বিরহ শ্রাবণ ২ পর্ব – ৩৯ ও শেষ

#বিরহ_শ্রাবণ(দ্বিতীয় খণ্ড)
#শেষ_পর্ব
#লেখিকা_সারা মেহেক

ফাইনাল প্রফ চলছে। বিশাল সিলেবাসের পড়ার চাপে আমি পি’ষ্ট’ প্রায়। কিভাবে কিভাবে যে সময় চলে যায় টের পাই না৷ খুব কষ্টেসৃষ্টে কোনোরকমে একবার রিভিশন দিয়ে পরীক্ষা হলে যাই। প্রেগ্ন্যান্সির এই সময় পরীক্ষা দেওয়াটা শরীরের উপর এক প্রকার জু’লু’ম বলা চলে। উপরন্তু এতো চাপে শরীর ঠিক থাকছে না আমার। খাওয়াদাওয়া করতে একেবারেই মন চায় না৷ তারপরও প্রোজ্জ্বল জোর করে আমাকে খাইয়ে দেয়। কিন্তু মাঝে মাঝে সে খাবারও সয় না আমার। বমি করে ফেলে দেই। আমার এ অবস্থা দেখে মামা, মামি ভীষণ রাগ করেছিলো পরীক্ষার মাঝে। বলেছিলো, শরীরের এ অবস্থা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কি দরকার। আর ছয় মাস পর পরীক্ষা দিলেই হয়ে যেতো। কিন্তু আমি জিদ ধরেছিলাম। প্রোজ্জ্বলও মামা, মামির মতো বলেছিলো আমায়। কিন্তু এবার আমার প্রচণ্ড জিদের কারণে ওকে হার মানতে হয়। তখনও ভাবিনি এ জিদের ফল এতোটা যন্ত্রণাদায়ক হবে। মেডিসিনের ভাইভা চলাকালীন একপ্রকার ভেবেই নিয়েছিলাম গাইনি আর সার্জারী ভাইভাতে বসবো না। তবে আমার এ সিদ্ধান্তের কথা প্রোজ্জ্বল শোনার পর বলেছিলো, এতদূর যেহেতু এসেছি সেহেতু আর দু সপ্তাহ কষ্টটা করি। আমিও মেনে নিয়েছিলাম ওর কথা।

গাইনি কোনোমতে একবার রিভিশন দিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আগামীকাল পরীক্ষা। প্রোজ্জ্বল ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আমার পাশে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো। আমি প্রোজ্জ্বলকে দেখে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলাম,
“ কালকে পরীক্ষা। কোনো পরামর্শ দিবে না আমায়?”

প্রোজ্জ্বল হাত এগিয়ে আমার মাথায় রাখলো। চুলের মাঝে আঙুল দিয়ে বিলি কা’ট’তে কা’ট’তে বললো,
“ আমার কোনো পরামর্শ লাগবে না। তুই এমনিই পারবি সব। ম্যামরা তোকে দেখলেই দেখবি সব প্রেগন্যান্সি রিলেটেড কোয়েশ্চন করছে। ওসব তো তোর ভালো জানার কথা, তাই না?”

প্রোজ্জ্বলের কথায় আমও সশব্দে হেসে উঠলাম। বললাম,
“ তা অবশ্য ঠিক বলেছো। আমার জন্য বোধহয় গাইনি পরীক্ষা সহজ হতে চলছে। শুধু কমপ্লিকেশনগুলো আলাদাভাবে পড়েছি। সেটাও পারবো। হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। ”

“ হুম হয়ে যাবে। তোর কিন্তু সাহস অনেক বেড়েছে চন্দ্রিমা। আগে পরীক্ষা নিয়ে যে ভীতি ছিলো তা দূর হয়েছে। ”

“ দূর হবেই না বা কেনো। পাঁচটা বছর পরীক্ষা নিয়ে যে প্যারায় কেটেছে, এখন শেষ সময়ে এসে আর পরীক্ষা নিয়ে ভীতি থাকে নাকি। যদিও……”

আমার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই আচমকা অনুভব করলাম বাবু নড়ছে। আমি মুহূর্তেই উত্তেজিত হয়ে প্রোজ্জ্বলকে বললাম,
“ প্রোজ্জ্বল! দেখো, বাবু নড়ছে!”

প্রোজ্জ্বল সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে আমার পেটের উপর রাখলো। অনুভব করলো বাবুর নড়াচড়া। খুশিতে ওর চোখ চকচক করলো যেনো ঠোঁটের কোনে একরাশ তৃপ্তির হাসি নিয়ে বললো,
“ কতদিন পর ওর অস্তিত্ব অনুভব করলাম আমি! ইশ, কত্তদিন ধরে এ সময়টার অপেক্ষা করছিলাম। আমার মা’টা তো আমি থাকলে কোনো উপস্থিতিই দেখায় না ওর। হয়তো আমার প্রতি ভীষণ অভিমান করে আছে ও। ”

প্রোজ্জ্বল যে ভীষণ কষ্টের পর আজ একটু খুশি হয়েছে তা ওর কথার মাধ্যমে টের পেলাম। এই আট মাসে বাবুর নড়াচড়া টের পেয়েছি হাতে গোনা কয়েকবার। আর যখনই ও নড়াচড়া করতো, তখনই প্রোজ্জ্বল আমার পাশে থাকতো না৷ এই প্রথম এতদিন পর প্রোজ্জ্বল বোধহয় বাবা হওয়ার অনুভূতিটা স্পর্শ দ্বারা অনুভব করতে পারলো।

হঠাৎ দেখতে পেলাম প্রোজ্জ্বলের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। ওর চোখে জল দেখে আমি ভীষণ অবাক হলাম। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“ তুমি কাঁদছো!”

প্রোজ্জ্বল আমায় মিথ্যে বললো না৷ আঙুল দিয়ে চোখের কোনে আবদ্ধ থাকা সামান্য নোনাজলটুকু মুছে নিলো। ভেজা কণ্ঠে বললো,
“ হ্যাঁ কাঁদছিলাম আমি। জানিস না আজ কি পরিমাণে খুশি হয়েছি আমি। এই প্রথম স্পর্শ দ্বারা নিজ সন্তানের উপস্থিতি টের পেলাম আমি। ভাবতাম ও বোধহয় আমার উপর ভীষণ অভিমান করে আছে। কেনো ওর সাথে সবসময় থাকি না, কেনো ওর সাথে সারাদিন গল্প করি না, এসব কারণেই বোধহয় অভিমান করে আছে ও। কিন্তু আজ বোধহয় ওর অভিমানের পালা শেষ হলো। ”
এই বলেই প্রোজ্জ্বল এগিয়ে এসে আমার পেটের উপর কান পেতে রইলো। আবেগি স্বরে বললো,
“ চন্দ্রিমা, তুই কি বুঝতে পারছিস ও একটু একটু করে নড়ছে?”

আমি প্রোজ্জ্বলের মাথায় হাত রেখে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম,
“ হ্যাঁ বুঝতে পারছি তো। ওর সাথে কথা বলো তুমি। জিজ্ঞেস করো, ঠিক কি কারণে এতো অভিমান করে ছিলো ও।”

“ হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। এক্ষুনি ওকে জিজ্ঞেস করি। দুষ্টুটা ঠিক কি কারণে তার বাবার উপর এতো অভিমান করে ছিলো। ”
এই বলেই প্রোজ্জ্বল হঠাৎ উঠে বসলো। কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়াই এগিয়ে এসে আমাকেও বালিশে হেলান দেওয়ালো। চোখেমুখে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বললো,
“ চন্দ্রিমা, চল ওর নাম রাখি। ”

প্রোজ্জ্বলের এ প্রস্তাব শুনে আমি তৎক্ষনাৎ নিষেধ করে বললাম,
“ মোটেও না। আগে ওর হবে। ওকে দেখবো। এরপর ওর নাম রাখবো। কতবার বলেছি এ কথা আমি!”

প্রোজ্জ্বল এবার বাচ্চাদের মতো জিদ করলো। বললো,
“ প্লিজ চন্দ্রিমা। দেখ, বারবার আমার মা’কে এভাবে ‘এ’ ‘ঐ’ ‘ও’ বলে ডাকতে ভালো লাগে না৷ কেমন যেনো শোনায়। ”

“ না৷ এই আট মাস অপেক্ষা করেছো। আর এক মাস অপেক্ষা করলেই তো হয়ে যায়। ”

“ উঁহু। আমার আর তর সইছে না। আজকেই ওর নাম রাখবো। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমাদের মেয়ে হবে সেদিন থেকেই আমি একটা নাম মনে মনে ঠিক করে রেখেছি। শুধু তোর জন্য রাখতে পারছি না বলে। ”

“ রাখার দরকার নেই। একেবারে ওকে কোলে নিয়ে তারপর ওর নাম রেখো। ”

“ না। এতো অপেক্ষা সম্ভব না। ”
এই বলেই ও আমার পেটের উপর পুনরায় কান পাতলো। মেয়ের সাথে আকারে ইঙ্গিতে চুপিচুপি কথা বললো। ও কি যে বললো তার একটা কথাও আমার কান অব্দি পৌঁছালো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
“ এতো কি সিক্রেট কথা বলো মেয়ের সাথে?”

প্রোজ্জ্বল মাথা উঠিয়ে ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বললো,
“ তোর জেনে কি কাজ? এটা আমাদের বাপ বেটির কথাবার্তা। তোকে শুনতে হবে না৷ আর হ্যাঁ, ও কিন্তু ওর নাম রাখার পারমিশন দিয়েছে আমাকে। এজন্য আমি ওর নাম রাখবো……”

মেয়ের নাম উচ্চারণের পূর্বেই আমি প্রোজ্জ্বলের মুখ চেপে ধরলাম। বললাম,
“ তুমি কি শুধরাবে না কখনো? কতবার বলেছি এখন আমি ওর নাম রাখবো না৷ আমার ইচ্ছা, ওকে কোলে নিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে ওর কানে কানে নাম বলবো। এখন বললে তো ও শুনে ফেলবে। ”

প্রোজ্জ্বল আমার হাত সরিয়ে বললো,
“ তুই ওভাবে বলিস। কিন্তু আমি এখন থেকে ওর নাম ধরেই ডাকবো। আর ওর নাম হবে ‘প্রভা’।”

নাম উচ্চারণের সাথে সাথেই আমি প্রোজ্জ্বলের বাহুতে দু চারটা কিল বসালাম। রাগ হলো ওর প্রতি। নিষেধ করেছিলাম ওকে। তারপরও এ কাজ করে বসলো। আমি রাগত চাহনিতে ওর দিকে চেয়ে বললাম,
“ তুমি আসলেই একটা খা’রা’প মানুষ। হুহ।”
বলেই আমি অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়লাম। প্রোজ্জ্বল আর কথা বাড়ালো না। খেয়াল করলাম, ও শুয়ে পড়লো আমার পাশে। আমার পেটের উপর এক হাত রেখে আলতো স্বরে আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
” প্রভার আম্মু, এতো রাগ করতে হয় না। তুই এতো রাগ করলে আমাদের মেয়েও তো রাগী হবে। আমি চাই না ও রাগী হোক। ও হবে একদম ফুলের মতো নরম। ”

প্রোজ্জ্বলের কোনো কথাই আমি গুরুত্ব দিলাম না। উপরন্তু কোনো কথা ছাড়াই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

————————–

রুমে বসে বসে চিপস খাচ্ছিলাম। পরীক্ষা শেষ হয়েছে গতকাল। এখন আর সময় কাটছে না৷ একা একা বাসায় বসে থাকতে থাকতে ভীষণ বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। প্রোজ্জ্বলকে বলি আমাকে যেনো কোথাও একটু ঘুরাতে নিয়ে যায়। কিন্তু ও আমাকে ধমক দিয়ে বলে, ’ এখন কিসের ঘুরাঘুরি। এ সময়টা কত রিস্কের তুই জানিস! আর এখন বাইরে গিয়ে নড়াচড়া করার মতো অবস্থা নেই তোর। রোজ তো ছাদে নিয়ে হাঁটি। আর কি লাগে!’
প্রোজ্জ্বলের এমন রামধমক শুনে আমি চিমসে যাই একদম। চুপচাপ আর কথা না বাড়িয়ে বসে থাকি।

আমি জানালার ধারে বসে চন্দ্রপ্রভা গাছ দেখছি আর চিপস খাচ্ছি। মুখে চিপস নিয়ে চিবুতে চিবুতে গাছের ফুলের সংখ্যা গুনছি। কাজ না থাকলে যা হয় আরকি!
এরই মধ্যে হঠাৎ আফিফকে সহ ফারিহা আমার রুমে প্রবেশ করলো। আফিফ রুমে ঢুকা মাত্র দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বললো,
“ আন্তী!”

আফিফের মুখে ‘আন্টী’ শোনার বদলে ‘আন্তী’ শুনতে ভালোই লাগে আমার৷ ওর সম্বোধনে শুনে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আমার হাতের চিপসটা ওকে দিয়ে বললাম,
“ নাও, এটা খাও তুমি। ”

ও পুনরায় ওর ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে আমার কাছ থেকে চিপস নিয়ে খেতে লাগলো।

আফিফ, অভ্র ভাই ও ফারিহার ছেলে। তাদের বিয়ের এক বছরের মাথায় আফিফ ফারিহার পেটে আসে। এখন ওর বয়স দু বছর। ছেলেটা ভীষণ চঞ্চল আর ছটফটে স্বভাবের। একদম অভ্র ভাইয়ের বিপরীত বৈশিষ্ট্য আফিফের। মাঝে মাঝে ওর জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ফারিহা ওকে আমার কাছে রেখে যায়। আমার কাছে থাকলে আবার ভীষণ ভদ্র বাচ্চা হয়ে যায় ও। যতক্ষণ আমার কাছে থাকে কয়েক সেকেন্ড পরপর এসে আমার পেটের উপর কান পেতে থাকে। জিজ্ঞেস করে, ‘বাবু কবে বেল হবে? কবে আমাল সাতে কেলবে।” ওর এরূপ কথাবার্তা শুনে আমি হেসে ফেলি। বাচ্চাদের মুখে এমন ভুল উচ্চারণের বাক্য শুনতে ভালোই লাগে। মাঝে মাঝে ওর কথাগুলো শুনে কল্পনা করি, আমার মেয়েও এভাবে কথা বলবে এক সময়। আধো আধো বুলিতে আমাকে আম্মু বলবে, প্রোজ্জ্বলকে আব্বু। মেয়ের মুখে সেই আম্মু ডাক শোনার অনুভূতিই হবে অন্যরকম।

ফারিহা এসে আমার পাশে বসলো। জিজ্ঞেস করলো,
“ এখন শরীরের অবস্থা কেমন ভাবী? আপনার তো পরীক্ষা শেষ তাই না?”

“ হুম। এখন একটু শান্তিতে আছি৷ কিন্তু জানো ফারিহা? আমার খুব টেনশন হচ্ছে। বাবু নরমালে হবে নাকি সিজারে হবে সেটার টেনশনে আছি। আমি চাচ্ছি নরমালে হোক। কিন্তু নরমালে যে পেইন সহ্য করা লাগে সেটা চিন্তা করলেই ভয় করে!”

ফারিহা আমার কথায় মৃদু হাসলো। আমার পেটের উপর হাত রেখে বললো,
“ ব্যাথা তো হবেই। কিন্তু সে ব্যাথার পর যখন মেয়েকে দেখবেন তখন কি যে শান্তি লাগবে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। দেখবেন, মেয়ের চেহারা দেখার পর সব ব্যাথা ভুলে যাবেন। শুধু মেয়ের মিষ্টি চেহারাটা ভাসবে চোখের সামনে। আমার আফিফ হওয়ার সময়ও এমন মনে হয়েছিলো। কিন্তু আফিফকে দেখার পর আগের সব ব্যাথা ভুলে গিয়েছিলাম। ”

আমি ফারিহার কথার প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলাম। এর মধ্যে আফিফ এসে হাজির হলো। তার চিপস খাওয়া শেষ। এখন সে আমার পেটের উপর কিছুক্ষণ কান পেতে থাকবে। ওর স্বভাব ওটা। আমার কাছে আসলেই এমন করে থাকে।

আফিফ আসলো। ওর ছোটো-ছোটো হাত ছাড়িয়ে দিয়ে আমাকে যতোটা সম্ভব ধরা যায় ততোটা ধরলো। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ কান পেতে রইলো। পরে মাথা উঁচু করে বললো,
“ আন্তী, বাবু কবে আসবে?”

আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
“ এই তো আর কয়দিন পরেই। ”

“ তালপল আমি খেলতে পালবো ওল সাথে?”

“ হ্যাঁ, পারবে। ”
এভাবেই আফিফ আর ফারিহার সাথে কথা হলো অনেকক্ষণ।

—————

নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ পূর্বেই পেইন উঠলো আমার। সে কি এক অবর্ণনীয় ব্যাথা। এ ব্যাথার সামনে কিছুই সহ্য হচ্ছে না আমার। আশেপাশে কি চলছে তা বুঝার মতো বোধশক্তি রইলো না আমার। ব্যাথা উঠলো প্রায় রাত দশটার দিকে। প্রোজ্জ্বল তখন আমার পাশেই ছিলো। প্রোজ্জ্বল তখনই আমাকে হসপিটালে নিয়ে এলো। হসপিটালে আনার পর তীব্র ব্যাথার যন্ত্রণায় কি ঘটলো তার কিছুর হুঁশ রইলো না।
তিন ঘণ্টার তীব্র ব্যাথার পর অতঃপর রাত একটার দিকে প্রভা এ পৃথিবীর মুখ দেখলো। কিন্তু ওকে দেখার পূর্বেই আমি জ্ঞান হারালাম।

আমি যখন চোখ মেলে তাকালাম তখন পাশ ফিরে দেখলাম প্রোজ্জ্বল আমার পাশে বসে আছে। আমার জ্ঞান ফেরা দেখে প্রোজ্জ্বল মুচকি হাসলো। সামান্য ঝুঁকে আমার কপালে চুমু এঁকে বললো,
“ শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রভা পৃথিবীর মুখ দেখেছে চন্দ্রিমা। থ্যাংকস চন্দ্রিমা। আমাদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য।”

আমি প্রত্যুত্তরে মৃদু হেসে বললাম,
“ আমাদের প্রভা কোথায়? দেখবো ওকে।”

“ দুই মিনিট ওয়েট কর। আমি নিয়ে আসছি ওকে।”
বলেই প্রোজ্জ্বল বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও হাজির হলো প্রভাকে নিয়ে। কেবিনে ঢুকা মাত্রই দূর হতে দেখলাম প্রভাকে। লালচে ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে আড়মোড়া ভাঙছে সে। আমি ওকে দেখে দ্রুত হেলান দিয়ে বসলাম। প্রোজ্জ্বল ওকে নিয়ে এসে আমার কোলে দিলো। ওকে কোলে নেওয়া মাত্র অনুভব করলাম, আমার হাত কাঁপছে৷ ও এতোটা নরম আর তুলতুলে যে মনে হচ্ছে এখনই হাত ফসকে পড়ে যাবে বোধহয়। আমার ভয় হলো ভীষণ। আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে প্রোজ্জ্বলের দিকে চেয়ে বললাম,
“ প্রোজ্জ্বল, ও এতো নরম কেনো! আমার ভয় করছে, যদি পড়ে যায়!”

প্রোজ্জ্বল আমার কথায় হো হো করে হেসে উঠলো। বললো,
“ পড়বে না। আমি আছি তো। ওকে দেখ চন্দ্রিমা, চোখটা মনে হচ্ছে তোর মতো হবে। আর নাকটা বোধহয় আমার মতো। ”

প্রোজ্জ্বলের কথা অনুযায়ী আমি প্রভার দিকে চেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। চোখ দুটো আধ বোজা করে রেখেছে৷ পিচ্চি পিচ্চি ঠোঁট জোড়া স্থির হয়ে আছে, থেকে থেকে নড়ে উঠছে। নাকটা সামান্য একটু খাড়া হয়েছে। ওর পুরো চেহারাটা লালচে লালচে দেখাচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মৃ’ত চামড়া লেগে আছে। এতোক্ষণ যাবত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করার পরও কোনো মিল খুঁজে পেলাম না আমি। শেষমেশ প্রোজ্জ্বলকে বললাম,
“ তোমার মাথায় কি আছে কে জানে। এত ছোট বাচ্চাকে দেখে কি বুঝা সম্ভব ও কার মতো হয়েছে! শুধু শুধু আমাকে কনফিউজড করলে। ”

প্রোজ্জ্বল হেসে উঠলো আমার কথায়। আমার কপালে পুনরায় চুমু দিয়ে বললো,
“ আমাদের ফ্যামিলি কমপ্লিট হলো চন্দ্রিমা। থ্যাংকস ফর এভ্রিথিং। ”

ইতোমধ্যে কেবিনে অভ্র ভাই, ফারিহা,মামা, মামি, নানু প্রবেশ করলো। অভ্র ভাই ফোন হাতে নিয়ে আমাদের দিকে তাক করলেন। বললেন,
“ প্রোজ্জ্বল, একসাথে বস একটু। এই হ্যাপি ফ্যামিলির একটু ছবি তুলে নেই। ”

প্রোজ্জ্বল আমার পাশে বসলো। এভাবে অভ্র ভাই আমাদের কয়েকটা ছবি তুললেন। অতঃপর মামা,মামি, নানু এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালো। তাদেরসহ বেশ কয়েকটি ছবি তোলা হলো। এসব ছবি তোলার মাঝে আমি কোথাও না কোথাও বেশ শূন্যতা অনুভব করলাম। হ্যাঁ, আমার ভাইয়ার শূন্যতা, আমার বাবা-মা’র শূন্যতা। আজ তারা আমার পাশে থাকলে কি খুশি হতো! নিজ চোখে তারা আমার মেয়েকে দেখতে পারতো। কিন্তু আল্লাহ যে সবার ভাগ্য সব সুখ লিখে রাখে না! তবে আল্লাহ আমাকে এখন যে সুখ দিয়েছেন তাতে আমি নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে করি। আমি ভাগ্যবতী কারণ আমাকে ভালোবাসে এমন একটা স্বামী পেয়েছি। আমাকে সবসময় আগলে রাখে, স্নেহ করে এমন মামা-মামি শ্বশুর-শাশুড়ি রুপে পেয়েছি। দিন শেষে আমার কোল আলোকিত করে একটা মেয়ে পেয়েছি। ক্ষুদ্র এ জীবনে আর কি লাগে একটা মানুষের!

————————–

কিডনি স্টোনের একটা জটিল অপারেশন চলছে। ওপারেশনের প্রধান দায়িত্বে আছে প্রোজ্জ্বল। আর এসিস্ট্যান্টরূপে নিয়োগ হয়েছি আমি। ওপারেশন চলছে এক বয়োবৃদ্ধ লোকের। বৃদ্ধ এতোদিন যাবত ডায়ালাইসেসর উপর নির্ভর ছিলেন। কিন্তু এত কষ্ট আর সইতে না পেরে শেষমেশ ছেলের একটি কিডনি নিচ্ছেন তিনি।

অপারেশন শেষে ওটি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা। ওটি গাউন খুলে ওটি ড্রেস পরে বেরিয়ে এলাম। আমাদের পাশের ওটি রুম থেকে বেরিয়ে এলেন অভ্র ভাই। আমাদের দেখে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বললেন,
“ চল, ক্যাফেটেরিয়াতে বসি। ”

আমরা ক্যাফেটেরিয়াতে চলে এলাম। প্রোজ্জ্বল তিনটা ব্ল্যাক কফি ওর্ডার দিলো। ততক্ষণে আমরা যে যার অপারেশন টেবিলের কাহিনি শেয়ার করলাম।

আমরা আর অভ্র ভাইরা স্ব পরিবারে ইউকে এসে সেটেল হয়েছি আজ সাত বছর হলো। বহু কষ্টে একই হসপিটালে তিনজন ঢুকেছি সার্জন হিসেবে। অভ্র ভাই অর্থোপেডিক্স সার্জন এবং আমি ও প্রোজ্জ্বল ইউরোলজি সার্জন। একই হসপিটালে প্রোজ্জ্বল ও অভ্র ভাই আমার সিনিয়র হিসেবে আছে।

আমাদের কফি আসতে আসতে বাইরে ঝুম বৃষ্টি নামলো। কালো আকাশ ভেদ করে মুক্তো দানার মতো বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা পড়ছে। কাঁচের জানালার গা বেয়ে বেয়ে মুক্তো ঝড়ার মতো বৃষ্টি চুইয়ে পড়ছে। ভেতর থেকে বৃষ্টির গমগম শব্দ শোনা যাচ্ছে। থেকে থেকে শোনা যাচ্ছে আকাশের গুমোট গর্জন। বিলাতি বৃষ্টির এ কৃত্রিমতা দেখতে দেখতে কফির মগে চুমুক দিলাম।
অভ্র ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
“ এখন কোন মাস চলছে চন্দ্রিমা?”

“ আগস্ট। ”

“ উঁহু। বিলেতি মাস নয়। বাংলা মাসের কথা বলছি। তুমি তো হিসাব করে রাখো। ”

“ এখন শ্রাবণ মাস চলছে। আমার হিসাব মতে তাই-ই আসে। ”

আমার কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অভ্র ভাই। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন প্রোজ্জ্বলও। প্রোজ্জ্বল বললো,
“ এ শ্রাবণ যে ধরায় কি ভয়ংকর রূপ নিয়ে আসে তা ভিনদেশে বসে উপভোগ করা যায় না৷ এ আষাঢ় শ্রাবণ উপভোগ করার জন্য মাঝে মাঝে মন চায় দেশে ফিরে যাই। ”

অভ্র ভাইও বললেন,
“ ঠিক বলেছিস। আমি মাঝে মাঝেই আফিফকে বলি, চল দেশে যাই এক মাসের জন্য। কিন্তু ও রাজি হয় না। ওর জন্য এখন এই ভিনদেশই যেনো ওর দেশ। ”

“ প্রভার বেলাতেও তাই। আসলে দোষটা আমাদেরই বুঝলি। ওরা ছোট থাকতে থাকতে যদি এদেশে না আসা হতো তবে দেশের প্রতি ওদের টান থাকতো। ”

“ হুম ঠিক বলেছিস। বাই দা ওয়ে, এ মাসেই তো তোদের এনিভার্সেরি, তাই না?” (এখানে ভুল হতে পারে পাঠকমহল। যদি ভুল ধরা পরে, তাহলে বলবেন। এডিট করে দিবো।)

অভ্র ভাইয়ের কথায় হঠাৎ মনে পড়লো আমার। আরে হ্যাঁ, এ মাসেই তো আমাদের এনিভার্সেরি। আজ থেকে ঠিক ঠিক প্রায় বিশ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়, ঠিক এই শ্রাবণ মাসে। ভরা শ্রাবণ আমাদের জীবনে নতুন অধ্যায় হিসেবে আগমন করে। আজ চিন্তা করলে মনে হয়, এই তো সেদিনই না আমাদের বিয়ে হলো। কি এক কষ্টকর স্মৃতি জড়িয়ে ছিলো এ বিয়েকে ঘিরে। এ বিয়ের মাধ্যমে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলো আমাদের তিন জনের জীবনের গল্প। আজ কালের বিবর্তনে সেই শ্রাবণেই আমরা তিনজন একত্রে বসে আছি। বিশ বছর পূর্বের যে শ্রাবণ আমাদের জীবনের গতি বদলে দিয়েছিলো সেই শ্রাবণই আজ আমাদের তিনজনকে এক করেছে। সময়ের তাড়নায় আমরা সবাই সেই দুঃসহ অতীত ভুলে গিয়েছি। মাঝে মাঝে আড্ডায় মজার ছলে সে অতীতকে নিয়ে হাসাহাসি করি আমরা। আসলে সময় সব ভুলিয়ে দেয়। সময় প্রতিটি ঘা এর মলম হিসেবে কাজ করে।

কফি খাওয়া শেষে প্রোজ্জ্বল আর অভ্র ভাইকে বললাম,
“ চার দেয়ালের মাঝে এ শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ করা যাচ্ছে না। প্রোজ্জ্বল, চলো হসপিটালের বাইরে যাই। অভ্র ভাই, আপনিও চলুন। ”

আমরা তিনজনে চলে এলাম হসপিটালের সিঁড়ির কাছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করতে চেষ্টা করলাম। ইতোমধ্যে দেখলাম দূর হতে স্কুল ড্রেস পরিহিত একটি ছেলে ও মেয়ে একই ছাতার নিচে হেঁটে হেঁটে আসছে। কিছুদূর এগিয়ে আসতেই দেখলাম ছেলে মেয়ে দুটো আর কেউ নয় বরং আফিফ ও প্রভা।
দুজনে একই স্কুলে পড়ে। আফিফের বয়স এখন সতেরো আর প্রভার বয়স পনেরো। আফিফের দশ বছর বয়সে আর প্রভার আট বছর বয়সে আমরা ইউকে চলে আসি। তখন থেকেই ওরা এখানে বড় হয়েছে। এখানকার জীবনমানের সাথে ধীরেধীরে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে।

আফিফ আর প্রভা দ্রুত হসপিটালের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো। দেখলাম ওদের কোমড় হতে নিচ পর্যন্ত ভিজে চুপচপে হয়ে আছে। চোখ রাঙিয়ে প্রভাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“ কি ব্যাপার প্রভা? এতো ভিজলে কি করে? দুজনে এক ছাতার নিচে কেনো? প্রভা তুমি ছাতা নিয়ে যাওনি স্কুলে?”

প্রভা যে-ই না কিছু বলতে যাবে ওমনি আফিফ ওর মুখ চেপে ধরে বললো,
“ আন্টী, ওকে বারবার বলেছি ছাতা ক্যারি করতে।কিন্তু আমার কথা কখনো শুনে নাকি ও!”

আফিফের ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির উপস্থিতি টের পেলাম। অনুমান করলাম, নিশ্চয়ই মিথ্যে বলছে ও। ইতোমধ্যে প্রভা আফিফের হাত সরিয়ে রাগত স্বরে বললো,
“ না আম্মু, আফিফ ভাইয়া মিথ্যা বলছে। এটা আমার ছাতাই। আজকে আফিফ ভাইয়া ছাতা আনেনি। তাই একই ছাতার নিচে আসতে হয়েছে আমাদের। ”

প্রভার কথা শোনামাত্রই অভ্র ভাই আফিফের মাথায় একটা গাট্টা মারলেন। বললেন,
“ তোর তো সাহস কম না আফিফ! প্রভাকে জ্বালানোর জন্য মিথ্যা বলিস!”

আফিফ তৎক্ষনাৎ জিব কেটে বললো,
“ সরি আব্বু। কিন্তু প্রভাকে ইরেটেট করতে খুব মজা লাগে। ”

আফিফের এ কথায় অভ্র ভাই আবারো গাট্টা মারলেন। এবার প্রোজ্জ্বল ঢাল স্বরূপ বললেন,
“ এতো মারছিস কেনো ওকে। আস্ত খারাপ একটা বাপ তুই।”
এই বলে ও আফিফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
“ মাইন্ড করিস না আফিফ। তোর বাপের মেজাজ একটু এমনই থাকে। বয়স হয়ে যাচ্ছে তো। এ মা’রা’র ক্ষতিপূরণ হিসেবে তোর বাপের হয়ে আজ তোকে বার্গার ট্রিট দিবো আমি। ”

প্রোজ্জ্বলের কথায় আফিফ ও প্রভা খুশিতে প্রোজ্জ্বলকে জড়িয়ে ধরলো। অভ্র ভাই চোখমুখ কুঁচকে বললো,
“ প্রভা, তোকে ম্যাক্সিকান একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়াবো আমি। ”

দুজনের এ কাণ্ড দেখে আমি হেসে উঠলাম। মাঝেমধ্যেই দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে এভাবে প্রতিযোগিতায় নামে এই দুজন। অভ্র ভাই ভালোবাসা প্রকাশ করে প্রভার উপর। আর প্রোজ্জ্বল প্রকাশ করে আফিফ ও প্রভা দুজনের উপর।

আমাদের কথার মাঝেই ছাতা নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে হসপিটালে পৌছালো ফারিহা। জিজ্ঞেস করলো,
“ লাঞ্চের জন্য খুব লেট হয়ে গেলো, তাই না?”

অভ্র ভাই বললো,
“ জি ম্যাডাম। অনেক লেট করে ফেলেছেন। গাড়িতে এসেছেন তো?”

“ জি স্যার, গাড়িতেই এসেছি। ড্রাইভার পৌঁছে দিয়েছে। এবার চলো, খেতে বসি। ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। ”

“ চলো। ”

আমরা ছয়জন একত্রে বসে লাঞ্চ করছি। বাইরে এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। তবে গতি পূর্বের চেয়ে কম। হঠাৎ এ বৃষ্টি দেখে আবারও মনটা খারাপ হয়ে এলো৷ মন বলছে এখনই দেশে ছুটে যাই।
আমায় দেখে প্রোজ্জ্বল জিজ্ঞেস করলো,
“ কি ব্যাপার চন্দ্রিমা? মন খারাপ?”

“ হুম। শ্রাবণের এ বৃষ্টি মাঝে মাঝেই আমার মনটা ভীষণ খারাপ করে দেয়। ”

“ তোর মন ভালো করার জন্য শ্রাবণ নিয়েই একটা গান গাই। রবীন্দ্র সংগীত। আই হোপ, তোর মন খারাপ কিছুটা হলেও দূর হবে। ”
বলেই প্রোজ্জ্বল গলা পরিষ্কার করে গান ধরলো। ওর গান গাইলো, আর আমি বাইরে শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ করার চেষ্টা করলাম।
” শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,
পড়ুক ঝরে
তোমারি সুরটি আমার মুখের পরে,
বুকের পরে
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,
পড়ুক ঝরে

পুরবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে,
দুই নয়ানে (x2)
নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে,
পড়ুক প্রাণে
নিশিদিন এই জীবনের সুখের পরে,
দুখের পরে
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,
পড়ুক ঝরে।”

❤️❤️সমাপ্ত❤️❤️

®সারা মেহেক

( /

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here