#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_৭(বোনাস পর্ব)
১২.
আরাভ রাইকে অনেক বার ডাক দিলেও রাই তাকে পাত্তা দিলোনা।তার মন পড়ে আছে মিটিং রুমে।এদিকে নাতাশা শুদ্ধকে বলছে,
“তুমি এখানে?”
“হুম,রাই যাতে একা ফিল না করে তাই আসলাম।”
“রাই,রাই,রাই!ওই মেয়ের ভেতর কি এমন আছে যা আমার ভেতর নেই?ওর জন্য আমি আজ আরাভকে হারাতে বসেছি।এরপর তোমাকেও হারিয়েছি।আর শুদ্ধ তুমি কীভাবে পারলে আমাদের সম্পর্কের কথা ভুলে ওকে বিয়ে করতে?”
“ফার্স্ট অফ ওল,ওই মেয়েটার আত্মমর্যাদা অনেক বেশি।সে বুদ্ধিমতী!আর তোমার সাথে তার পার্থক্য জানতে চেয়ে নিজেকে ছোট আরো ছোট করোনা,নাতাশা।রাই অনেক কন্ট্রোলড একটা মেয়ে মানুষ।সে আজ পর্যন্ত তোমায় কিছু বলেনি।এর মানে এই না তোমাকে ও কখনো কিছুই বলবেনা।আর আরাভ তোমার কখনো ছিলোই না।আর তুমি যেভাবে আরাভের সাথে বেডে যেতে বিয়ে না করেই!ওটার সাথে আমার আর রাইয়ের সম্পর্কের তুলনা দিয়ে লাভ নেই।কারণ রাই আমার বিয়ে করা বউ।” কথাগুলো একনাগাড়ে বলেই শুদ্ধ মিটিংরুম থেকে বেরিয়ে গেল।
কিন্তু নাতাশা হাল ছাড়লোনা।সে শুদ্ধকে পেছনে দিয়ে এসে জরিয়ে ধরলো।রাই কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো।এই দৃশ্য দেখে সে শুদ্ধ আর নাতাশার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।শুদ্ধ ভাবলো হয়তো রাই তাকে ভুল বুঝবে।কিন্তু না!রাই এসে নাতাশাকে শুদ্ধের থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।নাতাশা রাইয়ের ধাক্কার প্রতিবাদে ওকে থাপ্পড় দেয়ার আগেই রাইয়ের শক্ত হাতের থাপ্পড়ে নাতাশা ছিটকে পড়ে গেল।
“এটা তোমার অতিরিক্ত লোভের জন্য।” এরপর নাতাশার কাছে গিয়ে রাই আরো দুইটা থাপ্পড় দিলো আর বললো,
“এ ইদুটো শুদ্ধের সাথে ফ্লার্টিং করার জন্য আর তাকে ধোকা দেয়ার জন্য।”
এবার রাই নিজের পা থেকে তার পারসোনাল গানটা বের করে ট্রিগার চাপতে যাওয়ার আগেই শুদ্ধ রাইয়ের হাত ধরে বললো,
“ছেড়ে দাও,রাই।”
শুদ্ধের কথায় রাই নাতাশাকে ছেড়ে দিলো।নাতাশাও রাইয়ের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে পায়ের হিল খুলে ভোঁ দৌড়।রাই নাতাশার এমন কান্ডে হাসতে লাগলো।সে শুদ্ধের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাসায় যেতে হবে।ফলো মি!”
শুদ্ধ আর রাই রাইয়ের বাসার সামনে পৌছালো এক ঘন্টার পথ অতিক্রম করার পর।শুদ্ধের সামনে থাকা প্রাসাদের মত বাড়িটায় শুদ্ধ আর রাই প্রবেশ করলো।শুদ্ধ এর থেকেও বেশি অবাক হলো আশেপাশে থাকা কয়েকটা দশতলা বিল্ডিং দেখে।সে রাইকে জিজ্ঞেস করলো এগুলো কি?
রাই বললো,”এখানে আমার বডিগার্ডর থাকে আর পড়ালেখা করে ইত্যাদি।”
“পড়ালেখাও করে?”
“হুম,আমি ওদের কাছ থেকে ওদের বার্থ রাইটস ছিনিয়ে নিতে পারিনা।ওদের বেতন দেওয়া হয়।ওখানে থেকেই ওরা ওদের পড়ালেখার ফি দেয় আর খাবারের টাকা রেখে বাকিটা পরিবারে দেয়।তোমাকে বলে রাখছি কারণ আমার জীবনের ঠিক নেই!কখন কি হয়ে যায় তা তো আর বলা যায় না।”
শুদ্ধ রাইয়ের কথা শুনে তার বেকুবের মত তাকিয়ে রইলো।রাই বুঝতে পারলো তার কথাগুলো শুদ্ধের মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছে সব।তাই সে শুদ্ধকে নিয়ে একটা বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করলো।নিচে সবাই সবার যে যার মত পড়ছিলো।রাইকে আসতে দেখেই সবাই দাঁড়িয়ে গেল।
রাইয়ের বিষয়টা ভালো না লাগায় সে সবাইকে বসতে বললো।এরপর শুদ্ধ সবাইকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট তো কেউ মেডিকেল সেক্টরে পড়ছে।শুদ্ধ এগুলো দেখছে আর রাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে।মেয়েটা বড্ড সংবেদনশীল সবকিছুতেই।
হঠাৎ রাইয়ের সামনে একটা গার্ড এগিয়ে আসতে লাগলো।ছেলেটার নাম ইউজিন।সবার নজর এখন ইউজিনের দিকে নিবদ্ধ।যে ইউজিন রাই ম্যামের কাছে কেন যাচ্ছে?
ইউজিন রাইয়ের কাছে এসে রাইকে কিছু ফাইল দেখালো।রাইও ভালো মত দেখলো।ছেলেটার মায়ের সেকেন্ড স্টেজ ক্যান্সার।সময়মত অপারেশন না করতে আরো বড় কিছু হতে পারে।তাই রাই তাকে আশ্বস্ত করে বললো,
“কালকে এসব ফাইল নিয়ে হেল্প এন্ড ফাউন্ডেশনে যাও।আমি আজকেই ওদের সাথে কথা বলে রাখবো।চিন্তা করোনা।”
রাইয়ের কথা শুনে ইউজিনের চোখের পানির বাধ ভেঙে গেল।ইউজিন বড্ড ভয়ে ছিলো যদি রাই ম্যাম ইতালিতে না আসে তার মায়ের অপারেশনের আগে?তখন কি হবে? তার পক্ষে তো এতগুলো টাকা জমা করা নিতান্তই অসম্ভব ছিলো।
রাই এবার সবাক্কে বিদায় জানিয়ে শুদ্ধকে নিয়ে তার বাড়িতে চলে এলো।
“রাই?”
“হুম।”
“কিছুনা।”
“আচ্ছা।”
রাই এবং শুদ্ধের মাঝে আর কোনো কথা হলোনা।খাবার টেবিলেও তারা চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়লো।রাই শুদ্ধকে নিজের রুম দেখিয়ে দিয়ে ধীর পায়ে বাড়ির রুফটপে ওঠে পড়লো।রাইয়ের আজ ভীষণ বাজে লাগছে মাইগ্রেনের ব্যাথায়।সে যে কাউকে ওষুধ দিতে বলবে সে শক্তিটাও নেই রাইয়ের মাঝে।অগত্যাই রাই ছাদে থাকা দোলনায় নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
১৩.💜
রাই মনে করতে লাগলো,রাইয়ের জীবনে এই কয়েকদিনের ভেতর অনেক অপ্রত্যাশিত কিছুই ঘটে গেছে।পরিবার,এক্সিডেন্ট,ভালোবাসা আরো অনেক কিছু।রাইয়ের ঘোর কাটলো ফাইজার কলের শব্দে।
“রাই?”
“হুম,বলো ফাইজা।”
“তুমি কয়েকদিনের মধ্যে আবার আসতে পারবে?”
“হুম,কেন?কিছু হয়েছে?সবাই ঠিক আছে?”
“সায়ান ভাইয়ার বাবা আজ এসে বিয়ের ফাইনাল ডেট চারদিন পড়ে দিয়ে গেছে।”
“এত দ্রুত?”
“আমিও জানিনা!আব্বু বোঝানোর চেষ্টা করেছে অনেকবার।কিন্তু আঙ্কেল বললো,আমার যদি তার ছেলেকে ভালো না লাগে তাহলে বলে দিতে!এভাবে আর কত?তার ছেলের বয়স হচ্ছে।”
“এরপর বাবাই কি বলেছে?”
“আব্বু আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো আমি সায়ান ভাইয়াকে পছন্দ করি নাকি!”
“আর তুমি নিশ্চয়ই হ্যাঁ বলেছ?”
“হুম!তুমি কীভাবে জানলে?”
“গড হেল্প মি,প্লিজ।দিস গার্ল ইজ আ ষ্টুপিড।”(বিড়বিড়য়ে)
“রাই?হ্যালো।”
“আচ্ছা,আমি কাজ শেষ করেই ফিরে আসার ট্রাই করবো।”
“প্রমিস?”
“প্রমিস।”
ফাইজা রাইয়ের কল কেটে দিলো।রাই এবার হেল্প এন্ড ফাউন্ডেশনের মালিকের সাথে কিছুক্ষণ ইউজিনের মায়ের ব্যাপারে কথা বলে নিজের রুমে চলে আসলো।
শুদ্ধের রুমের দরজা ধাক্কা দেওয়া ছিলো বলে রাই তাকে একবার দেখে নিজের রুমে চলে গেল।সেখানে গিয়ে সে শুদ্ধকে কিছু জিনিস লিখে ইমেইল করলো।শুদ্ধ বাংলাদেশে গিয়েই এই জিনিসগুলো দেখতে পাবে।
রাই লেখাগুলো লিখে নিজের ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিলো।এরপর খুজে খুজে হাইপাওয়ারের কয়েকটা ঘুমের বড়ি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে রাইয়ের ঘুম ভাঙলো শুদ্ধের ডাকে।
“এই রাই?উঠবে না?”
“উম!!”
রাই আড়মোড়া হয়ে উঠে বসলো।এরপর রাই আর শুদ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে খেয়ে নিলো।রাই তার ড্রাইভারকে ডেকে শুদ্ধকে আশেপাশটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে বললো।শুদ্ধ বেরিয়ে গেলে রাই বাসায় বসে সায়ানের বায়োডাটা ঘাটতে শুরু করলো।এই ছেলেটার ব্যাপারে এমন কিছু আছে যা রাইকে বারবার ভেতর বিপদ সংকেত দিচ্ছে।শেষ পর্যন্ত কিছুই না পেয়ে রাই বসু সাহেবকে কল দিয়ে সায়ানের খোজ নেওয়ার জন্য তাকে বাংলাদেশে পাঠালো।দুইদিন কঠিন পরিশ্রমের পর বসু সাহেব রাইকে এমন কিছু সংবাদ দিলো যা শুনে রাই কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল।তার মানে সায়ান এতদিন যাবত এই কারণের ফাইজার আশেপাশে ঘুরেছে?আর তার পরিবারের কেউ টেরও পায়নি।
চলবে,