হৃদমাঝারে তুমি পর্ব -০৭

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৭

ঘরবর্তী মেহমানের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে মিহু।আজকের দিনটা হলো জীবনের সব থেকে একটা নিকৃষ্ট দিন।সকাল থেকেই সবাই কেমন যেন করে তাকাচ্ছে ওর দিকে।আজকে গায়ে হলুদ হওয়ার কথা।বিদিশা মিহুকে রেডি করে পিহুর কাছে নিয়ে আসে।পিহুর গায়ে হলুদ প্রায় হয়ে গেছে তারপর মিহুর গায়ে হলুদ হওয়ার কথা কিন্তু পিহুর হলুদ শেষে সবাই চলে যাচ্ছে।বিদিশা সবাইকে বলছে,কিন্তু কেউ কথা কানে নিচ্ছে না।মিহুর ফুফু এগিয়ে এলেন ওর দিকে।তার কাছে সুযোগ এসেছে মিহুকে কষ্ট থেকে দূরে সরাবার।মাহিন ও ওদের সাথে যোগ দিল।তবে ওর মুখোয়ব দেখে বোঝা যাচ্ছে না ও এই ঘটনায় খুশি না বেজার।

-দেখি মিহু মা আমার। একটু গায়ে হলুদ লাগাই।বলে ফুফু মিহুর গালে হলুদ লাগিয়ে দিল।

বাহ্ তোকে এরকমই সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ। এরপরে ফুফু মাহিন বলল

-কিরে মাহিন বোনকে হলুদ লাগাবি না?

মাহিন কিছু না বলে মিহুর কপালে একটু হলুদ লাগিয়ে দিল।পেছন ঘুরে চলে যেতে চাইলে মিহু মাহিনের হাত ধরে ফেলে।মাহিন পেছনে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।

-মাহিন ভাই তুমি কি আমার ওপরে রাগ করেছো?

মাহিন মিহুর হাতটা ঝাড়ি দিয়ে দ্রুত চলে যায়।মিহুর চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়ে।বিদিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ও জানে মাহিন ভাই মিহুর পক্ষে থাকে।আশে পাশের কয়েকজন বলাবলি করছিল

-দেখলি ছেলেটা ভালো দেখে এসেছিল হলুদ লাগাতে।আর কেমন বেহায়া মেয়ে যে ওকে জিজ্ঞেস করে রাগ হয়েছে কিনা?নিজের বোনের বিয়ে ভেঙে গেছে তারপরও কোনো খারাপ ব্যবহার করল না

এসব শুনে মিহু মাথা নিচু করে ফেলে।হঠাৎ করেই তুলির মায়ের চেঁচামেচিতে সবাই থেমে গেল। ওপর থেকে তার কান্নার কন্ঠস্বর ভেসে আসছে।সবাই দৌড়ে ওপরে গেল।গিয়ে দেখল তুলির মা,মাহিন খালা মিলে তুলির দরজা ধাক্কাচ্ছে

-তুলি দরজা খোল মা।রাগ হয়ে কিছু করিস না।
-তুলি দরজা খোল বলছি।খোল দরজা
-মাহিন এভাবে হবে না।দরজা ভাঙ

কবির সাহেবের কথায় সহমত হয়ে মাহিন দরজা ভাঙতে উদ্যত হলো।একা না পারায় সবাই মিলে দরজায় ধাক্কা দিল।দরজা খুলেই তুলির মা তুলি বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো।

মাহিন তুলির কাছে গিয়ে ওর হাতের পালস্ চেক করল।তারপর দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেল।মাহিনের সাথে ফুফুও চলে গেলেন।কবির সাহেব ভরা মজলিসে মিহুর গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন

-তোর মত মেয়ে যেন শত্রুর ও না হয়।ছোটবেলায় মরে যেতে পারলি না?একে তো পিহুর মাকেও খেয়েছিস এখন আর কি খেতে চাস?

বলে তিনিও হাসপাতালের জন্য রওনা দিলেন। একটু পরে তুলির মায়ের জ্ঞান ফিরলে তিনি মরাকান্না শুরু করেন। আহাজারি করতে থাকেন।

-আমার মেয়ে টা শেষ হয়ে গেল। ঐ,,,,,,,ঐ পোড়া কপালির জন্য আমার সব শেষ।নিজের মাকে তো শেষ করছে এখন আমার মেয়েটাকেও শেষ করবে

বলি কিসের এত লোভ তোর হ্যাঁ?আমর মেয়ের ভাগ্যটা ছিনিয়ে নিলি কেন রে?মেয়েটা সহ্য করতে না পেরে নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিল।

খালা এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার চুপ থাকলেন না।তিনি ওকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগল।

-এই তোর এত লাগে কিসে?বরলোক পোলা দেইক্কা তর সয় না?নিজের চেহারা দিয়া বশ করছ না?তয় আরো কত পোলা আছে হেইয়া দরো নাই কেন?তুলির জামাইরেই দরা লাগছে?

মিহুর পাশে কেউ নাই।বিদিশাও আশেপাশে নাই আর পিহুও পাশে থেকে কিছু করতে পারছে না।মিহু আর কিছু সইতে না পেরে নিজের রুমে চলে গেল।গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ল।

তুলির খবরটা নেহালদের বাড়িতে যেতে বেশি সময় নিল না।রেবেকা নীলুকে কখনো কড়া কথা বলেনা।কিন্তু ওর এই ছেলেমানুষির জন্য আজ একটা জীবন যেতে চলেছে তাই কথা শুনাতে বাধ্য হলো।

-তুলি তুমি এখন কলেজে পড়।তোমার এসব ছেলে মানুষি মানায় না।জানো আজ তোমার জন্য একটা জীবন যেতে চলেছিল?

-মামণি আমায় বকছো কেন? আমি কি ভুল কিছু করেছি?আমিতো মিহু আপুকে পছন্দ করেছি

-কোনো মিহু টিহু না।আরফানের বিয়ে তুলির সাথেই হবে।আর কোনো কথা আমি শুনতে চাইনা।

রেবেকার কড়া কথাগুলো শুনে নীলু দৌড়ে চলে গেল রুমে।গিয়ে দরজা আটকে দিল।রেবেকা নীলু কয়েকবার থামাতে গিয়েও পারল না।নেহালকে দেখে বলল

-নেহাল দেখ না নীলু দরজা আটকে ফেলেছে।একটু যা তো।আবার খারাপ কিছু না করে বসে

-মা তুমি অস্থির হয়ে যেও না।আমি দেখছি।এবার দরজা খুলতে বেশি বেগ পেতে হলো না কারণ গতবার দরজায় ছিটকিনি আটকানো ছিল বলে আরফান সব দরজার ছিটকিনি খুলে ফেলে দিয়েছে।আরফান নীলু জন্য বিয়ের উদ্দেশ্যে ছুটি নিয়েছে চার দিন।তবুও ওর কাজ থেমে নেই।একটা ফাইল দিয়ে যাওয়ার কথা আর সেই ফাইল আনতে বের হতেই নীলুর রুমের দিকে নজর পড়ল।দৌড়ে নীলুর রুমে গেল।নেহাল বেশী দেরি করে না আসলেও একটু দেরি হয়েছে।নীলু ফ্লোরে পড়ে আছে।

হাতে স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে জাভেদ হাসান বললেন

-এখন টেনশনের কিছু নাই।সব ওকে তবে
আরফান একটু কথা বলার ছিল।

-আসুন আমার রুমে

আরফান জাভেদকে রুমে এনে সোফায় বসল।তারপর তার দিকে তাকিয়ে বলল

-বলুন আঙ্কেল
-আরফান আমি তো তোমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম তাই আমি তোমাদের ফেমিলি সম্পর্কে অবগত।দেখো নীলুর জন্মের সময় ই কিন্তু বলা হয়েছিল যে ও স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠবে না।হয়ত অটিস্টিক হতে পারে।কিন্তু ও স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠছে এর মানে এই না যে ওর প্রবলেম হয় নাই।ওর প্রবলেম টা কিন্তু হয়েছে মাথায়।বলা যেতে পারে ওর স্নায়ুতে সমস্যা।তাই কিন্তু বলা হয়েছে যে ওকে চাপ দেওয়া যাবে না।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওর কথা শুনতে হবে।এখন বয়সটা এমনিতেই এরকম তারওপর ও সমস্যায় ভুগছে।তুমি কি বুঝতে পেরেছ আমি কি বলছি?

-জ্বী

-তোমাকে আগেও একথা বলেছি।দেখো আজকে যা হয়েছে খুব একটা ভালো হয় নি।ও কিন্তু আজকে প্যারালাইসড ও হতে পারত কিন্তু হয় নি।ওর ওপর যেনো অনেক চাপ দেওয়া না হয়।

নীলুর জ্ঞান ফিরলে আরফান ওকে উঠতে সাহায্য করে।তারপর স্যালাইনের সুইটা খুলে দেয়। এক বাটি সুপ এনে খাইয়ে দেয়।তারপর জিজ্ঞেস করে

-এখন ভালো লাগছে?
-হুম
-আচ্ছা তালে রেস্ট নাও
তারপর নেহালকে বলল
-নেহাল তোর মাকে ড্রয়িং রুমে আসতে বল।কথটি বলে ও নিচে চলে গেল।রেবেকাও পেছনে গেল।বাসার সব মেহমানরাও এই ঘটনার সাক্ষী হলো।রেবেকা ড্রয়িং রুমে আসতেই দরজা লক করে দিল।

পিয়াস নীলুর খবর শুনে ওদের বাসায় এসেছিল। আসার সাথে সাথেই দেখল যে আরফান দরজা অফ করতে আছে।ওর হাতে ছিল ক্যামেরা।অতি কৌতুহল প্রবণ হয়ে দরজার নিচ থেকে ক্যামেরাটা অন করে ঢুকিয়ে দিল।

-মিসেস কবির আপনার কি মন হয় আপনি আদৌ নীলুর মা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন?

রেবেকা কিছু না বলে শুনছে শুধু।

-শুনুন আপনি কি এটা ভাবেন যে এই ঘরে কি হচ্ছে সেটা আমি জানিনা।তাহলে সরি টু সে যে আমি ঘরের নাড়ি নক্ষত্র সব জানি।এমন কি এটাও জানি আপনি তুলির রান্নার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন।

ছাড়ুন এসব। আমার ডাকার উদ্দেশ্যে এগুলো নয়। আমি বলতে চাই যে নীলুকে কখনো জোড় করবেন না।আমার আলাদা করে বলতে হবে না নিশ্চয়ই যে কেন? আশা করি বুঝবেন। আর একটা কথা,

আপনার কি মনে হয় আমার বোন যাকে তাকে পছন্দ করল আর আমি তার সম্পর্কে কিছু না জেনেই বিয়ে করব?

বলে উঠে চলে গেল।দরজা খুলতেই পিয়াস ধরাম করে ওর পায়ের ওপর পড়ল।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল

-ইয়ে মানে ভাই
-থাক কৈফিয়ত দিতে হবে না।কাল আমার অফিস থেকে একটা ক্যামেরা নিয়ে যাস

-ভাই তুমি কত ভালো

আরফান একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।পিয়াস ভাবতে লাগল আগে এত করে নীলুর কাছে বলত যে ভাইকে একটা ক্যামেরা দিতে বল দিত না। আজকে হঠাৎ করে সারপ্রাইজ দিল।খুব খুশি হলো পিয়াস

একমিনিট পড়ে নিজে নিজে বলতে লাগল
-ওয়েট এ মিনিট ভাইয়ের এখন ক্যামেরার কথা মনে পড়বে কীভাবে?হায় হায় আমার ক্যামেরা রুমের ভেতরে রেখেছিলাম।

বলে দৌড়ে রুমের মধ্যে খুজতে লাগল। তারপর দেখতে পেল ওর ক্যামেরা টা দুইভাঙা হয়ে আছে।

#চলবে

কিছু কথা
(আসলে আমি নতুন লেখিকা তাই ভুলত্রুটি যাবে এটা স্বাভাবিক। এজন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ ভুলত্রুটি গুলো আমাকে ধরিয়ে দিবেন আর ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here