মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -০৮

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_৮

~আমার কেনো জ্বলবে কে তুই?

~ যাইহোক তোর যখন কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে আমি যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে ঘুরতে পারবো তাইনা?

~ তোর ব্যাপার আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছিস তুই যাবি?
~ পুড়া পুড়া গন্ধ আসছে কি জ্বলছে মনে হয়।

~ কই আমি তো রান্না বসাইনি কিসের গন্ধ আমি তো পাচ্ছি না।

~ আহা এটা রান্না গন্ধ নয় রে। রান্না ঘর থেকেও আসছে না। আসছে তো তোর মনের ভেতর থেকে।

~ তোকে আজকে আমি মে*রে ফেলবো রে আহিরের বাচ্চা আহির।

~ ছি*হ ছি*হ নিজের ছেলের নাম কি বাপের নামেই রাখবি নাকি লোকে কি বলবে?

লোকের হিসাব পরে আগে তোকে আমি মে*রেই ফেলবো বলছে আর আহিরের পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে। আহির এখনো এটা সেটা বলে পিহু কে রাগাচ্ছে। তবে আহির মনে মনে খুশি। যাক অবশেষে পিহুর মনে একটু একটু করে তার জন্য ফিলিংস কাজ করছে। হাতের কাছে যা পেয়েছে ছুড়ে মে*রে*ছে। আহির ভাবে না এবার ওকে থামানো দরকার। তাই বলে ~ আরে পিহু শোন আমি মজা করছিলাম আমার সাথে যাকে দেখেছিস তিনিও একজন পুলিশ একটা কাজে ছদ্মবেশ নিয়ে ছিলাম আমরা। শর্টকাটে বিষয়টা বুঝিয়ে বলে পিহু কে।

~ এখন কিছু খেতে দে যদিও দৌড়ানি খেয়ে অর্ধেক পেট ভরে গেছে।

পিহু কিছু না বলে চুপচাপ খাবার গরম করতে চলে যায়। খাবার গরম করতে করতে আহির ফ্রেশ হয়ে চলে আসে।
~ কি রে হলো?

~ হুম হয়ে গেছে।
~ তুই খেয়েছিস?

~ তোকে ভাবতে হবে না তুই নিজেরটা ভাব।
~ পিহু তুই কিন্তু রেসলিং এ নাম দিতে পারিস।

~ কেনো?
~ তুই তো কুত্তার থেকেও ভালো দৌঁড়াতে পারিস।
~ কি বললি?

~ না কিছু না রান্না ভালো হয়েছে।
~ খাচ্ছিস তাই কিছু বললাম না। তবে রান্না ভালো হবে কি করে! আমি তো অনেক বেশি লবণ মিশিয়ে দিয়েছিলাম যাতে খেতে না পারিস।

~ কেনো মিশিয়ে ছিলি?
~ খেতে না পারিস তার জন্য।
~ তুই এভাবে অত্যা*চার করবি আমার ওপর?
~ রাগ হয়ে ছিল তাই।

~ আচ্ছা বাদ দেন ম্যাম। এখন ঝটপট কিছু বানিয়ে নিয়ে আসুন।

এবার আর পিহু দ্বিমত পোষণ করলো না। আহিরের নিশ্চয়ই প্রচন্ড ক্ষুদা লেগেছে নইলে এতো বার বলতো না। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে ওদের অনেক রাত হয়ে যায়। আহির সকালে আজকে আর পিহুকে ডাক দেয়না। রাতে অনেক পরে ঘুমিয়েছে দুজন। আহির বাহিরে থেকে নাস্তা নিয়ে আসে। নিজের খাবার খেয়ে পিহুর জন্য ঢাকনা দিয়ে রেখে চলে যায়। তবে যাওয়ার আগে একটা ছোট্ট কাগজে লিখে দিয়ে যায়।

( আমি থানা চলে যাচ্ছি কাজ আছে। উঠে খেয়ে নিস। খাবার এনেছি বাহিরে থেকে আবার ভাবিস না আমি বানিয়েছি । (আহির)

পিহু ঘুম থেকে উঠেই কাগজটা পায়। লেখাটা পরে বলে~ এই লোকটা কোনো দিন ভালো হবে না। বলার কি আছে আমি বানাই নি। আমার বয়েই গেছে ভাবতে। পিহু খেয়ে কোচিং এ চলে যায়। আহির থানায় কাজ করছিল কিছু রিপোর্ট দেখছিল। এমন সময় আহান রহমানের ফোন আসে।

~ আসসালামু আলাইকুম কাকাই কেমন আছো?

~ আলহামদুলিল্লাহ তোরা কেমন আছিস?

~ এইতো আলহামদুলিল্লাহ, বাড়ির সবাই কেমন আছে?

~ বাবা তোরা কি আসতে পারবি?

~ কেনো কাকাই কোনো সমস্যা?

~ হ্যাঁ রে পিহুর মা খুব কান্নাকাটি করছে অসুস্থ হয়ে পরেছে । মেয়েকে ছাড়া তো কোনো দিন এতো দূরে থাকে নাই। অনেক দিনই তো প্রায় হয়ে গেলো তোরা গেছিস।

~ কান্নাকাটি করলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবেতো কাকিমনি। আমরা আজকে রাতেই ফিরবো তুমি ভেবো না।
~ আচ্ছা বাবা সাবধানে আসিস।

আহির বলে তো দিলো যাবে কিন্তু এখন কি তাকে ছুটি দিবে? টেনশনে পরে যায়। মেহের তখন পেছন থেকে বলে ~ তোমরা যেতে পারো দেবরজী আমি সব সামলে নিবো।

~ আসলে ম্যাম,,,
~ আমি সব শুনেছি। তোমরা যাও।

~ বাঁচালেন ভাবি। অসংখ্য ধন্যবাদ।
~ সাবধানে যেও।
~ ঠিক আছে।

আহির বাসের টিকিট কেটে নেয় ফোনে। তারপর বাকি কাজ গুলো শেষ করে নেয়। পিহু তো কোচিং ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হবে। তাই আহির কাজ শেষ করে আগেই বাসায় চলে যায়।
যা যা প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে নিয়েছে। একটা আলমারি নিয়ে যে পিহুর সাথে তার কি ঝগড়াটা লাগে। তবে আহিরের ভালো লাগে পিহুকে রাগাতে। কবে যে বুঝবে পিহু! পিহু আজকে দুপুরে দিকে চলে আসে। এসে দেখে আহির ব্যাগ গুছিয়ে বিছানার উপর রেখে দিছে।

~ এগুলো কি?
~ চোখে কি কম দেখিস নাকি?
~ না। ব্যাগ গুছিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?

~ আমি একা নয় তুইও যাবি।
~ কোথায়?
~ চিড়িয়া*খানায়।

~ তুই বলবি কিনা?
~ আবার তুই!! বাড়ি যাবো আমরা।
~ সত্যি?
~ হুম ফ্রেশ হয়ে কিছু রান্না কর।

পিহু প্রথমে খুশি হলেও একটু পরে বলে আমি যাবো না। আহির বুঝতে পারে রাগে করে বলছে। কোনো মতো বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করে। তবে পিহুর মায়ের কথাটা বলে না। কারণ এখন বললে সারা রাস্তা কান্না করতে সমুদ্র বানিয়ে ফেলবে। রাতে বাসে উঠে আহির আর পিহু। চলন্ত বাসে হঠাৎ একটা মহিলা চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়। আহির এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? অনেকেই জিজ্ঞেস করছে কিন্তু মহিলাটা কিছু বলছে না। পিহুর একটু ভয় ভয় লাগছে তাই আহির কে ডাক দেয়। আহির গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরে। একটু পরে কিছু একটা মনে হতেই প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখে মানি ব্যাগ নাই। আহির বুঝতে পারে মহিলাটি চো*র। কিন্তু তখন মহিলাটি বাস থামাতে বলে তার কাজ শেষ। কিন্তু আহির মহিলাটি নামার আগেই সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে~ দেখুন তো আপনাদের মানি ব্যাগ আছে কিনা? অনেকই বলে নাই। আহির দুজন মহিলাকে এগিয়ে এসে মহিলাটির ব্যাগ দেখতে বলে। পাঁচটা মানি ব্যাগ পাওয়া যায়। মহিলাটি আবার কান্না শুরু করে দেয়।

~ সাহেব মাফ কইরা দেন আর জীবনে চু*রি করমু না।
~ চো*রের তো এটা কমন ডায়লগ কেমনে বিশ্বাস করবো?

~ সাহেব পেটের দায়ে চু*রি করে খাই। ছোট ছোট বাচ্চা আমার বস্তিতে থাকি কাপড় দেইখা অনেকে পছন্দ করে না। কামেও লেয় না। কি করমু সাহেব আপনে কন?

অনেকেই পুলিশে ধরিয়ে দিতে বলে কিন্তু আহির মানি ব্যাগটি নিয়ে কিছু টাকা দিয়ে বলে ~ এখন থেকে কাজ করে খাবেন। তারপর বাস থেকে নামিয়ে দিতে বলে।

আহির আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পরে। পিহুসহ অনেকে জিজ্ঞেস করে ~ ছেড়ে দিলেন কেনো?

~ মহিলাটিকে আমার অসহায় মনে হয়েছে তাই। আর কেউ কিছু বলার আগেই আহির নিজেদের পরিচয় দিয়ে দেয়। তাই আর কেউ কিছু বলে না।

বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক ভোর হয়ে যায়। তবে আহির পিহুদের বাড়িতেই আগে যায়। পিহুর মা পিহুকে দেখেই অর্ধেক সুস্থ হয়ে যায়। সকালে ফুলমতি খবর পায় আহির এসেছে। কিন্তু এখনো তার কাছে না এসে পিহুদের বাড়িতে আছে শুনে রাগ করে। এদিকে আহির সারারাত জার্নি করে এখনো ঘুমাচ্ছে। আহিরের মাও কিছুটা কষ্ট পায় নিজের ছেলে কি তবে পর হয়ে যাচ্ছে?

#চলবে?

(বিঃদ্রঃ সবার অনেক অভিযোগ কেনো নিয়মিত দিচ্ছি না। আম্মু, আব্বু, বোন, সবাই অসুস্থ আমারও জোর ঠান্ডা তবে এখন আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো আছি। তবে বাড়ির সব কাজই এখন আমার করতে হচ্ছে তাই নিয়মিত গল্প দিতে পারছি না। তার উপর আবার পরীক্ষার ডেট ও দিয়ে দিয়েছে। আশা করি আপনারা ভুল না বুঝে আমার পরিস্থিতিটা বুঝবেন। সবাই দোয়া করবেন আমার পরিবারের জন্য। হ্যাপি রিডিং 🥺🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here