তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১২
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনিকে এর আগে যতবার সে দেখেছে ততবারই রণচণ্ডী মনে হয়েছিল।তবে এ প্রথমবার ভীতুর ডিম মনে হলো।কেমন যেন মনের ভেতরে চোরাই কারবার লুকিয়ে রেখেছিল এমনটা মনে হলো বাপ্পির কাছে।ড্রেসিং টেবিলের কাছে এসে হাতে ঘড়িটা পরতে পরতে বাপ্পি আয়নায় চোখ রেখে আবারও তটিনিকে দেখে।সে চোখ ঘুরাচ্ছে চারিদিকে।যেন কিছু একটা বলবে আবার বলবেনা এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
ঘড়িটা পরে চুল গুলাকে হাত দিয়ে ঠিক করে বাপ্পি বললো,’কিছু বলবে আমায়?’
‘না তো!কে বললো কিছু বলবো!’
বাপ্পি আর কিছু বললোনা।সোজা রুমের বাহিরের দিকে চলে যাচ্ছিল ওমনি তটিনি বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে ওর পথ রোধ করে বলে,’আপনি কোথাও যাবেন না’
‘কেন?’
‘আমি বললাম তাই।বসুন বিছানায়,নাস্তা আছে, নাস্তা করুন’
‘আমি বাবার সাথে বাগানে বসে চা খাই সকালে।এটা আমার অভ্যাস।তাই যাচ্ছি’
তটিনি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো মুখ কালো করে।বাপ্পি ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আবারও জানতে চাইলো কি হয়েছে সে যেন বলে।কিন্ত তটিনি কিছুই বলেনি।বাপ্পির আর কি করার, দরজা খুলে সে চলে গেছে।তটিনি ঘোমটা টানতে টানতে ওর পিছু পিছু বের হলো।মূহুর্তেই বাপ্পি চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেছে।কোথায় গেলো লোকটা!তটিনি ঘোমটার তলা দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিল বাপ্পি কোথায় ওমনি তার ধাক্কা লাগে বকুল আপুর বড় মেয়ে তৃষার সাথে।তৃষা কয়েক মিনিট হলো এসেছে।সে ছিল বকুল আপুর শ্বশুর বাড়িতে।কাল রাতে ওর বাবার সাথে চলে গেছিলো,এখন আবার ফেরত এসেছে।তৃষা তটিনিকে দেখে ওর হাত চেপে ধরে বললো,’মামি কেমন আছো?আমি কিন্তু চকলেট এনেছি তোমার জন্য।নাও আমায় মুখ দেখাও’
তটিনি বুঝে গেছে এটাই সেই তৃষা।ঢোক গিলে সে নিজেও তৃষাকে খপ করে ধরে টেনে রুম অবধি নিয়ে আসলো।তৃষা মনে মনে অনেক খুশি তার মামি তাকে আদর করতে রুমে নিয়ে এসেছে।
তটিনি ঘোমটা সরিয়ে বললো,’তৃষা তুমি ফোন চালাও বুঝি?’
‘হ্যাঁ তো।আব্বুর ফোন থেকে আম্মুর আইডি চালাই।কেন বলো তো?ও হ্যাঁ একটা কথা মনে পড়েছে।মামা বললো উনি নাকি তোমায় নিয়ে কক্সবাজার গেছে।কবে গেলো?দেখলে মামা কত বড় মিথ্যে বললো!আজ মামার খবর আছে’
‘আরেহ না না।তোমার মামা আসলে!!’
তটিনি কিছু বোঝাতে যাবে তার আগেই বাপ্পি এসে হাজির রুমে।এসেই তৃষাকে দেখে ওর গাল টিপে বললো,’তুই এসেছিস শুনে চলে এলাম।খবর কি?কাল বিয়ে কেমন খেলি?’
তৃষা কোমড়ে হাত রেখে বলে,’তুমি নাকি মামিকে নিয়ে কক্সবাজার গেছো!আমায় মিথ্যে কেন বললে?আমি তো ভাবলাম সত্যি সত্যি চলে গেছো’
‘আমি?কবে বললাম?’
তটিনি ঘোমটা টেনে অন্যদিকে ফিরে বসে আছে।তৃষা সব বলে দিচ্ছে এক এক করে।বাপ্পি জানে সে কাল থেকে ফেসবুকে যায়নি, এ কাজ তটিনি ছাড়া আর কারোর হতে পারেনা।কারণ এই বাড়িতে বাপ্পির ফোন ধরার সাহস আর কারোর নাই।বাপ্পি সব বুঝতে পেরে মুচকি হেসে তৃষাকে নিয়ে চলে গেলো।ওরা চলে যাবার পর তটিনি পেছন ফিরে রুমে কাউকে না দেখে গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বের হলো দেখার জন্য তারা আসলে গেলো কোথায়,ওমনি সামনে এসে দাঁড়ায় বকুল আপু।ওনাকে দেখে তটিনি ঘোমটা ভাল করে টেনে দাঁড়িয়ে পড়ে।
‘বুঝতে পারছি তোমার এই রুমে থাকতে দম বন্ধ লাগছে।মেহমান সবাই বিকালের দিকে আসবে।আর এখন আমরা সকলে বাড়ির গাড়ীতে হাসপাতাল যাচ্ছি তোমার বাবাকে দেখতে।তুমি আর বাপ্পি,তৃষা বাসাতেই ঘাকো।আমরা দুপুরের দিকে চলে আসবো’
তটিনি মাথা নাড়ায়।সবাই এক এক করে চলে গেলো।দুটো গাড়ী লেগেছে সবার জন্য।এত লোক তো এক গাড়ীতে হবার কথা না।তটিনি ভয়ে ভয়ে বাগানে এসে দাঁড়ায় বাপ্পি আর তৃষাকে খুঁজতে।কি লজ্জাটাই না সে পাবে বাপ্পির কাছ থেকে আজ।
———-
আসিফ ভেবেছিল দরজা বন্ধ করে রাখলে রিনি এসে দরজা নিয়ে টানাটানি করবে,ওকে বাধ্য করবে দরজা খোলার জন্য কিন্তু রিনি এসব কিছুই করেনি।চারিদিকে ঠাণ্ডা আবহাওয়া বহমান। আসিফ ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে নিজেই দরজা খোলে।দরজার বাহিরেও রিনির আনাগোনা নেই।তবে মেয়েটা গেলো কোথায়?
আসিফ কোনো শব্দ না করে পা টিপে টিপে করিডোর পেরিয়ে সোফার রুমে এসে হাজির হয়।রিনি সেখানেও নেই,টিভিও বন্ধ।তবে কি ছাদে গেলো?
একটু সামনে গিয়ে সে দেখে ছাদে যাবার দরজাটাও ভেতর থেকে বন্ধ।তার মানে রিনি বাসাতেই আছে।তবে কোথায় আছে?
কোমড়ে হাত রেখে আসিফ সেটাই ভাবছিল,ঠিক সেসময় রান্নাঘর থেকে চামচ পড়ে যাবার আওয়াজ ভেসে আসলো তার কানে। তাই এক ছুটে সে ওদিকে যায়।গিয়ে দেখে রিনি নুডুলস বানাচ্ছে।আসিফকে দেখে বলে,’এক্কানাও দিতাম “ন”!এতক্ষণ আইয়েন “ন” কা?আঁই মনে কইচ্ছি আন্নে আর আইতেন “ন”।হেয়াল্লাই আঁই শুধু আঁর লাই নুডুস বানাইছি, দিতাম “ন” হরেন😏!’
[একটুও দিবোনা।এতক্ষণ আসেননি কেন?আমি ভাবছি আপনি আর আসবেন না, তাই আমি শুধু আমার জন্য নুডুলস বানিয়েছি।দিবোনা,সরেন।]
আসিফ ভ্রু কুঁচকে ওখান থেকে চলে এসে সোফায় বসে।রিনি বাটিতে নুডুলস নিয়ে আসিফের পাশে বসে বললো,”শতানি কইচ্চি।ধরেন এক্কানা খান”
‘লাগবেনা, আমার এত শখ নাই। আমি ভরপেট নাস্তা করছি।নাস্তা করার পরেই আমার নুডুলস খাওয়ার শখ জাগেনা’
‘আঁই কি নাস্তা কইচ্ছিনি!তটিনি বইনের মামি কিয়ের হাইয়া দিই আলু দিই ভাজি বানাইছে,এইডা আঁই আর বাইত ও খাইতাম না।ইয়ানে তো খাইতামই না।তার লগে আবার কিয়ের গমের আডার রুডি বানাইছে।আঁই হুদা রুডিই খাইনা আবার গমের আডার রুডি খাইয়াম!!’
[আমি কি নাস্তা করছি?তটিনি বোনের মামি কিসের যেন পেঁপে দিয়ে আলু দিয়ে ভাজি বানিয়েছে,এটা আমি বাড়িতেও খেতাম না,এখানে তো খাবোইনা।তার সাথে আবার কিসের যেন গমের আটার রুটি বানিয়েছে।আমি এমনি রুটিই খাইনা।আবার বুঝি গমের রুটি খাব?]
আসিফ সোফা থেকে উঠে বললো,’এত কথা কিভাবে বলিস?তুই তো এত বাঁচাল ছিলিনা।কাল থেকে আমার কানের পর্দা একেবারে ছিদ্র করে ফেলছিস।একটু চুপ থাকতে পারোস না?’
‘ছিদ্রই তো কইচ্চি,ছিঁড়ি তো হালাই “”ন”😌
[ছিদ্রই তো করেছি।ছিঁড়ে তো ফেলি নাই’
———-
তটিনি বাগানটা চক্কর কেটে বাসায় ফেরার জন্য পিছনে মুড়তেই বাপ্পির সাথে এক ধাক্কা খেলো।বাপ্পির মুখের দুষ্টু হাসি বলে দিচ্ছে সে সব বুঝে গেছে।তটিনি ভয়ে ভয়ে বললো,’তৃষা কই?’
‘সে পাশের বাসায় গেছে।ওর বেস্টফ্রেন্ড কাফির বাসা।কথা বলতে গেছে’
তটিনি ও আচ্ছা বলে চোরের মতন পালিয়ে যাচ্ছিল,ঠিক সেসময় বাপ্পি বলে উঠলো,’শুনলাম আমরা দুজন নাকি কক্সবাজার গিয়েছি??’
‘কে বললো?’
‘বলেছে একজন।সেই ব্যাক্তি আবার ভুলবশত আমার ভাগ্নিকে আপু ডেকে ফেলেছে।’
তটিনি জিভে কামড় দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।বাপ্পি ওর পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো,’মাঝে মাঝে হাসবেন্ডের প্রতি পসেসিভ হওয়া ভাল।আই লাইক ইট’
তটিনি ওর পিছু পিছু আসতে আসতে বলে,’আমি মোটেও আপনার প্রতি পসেসিভ নাহ।যান না!ঐ মেয়েগুলোর সাথেই কক্সবাজার যান।ধরে রেখেছি নাকি?!’
‘যাবো।তার আগে মেয়েগুলোকে সরি বলে এরপর বলতে হবে আমার আইডি হ্যাক হয়েছিল।কারণ আমি কক্সবাজার যাইনি।হ্যাকার কক্সবাজার নিয়ে গেছে’
বাপ্পি এ কথা বলে চলে গেছে।তটিনি শুরুতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকলেও পরে ভাবলো বাপ্পি সত্যি সত্যি মেয়েগুলোকে এই মেসেজ দেবে নাকি!
তাই সে ওর পিছু পিছু রুমে চলে আসে।এসে দেখে বাপ্পি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
তটিনি মনে মনে চিন্তা করলো বাপ্পি তো তাকে ভীষণ পছন্দ করে,তাহলে সে কোন সাহসে এমন করবে?নিশ্চয় ওকে জেলাস ফিল করার জন্য মিথ্যা নাটক করছে।তাই সে সব বুঝে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ডিভানে বসে পা দোলাতে লাগলো।বাপ্পি ভাবছে তটিনি হয়ত এসে ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দেখবে কিন্তু এ দেখি উল্টা রিয়েকশান!
তটিনি বাপ্পির ল্যাপটপটা অন করে একটা কার্টুনের ভিডিও অন করে প্লে করে ডিভানে পা তুলে বসে আরাম করে দেখছে।
বাপ্পি ওর কোনো পাত্তা নাই দেখে ফোন রেখে বললো,’আমি হাসপাতালে আঙ্কেলকে দেখতে যাবো।যাবা আমার সাথে?’
‘বাসা খালি না?’
‘বুয়া আছে,তৃষা আছে সমস্যা নেই।ওয়েট তার আগে আমি ওয়াশরুম থেকে আসতেছি’
এই বলে বাপ্পি চলে যেতেই তটিনি চট করে উঠে এসে বাপ্পির ফোনটা হাতে নিলো দেখার জন্য যে বাপ্পি এতক্ষণ কি করেছে ফোনে, ওমনি তার হাত চেপে ধরে বাপ্পি।অর্থাৎ সে এখনও ওয়াশরুমে যায়নি
চলবে♥তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১৩
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি কি জবাব দেবে মনে মনে অংক কষাকষি করছে।বাপ্পিকে শুরুতে হালাফালা করে আসলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারে উলটে যায়।জবাব দেয়ার প্রসঙ্গ আসলেই বুকের ভেতর দুরুদুরু করা শুরু করে।তটিনির ভয়ার্ত চোখ দেখে বাপ্পি ওর হাতটা ছেড়ে দিলো।তটিনিকে সে কখনওই কোনো কিছুতে জবাব দিতে বাধ্য করবেনা বলে পণ করেছিল।মেয়েটিকে সেই সব সুখ প্রতি পদে পদে দিবে বলে পণ করেই সে ওকে বিয়ে করে এনেছে!
মজার ছলে একটুখানি দুষ্টামি করলেও সেটার গভীরতা অতিতর হবেনা কখনও।
বাপ্পি মুচকি হাসে ওর দিকে চেয়ে।তটিনি বাপ্পিকে হাসতে দেখে ভাবে এই বুঝি বাপ্পি ওর ফোন ধরা নিয়ে ঠাট্টা করবে। তাই সে মুখটা আরও ফ্যাকাসে করে ফেললো।বাপ্পি টপিকটা চেঞ্জ করে বলে,’চলো দেরি হচ্ছে’
এই বলে সে বেরিয়ে গেলো।তটিনির এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা বাপ্পি তাকে কিছু বলেনি।সেও রোবটের মতন হেঁটে চলে গেলো বাপ্পির পিছু।
বাসার যে দুটো গাড়ী ছিল সেগুলো সবাই নিয়ে গেছে।তাই বাপ্পি একটা সিএনজি নিয়েছে মেইন রোডে এসে।দুজনে নিরবে হাসপাতালের দিকে রওনা হলো।কারোর মুখে কোনো কথা নেই।তটিনি মনে মনে চিন্তা করছে বাপ্পি বুঝি এখনও সেই ফোন ধরার কথা ভাবছে।অথচ বাপ্পি ভাবছিল তটিনিকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবে সেটা নিয়ে।কারণ মা-বাবা বলেছে বিয়ের পরেই সে যেন তার নতুন বউকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসে।
হাসপাতালে এসে বাবার সাথে আজ দেখা করে তটিনির অন্যরকম লাগলো,শুধু বাবাই না,মায়ের সাথে কথা বলেও অদ্ভুত লাগলো।এই একটা মাস ধরে বাপ্পিকে তটিনির পছন্দ না বলে উঠতে বসতে কথা শুনেছে সে।বাবা তো ওকে মা বলে ডাকাই বন্ধ করে দিছিলেন। মা তো শুধু খোঁটা দিতো প্রতিটা কাজে।আর এখন বাপ্পির সাথে বিয়ে হবার পর তারা কি সুন্দর করে কথা বলছে ওর সাথে।তটিনি বাবার হাত ধরে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।বাপ্পি রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ওর বাবার সাথে কথা বলছিল এতক্ষণ,কথা বলার একটা সময় তার চোখ তটিনির ওপর পড়তেই আর সরাতে পারেনি সে।মেয়েটির যে মায়ায় পড়ে সে এই এক মাস যুদ্ধ সঁপেছিল, সেই যুদ্ধে বিজয়ী হতে পেরে আজ বিয়ের পরেরদিন তার খুব করে গর্ব বোধ হচ্ছে।তার চোখের সেই মায়াবতীকে সে নিজের করে নিতে পেরেছে তা ভাবতেই মনের ভেতর শীতলতা অনুভব হয়।তটিনিকে সে খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে সেটা ওর বাবা দেখে মুচকি হেসে আর কথা বাড়াননি,আস্তে করে ওখান থেকে সরে গেছেন।বাপ্পি তখনও তটিনিকেই দেখছিল।সবুজ রঙের শাড়ীটি সে নিজে পছন্দ করে কিনেছিল।তটিনিও ছিল সেদিন,তাকে জোর করে আনা হয়েছিল শপিংমলে।তবে সে একটা শাড়ীতেও হাত রেখে বলেনি এটা তার পছন্দ। মুখ গোমড়া করে শুধু বলে যাচ্ছিল,’আপনাদের যেটা ভাল লাগে’
আর তাই বাপ্পি নিজের পছন্দে এই শাড়ীটা কিনেছে।বাকিগুলো বাপ্পির বড় বোন বকুল আর ওদের মা,দাদি পছন্দ করে নিছিলেন।
শাড়ীটা তটিনিকে মারাত্মক ভাবে মানিয়ে যাবে তা বাপ্পি আগেও জানতো, এখন চোখের দেখায় আরও নিশ্চিত হলো।তার পছন্দে তটিনিকে দারুণ লাগনে এই ব্যাপারটা নিয়ে সে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছে এই কারণে যে পরে আবার আরেকটা শাড়ী আনলে যাতে করে টাকা বৃথা না যায়।
ঐশী হাত বাড়িয়ে বাপ্পির চোখের সামনে নড়াচড়া করে বললো,’ কি দুলাভাই??কি দেখেন?’
ঐশীর কথায় বাপ্পি লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ঐশী হাসতে হাসতে তটিনির কাছে এসে বলে,’জানো বুবু, বাপ্পি দুলাভাই তোমায় ফ্যালফ্যাল করে দেখছিল’
তটিনি মুখ বাঁকিয়ে বললো,’এটা লোকটার এক মাসগত স্বভাব’
‘একমাসগত স্বভাব মানে?’
‘মানে এক মাস থেকেই তো আমার পিছু নিয়েছে।’
‘তুমি এখনও ঐসব নিয়ে পড়ে আছো?তোমাদের যে বিয়ে হয়ে গেছে সেটা কি ভুলে গেলে?’
তটিনি মুখ বাঁকিয়ে টেবিলের উপর থেকে দেশীকলার ছড়া নিয়ে খাওয়া ধরেছে।তখন ঐশীর মা ঐশীকে বললেন,’মনে হয় ছেলেটাকে বিন্দুপরিমাণ ও শান্তি দেয়না।ওর ভাবেই বোঝা যাচ্ছে’
‘আরেহ কে বলছে তোমায়?সেটাই যদি হতো তবে দুলাভাই ওমন মিষ্টি করে কেন দেখতো বুবুকে?’
‘বাপ্পি ছেলেটা তো সেই প্রথম থেকেই তটিনিকে খুব পছন্দ করে।পছন্দ করার মানুষ যত যাই করুক তা মিষ্টিই লাগে’
————–
রিনি আসিফের ময়লা কাপড়গুলো বিছানার তলা থেকে বের করে বাথরুমে গিয়ে ধোয়া শুরু করে দিছে।আসিফ সেসময় ওকে এই কাজ করতে দেখে এসে বললো,’আমার জামাকাপড় বিছানার তলায় থাকে এটা তুই কি করে জানলি?’
‘এডা তো আন্নের হুরান খাইচ্ছত'[এটা তো আপনার পুরান অভ্যাস’]
‘তাও!আমি তো গ্রামে গেলে আমার বাড়িতে থাকতাম।তোদের বাড়িতে তো যেতাম না।তাহলে তুই এই খবর কি করে পেলি?’
‘আন্নে ঢাকাত চলি আইলে আঁই আই আন্নের রুম হরিষ্কার করতাম।যতই হোক আঁই তো আন্নের বউ অই।মামিরে আর কদিন হইরঘাঁডে আন্নের কোত্তাকাপড় ধোয়াইতে পাঠাইতাম?’
[আপনি ঢাকায় চলে আসলে আমি এসে আপনার রুম পরিষ্কার করতাম।যতই হোক আমি তো আপনার বউ হই।মামিকে আর কতদিন পুকুরঘাটে আপনার জামাকাপড় ধোয়াতে পাঠাতাম?]
‘ওহহ!আর কি পেতি আমার রুমে?’
‘এক টিঁয়ার আদলি!এত কিপটা মাইনসে অয়?মাইনসে বউয়ের লাই হাঁচশো টিঁয়ার নোট রাই চলি আইয়ে আর আঁর জামাই আঁর লাই এক টিঁয়ার আদলি থুই চলে আইতো।এই দুঃক্ক আঁই কারে কইতাম!’
[এক টাকার কয়েন!!এত কিপটা মানুষ হয়?মানুষ বউয়ের জন্য পাঁচশ টাকার নোট রেখে চলে আসে আর আমার জামাই আমার জন্য এক টাকার কয়েন রাখি চলে আসতো।এই দুঃখ আমি কারে বলতাম?]
আসিফ রিনির কান টেনে ধরে বললো,’এত নাটক না করে এবার বল কত টাকা জমিয়েছিস!’
‘আরে লাগতাছে আমার,কান ছাড়েন!এই তো কানে যে এমিটেশনের দুল দেখতেছেন এটা আন্নের সেই এক টিঁয়ার আদলি জমাই কিনছি আঁই।ডক না?’]
আসিফ রেগেমেগে চলে যাওয়া ধরতেই সাবানের পানির সাথে পিছলে উল্টে রিনির গায়ের উপর গিয়ে পড়লো।
দুজনেই এখন ফ্লোরের সাবানে মাখোমাখো।
এখন জায়গাটা এতই পিছলা যে না পারছে আসিফ উঠতে আর না পারছে রিনি উঠতে।তাও আসিফ বহু কষ্টে দেয়াল আর পানির ট্যাপ ধরে উঠে দাঁড়ালো
রিনি এখনও চিটপটাং হয়ে ফ্লোরে শুয়ে আছে।আসিফ উঠে বেকুবের মতন ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে রিনি বললো,’আঁই কি হারাদিন এমন ভেটকাই থাকমু একুলে?আরে উডান!’
[আমি কি সারাদিন এমন ভেটকাই থাকবো এখানে?আমাকে উঠান ]
‘তোর কারণে পড়ছি আমি’
‘বেজ্ঞিনে ক্যাল রিনির দোষ।উডান আঁরে!’
[সবকিছুতে কেবল রিনির দোষ।উঠান আমাকে’]
আসিফ টেনে উঠালো ওকে।দুজনের এমন হাল হয়েছে যে এখন গোসল করতেই হবে,ঠিক সেসময় কলিংবেলের আওয়াজ শুনে আসিফ রিনির দিকে চেয়ে বললো,’যা তুই যা।আমার পাঞ্জাবি পুরো ভিজে গেছে।আমি যেতে পারবোনা’
‘আর যে মাথাত হেনা,হাতে হেনা হেইডা?’
[আমার যে মাথায় ফ্যানা,হাতে ফ্যানা সেটা?]
‘তাও কিছু হবেনা।তোর তো আর প্রেস্টিজ নষ্ট হবেনা।হইলে আমার হবে’
রিনি আর কি করবে, ওড়না ঠিক করতে করতে গিয়ে দরজা খুললো।ওপারে তটিনি দাঁড়িয়ে আছে।বাপ্পিকে সাথে করে বাড়িতে এসেছিল কারণ ওর দুটো থ্রি পিস নিবে।শাড়ী পরে রাতে ঘুমানোর অভ্যাস তটিনির নেই।বাড়ি থেকে যে ট্রলি ব্যাগটা সে বয়ে নিয়েছিল সেটাতে সব শাড়ী পুরে দিয়েছে মামি আর খালারা মিলে।তাই এখন আসা।রিনিকে এই অবস্থায় দেখে তটিনির হুশ উড়ে গেলো।সে হা করে তাকিয়েই ছিল।তটিনির এই চাহনি দেখে রিনি বুঝে গেছে তটিনি ওরে এমন করে কেন দেখছে।রিনি ওমনি দাঁত কেলিয়ে বললো,’তটিনি বইন বিশ্বাস করেন!আঁই কিছু করি “”ন””।হেতেনে আঁইট্টতো যাই ধুরুম করি আঁর গাত হইড়ছে।এইডা কার দোষ আন্নে কন!!দেখছেননি সাবানের হেনা বেজ্ঞিন আঁর গাত লাগি গেছে”
[তটিনি বোন বিশ্বাস করেন!আমি কিছু করি নাই।উনি হাঁটতে গিয়ে ধুরুম করে আমার গায়ে পড়ছে।এটা কার দোষ আপনি বলেন!দেখছেন সাবানের ফ্যানা সব আমার গায়ে লেগে গেছে’
তটিনি দম ফেললো এবার।
ভেতর থেকে আসিফ আরেকটা পাঞ্জাবি পরে বোতাম লাগাতে লাগাতে এগিয়ে আসলো।তটিনিকে দেখে মুচকি হেসে বললো,’আরে তটি যে!বাপ্পি কোথায়?’
তটিনি কিছু বললোনা,ভেতরে ঢুকে নিজের রুমে চলে গেলো।বাপ্পি সিএনজির ভাঁড়া দিয়ে সবে এসেছে।রিনি ওকে দেখেই এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
——
তটিনি ওর রুমে এসে থ হয়ে গেছে।আসিফকে নিয়ে তার লেখা যত কবিতা,যত উপন্যাসের বই সাজানো সেগুলো দেখে তার পুরোনো স্মৃতি তাকে পুনরায় আঁকড়ে ধরেছে।মুহুর্তেই রিনির কথা মাথায় আসায় সেই সব বইকে একসাথে করে লাইটার খুঁজতে লাগলো তটিনি,আজ সব জ্বালিয়ে দিবে।বইগুলো একসাথে করতেই দেয়ালের দিকে চোখ গেলো তটিনির।দেয়ালে আসিফকে নিয়ে লেখা কিছু কবিতার লাইন।কবিতার শেষে “A’ শব্দটা বসানো।কতটাই না পাগল ছিল সে ছেলেটার জন্য।অথচ ছেলেটা এভাবে ধোকা দিবে তা কে জানতো!
মানুষ কেন একটা ধোকাবাজকে এত ভালবাসে!!কেন একটিবার বুঝতে পারেনা এত এত কবিতা,এত এত প্রেম যে মানুষটির জন্য সে মানুষটাই আসলে নকল!বিবেকহীন!
ধোকাবাজরাই সবসময় পরিপূর্ণ ভালবাসা পেয়ে যায় আর দিনশেষে জিতে যায়।হেরে যাই আমরা সেই সব মানুষেরা যারা মন দিয়ে ভালবেসেছিলাম!আমাদের মন আসল বলে সেই আসল মন কখনও নকলের পার্থক্য বুঝতে পারেনা!
চলবে♥