মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -১৩

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_১৩

“কি করে পারবে বলুন তো?এটা কি কোনো সন্তানের পক্ষে মানা সম্ভব!?”

“আহির কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিলেই মায়শা বলে~ থাক আমাকে সান্ত্বনা দিতে হবে না। নিজেকে সামলে নিতে পারি। প্রতি উত্তরে আহির আর কিছু বলে না।”

“মায়শা আবার বলতে শুরু করে জানেন আমি আমার বাবা কে এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারিনা। মনে হয় বাবা সব সময় আমার আশে পাশেই আছে। বুকের বাম পাশে খুব করে লাগে যখন প্রাণ খুলে বাবা ডাকটা ডাকতে পারি না। বাবার অনুপস্থিতিটা আজও মেনে নিতে পারছিনা। সেই জায়গাটা আজ ও শূণ্য, সত্যিই ভুলতে কষ্ট হয়।”

“যখন দেখি কেউ তার বাবাকে নিয়ে ঘুরতে গেছে, বাবা এটা দিয়েছেন,ওটা দিয়েছেন অন্যের বাবার ভালোবাসা, শাসন,অনুপ্রেরণা দেখলে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়। মনে হয় ইশ যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতেন। বাবার অভাববোধটা সবসময় অনুভব করি। মায়শা এবার কান্না করে ফেলে বলতে বলতে।”

“আহির কিছু না বলে মায়শা কে কিছুটা সময় দেয়। কোনো প্রশ্ন না করে চুপচাপ থাকে। কিছুটা সময় নিয়ে মায়শা আবার বলতে শুরু করে।”

“আপনি এখন হয়তো ভাবছেন বাবার কথা বলছি মায়ের কথা কেনো বলছি না তাইতো?

~” হুম উনি কোথায়? উনিও কি,,,,!?
~” না বেঁচে আছে তবে কোথায় জানি না,,

~”মানে,কোথায় আছে জানেন না!?
~” নাহ।

~” বিষয়টা বুঝলাম না।
~” মানসিক হাসপাতালে নিয়ে রেখে আসা ছিল শেষ দেখা।

~”কিন্তু আপনার ভাই তো বললো আপনি ছাড়া তার আর কেউ নেই।

~” ভাইয়া ভাবে মা ও হয়তো আর বেঁচে নেই। তবে আমি বিশ্বাস করি মা বেঁচে আছে। একদিন আমাদের কাছে ফিরে আসবে। কথায় বলে না বিশ্বাসে মেলায় বস্তু। একদিন সত্যি ফিরবে দেখবেন।

~ কি হয়ে ছিল আপনার মায়ের সাথে!?

“ভাইয়া ঢাকা এসেও থামেনি। ওদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে থাকে। বিষয়টা মা জানতো না আমি ছোট হলেও ভাইয়া আমাকে বলেছিল বাবার অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। নইলে বাবার আত্মার শান্তি হবে না। ছোট হলেও কথা গুলো আমার মস্তিষ্কে গেঁধে যায়। ভাইয়া আমায় নিষেধ করেছিল কাউকে বলতে এমনকি মাকেও।”

“বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। আমি তখন এইচএসসি দিবো সবে। কয়েক দিন পরেই আমার পরীক্ষা। ভাইয়া লুকিয়ে অনেক প্রমাণ জোগাড় করে থানায় নিয়ে যায়। ভেবে ছিল এখানকার পুলিশরা সাহায্য করবে। কিন্তু কি করে ছিল জানেন!?

~” কি!?

অন্যদিকে____

“পরের দিনই পিহু কে নিয়ে বাড়ি চলে এসেছে পিহুর বাবা মা। আরফান রহমান মনে মনে ভয় পেলেও প্রকাশ করছে না। আহিরের মায়ের কান্না এখনো থামেনি। আহিরের মা বাড়ি ফিরে সব কথা ফুলমতি কে বললে সব দোষ পিহু কে দেয়। এক মুহূর্ত দেরি না করে পিহুদের বাড়ি যায় আহিরের মাকে নিয়ে। ”

” সবাই বসে পিহুকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। সবাই বলছিল আহির ফিরে আসবে কাজে গেছে। আরফান রহমানও তাই বুঝাচ্ছে কিন্তু পিহু ও কান্না করে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে ফুলমতি এসে পিহুর সামনে দাঁড়ায়। পিহু কে উদ্দেশ্য করে ~” তুই আমার নাতি কে আটকাতে পারলি না। এতোদিন কোনো খবর নেই তা একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। আসলে পর কখনো আপন হয় না।”

“সবাই চমকে উঠে ফুলমতির কথা শুনে। পিহু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতেই পারছে না এই কথার অর্থ কি। আহিরের মা পিহুর ওপর রেগে থাকলেও তার শাশুড়ী যে এমন কথা বলবে ভাবতে পারিনি। আরফান রহমান আর আহান রহমান ফুলমতি কে থামানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু তিনি থামার নামই নিচ্ছিল না। আরফান রহমান আহিরের মায়ের ওপর রেগে যায় ফুলমতি কে এখানে নিয়ে আসায়। ফুলমতি কোনো মতো বের করে নিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় পিহু বলে ওঠে ~” দাঁড়াও। পর কখনো আপন হয় না মানে!? আমি কি তোমাদের আপন নই!?

“ফুলমতি না তাকিয়েই উত্তর দেয় না। পিহু দৌড়ে তার মায়ের কাছে যায় মা দিদুন কি বলছে এসব!? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। পিহু কে অন্য রুমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সে যায় না। খবর পেয়ে অনিমা আর অর্পাও চলে এসেছে। অনিমার সম্পত্তির লোভ থাকলেও ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের সে ভালোবাসে। এমন খবর পেয়ে সে আর রাগ করে থাকতে পারেনি চলে এসেছে। কিন্তু মায়ের কথা শুনে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পরে। অর্পা দৌড়ে এসে পিহুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। চারপাশে নিরব পরিবেশ সবাই চুপচাপ কারো মুখে কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙে পিহু বলে ~ ” আমি সত্যিটা জানতে চাই। আমি তোমাদের আপন না হলে আমি কে!?

“পিহুর মা কান্না করতে করতে বলে ~” তুই আমার মেয়ে আমার। আমি তোকে মানুষ করেছি। আর কোনো পরিচয় নেই তোর বুঝতে পেরেছিস।

“পিহু এগিয়ে গিয়ে মায়ের হাত মাথায় ওপর নিয়ে বলে~”তুমি এবার বলো আমি তোমার নিজের মেয়ে!?

~” জন্ম না দিলে কি মা হওয়া যায় না!? এতো বছর ধরে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে তোকে বড় করলাম আজকে তুই বলছিস তুই আমার মেয়ে কিনা। বেশ বলছি শোন।

অতীত ______

“আমার একটা তিন বছরের বড় বোন ছিল। আমরা দুই বোন ছিলাম। আপা আমাকে অনেক ভালোবাসতো। তোর বাবার সাথে আপার বিয়ে ঠিক হয়। বাবা আপার অনুমতি না নিয়ে বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলে। আপা অন্য একজনকে ভালোবাসতো। বিয়ের আগের তার সাথে পালিয়ে যায়। বাবা মান সম্মান বাঁচাতে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। প্রথমে আমিও রাজি হয়নি বাবা অসুস্থ হয়ে পরায় রাজি হয়ে যাই। তোর দিদুনও অনেক ঝামেলা করেছিল। এই বাড়িতেই সে ছেলে বিয়ে দিবে না বলেছিল। কিন্তু তোর বাবা আমাদের পরিবারের কথা ভেবে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। তোর বাবা খুব ভালো একজন মানুষ। তাকে পেয়ে বিয়ের পরে আর আমার মনে হয়নি আমায় জোর করে বিয়ে দিয়েছে। প্রথম প্রথম শাশুড়ী মা আমাকেও মেনে নেয়নি। কিন্তু তোর বাবার জন্য কিছু বলতে পারেনি। ভালোই চলছিল দিন গুলো। শাশুড়ী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরায় আমাকে বলে নাতি নাতনির মুখ দেখে তিনি ম*রতে চায়। বাড়িতে তখন আহির আর আবির ছোট। দিহান বিহানের বাবা ছোট হওয়ায় তখনো বিয়ে করেনি। আসলে তখন বিয়ে করতে চাননি।

“দেড় বছর অনেক চেষ্টার পরেও আমার কোনো সন্তান হয়না। একদিন তোর বাবা কে নিয়ে আমি ডক্টরের কাছে গেলাম। কিছু পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। রিপোর্ট গুলো আসে তিনদিন পর। সেগুলো থেকে জানতে পারি আমি কখনো মা হতে পারবো না। আমি অনেক ভেঙে পরি। তোর দিদুন বিষয়টা জানতে পারলে আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। আরও বলে ছেলে কে ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দিবে। তখন তোর বাবা ব্যাংকে চাকরি করতো। ট্রান্সফার নিয়ে আমরা ঢাকায় চলে আসি। আমার চিকিৎসা শুরু করে। একদিন ডক্টরের কাছে থেকে ফিরছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় আপাকে দেখে চমকে উঠি। দুবছর পরে আপাকে দেখলাম। আপার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

~”কেমন আছিস বোন?
~” আলহামদুলিল্লাহ আপা তুমি কেমন আছো? আমাদের কথা কি একবারও মনে পরেনি?

~” মনে তো সব সময়ই পরে রে বোন।
~” তা কয় মাস হুম!?

“আপা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে সাত মাস। ডাক্তারের কাছেই গিয়ে ছিলাম চেক-আপ করাতে। আপা আমাকে জোর করে তার বাসায় নিয়ে যায়। আমার কথা গুলো আপাকে বলতেই আপা বলে ~”বোন কাঁদিস না আমার মেয়ে কি তোর মেয়ে না? আমার মেয়েকেই তোকে দিয়ে দিবো। আপা আমাকে অনেক ভালোবাসতো। এভাবেই আমাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যায়। আপাকে এই সময় একা থাকে বলে আমরা আমাদের বাসায় নিয়ে আসি। দুলাভাইও অনেক ভালো মানুষ খুব সহজেই আমাদের সাথে মিশে গেলেন। এভাবেই আমাদের দুই বোনের জীবন কাটছিল। আমি নিজের কষ্টের কথা ভুলেই গেছিলাম। সারাদিন আপাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। হঠাৎ একদিন রাতে আপা বাথরুমে পরে যায়। তার চিৎকারের আমরা দৌড়ে যাই। অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। সেই দিন দুলাভাই বাসায় ছিল না। আমি আপার কাছে রাতে থাকতে চাই কিন্তু সে থাকতে দিতে চায়না তবুও আমি জোর করে তার কাছে ছিলাম কিন্তু আমাকে না ডেকে একাই বাথরুমে যায় আর তারপর,,,!
আমি আর তোর বাবা মিলে আপাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডক্টর র*ক্ত জোগাড় করতে বলে। তোর বাবার র**ক্তের গ্রুপ সেম হওয়াতে বাহিরে যেতে হয়নি সে নিজেই সব র*ক্ত দেয়।”

“তিন ঘন্টা পরে নার্স একটা ফুলের মতো বাচ্চা কে নিয়ে বাহিরে আসে। আমার কোলে তোকে তুলে দেয়। কতোটা আনন্দ হচ্ছিল বলে বুঝানো যাবে না। হঠাৎ আপার মনে হলো আপা ঠিক আছে তো!?

#চলবে?

( বিঃদ্রঃ ফো*নে কি সমস্যা হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছি না।😔)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here