সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -৪০+৪১

পর্বঃ৪০
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)

দক্ষিণা বাতাসে জানালার পর্দা গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে। পর্দা গুলো স্বাধীনতা পেয়ে মনের আনন্দে উড়ছে সেই ফাঁকে সূর্যের কিরণ জানালা দিয়ে রুমে প্রবেশ করছে।

সায়নকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাইদা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সায়নের ঘুম ভেঙেছে ঘন্টা খানেক আগে তাও অফিসের সহকারীর কলে। আজকে সায়নের অফিসে থাকার কথা ক্লাইন্টরা আসবে তাদের সাথে দেখা করতে হবে প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে সেখানেই।

রাইদা নড়েচড়ে উঠলে সায়ন সর্তক চোখে ঘুমন্ত রাইদার দিকে তাকায় যাতে রাইদার ঘুম না ভাঙে। ফোন ভাইব্রেট হলে জলদি ফোন হাতে নেয় আবারে সহকারীর কল দেখে বিরক্ত হয়ে কল কেটে ফোন সাইলেন্ট করে রাখে। এক ঘন্টা পর ক্লাইন্টরা আসবে এখন যদি সায়ন বেরও হয় অফিসের উদ্দেশ্যে তাহলে জ্যাম ঠেলে যেতেও কমপক্ষে এক ঘন্টা কুড়ি মিনিট লাগবে। কিন্তু এই মূহুর্তে ঘুমন্ত রাইদাকে ছেড়ে কিছুতেই সায়ন উঠতে চাইছে না। মস্তিষ্ক সর্তক বানী পাঠিয়ে জানান দেয় আজকে অফিস যাওয়াটা ফরজ না হলে বাবার অফিসের চাকরিটা হারাতে হবে।

মন মস্তিষ্কের কথার সাথে না পেরে হেরে যায় ফলাফল মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে রাইদাকে ছেড়ে সায়নের উঠতে হবে।

ধীরে ধীরে রাইদার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে থাকে সায়ন। পাশের বালিশে রাইদাকে শুইয়ে উঠতে নিলে আবারো হাত পা মেলে সায়নকে জড়িয়ে ধরে সে। সায়ন এক পাশে কাত হয়ে উঠার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারলোনা রাইদা শক্ত করে জড়িয়ে সায়নের গলায় মুখ লুকিয়ে ঘুমায়।

রাইদার এহেন কান্ডে সায়নের দম আঁটকে আসার উপক্রম। না পারছে রাইদাকে সরাতে না পারছে এভাবে থাকতে। সব ভুলে সেও রাইদাকে জড়িয়ে ধরে রাইদার মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

‘এই মেয়েটা এতো অদ্ভুত প্রতি দিন আমার দুর্বলতা বেড়েই চলেছে যার নেই কোনো শেষ। যেভাবে আমাকে নিজের মায়াতে জড়াচ্ছে আমি তো ওরে ছেড়ে এক রাত ও কোথাও থাকতে পারবো না।’,মাথা নুইয়ে ঘুমন্ত রাইদার দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলে সায়ন।

রাইদার মুখের সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে ফেললে রাইদার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পায় সায়ন। বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে রাইদার গালে আলতো করে স্পর্শ করে এরপর আঙুল উঁচিয়ে রাইদার শুষ্ক ওষ্ঠের উপর রেখে আলতো স্লাইড করে। ঘুমের মধ্যে রাইদা মৃদু কেঁপে নিজের ওষ্ঠ জোড়া দাঁতে চেপে ধরে।

রাইদার এ অবস্থা দেখে সায়নের হাসি পায়। হাসি দমিয়ে রাইদার গাল টেনে দেয়।

গালে তারকাঁটা বিঁধলে যেমন লাগে ঘুমের মধ্যে রাইদা ঠিক একই অনুভব করতে থাকে। অনেকক্ষণ সহ্য করে আর পারে না শেষে ঘুমের রাজ্য থেকে নিজের নয়ন জোড়াকে জোর করে খুলে তাকায়। সামনে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে জিনিসটা কি কিন্তু বুঝতে পারে না তাই হাত দিয়ে টান দেয়।

‘কি করছো রি আমার দাড়ি ধরে টানছো কেনো?’
সায়নের কন্ঠ পেয়ে রাইদা মাথা তুলে দেখে সে এতক্ষণ তারকাঁটা ভেবে সায়নের খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো টানছিলো।

‘আপনি এক্ষুনি সেভ করে আসেন আমার গালে ব্যথা লাগছে আপনার তারকাটার মতো দাড়ি গুলোর কারনে।’,ঘুমন্ত স্বরে সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে রাইদা।

‘তা না হয় কাটলাম কিন্তু এই মূহুর্তে আমার তো ইচ্ছে করছে বউয়ের ঘুমন্ত কন্ঠটা খেয়ে ফেলতে।’,রাইদাকে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে বলে সায়ন।

‘কন্ঠ আবার খাওয়া যায় নাকি? সকাল সকাল কি আবোলতাবোল বলছেন?’,রাইদা অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।

সায়ন হেঁসে রাইদাকে পাশের বালিশে শুইয়ে দেয়। রাইদার চোখে মুখে এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি।

‘দেখবা কীভাবে খাবো?’

সায়নের প্রশ্নে রাইদা মাথা নাড়ায়।

‘চোখ বন্ধ করো।’
সায়নের কথা শুনে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে সে।
রাইদার গলায় গভীর চুম্বন দেয় সায়ন আবেশে রাইদা চোখ মেলে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।

‘তুমি ঘুমাও আমি রেডি হয়ে অফিসে যাবো আমার ফিরতে দেরি হবে। আর রাতে ফিরে দু’জনে জোছনা বিলাশ করবো।’
সায়নের কথা শুনে রাইদার চোখের ঘুম উড়ে যায়। এতক্ষণ সবটা স্বপ্ন মনে হলেও এখন রাইদা বুঝতে পারে এতক্ষণ যা হয়েছে স্বপ্ন না বাস্তব।

শোয়া থেকে উঠে বসে রাইদা ততক্ষণে সায়নে বাথরুমে ঢুকেছে হাতমুখ ধুতে। রাইদা বিছানায় তাকিয়ে দেখে তাদের মাঝে যেই কোল বালিশটা থাকে সেটা ফ্লোরে পরে আছে প্রতিদিনের ন্যায়।
রাইদা চিন্তা করতে থাকে সে কি সায়নকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলো নাকি শুধু সায়নের গায়ে হাত রেখেছিলো।

চিন্তা বাদ দিয়ে হাই তুলে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে রাইদা। কিছুক্ষণ পর বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ হলে সেদিকে তাকায় রাইদা। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে উন্মুক্ত শরীরে সায়ন গোসল সেরে বের হয়। আলমারি খুলে শার্ট,প্যান্ট বের করে গায়ে জড়িয়ে নেয় এরপর আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো আঁচড়ে নেয়।
পাশ ফিরে রাইদা মাথার নিচে হাত রেখে সায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। রেডি হয়ে ফোন হাতে নিয়ে সহকারীকে কল দিয়ে কল বলতে থাকে সায়ন। রাইদা সায়নকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।

‘দরজা লাগিয়ে ঘুমাও। আজকে তো ক্লাস নেই তাই বাসাতেই রেস্ট করো এমনিতেই যামিনীর বিয়ের চক্করে কয়েকটা দিন অনেক দৌড়ঝাঁপ করছো।’,কথাগুলো বলে শোবার ঘর থেকে বের হয় সায়ন।

শোয়া থেকে উঠে রাইদা যায় দরজা লাগাতে। দরজা খুলে পিছন ফিরে রাইদার ললাটে উষ্ণ পরশ এঁকে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয় সায়ন।

সায়ন যেতেই দরজা লাগিয়ে চোখ ডলে শোবার ঘরে গিয়ে তোয়ালে নিয়ে গোসল করতে ঢুকে বাথরুমে। গোসল সেরে রেডি হয়ে ফোন হাতে নিয়ে অর্ককে কল দেয় রাইদা।

‘কিরে কই তুই?’,কল রিসিভ করে অর্ক প্রশ্ন করে।

‘রেডি হলাম এখন বের হবো। তুই পৌঁছে গেছিস?’,রাইদা বলে।

‘একদম জায়গা মতো আছি তুই চলে আয়।’,অর্ক উত্তর দেয়।

‘আরে আসতেছি বেশিক্ষণ লাগবে না।’,রাইদা হেঁসে বলে।

‘জলদি আয় আমাদের এরপর কই যেতে হবে মনে আছে না?’,অর্ক ব্যস্ত গলায় বলে।

‘সব মনে আছে। থাক তুই আসতেছি।’
কল কেটে ব্যাগ হাতে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায় রাইদা। রিকশায় উঠে রওনা দেয়।

রিকশা এসে থামে কাজি অফিসের সামনে। রিকশা থেকে নেমে রাইদা কাজি অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে।
বাপ্পি, ফাহিমকে চেয়ারে বসা দেখে রাইদা এগিয়ে যায়।

‘কিরে পাত্র আর পাত্রী কই?’,রাইদা বাপ্পিকে জিজ্ঞেস করে।

‘পাত্রীকে পায়েল রেডি করাতে নিয়ে গেছে আর পাত্র টেনশনে মরে যাচ্ছে।’,বাপ্পি উত্তর দেয়।

রাইদা চেয়ার টেনে বসে দু’জনের পাশে। তড়িঘড়ি করে রুহি এসে রাইদার পাশে বসে।

‘কিরে আমি কি বেশি দেরি করলাম? বিয়ে কি শেষ?’,রুহি জিজ্ঞেস করে।

‘হ সাথে অর্কের বিয়াডাও দিলাম।’,বাপ্পি ফোড়ন কেটে বলে।

বাপ্পির কথা শুনে রুহি চোখ বড়বড় করে তাকায়।

‘আরে ওর কথায় পাত্তা দিস না। আপু রেডি হতে গেছে আর অর্ক ভাইয়ার সাথে আছে।’,রাইদা রুহিকে আশ্বস্ত করে বলে।

কিছুক্ষণ পর পায়েল অনুকে নিয়ে আসে। লাল রঙের শাড়িতে অনুকে বেশ সুন্দর লাগছে।

‘শুধু শাড়ি পরাতেই এতো সময় লাগালি? একটু সাজিয়ে দিতি।’,রাইদা পায়েলকে বলে।

‘আরে বললাম আপু রাজি হয় না বললো বিয়ে করবে তাতেই তার আত্মা কাঁপছে।’,পায়েল জবাব দেয়।

অর্ক সাথে করে অনুর বয়ফ্রেন্ড আজিজ এবং আজিজের বন্ধুদের নিয়ে আসে। সকলে চেয়ার ছেড়ে উঠে অনু আর আজিজকে পাশাপাশি বসিয়ে দেয়। বিয়ের কাজ শুরু হলে ফাহিম ফোন বের করে ভিডিও করতে থাকে। রাইদা নিজের ফোনে বর আর কনের ছবি তুলে রাখে।

স্বাক্ষী হিসেবে অর্ক, রাইদা, বাপ্পি সই করে আর আজিজের বন্ধুরা।
বিয়ে সম্পন্ন হতেই অনুর মনে দুশ্চিন্তা হানা দেয়। রাইদা এগিয়ে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে।

‘আমার অনেক দুশ্চিন্তা হচ্ছে রাই যদি রাসেল ভাই এসব জানতে পারে তাহলে আমাকে মেরেই ফেলবে।’,অনু রাইদার হাত ধরে বলে।

‘ভয় পেয়ো না আপু কিছু হবে না। এখন তুমি অনেক দূর চলে যাবে যেখানে রাসেল ভাই তোমাদের খুঁজে পাবে না।’,রাইদা অনুকে আশ্বস্ত করে বলে।

অনু মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সে চেয়েছিলো পরিবারের মতামতে বিয়ে হোক ধুমধাম করে কিন্তু তার ভাই কিছুতেই আজিজের সাথে তার বিয়ে দিতে রাজি না। আজিজ ছোটখাটো চাকরি করে আর তার ভাই তাকে বড় ঘরে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। আজকে বিয়েটা না হলে অনু আজিজে হারিয়ে ফেলতো কারন আজই এক পাত্রের বাসায় আসার কথা যে অনুকে বিয়ে করতে চায়।

অর্ক মিষ্টি এনে সকলকে খাইয়ে দেয়। অর্কের আনন্দ দেখে অনুর দুঃখ কিছুটা কমে যায়। এক ভাই টাকা দেখে বোনকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে অথচ অপর ভাই বোনের খুশির জন্য তার ভালোবাসার মানুষের সাথে তার বিয়ে পড়িয়ে দিলো।

কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে আজিজ আর অনু চলে যায় নিজেদের জন্য ভাড়া করা বাসায়। অর্কই বাসাটা ভাড়া করে দিয়েছে সাথে স্কুলে অনুর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আজিজ বলেছে কিছুদিনের মধ্যেই অনুকে গ্রামে নিয়ে তার বাবামায়ের সাথে দেখা করিয়ে আনবে।

রুহি অফিস থেকে বিরতি নিয়ে বিয়েতে উপস্থিত হয়েছিলো তাই বিয়ে শেষ হতেই সে চলে যায়। অনুকে বিদায় দিয়ে পায়েলও চলে যায়। অর্ক,রাইদা এক কাজে বেরিয়ে যায়।
..

বিকাল বাজে চারটায় রাইদা,অর্ক এসে ফাহিমের বাসায় কলিং বেল দেয়।

মিসেস ফিরোজা দরজা খুললে রাইদা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে গল্প শুরু করে দেয়। অর্ক চলে যায় ফাহিমের রুমে সেখানে বাপ্পিও রয়েছে।

‘মুখটা শুঁকনো লাগছে কেনো তোর? দুপুরে খাসনি?’,মিসেস ফিরোজা রাইদার গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে।

‘সকাল বেলা বাসা থেকে বেরিয়েছি তাই হয়তো এমন লাগছে। তুমি ভাত নিয়ে আসো আমি ফাহিমের রুমে যাচ্ছি।’,রাইদা জবাব দেয়।

মিসেস ফিরোজা রান্নাঘরে চলে গেলে রাইদা ফাহিমের রুমের পা বাড়ায় তখনই তার ফোন বেজে উঠে। ফোন বের করে দেখে সায়ন কল দিয়েছে।

গলা ঝেরে রাইদা কল রিসিভ করে।

‘ঘুম ভেঙেছে তোমার? খেয়েছো কিছু? ব্যস্ততার কারনে বাসা থেকে খাবার আনিয়ে দিতে পারিনি। মাত্রই একটু সুযোগ পেয়ে তোমায় কল দিলাম।’, সায়ন চিন্তিত হয়ে বলে।

‘এখন বিকাল আমার ঘুম ভেঙেছে আরো ঘন্টা খানেক আগে। বাসায় পাউরুটি আর ডিম ছিলো সেটা খেয়েছি। চিন্তা করবেন না ফুড পান্ডা থেকে অর্ডার করেছি খাবার চলে আসবে এখনই।’,রাইদা হেঁসে জবাব দেয়।

‘ঠিক আছে খেয়ে আবার ঘুমাও আমি কাজ সেরে জলদি ফেরার চেষ্টা করবো।’

‘তাড়াহুড়ো করতে হবে না আপনি কাজ সেরেই আসেন।’

রাইদার কথা শুনে সায়ন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সে চাইলেও কাজ সেরে জলদি ফিরতে পারবে না। অফিসে শেষে তাকে একবার বেরোতে হবে। কল কেটে ফাইলগুলো আবারো চেক করায় ব্যস্ত হয়ে যায় সায়ন। রাইদা ইচ্ছে করেই অনুর বিয়ের বিষয়টা জানায়নি যাতে সায়ন এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা না করে।

ফাহিমের রুমে গিয়ে বিছানার উপর বসে রাইদা। মিসেস ফিরোজা এসে অর্ক আর রাইদাকে ভাত দিয়ে গেলে খেতে থাকে দু’জনে। বাপ্পি,ফাহিম আগেই বাসায় ফিরে খেয়ে নিয়েছে। চারজন মিলে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করে দেয়।
..

রাইদা বাসায় ফিরে সন্ধ্যার সময়।
শোবার ঘরে ঢুকে পুরো রুমে চোখ বুলায় রাইদা। যামিনীর বিয়ে গত পরশু এবং রিসিপশন গতকালকে খেয়ে এসেছে। রুমে এলোমেলো ভাবে রাইদার শাড়ি, লেহেঙ্গা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাইড ড্রয়ারের উপর মেকআপ গুলো অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। পিছন ফিরে দেখে টি-টেবিলে তার চুড়ি গয়না, সোফার উপর আরো জামা কাপড় রাখা।

বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে ঘর গোছানোর বদলে উল্টো সে এলোমেলো করে রেখেছে তাই এখন ঠিক করে বিশ্রাম বাদ দিয়ে সব গোছাবে। চুলগুলো ঝুঁটি করে কাজে লেগে পরে।

সব গুছিয়ে সায়নের লাগেজটা খাটের নিচ থেকে বের করে যেটা সায়ন কয়েকদিন আগে বাসা থেকে এনেছে। লাগেজটা খুলে সায়নের জামা কাপড় গুলো বের করে সব আলমারিতে রেখে দেয় রাইদা।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেশ রাত হয়ে এসেছি তাই চটজলদি সায়ন আসার আগে জামা পাল্টে নেয় রাইদা।

রাত দশটার দিকে দরজায় নক করে সায়ন। দ্রুত হেঁটে গিয়ে দরজা খুলে হাসিমুখে তাকায় রাইদা। সায়ন ক্লান্তি চোখে রাইদার হাসিমুখ দেখে নিজেও হেঁসে দেয়।

‘মা অফিসে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে নাও।’,রাইদার হাতে খাবারের ব্যাগ দিয়ে সায়ন বলে।

‘আপনি গিয়ে আগে গোসল করেন আমি খাবার গরম করছি।’
খাবারের ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায় রাইদা। দরজা লাগিয়ে সায়ন গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে।

রান্নাঘরে থাকা অবস্থায় রাইদার ফোন বেজে উঠে। দৌড়ে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার বাবা মান্নান রাফায়েত কল দিয়েছে।

হাসিমুখে কল রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে রাইদা।

‘কেমন আছিস মা?’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমরা কেমন আছো?’,রাইদাও জিজ্ঞেস করে।

‘তোমরা বলতে তোর মাকে বুঝালি? আমি তো ভালোই আছি কিন্তু তোর মায়ের খবর সেই ভালো দিতে পারবে।’,মান্নান রাফায়েত জবাব দেয়।

‘কেনো কিছু হয়েছে নাকি?’

‘তার মেজ বোন নাকি বেড়াতে আসতে চাচ্ছে। আমাকে জিজ্ঞেস করলো আসতে বলবে কিনা। ‘

‘তুমি কি বলেছো?’

‘আমি আর কি বলবো বলেছি তোমার বোন ইচ্ছে হলে বলো আসতে।’

‘মারিয়াকে সাথে করে আনতে বইলো এসে বেড়িয়ে যাক কিছুদিন।’

‘সেটা তো বলবোই। তোর ঐদিকের খবর কি? কেমন কি বুঝছিস?’

‘কার কথস জিজ্ঞেস করছো?’

‘কার আবার তোর সংসারের কথা জিজ্ঞেস করছি। সায়ন কেমন? আর ওর বাড়ির লোকের সাথে কথাবার্তা হয়েছে? তোর মা তো অস্থির হয়ে গেছে সায়নের মায়ের ফোন নাম্বারের জন্য।’

‘দেখো বাবা আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি তাড়াহুড়ো করতে চাই না আমি। আমার আরেকটু সময় লাগবে সিদ্ধান্ত নিতে তাছাড়া ওনার বাড়ির লোকরা আমাকে অনেক স্নেহ করে। ভেবেছিলাম ছোট বোনটার সাথে আমার মিলবে না ঝগড়া করবে সে দেখি উল্টো ভাবী বলতে অজ্ঞান। ‘

রাইদার কথা শুনে মান্নান রাফায়েত হাসতে থাকে। একে একে সায়ন্তিকার করা কান্ড গুলো রাইদা মান্নান রাফায়েতকে বিস্তারিত বলে।

‘শোন মা আমি কখনোই চাইবো না তুই অসুখী হ তাই তোর সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত হবে। তোর যদি এক মূহুর্ত ও মনে হয় সায়ন তোর জন্য সঠিক মানুষ না সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবি। আমি তোর কাছে কৈফিয়ত ও চাইবো না। জীবনে সংসারের থেকে বড় হলো সুখ শান্তি।’

‘তোমাকে ছোট বেলা থেকে পাশে পেলে আজ হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো।’
কথাটা বলে রাইদা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

‘তরকারি গরম করছো? আমার খিদে পেয়েছে অনেক। ‘
তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রান্নাঘরে প্রবেশ করে কথাটা বলে সায়ন।

‘আচ্ছা বাবা রাখছি পরে কল দিবো।’,কথাটা বলে কল কেটে দেয় রাইদা।

‘তুমি কলে ছিলে আমি খেয়াল করিনি সরি বিরক্ত করলাম।’,সায়ন বলে।

‘বাবা কল দিয়েছিলো কথা বলা শেষ। আপনি বসুন আমি খাবার আনছি।’

‘আমার কাছে দাও আমিও কিছু নিয়ে যাই।’

‘আচ্ছা শুনেন কালকে সকালে ভাড়ার টাকাটা নিয়ে আপনার বন্ধুকে পাঠিয়ে দিবেন। আমি ফ্রি তে কারো বাসায় থাকতে চাই না।’

রাইদার কথার কোনো উত্তর সায়ন দেয় না চোখ মুখে তার অন্ধকার নেমে আসে।
রাইদা সায়নের হাতে তরকারির বাটি দেয়। এরপর ভাত তরকারি নিয়ে খেতে বসে।

খাওয়া শেষ করে রাইদা রান্নাঘরে চলে যায়। কাজ সেরে রান্নাঘরের আলো নিভিয়ে শোবার ঘরে এসে দেখে আলো নেভানো। বারান্দা দিয়ে আসা চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সব। বিছানায় সায়নকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় চলে যায় সে।

সিগারেট হাতে নিয়ে সায়ন উশখুশ করছিলো জ্বালাবে নাকি জ্বালাবে না সেটা ভেবে। হুট করে রাইদা সায়নের হাত থেকে সিগারেটটা টেনে নেয়।

‘লাইটার দেন আমিও একটু খেয়ে দেখি কেমন লাগে।’,কথাটা বলে সিগারেটটা ঠোঁটে রাখে রাইদা।
রাইদার কান্ড দেখে সায়ন হাসে।

‘ঠিক আছে দিবো তার আগে আমার পাওনা বুঝিয়ে দাও।’,রাইদার সামনে দাঁড়িয়ে বলে সায়ন।

‘কিসের পাওনা? আমার তো মনে পড়ছে না।’,রাইদা ভাবার ঢং করে বলে।

‘হলুদ থেকে আসার পর গাড়ি থেকে কোলে করে উপরে আনার বদলে বলেছিলে যা চাইবো দিবা।’

‘আপনি এখনো সেই কথা ভুলেননি? আমি তো ভেবেছি ভুলে গেছেন।’

‘নিজের পাওয়া নেওয়ার কথা কেউ কি ভুলতে পারে?’

‘আগে লাইটার দেন সিগারেট ধরিয়ে দেখি কেমন লাগে।’
রাইদার কথায় বিরক্ত হয়ে টান দিয়ে সিগারেটটা নিয়ে ফেলে দেয় সায়ন।

‘আরে ফেললেন কেনো? আপনি খেতে পারলে আমি খেতে কি সমস্যা? আপনি আসলেই…’

রাইদার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সায়ন এসে তার ওষ্ঠ জোড়া আঁকড়ে ধরে। আবেশে চোখ বন্ধ করে সায়নের কাঁধে হাত রাখে রাইদা।

রাইদাকে ছেড়ে কোলে তুলে বিছানার দিকে পা বাড়ায় সায়ন।

‘আজকে জোছনা বিলাশ করবো।’
সায়নের মুখে এমন কথা শুনে রাইদা হেঁসে সায়নের গালে ওষ্ঠ ছোঁয়ায়।

….

জীবন থেকে সপ্তাহ খানেক সময় পেরিয়ে গেছে এর মধ্যে তেমন কিছুই ঘটেনি তবে সম্পর্ক শিথিল হয়েছে। সায়ন ছুটি শেষ করে অফিসে নিয়মিত যাচ্ছে তবে রোজ একবার নিজের মায়ের সাথে দেখা করে তবেই ফ্ল্যাটে ফিরতে হয় তার। সায়ন যতক্ষণ ফ্ল্যাটে থাকে রাইদা বের হতে চায় না একপ্রকার জোর করেই আজকে রাইদাকে ক্লাসে পাঠিয়েছে সায়ন।

ভার্সিটির ক্লাসে বসে সায়নের সাথে চ্যাটিং করছে রাইদা। রুহি বারবার রাইদাকে গুঁতা দিয়ে না করছে এই স্যারের ক্লাসে এসব করতে কিন্তু কে শুনে কার কথা। রুহির কথা না শোনার ফলাফল স্যার একসময় রাইদাকে ক্লাস থেকে বের করে দেয় ক্লাসে ফোন চালানোর অপরাধে। তাতে অবশ্য রাইদার মাথাব্যথা নেই অ্যাটেনডেন্স দিতে পেরেছে তাতেই সে খুশি।

বাহিরে বের হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সায়ন এখনো তার মেসেজের রিপ্লাই করেনি। বিরক্ত হয়ে সায়নকে কল দিয়ে কল রিসিভ করে না।

মিনিট বিশেক পর সায়ন কল দিলে রাইদা ভার্সিটির গেটের সামনে এসে দেখে সায়ন তারই অপেক্ষায় গাড়িতে বসে আছে। রাইদা গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।

‘আপনি অফিস যাননি?’,রাইদা সায়নকে প্রশ্ন করে।

‘বাসায় গিয়েছিলাম দেখলাম মায়ের শরীরটা খারাপ তাই না করে দিয়েছে আজকে রান্না করতে। নিপাকে বলে এসেছি যতটুকু খাবার প্রয়োজন তাই শুধু রান্না করতে।’,সায়ন উত্তর দেয়।

‘ভালো করেছেন। রোজ রোজ চুলার কাছে দাঁড়িয়ে এতো রান্না করাও উচিত না। আমরা আজকে বাহির থেকে খেয়ে নিবো সমস্যা নেই।’

‘আমরা এখন বাজারে যাবো তারপর বাজার সেরে বাসায় গিয়ে দু’জনে মিলে রান্না করবো।’

সায়নের কথায় রাইদা হেঁসে সম্মতি দেয়।
বাজার সেরে ব্যাগ নিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে সায়ন। পিছন পিছন রাইদা ঢুকে দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। শার্টের হাতা ফোল্ড করে বাজার গুলো বের করতে থাকে সায়ন। রাইদা শোবার ঘরে গিয়ে জামা পাল্টে আসে।

ততক্ষণে চুলায় ভাত বসিয়ে সবজি কাটার চেষ্টা করছে সায়ন।

‘আমি চেষ্টা করি এদিকে দেন।’,রাইদা সায়নের থেকে ছুরি নেওয়ার চেষ্টা করে বলে।

‘তুমি ছোট বাচ্চা তুমি এসব পারবা না। দেখা যাবে সবজি কাটতে গিয়ে হাতই কেটে ফেলবা।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা বোকা বনে যায়।

‘ঠিক আছে কাটেন আমিও দেখবো আপনি কীভাবে এসব কাটেন।’

রাইদার কথায় পাত্তা না দিয়ে এবড়োখেবড়ো ভাবে সবজি গুলো কাটতে শুরু করে সায়ন।

‘বেচারা সবজি গুলোর জন্য মায়া হচ্ছে।’,রাইদা বলে।

‘আমার জন্য মায়া হয় না?’,রাইদার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে সায়ন জিজ্ঞেস করে।

রাইদা মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দেয়। সবজি কাটা রেখে রাইদার হাত টেনে ধরে সায়ন।

‘কি বলছো আবার বলো।’,সায়ন গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘বলছি হয় না মায়া।’
রাইদার কথা শুনে হতাশ চোখে সায়ন তাকায়। সায়নের চাহনিতে রাইদা জোরে জোরে হাসতে থাকে।

দরজায় নক করার শব্দ হলে সায়ন রাইদাকে ছেড়ে আবারো সবজি কাটায় মন দেয়।

রাইদা হাসতে হাসতে গিয়ে দরজা খুলে। দরজার সামনে অপরিচিত মুখ দেখে রাইদা হাসিমুখ রেখেই প্রশ্ন করে।
‘জি কাকে চাচ্ছেন?’


(চলবে..)পর্বঃ৪১
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা রাইদার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে।

‘কে এসেছে রি?’,সায়ন রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করে।

‘এক আপু।’
রাইদার জবাব শুনে সায়ন রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে।

‘আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?’,রাইদা আবারে অপরিচিত মেয়েটাকে প্রশ্ন করে।

‘আমি এই সামনের ফ্ল্যাটে কাম করি একবার ভাই কইছিলো আপনাগো নাকি কামের লোক লাগবো তাই আইলাম।’,মেয়েটা সরল গলায় জবাব দেয়।

‘হ্যা আমিই বলেছিলাম ওকে আসতে।’,সায়ন উত্তর দেয়।

‘কিন্তু আমি তো আপনাকে বলিনি এখন কাজের লোক রাখতে? কবে বললেন আমাকে জানালেন ও না।’
রাইদার কথা শুনে মেয়েটা কিছু বলতে চাইছিলো সায়ন তাকে থামিয়ে দেয়।

‘আপু আপনি আসতে পারেন এখন আমাদের সাহায্য করার জন্য লোক লাগবে না।’,সায়ন মেয়েটাকে বলে।

সায়নের কথা শুনে মেয়েটার মধ্যে ভাবান্তর হয় না সে সামনের ফ্ল্যাটের দরজা দিয়ে ভেতরে চলে যায়।

সায়ন দরজা লাগিয়ে রাইদার হাত ধরে রান্নাঘরে নিয়ে যায়।

‘তুমি ওনাকে দেখে বুঝোনি উনি যে বাসায় কাজ করে?’,সায়ন রাইদাকে বলে।

‘থ্রি-পিস পরলেই কি মানুষের কর্ম বুঝা যায় নাকি? আচ্ছা কাজের লোক রাখতে চাইছেন কেনো? রান্নাবান্নার ঝামেলার কথা ভেবে?’,রাইদা সায়নকে প্রশ্ন করে।

‘আরে রান্না না আসলে ঘরের টুকিটাকি কাজের জন্য বলেছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লাগবে না তাই না করলাম।’
সায়নের কথা শুনে রাইদা কোনো জবাব দেয় না। সবজি গুলো ধুতে বেসিনে রাখে। সায়ন চলে যায় রুমে কাপড় পাল্টাতে।
রাইদা সব ধুয়ে রাখে সায়ন এসে মিসেস রিনাকে কল দিয়ে রান্নার রেসিপি জেনে নেয়। রেসিপি অনুযায়ী দু’জনে মিলে রান্না করতে থাকে।
..

দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিতে কানে ইয়ারফোন গুঁজে রাইদা শুয়েছে তার পাশে বিছানায় বসে ল্যাপটপে অফিসের ইমেইল গুলো দেখছে সায়ন।

ফোন বেজে উঠলে দেখে তার বাবা আরমান শেখ কল দিয়েছে। কল রিসিভ করে সায়ন কথা বলতে শুরু করে।

‘আজকে অফিসে কেনো আসনি?’, গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে আরামান শেখ।

‘স্যার আসলে আমার বউয়ের শরীরটা অনেক খারাপ তাই আসতে পারিনি।’,সায়ন উত্তর দেয়।

‘কি বলো বউমার কি হয়েছে?’,আরমান শেখ চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘ঐ তো তার নাকি বমি বমি পাচ্ছে।’

সায়নের কথা শুনে আরমান শেখ কাশি দেয়।

‘ডাক্তারের কাছে নিয়েছো?’,আরমান শেখ জিজ্ঞেস করে।

‘হ্যা কালকেই নিবো আজকে আপাতত বিশ্রাম করছে।’

‘আমাকে তো তোমার জানানো উচিত ছিলো এ বিষয়ে। ঠিক আছে বউমার খেয়াল রাখে আর কালকে অফিসে আসার চেষ্টা করবা অবশ্যই।’

‘যদি বউয়ের শরীর ভালো হয় তাহলে অবশ্যই আসবো।’
রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন। রাইদা ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে সায়ন মাথা নাড়ায়। ইয়ারফোনে গান শুনছিলো রাইদা তাই সায়নের কোনো কথাই সে শুনেনি।

‘ঠিক আছে আমাকে আপডেট দিও।’

কথাটা বলে কল কেটে দেয় আরমান শেখ।

কান থেকে ইয়ারফোন খুলে সায়নকে বিরক্ত করতে উঠে বসে রাইদা। কোনো একটা ফাইল দেখতে চাচ্ছিলো সায়ন সেইজন্য তার সহকারীকে কল দেয়। এই সুযোগে রাইদা এসে সায়নের হাত ধরে টানতে থাকে। ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত সায়ন সেদিকে রাইদার ভ্রুক্ষেপ নেই সে সায়নের গাল টানছে, নাকে কামড় দিচ্ছে,কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ছে আবার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে।

সহকারীর সাথে কথা বলতে গিয়ে সায়ন হতাশ চোখে তাকায় রাইদার দিকে। রাইদার এসব কান্ডে সায়ন যেই গম্ভীর স্বরে অফিসের লোকদের সাথে কথা বলে সেটা আর পারছে না। একসময় বিরক্ত হয়ে সহকারীর কথা না শুনেই কল কেটে রাইদার কাছে টেনে আনে।
রাইদার দুই হাত ধরে ওড়না দিয়ে বেঁধে দেয়।

‘কি সমস্যা হাত বাঁধতেছেন কেনো?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

‘তুমি আমাকে কাজের সময় বিরক্ত করছো তাই। জাস্ট কিছুক্ষণ এভাবে থাকবা আমি ফাইলটা চেক করেই তোমাকে শাস্তি দিবো।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা মুখ কালো করে পিছনে ঘুরে বসে। সায়ন ল্যাপটপে ফাইলটা দেখছিলো কিন্তু রাইদাকে চুপচাপ দেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে রাইদাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

‘কি চাচ্ছো বলো তো। অফিসে যাইনি সেটার জন্য বাবার কাছে মিথ্যা বললাম এখন যদি কাজগুলো না করে দেই তাহলে চাকরিটা থাকবে না।’,রাইদার কাঁধে থুঁতনি রেখে সায়ন বলে।

‘তো করেন কাজ না করছে কে? এমনি তেই আমার হাত বেঁধে বসিয়ে রেখেছেন আমি তো আর বিরক্ত করছি না আপনাকে।’,রাইদা অভিমানের স্বরে বলে।

সায়ন হেঁসে রাইদার হাতের বাঁধন খুলে দেয়। হাতের বাঁধন ছাড়া পেয়ে রাইদা বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে বসে থাকে। বারান্দার দিকে একবার তাকিয়ে সায়ন নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।

সন্ধ্যা নামতেই সায়নের জমানো কাজ গুলো শেষ হয়। রাইদা এর মধ্যে নিজের নোট বই নিয়ে পড়তে বসেছিলো।

‘তোমার সিটি কবে?’,সায়ন রাইদার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে।

রাইদা এক ধ্যানে ম্যাথ করায় ব্যস্ত ছিলো এর মধ্যে সায়নের কথায় তার ধ্যান ভাঙে।

‘আর কবে দু’দিন পর।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তুমি যে কি পড়াশোনা করতেছো কে জানে। এতে কষ্ট করে কে বলছো তোমাকে ইন্জিনিয়ারিং পড়তে? সহজ একটা বিষয় পড়লেই পারতা।’
সায়নের কথা শুনে চোখ তুলে রাইদা তাকায়।

‘আপনার শ্বশুড় আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে ইন্জিনিয়ারিং এ।’

‘এখন বই খাতা রেখে জামা পাল্টে আসো আমারা বের হবো।’

‘কোথায় যাবেন এখন?’

‘লং ড্রাইভে যাবো সাথে আমার পছন্দের রেস্টুরেন্টে।’

সায়নের কথায় বই খাতা রেখে রাইদা চলে যায় রেডি হতে।

..

রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে বেরিয়েছে রাইদা আর সায়ন। ড্রাইভিং সিটে অনায়াসে গাড়ি চালাচ্ছে সায়ন পাশের সিটে বসা রাইদা ফোনে মেসেজ আদান-প্রদানে ব্যস্ত। অনেকক্ষণ ধরে রাইদার এহেন কাজে সায়ন বিরক্ত হয়। হাত বাড়িয়ে রাইদার ফোন কেঁড়ে নেয়। হুট করে ফোন কেঁড়ে নেওয়াতে রাইদা থতমত খায়।

‘আরে ফোন নিলেন কেনো? ফোনটা ফেরত দেন।’,রাইদা ব্যস্ত গলায় বলে।

আমি পাশে থাকা অবস্থায় তুমি আমার থেকে বেশি তোমার ফোনকে গুরুত্ব দিচ্ছো যেটা আমার সহ্য হচ্ছে না।’,সায়ন ঠান্ডা স্বরে বলে।

‘আর ইউ জেলাস মিস্টার ইমতিয়াজ সায়ন? ‘,রাইদা দুষ্টু হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘হিংসা করার বিষয়টা যদি তোমাকে নিয়ে হয় তাহলে আমি সবসময়ই হিংসা করি।’,রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।

‘আচ্ছা ফোনটা ফেরত দেন ব্যাগে রেখে দিবো।’,রাইদা হাত বাড়িয়ে বলে।

‘তুমি আমাকে এখনো বিশ্বাস করো না তাই না? মন থেকে মেনে নাওনি শুধু মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছো।’

আচমকা সায়নের এমন কথায় রাইদার হাসিমুখ মিলিয়ে যায়।

‘হঠাৎ এমন কথা বলছেন কেনো জানতে পারি?’

‘অর্কের বোনকে পালিয়ে বিয়ে করতে সাহায্য করলে অথচ আমাকে একবারো বিষয়টা জানাওনি বা প্রয়োজনবোধ করোনি। না জানানোর একটাই কারণ তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না তাই জানাওনি। আমাকে বললে কি আমি তোমায় বারন করতাম যেতে?’,সায়ন ধীর গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘কিছু বিষয় থাকে যেগুলো সবাইকে বলা যায় না। কথাটা পাঁচ কান করতে চাচ্ছিলাম না তাই জানাইনি।’

রাইদার মুখে এমন কথা শুনে সায়ন হাসে।

‘হাসছেন কেনো? হাসির কিছু বললাম?’

‘এই যে তুমি নিজেই বললে আমায় বিশ্বাস করো না।’

‘আশ্চর্য এই কথা আমি কখন বললাম? সামান্য একটা বিষয় নিয়ে শুধু শুধু জল ঘোলা করছেন।’

রাইদার কথার কোনো জবাব দেয় না সায়ন চুপ করে গাড়ি চালাতে থাকে। রাইদার পিছনে যেই ছেলেটাকে লাগিয়েছিলো সেই ছেলেই কোনো এক কাজে ঐ এলাকায় গিয়েছিলো তখনই রাইদাকে কাজী অফিসের সামনে দেখে কৌতুহল হয়ে পিছু নিয়ে বিস্তারিত সায়নকে জানায়। সায়ন ঘটনা জেনেও এতদিন চুপ ছিলো ভেবেছিলো রাইদা এ বিষয়ে নিজেই এসে বলবে কিন্তু এতদিনেও রাইদা এ বিষয়ে যখন তাকে বলেনি তখন ভেতর থেকে সায়নের খারাপ লাগা তৈরি হয়।

রাইদা বাহিরের দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত হয়। সায়ন এই ঘটনা জেনেছে এতে তার মাথা ব্যথা নেই কিন্তু কীভাবে জেনেছে সেটাই মাথা ব্যথা। কিছু একটা ভেবে রাইদা নখ কামড়াতে থাকে। রাইদার সামনে ফোনটা ধরলে ফোনটা পেয়েই রাইদা কিছু দেখে ফোন লক করে ব্যাগে রেখে দেয়।

গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষ দু’জনের মধ্যে চলছে নিরবতা। হাত বাড়িয়ে রাইদা গাড়ির রেডিও চালু করে দেয়। রেডিও চালু করার পর বেজে উঠে গান।

সায়ন রাইদার দিকে না তাকিয়ে গানের কথার সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে শুরু করে। রাইদা গালে হাত দিয়ে সায়নের গম্ভীর মুখটার দিকে তাকিয়ে ভাবনায় ডুব দেয়।

….

পরেরদিন দুপুরবেলা ক্লাস শেষ করে গাছ তলায় এসে মুখ ভাড় করে বসে আছে পায়েল। রাইদা আড়মোড়া ভেঙে ক্যান্টিনে যাচ্ছিলো তখনই গাছতলায় পায়েলকে দেখে সেদিকে পা বাড়ায়।

‘কিরে মন খারাপ? সবাই তো ক্যান্টিনে গেলো তুই এখানে একা কেনো?’,পায়েলের পাশে বসে রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘এমনি কিছু হয় নি। তুই যা ক্যান্টিনে আমি একটু পর আসছি।’,পায়েল উত্তর দেয়।

‘কথা না লুকিয়ে আমাকে বল আমি সমাধান করার চেষ্টা করবো।’,রাইদা পায়েলের কাঁধে হাত রেখে বলে।

পায়েল রাইদার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আচমকা জড়িয়ে ধরে।

‘আন্টি কিংবা আঙ্কেল কিছু বলেছে? নাকি বড় আপু কিছু বলেছে?’,পায়েলের পিঠে হাত রেখে রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘রুবেল ভাই আমাকে ইগনোর করতেছে।’,রাইদাকে জড়িয়ে বলে পায়েল।

‘কেনো হঠাৎ ইগনোর করবে কেনো? তুই কি এমন করেছিস যে তোরে ইগনোর করবে?’

‘উনি যখন আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলো আমি তখন মজা করে বলেছিলাম আমাদের পরিবার নিম্নবিত্ত তখন সে নিজের পরিবারের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলো। এক সময় আমার মনে হলো ওনাকে মিথ্যা বলা উচিত হয়নি তখন সত্যিটা জানাই আর সে যখন জানতে পারে আমার পরিবার উচ্চবিত্ত তখন থেকেই আমার কল রিসিভ করে না এমন কি মেসেজের উত্তরও দেয় না।’

পায়েলের কথা শুনে রাইদা বুঝতে পারে সে বড় একটা ভুল করে ফেলেছে।

‘এমনও হতে পারে সে অফিসের কাজে ব্যস্ত তাই হয়তো যোগাযোগ করছে না। পরে ফ্রি হয়ে হয়তো যোগাযোগ করবে।’

‘না সে মেসেজ পাঠিয়েছে দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে।’
কথাটা বলে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রুবেলের মেসেজ বের করে পায়েল।

‘এই যে দেখ এখানে স্পষ্ট লেখা আমি মিথ্যাবাদী মেয়ে আর আমি নাকি তার সরলতার সুযোগ নিয়েছি। এমন মিথ্যাবাদী মেয়ের সাথে সে মরে গেলেও আর কথা বলবে না।’,কথাটা বলে পায়েল কান্না করে দেয়।

‘আরে তুই কান্না করছিস কেনো। তুই কি রুবেল ভাইকে ভালোবাসিস?’

রাইদার কথা শুনে পায়েল কান্না থামিয়ে তাকায়।

‘জানি না শুধু জানি উনি আমাকে ইগনোর করার পর থেকে আমার খাওয়া, ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে। কিছুই ভালো লাগছে না আমার।’

পায়েলের উত্তর শুনে রাইদা হাসি দেয়।

‘পায়েল তুই তো শেষ। রুবেল ভাইয়ের প্রেমে একদম ডুবে গেছিস তোকে আর কেউ তুলতে পারবে না একমাত্র রুবেল ভাই ছাড়া।’

রাইদার এমন কথা শুনে পায়েল বোকার মতো তাকায়।

‘আমি সায়নকে কল দিয়ে তোর সাথে রুবেল ভাইয়ের দেখা করানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তোর কাজ হলো নিজের ভালোবাসার কথা ওনাকে জানানো।’

কথাটা বলে রাইদা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সায়নকে কল দেয়। সায়নের সাথে বিস্তারিত কথা বললে সায়ন রাইদাকে আশ্বস্ত করে এ বিষয়ে সাহায্য করবে সেটা বলে।

‘এক ঘন্টা পর তোকে একটা রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিবো সেখানে গেলেই রুবেল ভাইকে পাবি।’,রাইদা পায়েলকে বলে।

‘কিন্তু উনি কি আসবে?’,পায়েল প্রশ্ন করে।

‘রুবেল ভাইকে আনার ব্যবস্থা করবে সায়ন সেটা তোর চিন্তা করতে হবে না।’
রাইদার কথা শুনে পায়েল আবারো রাইদাকে জড়িয়ে ধরে। রাইদা হেঁসে পায়েলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

‘শোন সুযোগটা হাত ছাড়া করবি না একেবারে ওনার মুখ থেকে স্বীকার করিয়ে ছাড়বি। আমার মনে হয় রুবেল ভাইও তোকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে চায় না।’,রাইদা পায়েলকে বলে।

পায়েল হেঁসে রাইদাকে ছেড়ে মাথা নাড়ায়।

..

এক ঘন্টা পর সায়ন রাইদার ফোনে ঠিকানা পাঠালে সেই ঠিকানা পায়েলকে দেয় সে। ঠিকানা পেয়ে পায়েল বের হয় রুবেলের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।

কফি শপের এক ছোট টেবিলে বসে ফোন বের করে সায়নকে কল দেয় রুবেল কিন্তু সায়ন কল রিসিভ করে না। অফিস টাইমে সায়ন কল দিয়ে বলে জরুরি দরকারে দেখা করতে তাই তো লাঞ্চ টাইমে বেরিয়ে সায়নের দেওয়া ঠিকানায় সে এসেছে কিন্তু সায়নের কোনো খবর নেই। রুবেল ভেবে নেয় দশ মিনিট বসে দেখবে তারপর না হয় বেরিয়ে যাবে। ওয়েটার কফি নিয়ে আসলে তাতে চুমুক দিয়ে আবারো সায়নকে কল দেয় রুবেল।

তড়িঘড়ি করে এসে রুবেলের সামনে বসে পায়েল। হুট করে পায়েলকে দেখে রুবেল চমকে তাকায়। পায়েল হাঁপাতে হাঁপাতে টেবিলে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খায়।

টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে রুবেলের দিকে তাকায়। রুবেল আঁড়চোখে পায়েলকে দেখছিলো কিন্তু পায়েল তাকাতেই চোখ নামিয়ে ফেলে।

‘মিস পায়েল জাহান আপনি এখানে কেনো’,গম্ভীর গলায় পায়েলকে জিজ্ঞেস করে রুবেল।

‘দেখুম একদম ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে আমি কথা বলতে পারি না যা বলার সরাসরি বলতে চাই।’,সাহস সঞ্চয় করে বলে পায়েল।

রুবেল ভ্রু কুঁচকে পায়েলের দিকে তাকায়।

‘আমি আপনাকে ভালোবাসি আর আপনার সাথেই এ জীবন কাটাতে চাই।’
সবেই কফিতে চুমুক দিয়েছিলো রুবেল পায়েলের মুখে এমন কথা শুনে কাশতে থাকে।

‘মিস পায়েল আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনার আর আমার মধ্যে বিশাল একটা লাইন আছে সেই লাইন আমি ক্রস করতে পারবো না। আমি খুবই অল্প বেতনে চাকরি করি সেই টাকায় হয়তো আপনার মেকআপের খরচও হবে না। আমার পরিবার খুব সাধারণ ভাবে বসবাস করে।’

রুবেলের কথাগুলো শুনে পায়েল রুবেলের হাতের উপর হাত রাখে।

‘আমি যদি আপনার সাথে মানিয়ে নেই তাহলে কি আপনার খুব সমস্যা হবে? আমি চাইছি আপনার সাথে জীবন কাটাতে। অর্থের সুখ এতো বছর পেয়েছি এবার শুধু ভালোবাসার সুখটা পেতে চাই। আপনি কি আমায় সেই ভালোবাসা দিবেন?’

পায়েলের কথা শুনে রুবেল চোখ তুলে তাকায়। এই মূহুর্তে পায়েলকে ফিরিয়ে দেওয়ার শক্তি তার নেই। এই রকমই একজনকে সে সবসময় নিজের করে চাইতো।

‘এই যে হাতটা ধরলাম আর ছাড়বো না কথা দিলাম।’
পায়েলের হাতের উপর হাত রেখে রুবেল বলে। পায়েল খুশিতে হেঁসে দেয়। পায়েলের হাসি দেখে রুবেলের বুকে প্রশান্তি বয়ে যায়।

‘ইশ্ হাসলে তোমায় পুরে ঐশ্বর্যের মতো লাগে। আমার কত দিনের শখ ঐশ্বর্যের সাথে কাজরা রে গানে কোমড় দুলাবো। আসল ঐশ্বর্যকে তো পেলাম না তোমাকে দিয়েই কাজ চালাবো।’

রুবেলের কথা শুনে পায়েলের হাসির বেগ বেড়ে যায়। লোকটার আবোলতাবোল কথাগুলো পায়েলের ভীষণ পছন্দ। মূহুর্তেই যে কাউকে হাসতে পারে।
হাতে হাত রেখে সদ্য ভালোবাসায় জয়ী যুগল গল্পে মেতে উঠে।

..

ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি থেকে রিকশায় করে ফ্ল্যাটে ফিরছিলো রাইদা হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে রওশন আরা কল দিয়েছে। হঠাৎ রওশন আরার কল দেখে রাইদা অবাক হয়। বিয়ের ঘটনার পর থেকে তাকে রওশন আরা তাকে কল দেয়নি এই পর্যন্ত। কল রিসিভ করে ফোন কানে দেয়।

‘কি ব্যপার ভুলে কল আসলো নাকি এই নাম্বারে?’,রাইদা বলে উঠে।

‘ভালো মনে কল দিলাম আর শুরু হয়ে গেলো তোর তেঁতো কথাবার্তা। এই মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় এখনো শেখাতে হবে নাকি ঐ বেয়াদব ছেলের সাথে থেকে সেটাও ভুলে গেছিস?’,রওশন আরা রাগী স্বরে বলে।

‘আচ্ছা বলো শুনছি।’

‘একটু বাসায় আয় তোর সাথে কথা আছে।’

‘এখন আসতে পারবো না পরে আসবনি।’

‘তোর মেজখালা আর তার মেয়ে এসেছে বেড়াতে। মেয়েটা তো বারবার বলছে কল দিয়ে যেনে তোকে আসতে বলি।’

‘মারিয়া এসেছে? আগে বলবা না? আচ্ছা আমি আসতেছি।’
রাইদার কথায় রওশন আরা খুশি হয়। কল কেটে রাইদা নিজের বাবার বাসার দিকে রিকশা ঘুরিয়ে রওনা দেয়।

ফ্ল্যাটের দরজায় কলিংবেল দিলে মারিয়ে দরজা খুলে দেয়। মারিয়াকে দেখে রাইদা খুশিতে জড়িয়ে ধরে। সোফায় বসা মারিয়ার মা মাইমুনার দিকে চোখ গেলেও রাইদা না দেখার ভান করে মারিয়াকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

..

ক্লান্ত শরীরে ফ্ল্যাটের দরজায় এসে দাঁড়ায় সায়ন। দরজায় তালা দেখে অবাক হয়ে তালায় হাত দেয়।

ফোন বের করে দেখে রাইদার কোনো কল মেসেজ নেই। রাজ্যের চিন্তা মাথায় নিয়ে রাইদাকে কল দেয়। কয়েকবার রিং হয়ে কলটা কেটে যায়। সায়ন তড়িৎ গতিতে আবারে কল লাগায় এবার কল রিসিভ করে রাইদা।

‘কই তুমি? রাতের এগারোটার সময় কই গেছো আমাকে না বলে?’,সায়ন রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করে।

‘আপনাকে তো কল দিয়ে জানাতে ভুলেই গেছি। আসলে আমি বাবার বাসায় আসছি দুপুর বেলা।’,রাইদা সোজাসাপটা উত্তর দেয়।

‘তোমার কি কোনো রেসপনসেবলিটি নেই? আমি সারাদিন পর অফিস থেকে এসে তোমাকে না পেয়ে চিন্তা করবো সেই কথাটা তোমার মাথায় আসেনি? একটা মেসেজ দিয়ে ও তো জানাতে পারতে কই আছো। তুমি এখনো এসব বুঝো না আর বুঝবা কবে?’,এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে দম নেয় সায়ন।

‘আরে বললাম তো ভুলে গেছি আপনি এতো রিয়েক্ট কেনো করছেন? সকালে আমি ফিরে আসবো আপনি খেয়ে ঘুমান।’

‘আর ফিরতে হবে না থাকো সেখানেই।’
কথাটা বলে রাইদাকে কথা বলার সুযোগ না দিলে কল কেটে দেয় সায়ন। কল কাটার পর রাইদা সাথেসাথে সায়নের নাম্বারে কল দিলে নাম্বার বন্ধ দেখায়। এবার রাইদার মাথায় চিন্তার ঝড় বয়ে যায়।


(চলবে..)

(আজকে লিখে শেষ করতে পারবো না ভেবেছিলাম কিন্তু লিখতে বসে এই টুকু লিখে ফেলেছি তাই পোস্ট করে দিলাম। চুপিচুপি গল্প পড়ে চলে না গিয়ে একটা ছোট্ট করে কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here