#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৫
আলোচনার পরে কথা হলো যে যতটুকু ছোট আয়োজন করে পারা যায় সেভাবে বিয়ে হবে। এক কথায় ঘরোয়া ভাবে।কারণ পিহুর দাদু জানিয়েছে সে কখন আসবে তার ঠিক নেই আবার নেহালের ভার্সিটিতে এক্সাম শুরু হবে।ঐদিকে আরফান আর দশদিন পরে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।কারণ সে একটা ডিল করেছে যেখানে তার প্রডাক্ট বাহিরে পাঠানো হবে।সে আবার সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।তাই বলা হয়েছে এঙ্গেজমেন্ট বা গায়ে হলুদ করা হবে না।আর এক সপ্তাহ পড়ে বিয়ে।তবে পরে রিসিপশন বড় করে আয়োজন করা হবে।
সবাই যখন নেহালদের এগিয়ে দিতে গেল তখন বিদিশা পিয়াসকে লক্ষ্য করে বলল
-ইংরেজী ষাঁড় আবার আসবেন
-অবশ্যই আসবো।এখানে না এলে তো জানতামই না যে জ্বীনের বাদশা আছে
বিদিশার নাম নিয়ে বলায় গাল দুটো বোম করে বসছে।নীলু তা দেখে হেসে ফেলল।বলল
-এই বিদিশা আজকে থেকে তাহলে আমরা ছেলে পক্ষ আর তোমরা মেয়ে পক্ষ।দেখা যাক কারা এই কয়েকদিনে কাদের বেশি পচাতে পারে
-ওকে।তোমার শর্ত একসেপ্টেড।
বাসায় আসার পরে রেবেকা নীলুকে জিজ্ঞেস করল
-নীলু তোমার কী ভাবিদের পছন্দ হয়েছে?
-হ্যাঁ মামণি।আমি তো পিহু ভাবিকে আগে থেকেই চিনি।আর আরফান ভাইয়ের জন্যও মেয়ে পছন্দ হয়েছে।
রেবেকা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
-পিহুকে আগে থেকে চিনতে মানে?
-কেন নেহাল ভাই তোমাকে কিছু বলেনি?কই আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম তুমি জানো কিনা তখন তো বলল তুমি নাকি জানো
নেহাল পানি খাচ্ছিল কিন্তু নীলুর কথা শুনে পানি গলায় আটকে গেল।পিয়াস পেয়েছে সুযোগ। নেহাল সব সময় ওকে ভয় দেখায়। এই পানি গলায় আটকানোর ছুতোয় সে নেহালের পিঠে সপাট করে দু তিনটে কিল বসিয়ে দিল।নেহাল পারছেনা কিছু বলতে না পারছে কিছু সইতে।তার এখন মনে হলো ‘হাতি কাদায় পড়লে পিপড়াও লাথি মারে’ এই প্রবাদটা তার জন্য বানানো।
কোনো মতে পানিটুকু গিলে রেবেকাকে বলল
-আরে মা ঐ,,,,,,,,ঐ,,,,,,ঐতো ঐতো,,,, না মানে ঐযে ঐযে
-নেহাল ভাই এরকম ঘাবড়াচ্ছো কেন?রমন বটমূলের কথা তুমি মামনিকে বলো নাই?
-হ্যাঁ ভাই পিহু ভাবির সাথেই তো তোমার বিয়ে হবে।এখন বলে দাও।কিছুই হবে না
পিয়াস কথাগুলো বলে দাত ক্যালিয়ে বসল।নেহাল যদি এখন কিছু না করে তাহলে এই দুই বাটপার মিলে ওর বিয়ের সাধ ঘুচিয়ে দেবে।নীলুকে বলল
-নীলু তুই যে ভাইয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করেছিস তা ভাইকে বলবি না?তাকে ছবি দেখাবি না?আর পিয়াস তোকে না কাকিমণি বাসায় যেতে বলেছে?তুই এখনো এখানে কি করো যা ভাগ।
নীলু আর পিয়াস দুজনে মিলে একটু নেহালকে পচাতে চেয়েছিল।কিন্তু এ বেটাতো বাঘের মতো ক্ষেপেছে।নীলু তো সুযোগ বুঝে কেটে পড়েছে।আর পিয়াস তো আগেই ভো দৌড় দিয়েছে।আর মন মনে বলছে
‘খালা যে ওকে বাংলার ষাঁড় বলেছে মন্দ বলেনি।আসলেই একটা ষাঁড়।’
ষাঁড়ের কথা মনে পড়ায় বিদিশার কথা মনে পড়ল।ফোনটা বের করে বিদিশা লিখে সার্চ দিল।
রেবেকা শান্ত হয়ে নেহালের দিকে তাকালো।নেহাল তার মায়ের সামনে হাটু ভেঙে রেবেকার হাত দুটো ধরল। একটা বড় দম ফেলে বলল
-মা আমি জানি তুমি কী জিজ্ঞেস করবে?কেনো তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি তাইতো?মা একটা প্রোডাক্ট খারাপ হলে কি ঐ ধরনের সকল প্রডাক্ট খারাপ? এই ধর একটা আম পচা হলে কি সকল আম ই পচা হয়ে যাবে?
আমি পিহুকে ভালো বাসি দুবছর ধরে।পিহুও আমায় ভালোবাসে।মা চাইলেই কিন্তু আমরা আগেই পালিয়ে যেতে পারতাম।কিন্তু মা আমি তোমার কথাকেই প্রধান্য দেই।ইভেন এখনো দেই।
-তাহলে আমি যদি বলি পিহুকে বিয়ে না করতে কি করবি তখন? আমার কথা শুনবি তখন?
একটু চুপ থেকে বলল-তুমি যদি বলো এ বিয় হবে না তাহলে অবশ্যই হবে না।আমি পিহুকে করব না বিয়ে।
বলে উঠে দাঁড়াল।তারপর চলে যেতে উদ্যত হতে রেবেকা ওর হাত টেনে ধরল।ওকে তার পাশে বসিয়ে বলল
-পাগল ছেলে।তুই কি ভেবেছিস আমি এইটা করব?বোকা একটা।আমি তো তোকে পরীক্ষা করেছিলাম তুই কেমন সন্তান?
নেহালের চোখে পানি এসে গিয়েছিল রেবেকার কথা শুনে।মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল
-মা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো।এরকম কেউ করে?আমি একটু হলেই মরে যেতাম।
রেবেকা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।তার ঠোটে মুচকি হাসি লেগে থাকলেও অন্তরে তার বেদনার অশ্রু ঝরছে।সে তার ছেলেকে বলেছিল এইসব প্রেম ভালোবাসায় না জড়াতে।কারণ তিনি এই ভালোবাসায় বিশ্বাস করে ঢকেছেন।
ঘটনাটা প্রায় তিন দশক আগের।তিনি গ্রামের সাধারণ মেয়ে হলেও অসম্ভব মেধাবী ছাত্রী ছিলেন।দেখতে শ্যাম বর্ণের হলেও চেহারায় আলাদা সৌন্দর্য ছিল।তখন তিনি ছিলেন ক্লাস নাইনের ছাত্রী।ঐ সময়ে ক্লাস নাইনে পড়া যেই সেই ব্যাপার না।নেহালের বাবা আকবার হঠাৎ করেই একদিন তাদের গ্রামে আসে।তিনি এসেছিলেন গ্রামীণ পরিবেশের সংস্কৃতি গবেষণা করতে।গ্রামের মানুষ কোন ধরনের খাবার খায়,কেমন পোষাক পড়ে?
এইগুলো এনালাইসিস করে তিনি তার ব্যবসার একটা অংশ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তিনি এসে ফেসে গেলেন রেবেকার মায়ায়।গ্রামে স্কুল নিয়ে ততটা মাথা ব্যাথা ছিলনা কারোর ই।রেবেকা কাপড় পড়ে আচল কোমরে গুজে দুটো বেণী করে স্কুলে যেত।তার হাতে থাকত একটা লাঠি যেটা দিয়ে সে ঝোপঝাড় খোঁচাতে খোঁচাতে যেত। একদিন একটা ঝোপে কিছু নড়তে দেখে দিয়েছিলেন এক বাড়ি কিন্তু সেই বাড়ি পড়েছিল নেহালের বাবার মাথায়।তিনি শহরে থাকতেন তাই গ্রাম্য পরিবেশ অতটা বুঝতেন না।ঝোপের মধ্যে তার ক্যামেরা পড়ে গিয়েছিল।ঝোপে যে অনেক বিষাক্ত জিনিস থাকতে পারে সেটা তিনি বুঝতেই পারেন নি।তিনি তার ক্যামেরা পাওয়ার পরে হঠাৎ করেই মাথায় আঘাত অনুভব করেন।ক্যামেরা নিয়ে পেছন ফিরতে এক ষোড়শী কন্যাকে দেখে তার অন্তর শীতল হয়ে যায়।তখনই তিনি রেবেকার প্রেমে পড়ে যান। আস্তে আস্তে রেবেকার সাথে বন্ধুত্ব করেন।তারপর দুজনেই দুজনকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেন। একদিন রেবেকা আকবরের সাথে কথা বলছিল তখন গ্রামের মানুষ তাদের হাতে নাতে ধরে ফেলে।রেবেকার চরিত্রের ওপরে থুথু ফেলতে লাগে সবাই।আকবর তখনই সিদ্ধান্ত নেয় রেবেকাকে বিয়ে করার। এত কিছুর পরে তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পায়। আকবর বলে সে অনাথ তার কোনো অভিভাবক নেই।শুধু ঢাকায় তার ব্যবসা আছে।ব্যবসার সুবাদে তাকে ঢাকা যেতে হয়। এর মাঝে কেটে যায় অনেক দিন।রেবেকার কোল জুড়ে এলো নেহাল।নেহালকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তার দিন কিন্তু একদিন আকবর ঢাকা গিয়ে আর গ্রামে ফিরল না।সেইতো গেল আর ফেরার নাম নাই নেহালের তখন পাচ বছর ছয় মাস বয়স। এভাবে যেতে যেতে ছয় মাস চলে যায়।রেবেকা ভাবে যে আকবরের হয়তো কোনো একসিডেন্ট হয়েছে।তাই সে তার ছয় বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঢাকা যায়।
কোথায় যাবে কীভাবে যাবে তা জানে না।অনেক ঝঞ্ঝাটের পরে এক চাচার সহায়তায় ঢাকা গিয়ে আকবরের গোডাউনে যায়। ঐ গোডাউনের ঠিকানা একবার আকবর বলেছিল।সেখান থেকে আকবরের ঠিকানা বের করে একটা আলিশান বাড়ির সামনে আসে।দাড়োয়ান তাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছিল না।তখন দশ বছর বয়সী একটি ছেলে দাঁড়োয়ানকে বলে যে রেবেকাকে যেন ভেতরে ঢুকতে দেয়।ছেলেটা ছিল অনে সুন্দর আর হাসিখুশি।ও নেহালকে জিজ্ঞেস করেছিল
-তোমার কী হয়েছে?
-আমার আব্বু হারিয়ে গেছে।তাকে খুজতে এসেছি
-তাই।জানো আমার বাবার অনেক পরিচিতি।সে খুঁজে দিবে।আসো আমার সাথে।
তখন ছেলেটা আকবরকে ওর বাবা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।রেবেকা জানতে পারল রেবেকা আকবরের দ্বিতীয় স্ত্রী।আকবরের প্রথম স্ত্রী ছিল আট মাসের প্রেগন্যান্ট।রেবেকা আকবরের দ্বিতীয় স্ত্রী শুনে তিনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যান কিন্তু পড়েন সিড়ির ওপরে।ফলে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তার প্রথম স্ত্রী মারা যায় আর পেটের সন্তান টা জন্মগ্রহণ করে ঠিকই তবে তার মধ্যে একটু সমস্যা আছে।আর সেই সন্তান দুটি হলো আরফান এবং নীলু।
আরফান তখন অতটা না বুঝলেও এটা বুঝতে পেরেছে রেবেকার জন্য ওর মা মারা গেছে।তখন আরফান রেবেকার ওপরে চেচিয়ে উঠেছিল কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো আকবর আরফানকে একটা চড় মেরে চুপ করিয়ে দিয়েছে।আর আরফান তখন থেকেই চুপচাপ স্বভাবের হয়ে উঠেছিল।রেবেকা চলে যেতে চাইলে আকবরের বাড়ির মানুষ তাকে যেতে দেয় নি।কারণ নীলুর একটা মা প্রয়োজন। আর রেবেকা নীলুর মা হয়ে উঠল।নীলু এখন পর্যন্ত জানতে পারল না তার মা রেবেকা নয়।
এসব ভেবে তার চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।কিন্তু তিনি তা সন্তর্পণে মুছে নেন।মনে মনে বলতে থাকেন
-আমি ভালোবাসাকে অপছন্দ করি না নেহাল। আমি ভীষণ ভয় পাই বাবা।আমার ভীষণ ভয় হয়।ভালোবাসার মতো একটা পবিত্র জিনিস শেষ করে দিয়েছে কয়েকটি জীবন। আমার জন্য আজ আরফান মা হীনা বেচে আছে।বাবা বড্ড ভয় হয় যে। এই ভালোবাসা নামক বন্ধন আবার কারো জীবন নষ্ট না করে দেয়।যে ভালোবাসা অন্যের ভালোবাসার কদর বুঝেনা সেটার কোনো প্রয়োজন নেই।কোনো প্রয়োজন নেই।
মিহু পড়তে বসছে।তখনই বিদিশা এলো।ওর আশে পাশে ঘুর ঘুর করতে লাগল।ব্যাপারটা মিহু খেয়াল করে বইটা বন্ধ করে রাখল তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-কিছু বলবি?
-হুম বলে মাথা ওপর নিচে ঝাকালো।
-কি বলবি?
-বলছি আমায় মেহেদী লাগিয়ে দেবে?
-মেহেদী এখন লাগিয়ে কি করবি?বিয়ের আগের দিন লাগাবি।আর এখন পারবো নারে।এই সিট টা না পড়ে থাকলে পড়ে পড়া হবে না আর এক্সামে ফেল করব।কালকে থেকেই তো বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
বিদিশা মন খারাপ করে চলে গেল।হঠাৎ করেই ফোনে নোটিফিকেশন আসল।পিয়াস ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করে মেসেজ দিল
-কি হে ইংরেজি ষাট হঠাৎ রিকোয়েস্ট পাঠালেন
ওপাশ থেকে উত্তর এলো-হে জ্বীনের বাদশা আমার একটা মন্ত্র শেখা লাগবে।শেখাবেন আপনি?
#চলবে#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৬
যদিও ঘটা করে আয়োজন করা হবে না তারপরও যেহেতু সমাজে নেহাল আর আরফান একটা উচ্চ পদে আছে তাই আয়োজন তো একটু হবেই।রেবেকার বাড়িতে এখনই আত্মীয় আসা শুরু করে দিয়েছে।পিয়াস তো সব সময়ই নেহালদের বাড়ির বাসিন্দা।রেবেকা একা সব কিছু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।তাই পিয়াসের মাও ওদের বাসায় এসেছে।তিনি আর রেবেকা রান্নাঘর সামাল দিচ্ছে আর সারভেন্ট গুলো ঘরের অন্য কাজগুলো করছে।পিয়াস সোফায় বসে ফোন দেখছে।ওর মা রান্নাঘর থেকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে
-বুঝলে ভাবি মেয়ে যে একটা কী পূণ্যের জিনিস তা বুঝবে না।আর ছেলে (বলে এক নজর পিয়াসের দিকে তাকিয়ে) ছেলে হলো অকর্মার ঢেকি
পিয়াস ওর মায়ের কন্ঠে ছেলেদের বিরোধিতা শুনে ফোন রেখে দিল।কান খাড়া করে শুনতে লাগল ওর মা কি বলে
-মেয়েটা আমার দেশে থাকতে আমাকে কাজে কতই না সাহায্য করত।বিদেশে চলে যাওয়ার পরে দেখো আমি কত একা হয়ে পড়েছি
-কেন ভাবি পিয়াস তো আছেই
পিয়াসের কথা শুনে ওর মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
-ছেলে হয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে?মানুষ ছেলেদের এত বেশি পছন্দ করে কারণ বুড়ো বয়সে তাদের যাতে দেখাশোনা করতে পারে।আর আমার নবাবজাদাকে দেখো সারাদিন পায়ের ওপরে পা তুলে ফোন চালায়
পিয়াস আস্তে করে সোফা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর একপা একপা করে সরে যেতে লাগল।কিন্তু মায়ের চোখ কি ফাকি দেওয়া যায়!
-এই কোথায় যাচ্ছিস? এইদিকে আয়, এই দিকে আয়।
পিয়াস যা বোঝার বুঝে গেছে।শেষ,,,,,,, ও এবার শেষ।মুখটা বিরষ করে রান্না ঘরে এগিয়ে গেল।বলল
-কি মা?ডাকলে কেনো?
-নে এই তরকারিটা ধুয়ে দে
ওর মুখটা এতটুকু হয়ে গেল।যে বয়সে এক ভাইয়ের বিয় হচ্ছে সেখানে তাকে এখন তরকারি ধুতে হবে?
-আরে ভাবি ওকে ধুতে বলছো কেন?লতাকে ডাকি ও করবে এসব।
-তুমি চুপ করোতো ভাবি।তোমার আশকারা পেয়ে ও দিন দিন মাথায় উঠছে।যতদিন না দিবা বাড়ি ফিরছে ততদিন ও আমাকে সাহায্য করবে।খুব বড় গলায় বলে
আমি ছেলে,,,,,,আমার অধিকার বেশি।
-তা ভাবি নেহাল আরফানের সাথে ওর বিয়েটা দিয়ে দিলেই পারো।তোমার ঘরেও একজন মানুষ থাকে আর পিয়াসও ঘরে থাকে।
রেবেকার কথা শুনে পিয়াস এর ঠোট চওড়া হয়ে গেল।চকচকে দাত গুলো বের হলো।মনে হয় যেন ক্লোজ আপের এড দিতেছে।রেবেকার পেছনে গিয়ে তার আচল ধরে বলল
-বড়মা একমাত্র তুমিই আমাকে বুঝো।জানো মাকে বি,,,,,,,,
বলে ওর মায়ের দিকে তাকাতেই কথা বন্ধ হয়ে গেল
-বড়মা তো বুঝবেই।বড়মায়ের ছেলেরা তো তাকে সব দেয়। আর নিজের দিকে তাকা।বলেছি নেহালের সাথে বিসিএস টা দে।নাহ্ উনি তা দেবে না।উনি কি করবে,,,,,,,উনি ছবি তুলবে।হয় দেখবে রাস্তায় বসে বিড়ালের ছবি তুলবে না হয় বাগানো বসে পোকার ছবি তুলবে।কি হয়েছে টা কি ফটোগ্রাফার হয়ে?
তোকে কেউ ছবি তুলতে নিষেধ করেছে?তুই তুলবি কিন্তু বিসিএস দিলে কি হতো?দেখ নেহাল এখন একটি ভার্সিটির টিচার আর তুই
-আহ ভাবি।এখন এসব কথা রাখো।ভাইদের বিয়ে,আনন্দ করতে দাও।পিয়াস যা তো নেহালের কাছে যা।
পিয়াস প্রথম দিকে সিরিয়াস ভাবে নেয় নি বিষয় টা।কিন্তু ওর মা শেষদিকে কড়া কথা বলায় মনটা খারাপ হয়ে গেল। আচ্ছা সরকারি চাকরি ই কী সব?বিসিএস ও দিতে পারত আর দিলে ওর চান্স ও হতো।কিন্তু তখন কী আর ফটোগ্রাফিটাকে অতটা গুরুত্ব দিতো?ও তো এইটাকে প্রফেশন হিসেবে নিতে চায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল যে করেই হোক ও ওর প্রফেশনটাকে আয়ত্ত করবেই।ফোনটা বের করল গুগলে সার্চ করতে যে কীভাবে ভালো ফটোগ্রাফার হওয়া যায়।কিন্তু ডাটা অন করতেই নোটিফিকেশন আসল
বিদিশা চৌধুরি একসেপ্টেড ইওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।মেসেন্জারে গিয়ে দেখল
-এই যে ইংরেজী ষাঁড় বিয়ের শপিং কখন করবেন?
-কেন কেন?
-না ছেলে পক্ষ তো মেয়ে পক্ষের শপিং করে দেয় তাই জিজ্ঞেস করলাম
-ইস কী লোভী মেয়ে
-হাহ্ ভয় দেখিয়ে লাভ নাই।শপিং এ আসেন তারপর দেখাবো ভয় কাকে বলে?
এরকম কথা বলতে বলতে আধাঘন্টা কেটে গেল।ফোনের চার্জ লো হওয়ার ফলে ফোন চার্জে দিল।তারপর তার হঠাৎ মনে হলো যে সে গুগলে সার্চ দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিয়েছিল।
পিহুদের বাড়িতে আত্মীয়তে ভরে গেছে।তুলির নানাবাড়ি থেকেই এসেছে গোটা দশেক। আন্ডা বাচ্চা সবাই সারাদিন চেঁচামেচি করে।হঠাৎ করেই তুলির মায়ের ব্যবহার পাল্টে গেল।মিহুকে দিয়ে রান্না করাটা বাদ দিল।মিহু অবাকের ওপরে অবাক।চাচি এত ভালো হলো কবে থেকে।আজকে বাড়ির সবাই মেহেদী পড়বে।পরসু ছোট করে নিজেরা গায়ে হলুদ করবে।তারপরের দিন বিয়ে।মিহুর এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।তবে তাকে দেওয়া হয়েছে মেহমানদের দায়িত্ব।
সন্ধ্যার পরে বিপাশার জোরাজুরিতে মিহু সবাইকে মেহেদী পরাচ্ছে।তুলি ওর হাত থেকে পরতে নারাজ।কারণ ও পার্লার থেকে পরবে।পিহু তার বোনের হাত থেকে মেহেদী পড়ে নিচ্ছে।বিদিশা মিহুর মেহেদী পড়ানোর কয়েকটা ছবি নীলুকে পাঠালো।
নীলু ভাইয়ের জন্য কয়েকটা পাঞ্জাবি সেলেক্ট করেছে।হঠাৎ বিদিশার মেসেজ দেখল।দেখে আরফানের ঘরে গেল। আরফান তার প্রডাক্টের জন্য ফাইল রেডি করছে।নীলু দরজা নক করে বলল
-ভাইয়া আসবো?
-তুই আবার কবে থেকে দরজা নক করতে শুরু করলি।আয় ভেতরে।
-আর কয়েকদিন পরে তোমার বৌ আসবে ঘরে তখন তো আমার পারমিশন নিয়েই ঢুকতে হবে তাই না?
-তোর জন্য আমার রুমে ঢুকতে পারমিশন নেওয়া লাগবে না।কি জন্য এসেছিস বল
নীলু আরাম করে সোফায় বসল।তারপর বলল
-ভাইয়া আমার আইডিতে প্রবলেম হচ্ছে।বিদিশার সাথে একটু কথা বলতে হবে।তোমার ফোনটা দাও
-এটা কি বলে নিতে হয়?তুই নিয়ে নিলেই তো হয়।
-ফোনের পাসওয়ার্ড কী
আরফান একটু হেসে বলল-নীলু
নীলু বিদিশাকে ফ্রেন্ড বানিয়ে ভিডিও কল করল।তারপর ব্যালকনিতে গিয়ে অনেক্ষণ কথা বলল।কথা শেষে ফোনটা আরফানের পাশে রেখে চলে গেল।কিচ্ছুক্ষণ পরে আরফান ফারিশকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিতেই দেখে এখনো ভিডিও কল চালু
-নীলুও না কি যে করে
বলে ফোনটা কাটতেই যাবে কিন্তু কোনোকিছু দেখে ও ভিডিও কলটা দেখতে লাগল।বিপাশা যখনই মিহুকে বলল- আপু নাও নীলুর সাথে কথা বলো
তখনই আরফান ওর ক্যামেরা অফ করে দিল।মিহু হাসি মুখে ফোনটা নিল।তারপর নীলুকে সালাম দিয়ে বলল
-এই যে নীল পরি কেমন আছো?ঐ দিনতো আমাকে বোকা বানিয়ে চলে গেলে।তারপর তো আর কোনো খবরই নাই।
আরফান কিছু বলছে না।শুধু মিহুকে দেখছে,কিন্তু কেন সেটা বুঝতে পারছে না।বাসায় বসে আছে তবুও মাথায় ঘোমটা।এক কথায় মিহুকে দেখতে আসলেই সুন্দর লাগছে।
-এই নীলু শোনো তুমি নাকি মেহেদী দেওয়া দেখতে চেয়েছিলে তাহলে এখন দেখো।আমি আমার কাজিনকে পরিয়ে দিচ্ছি।কল কেটো না কিন্তু ঠিক আছে।
মিহু যতক্ষণ পর্যন্ত মেহেদী দিচ্ছিল ততক্ষণ ই ও মিহুকে দেখছিল।হঠাৎ করেই ফারিশের ফোন আসায় কলটা কেটে দিয়ে ফারিশের সাথে কথা বলতে লাগল
-শা*লা কোথায় মরে গিয়েছিস?বিয়ের কথা শুনে কি এখন সব ভুলে গিয়েছিস
বিয়ের কথা শুনে আরফানের স্মৃতিতে মিহুর অবয়ব ভেসে উঠল।
-আবার কোথায় গিয়েছিস?
-না কোথাও না।বল কি বলবি
-কি বলবি মানে?তুই না সন্ধ্যার সময় বলেছিলি যে ফাইলটা রেডি হলে আমাকে ঐটার একটা স্ক্যান কপি পাঠাবি?
-হুম।তা রেডি করতে সময় লাগবে না?
-কতক্ষণ সময় লাগবে?রাত দশটা তো বেজে গেলো
আরফানের চক্ষু চড়কগাছ।যেখানে ও টাইম টু টাইম কাজ করে সেখানে সে এত দেরি করে ফেলল কীভাবে?মিহুকে দেখতে দেখতে এত সময় চলে গেল?
-আর আধা ঘন্টা পরে দিচ্ছি
-ওকে
রাত এগারোটা বেজে বিশ মিনিট। আরফান ভাবছে সে কি পাগল হলো?যেখানে সে নীলু ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না সেখানে মিহুকে দেখে কীভাবে কয়েকঘন্টা কাটিয়ে দিল?আসলে এই মেয়ের মাঝে আছে কী?
আরফানের মায়ের সাথে আকবরের বিয়ে হয়েছিল পারিবারিক ভাবেই।তাদের সংসার ভালোই চলছিল। আরফান হওয়ার দশ বছর পরে নীলু ওর মায়ের গর্ভে আসে।অনেক খুশি ছিল আরফান।কিন্তু একটা ঘটনা সব শেষ করে দেয়।যখন আরফানের মাকে দাফন করা হয় তখন থেকেই আরফান চুপচাপ হয়ে যায়।সে জানে এতে রেবেকার কোনো দোষ নেই কিন্তু তার অবদান কোনোকিছুতে কমতি নয়।সে যদি ঐদিন না আসতো তাহলে আরফানের মা বেঁচে থাকত।কিন্তু যে নাটের গুরু অর্থাৎ আরফানের বাবা তিনি তার পাপের শাস্তি পেয়েছেন। আসলে তিনি নদী পথে কোনো একটা এলাকায় যাচ্ছিলেন কিন্তু ঝড়ের কারণে নদীতে ডুবে যান।তবে ওনার ডেডবডি পাওয়া যায় নি। আরফান তাকে নিয়ে আফসোস করে না।এসব কিছু ভেবে সে মনে মনে মাকে বলে
-মা আমি জানিনা সামনে কি হতে যাচ্ছে।কিন্তু আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।তাই আমি সব কিছু মানাতে চাই।
পরেরদিন বিকেলে একটা ঝামেলা বেঁধেছে।পাত্র পক্ষ থেকে সব কিছু দিয়ে যাওয়া হয়েছে ।সব কিছু দুই সেট একটা পিহুর জন্য।কিন্তু সমস্যা বেঁধেছে গিয়ে তুলির ঘরে না পাঠিয়ে পাঠানো হয়েছে মিহুর ঘরে।বিষয় টা রেবেকা জানতে পেরে নীলুকে জিজ্ঞেস করলো
-নীলু এরকমটা কেন করলে?তোমারতো তুলিকে পছন্দ হয়েছে।তাই না?
-মামণি আমিতো একবারো বলিনি তুলি আপুকে আমার পছন্দ হয়েছে।আমার তো মিহু আপুকে পছন্দ হয়েছে।
-কিন্তু মা দেখো আমরা তো কথা দিয়ে ফেলেছি তুলিকে এবাড়ির বৌ বানাবো।আর তাছাড়া তুলি আর মিহুর মধ্যে তো তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
-মামণি তুমি মিহু আপুকে দেখোনি তাই একথা বলছো
-হ্যাঁ দেখিনি কিন্তু শুনেছি পিহুর জমজ বোন।তাহলে তো পিহুর মতোই হবে
-না মামণি আমি মিহু আপুকেই ভাবি হিসেবে চাই।
রেবেকা নীলুর জেদের কাছে হেরে গিয়ে বলল
-আচ্ছা বেশ মানলাম কিন্তু মিহু কি রাজি হবে?
-মা মিহু রাজি আছে।
-নেহাল তুই কীভাবে জানলি?
-একটু আগে পিহু ফোন দিয়ে বলল মিহুর নাকি এই বিয়েতে আপত্তি নাই।
মিহু ঘর অন্ধকার করে বসে আছে।তাহলে দাদু রেস্টুরেন্টে বসে এই কথাই বলেছিল যে ‘যদি দাদু তোমাকে একজনের হাতে তুলে দিতে চায় তবে কি তোমার কোনো আপত্তি থাকবে
-না দাদু।তোমার ইচ্ছাই আমার সব
-তাহলে যদি কোনো বিয়ের প্রস্তাব আসে চোখ বন্ধ করে হ্যাঁ বলে দিবে।সেটা যেই হোক না কেন। আর কোনো কিচ্ছু কাউকে বলবেও না জিজ্ঞেস ও করবে না।ঠিক আছে?
-হুম
এসব কিছু দাদু বলার পরেও মিহুর মনে হলো ও ভুল কাজ করছে।তুলির জিনিস ও কেড়ে নিচ্ছে।আচ্ছা ও কি ভুল করে বসল নাতো?ও কি সঠিক কাজ করল?মানুষ তো এখনই ওকে কটু কথা শুনাচ্ছে।বলছে বোনের জামাইয়ের দিকে নজর দেয় কি খারাপ মেয়ে।
সামনে কি হতে চলেছে?আরফান কি মেনে নিবে ওকে?তিনি কি এই বিয়ে মানবেন?কি হবে আগামীতে?
#চলবে
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।রি চেক করি নি।)