প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব -২১+২২+২৩

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:২১
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

রাত এগারো টা বাজে। বেলকনিতে পার্শিয়া কে কোলে নিয়ে বসে আছে জান্নাত। বিশাল আকারের আকাশ টাকে অবলোকন করছে। থালার মতো পূর্ণ চাঁদ না থাকলে ও বাঁকা চাঁদের উপস্থিতি আছে আকাশে। আর সেই চাঁদের বুড়ি কে পাহারা দিচ্ছে মিটি জ্বলজ্বল করা হাজারো তারা।

বিষাদের ছায়া পড়েছে মনে।গত কাল প্রণয়ের বলা কথাটা মাথা থেকে যাচ্ছে না।কাকে ভালোবাসে মি.ভালোবাসা?তবে আমি যে ভেবে ছিলাম তিনি আমাকে ভালোবাসে। তাহলে কি ধারণা টা মিথ্যে ছিলো আমার?হয়তো।

জুনায়েদ আজমী এসে জান্নাতের পাশে বসে।জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

—মন খারাপ মনে হচ্ছে আম্মু?

জান্নাত ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ে। জুনায়েদ আজমীর কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বলে,

—ভালো লাগছে না আব্বু।কেন জানি মন খারাপ লাগছে।

—কোনো কিছু নিয়ে কি ভাবছিস?

—সেটা ও বুঝতে পারছি না আব্বু।

—একটা কথা বলি আম্মু?

—বলো আব্বু।

—আম্মু আমি একটা ছেলে কে পছন্দ করেছি।ছেলে হিসেবে খুব ভালো। তোকে খুব ভালো রাখবে।ওরা তোকে দেখেছে কোনো এক ভাবে।তাদের ও পছন্দ তোকে।এখন তোর কি মতামত আম্মু?

জান্নাত চোখ তুলে তাকায় জুনায়েদ আজমীর মুখের দিকে।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,

—বিয়েটা কবে হবে আব্বু?

জুনায়েদ আজমী কিছুটা অবাক হয়।এক কথায় যে জান্নাত কিছু জিজ্ঞেস না করে রাজি হয়ে যাবে।উনি হয়তো ভাবেনি।মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে,

—গত কাল তো নির্বাচন। সব জায়গায় গণ্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।হয়তো নির্বাচন এর পরে।

—আচ্ছা।

জুনায়েদ আজমী চলে যায় জান্নাতের পাশ থেকে উঠে।জান্নাত পার্শিয়ার গায়ে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।জুনায়েদ আজমীর প্রস্তাবে সে রাজি হতো না।যদি জানতো প্রণয় তাকে ভালোবাসে।কিন্তু প্রণয় তো অন্য কাউকে হয়তো মন দিয়ে আছে।তাই তো জুনায়েদ আজমী কে হ্যাঁ বলেছে।

হঠাৎ পার্শিয়ার চি’ৎকার এর শব্দে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে জান্নাত। পার্শিয়া পাশের বেলকনির দিকে তাকিয়ে চি’ৎকার করছে।জান্নাত তাকায় প্রণয় এর বেলকনির দিকে।প্রণয়ের বেলকনির রেলিং এর উপরে বসে জেনিথ ও পার্শিয়া কে দেখে চি’ৎকার করছে।কিয়তক্ষণ পরেই হুট করেই পার্শিয়া লাফ দেয় জান্নাত এর বেলকনিতে। বেলকনির দূরত্ব খুব অল্প তাই জেনিথ সহসায় লাফ দিয়ে আসতে ফেরেছে।

জান্নাত পার্শিয়া কে কোলে নিয়ে দোলনা থেকে উঠে জেনিথ যেখানে বসে আছে সেখানে গিয়ে হাটু মুড়ে বসে।জেনিথ এর মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়।পার্শিয়া জান্নাত এর কোল থেকে নেমে জেনিথ এর সাথে গলায় গলায় ভাব জমায়।জান্নাত বেলকনির রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে পা গুটিয়ে বসে।পার্শিয়া আর জেনিথ কে এক সাথে কোলে নেয়।

জান্নাত জেনিথ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আচ্ছা তোর মালিক কাকে ভালোবাসে জানিস কি?আমি তো ভেবে ছিলাম তোর মালিক আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে উনার মনে অন্য কারো বিচরণ।কেনো এমন হলো বলতো?

জান্নাত এর কথায় বোবা প্রাণী দুই টাই তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।জান্নাত এর কথার আগা মাথা কিছুই তো তারা বুঝে নাই মনে হয়।জান্নাত দুই জন কে কোলে রেখে আদুরে হাতে গায়ে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে থাকে।আকাশ পানে তাকিয়ে চলছে প্রণয় কে নিয়ে ঘুটি কয়েক ভাবনা।যে ভাবনা গুলোর বাস্তব রূপ আধো নিবে কিনা তাও অজানা।

🌸🌸

রাফসান মির্জা আর প্রণয় মুখোমুখি হয়ে বসে আছে।রাফসান মির্জার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে সব সময় থাকা প্রদীপ আর মেহেদি। প্রণয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে রিফাত,সজীব, সুজন। আগামীকাল নির্বাচন।প্রণয় এর হাতে কাজের অভাব নেই।এর মধ্যে এখন রাফসান মির্জা এসেছে।না চাইতে ও তার সাথে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে প্রণয়। রাফসান মির্জা কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রণয় কে উদ্দেশ্য করে বলে,

—মি. প্রণয় এখনো কিছু ঘন্টা হাতে আছে আপনার।সরে দাঁড়ান। এতে আপনার জন্যই ভালো হবে।

রাফসান মির্জার কথায় প্রণয় হেসে বলে,

—বিশ্বাস করেন রাফসান মির্জা আমি সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্বাচন এ যোগ দিই নি।আমি আমার পথে অটল থাকবো।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

—আপনি একটু বেশি করছেন না?

—আপনার কাছে যদি মনে হয় বেশি।তাহলে বেশি।কম মনে হলে কম।এতে আমার কিছু করার নেই।

—ঠিক আছে আমি ও দেখবো কাল কি হয়।কে জিতে আর কে হারে?

—জি ইনশাল্লাহ। আমার জন্য অবশ্যই দোয়া করবেন যেন আমি সফল হতে পারি.।

প্রণয় এর কথায় রাফসান মির্জা চলে যেতে উঠে দাঁড়ায়। প্রণয় রাফসান মির্জার হাতের উপর হাত দিয়ে তাকে বসতে বলে।রাফসান মির্জা বসতেই প্রণয় টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে রাফসান মির্জার হাতে দিয়ে বলে,

—আমার এখানে এসেছেন এত রাতে। কত টা কষ্ট হয়েছে আপনার।এক গ্লাস পানি অন্তত খেয়ে যান।

রাফসান মির্জার পানির গ্লাস টা ফেলে দিতে নিলে প্রণয় বলে উঠে,

—শাহরিয়ার প্রণয়ের অফিসে এসে ভাঙচুর করেছেন এটা আবার কালকের নিউজের হেড লাইন না হয় দেখবেন একটু।

প্রণয় এর কথা শুনে রাফসান মির্জা গ্লাস টাকে না ফেলে একটু জোরে টেবিলের উপর রাখে।প্রণয় এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে বের হয়ে যায় কেবিনে থেকে।রাফসান মির্জার পিছন পিছন মেহেদি আর প্রদীপ ও বের হয়ে যায়।প্রদীপ বের হওয়ার আগে একবার প্রণয়, রিফাত, সজীব, সুজন এর দিকে রুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্ষীণ হাসে।হাসি টার আড়ালে যেন তার অনেক কিছু আছে।বড্ড রহস্য ময় হাসি ছিলো তার।

প্রণয় রাফসান মির্জা চলে যেতেই ক্রুর হাসে।সজীব কে ডাক দেয়,

—সজীব শুন।

—জি ভাই।

এগিয়ে এসে সজীব বলে।প্রণয় সজীব এর হাতে নিজের রুমাল টা দিয়ে বলে,

—গ্লাসের পানি গুলো ফেলে দে।আর গ্লাস টা কি করতে হবে বুঝলি তো?

—জি ভাই।

বলেই সজীব প্রণয় এর রুমাল দিয়ে গ্লাস টা সাবধানে ধরে পানি টুকু পাশের টবে ফেলে দিয়ে গ্লাস টা নিয়ে বেরিয়ে যায় কোথাও। সুজন এগিয়ে এসে বলে,

—ভাই কি নিখুঁত ভাবে অবিনয় করলেন আপনি।আমি নিজেও বুঝতে পারি নি।আর রাফসান মির্জার কথা তো বাদ -ই দিলাম।

—ছাড় সে সব কথা।কালকে কি হবে সেটা নিয়ে ভাব।সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন টা হলেই আলহামদুলিল্লাহ। এখনো কিছু কাজ পড়ে আছে।তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করতে হবে।শুরু কর।

—জি ভাই।

বলেই রিফাত আর সুজন তাদের কাজে চলে যায়।প্রণয় ল্যাপটপ নিয়ে পার্টি অফিস রুমে আফজাল সাহেব এর কাছে যায়।

প্রণয় এসে আফজাল সাহেব কে সালাম দিয়ে উনার সামনে একটা চেয়ারে বসে।এখন শুধু আফজাল সাহেব -ই আছে।রাতে দেড় টা বাজে।বাকি সবাই চলে গেছে।আফজাল সাহেব প্রণয় কে দেখে বলে,

—প্রণয় সেই দিন হুট করে কেন চলে গেছিলে? বললে না তো।

প্রণয় ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে আফজাল সাহেব এর দিকে তাকায়।মুখে কিঞ্চিত হাসি ঝুলিয়ে বলে,

—স্যার বলবো ইনশাল্লাহ। কিছু প্রমাণ হাতে আসুক। প্রমাণ সহ আপনাকে দেখাবো, বলবো। সেই পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন স্যার প্লিজ।

—ওকে।সাবধানে থেকো তুমি।কালকে কি হয় এখনো কিছু বুঝতে পাচ্ছি না।রাফসান মির্জা ও দেখছি উঠেপড়ে লেগেছে।

—আল্লাহ ভরসা স্যার।

—আর হ্যাঁ! তোমাকে তো বলেছি মাইকিং কিংবা পোস্টার লাগাতে। তুমি তো তা ও বারণ করেছো।জনগণ কি ভোট দিবে তোমায়?চিনবে তোমায়?

—স্যার যারা চিনার তারা আমাকে এমনেই চিনবে সে যে উপায়ে ই হোক।আর ভাগ্য সহায় হলে ভোট ও পাবো ইনশাল্লাহ। আমি শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ চাইনি।তাই পোস্টার, মাইকিং করাতে নারাজ ছিলাম।

—যাক।দেখা যাক কি হয়।মনোবল হারিও না।

—জি ইনশাল্লাহ।

🌸🌸

ঘড়ির কাঁ’টা রাত সাড়ে তিন টার ঘরে।প্রণয় এখনো এক নাগাড়ে কাজ করে যাচ্ছে।পিঠের মেরুদণ্ড টা ও যেন প্রণয় এর উপর বিরক্ত তবুও প্রণয় এক বিন্দু বিরতি নিচ্ছে না।কিচ্ছুক্ষণ পরেই সজীব, রিফাত, সুজন এসে প্রণয় এর কেবিনে ঢুকে।প্রণয় তাদের দিকে তাকায় একবার। আবার নিজের কাজে চোখ রেখে বলে,

—শেষ হয়েছে তোদের কাজ?

—জি ভাই।

তিনজন এ একসাথে বলে থামে।রিফাত বলে উঠে,

—ভাই বাসায় যাবেন না?কাজ কি এখনো বাকি?আমরা হেল্প করবো?

—নাহ।আর পাচঁ মিনিট লাগবে।তোরা যাবি নাকি অপেক্ষা করবি?

—অপেক্ষা করি।চার জনে এক সাথে যাবো।

বলেই তিন জনে তিনটা চেয়ার টেনে বসে।প্রণয় তিন জনের দিকে তাকিয়ে হাসে।এসির মধ্যে ও ঘেমে আছে কিছুটা প্রণয়। সারাদিনে অক্লান্ত পরিশ্রমে গায়ের শুভ্র পাঞ্জাবী টাও কুঁচকে আছে যেন খানিক টা। প্রণয় ল্যাপটপ বন্ধ করে হাতে থাকা পেইন টা কলম দানি তে রেখে প্যাড খাতা টা ও বন্ধ করে সামনে বসে থাকা তিন মানবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

—চল।বাসায় যাই।

প্রণয় এর কথায় তিন জনে উঠে যাওয়ার জন্য।প্রণয়ের পিছন পিছন বেরিয়ে যায়।চারজনে গাড়ি তে উঠতেই প্রণয় সজীবের উদ্দেশ্যে বলে,

—সজীব আজকে বাসায় যাওয়ার জন্য সেকেন্ড রাস্তা টা ধর।সময় বেশি লাগলে ও ওই রাস্তা দিয়ে চল।সোজা পথে যাওয়া যাবে না।হয়তো অপেক্ষায় আছে অনেকে আমাদের।

—আচ্ছা ভাই।

বলেই সজীব গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে যেতে শুরু করে।

🌸🌸

সাড়ে চারটার ও বেশি বাজে।রাত জাগা পাখি দের কিচির মিচির ডাক শুনা যাচ্ছে।প্রণয় মাত্র বাসায় এসেছে।গায়ের পাঞ্জাবী টা ফোটা ফোটা ঘামে লেগে আছে গায়ে।প্রণয় রুমে এসে লাইট দিয়ে চার দিকে চোখ ভুলায়।কিন্তু জেনিথ কে কোথাও দেখছে না।প্রতিদিন প্রণয় আসলে জেনিথ প্রণয় এর পিছনে পিছনে হাটবে। কিন্তু গেলো কোথায় আজ?

প্রণয় জেনিথ কে ডাকতে ডাকতে বেলকনিতে আসে।হঠাৎ জান্নাতের বেলকনি থেকে জেনিথ ডাক দিয়ে উঠতেই প্রণয় সেই দিকে তাকায়।প্রণয় বেলকনির রেলিং টপকে জান্নাতের রেলিং যেতেই দেখে জেনিথ জান্নাত এর কোলে বসে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। পার্শিয়া ঘুমাচ্ছে। জান্নাত ও হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। প্রণয় জান্নাতের সামনে গিয়ে হাটু মুড়ে বসে।জান্নাত নাকের তিলটার দিকে আবার তার চোখ আটকায়। চোখ দুটো ও ভিষণ সুন্দর।প্রণয় এর ইচ্ছে করছে জান্নাত এর কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ দিতে।কিন্তু তা করে না প্রণয়। আনমনেই বলে উঠে,

—‘‘সেই দিন মা’রামা’রি তে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনাকে প্রথম ছুঁয়েছি। দ্বিতীয় বার আর অধিকার ছাড়া ছুতে চাই না।দ্বিতীয় স্পর্শ টার জন্য অপেক্ষা করবো তবুও হালাল হোক নাহয়।আপনাকে যে আমার চাই নিদ্রাময়ী।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা’’।

প্রণয় থামে।পার্শিয়া কে হাত বাড়িয়ে আল গোছে কোলে তুলে নিয়ে জান্নাত এর দিকে আরেক বার তাকিয়ে বলে,

—🌸‘‘মি. ভালোবাসা শুধু আপনার -ই থাকতে চায় জান্নাত’’।❤️

বলেই প্রণয় উঠে পার্শিয়া কে নিয়ে রেলিং টপকে আবার নিজের বেলকনিতে চলে যায়।জান্নাত সেই ভাবেই পার্শিয়া কে কোলে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:২২+২৩
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

অবশেষে এসেছে সেই মহেদ্রক্ষণ।আজ এমপি নির্বাচন। কার ভাগ্য কি আছে আল্লাহ ভালো জানে।প্রণয় পাচঁ টা চল্লিশে ঘুম থেকে উঠে গেছে।ফ্রেশ হয়ে বাসার পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে চলে যায়।নামাজ পড়ে বের হতেই পাখির বাবা প্রণয় কে ডাক দেয়।প্রণয় ও দাঁড়িয়ে যায়।দুই জনে আবার একসাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে থাকে।বাইরে স্নিগ্ধ বাতাস বয়ছে।শরীর ঠান্ডা করে দিচ্ছে।প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে নিরব থেকে উপভোগ করা টাই এক অন্য রকম শান্তি। নিরবতার উপসংহার ঘটিয়ে পাখির বাবা প্রণয় কে বলে,

—আজ তো নির্বাচন তাই না প্রণয়?

প্রণয় পাখির বাবা কথায় মুচকি হেসে প্রতিত্তোর দেয়,

—জি আংকেল। দোয়া করবেন।

—দোয়া তো সব সময় -ই আছে তোমাদের জন্য।আল্লাহ সফল করুক তোমাকে।

—জি ইনশাল্লাহ।

—পরিস্থিতি দেখে কি মনে হচ্ছে?সফল হবে তো?

—আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি আংকেল। জনগণ কে তো সহজে বুঝা যায় না।তারা মুখে আপনাকে এক কথা বললেও মনে তো থাকে অন্য কিছু।তাই কিছু বুঝতে পারছি না।আল্লাহ সহায় হলে ইনশাল্লাহ সফল হবো।

—আল্লাহ ভরসা।

বলেই আবার দুই জনে হাঁটতে শুরু করলো। বাসার কাছে আসতেই দুই জনে দুই জনের বাসায় চলে যায়।

প্রণয় বাসায় ঢুকে দেখে রোকসানা নাস্তা নিয়ে বসে আছে।প্রণয় কে দেখেই তিনি বলে,

—আয় বাবা,তাড়াতাড়ি বস।পরে তো নাস্তা করার সময় পাবিনা।

বলেই রোকসানা নিজেই প্রণয় কে খাইয়ে দিতে থাকলো। প্রণয় ও দ্বিরুক্ত প্রকাশ না করে মায়ের হাতে খেতে থাকলো। প্রণয় খেয়ে উঠেই বলে,

—আম্মু আমার এখুনি বের হতে হবে।

—আচ্ছা বাবা।দোয়া করি আমার ছেলে যেন সফল হয়ে আসতে পারে বাড়িতে।

—আমি ঘর থেকে আসছি আম্মু।

বলেই প্রণয় নিজের ঘরে চলে যায়।ঘরে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে জেনিথ কে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে।বেলকনিতে যায় একবার। যদি তার ‘‘মনোহরণকারী’’ কে একবার দেখতে পায়।

প্রণয় বেলকনিতে গিয়ে দেখে জান্নাত পার্শিয়া কে কোলে নিয়ে দোলনায় বসে চোখ বন্ধ করে ঢুলছে।প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

—কেমন আছেন জান্নাত?

প্রণয় এর কথা কর্ণকুহর এ এসে বারি খেতেই জান্নাত তাকায় প্রণয় এর বেলকনির দিকে।জান্নাত নির্নিমেষ ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে প্রণয় এর দিকে।শুভ্র তায় ঘেরা পাঞ্জাবী, চুল গুলো হয়তো জেল দিয়ে সেট করা।চোখে রিমলেস সেই চশমা টা।হাতে কালো রঙ এর একটা ঘড়ি।ব্যাস এত টুকু তেই লোকটার সৌর্ন্দয অনেক বেড়ে উঠেছে যেন।আজকে যেন একটু বেশিই সুন্দর লাগছে মি. ভালোবাসা কে।

জান্নত এর থেকে প্রণয় কোনো প্রতি উত্তর না পেয়ে আবার বলে,

—কি হলো কথা বলবেন না?

জান্নাত সম্বিত ফিরে আসে প্রণয় এর কথায়।প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—কিছু বলেছেন?

—কোন ধ্যানে ছিলেন? জিজ্ঞেস করেছি ভালো আছেন?

—জি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি.?

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তবে টেনশন কাজ করছে প্রচুর বুঝলেন?

—কেন?

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নাত্মক চাহনি নিয়ে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে জান্নাত। প্রণয় জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,

—আজকে নির্বাচন না?আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছে? তাই নিয়ে টেনশন।

—আল্লাহ ভরসা।চিন্তা করবেন না।নির্বাচনে সৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে যদি আপনি যোগ দিয়ে থাকেন তাহলে ইনশাল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সফলতা দিবে।

—ইনশাল্লাহ।

—যাবেন কখন কাজে?

—এই তো এখন।

—আচ্ছা। শুভ কামনা রইলো।

—জি।আচ্ছা আসি তাহলে।

বলেই প্রণয় ঘুরে দাঁড়ায় ঘরে যাওয়ার জন্য।জান্নাত কিছু একটা ভেবে প্রণয় কে আবার ডাক দেয়।বলে,

—শুনুন মি. ভালোবাসা।

জান্নাত ডাক শুনে প্রণয় ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার রেলিং এর কাছে আসে।জান্নাত প্রণয় কে জিজ্ঞেস করে,

—আচ্ছা আপনার ভালোবাসার মানুষ টাকে বলেছেন?

জান্নাত এর কথায় প্রণয় হাসে।অতি সুক্ষ্ম হাসি সেটা।কিন্তু সেই হাসি টা তে ও আরো একবার হারিয়ে যায় জান্নাত। প্রণয় হেসেই বলে উঠে,

—জি বলেছি।

মুহূর্তে -ই জান্নাত এর মুখ টা ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করে তবে সেটা প্রণয় এর সামনে প্রকাশ করে না।প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে ফিচেল হেসে বলে,

—আচ্ছা ঠিক আছে।যান আপনার দেরি হয়ে যাবে তো।

প্রণয় হাসি দিয়ে চলে যায়।জান্নাত আকাশের দিকে তাকায়।তার মনে যেন কালো মেঘ এসে হানা দিয়েছে।আনমনেই বলে উঠে,

—“যাকে পাওয়ার নয়,তার প্রতি কেন মন কুঠিরে অনুভূতিরা জন্ম নেয়?”

🌸🌸

প্রণয়,রিফাত,সজীব,সুজন চার জনে গাড়িতে বসে যাচ্ছে নিজেদের গন্তব্যে।প্রণয় আর রিফাত কথা ডিসকাস করছে কিছু একটা বিষয় নিয়ে।কথার মাঝেই প্রণয় এর ফোন বেজে উঠে।প্রণয় ফোনের দিকে তাকিয়ে নাম্বার টা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে।এই সময় প্রণয় এই ফোন টা আশা করেনি। প্রণয় ফোন টা রিসিভ করে কানে নিতেই অপর পাশে কেউ একজন বলে উঠে,

—প্রণয় দা, যত দ্রুত সম্ভব আপনারা যেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন সেই রাস্তা চেঞ্জ করে অন্য রাস্তায় যান

প্রণয় কথার প্রতি উত্তরে লোকটা কে বলে,

—কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?

—প্রণয় দা,রাফসান মির্জার লোকেরা যে কোনো সময় আপনার উপর এট্যা’ক করতে পারে।

—আচ্ছা।তুই সাবধানে থাকিস।

বলে প্রণয় ফোন কে’টে সজীবের দিকে তাকিয়ে বলে,

—সজীব অন্য রাস্তা ধর।এই রাস্তায় রাফসান মির্জার লোকেরা আ….

প্রণয় পুরো কথা শেষ করার আগেই একটা গু’লি এসে প্রণয় এর পাশের জানালার কাচঁ ভেদ করে নিচে পড়ে যায়।প্রণয় এর পাশের জানালার কাচঁ ভে’ঙে প্রণয় এর হাতে কাচঁ গুলো পড়ে কিছু কিছু কাচঁ গেঁথে যায়।মুহূর্তে -ই প্রণয় এর শুভ্র পাঞ্জাবী লাল রং এর র’ক্ত এ রঙিন রূপ ধারণ করে।ব্য’থায় প্রণয় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।

সজীব গাড়ি ঘুরিয়ে আগে আশে পাশে একটা ক্লিনিক যায়।রিফাত গার্ড দের ফোন করে আসতে বলে।তাদের -ই ভুল হয়েছে।গার্ড নিয়ে বের না হওয়ার ফল।গার্ড দের বলেছে পরে আসতে।তাই এই অবস্থা। আক্কেল হয়ে গেছে।

প্রণয় ক্লিনিক এ গিয়ে হাতে ড্রেসিং করিয়ে নেয়।ততক্ষণে গার্ড রা চলে এসেছে।প্রণয় এবার গার্ড দের নিয়েই আবার গন্তব্যে রওনা হয়।কাচঁ ভা’ঙা গাড়িটা মেকানিকস গ্যারেজ এ পাঠিয়ে দেয়।প্রণয় এর গাড়ির সামনে গার্ড দের একটা গাড়ি।পিছনে আরেকটা গাড়ি গার্ড দের।মাঝে তাদের গাড়িটা।

সকাল পোনে দশটা বাজে এখন।কেন্দ্রে মানুষের আনাগোনা মোটামুটি বাড়ছে আস্তে আস্তে। চার দিকে পুলিশ,আর্মি, র‍্যাব সবার উপর নজর রাখছে।প্রণয়,সজীব,রিফাত,সুজন কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখছে।তবে কাউকে বলছে না যে “শাহরিয়ার প্রণয়” কে ভোট দিতে।এখানে সবাই সেচ্চায় ভোট দিবে যাকে ইচ্ছে তাকে।এখানে কাউকে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করার কোনো মানেয় হয় না।

রাফসান মির্জা প্রণয় কে ভোট কেন্দ্রে সশরীর এ উপস্থিত থাকতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়।মনে মনে নিজের দলের লোক দের কয়েক টা বাজে ভাষায় গা’লি দিতে ও ভুলে না সে।একটা ও কাজের না।শাহরিয়ার প্রণয় কে মা’রতে এই পর্যন্ত কয় বার পাঠিয়েছে। প্রতি বার ফেইল হয়েছে, শাহরিয়ার প্রণয় বেচেঁ গেছে।বিরক্ত রা’গে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে তিনি।ঠিক তখনি তার একটা গার্ড এসে বলে,

—স্যার আপনাকে ওই দিকে ডাকছে।

লোকটা কথা বলে শেষ করতেই রাফসান তাকে সপাটে একটা থা’প্পড় মা’রে। লোকটা গালে হাত দিয়ে ভ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে রাফসান মির্জার দিকে।রাফসান মির্জা প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে রা’গে ফোস ফোস করতে চলে যায়।

থা’প্পড় খাওয়া গার্ড টা রাফসান মির্জার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আস্তে বলে,

—আমাকে থা’প্পড় মা’রলো কেন?আমি কি করেছি?পা’গলা ব্যা’রাম আছে।আমনে আমনে থা’প্পড় মা’রে।

বলেই লোকটা নিজের কাজে চলে যায়। চার দিকে মানুষ গিজ গিজ করছে।তবে সুষ্ঠ ভাবে ভোটদান হচ্ছে।সবাই নিজ ইচ্ছায় ভোট দিচ্ছে যাকে ভালো মনে করছে তাকে।প্রণয় এর গায়ে এখনো সেই লাল র’ক্ত এ রঞ্জিত পাঞ্জাবী। এটা নিয়ে মিডিয়ার লোকেরা অলরেডি এসেছিলো জেরা করতে।প্রণয় অত্যন্ত সুক্ষ্মদর্শী ভাবে তাদের রাস্তায় ঘটা বিষয় টা এড়িয়ে গিয়েছে।কোনো মতে মিডিয়ার লোকদের বুঝ দেওয়ার জন্য বলেছে, “রাস্তায় ছোট খাটো এক্সি’ডেন্ট হয়েছে।সে একা ছিলো সেই গাড়িতে। পিছনে গার্ড ছিলো “.।
প্রণয় এর এই কথায় মিডিয়ার লোকেরা আর কিছু বলেনি।তবে মিডিয়া মানেই তো মসলা পাতি মিক্সচার। তারা আরো মসলা মাখিয়ে তা ভার্চুয়াল জগতে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

বিকেল চারটায় ভোট দান কার্যক্রম স্থিতি ঘোষণা করা হয়।তারপর থেকেই শুরু হয় ভোট গণনা কার্যক্রম। সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবে ভোট গণনা চলছে।প্রণয়, সজীব,রিফাত, সুজন মসজিদে চলে যায় আসর নামাজ আদায় করতে।

নামাজ পড়ে এসেই আবার কেন্দ্রে ফিরে আসে চার জন।প্রণয় তাকায় একবার রাফসান মির্জার দিকে।রাফসান মির্জা তার লোক দের কিছু একটা বিষয় নিয়ে শাষাচ্ছে।লোক গুলো মাথা নিচু করেই রাফসান মির্জার কথা শুনছে। প্রণয় তপ্ত শ্বাস ছাড়ে সেই দিকে তাকিয়ে।

ভোট গণনা করতে করতে সময় এসে পৌছায় পাচঁ টা পঞ্চাশ। কি হবে ফলাফল তা নিয়ে প্রণয়, রাফসান মির্জা দুই জনেই উত্তেজিত। প্রণয় ফলাফল নিয়ে যতটা নার্ভাস তার থেকেও বেশি নার্ভাস হয়ে গেছে তার সাথের তিন জনে।প্রণয় রিফাত এর তাকিয়ে বলে,

—তুই এতে ঘামছিস কেন?

রিফাত শার্টের হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে প্রণয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—ভাই, চিন্তায় তো রীতিমত আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।কি করবো?

রিফাত এর কথা শুনে সুজন চোখ মুখ কুচকে বিরক্ত নিয়ে বলে,

—বাথরুমে যা।তোর জন্য একটু শান্তি মতো চিন্তা ও করতে পাচ্ছি।ভাগড়া দিস না তো।সজীব আমি জানি চিন্তার কোন পর্যন্ত গিয়ে ছিলাম?

শেষের কথাটা সুজন সজীব কে উদ্দেশ্য করে বলে।সুজনের কথায় সজীব এর থেকেও দ্বিগুণ বিরক্ত নিয়ে বলে,

—বাসর ঘর পর্যন্ত।

বলেই সজীব চোখ মুখ কুঁচকে অন্য দিকে ফিরে।সুজন সজীবের কথাটা অত টা খেয়াল না করে বলে,

—ও আচ্ছা।

একটু সর্তক হতেই সুজন বলে উঠে,

—কিহ্!!বাসর ঘর পর্যন্ত? নাউজুবিল্লা! সজীব, আমি তো এখনো বিয়েই করিনি। বাসর ঘর পর্যন্ত কি ভাবে যাবো?

—তো আমি জানি কেমনে? পা’গল এর মতো উল্টা পাল্টা প্রশ্ন কেন করবি আমাকে?তো..

সজীব আর কিছু বলবে সুজন কে এর আগেই প্রণয় একটা ধ’মক দিয়ে বলে,

—চুপ করবি তিনজন এ?সারাক্ষণ এত ঝ’গড়া কি ভাবে করিস তোরা তিন জনে?ফলাফল কি আসে সেটা নিয়ে টেনশনে আছি।আর তোরা এখানে ঝ’গড়া করছিস?

—সরি ভাই!

নিচু কণ্ঠে তিন জনে বলেই চুপ করে যায়।ফলাফল প্রকাশ এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে দুই পক্ষের লোকেরা।

🌸🌸

সন্ধ্যা ছয়টা বাজে।শাহরিয়ার পাবেলের বাসায় জুনায়েদ আজমীর ফ্যামিলি সহ সবাই ড্রয়িংরুমে টিভির সামনে আসন পেতে বসে আছে।মূলত প্রণয়ের নির্বাচন এর ফলাফল নিউজ দেখার জন্য বসে আছে।জান্নাত এক পাশে পার্শিয়া আর জেনিথ কে কোলে নিয়ে বসে আছে।

দুই জনের সাথে বসে বসে দু’ষ্টামি করছে আর কিছুক্ষণ পরে পরে টিভির দিকে তাকাচ্ছে।টিভির মধ্যে লাইভ নিউজ চলছে।হঠাৎ এক সময় ক্যামেরা এসে প্রণয় এর মুখের দিকে আ’টকে। টিভির স্কিনে প্রণয় এর চেহারা ভেসে উঠে।জান্নাত তাকায় তার মি. ভালোবাসার দিকে।মি. ভালোবাসা ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে কোনো দিকে। কিয়তক্ষণ পরেই প্রণয় ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি তুলে মুনাজাত এর মতো হাত তুলে মুখ মণ্ডলে ছুঁয়ে দেয় হাত।ড্রয়িংরুম এর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠতেই জান্নাত সম্বিত ফিরে আসে নিজের ভাবনা থেকে।সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে গেছে মি. ভালোবাসা এমপি হয়ে গেছে।

জান্নাত আবার টিভির স্কিনে চোখ দেয়।প্রণয় বক্তব্য দিচ্ছে হাসি মুখে।গলায় গাঁদা ফুলের মালা।রজনীগন্ধা আর গোলাপ এর ও মালা আছে গলায়।জান্নাত তাকিয়ে আছে লোক টার সেই অমায়িক হাসি টার দিকে।ইশশ্ মি. ভালোবাসা।

🌸🌸

প্রণয়রা বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়েছে।পিছনে সবাই চি’ৎকার করে যাচ্ছে প্রণয় এর নাম নিয়ে নিয়ে।প্রণয় সবাই কে থামতে বলে গেইটের ভিতরে ঢুকে।কিন্তু থামতে বললেই কি থামে কেউ?সেই চি’ৎকার করে যাচ্ছে।প্রণয় আর ওদের বারণ না করে বাসার কলিং বেলে হাত দেয় বাজানোর জন্য।কিন্তু কলিং বেল বাজানোর আগেই খট করে দরজা খুলার শব্দে প্রণয় আর কলিং বেল না দিয়ে হাত নামিয়ে ফেলে।দরজা খোলার পরেই প্রণয় তাকিয়ে দেখে রোকসানা দরজার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় তার মাকে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরে।রোকসানা প্রণয় এর কপালে আদর দিয়ে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে ছেলেকে।

প্রণয় বাসার ভিতরে ঢুকে দেখে শাহরিয়ার পাবেল, জুনায়েদ আজমী, রাহেলা, জুরাইন, আহ্লাদী,প্রান্তিক সবাই তার দিকে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু একটা মানুষ উপস্থিত নেই। প্রণয় আড় চোখে চার দিকে তাকায়।কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষ টার দেখা পায় না।তাই সবার সাথে কথায় মশগুল হয়ে পড়ে।ভেবেছে জান্নাত হয়তো তাদের বাসায় আছে।তাই আর ভাবেনি প্রণয়।

নিচে সবার সাথে কথা বলে উপরে চলে আসে প্রণয়। নিজের রুমে যাওয়ার জন পা বাড়াতেই পাশের রুম থেকে মেয়েলি কণ্ঠ স্বর পেয়ে সেই দিকে যায়।এটা প্রান্তিক এর রুম।প্রান্তিক এর রুমে কে থাকবে মেয়ে? কৌতুহল নিয়ে প্রান্তিক এর রুমে না ঢুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে জান্নাত পার্শিয়া আর জেনিথ এর সাথে কথা বলছে।বোবা প্রাণী দুটা ও জান্নাত এর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।যেন তারা সব বুঝে।

প্রণয় কে নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই প্রান্তিক ভ্রুকুটি কিছুটা কুঁচকে ফেলে।আস্তে আস্তে প্রণয় এর পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আগে রুমের দিকে তাকায়।দেখে জান্নাত বিড়াল দের সাথে কথা বলছে।এবার প্রণয় এর কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে,

—কি সুন্দর মচৎকার দৃশ্য তাই না?

প্রণয় এর ধ্যান নেই।অজান্তে বলে উঠে,

—হ্যাঁ। এক কথায় দারুণ।

প্রণয় এর কথা শুনে প্রান্তিক ফিক করে হেসে দেয়।কারো হাসি শুনে প্রণয় পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রান্তিক দাঁত কেলিয়ে হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। প্রান্তিক প্রণয় কে বলে,

—ভাইয়া তুমি এতটাই ধ্যানে ছিলে যে আমি যে চমৎকার কে মচৎকার বলেছি সেটাও তুমি ধরতে পারোনি।এক কথায় দারুণ না?

—তোর লজ্জা করছে না বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে?

—নাহ।সব তো তোমার থেকেই শিখা।তাই লজ্জা নাই।বাই দ্যা ওয়ে জান্নাত কে কবে বিয়ে করছো সেটা বলো? আর কতো লুকিয়ে চু’রিয়ে দেখবে।এর থেকে ভালো বিয়ে করে নাও। এক দিকে শহর সামলাবে অন্য দিকে বউ সামলাবে।বিয়ের বছর গড়ার মাথায় না হয় বাচ্চা কাচ্চা ও সামলাবে।এমন হলে তো দারুণ হয় নেতা সাহেব।

প্রান্তিক প্রণয় এর কাঁধে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে কথা টা বলে।প্রণয় প্রান্তিক এর হাত টা কাধঁ থেকে নামিয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুরাইন আর আহ্লাদী আসে।আহ্লাদী এর হাতে চার টা চায়ের কাপ একটা ট্রে তে।জুরাইন প্রান্তিক আর প্রণয়ের এর দিকে অতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

—রুমে চলুন।আপনাদের দুই ভাইয়ের সাথে আমার কিছু গুরুত্ব পূর্ণ শলাপরামর্শ করার আছে।

জুরাইন কথাটা একটু ভাব নিয়েই বলে।প্রান্তিক আর প্রণয় ভ্রু কুঁচকে তাকায় জুরাইন এর দিকে।জুরাইন তাদের তাকানো কে উপেক্ষা করে আহ্লাদী কে নিয়ে রুমের ভিতর ঢুকে।জান্নাত এতক্ষণে খেয়াল করেছে তাদের।জুরাইন এর পিছন পিছন প্রণয় আর প্রান্তিক ও এসে রুমে ঢুকে।জান্নাত তাকায় একবার প্রণয় এর দিকে।প্রণয় ও জান্নাত এর দিকে তাকিয়ে ছিলো সেই জন্য দুই জনের চোখা চুখি হয়ে।জান্নাত দৃষ্টি নামিয়ে অন্য দিকে নজর দেয়।

জুরাইন আহ্লাদী এর হাত এর ট্রে থেকে এক কাপ চা নিয়ে জান্নাত এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

—আপু তুই একটু বাইরে যা তো।আমাদের প্রাইভেসির প্রয়োজন।

জান্নাত জুরাইন এর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।এই দশ বছরের পিচ্ছি জুরাইন এর আবার কিসের প্রাইভেসি? ভেবে পায় না জান্নাত। জান্নাত জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—কিসের প্রাইভেসি? আমাকে রুম থেকে বের করে কি যুক্তি আটবি তিন জনে?

—তা তোর না জানলে ও চলবে আপু।তুই বের হো তো।

জান্নাত আর কোনো কথা বলেনি।ও রুম থেকে না বের হলে যে জুরাইন ঘ্যান ঘ্যান করবে সেটা ও খুব ভালো মতেই বুঝতে পেরে বের হয়ে এসেছে।জান্নাত চলে যেতেই তার পিছন পিছন পার্শিয়া ও চলে যায়।জেনিথ বিছানায় একবার প্রণয় এর মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার জান্নাত আর পার্শিয়ার যাওয়ার দিকে তাকাচ্ছে। সে যেন সিদ্ধান্ত হীন তাই ভুগছে।প্রণয় কে ছাড়া যেতে ইচ্ছে করছে না।আবার জান্নাত আর পার্শিয়ার কাছে ও থাকতে ইচ্ছে করছে।

প্রণয় হাসি দিয়ে জেনিথ কে কোলে নিয়ে আদর দিয়ে বিছানায় বসে।প্রান্তিক প্রণয় এর হাতে একটা চায়ের কাপ দেয়।নিজে একটা নেয়।জুরাইন একটা নিতেই আহ্লাদী ট্রে নিয়ে চলে যায়।প্রণয় এবার জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—কি বলবেন আমাদের ছোট ভাই?

জুরাইন প্রণয় এর কথা শুনে তার দিকে তাকায়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রান্তিক আর প্রণয় এর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

—ভাইয়া আমি পাখি কে ভুলতে পারছি না।ওর সাথে আমার সেটিং করিয়ে দিন না।

জুরাইন এর কথা শুনে প্রণয় প্রান্তিক দুই জনে বিষম খায়।প্রণয় চায়ের কাপ টাকে বেডের পাশের ছোট টেবিলে রেখে জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—দেখ ছোট ভাই।পাখি কে যে তুমি ভালো বাসো তার প্রমাণ কি?এটা কোনো ভালোবাসা না।এটা হচ্ছে তোমার খারাপ সঙ্ঘ এর প্রভাব। তুমি তোমার যেই বন্ধুদের সাথে মিশো নিশ্চিত তারা তোমার সাথে এই বিষয়ে বেশি কথা বলে।সেই জন্য তুমি ওদের কথা গুলো ভাবার কারণে পাখির সাথে কথা বললে,পাখি কে দেখলে তোমার মনে হয় তুমি ওকে ভালোবাসো।আসলে সেটা মোটেও না।এটা ভালোবাসা না। এটা হচ্ছে সঙ্ঘ দোষের প্রভাব। তুমি বন্ধু পরিবর্তন কর।

প্রণয় এর কথায় প্রান্তিক এক মত হয়ে বলে,

—একজ্যাক্টলি রাইট ভাইয়া। আমি এই পর্যন্ত জুরাইন কে বার বার এই কথাটা বুঝাইতে চাচ্ছি। কিন্তু ও বুঝতে পারছে না।

প্রান্তিক আর প্রণয় এর কথা শুনে জুরাইন একটু চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।যার ধরুন বুঝা যাচ্ছে তাদের কথা জুরাইন এর পছন্দ না।জুরাইন এবার প্রতিত্তোর দেয়,

—ভাইয় আমি চায়ের কাপ ছুঁয়ে বলছি আমি পাখি কে সত্যি ভালোবাসি। এটা আমার সঙ্ঘ দোষ এর প্রভাব না।যদি আমি মিথ্যে বলি তাহলে তো কাপ টা ভে’ঙে যেতো।

জুরাইন কথাটা বলে থামে।রুমের বাইরে থেকে পার্শিয়া ডেকে উঠতেই প্রণয় এর কোল থেকে জেনিথ লাফ দিয়ে খাট থেকে নামতে গেলে জুরাইন এর হাতের সাথে বারি খায়।আর তাতে জুরাইন এর হাত থেকে কাপটা ফ্লোরে পড়ে ভে’ঙে যায়।আচমকা কাপ ভে’ঙে যাওয়াতে প্রণয় প্রান্তিক চমকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে জুরাইন এর দিকে তাকাতেই দুই ভাই হু হা করে হেসে উঠে।তাদের হাসি দেখে এবার জুরাইন কেঁদে -ই দেয়।যেই সেই কান্না না।প্রণয় কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।প্রান্তিক হাসতে হাসতে শেষ।কাপ ছুঁয়েছে বলে কাপ টা ভে’ঙে গেছে আর প্রমাণ করে দিছে এটা জুরাইন এর সঙ্ঘ দোষ।

🌸🌸

—অভিনন্দন মি. ভালোবাসা।

পিছন থেকে কারো কথা শুনে প্রণয় তাকায়।দেখে জান্নাত তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রণয় হাসি দিয়ে বলে,

—শুকরান।

—আপনাকে তাহলে এবার থেকে কি বলে ডাকা যায় বলুন তো?মি. ভালোবাসা?নাকি এমপি সাহেব।

—আপনার যা ইচ্ছে।তবে আপনার মুখে মি. ভালোবাসা ডাক টাই বেশি মানায়।

—আচ্ছাহ।

বলেই জান্নাত হেসে প্রণয় কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।প্রণয় জান্নাত যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘‘অপেক্ষার অবসান না হয় এবার ঘটাবো জান্নাত।তবে আপনার অজান্তে।’’

চলবে ইনশাল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here