তোর শহরে রেখেছি পা পর্ব -০২

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরুহির কথা শুনে নিতু অনেক রেগে গেল। ও কিছু বলবে তার আগেই একটা মেয়ে এসে বলল,,

“নিতু আপু তোমরা এখানে কি করছো। তোমাদের থার্ড ইয়ারের ক্লাসে স্যার এসেছে তোমাদের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে তো।”

নিতু পেছনে তাকিয়ে একটা ফর্সা মেয়েকে দেখতে পেল। যে নীল কুর্তি সাথে সাদা হিজাব পরেছে। নিতু তাকে দেখে জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বলল,,,

“আরে আফরিন তুমি। আসলে আমি ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের দেখতে এসেছিলাম। আচ্ছা এখন আমি যাই কেমন।”

নিতু ওর দলবল নিয়ে চলে গেল। আরুহি এতক্ষন ওদের কথা শুনছিল। ও কথা শুনে বুঝতে পারল এরা আগে থেকেই পরিচিত। আফরিন এসে আরুহির পাশে বসলো আর বলল,,

“ওরা নিশ্চয়ই তোমার কাছে এসেছিল। কিছু বলেছে তোমাকে? তুমি যেহেতু আমার সাথেই পড়ো তাই তুমি করেই বলছি মাইন্ড করো না।

“ইটস্ ওকে আমি কিছু মনে করিনি।আর ওরা তেমন কিছু বলেনি। বাই দ্য ওয়ে আমি আরুহি মাহমুদ খান।

“আমি নিশি আফরিন। আমাকে তুমি আফরিন বলে ডেকো।তোমার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। আচ্ছা তুমি ভাইয়াকে চিনো কিভাবে?”

“কোন ভাইয়া কে?

“আরে যার সাথে তুমি মাঠে হেসে কথা বললে নিশান আবরার ।”

“উনি তোমার ভাইয়া!”

“হ্যা তো ওটাই আমার ভাইয়া।”

“ওহ আচ্ছা উনার সাথে আমাদের সিলেট দেখা হয়েছিল। সেখানে মজার কিছু ঘটনা ঘটেছিল। সেটার মাধ্যমেই চিনি।’

“তার মানে ভাইয়া কয়েক মাস আগে সিলেট গিয়েছিল সেখানে তোমাদের পরিচয়।”

” হ্যা সেখানেই আমাদের পরিচয়।”

” ওহ আচ্ছা। তুমি জানো আজ অনেক দিন পর ভাইয়াকে এভাবে মন খুলে হাসতে দেখলাম।

“কেন উনি হাসেন না।”

“না হাসে না। উনার মুখে হাসি দেখা মানে বিশাল কিছু।”

“কেন! উনি হাসেন না কেন?

আফরিন কথা ঘুরানোর জন্য বলল,,

“ওসব ছাড়ো তুমি বলো আমার বন্ধু হবে।”

আরুহি বুঝতে পারল ও বলতে চাইচে না। তাই ও সে ব্যাপারে কিছু বললো না। ও বলল,,

“তোমাকে দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে হওয়ায় যায়।”

“হোয়াট ডু ইউ মিন ভালোই মনে হচ্ছে।”

“কিছু না হলাম তোমার বন্ধু।”

“আমাকে কিন্তু তুই করে বলতে হবে। এমনিতে আমি বাচাল মেয়ে আমাকে সহ্য করতে হবে। আমার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক করতে হবে।”

“ওকে বুঝলাম!”

“কি বুঝলি?”

“আমাকে অনেক ধৈর্য্যশীল হতে হবে।”

“হুম এই তো বুঝতে পেরেছিস। এখন তুই আমাকে তুই বলে দেখা।”

“আসলে আমি সহজে কাউকে তুই বলতে পারি না। দু একদিন টাইম লাগবে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তুই আমার বন্ধু এটা ফাইনাল ঠিক আছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। আচ্ছা তোমার ভাইয়া ডাক্তার হবে। আবার তুমিও ডাক্তার হবে। তোমাদের দুজনেরই কি ছোটবেলা থেকে ডাক্তার পেশা টাকে পছন্দ?”

“তা বলতে পারো আমাদের ফ্যামিলিটাই ডাক্তার এর আমার বাবাও একজন ডাক্তার । এ কলেজেই আছে। তার থেকেই আমাদের ডাক্তার পেশাটার প্রতি আলাদা একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছে । ”

“ওহ আচ্ছা !”

তখনি স্যার এলো। ওরা কথা বাদ দিয়ে ক্লাসে মনোযোগী হলো।

___________________

ওদিকে,,,

আরহাম অফিসে গিয়ে সি আই ডি হেড অফিসার নেওয়াজ আহমেদ কে বলল,,,

“স্যার আপনি বলেছিলেন কয়েকদিন আগের কেস টা সল্ভ করতে পারলে।আপনি আমাকে আমার কথা অনুযায়ী একটা পুরোনো কেস ইনভেস্টিগেশন করতে দেবেন। আর সেই কেসটার আমি সল্ভ করে দিয়েছি।স্যার আমি সেই পুরোনো কেসটা এখন ইনভেস্টিগেশন করতে চাই।”

তখন হেড অফিসার নেওয়াজ আহমেদ বলল,,

“কথা যখন দিয়েছিলাম তখন তো তোমার কথা মানতেই হবে। এমনিতেও তোমার পারফরম্যান্স খুবই ভালো। এখন তুমি বলো তুমি কোন কেসটা ইনভেস্টিগেট করতে চাও?”

“মিস্টার এন.এস/NS আর ওর সাথে থাকা কয়েকজন ‌এর পাঁচ বছর আগের কেসটা ইনভেস্টিগেট করতে চাই।”

এ কথা শুনে অফিসার নেওয়াজ আহমেদ হকচকিয়ে উঠলো। উনি উত্তেজিত হয়ে বলল,,,

“আরহাম তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো। NS খুবই শক্তিশালী একজন।তার নাম তো সবাই জানে কিন্তু তাকে কেউ কখনো নিজের চোখে দেখেনি।আর তার সাথে থাকা লোকেরাও খুব শক্তিশালী। NS কে কখনও কেউ দেখিনি শুধু মাত্র একজন ছাড়া। একমাত্র সে-ই দেখেছিল তাকে। তাকে ধরার জন্য কতো গুলো অফিসার নিজের জীবন দিয়েছে তুমি ভাবতেও পারবে না। ”

“স্যার আমি সব জানি। আর NS এর নাম তো আর কম শোনা যায় না। কিন্তু তাকে কেউ ধরতে পারেনা কেন সেটাই বুঝতে পারিনা। এটাও জানি তাকে কে দেখেছিল। তাকে দেখেছিল নামকরা পুলিশ অফিসার মিস্টার মাহমুদ খান।”

“আরহাম তুমি জানলে কিভাবে। কিন্তু সেও তো জেনে কিছু করতে পারলো না। তাকেও ঐ NS এর হাতে মরতে হলো। সাথে তার স্ত্রীকেও। হয়তো তিনিও কিছু জানতেন NS এর সম্পর্কে। কিন্তু তুমি মাহমুদ খানের কথা কিভাবে জানলে।”

“সরি স্যার একটা কথা আপনাকে জানানো হয় নি। আমিই পুলিশ অফিসার মাহমুদ খানের ছেলে।আরহাম মাহমুদ খান।”

“কি!! অবশ্য আমি তোমার বাবার নামের জায়গায় তার নাম দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো অন্য কোন মাহমুদ খান। কিন্তু তার তো কোন ছেলে মেয়ে ছিল বলে জানা যায় নি।”

“আসলে বাবা ছোট বেলা থেকেই আমাদের লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। যাতে উনার কোন শত্রু আমাদের ক্ষতি করতে না পারে। পুলিশ লাইনে ছিল বুঝতেই তো পারছেন কত ক্রিমিনাল কে ধরেছে। সেদিন হয়তো আমাদের ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল। তাই আমি আর আমার বোন আরুহি বাবার এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর পরের দিন বাড়িতে এসেই শুনি আমাদের মা বাবা আর নেই।”

“সো স্যাড ভেরি স্যাড।”

“আমি সি আইডি হয়েছি শুধুমাত্র আমার বাবা মায়ের হত্যাকারীকে শাস্তি দিতে। পুলিশ হলে সহজেই হতে পারতাম বাবার নাম নিয়ে কিন্তু আমরা চায় নি আমাদের সম্পর্কে কেউ জানুক। প্লিজ স্যার আপনি না করবেন না।”

“তুমি আমার ছেলের মতো আর ভালো একজন দক্ষ দেশরক্ষক ও আমি তোমাকে হাড়াতে চায় না। তাই বলছি প্লিজ ওর বা ওর গ্যাং এর থেকে দূরে থাকো।”

“আপনি কিন্তু আপনার কথার বরখেলাপ করছেন স্যার।”

“তুমি কেন বুঝতে চাইছো না আবরার কাজটা এতো সহজ নয় কাজ টা খুব রিস্কি।”

“স্যার আমার কিছুই হবে না। আমি একা থাকবো না আমার সাথে তো A.K ও থাকবে। আর কাজটা সেই ই এখন করতে চাইছে তাই তো আপনাকে বলছি।”

“কিন্তু সে পারবে তো? অবশ্য তার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। কেউ যদি NS কে ধরতে পারে তাহলে সেই ই পারবে। এইটুকু বয়সে সে তো কম কিছু দেখায় নি বরং NS কে যেমন কেউ কখনো দেখিনি শুধু নাম শুনেছে। ঠিক তেমনি সবাই A.K এর নাম শুনলেও কেউ দেখিনি। তবে এদের মধ্যে পার্থক্য হলো একজন খারাপ কাজ করে। আরেকজন খারাপ কাজকারীকে নিধন করে। আই এম প্রাউড টু A.K.

আরহাম তা শুনে মুচকি হাসলো। নেওয়াজ আহমেদ একটা ফাইল বের করে আরহামের হাতে দিল আর বলল,,,

“আমি জানি তোমরা পারবে। তবুও সাবধানে কাউকে কিছু বুঝতে দিও না তোমরা NS এর কেসটা দেখছো। যা করার সিক্রেটলি করো। আমার হেল্প লাগলে বলো। তাকে ধরতে পারলে আমরা আমাদের দেশকে অনেক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারবো। আর A.K এ বলো আমার সাথে যেন যোগাযোগ করে। একটা কেস এর কিছু ইনফরমেশন লাগবে।‌”

“ওকে স্যার ডোন্ট ওয়ারি। আমি বলে দেব। এখন আসি স্যার। আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

আবরার রুমে থেকে বেরিয়ে গেল। হেড অফিসার নেওয়াজ আহমেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিছু মানুষের জীবন নাটককে ও হার মানায়। তিনি মনে প্রানে চান যেন NS কে ধরতে পারে। তার জন্য যে কতো ক্ষতি হচ্ছে সেটা তিনি ভালোভাবেই জানেন তবুও তিনি অপারগ কিছুই করতে পারে নি। একবার গিয়েছিল কিন্তু ওরা উনার মেয়েকেই মেরে ফেলে ছিল। তারপর থেকে তিনি আর NS এর ব্যাপারে যায় নি। বাকি সি আই ডি বা পুলিশ অফিসার যারাই তার বিরুদ্ধে গেছে তাদেরই কাউকে না কাউকে কিছু না কিছু হারাতে হয়েছে। কয়েক জন কে তো তার জীবন টাই দেওয়া হয়েছে। তাই এখন আর কেউ সাহস করে তার দিকে যায় না। কারন সবারই তার জীবন আর পরিবার কে ভালোবাসে। তবে তার A.K আর আরহাম এর ওপর বিশ্বাস আছে যে তারা যত সময় লাগুক না কেন NS কে ধরতে পারবে।

______________________

আবরার সব ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছিল। ঠিক তখন নিতু আবরারের সামনে দাঁড়ালো। আবরার ওকে দেখে একটু বিরক্ত হলো। ও বলল,,,

“এই তোর সমস্যা কি বলতো নিতু। তুই এভাবে আমার সামনে দাড়ালি কেন?”

“তুমি ঐ মেয়েটাকে কিভাবে চেনো। তোমাকে তো কারো সাথে হেসে কথা বলতে দেখিনা তাহলে তার সাথে এভাবে হেসে হেসে কথা বলার কারণ।”

“তোকে সব কৈফিয়ত দিতে হবে না নাকি? তুই কে আমার, শুধু ফুপির মেয়ে বলে তোকে ছেড়ে দিলাম। নাহলে আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়ার জন্য তোকে শাস্তি দিতাম। ”

“আমি কিন্তু মামুকে বলবো তুমি আমার সাথে রুড ব্যবহার করেছো।”

তখন আবরার শান্ত স্বরে আস্তে আস্তে বলল,,

“তো বলনা আমি কি বলবো। তার সাথে আমার কোন লেনদেন নেই। এই পৃথিবীতে আমি সবথেকে বেশি ঘৃণা করি তাকে। এর পর থেকে যদি তুই আমার সামনে ওনার নাম নিয়েছিস তাহলে আমি তোর সাথে কি করবো তুই ভাবতেও পারবি না। আর আমার জীবনে ইন্টাফেয়ার আমার একদম পছন্দ নয়। একদম আমার জীবনে নাক গলাবি না। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে। ”

আবরারের কথা গুলো খুব শান্ত ভাবে বলছিল কিন্তু কথা গুলো এমন ভাবে শুনাচ্ছিল যে নিতু ভয় পেয়ে গেল। নিতু বুঝতে পারল আবরার রেগে গেছে। ও জোর পূর্বক হাসি টেনে বলল,,

“সরি আবরার ভাইয়া আমি একটু মজা করছিলাম।”

“এরপর থেকে যেনো এরকম কিছু না দেখি। আর ঐ মেয়েটার থেকেও দূরে থাকবি। কারন মেয়েটাকে যেমন দেখায় মেয়েটা তেমন না। মেয়েটা খুব ডেন্জারাস তাই সাবধান করলাম। কখন কোথায় ফেঁসে যাস বলা তো যায় না।”

বলেই আবরার মুচকি হাসলো। বাকি সবাই তো অবাক। যে ছেলেটা সহজে হাসে না। সেই ছেলেটা রাগের মাঝেও মেয়েটার নাম নিয়ে মুচকি হাসছে। ইমান আর নিরব কিছু একটা আন্দাজ করলো। এটা ভেবে ওরাও খুশি হলো। ফাইনালি ওদের বন্ধুর জীবনে রঙিন কিছুর আবির্ভাব ঘটতে শুরু করেছে। নিতু ওখান থেকে রেগে চলে গেল। আর মনে মনে বলল,,,

“আমি কাউকে ছাড়বো না। আমাকে সবার সামনে এভাবে অপমান করা। তোমার সাথে আমার বিয়ে টা হয়ে যাক তারপর তোমাকে দেখবো আবরার। আর ঐ মেয়েটাকে ও দেখে নেব।”

_____________________

আরুহি সব ক্লাস শেষ করে বের হলো আফরিন কে নিয়ে। ওদের মধ্যে অনেকটাই ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। আবরার ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। আরুহির স্কুটির পাশেই আবরারের বাইক রাখা। আরুহি আফরিন কে বিদায় জানিয়ে স্কুটির কাছে গেল। দেখলো আবরার ওর বাইকে বসে আছে। আবরার বাইক থেকে নেমে একটা মুচকি হাসি দিলো। তা দেখে আরুহিও মুচকি হাসলো।

” হাসির উত্তরে হাসি দেওয়া ,মানুষ গুলো
অসম্ভব চমৎকার!”

আরুহি “আল্লাহ হাফেজ ” বলে স্কুটি নিয়ে চলে গেল। আর আবরার ওর যাওয়ার পানে অনিমেষ তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর আবরার ও বাইক নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। এমনিতে ওর বাড়িতে যেতে ভালো লাগে না। কিন্তু আজ মনে হলো বাড়িতে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে একটা ঘুম দেবে। অনেক দিন হলো শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। আজ মনে শান্তি অনুভব হচ্ছে। তাই ও অন্য কিছু না ভেবে বাড়ির দিকে রওনা হলো।ওর বন্ধুরা ওর কাজে অবাক হলেও কিছু বললো না। কিন্তু মনে মনে খুব খুশি হলো।
______________________

আরুহি বাসায় গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নিল। তারপর আরহাম কে ফোন করলো। কারন আরহাম ফ্রি থাকলে দুপুরে খেতে আসে। আরহাম জানালো ও আজকে আসতে পারবে না। তাই আরুহি একাই খেয়ে নিল। তারপর ল্যাপটপ নিয়ে বসে কিছু একটা করতে লাগলো।

___________________

আবরার কে এই সময় বাসায় দেখে সকলে অবাক হয়ে গেল। কারন আবরার কখনো এই সময় বাড়ি আসে না। ও আসে সন্ধ্যার পর। আর এসেই দরজা আটকে দেয়। শুধু ডিনার টাইম এ বের হয়। কয়েকজন ছাড়া আর কারো সাথে তেমন একটা কথা বলে না। আবরার এর বাবারা তিন ভাইবোন। ওর কাকা আর বাবা একসাথে থাকে। আবরারের বাবা নাহিয়ান খান মা নাসরিন আফরোজা খান। চাচা রাশেদুল খান তার স্ত্রী রুবিনা খান। ওর চাচাতোতো ভাই রিয়াদ খান তার স্ত্রী নাদিয়া খান ওদের পিচ্চি তিন বছরের মেয়ে আছে নাম মিস্টি। আবরার আর আফরিন দুই ভাই-বোন। এই হলো ওদের পরিবার। আবরার কোন একটা কারনে খান সারনেম ইউজ করে না। তাই আফরিন ও সারনেম ইউজ করে না। ওদের ফ্যামিলি বিজনেস আছে আবরার বাদে ছেলেরা সবাই অফিস সামলায়।

ওকে দেখেই নাসরিন খান কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু কি মনে করে আর এগোলেন না। ওর চাচি রুবিনা খান বললেন,,,

“আবরার তুই এই সময় বাড়িতে তোর শরীর ঠিক আছে তো বাবা।”

তখন আবরার বলল,,,

“চাচি আমি একদম ঠিক আছি। আজ এমনিতে এই সময় বাড়িতে এলাম। কেন কাকি?”

“তুই তো এই সময় আসিস না। তাই আর কি! তুই ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার দিচ্ছি।”

“আচ্ছা আমি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে আসছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। ”

“এখনো নিশু আসে নি?

“এই তো ভাইয়া আমি এসে পরেছি। কিন্তু আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে বলো তো। যে তুমি এই সময় বাড়িতে। তুমি আসবে আগে বলতে আমি তোমার সাথেই আসতাম।”

আবরার পেছনে ঘুরে আফরিন কে দেখতে পেল। আর বলল,,

“আমি জানতাম না যে আমি বাড়িতে আসবো। মনে হলো আজ বাড়িতে গিয়ে একটু ঘুম দেই তাই এলাম।”

“ওহ আচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আজ দুপুরে একসাথে খাবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আবরার ওপরে চলে গেল। নাসরিন খান এর চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। আফরিন ওর মায়ের দিকে তাকালো। ওর মাকে এই অবস্থায় দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপরে চলে গেল। তবে আবরার বাড়ি আসায় সকলেই খুশি হয়েছে। আবরার গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নিচে নেমে আসলো। ও নিচে আসতেই দেখলো রিয়াদ ও আজ বাড়িতে এসেছে। রিয়াদ আবরার কে দেখে বলল,,

“আয় বস কতদিন একসাথে দুপুরের খাওয়া হয় না। আজ তিন ভাই-বোন মিলে একসাথে খাবো।”

আবরার একটা চেয়ারে বসে পরলো। তখন মিস্টি গুটি গুটি পায়ে আবরারের কাছে এসে বলল,,,

“চাচ্চু আত তো তুমি বাড়িতে আছো । তুমি আমার তাতে কেলবে। তুমি দানো ঐ আরফিন আমার তাতে খেলে না খালি মোবাইল নিয়ে তরে থাকে।”

মিস্টির তোতলানো কথা শুনে আবরার মুচকি হেসে মিস্টিকে কোলে নিয়ে বলল,,

“খেলবো তো মামনি আজ আমি তোমার সাথে খেলবো। আর আফরিন কে খুব বকে দেব। আমার মামনির সাথে না খেলে মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। আর ওটা আফরিন হবে আরফিন না। আর ও তোমার ফুপি হয়না তাই ওকে ফুপি বলে ডাকবে। ঠিক আছে।

“ও আমার তাতে জগলা কলে আমি ওতে তুপি বলবো না।”

তখন আফরিন বলল,,,

“কি আমি তোর সাথে ঝগড়া করি। কখন করলাম আর আমাকে তোর তুপি বলা আমার লাগবে না।”

“জগলা কলোই তো । ”

“আচ্ছা পাজি মেয়ে তো তুই।”

তখন নাদিয়া বলল,,,

“হইছে এখন তোমরা থামো। চুপচাপ খাওয়া শুরু করো তো। আর মিস্টি তোমাকে কতোবার বলবো বড়দের সাথে ভালো মতো কথা বলবে। আর আফরিন তোমার বড় না।”

তখন আবরার বলল,,,

“আহ হা ভাবি থামো তো ওকে আর বকো না।”

“চাচ্চু তুমি কুব ভালো। তুমি আমাকে কায়িয়ে দেবে।”

“হ্যা মামনি খায়িয়ে দেব তো। ”

আবরার মিস্টি কে কোলে বসিয়ে পরম স্নেহে খায়িয়ে দিল। আজ সবাই যেন এক নতুন আবরার কে দেখছে। আবরার খাওয়া শেষ করে মিস্টি কে নিয়ে রুমে চলে গেল। বাকিরা কেউ কিছু বললো না। আফরিন আজ কলেজে কি হয়েছে সব রিয়াদ কে খুলে বললো। রিয়াদ সব শুনে খুশি হলো। আবরার মিস্টির সাথে কিছুক্ষণ খেললো ওর আজকে খুব ভালো লাগছে। কেন লাগছে সেটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু ভেতরে খুব শান্তি অনুভব করছে। এই শান্তিই একটা সময় খুব খুজেছে। মিস্টি একটা সময় ঘুমিয়ে পরল। আবরার ওকে বিছানায় শুইয়ে দিল। আর পাশে নিজেও শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণ এর মধ্যেই আবরার চলে গেল ঘুমের রাজ্যে।

______________________

“হ্যা স্যার বলুন!”

“A.K তোমাকে একটা কাজ দেব। আমি জানি তুমি তাড়াতাড়িই একটা কিছু করতে পারবে।”

“জি স্যার বলুন কি করতে হবে। মিস্টার আরহাম আমাকে বলেছে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে তাই তো কল দিলাম।”

“জানা গেছে মেডিকেল কলেজ এ কিছু দু নম্বরি অবৈধ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তোমাকে বের করতে হবে কে আছে এসবের পেছনে।”

“ওকে স্যার আমি দেখেছি। খুব তাড়াতাড়িই আপনাকে একটা সু খবর জানাতে পারবো ইনশাআল্লাহ।”

“এই একটা জিনিসের তোমার আমাকে খুব ভালো লাগে। তুমি কখনো কোন কাজ কে না করো না। আর আমাকে এই কথাটাই বলো।”

“ধন্যবাদ স্যার।”

“তবে কাজটা খুব সিক্রেট লি করতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এতে যেনো কলেজের নাম না আসে। যে কাজটা করছে শুধু যেন তার নামটাই আসে।আর সিক্রেট ভাবে যেন তাকে আমাদের আন্ডারে আনা হয়। কেউ যেন কিছু না জানতে পারে।”

“ওকে স্যার। সব সিক্রেটলিই হবে। এমনিতেও আমার কাজই তো,,,,

“সব সিক্রেটলি করা। আমি তোমাকে ভালোভাবেই চিনি। তুমি যখন একবছর আগে আমাদের সাথে যুক্ত হলে তখনি বলে দিয়েছিলে তোমার সবকিছু যেন সিক্রেট থাকে।”

“হ্যা স্যার আপনি তো সব জানেনই!”

“তোমার ভালোবাবা যে তোমাকে এভাবে গড়ে তুলবে আমি ভাবতেও পারি নি। তোমার ভালোবাবার রিকোমেন্ট এই তো এ কাজে নেওয়া হলো। তোমার বয়স কম দেখে আমি তো নিতেই চাইছিলাম না তারপর তোমার পারফরম্যান্স দেখে নিলাম। আর তোমার আর আরহাম এর জুটি বেস্ট। তোমাদের দুজনকে কোন কাজ দিলে সেটা কঠিন হলেও তোমরা পারফেক্ট ভাবে কাজ করো। আজ পর্যন্ত আমি তোমাদের মতো কাউকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে দেখেনি। তোমার ভালোবাবার পরে তোমাকেই দেখলাম। তিনিও সব কাজ সিক্রেট লি করতেন। তিনিও তোমার মতো সিক্রেট সি আই ডি অফিসার ছিলেন।

“ধন্যবাদ স্যার সবকিছু ভালোবাবার থেকেই শেখা। আচ্ছা রাখছি স্যার ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

A.K ফোন রেখে দিল। আর নিজের কাজে মনোযোগ দিল।নেওয়াজ আহমেদ ভাবতে লাগলো মানুষ টা এমন কেন। আজ পর্যন্ত নেওয়াজ আহমেদ ও A.K এর চেহারা দেখে নি।

____________________

আরুহি সন্ধ্যায় মাগরিব এর নামাজ আদায় করে নিল। আর পরতে বসলো আর পরতে । আরহাম এসেই বোনের রুমে গেল। দেখলো আরুহি মনোরোগ দিয়ে পরছে। তাই ভাবলো ফ্রেশ হয়ে এসে ওর সাথে কথা বলবে। ও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর বোনের রুমে গিয়ে গেল। তখন আরুহি ওয়াশরুমে ছিল তাই আরহাম অপেক্ষা করলো। আরুহি ভাইকে রুমে দেখে বলল,,,

“তুমি কখন এলে ভাইয়া?”

“এই তো এসে ফ্রেশ হয়ে তোর রুমে আসলাম।”

“ওহ আচ্ছা। দুপুরে খেয়েছিলেন তুমি নাকি শুধু কাজই করে গেছো!

“খেয়েছিলাম তো!”

“আচ্ছা ঠিক আছে তোমার সেই সিলেটে দেখা হওয়া বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল আজ।”

“কোথায়?”

“কোথায় আবার কলেজে!”

“ওহ হো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ও তোর কলেজেই ডাক্তারি পড়ে।”

“তা কি বললো তোকে?”

“কি আর বলবে একটু মশকরা করলো।” আরুহি সব খুলে বলল।

সব শুনে আরহাম বলল,,,

“তা আজ কলেজ কেমন লাগলো নতুন বন্ধু হয়েছে?”

“হুম হয়েছে একটা, নাম আফরিন আর সেই আফরিন তোমার সেই সিলেটি বন্ধুর বোন।”

“ওহ ভালো! আর কি সিলেটি বন্ধু বন্ধু করছিস ওর নাম আবরার।”

“হুম নিশান আবরার। আচ্ছা চলো এবার ডিনার করি তুমি কি খেয়েছো না খেয়েছো আমি জানি নাকি।”

“হ্যা চল খুব খুদা পেয়েছে।”

“হ্যা চলো।”

আরহাম আর আরুহি কিছু কথা বলতে বলতে ডিনার সারলো।

ওদিকে,,,

আবরার সন্ধ্যার একটু আগে ঘুম থেকে উঠে দেখলো মিস্টি ওর পাশে নেই। বুঝতে পারলো মিস্টির মা এসে ওকে নিয়ে গেছে। ও ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে কফি বানিয়ে রুমে এলো। ও নিজের কফি নিজেই বানায়। বেলকনিতে দাঁড়ালো আর কফি খেতে লাগল প্রকৃতির এই পরিবেশ টা ওর দারুন লাগলো। ও কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে আনমনে বলে উঠলো,,,

“তোমার সঙ্গে আমার বোধহয় অনেক জন্মের পরিচয় , তাইতো তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিল
আমার শূন্য এ হৃদয়।
জানি কিছু ভালোবাসার গল্প মিথ্যে, সত্যি নয়।
তবে আমাদের ভালোবাসা যেন শেষ অবধি সত্যি হয়।”

মাগরিবের আজান কানে আসতেই ও রুমে গিয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে নিল। তারপর গিয়ে ল্যাপটপ বের করে কিছু একটা দেখতে লাগলো। ও পড়াশোনা নিয়ে খুব সিরিয়াস। ডিনার টাইমে চুপচাপ ডিনার সেরে ওপরে আসলো। রোজ এমনটাই হয় চুপচাপ নিচে গিয়ে খেয়ে দেয়ে আবার চুপচাপ ওপরে চলে আসা।

__________________

আরেকটা নতুন দিনের সূচনা। আজানের ধ্বনি কানে আসতেই চোখ খুললো আরুহি। ও ঘুমের দোয়া পরে বিছানা ছাড়লো ওয়াশরুম থেকে উযু করে ফজরের সালাত আদায় করে নিল। ভোরের আলো ফুটতেই বেলকনিতে দাঁড়ালো সূর্যদ্বয় দেখলো। তারপর নিচে এসে দেখলো আরহাম ওর জন্য চা নিয়ে বসে আছে। দুই ভাই-বোন মিলে চা খেল। তারপর যে যার মতো ওপরে এসে নিজের কাজ করতে লাগলো। তারপর যথাসময়ে রেডি হয়ে নিচে এসে খেয়ে দেয়ে যে যার গন্তব্যে রওনা দিল। আজ আরুহি একটু আগে কলেজে গেল কারন আজ আফরিন আর ও মিলে পুরো কলেজ ঘুরে দেখবে। কলেজ যেতেই ও কিছু একটা দেখে মাথা গরম হয়ে গেল।

অতঃপর,,

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here