন সে এমন করলো। ঘুমাতে গিয়ে যখন আবার ইরশাদ তাকে নিজের দিকে টেনে নিল তখনও টের পেল মৈত্রী অনুভূতিহীনের মত হয়ে আছে। নিজের কোন ভুল খুঁজে পেল না ইরশাদ কেন তার স্ত্রীর এমন আচরণ৷ মৈত্রীর এমন অবজ্ঞা যেন তার পৌরুষেয় আ-ঘা-ত করলো। ঠিক সেজন্যই আর ইরশাদ কোন কথা বলছে না মৈত্রীর সাথে।

চলবে
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here