#মায়াবতী
#পর্ব:২৪
#তানিশা সুলতানা
নিধির সন্দেহ ঠিক ছিলো। কিছু একটা চলছে এদের মধ্যে। কোনো একটা কাহিনি আছে। বদ্ধ রুমে দুটো ছেলে মেয়ে এক সাথে। তারওপর সেই ছেলেটা নিধির হবু বর। ধপ করে মাথা গরম হয়ে যায় নিধির। এর একটা হেস্তনেস্ত সে করবেই।
অর্ণবকে সে ছাড়বে না। লড়াই করতে হয় করবে।পাঁচটা বছর সয্য করে যাচ্ছে, আঠার মতো পেছনে লেগেছিলো শুধুমাত্র বিয়ে করার জন্য। এতো অবহেলা অপমান সব কিছুর বদলা এতো সহজে ছাড়বে না।
নিধি অর্ণবের রুমের বাইরে থেকে ছিটকেনি লাগিয়ে চলে যায় আশা বেগমকে ডাকতে।
অর্ণব তন্নিকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে এক হাত তন্নির মাথার ওপর দিয়ে দেয়ালে আর আরেক হাত তন্নির কোমরে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্নির কাজল কালো চোখের দিকে।
তন্নি মাথা নিচু করে আছে। তার বুক কাঁপছে। কেউ দেখে নিলে কি হবে?
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে রিনরিনিয়ে বলে।
“প্লিজ যেতে দিন আমায়। কেউ দেখে ফেলবে।
অর্ণব বাঁকা হাসে। কথা বলার সময় মেয়েটার টকটকে লাল ওষ্ঠদ্বয় কিভাবে নরছে এটাও লক্ষ্য করতে ভূলে নি অর্ণব৷ এ মেয়েটার শিরায় শিরায় মুগ্ধতা মিশে আছে।
অর্ণব নিজের বা হাতটা তন্নির ডান গালে রাখে। শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয় মেয়েটা।
অর্ণব মুখ খানিকটা এগিয়ে নিয়ে বলে
” কেউ আসবে না মায়াবতী। এখানে শুধু আমি আর তুমি।
অর্ণবের নেশালো কন্ঠের আওয়াজ শুনপ বুক কাঁপতে থাকে তন্নির। সে ফট করে বলে ওঠে।
“আমি আপনার বোনের মতো।
অর্ণবের মেজাজ বিগড়ে যায়। এর সাথে রোমান্স কখনো সম্ভব? গাঁধা একটা।
ফোঁস করে শ্বাস টেনে তন্নিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে অর্ণব। তন্নি চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। লোকটার হুটহাট বিহেভিয়ার মেনে নিতে সময় লাগে তন্নির। লোকটা প্রচন্ড পরিমাণ লম্বা।৫ ফিট ১১ ইঞ্চি হাইটের আশি কেজি ওজনের একজন সুঠাম দেহের পুরুষ। আর সেখানে তন্নি সোজা ৫ ফিট হাইটের ৩৮ কেজি ওজনের পিচ্চি একটা মেয়ে।
তাই অর্ণব খুব সহজেই দুইহাতে তন্নিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে পেরেছে। তন্নির মাথাটা পড়েছে একদম অর্ণবের হৃদপিণ্ডের ওপরে। হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে তন্নি। কেনো জানি মনে হচ্ছে ধুকপুকানির সাথে একটা নামই ভেসে আসছে সেটা” মায়াবতী”
তন্নি বড় করা চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। অর্ণবের শরীর থেকে আসা কড়া পারফিউমের গ্রাণ নিতে থাকে সাথে হার্ট বিটের শব্দ। তন্নির শরীর মৃদু কাঁপছে। বুকের ভেতর কেউ ডাম বাজাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিন করে বলে।
” ককি করছেন? প্লিজ ছাড়ুন।
অর্ণব এটারই অপেক্ষায় ছিলো। আরও একটু শক্ত করে ধরে বলে
“কাঁপছো কেনো অথৈয়ের তন্নি। আর সো কোল্ড বোনু।
অথৈকে হাগ করলে সে খুশি হয়। আমাকেও জাপ্টে ধরে। বাট তুমি কেনো কাঁপছো? রিজন কি?
তন্নি কি উওর দেবে বুঝতে পারছে না। লোকটার সাথে একদম লেপ্টে গেছে। শ্বাস টানতেও কষ্ট হচ্ছে। লজ্জায় অস্বস্তিতে ঘেমে যাচ্ছে।
তন্নির থেকে উওর না পেয়ে অর্ণব আবারও বলে ওঠে।
” এন্সার মি
তন্নি কাঁপা-কাঁপি গলায় উওর দেয়।
“আমি আপনার বোন না। প্লিজ ছাড়ুন।
অর্ণব হেসে ফেলে। তন্নির মাথায় চুমু খেয়ে বলে
” তুমি আর অথৈ বন্ধু। বন্ধু ভাই বাচ্চার বাবা হতে পারে। বোন নয়।
তুমি আমার অনির মাম্মা। একমাত্র মায়াবতী। যাকে সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখবো আমি।
তন্নির কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। বড্ড আপন লাগছে লোকটাকে। নিজে থেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা তন্নি কখনেই পারবে না।
নিধি আশা বেগমকে ধরে নিয়ে আসে। তিনি প্রচন্ড বিরক্ত। এমনিতেই মেয়েটাকে ভালো লাগছে না তার। তার ছেলের জন্মদিন অথচ মেয়েটার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। এই না কি আবার তার ছেলেকে বিয়ে করবে।
” এখানে কেনো নিয়ে আসলে আমায়?
খানিকটা রেগে বলে আশা।
“এই রুমে আপনার ছেলে আছে।
” সেটা জানি আমি।
“আপনার ছেলের সাথে তন্নিও আছে।
” তো কি? আছে ভালো কথা। আমাকে কেনো আনলে?
“আন্টি আপনি বুঝতে পারছেন না। এই বন্ধ রুমে তন্নি আর অর্ণব এক সাথে আছে।
” তাতে হয়েছে টা কি? আছে থাকুক। তো আমি কি করবো?
নিধি প্রচন্ড বিরক্ত। কি করবে মানে? এখন একে বুঝিয়ে দিতে হবে?
আশা নিধির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বাইরে থেকে আটকানো ছিটকেনি খুলে দেয়। তারপর দরজায় দুটো থাপ্পড় দিয়ে ডাকে
“আব্বা আব্বা
তন্নি কোথায়?
তন্নি চমকে ওঠে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকে।
অর্ণব বিরক্ত হয়ে একটুখানি আলগা করে দেয় কিন্তু ছাড়ে না।
” মম তন্নি অনির পাপার কাছে আছে। তুমি কি করবে ওকে দিয়ে?
আশা বেগম মুচকি হেসে তাকায় নিধির দিকে। নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে বলে ওঠে
“আমার ছেলে। আমার পুত্র
তাকে নিয়ে নো কমেন্ট।
চলে আমার সাথে। ডিস্টার্ব করবা না আমার সোনাকে।
বলেই নিধির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
তন্নির হাত পায়ে কাঁপন বেরে গেছে। অর্ণব ছেড়ে দিলে মেয়েটা পড়ে যাবে এরকম অবস্থা। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে মেয়েটার। চোখেও পানি টলমল করছে। অর্ণব নিচু হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ করে ফেলে।
সিরিয়াসলি?
এইটুকুতেই এতোটা নার্ভাস?
অর্ণব তন্নিকে ধরে খাটে বসায়। নিজে ফ্লোরে বসে পড়ে।
হাত বাড়িয়ে টেবিলের ওপর থাকা পানির বোতল তন্নির দিকে এগিয়ে দেয়। ঢকঢক করে পুরো বোতল পানি শেষ করে ফেলে তন্নি।
অর্ণব তন্নির গালে টোকা দিয়ে বলে
” এতো ভয়? আল্লাহ
তারপর তন্নির হাতের ওপর হাত রাখে। তন্নি মাথা নিচু করে আছে। এখন অনেকটা শান্ত লাগছে।
“আমি আছি তো। সবটা সামলে নিবো। আমাকে এড়িয়ে তোমাকে কখনোই কেউ কিছু বলবে না।
তন্নির ভালো লাগে। জানেও এটা। কিন্তু তবুও মুখ ফুটে কিছু বলে না। অর্ণব তন্নির কোলে মাথা রাখে। তন্নির হাত দুটো টেনে নিজের মাথায় রাখে।
” চুল টেনে দাও।
তন্নি বাধ্য মেয়ের মতো টানতে থাকে।
“আমার কাছে পারমানেন্টলি আসার আগে আর কখনো শাড়ি পড়বা না। ইটস মাই অর্ডার।
সাগর তোমায় পছন্দ করে। আমার ওপর রেগে বা ফ্রেন্ড বড় ভাই সিনিয়র এসব মনে করেও তার সাথে কখনো মিশবা না।
কজ সে ভাববে তুমি তাকে পাত্তা দিচ্ছো বা এসবে ইন্টারস্টেড।
সাগরের শান্ত গলার কথা মন দিয়ে শোনে তন্নি। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। অর্ণব তাকিয়ে থাকলে অবশ্য হাসতো না। কিন্তু অর্ণব যেহেতু দেখছে না একটু হাসাই যায়।
সেটা ভেবে হাসি আটকায় না তন্নি। ঠোঁট টিপে হেসেই ফেলে।
কিন্তু অর্ণব সেটা আয়নাতে দেখে ফেলে৷ তার ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে ওঠে।
” আমার তোমাকে ভীষণ দরকার। আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি।
তন্নির হাতটা টেনে নিজের গালে রেখে বলে অর্ণব। তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়। লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে তার গাল দুটো।
এরই মধ্যে অথৈ উরাধুরা দরজা ধাক্কাতে থাকে৷ ধরফরিয়ে উঠে পড়ে অর্ণব। তন্নিও চমকে ওঠে।
অথৈ এবার লাথি দিচ্ছে দরজায়। সে ভেঙেই ফেলবে।
“ছোট ভাই বোন থাকা মানেই বিপদ। শান্তিতে প্রেমটাও করতে দেবে না।
বলতে বলতে দরজা খুলতে যায় অর্ণব। তন্নি ভেংচি কাটে। শয়তান বেডা।
দরজা খুলতেই অথৈ অর্ণবকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়ে।
অর্ণব পেছন পেছন আসতে আসতে বলে
” আরে আরে এভাবে ডাকাতের ঢুকছিস কেনো?
অথৈ সোজা তন্নির কাছে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির দিকে। তন্নি অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
“সাতদিন এখনো শেষ হয় নাই। তার আগেই তোরা বন্ধ রুমে কি করছিলি?
” অনিকে আনার মিশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
অর্ণবের সোজাসাপ্টা জবাবে লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় তন্নির। অথৈও থতমত খেয়ে যায়। শুকনো কাশি দিয়ে তন্নির হাতটা ধরে।
“শয়তানের নানা আপনাকে ছাঁদে প্রয়োজন
বলেই তন্নিকে নিয়ে চলে যায়।
অর্ণব বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” প্রেমটাও করতে দিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অনি কবে আসবে?
চলবে
নেক্সট, নাইস এসব কমেন্ট করবা না। গঠন মূলক কমেন্ট করবা।