#প্রণয়াসক্ত_হাওয়া`[২]
#সুমাইয়া_মনি
আকাশে মেঘের আভাস। বৃষ্টি এলো বলে। দমকা হাওয়ার গতিবেগে বিদ্যুৎ বি চ্ছি ন্ন। ঝড়ের আভাস পাওয়া মাত্র বিদ্যুৎ উধাও! আমেরিকায় এমনটি খুব কম হয় বলা চলে। রাবি রায়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। রায়াদের বাড়ি থেকে বের হবার পর পরই বিদ্যুৎ চলে গেছে। জানালার পানে চেয়ে রাবি কাল রাতের মুহূর্ত গুলো ভাবছে। যখন সে শুনেছে নানির সাথে তার বা স র হবে চোখমুখ শুঁকিয়ে এসেছিল। কিছুক্ষণের জন্য আহাম্মক হয়ে চেয়ে রয়েছে। নানি বলেছিল মেয়ের বাড়িতে নাকি দ্বিতীয় বার বা স র হয় নানি অথবা দাদির সাথে। রায়ার দাদি মৃ ত্যু ব র ণ করেছে আরো এক বছর আগে। এজন্য নানির সঙ্গেই দ্বিতীয় বা স র পালন করতে হবে। তাদের একা রেখেই রায়া বেরিয়ে গিয়েছে। শুধু বের হলে অবশ্য ভালো হতো। রায়া তো বাহির থেকে দরজা লক করে রেখেছিল। যাতে রাবি বের হতে না পারে। রাবি কিছুতেই এই প্রন্থাকে প্রশ্রয় দিবে না। মেয়ের বাড়িতে নানি-দাদির সঙ্গে দ্বিতীয় বা স র হয়। এটি তার জীবনে প্রথম শুনেছে। নানি যখন তার লালচে দাঁত বের করো হেসে রাবির নিকট এগিয়ে আসতে লাগলো চট করে বিছানায় উঠে ভ য়া র্ত গলায় বলল,
‘নো নানু নো! এটা অসম্ভব।’
‘তুমি করতে পারলেই সম্ভব। আহো তুততুরি।’ এক দু কদম এগিয়ে বলল রচনা খাতুন।
‘নাহ! দূরে থাকুন। চলে যান রুম থেকে।’
‘এত সহজে যাইবার লাগছি না।’
‘কত টাকা চাই বলুন নানু। আমি দিতে রাজি আছি।’
রচনা খাতুন হাতের তালু চুলকানো ভঙ্গিমা করে বলল,
‘দশ হাজার দিলে যামগা।’
‘দিচ্ছি।’ তড়িঘড়ি করে মানিব্যাগ থেকে এক হাজারের দশটি নোট বের করে তার সামনে ধরলো। রচনা খাতুন ছোঁ দিয়ে টাকা গুলো নিয়ে হেসে বলল,
‘আইচ্ছা এহন আমি গেলাম। তুমি আমার নাতির লগেই বা স র ঘর পালন কইরো।’
বিছানা থেকে নেমে বুকে হাত রাখল বারি। বাস্তবে ভেবে আনমনে তারও বুকে হাত চলে এলো। সেটি বুঝতে পেয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। রায়া রাবির এমন উদ্ভট দৃশ্যটি দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে। রাবি একবারের জন্যও আর এপাশে তাকাল না।
‘নানি বেশ মা রা ত্ম ক ছিল। না জানি তার নাতি কেমন হয়! নিশ্চয় তেমনই হবে।’ মনে মনে বলল রাবি।
অর্ধ রাস্তায় বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। সঙ্গে বাতাস। গাড়ির মধ্যে ড্রাইভার সহ রাবি ও রায়া। চমৎকার রোমাঞ্চকর একটি ওয়েদার। রায়ার মনে অনুভুতি সৃষ্টি হলেও রাবি শান্ত স্বাভাবিক ছিল। সে ভীষণ বিরক্ত অনুভব করছে। বাড়িতে পৌঁছাবার পর যদি বৃষ্টি হতো তাহলে সে কিছুটা হলেও শান্তি পেত। রায়া রাবির পানে একবার তাকাল। সে-ই যে উঠার পর থেকে বাহিরের পানে তাকিয়ে আছে এমুখো আর ফিরলো না।
পাশে সুন্দরী বউ বসে রয়েছে সেদিকে এই লোকের হুঁশ নেই!
কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে রাবির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখল,
‘ছ্যাঁ কা ক’টা খেয়েছেন এ যাবত?’
‘আমাকে বলছো?’ কপালে মৃদু ভাজ ফেলে জিজ্ঞেস করল।
রায়া বিরক্ত বোধ নিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলল।
‘জিরো!’
‘বিশ্বাস করি না।’ এদিক সেদিক মাথা নাড়িয়ে বলল।
‘ইচ্ছে!’
‘সত্যি করে বলুন না।’
‘আমি মিথ্যা বলি না।’ গম্ভীর কণ্ঠে বলল।
রায়ার তবুও বিশ্বাস হলো না কথাটি। সরু চোখে তাকিয়ে সেকেন্ড কয়েক পর নজর ঘুরিয়ে নিলো।
হঠাৎ চিল্লিয়ে উঠলো রায়া।
‘গাড়ি থামান আংকেল আমি আইসক্রিম খাব।’
‘একদম না। ঠান্ডা লাগবে তোমার।’
‘এতে আপনার সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না।’ গমগম আওয়াজে অভিমান স্বরে বলল।
রাবি চুপ হয়ে রইলো। রায়া ফের গাড়ি থামাতে বললে ড্রাইভার গাড়ি থামায়। রাবির কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজেই বের হয় আইসক্রিম আনতে। তখন বৃষ্টির ঝোঁক কিছুটা কম ছিল। আইসক্রিম কিনে দোকানের ছাওনির নিচে দাঁড়িয়ে একটি খুলে খেতে আরম্ভ করল। রাবি এপাশের সিটে এসে কাঁচ নামিয়ে বিরক্ত মাখা মুখশ্রী নিয়ে রায়ার পানে তাকাল।
এ বৃষ্টির মধ্যে দোকানে পাশে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে সুন্দরী রমণী। এমন পাগলী রমণী কম দেখা যায় আজকাল। বৃষ্টির সঙ্গে বারে বারে দমকা হাওয়া এসে রায়ার শ্যাম্পু করা খোলা চুল উড়িয়ে ঠোঁট, চোখ, নাক, গাল ছুঁয়ে দিচ্ছে। শাহাদাত আঙুল দ্বারা চুলগুলো সরিয়ে আকাশের পানে খুশি মুখে তাকাচ্ছে। এমন মনোরম দৃশ্যটি দেখে রাবির বুকের মাঝে কিঞ্চিৎ হাওয়া বয়ে গেল। এ অনুভূতিকে সে ধ্যান দিল না। নজর সরিয়ে নিলো। একটি আইসক্রিম সম্পূর্ণ শেষ করে আরেকটি নিয়ে গাড়িতে উঠলো। ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে অপর আইসক্রিমটি খেতে লাগলো। রাবি আড়চোখে রায়াকে দেখছিল। হঠাৎ রায়া আইসক্রিমটি তার সামনে ধরে বলল,
‘খাবেন?’
রাবি নিরুত্তর থেকে ভাবলেশহীন নজরে রায়া ও আইসক্রিমের পানে চেয়ে নজর সরিয়ে নিলো। রায়া মুখ ভেং চি কেটে বলল,
‘তখন কোক খেয়ে সাবান, সোডা ঘ ষে ছেন ঠোঁটে। এখন আধখাওয়া আইসক্রিম খেলে না জানি ঠোঁটে কি না কি ঘ ষেন।’
রাবি রা গা ন্বি ত চোখে তাকালে রায়া শান্তভাবে বসলো। অল্পতে চুপ হয়ে রয়। দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাল।
বাড়ি ফিরে রাবি আগে গোসল করে নেয়। রায়া ননদ ও শ্বশুড়ির সঙ্গে আলাপন ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর রিনির বান্ধবীরা আসলো। মনোয়ারা বেগম তাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করতে রান্নাঘরে এলো। তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে রাবি নিচে এলো। রিনি রাবিকে ওর বান্ধবীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। তাদের পাশে বসিয়ে যোগ করল তাদের আড্ডায়।
‘ভাবি চলো আমরা একটা গেম খেলি।’
‘তার আগে আমি তোমাদের একটা জাদু দেখাবো।’
‘সত্যি! দেখাও দেখাও।’ রিনি উত্তেজিত হয়ে বলল।
‘বোসো তোমরা, আসছি।’ রায়া তাদের বসতে বলে কিচেনে এলো। একটি টাওয়ালে কিছু আটা নিয়ে ড্রইংরুমে উপস্থিত হয়।
‘এটার মধ্যে কী ভাবি?’
‘আছে আছে। তোমরা দেখতে থাকো।’ রায়া টাওয়ালটি দু হাতের মাঝে রেখে বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়ে ফু দিলো। সকলে মনোযোগ দিয়ে রায়াকে পর্যবেক্ষণ করছে। তারপর রায়া টাওয়ালটি নিয়ে রাবির সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,
‘দেখুন?’
রাবি কপালে ভাঁজ ফেলে জানতে চাইলো,
‘কী আছে?’
‘বললে হবে। দেখতে হবে। দেখুন?’ হাতে তুলে দিলো রাবির।
রাবি টাওয়ার মেলে ধরে দেখার চেষ্টা করছে কী আছে তার মধ্যে। আচমকা রায়া টাওয়ালটি নিচ থেকে রাবির মুখশ্রীর পানে ছুঁ ড়ে মা র ল। সব আটা গিয়ে রাবির মুখে এবং মাথায়, গায়ে উড়ে পড়লো। রাবি চেঁ চি য়ে উঠে বলল,
‘হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?’
সেকেন্ড কয়েক রিনির বান্ধবীরা একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। তাদের সঙ্গে রায়া নিজেও যোগ দিলো। হেসে হেসে বলল,
‘এটাকেই বলে ফ ই রা মি জাদু!’
ক্রো ধে দাঁতমুখ খিঁ চে রেখেছে রাবি। বলা, স হ্য করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপর তলা থেকে ইমাম শেখ ও কিচেন থেকে মনোয়ারা বেগম ছুঁটে আসলো ড্রইংরুমে। তাদের অট্টহাসিতে বাঁধ্য করেছে এখানে আসতে। তারা রাবির অবস্থা দেখে হ ত বা ক। ইমাম শেখ বললেন,
‘এগুলাে কী? তোমার গায়ে পড়লো কীভাবে?’
রিনি হাসি কোনোমতে আটকিয়ে বলল,
‘আমি বলছি আব্বু। ভাবি আমাদের জাদু দেখিয়েছে।’ প্রথম থেকে সম্পূর্ণ কর্মকাণ্ড শুনিয়ে শেষে বলল,
‘এটাকে নাকি ফ ই রা মি জাদু বলে ভাবি বলল।’ বলতে বলতে ফের হেসে ফেলে রিনি।
ইমাম শেখ ও মনোয়ারা বেগম তারা-ও হেসে দেয়৷
মনোয়ারা বেগম বুঝতে পারে তার কাছ থেকে আটা কেন চেয়েছিল। সকলের হাসিতে গাঁ জ্ব লে উঠল রাবির। কা ঠ কা ঠ কণ্ঠে বলল,
‘তোমরাও হাসছো? মাত্র গোসল করে এসেছি।’
‘আবার করবে সমস্যা কী? বৌমা তোমার সঙ্গে একটু দুষ্টুমি করেছে। এতে এত ক্ষে পে যাচ্ছো কেন?’
রায়া খুশি হয় শ্বশুরকে নিজের সার্পোট করতে দেখে। রাবি ক্ষু ব্ধ চোখ রায়ার পানে তাকায়। দাঁতে দাঁত পি ষে মনে মনে বলল,
‘জাস্ট ওয়েট এন্ড সি রায়া।’ বলতে বলতে বড়ো বড়ো পা ফেলে রুমের দিয়ে এগোয়।
তারাও চলে যায় যে যার মতো। রিনি রায়ার হাত ধরে কাছে টেনে বলল,
‘ভাবি এবার ভাইয়া তোমাকে সা য়ে স্তা করবে দেখে নিও।’
‘দেখতে চাই সে কি করতে পারে।’
‘কোন ব্যাপারে রে গে আছো ভাইয়া ওপর।’
‘না বলি?’ হেসে বলল রায়া।
‘ওকে।’ বলে রিনিও হাসলো।
.
.
.
#চলবে?
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।