পর্বঃ১৯
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)
…
সায়ন্তিকা সায়নের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে আর সায়ন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আইসক্রিমের স্টলের সামনে সায়ন্তিকাকে এনে আইসক্রিম কিনে দিচ্ছে কিন্তু তারপরও কান্না থামছে না।
‘আরে এতো কান্না করার কি আছে যেই মেয়েটা তোকে বকেছে ওরে খুঁজে পেলে আমার কাছে নিয়ে আসিস। নে আইসক্রিম খা। কোনটা খাবি বল নাকি পুরো দোকানটাই তুলে নিবো?’,সায়ন্তিকার গাল টেনে সায়ন বলে।
‘ঐ আপুটা এতো রুড। আমাকে ভালো করে বলতে পারতো কিন্তু কীভাবে ধমক দিয়ে বললো আবার টাকার গরম দেখিয়ে গেলো।তুমি কিন্তু আপুটাকে পেলে এটার শোধ নিবা।’,নাক টেনে বলে সায়ন্তিকা।
‘আপুটাকে আইসক্রিম দিয়ে গোসল করিয়ে দিবো সমস্যা নেই।এখন কান্না থামা না হলে মেকআপ সব নষ্ট হয়ে ছেলেরা তোর আসল রুপ দেখে ফেলবে।পরে সবাই ভয়ে পালাবে।’
সায়নের এমন কথা শুনে সায়ন্তিকা কান্না থামিয়ে সায়নকে মারতে থাকে এক পর্যায়ে হেঁসে দেয়।
‘কেনাকাটা সেরা আয় বান্ধবীকে নিয়ে আমি বাহিরে আছি।আমার একটু কাজ আছে সেটা সারতে হবে।শপিং শেষ হলে কল দিস।’
সায়নের কথায় সায়ন্তিকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।সায়ন হেঁটে স্হান ত্যাগ করে।
‘তোর ভাইকে এই প্রথম দেখলাম একটু নরমাল ভাবে কথা বলতে। সবসময় দেখি কেমন গম্ভীর থাকে।ভাইয়া কি হাসে না?’,সায়ন্তিকার বান্ধবী জিজ্ঞেস করে।
‘ভাইয়ার পারসোনালিটি এমনই।যখন যেমন প্রয়োজন তেমন ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে।চল শপিং শেষ করি।’
সায়ন্তিকা আর তার বান্ধবী চলে যায়।
মলের বাহিরে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে সায়ন। রাইদার নাম্বারে আবারো কল দেয় কিন্তু নাম্বার এখনো ব্লকড। তখন রাইদাকে দেখার পর অনেকবার কল দিয়েছিলো কিন্তু নাম্বার ব্লক থাকায় জিজ্ঞেস করতে পারেনি মলের বিষয়টা।
রাইদাকে একটা মেসেজ পাঠায়।মেসেজটা পাঠিয়ে অন্য এক নাম্বারে কল দিয়ে কথা বলতে শুরু করে।
রুহির কাঁধে মাথা দিয়ে উবারে বসে আছে রাইদা।গাড়ির উইন্ডো দিয়ে রাস্তা দেখতে থাকে।
‘মেয়েটাকে যেভাবে বকা দিলি এমন বকা মনে হয় না জীবনে কেউ ওরে দিছে।’,পায়েল হাসতে হাসতে রাইদাকে বলে।
‘বড়লোকের মেয়েগুলো এমনই হয়।নাক টিপলে এখনো ওয়া ওয়া করে সেই মেয়ে টাকার গরম দেখায়।’,অর্ক বলে।
‘মেয়েটার কপাল ভালো আরেকটু হলেই রাইয়ের হাতে থাপ্পড় খেতো।’,বাপ্পি হুট করে বলে।
‘তোরা থাম তো। এক কথা নিয়ে আর কত গল্প করবি।’,বিরক্ত হয়ে রুহি বলে।
‘তাহলে তোর বিয়ে নিয়ে গল্প করবো?’,রুহির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি ফেলে অর্ক।
‘রুহি দুলাভাইয়ের নাম্বার আছে? কালকে কিন্তু কল দিয়ে ভার্সিটির ক্যান্টিনে ডাকবি গল্প করবো।’,রাইদা অর্কের দিকে তাকিয়ে বলে।
অর্ক মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।রুহি মাথা নিচু করে সব শুনতে থাকে।
‘তাহলে তো ভালোই হবে নতুন দুলাভাইয়ের থেকে ট্রিট নেওয়া যাবে তুই কি বলিস অর্ক?’,পায়েল অর্ককে রাগাতে বলে।
‘রুহি সেমিস্টার শুরু হওয়ার আগে বিয়ে সেরে ফেল না হলে আমি এতো ব্যস্ত মানুষ তোর বিয়েতে যেতে পারবো না সময়ের অভাবে।’,বাপ্পি সানগ্লাস চোখে দিয়ে বলে।
‘তুই আমার সানগ্লাস চুরি করছিস?দে ফেরত দে। ‘,পায়েল আর বাপ্পি সানগ্লাস নিয়ে টানাটানি করতে থাকে।
‘কালকে সকালে গিয়ে বাপ্পি অডিটোরিয়াম দখল করে রাখবি যাতে সিনিয়ররা সুযোগ না পায়।আমি আর রাই ঠিক সময় পৌঁছে যাবো।’,ফাহিম বাপ্পিকে বলে।
‘কালকে সারাদিন নাচের অনুশীলন চলবে?’,অর্ক ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যা মোটামুটি। কেন তোর কাজ আছে কোনো?’,ফাহিম জিজ্ঞেস করে।
‘না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।সবাই তো আসছিস?’,অর্ক জবাব দেয়।
‘আমার ডিউটি আছে আমার লেট হবে।’,রুহি বলে উঠে।
‘তোকে না বলছি চাকরিটা ছাড়।আমাদের যা ইনকাম তাতে তো তুই ভালো শেয়ার পাস তারপরও তোর চাকরিটা কেনো লাগবে?’,বাপ্পি জিজ্ঞেস করে রুহিকে।
‘ঢাকায় থাকতে গেলে অতিরিক্ত ইনকামের প্রয়োজন আছে। আর তাছাড়া গ্রামে মাস শেষে ও টাকা পাঠায়, নিজের পড়ার খরচ নিজে চালায় এতো কিছু মেইনটেইন করতে যথেষ্ট ইনকাম দরকার। আশা করি ওর পরিবার বিয়ের জন্য ভালো ছেলেই দেখেছে যাতে মেয়ের কষ্ট না হয়।’,রাইদা বলে।
সবাই চুপ হয়ে যায় কেউ আর কিছু বলে না।
সকলে একে একে নিজেদের বাসায় নেমে গেলে রাইদা আর ফাহিম বাসায় ফিরে আসে। কালকে সকাল থেকে প্র্যাক্টিস শুরু হবে সেই জন্য আজকে সকলকে বিশ্রামের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাসায় ফিরে ফহিম নিজের রুমে গিয়ে দরজা আঁটকে দেয়।মিসেস ফিরোজা টিভি দেখছিলো তখন রাইদাতার রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। বাহির থেকে ফিরে এখনো জামা পাল্টায়নি ঐ অবস্থায় চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে।
ঘুমে চোখ দুটো সবে লেগে আসছিলো তখন ফোন বেজে উঠলে বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে কে কল করেছে। ফোনে নানুর মেয়ে নামে সেভ করা নাম্বারটা দেখে হাই তুলে কল রিসিভ কে।
‘রাই স্পিকিং, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ নানুর মেয়ে?’,কল রিসিভ করে রাইদা বলতে থাকে।
‘বেয়াদব মেয়ে মাকে সালাম কালাম দেওয়া ভুলে গেছিস? আর তোকে না নিষেধ করছি আমাকে ঐ নামে ডাকতে না?’,রাইদাকে ধমক দিয়ে বলে তার মা রওশন আরা।
‘আপনি ভুলে যাচ্ছেন মিসেস রওশন আরা জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না সেটার জন্য যোগ্যতা লাগে।আপনি আমার নানুর মেয়ে এর বেশি কিছু না।’,রাইদা শান্ত গলায় জবাব দেয়।
‘দেখ রাই তোকে মানুষ করতে এতো পরিশ্রম করেছি আর তুই এভাবে প্রতিদান দিচ্ছিস?কখন কোথায় যাস কি করিস মা হয়ে কিছুই জানি না। মানুষের কাছ থেকে আমাকে শুনতে হয় মেয়ের খবর।’
‘আপনার ভাষন দিতে যদি কল দিয়ে থাকেন তাহলে কল কেটে দিচ্ছি।’
‘তোর বাবা তোর সাথে কথা বলতে চায় নে কথা বল।’
‘কেনো নানুর মেয়ে জামাইয়ের ফোন নেই?উনি কি নিজের ফোন থেকে কল দিতে পারছে না? আর কল দিলেই বা কি বলবে নতুন কোনো পাত্রের কথা নিশ্চয়ই বলবে।অমুক একটা পাত্র পেয়েছি আম্বানির কাজের লোকের ছেলে কিংবা তমুক একটা পাত্র পেয়েছি সাকিব আল হাসানের খালাতে চাচাতো ফুফাতো ভাই,তার আনা পাত্রের নমুনা তো এমনই।’
‘ঠিক আছে আর বলবো না কিছু।তোর বাবাকে বলবো তার নাম্বার দিয়েই কল দিতে। তুই বাসায় ফিরবি কবে?গ্রামে ঐ পরিবেশে তোর তো কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই।’
‘সেই চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।আপনি নিজের আর আপনার বরের চিন্তা করেন।রাখছি ভালো থাকবেন।’
কথাগুলো বলে রাইদা কল কেটে দেয়। চোখের পলক ফেলতেই এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে বলিশে পড়ে।
ফোনটা আবারো বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বার চেক না করেই কলটা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে রাইদা।
‘উফ আপনাকে বললাম না আমার ফেরার সময় হলে আমি ঠিক সময় বাসায় ফিরবো। বেশি কল দিয়ে বিরক্ত করলে এই জন্মে আর আমার চেহারা দেখতে পাবেন না।’,রাইদা এক টানা কথাগুলো বলে শ্বাস নেয়।
‘মনে হচ্ছে কারো উপর অনেক রেগে আছো?’ আমার রি তো শুধু আমার উপরই রাগ করার কথা তাই না? এই রাগে অন্য কেউ ভাগ বসালে আমার তো ভালো লাগবে না।বউ রাগ করবে আমি রাগ ভাঙাবো এটা তো আমার চির স্বপ্ন।’,সায়ন ধীর গলায় হেঁসে হেঁসে বলে।
সায়নের কন্ঠ পেয়ে রাইদা ফোন কান থেকে সরিয়ে দেখে অপরিচিত আরেকটা নাম্বার।
‘কি ভাবছো? এই নাম্বারের বিষয়ে ভাবছো?সিমটা কিছুক্ষণ আগেই কিনেছি। ওপেন করেই তোমাকে কল দিলাম।বউ রেগে নাম্বার ব্লক করে রেখেছে তাই বলে কি বউকে বিরক্ত করা ছেড়ে দিবো? এতো সহজে হার মানার ছেলে ইমতিয়াজ সায়ন না।এই নাম্বার ব্লক করলে আরেকটা সিম কিনেছি সেটা দিয়ে কল দিবো।’
‘আপনি দেখছি নিব্বাদের মতো আচরণ করছেন।আপনার বয়স অনুযায়ী আপনাকে যতটুকু ম্যাচিউর ভেবেছিলাম এখন দেখছি তার ছিটে ফোঁটাও নেই আপনার মধ্যে। আপনার কি মনে হয় এসব করলে আমি পটে যাবো?’
‘বউয়ের সাথে ম্যাচিউরিটি দেখিয়ে কি হবে?আমার বউ যথেষ্ট ম্যাচিউর তার সাথে তো উল্টা আচরণ করা উচিত না হলে সংসারে সে বোর হয়ে যাবে। আর বউকে পটানোর কি আছে? তুমি স্বীকার করলেও আমার বউ আর না করলেও আমার বউ।’
‘এখন মনে হচ্ছে একটা মাইক ভাড়া করে রাস্তায় নেমে মাইকিং করে আপনার বলা বাকি। হ্যালো এলাকাবাসী শুনছেন রাইদা রাফায়েত আমার বউ।দেখেন দেখেন এই মেয়ে আমার বউ যে আমাকে দু চোক্ষে দেখতে পারে না।’
‘আরে বাহ্ বউ ভালো আইডিয়া দিয়েছো তো। আমি কথা দিচ্ছি তোমার ঠিকানা পেলেই মাইক নিয়ে হাজির হয়ে যাবো।বউ ও বউ তুমি কোথায় আছো একবার বলো না প্লিজ।তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে অনেক।একটু এসে জাস্ট দেখে চলে যাবো।এখন বুঝলাম কেনো মানুষ প্রেমিকাকে বিয়ে করতে লেট করে।প্রেমিকা হলে তখন কন্ট্রোল থাকে কিন্তু বউ হলে এক সেকেন্ড ও কন্ট্রোল হয় না।’
‘এই একদম বউ ডাকবেন না।এভাবে ডাকলে বিরক্ত হই আমি। আমি আপনার প্রেমিকা ছিলাম না কোনোদিনই আর আপনার বউও না আমি।যা হয়েছে দুর্ঘটনা।’
‘প্রেমিকা ছিলা না কিন্তু এখন তুমি আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ।তুমি বললেই কি আমি বউয়ের দাবী ছাড়বো নাকি? দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ আমার। বিয়ের পর বউটাকে একটু কাছে পেলাম না।বউয়ের চুমুর অভাবে এই দুইদিনেই শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গেছি।রি একটু মায়াদয়া করো এই বালকের উপর।’
‘ধ্যাত আপনার সাথে তর্ক করাই অযথা সময় নষ্ট।আপনার মুখের লাগাম দিন দিন ছুটে যাচ্ছে।কল কেটে ব্লক দিচ্ছি আর কল দিবেন না আমাকে।’
‘তোমার হোয়াটসঅ্যাপে একটা ভিডিও আর ছবি পাঠিয়েছি দুটো দেখো তো কেমন লাগছে আমাকে। ‘
‘আপনার ছবি দেখে আমি কি করবো?’
‘সারপ্রাইজ আছে দেখো। আমি ঘন্টা খানেক পর কল দিবো তুমি ততক্ষণে দেখো।’
কথাগুলো বলে সায়ন কল কেটে দেয়।
রাইদা হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে দেখে সায়নের আগের নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ছবি আর ভিডিও পাঠিয়েছে।
ভিডিওতে ক্লিক করে রাইদা লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।বিস্ময়ে তার চোখ বড় হয়ে যায়।ডান হাত নিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে।
ভিডিওতে হুজুর তার আর সায়নের বিয়ে পড়াচ্ছে। যেখানে সায়ন গম্ভীর মুখে বসে আছে।হুজুর তাকে কবুল বলতে বললে এক নিমিষেই সায়ন কবুল বলে। এরপর রাইদার রুমের ভিডিও রয়েছে সেখানে বিধস্ত রাইদাকে দেখা যাচ্ছে।ভিডিওটা আর না দেখেই রাইদা বন্ধ করে দেয়। ছবিগুলোতে ক্লিক করলে তার মাথায় চক্কর দেয়। ছবিতে সে সায়নের বুকে মাথা দিয়ে রেখেছে আর সায়ন তাকে জড়িয়ে বসে আছে।রাইদা বুঝতে পারে যখন সে অজ্ঞান হয়েছিলো তখন হয়তো সায়ন ছবি তুলে রেখেছে।
রাইদার ভাবনার মাঝেই সায়ন মেসেজ দেয়।
‘আমার বিয়ের একমাত্র ছবি এটা।ছবিটা বড় করে বাঁধিয়ে আমাদের বেডরুমে টাঙাবো। ছবিটা তোমার পছন্দ হয়েছে বউ?’
সায়নের মেসেজ পড়ে রাইদা কি বলবে ভাষা খুঁজে পায় না। আবারো সায়ন মেসেজ পাঠায়।
‘বউ শেষবার বলছি এবার যদি ব্লক দাও তাহলে এই সব ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করবো শুধু তাই না পত্রিকা,পোস্টার বানিয়ে এমনকি টিভিতে নিউজ বানিয়ে বলবো এই ছবির মেয়েটা আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ কিন্তু সে মানাতে নারাজ।’
সায়নের মেসেজ পড়ে রাইদা কপালে হাত দিয়ে বসে থাকে। ফোন বিছানায় ফেলে মিসেস ফিরোজার কাছে যায়। রাইদার এখন ইচ্ছে করছে নিজের কপালে বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে।এতো যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না।এমনেই তার জীবনে সমস্যার শেষ নেই তার উপর সায়নের এসব কাজ কর্মে সে মহা বিরক্ত।
মিসেস ফিরোজার পাশে এসে তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে রাইদা।
‘কি হয়েছে গাল ফুলে আছে কেনো তোর?’,মিসেস ফিরোজা জিজ্ঞেস করে।
‘বাসায় ফিরতে হবে অথচ আমার ইচ্ছে করে না ঐ বাসায় যেতে।’,রাইদা মন খারাপ করে বলে।
‘তোর মা কল দিয়েছিলো?’
‘হ্যা তবে জানে না আমি যে ঢাকায় ফিরেছি।’
‘তাহলে কয়েকটা দিন পর বাসায় ফিরে যা।এই বাসার দরজা তো তোর জন্য সবসময় খোলা যখন ইচ্ছা আসবি যাবি কেউ বাঁধা দেওয়ার নেই।’
কথাগুলো বলে মিসেস ফিরোজা রাইদার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
রাইদা ভাবতে থাকে কীভাবে সায়নের ব্যবস্থা করা যায় হুট করে তার আরাফের কথা মনে হয়।
আচ্ছা আরাফ কি বিয়ের বিষয়টা জানে?হয়তো জানে কিংবা জানে না! ঢাকা ফিরে আরাফ একটা কল কিংবা মেসেজ দেয়নি এটা রাইদার কাছে আশ্চর্য লাগে অনেক।মিসেস ফিরোজার কোলে শুয়ে কথাগুলো ভাবছিলো রাইদা।
..
বাসায় ফিরে সায়ন রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দেয়। তখন নতুন সিম কিনেই গাড়িতে বসেই রাইদাকে বিরক্ত করতে কল দিয়েছিলো।সায়ন্তিকা শপিং শেষ করে আসার আগে সায়ন নিজের কাজ শেষ করে।এরপর সায়ন্তিকাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। হাতে থাকা বড় খামটা বিছানায় রেখে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
ফ্রেশ হয়ে সায়ন উন্মুক্ত শরীরে এসে বিছানায় বসে। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে বসে যায় লাগেজ খুলতে। লাগেজ খুলে নিজের জামাকাপড় গুলো ফ্লোরে রেখে কাংখিত জিনিস গুলো খুঁজতে থাকে। একটা ব্যাগ বের করে সেখান থেকে।ব্যাগটা আর বিছানার উপর রাখা খামটা নিয়ে আলমারির সামনে যায়।চাবি দিয়ে আলমারির লক খুলে একটা অংশ খালি করার জন্য নিজের শার্ট গুলো সেখান থেকে সরিয়ে অন্য পাশে রাখে।তারপর ব্যাগটা খালি অংশে রেখে হাতে থাকা খামটা খুলতে শুরু করে। খাম খুললে বেরিয়ে আসে দুটো ছবি। একটা ছবি হলো যেটা সে রাইদাকে পাঠিয়েছিলে আরেকটা ছবিতে দুটো ছবি কোলাজ করে বানানো। অনেক আগে লঞ্চে রাইদার ঘুমন্ত একটা ছবি আর সে দিন গাড়িতে রাইদার ঘুমান্ত ছবি দুটোকে একত্রে কোলাজ করে বের করেছে সায়ন।
সযত্নে আঠা দিয়ে ছবি দুটোজে আলমারির দরজার ভেতরের দিকে লাগিয়ে দেয় সে যাতে প্রতিবার আলামারি খুললে ছবি দুটো দেখতে পায়। কাজ শেষ করে ফ্লোরে পড়ে থাকা জামা কাপড় লাগেজে রেখেই বিছানায় শুয়ে পরে।
ফোন হাতে নিয়ে চেক করে রাইদা কোনো রিপ্লাই করেছি কিনা তার মেসেজের।
‘আপনাকে আমি দেখে নিবো অসভ্য লোক।’
এটাই ছিলো সায়নের পাঠানো মেসেজের দেওয়া রাইদার রিপ্লাই।
রাইদার রিপ্লাই পড়ে সায়ন শব্দ করে হেঁসে দেয়।মাথায় দুষ্টুমি চাপলে আবারো রাইদাকে বিরক্ত করতে মেসেজ পাঠায়।
রাইদা গ্রুপে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করছিলো তখনই সায়নের মেসেজ আসে।
‘তোমাকে আজকে সাদা রঙের থ্রি পিসে অনেক সুন্দর লাগছিলো।’
মেসেজটা পড়ে রাইদা অবাক হয়ে যায়। সাথে সাথে সে রিপ্লাই করে।
‘এই আপনি আনতাজে ঢিল ছুঁড়ে বললেন আর হবে নাকি? আমি মোটেও সাদা থ্রি পিসে পরিনি আজকে।’
রাইদার রিপ্লাই পড়ে সায়ন হাসতে থাকে।
‘তাহলে শপিং মলে তোমার টুইন ছিলো? এই রি তুমি তে আমায় বলোনি তোমার যে টুইন আছে। ভালোই হলো বউয়ের সাথে শালী ফ্রি পেলাম।’
‘আপনি কি যাদু জানেন নাকি? আমি কোথায় গিয়েছি কি রঙের জামা পরেছি জানলেন কীভাবে?’
‘এটাকে বলে মনের মিল।বউ যেখানে যায় বর ঠিক টের পেয়ে যায়।এই যে তুমি তোমার ঠিকানা আমায় বলোনি তারপরও আমি খুঁজে বের করবো।একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি তোমার বিছানার পাশে বসে আছি।’
সায়নের মেসেজ পড়ে রাইদা এংরি রিয়েক্ট দেয় সাথে সাথে সায়ন চুমুর ইমুজি পাঠায়।
রাইদা বিরক্ত হয়ে ভাবে সায়নের মেসেজের আর রিপ্লাই করবে না। তখন আবারো ফোনের আলো জ্বলে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে আরাফ মেসেজ পাঠিয়েছে।
‘কেমন আছো রাই?আমি আসলে অনেক ব্যস্ত।সেদিন ঢাকা ফেরার পরই বস আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঢাকার বাহিরে পাঠিয়েছে যেখানে নেটওয়ার্ক সমস্যা। তোমাকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার ফোন বন্ধ ছিলো।আমি আগামীকালকে ঢাকা ফিরবো, তুমি কি ঢাকা ফিরেছো? ঢাকা ফিরলে আমাকে জানিয়ো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে সেগুলো দেখা করে বলতে চাই।’
মেসেজটা পড়ে রাইদার মন খারাপ হয়ে যায়। সে ঠিক করেছে আরাফকে সম্পূর্ণ ইগনোর করবে। তবে মেসেজ পড়ে রাইদা বুঝতে পারলো আরাফ বিয়ের বিষয়ে কিচুই জানে না। আরাফের মেসেজের কোনো রিপ্লাই না করেই রাইদা মেসেজটা ডিলিট করে দেয়।
সায়নের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতেরাতে ফোন বন্ধ করে রাইদা ঘুমায়।
…
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফাহিম আর রাইদা বাসায় নাশতা খেয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
সেমিস্টার ব্রেক চলছে এই সময় রাইদাদের ভার্সিটিতে দেখে অনেকে শিক্ষক অবাক হয়। পরে অবশ্য বুঝতে পারে ওরা অডিটোরিয়াম দখল করে নাচের অনুশীলন করতে এসেছে।
বাপ্পি,রাইদা,পায়েল,অর্ক নিজেদের অনুশীলন শুরু করে দেয়।ফাহিম ল্যাপটপে মিউজিক ছেড়ে ইন্সট্রাকশন দিতে থাকে।
ঘন্টা দুয়েক অনুশীলন করার পর সকলে ব্রেক নেয়।
‘বহুত হইছে বাকিটা ব্রেকের পর করবো।’,বাপ্পি হাঁপিয়ে বলে।
‘হ হ আমার এখন ঠান্ডা পানি চাই।’,পায়েল চেয়ার টেনে বসে বলে।
‘আরেকটা বার করি তারপর না হয় ক্যান্টিনে যাবনি।’,রাইদা বলে।
‘তোর মতন আমরা রোবট না এখন ব্রেক নিতেই হবে।চল তোরা রাই একা অনুশীলন করুক।’,কথাগুলো বলে অর্ক চলে যায়।
অর্কের পিছন পিছন বাপ্পি,পায়েল,ফাহিম যায়।বাধ্য হয়ে রাইদাও যায়।
ক্যান্টিনে গিয়ে সকলে চেয়ার টেনি বসে রেস্ট নিতে থাকে।
‘এই ছোটু পানি নিয়ে আয় জলদি।’,ক্যান্টিনের একটা ছেলেকে বাপ্পি বলে।
ছেলেটা ফ্রিজ থেকে দুই লিটারের ঠান্ডা পানি এনে রাখে।
‘আপনাগো স্পেশাল চা বসাইছি ততক্ষণে পানি আর সিঙ্গাড়া দিতাছি সেটা খান।’,ছেলেটা বলে।
‘ওকে দে।’,বাপ্পি জবাব দেয়।
‘রুহিকে মিস করতেছি।ও কি বিকালে আসবে?’,হুট করে পায়েল বলে।
‘না ওর ডিউটি আছে বললো না ভুলে গেলি?’,অর্কের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে রাইদা বলে।
‘প্রোগ্রাম দুদিন পর তাই কে আছে কে নেই তা দেখার বিষয় না।’,কাশি দিয়ে অর্ক বলে।
‘শুনলাম নতুন ব্যাচ ভর্তি হয়েছে ভার্সিটিতে?’,বাপ্পি হাসি দিয়ে বলে।
‘তাতে তোর কি লাভ? কত ফ্রেশার আসলো কিন্তু তোর কপাল তো খুললো না।’,ফাহিম বলে উঠে।
‘আমারো সময় আসবে তখন দেখে নিস।’,ফাহিমের কাছ থেকে সিঙ্গাড়া কেঁড়ে নিয়ে বাপ্পি বলে।
‘আপনার সময় কোন ঘড়িতে আসবে সেটা যদি বলে দিতেন তাহলে সেই ঘড়িটা কিনে আপনার সময় দেখার অপেক্ষা করতাম।’,নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে পায়েল।
পায়েলের কথা শুনে সবাই হেঁসে দেয়।বাপ্পি পায়েলের হাত ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। হাসতে হাসতে সকলে গল্প করছিলো তখন ক্যান্টিনের ক্যাশ কাউন্টার থেকে চিল্লাপাল্লা শুনতে পায়।
‘কি হইলো আবার?’,বাপ্পি বলে উঠে।
‘মনে হয় সিনিয়র কেউ খেয়ে টাকা দেয়নি সেটা নিয়ে হয় তো ঝামেলা।’,ফাহিম জবাব দেয়।
এক ছেলে দৌড়ে রাইদাদের টেবিলের সামনে দাঁড়ায়।
‘মেয়েরা ঝামেলা করতেছে তাই ছোটু বললো আপনাদের ডাকতে।’,ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে।
‘নিশ্চয়ই কোনো জুনিয়র পাওয়ার দেখাচ্ছে।’,হাই তুলে অর্ক বলে।
‘যাই আমিও একটু দেখে আসি কার এতো ক*লি*জা পাওয়ার দেখায়।’,হাসতে হাসতে রাইদা গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের দিকে যায়।
রাইদা আর পায়েল এসে ক্যাশ কাউন্টারের সামনে দাঁড়ায়। সকলে ওদের দেখে জায়গা করে দেয়।
‘কিরে ছোটু কে আবার কি করলো? দেখি তো সেই মেয়ের চাঁদ মুখ খানা।’,রাইদা বলে।
‘আপনাদের চা নিয়ে যাইতেছিলাম তখন এক নতুন আপা চা কেঁড়ে নিলো বললো হেয় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতেছে তারে না দিয়া অন্যরে কেন চা দিতাছি।’,ছেলেটা জবাব দেয়।
‘ওকে চল দেখি কোন আপা আমাদের চা নিছে।’,পায়েল ছেলেটার কাঁধে হাত দিয়ে বলে।
ছেলেটা হাত দিয়ে একটা টেবিল দেখিয়ে দেয়।
মেয়েটা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে যেই চুমুক দিবে অমনি রাইদা কাপটা কেঁড়ে নেয়।
মেয়েটার সামনে চেয়ার টেনে রাইদা বসে। রাইদা মেয়েটাকে ইগনোর করে চায়ের কাপটা নিয়ে খেতে থাকে। এমন ভাব করে যে তার সামনে কেউ বসে আছে সে দেখেনি। সামনে বসা মেয়েটা চিৎকার করে উঠে।তখনই রাইদা পুরোটা চা মেয়েটার গায়ে মারে। মূহুর্তে পুরো ক্যান্টিনের পরিবেশ পাল্টে যায়।
‘আরে তুমি!এবার ঠান্তা চা মেরেছি আরেকবার যদি তোমাকে বেয়াদবি করতে দেখি তাহলে গরম চা মেরে চেহারা পাল্টে দিবো।’,চায়ের কাপটা শব্দ করে মেয়েটার সামনে রেখে বলে রাইদা।
…
(চলবে..)