কাঞ্জি পর্ব -০৪

#কাঞ্জি
#পর্ব-৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

রত্না বেগমের আঘাতের কারণে প্রায় এক প্রকার বেহুশ হয়ে পড়ে রইল আবৃতি। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট আবৃতি যেন এই অবস্থা দেখে খিলখিল করে হাসছে।অদিতি এসে মাকে সামলাতে চাইলেও পারলো না।দুই চার ঘা তার গায়েও লাগলো। অদিতি বাধ্য হয়ে কল দিলো আজমীরকে।আজমীর যখন ফিরেছে আবৃতি তখন পুরোপুরি বেহুশ।এতোটা মার মেরেছে যে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে।আর তার পাশেই মাথার কাপড় ফেলে উদভ্রান্তের মতো বসে আছে রত্না বেগম।আজমীর মায়ের সামনে নিজের অস্থিরতা প্রকাশ করলো না।দুই হাতে আগে মাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল।অদিতিকে ইশারা দিলো আবৃতিকে ঘরে নিয়ে যেতে।রত্না বেগমকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়ে পাঁচ মিনিটের মাথায় বের হলো আজমীর।এসব কথা এই চার দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ এমনটা তো আজ নতুন নয়।

————–
“আজমীর ওকে দেখে আমার ভালো লাগছে না।উঠ হাসপাতালে নিয়ে যাবো।”

“হাসপাতালে নিলে মানুষ জানবে শাহরিয়ার।আমি জানাতে চাইছি না।”

“আর আমি সময় নষ্ট করতে চাইছি না।তিন ঘন্টা হয়ে এলো জ্বরে বেহুশ।এর থেকে বেশি কারণ লাগবে না।”

“বেশ তবে তুই গাড়ি বের কর।আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

“শাহানারাকে পাঠাচ্ছি।ওর কাপড় বদলে দিতে হবে।আর হ্যাঁ কাউকে ডাকবি না।কেবল লিফটে ওকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বের হবি।পারবি উঠাতে?”

“পারবো।”

তবে পারবো বললেও বোনকে কোলে তুলতে পারলো না।হাত পা কাপতেছে অনবরত। অদিতি এবং শাহানারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল।এই মুহুর্তে রাত বাজছে এগারোটা। রত্না বেগম ঘুমিয়েছে অনেক আগেই।বাকীদের কাউকে মার কিংবা জ্বরের কথা জানানো হয়নি।অবস্থা বেগতিক দেখে অদিতি কল দিয়ে ডেকেছিল শাহরিয়ার এবং শাহানারাকে।
কাউকে জানানো মানেই রত্না বেগমকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।সেটা আজমীর চায় না।কারণ ইতিমধ্যে বাবার কাজের কারণে রত্না বেগম দুই বার সুই সাইড করার চেষ্টা করেছিলেন। বাড়ির লোকজন তাকে কিছু বললে সে যে আবার একই চেষ্টা করবে না এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
শাহরিয়ার অপেক্ষা করে এবার উঠে এলো উপরে।কাউকে বের না হতে দেখে ভিতরে প্রবেশ করলো।আজমীরের কাধে হাত রেখে বলল,

“ভয় পাচ্ছিস কেন?”

“জানি না। তবে তোর স্মিতাকে মনে পড়ে না?ওকেও এভাবে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম।ফিরিয়ে আনতে পারিনি।”

“স্মিতা নেই আজমীর।চল দেরি হচ্ছে।”

শাহরিয়ার কথা না বলে কোলে তুলে নেয় আবৃতিকে।গায়ের জ্বরের কারণে তার মনে হলো এই বুঝি পুড়ে যাবে শরীরের চামড়া।আবৃতিকে কোলে নিয়েই গাড়িতে উঠলো সে।আজমীর ড্রাইভিং সিটে বসতেই শাহরিয়ার জিজ্ঞেস করলো,

“চলতে পারবি?না কি আমি আসবো?”

“ভাই আমি পারবো না।তুই আয়।আমার ভয় হচ্ছে ভীষণ।”

আবৃতির যখন জ্ঞান ফিরেছে সে এক প্রকার কেঁদে উঠলো।সে দেখতে পাচ্ছে দরজায় আবৃতি দাঁড়িয়ে আছে।তার পরণে লাল ফ্রক। হাতে নেইল পলিশ লাগাচ্ছে।আবৃতি দুই চোখ বন্ধ করে ফেলল।আজমীরকে ডাক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,

“ভাইয়া দরজায় কে দাঁড়িয়ে আছে?আমি কেন দরজায় দাঁড়িয়ে? ভাইয়া আমি কেন ওখানে?”

আজমীর দুইহাতে বোনের মাথা নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“কেউ নেই আপু। কেউ নেই।ওসব অতীত।তুমি ভয় পেও না।”

আবৃতি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।শাহরিয়ার তার পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।আংগুলটা ফুলে গেছে অনেক খানি।আবৃতি কী তবে এখনো ওর বাবার মৃত্যুর শোক কিংবা মায়ের কথা ভুলতে পারেনি?
যেদিন খায়রুল সাহেব মারা যায় সেদিন আবৃতি লাল রঙের ফ্রক পরে হাতে নেইল পলিশ লাগাচ্ছিলো।তারপর সব বদলে যায়।বাবার মৃত্যুর খবর পায় সে।সেদিন নিজের সেই অতীতের মেয়েটাকে আবৃতি না কি মাঝেমধ্যেই দেখতে পায়।বছর পাঁচেক আগে এই সমস্যাটা আরো বেশি ছিল।তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়।তার কাছেই এসব বলেছিল আবৃতি। তবে কি সে আবারো মানসিক ভাবে অসুস্থ হচ্ছে? আজমীরের অগোচরে শাহরিয়ার ঠোঁট ছোঁয়ায় আবৃতির আঘাত প্রাপ্ত পায়ে। আবৃতির এই কোমল পা দুটি কেবল হেঁটে চলবে তার বুকে।অন্য কোথাও কেন তার এই পা দুটো আঘাত পাবে?কই সে তো তার বুককে কাটায় ভরিয়ে রাখেনি?কেবল আবৃতির পা যেন আঘাত না পায় বলে।অথচ এই দুটো পায়ে আজ শত শত আঘাত।দু ফোঁটা উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়তেই শাহরিয়ার স্মিত হেসে উঠে।
আবৃতির মাথায় হাত রেখে ফিসফিস করে বলে,

“তুমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসো পাখি।আমি কথা দিচ্ছি আর একটুও আঘাত লাগতে দিবো না।প্রয়োজনে তোমায় আমার মাঝে বন্দী করে রাখবো তবুও দিবো না।”

ভোরবেলা জ্বর নেমে গেল আবৃতির। চোখ খুলে সে দেখতে পেল তার বেডের দুপাশে মাথা রেখে দুজন চোখ বুজে আছে।আবৃতি উঠে বসার চেষ্টা করতেই হাতের ক্যানোলায় টান পড়লো।স্যালাইন চলছিল তার।মুহুর্তেই রক্তের ধারা বয়ে গেল।দুই ফোঁটা গিয়ে পড়লো শাহরিয়ারের গালে।উষ্ণতার আভাস পেয়েই উঠে বসলো শাহরিয়ার।এমন দেখে ধীরে সুস্থে হাত টেনে নিলো।ক্যানোলা ঠিক করে হাত মুছিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন লাগছে?”

আবৃতি দিন ক্ষণ সব ভুলে শাহরিয়ারের কোমর জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“আমার ভালো লাগছে না।কিছুই ভালো লাগছে না আমার।খুব অস্বস্তি হচ্ছে।”

“জ্বরটা কমেছে তো।একটু ঘুমালেই ভালো লাগবে।”

“লাগবে না।আমার ভালো লাগবে না।”

“কেন লাগবে না?তুমি কেন কিছু বলো না?যখন তোমাকে আঘাত করলো কিছু বলতে পারো না?”

“আমার বাঁচতে ইচ্ছে হয় না।বাবা এমন কেন করলো?”

“যেটা হয়েছে সেটা আমি তুমি চাইলেই বদলাতে পারবো না।আজমীর পেরেছে স্মিতাকে ধরে রাখতে?অথচ ওর থেকে সুখী কে ছিল?”

আবৃতি তবুও শক্ত হাতে ধরে রইল তাকে।মুখ গুঁজেছে প্রাণ ভ্রমরের বুকে। এতোতেই কি তার মন ভরে?এ তৃষ্ণা যে বছর বছর অপেক্ষার।শাহরিয়ারও বুঝি মনের ভাষা বেশ বুঝতে পারলো।হাত রাখলো পাখি প্রেয়সীর চুলে।আলতো স্পর্শে তাকে ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“এভাবে আমাকে কাছে এসো না পাখি। আমি সইতে পারবো না।এরপর আমি ছুয়ে দিলেই তুমি গলে যাবে এতেই যে বদনাম হয়ে যাবে প্রেমিক পুরুষের মন।”

চলবে(এডিট ছাড়া।যারা পড়বেন রেসপন্স করবেন।গল্পটা একদিন পর পর দিচ্ছি।)

#ছবিয়ালঃankitaww

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here