#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:১৮
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
—প্রণয় ভাই রহিমা বেগম রে ধরে আনছি।সজীব আর সুজন বাইরে উনার পাশে আছে।
রিফাত এর কথায় প্রণয় তাকায়।রিফাত এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—উনাকে আমার কেবিনে নিয়ে আয়।
—আচ্ছা ভাই।
বলেই রিফাত বের হয়ে যায়।প্রণয় চেয়ারে মাথা সহ শরীর হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।প্রণয় জানতে পেরেছে লামিয়া সুলতানা বাসায় আসার কথা রহিমা বেগম রাফসান মির্জার লোক দের জানিয়েছে। তাই রহিমা বেগম কে নিয়ে আসার জন্য বলেছিলো।
দরজায় নক হতেই প্রণয় অনুমতি দেয় ভিতরে আসতে।রিফাত,সজীব,সুজন রহিমা বেগম কে নিয়ে প্রণয়ের কেবিনে ঢুকে।প্রণয় একটু টান টান হয়ে চেয়ারে বসে।রহিমা বেগমের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা টা নিচু করে ফেলে।রিফাত কে কিছু একটা ইশরা করতেই রিফাত রহিমা বেগম কে একটা চেয়ারে বসায়।তারা তিন জনে চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।প্রণয় এসে রহিমা বেগমের সামনে একটা চেয়ারে বসে।টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে রহিমা বেগমের হাতে দেয়।
তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাস টা নিয়ে এক নিশ্বাসে সব টুকু পানি পান করে। সুজন রহিমা বেগমের হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে রেখে আবার এসে পাশে দাঁড়ায়। রহিমা বেগমের চোখে ভ’য়।মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ভ’য়ে।প্রণয় মুচকি হেসে রহিমা বেগম কে বলে,
—আসসালামু আলাইকুম!আন্টি ভালো আছেন?
প্রণয়ের এহেন আচরণে রহিমা বেগম চোখ তুলে তাকায়। কিছু বলে না।প্রণয় এর সালামের উত্তর ও নেয় না।প্রণয় এর এমন শান্ত কথা বরাবরই রিফাত এর বিরক্ত লাগে।তার এক কথা,” অন্যায় কারীর সাথে কেন এত শান্ত কথা বলবে প্রণয় ভাই?কয়েক ঘা দিয়ে দিলেই তো হয়”।
রিফাত বিরক্ত টা এবার প্রকাশ করে প্রণয় কে বলেই ফেলে,
—প্রণয় ভাই এই মহিলার সাথে এত মশলা মাখিয়ে কথা বলার কি দরকার? ঠাস করে একটা দিয়ে দিবেন দেখবেন সব সত্যি বের করে দিবে মুখ দিয়ে।
—আহ্! রিফাত শান্ত হো।এত মাথা গরম করিস কেন?আমি কথা বলছি তো।আর তুই উনার গায়ে হাত তুলবি কেন?উনাকে এনেছি মহিলা গার্ড দিয়ে, যদি মা’রতে হয় মহিলা গার্ড দিয়েই মা’রবো।
—সরি ভাই!
বলেই রিফাত চুপ করে যায়।প্রণয় আবার রহিমা বেগমের দিকে চোখ দেয়।বলে উঠে,
—তা আন্টি, লামিয়া সুলতানা কে মা’রার কি কারণ?
—……..
—আপনি কি কথা বলবেন নাকি আমি অন্য কোনো পথ অবলম্বন করবো আপনি কথা বলার জন্য?
প্রণয়ের কথা এবার অনেকটা গম্ভীর শুনা গেলো। রহিমা বেগম প্রণয় এর দিকে তাকায়।প্রণয় তার দিকেই রা’গ মিশ্রিত গম্ভীর চেহারা নিয়েই তাকিয়ে আছে।প্রণয় এবার ধ’মক দিয়ে বলে,
—কি হলো বলছেন না কেন?
রহিমা বেগম ঈশৎ কেঁপে উঠে বলে,
— ব..বলছি।
—বলুন। আমিও শুনছি।
—আপনারা যেই দিন আমাদের গ্রামে আসছেন।তার পরের দিন – ই গ্রামে কিছু মানুষ আসে।তখন রাত আটটা বাজে।আমার ঘরের দরজা নাড়তেই আমি দরজা খুলে দিই।দরজা খুলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে তিন চারটা ছেলে আমার ঘরে ঢুকে পড়ে।আমার স্বামী মুদি দোকান দার।উনি বাজারে ছিলো। আমি ঘরে একাই ছিলাম। লোক গুলো কে দেখে ভ’য় পেয়ে গেছিলাম। সব গুলো লোকের -ই মুখ ঢাকা ছিলো। আমার মাথায় গু’লি ধরে একটা ছেলে আমাকে লাবণ্য দের ঘরের কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি তাদের কে লাবণ্য দের ঘরে নিয়ে যায়।কিন্তু বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দেখে তারা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো “লাবণ্য আর ওর মা কোথায়? ” আমি তখন বলে ছিলাম যে,আপনারা তাদের দুই জন কে কই জানি নিয়ে গেছেন। তখন ওরা….
রহিমা বেগম এত টুকু বলতেই সজীব থামিয়ে দিয়ে বলে,
—ওয়েট ওয়েট। লাবণ্য কে যখন আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন রাত দশটা বাজে।আপনি কিভাবে দেখলেন? আপনার তো দেখার কথা না।
রহিমা বেগম আবার বলা শুরু করে,
—সেই দিন আপনারা যখন লাবণ্য আর লামিয়া ভাবিরে নিয়া গেছিলেন আমি পিছন থেকে দেখছি।আপনারা বের হওয়ায় সময় ও দেখছি।তখন আমার স্বামী বাজার থেকে আসছে।উনি ঘরের ঢুকার পর আমি দরজা বন্ধ করতে গেলেই দেখি আপনারা লাবণ্য রে কোলে করে নিয়ে কই যাইতে ছিলেন। ভাবছিলাম সবাই রে ডাক দিবো। কিন্তু তখন দেখি লামিয়া ভাবি বড় সাহেব(প্রণয়) এর সাথে কথা বলতে বলতে ঘরে তালা দিয়ে বের হচ্ছে।তখন বুঝতে পারলাম হয়তো লামিয়া ভাবির সম্মতি আছে যাওয়ার আর লাবণ্য ও এর হয়তো চিকিৎসা এর জন্য নিয়ে যাইতেছেন। আমার ঘর লামিয়া ভাবির ঘরের পিছনে। তাই আপনারা আমাকে খেয়াল করেন নি।
রিফাত রহিমা বেগম কে থামতে দেখে বলে উঠে,
—তারপর?
—তার পরের দিন -ই ওই লোক গুলো আসে।আমাকে হুমকি দিয়ে যায়। বলেছে লামিয়া ভাবি ঘরে আসলে যেন উনাদের জানায়।নাহলে আমার স্বামী কে মে’রে ফেলবে। এটা ও বলেছে।দরকার হলে টাকা দিবে তারা।তবুও যেন তাদের কে লামিয়া ভাবির খবর দিই।সেই সময় টাকার কথা শুনে লোভে পড়ে যায়।স্বামীর মুদি দোকান থেকেও বা কত টাকা আয় হয়।দিন এনে দিন খাওয়ায় মতো।তাই তাদের কথায় রাজি হয়ে যাই।পরে একদিন লামিয়া ভাবি বাড়ি আসে।বাড়ি এসে প্রথমে আমার সাথে দেখা করে কথা বার্তা বলে। উনি ঘরে যাওয়ার সাথে সাথে আমি ওই লোক গুলো কে ভাবির আসার কথা জানিয় দিই।তার কিছুক্ষণ পরেই তিনজন মাক্স পরা লোক আসে।লামিয়া ভাবির ঘরে যায়।কিছুক্ষণ পরেই লামিয়া ভাবির ঘর থেকে জিনিস পত্র পড়ার শব্দ এ আমি উনার ঘরে যায়।কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ থাকে তাই আমি উনার ঘরে পিছন সাইডের টিনের একটা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে তাকায়।তাকাতেই আমার চোখ দুটো বড় হয়ে সারা শরীর এর পশম দাঁড়িয়ে যায়।একটা লোক ঘরের মধ্যে কিছু একটা খুজছিলো।আরেকজন লামিয়া ভাবির হাত দুটো পিছন থেকে এক হাত দিয়ে মুছড়ে ধরেছিলো। অন্য হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে বার বার জিজ্ঞেস করেছিলো লাবণ্য কোথায়।কিন্তু উনি স্বীকার করেনি।বলেনি তাদের। হঠাৎ করে কোথা থেকে সবুজ পাঞ্জাবী পরা একটা লোক ছু’রি হাতে নিয়ে এসেই লামিয়া ভাবির গলার রগ কে’টে দেয়।আমি আমার নিজ চোখে দেখেছি গলা কাঁ’টা মুরগির মতো লামিয়া ভাবি দাপাদাপি করছিলো কিছুক্ষণ। এর পরেই উনি নিস্তেজ হয়ে যায়।গলা দিয়ে র’ক্ত এর স্রোত বয়ে যায়।আমি ভাবি নি ওরা লামিয়া ভাবি কে মে’রে ফেলবে। লামিয়া ভাবি সব সময় আমাকে বোনের মতো ভাবতো। আর আমি লোভে পড়ে উনাকে….
এত টুকু বলেই হু হু করে কেঁদে উঠে রহিমা বেগম।প্রণয়,রিফাত,সজীব,সুজন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।তাদের শরীর এর পশম গুলো দাঁড়িয়ে গেছে।কি কষ্ট কর মৃ’ত্যু দিয়েছিলো।
রিফাত নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
—লোক তিন জনের মুখ দেখে ছিলেন আপনি?
—জি না।উনাদের মুখে মাক্স ছিলো।
এতক্ষণে এবার প্রণয় বলে উঠে,
—আচ্ছা ছু’রি টা কোথায়? উরা নিয়ে গেছে নাকি রেখে গেছে কোথাও লুকিয়ে?
রহিমা বেগম প্রণয় এর দিকে একবার তাকায়।আবার চোখ নামিয়ে বলে ফেলে,
—নাহ। ছু’রি নিয়ে যায়নি।আমার কাছে রেখে গেছে।
প্রণয় অবাক হয়ে বলে,
—আপনার কাছে রেখে গেছে?
—হ্যাঁ! লামিয়া ভাবি মা’রা যাওয়ার পর আমি ও ঘরের পিছন থেকে চলে আসি। ওরা ও তিন জনে আমার ঘরে আসে।আমাদের এই দিকে আমরা ঘর এর মানুষ। আমি,লামিয়া ভাবি,আর ও একজন ছিলো। কিন্তু উনি সেই সময় মানুষের বাড়িতে কাজ করতে যায় তাই কেউ ওই তিন জন লোক কে দেখেনি।তারা র’ক্ত মাখা হাত,আর ছু’রি নিয়ে আমার ঘরে আসে।তাদের দেখে আমি ভ’য় পেলেও কিছু বলি না।ওরা আমার ঘরের থেকে পানি নিয়ে হাত আর ছু’রি টা ধুয়ে নেয়।ছু’রি টা আমার হাতে দিয়ে বলে লুকিয়ে রাখতে কোথাও। ছু’রি টা লামিয়া ভাবির ঘর থেকেই নিয়ে ছিলো ওরা।এই ছু’রি নিয়ে এখন গ্রাম থেকে বের হওয়া সম্ভব না।কেউ একটু দেখে ফেললে সন্দেহ হতে পারে।তাই আমাকে ছু’রি টা রাখতে বলেছে।আর মুখ বন্ধ রাখতে বলেছে।তারা এটা ও বলেছে,পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলে ও আমি যদি মুখ বন্ধ রাখি তাহলে এক লাখ দিবে টাকা।টাকার লোভে কাউকে কিছু বলিনি মুখ বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু আপনারা জেনে গেলেন কিভাবে?
রহিমা বেগমের প্রশ্নে প্রণয় উত্তর দেয় না।ক্রুর হাসে।তার এই হাসির আড়ালে হয়তো অন্য কোনো সূত্রপাত আছে।
🌸🌸
বিরহজনিত মন নিয়ে রাস্তায় একা একা হেটে বাড়িতে আসছে জুরাইন। স্কুল থেকেই ফিরছে জুরাইন। পাখির জন্য মন টা তার একটু বেশিই আনচান আনচান করে।গরম তেলে পানি দিলে যেমন ছ্যাত করে উঠে ঠিক তেমনি পাখির কথা মনে পড়লে তার মনটা যেন ছ্যাত করে উঠে।শত চেষ্টা করে পাখির কথা ভুলতে পারছে না সে।
হঠাৎ তার কাঁধে কেউ হাত দিয়ে বলে,
—কেমন আছো জুরু?
জুরাইন তাকিয়ে দেখে পাখি তার কাঁধে হাত দিয়ে হেসে পা মিলিয়ে হাটছে।মুহূর্তেই জুরাইন এর চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে।পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,
—এত দিন কোথায় ছিলে তুমি পাখি?
—নানু বাড়ি গিয়েছিলাম।
—পাখি তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো । অনেক দিন থেকেই বলবো বলবো করে বলা হয়ে উঠে না।
—হ্যাঁ বলো।
—পাখি ইয়ে মানে….
—কি ইয়ে মানে করছো.?বলে ফেলো।
জুরাইন কিছুটা সাহস নিয়ে অকপটে বলে ফেলে,
—পাখি আই লাভ ইউ!
জুরাইন এর কথায় পাখি ভ্রু কুঁচকায়। সহসায় কিছু বলে না।কিছুক্ষণ থেমে বলে,
—শুন জুরাইন তুমি এসব প্রেম ভালোবাসার কিছুই বুঝো না।তুমি কেন আমি নিজেও বুঝি না এসব প্রেম ভালোবাসার মানে ঠিক মতো।আর তু….
পাখি কে কথা সমাপ্ত করতে না দিয়ে জুরাইন সহাস্যমুখ নিয়ে বলে,
—সমস্যা নেই পাখি।আমি তো বুঝি।আমি তোমাকে প্রেম ভালোবাসার মানে বুঝিয়ে দিবো। আমার থেকেই তুমি প্রথম প্রেমের হাতেখড়ি নিবে নাহয়। আমি সত্যিই বুঝি প্রেম ভালোবাসা।বুঝি বলেই তো তোমার জন্য আমার হৃদয়ে ধুকপুকানি হয়।না হলে কি হতো?
পাখি বিরক্ত তে চোখ মুখ কুঁচকায়। রুঢ় কণ্ঠে বলে উঠে,
—আর তোমার এই ফা’লতু প্রেমের হাতেখড়ি হয়েছে ফালতু বন্ধু দের সাথে মিশে।
—এভাবে বলো না পাখি।
—জুরাইন শুন।তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো।এসব একদম বলবে না।আমি তোমার দুই বছরের বড়।তুমি মাত্র ক্লাস ফোরে পড়।এসব এর কিছুই বুঝো না।বন্ধু দের পাল্লায় পড়ে এসব করছো।
ঠান্ডা ভাবে কথা গুলো বলেই পাখি দ্রুত হেটে জুরাইন এর আগে চলে যায়।জুরাইন পাখির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠে,,
“প্রেমের সমাধি ভেঙ্গে
মনের শিকল ছিঁড়ে,
পাখি যায় উড়ে যায়
আমার হৃদয় ভেঙে যায়”।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব;১৯+২০
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
জান্নাত,ইশি,প্রান্তিক ভার্সিটি গেইটে দাঁড়িয়ে আছে।উদ্দেশ্য হচ্ছে জান্নাত আর ইশি কে রিক্সায় তুলে দিয়ে প্রান্তিক কোনো এক জায়গায় যাবে।প্রণয় এর কথা মতো জান্নাত নিকাব পড়ছে এখন।মুখশ্রী এর মধ্যে দুটো চোখ শুধু অনাবৃত। বাকি পুরো টা মুখ আবৃত পর্দার আড়ালে। গত পনেরো মিনিট থেকে তিন জনে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু কোনো রিক্সার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না এখনো। আজকে ভার্সিটি এর ভিতর থেকে বের হতে একটু বেশিই দেরি করে ফেলছে তিন জনে।যার ফল স্বরূপ এখন রিক্সা পাওয়া দায়।
দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিরক্ত হয়ে এবার ইশি বলে,
—চল সামনের দিকে হাটি।ভাগ্য ভালো হলে রিক্সা পাবো।না হলে পাবো না।
প্রান্তিক এর থেকে দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে বলে,
—তোরা দুই টা মাইয়া -ই বে’য়াদপ। তোদের কারণে আমি বাইক আনতে পারি না।এত কষ্ট করে বাইক কিনছি কি রিক্সা ভাড়া দিয়ে যাওয়া আসার জন্য?
—চুপ করে দুই জনে সামনে হাট।
জান্নাতের এর কথায় দুই জনেই চুপ করে সামনে হাটা ধরে।মোড় এর কাছাকাছি আসতেই একটা গাড়ি এসে তাদের পাশে দাঁড়ায়।তার পিছন আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। তারা তিন জনে ও দাঁড়িয়ে যায়।গাড়ি থেকে সজীব বের হয়।প্রান্তিক এর সামনে আসতেই প্রান্তিক বলে,
—কেমন আছো সজীব ভাই?
—আলহামদুলিল্লাহ। তোমার কি অবস্থা ছোট ভাই?
—জি আলহামদুলিল্লাহ। কোনো দরকার ছিলো ভাইয়া? আর বড় ভাইয়া কই?
—প্রণয় ভাই গাড়িতে। জান্নাত আপু কে নিয়ে যেতে বলছে।
জান্নাত কিছু বলবে তার আগেই জান্নাতের ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠে।ব্যাগ থেকে ফোন টা নিয়ে ম্যাসেজ অপশন এ যেতেই দেখে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসছে।জান্নাত ম্যাসেজ টাকে ওপেন করে।
“সজীবের সাথে আমার গাড়িতে চলে আসুন।প্রান্তিক ইশি কে নিয়ে ওর বাসায় দিয়ে আসবে।এই সময় রিক্সা পাওয়া টা ট্রাফ। জানেন -ই তো।তাই দ্বিরুক্তি না করে চলে আসুন”___আপনার মি. ভালোবাসা❤️
জান্নাত ম্যাসেজ টা পড়ে সুক্ষ্ম হাসে।যা নিকাব এর আড়ালে রয়ে গেছে।জান্নাত সজীবের দিকে তাকিয়ে বলে,
—চলুন ভাইয়া।
বলেই জান্নাত সজীবের সাথে হাটা ধরে।জান্নাত গাড়ির কাছে যেতেই রিফাত আর সুজন গাড়ি থেকে বের হয়ে পিছনে আরেক টা গাড়ি ছিলো। সেটা তে গিয়ে উঠে।সজীব ড্রাইভিং সিটে বসে।জান্নাত পিছনের সিটে প্রণয়ের সাথে বসে দুরত্ব বজায় রেখে।
প্রান্তিক আর ইশি সেই দিকে ভ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে।ইশি প্রান্তিক এর পেটে হাতের কোনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে বলে,
—দোস্ত এটা আমি কি দেখলাম? আমাদের জানু ছিলো তো ওটা সত্যি সত্যি?
প্রান্তিক চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে বিরক্ত তে।ইশির দিকে তাকিয়ে বলে,
—তোর সমস্যা কি?তুই কি বাসায় যাবি?নাকি আমি তোকে রেখে চলে যাবো?
—আশ্চর্য!তুই এমন রে’গে যাচ্ছিস কেন?
—তোর সাথে কথা বললেই আমার রা’গ উঠে যায়।রসকষ হীন কথা তোর।
—আজব!তোর এমন কথা কিংবা রা’গ করার কোনো কারণ আছে?
—তুই কথায় কবি না।চল। বড় ভাইয়া কি সুন্দর প্রেম করতাছে আর আমি?
—-তু…
—চুপ আর একটা কথা ও বলবি না।
প্রান্তিক ইশি কে চুপ করিয়ে দিয়ে সামনের মোড় এর দিকে হাঁটতে থাকে।ইশি ও তার পিছন পিছন যাচ্ছে।ইশি বুঝতে পাচ্ছে না প্রান্তিক হঠাৎ এমন রে’গে কেন গেলো?প্রান্তিক এর এখন বিরক্ত লাগছে ইশি কে নিয়ে।ইশি তাকে কি একটু ও বুঝতে পাচ্ছে না?মেয়েটা এতই অবুঝ?
মোড় থেকে একটা রিক্সা নিয়ে দুইজনে রিক্সায় উঠে বসে।ইশি কে বাসায় দিয়ে প্রান্তিক তার কাজ যাবে।প্রণয় তাকে ও ম্যাসেজ করে বলে দিয়েছে ইশি কে যাতে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসি।
তারা চারজন দুই দিকে যেতেই আড়ালে কেউ একজন কাউকে ফোন করে বলে,
—“স্যার শাহরিয়ার প্রণয়ের গাড়িতে আজ একটা মাইয়া রে উঠতে দেখলাম। বোরকা পড়া ছিলো। মুখ দেখি নাই।মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিলো। “।
—……….
—জ্বি, আমি ওদের উপর নজর রাখবো।
বলেই লোকটা ফোন কে’টে দেয়।যেই জায়গায় লুকিয়ে ছিলো। সেখান থেকে বের হয়ে একটা হাসি দিয়ে সে চলে যায় অন্য রাস্তায়।তার কাজ শেষ আপাতত।
🌸🌸
জান্নাত প্রণয় দুই জনের মধ্যেই নিরবতা চলছে।দুই জনের কেউই একটা টু শব্দ ও করছে না।মূলত সজীব থাকার কারণে কথা বলতে জড়তা কাজ করছে দুই জনের মধ্যে ।সজীবের সামনে কথা বলতে গেলে আবার সে কি মনে করে।প্রণয় তো তাদের বলেছে জান্নাত রিক্সা পাচ্ছে না বিধায় তাকে লিফট দিচ্ছে।
বাসার রাস্তায় আসতেই প্রণয় সজীব কে গাড়ি থামাতে বলে।সজীব গাড়িতে ব্রেক নেয়।তাদের গাড়ির পিছন এর গাড়িটা ও থেমে যায়।পিছনের গাড়ি থেকে রিফাত,সুজন বের হয়ে আসে।প্রণয় এর গাড়ি থেকে ও প্রণয় আর জান্নাত বের হয়।সজীব ও বের হয়ে আসে।
প্রণয় জান্নাত কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—চলুন বাকি পথ টুকু হেটে হেটে যায়।
—আচ্ছে।
বলেই দুই জনে হাঁটতে থাকে পায়ের প্রতিটা ধাপের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে।তাদের পিছনে পিছনে রিফাত, সজীব,সুজন ও আসছে হেটে হেটে।হঠাৎ প্রণয় পিছন ঘুরে তাকায়।রিফাত, সজীব,সুজন এর উদ্দেশ্যে বলে,
—কথা শুনছিস?
তিন জনে সম সুরে বলে উঠে,
—না ভাই।
—আসবি পিছনে পিছনে?
—না ভাই।
— সত্যি তো?
—না ভাই।
—মা’র খাবি তিন জনে?
—হা হা হা।
বলেই তিন জনে গিয়ে গাড়িতে উঠে।পর পর দুইটা গাড়ি -ই জান্নাত প্রণয় এর পাশ দিয়ে চলে গেছে। প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।চোখ ফিরিয়ে জান্নাতের দিকে তাকাতেই দেখে জান্নাত সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রণয় আবার হাঁটতে শুরু করে।জান্নাত ও প্রণয়ের সাথে হাটে।প্রণয় নিরবতা কে উপসংহার দিয়ে জান্নাত কে বলে,
—আপনাকে ধন্যবাদ।
—কেন?
—এই যে আমার কথা রেখেছেন। নিকাব পরে বের হচ্ছেন।
—ও আচ্ছা।
প্রণয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।অন্যদিকে জান্নাত ও কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না।প্রণয় কে যে বলবে।জান্নাত কিছু একটা ভেবে প্রণয় কে বলে,
—আপনার জেনিথ কেমন আছে?
—হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ। আপনার পার্শিয়া?
—আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
—জি।
—জেনিথ কে কোথায় পেয়ে ছিলেন?
–রাস্তায়।একদিন কাজ থেকে আসার সময় দেখলাম একটা লোক ব্যাগ থেকে ওকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে।মায়া হলো ওকে দেখে তাই নিয়ে আসলাম নিজের সাথে।ওর নামকরণ টা আমিই করেছিলাম।
—বাহ্ ভালোই।
—হু।
—আপনাদের নির্বাচন কবে?
—আর দুই দিন পরেই।
—কি মনে হচ্ছে।সফল হবেন তো?
—ইনশাল্লাহ। বাকি টা আল্লাহর ইচ্ছে। আল্লাহ ভাগ্যে রাখলে হবে আরকি।
—যাক ভালোই।
—বাসা এসে গেছে।ঠিক আছে যান।আবার দেখা হবে নাহয় বেলকনির কিনারায়।
—আচ্ছা।আল্লাহ হাফেজ।
বলেই জান্নাত তাদের বাসার গেইটের ভিতরে ঢুকে যায়।প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে আফসোস এর নিশ্বাস ফেলে।আজ ও বলতে পারলো না।রাজনীতি করে অথচ একটা মেয়ে কে এখনো পর্যন্ত সাহস জুগিয়ে ভালোবাসার কথা বলতে পারলো না।জনগণ এ এসব শুনলে যা তা অবস্থা হয়ে যাবে।
🌸🌸
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে জান্নাত মাত্র এসে রুমে শুয়েছে।এমন সময় রাহেলা হাতে একটা শাড়ি নিয়ে জান্নাতের রুমে আসে।জান্নাত শোয়া থেকে উঠে বসে।রাহেলা এসে জান্নাতের পাশে বসে জান্নাতের হাতে শাড়িটা দিয়ে বলে,
—শাড়িটা রাখ।এক দুই দিনের মধ্যে তোকে দেখতে আসবে।
জান্নাত অবাক হয়ে বলে,
—দেখতে আসবে মানে?
—দেখতে আসবে মানে দেখতে আসবে।ছেলে তোকে আগ থেকে দেখেই পছন্দ করেছে।এখন তার বাবা মা এসে দেখবে তোকে।যদি পছন্দ হয়।পরে ছেলে সহ এসে কাবিন করে যাবে।
—আজব এসব কি বলছো তুমি?কোন ছেলে?আমি এই বিয়ে করবো না।
—তোর বাবার বন্ধুর ছেলে।বিয়ে করবো না বললেই তো হয়না।অবশ্যই তোকে বিয়ে করতে হবে।
—আমি দরকার হলে বিয়ে ভে’ঙে দিবো।
—তুই জানিস বিয়ে ভেঙে দিলে কি অবস্থা হবে?সবাই তোকে ছি ছি করবে।তোর বাবা ম’রেই যাবে।
জান্নাত এবার পুরা দমে বিরক্ত হয়ে বলে,
—শুনো আম্মু আমার আব্বু কোনো বাংলা সিনেমার নায়িকার বাবা না যে,মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে সেই শোকে ম’রে যাবে।
—একদম ঠিক কথা বলেছে আমার মেয়ে।
জুনায়েদ আজমী রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথা টা বললো।রাহেলা জুনায়েদ আজমীর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,
—তুমি ও মেয়ের কথায় তাল মিলাচ্ছো?
—তাল মিলাতে যাবো কেন?ছেলে কে যদি আমার আম্মুর পছন্দ না হয়।বিয়ে হবে না শেষ কথা।তুমি যদি জোর করে আমার আম্মুকে বিয়ে দিতে চাও দরকার হলে বিয়ে ভেঙে দিবো আমরা।
—যা ইচ্ছা করো তোমরা বাপ মেয়ে আমি কিছুই বলবো না।
—আম্মু সব বলে ফেলে এখন বলছো কিছুই বলবে না?
জান্নাতের কথায় রাহেলা তেঁতে উঠে।বিরক্ত নিয়ে বলে,
—রাজাকার পেটে ধরেছি আমি।সে জন্য সারাক্ষণ আমার পিছনে পড়ে থাকে ভুল ধরতে।
বলেই রাহেলা চলে যায়।জান্নাত আর জুনায়েদ আজমী হেসে উঠে।জান্নাত হাসতে হাসতে জুনায়েদ আজমী কে বলে,
—আব্বু আমি রাজাকার।
বলেই আবার হাসতে থাকে।জুনায়েদ আজমী রুম থেকে বের হয়ে যায়।জান্নাত হাসতে হাসতে বের হয়ে বেলকনিতে যায়।বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসে প্রান্তিক আর ইশি কে গ্রুপ কল দেয়।দুই জনেই ফোন রিসিভ করে।প্রান্তিক ইশি জান্নাত কে এমন পা’গলের মতো হাসতে দেখে আহাম্মক এর ন্যায় তাকিয়ে আছে।প্রান্তিক বলে উঠে,
—ওই জান্নাতি এমন হাসছ কেন?
—ভাই রাজাকার।
বলেই জান্নাত আবার হাসতে থাকে।ইশি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
—দোস্ত জানু,তোদের বাসায় কি রাজাকার আসছে?
জান্নাত এবার হাসি বন্ধ করে।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—-দোস্ত আম্মু বলতাছে আমি নাকি রাজাকার।
প্রান্তিক আর ইশি দম ফেলে এক সাথে বলে উঠে,
—ও এই কাহিনী?ঠিক আছে পরে ব্যাখ্যা শুনবো। এখন ঘুমাবো।
বলেই দুই জনে ফোন কে’টে দেয়।জান্নাত তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে।আবার ফোন দেয় কিন্তু দুই জনেই কল কে’টে অফলাইনে চলে গেছে।জান্নাত দোলনায় বসে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।গলা খাকাড়ি এর শব্দ পেয়ে পাশের বেলকনিতে তাকায়।প্রণয় তার দিকে তাকিয়ে আছে।
জান্নাত একটু নড়েচড়ে বসে।প্রণয় দিকে তাকিয়ে বলে,
—কি দেখছেন মি. ভালোবাসা?
—আপনাকে।
—মানে?
প্রণয় হকচকিয়ে যায়।সম্বিৎ ফিরে বলে,
—নাহ কিছু না।একটা বুদ্ধি দিতে পারবেন?
—ইনশাল্লাহ চেষ্টা করে দেখতে পারি।বলুন কিসের বুদ্ধি দিবো।
—বাসায় কিভাবে বাবা মা কে বুঝানো যায়।আমার বিয়ে করা প্রয়োজন?
—নাউজুবিল্লা। এটা আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন?
—হ্যাঁ। আমার মাথায় কোনো বুদ্ধি আসছে না তাই।
—আমিও জানি না।প্রান্তিক কে জিজ্ঞেস করুন।ও বলতে পারবে।
বলেই জান্নাত বেলকনি থেকে রুমে চলে যায়।প্রণয় চুপ করে বিরসভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাজনীতি করে বলে কি তার কোনো ফিলিংস নেই?বিয়ে করে ও তো অনেকে দেশ সামলায়। অথচ তার বাবা মা তার বিয়ের কথা নাম নিচ্ছে না।যদি জান্নাতের বিয়ে হয়ে যায়।অতি তাড়াতাড়ি এর একটা বিহিত করতেই হবে।
প্রণয় রুম থেকে বের হয়ে প্রান্তিক এর ঘরে গিয়ে দরজা নক করে।প্রান্তিক এর সবে মাত্র চোখে হালকা ঘুম এসে ধরা দিয়েছে। প্রণয় দরজায় নক দেওয়াতে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।প্রণয় কে রুমে আসতে বলে গিয়ে বিছানায় বসে।প্রান্তিক ভাইয়ের মুখের দিকে একবার তাকায়।ভাইয়ের মলিন মুখ দেখে স্বগতোক্তি করে বলে,
—ভাইয়া কি হয়েছে?কোনো সমস্যা??
—বিয়ে করবো। আব্বু আম্মুকে গিয়ে তুই একটু বুঝাবি?
প্রান্তিক হকচকিয়ে যায় প্রণয়ের এমন কথা শুনে।নিজেকে ধাতস্থ করে একগাল হেসে বলে,
—ভাইয়া বিয়ে করলে তুমি বউ সামলাবে নাকি শহর সামলাবে?
—তোকে এত বেশি বুঝতে বলে কে?যেটা বলেছি পারলে সেটা বল আব্বুকে।আর যারা দেশ চালাই তারা কি বিয়ে করে নাই?
—করেছে তো।কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমার একটু বেশিই সন্দেহ লাগছে।বিয়ে না হতে যেভাবে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দুই জনে কথা বলো।বিয়ে হলে আল্লাহ জানে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা.?
—থা’প্পড় খাবি বে’য়াদপ। বড় ভাইয়ের সাথে এসব কোন ধরনের কথা?
—তাহলে বড় ভাই এসে তার বিয়ের কথা ছোট ভাইকে কেন বলে?
—তোর মুখ বেশি চলে দেখছি।
বলেই প্রণয় প্রান্তিক কে মা’রতে নিলেই প্রান্তিক দোড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।প্রণয় আবার সেই বিরস মুখে নিজের রুমে চলে যায়।দুই দিন পরে নির্বাচন। সেটার টেনশন টা ও মাথা থেকে যাচ্ছে না।
🌸🌸
সন্ধ্যায় প্রান্তিক বরাবর এর মতো জুরাইন কে পড়াতে এসেছে।জুরাইন বিছানায় শুয়ে কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।জান্নাত ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে।প্রান্তিক কে দেখে ডাক দেয়।
—কিরে ভুক্তভোগী টিউটর। পড়াতে আসছিস?
—তোকে বলেছি না আমাকে এই নামে ডাকবি না।
—ঠিক আছে ডাকবো না।।
যা,আচ্ছা শুন। জুরাইন এর কি হয়েছে রে?দেখলাম মন খারাপ।
—ধরে নে ছ্যাকা খাইছে।
—মানে?
—বোন হয়ে এর মানে বুঝছ না।আর আমাকে আসছিস জিজ্ঞেস করতে?
—তো ওকে তো তুই পড়াছ।আমি কি ভাবে জানবো?
—তুই ওর বোন।ভাইয়ের দিকে একটু খেয়াল রাখ কার সাথে মিশে,কি শিখে,কি করে?এগুলো তোদের ই দায়িত্ব। আমার না।
বলেই প্রান্তিক জুরাইন এর ঘরে চলে যায়।জান্নাত ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রান্তিক জুরাইন এর রুমে এসে চেয়ার টেনে বসে জুরাইন কে ডাক দেয়।জুরাইন কপাল থেকে হাত নামিয়ে উঠে এসে আরেকটা চেয়ারে বসে।প্রান্তিক জুরাইন এর ফানসে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে ও যে পাখির সাথে প্রেম ঘটিত কোনো সমস্যা হয়েছে সেটা প্রান্তিক খুব ভালো করেই বুঝে ফেলছে।প্রান্তিক জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—জুরু কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?
জুরাইন ছলছল চোখে তাকায় প্রান্তিক এর দিকে।ধরা গলায় বলে,
—ভাইয়া প্লিজ আমাকে জুরু বলে ডাকবেন না।পাখি আমাকে জুরু বলে ডাকতো।
প্রান্তিক অবাক নেত্র পানে জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে আছে।জুরাইন আবার বলে উঠে,
—ভাইয়া কিছু কি পো’ড়া গন্ধ পাচ্ছেন?
জুরাইন এর কথা শুনে প্রান্তিক কিছুক্ষণ নাক টেনে গন্ধ শুকার চেষ্টা করে।নাহ,স্বাভাবিক স্মেল আসছে নাকের কাছে।প্রান্তিক বলে,
—কই জুরাইন। কিসের গন্ধ?আমি তো গন্ধ পাচ্ছি না।
—ভাইয়া আমি হৃদয় পো’ড়ার গন্ধে ঘুমাতে পাচ্ছি না।আমার হৃদয় টা পু’ড়ে যাচ্ছে পাখির জন্য।
বলেই জুরাইন চোখের পানি মুছে।আদো পানি চোখে আছে কিনা আল্লাহ জানে।প্রান্তিক এখনো তব্দা খেয়ে বসে আছে।জুরাইন হু হু করে কাদঁতে কাদঁতে চেয়ার থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।প্রান্তিক এখনো তব্দা খেয়ে বসে আছে।আজ ও জুরাইন ফাঁকি দিয়েছে পড়ায়।প্রান্তিক ভেবে পায় না সে কি জুরাইন কে পড়াতে আসে?নাকি জুরাইন আর পাখির প্রেম কাহিনী শুনতে আসে।
🌸🌸
প্রণয় সন্ধ্যার অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।চাঁদ তারা কিছু নেই।যেন একটা কালো চাদর। জান্নাত বেলকনিতে আসে।প্রণয় কে দেখে বলে,
—কি ভাবছেন মি. ভালোবাসা?
—ভাবছি তো অনেক কিছুই।
জান্নাতের দিকে না তাকিয়েই আগের মতো থেকে উত্তর দেয় প্রণয়। জান্নাত কিছু টা অবাক হয়।প্রশ্নাত্মক চাহনি নিয়ে বলে,
—অনেক কিছুর মধ্যে অল্প কিছু বলা যাবে কি?
—যাবে।যাবে না কেন? কিন্তু ক্ষণিকের জন্য নাহয় আপনাকে বললাম নিজের ভাবনা গুলো। কিন্তু আমি আমার সর্বক্ষণ এর জন্য একজন নিজস্ব মানুষ চাই।যাতে যখন ইচ্ছে তখন আমি তাকে নিজের ভাবনা চিন্তা গুলো উগলে বলে দিতে পারি।আপনাকে তো বলবো আমি বেলকনির এপার থেকে ওপারে রেখে।কিন্তু আমি তো আমার একান্ত কাছের একজন মানুষ চাই যার কাঁধে মাথা রেখে আমি আমার সব কথা ব্যক্ত করবো।আদো আছে কি আমার সেই মানুষ? হবে কি কেউ আমার সেই মানুষ? জানা নেই।
—আপনার মাথায় নির্বাচন এর চিন্তা আর বিয়ে করার ভূ’ত দুইটা এক সাথে চেপেছে। তাই এত ভাবনা।
—হয়তো। যাই হোক ছাড়ুন। একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
—হু বলুন।
—রিলেশন করেছেন বা আছে?
—সত্যি কথা বলতে করিনি। তবে একজনকে পছন্দ হয়েছে। বলতে পারেন আংশিক ভালোলাগা ভালোবাসা এরকম।ইচ্ছা আছে ইনশাল্লাহ তাকেই বিয়ে করবো। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা তাকে কপালে রেখেছে কিনা।
তা আপনার আছে রিলেশন?
—আমার ও আপনার মতো। একজনের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে।দিনকে দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।ইচ্ছে তাকে বিয়ে করার।আল্লাহ কপালে রাখলে আলহামদুলিল্লাহ। না থাকলে ভাগ্য কে মেনে নিবো।
—ওহ আচ্ছা।
—হু।আচ্ছা ঠিক আছে ঘরে গেলাম। কিছু কাজ আছে।
—জি।
বলেই দুই জনে বেলকনি থেকে ঘরে চলে যায়।দুই জনের মনেই জমেছে বিষণ্ণতা। মন খারাপ এর ছায়া পড়েছে মনে।দুই জনের ই ভাবনা দুই জনে ভিন্ন কোনো মানুষ কে পছন্দ করে।সত্যিই কি দুই জনে ভিন্ন কোনো মানুষ কে পছন্দ করে?
🌸🌸
রাতের খাবার খেয়ে শাহরিয়ার পাবেল রোকসানা প্রান্তিক সোফায় বসে আছে।প্রণয় খাওয়া শেষ করে আর সোফায় বসেনি।ঘরের দিকে যেতে নিলেই শাহরিয়ার পাবেল প্রণয় কে ডাক দেয়,
—প্রণয় শুন তো বাবা।
প্রণয় এসে বাবার সামনে দাঁড়ায়। পাবেল তাকে বলে,
—বস।কথা আছে।
—না আব্বু বসার সময় নেই।কি বলবে বলো।আমি শুনছি।
শাহরিয়ার পাবেল তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
—তুই কি সত্যিই বিয়ে করবি?
প্রণয় চট করে শাহরিয়ার পাবেলের পাশে বসে প্রান্তিক এর দিকে তাকায়। প্রান্তিক প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে হেসে দেয়।প্রণয় শাহরিয়ার পাবেলের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“আব্বু তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো?আমি তো বলেছিই আমি বিয়ে করবো। বিয়ের বয়স যে আমার পার হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছো না তোমরা?না বুঝলে আমার জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ে দেখো আমি কত সালে জন্ম নিয়েছে।তাহলে বুঝতে পারবে। আমার ঘরে একটা বউ এর অভাবে দূর্ভিক্ষ চলছে।আর তুমি এখন জিজ্ঞেস করেছো আমি সত্যি বিয়ে করবো কিনা?তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা কর।বউ আমি নিয়ে আসবো দরকার হলে।
বলেই প্রণয় গটগট পায়ে প্রস্থান নেয়।পিছনে রেখে যায় অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যাওয়া তিনটা মানুষ কে।শাহরিয়ার পাবেল অবাক হয়ে রোকসানা কে বলে,
— রোকসানা এটা সত্যি তোমার ছেলে প্রণয় তো?
রোকসানা সোফা ছেড়ে উঠে বলে,
—নাহ।এটা তোমার ছেলে।অবিকল তোমার কার্বন কপি।তোমার মতোই নির্লজ্জ।
বলেই চলে যায় রোকসানা। এই দিকে প্রান্তিক সবার কথা কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে শেষ।ভাইয়ার জন্য আব্বুর পদবী ও নির্লজ্জ হয়ে গেছে।শাহরিয়ার পাবেল প্রান্তিক কে ধ’মক দিয়ে বলে,
—বে’য়াদপ ছেলে হাসছিস কেন?
—আম্মুর কথা শুনে।
—তোর আম্মু আবার কি বলেছে?
—আম্মুর কথা তুমি বুঝো নি?
—কি? হাসি বন্ধ করে কথা বল।নাহলে থা’প্পড় খাবি তুই।
—ওকে বলছি।আম্মু তোমাকে বলেছে “ভাইয়া তোমার মতো নির্লজ্জ “এর মানে কি বুঝতে পেরেছো?
তুমি ও নির্লজ্জ। তাই ভাইয়া তোমার মতো নির্লজ্জ।
—কিহ্!এত বড় কথা?
—হুম।নির্লজ্জ বাবার নির্লজ্জ ছেলে।
—কি বললি তুই?
—আমি বলি নি।আম্মু এটা বুঝিয়ে গেছে তোমাকে।সেটাই বলেছি।
বলেই প্রান্তিক আবার হাসতে থাকে।শাহরিয়ার পাবেল প্রান্তিক এর দিকে রে’গে তাকিয়েই নিজের ঘরে চলে যায়।প্রান্তিক এখনো হেসে যাচ্ছে।আজকে তার শুধু হাসি পাচ্ছে।জান্নাত কে আন্টি রাজাকার বলেছে,জুরাইন এর হৃদয় পো’ড়া গন্ধ,বড় ভাইয়ের রুমে বউ এর অভাবে দূর্ভিক্ষ, বাবাকে ইনিয়েবিনিয়ে মায়ের বুঝিয়ে দেওয়া বাবা নির্লজ্জ। আল্লাহ সব মনে করেই প্রান্তিক শেষ হাসতে হাসতে।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤